أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٨٤)-৪৮৬
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৫৯ নং আয়াত:-
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُم
নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনের মধ্যে নানা মতবাদ সৃষ্টি করে ওকে খন্ড বিখন্ড করেছে…
erily, those who divide their religion and break up into sects,
اِنَّ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَہُمۡ وَ کَانُوۡا شِیَعًا لَّسۡتَ مِنۡہُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ ؕ اِنَّمَاۤ اَمۡرُہُمۡ اِلَی اللّٰہِ ثُمَّ یُنَبِّئُہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۱۵۹﴾
নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনের মধ্যে নানা মতবাদ সৃষ্টি করে ওকে খন্ড বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন দায়িত্ব নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সমর্পিত, পরিশেষে তিনিই তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন।
১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
যারা তাদের দীনকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করতঃ বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে তাদেরকে ধমক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নাবী, তাদের দায়িত্ব তোমার নয়। তাদের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলার, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(إِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوْا وَالصّٰبِئِيْنَ وَالنَّصٰرٰي وَالْمَجُوْسَ وَالَّذِيْنَ أَشْرَكُوْآ إِنَّ اللّٰهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ ط إِنَّ اللّٰهَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ)
“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।”(সূরা হাজ্জ ২২:২৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلَا تَکُوْنُوْا کَالَّذِیْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْۭ بَعْدِ مَا جَا۬ءَھُمُ الْبَیِّنٰتُﺚ وَاُولٰ۬ئِکَ لَھُمْ عَذَابٌ عَظِیْمٌ)
“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১০৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(مُنِیْبِیْنَ اِلَیْھِ وَاتَّقُوْھُ وَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَلَا تَکُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِکِیْنَﭮﺫ مِنَ الَّذِیْنَ فَرَّقُوْا دِیْنَھُمْ وَکَانُوْا شِیَعًاﺚ کُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَیْھِمْ فَرِحُوْنَ)
“(নিজেকে দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখো) বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহ অভিমুখী হয়ে এবং তাকে ভয় কর, সালাত কয়েম কর এবং মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়ো না, যারা তাদের দীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করে নিয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ অনুসৃত নিয়ম নিয়ে উল্লসিত।”(সূরা রূম ৩০:৩১-৩২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তিনটি বিষয়ে সন্তুষ্ট হন আর তিনটি বিষয়ে অসন্তুষ্ট বা অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য সন্তুষ্ট যে, তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর তোমরা আল্লাহ তা‘আলার রজ্জুকে সুদৃঢ় ও সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরবে, দলে দলে বিচ্ছিন্ন হবে না। আর তিনি অপছন্দ করেন অনর্থক কথা বলাবলি করা, অনর্থক প্রশ্ন করা এবং সম্পদ নষ্ট করা। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৫৭৮)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জামা‘আতের ওপর আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে। (তিরমিযী হা: ২১৬৬, সহীহ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আয়াতে বিভক্ত জাতি দ্বারা উদ্দেশ্য ইয়াহুদ ও খ্রিস্টানরা। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের পর তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। (ইবনু কাসীর ৩/৪১৯)। কেউ কেউ বলেছেন: কিছু মুশরিক ফেরেশতাদের, কিছু তারকারাজির এবং কিছু বিভিন্ন মূর্তির পূজা করত। তবে এ আয়াত ব্যাপক।
দলে দলে বিভক্ত হওয়া হকপন্থীদের বৈশিষ্ট্য নয়, বরং তা মুশরিক, বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কাজ। বিদআতীরা তাদের প্রবৃত্তি যা ভাল মনে করে সে ধারণানুযায়ী বিভিন্ন তরীকা, ওযীফা ও সবক তৈরি করে মানুষকে নিজেদের দল ও মতের দিকে আহ্বান করে জান্নাতের যিম্মাদারী নিচ্ছে। জেনে রাখুন, এসব শয়তানের তরীকা, মুসলিমদের তরীকা হল একটি। তা হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। বিভিন্ন পথ, মত ও তরীকা তৈরি করে মুসলিমদেরকে দলে দলে বিভক্ত করা গোমরাহী ছাড়া কিছুই নয়।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীনের মধ্যে দল উপদল সৃষ্টি করা হারাম।
২. যারা ব্যক্তি ও গোষ্ঠির স্বার্থে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায় তাদের সাথে মু’মিনদের কোন সম্পর্ক নেই।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 159
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُم
erily, those who divide their religion and break up into sects,
Criticizing Division in the Religion
Allah says;
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
Verily, those who divide their religion and break up into sects, you have no concern with them in the least.
Mujahid, Qatadah, Ad-Dahhak and As-Suddi said that;
this Ayah was revealed about the Jews and Christians.
Al-Awfi said that Ibn Abbas commented,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا
(Verily, those who divide their religion and break up into sects…),
“Before Muhammad was sent, the Jews and Christians disputed and divided into sects. When Muhammad was sent, Allah revealed to him,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
(Verily, those who divide their religion and break up into sects, you have no concern with them in the least).
It is apparent that this Ayah refers to all those who defy the religion of Allah, or revert from it. Allah sent His Messenger with guidance and the religion of truth so that He makes it victorious and dominant above all religions. His Law is one and does not contain any contradiction or incongruity. Therefore, those who dispute in the religion,
وَكَانُواْ شِيَعًا
(…and break up into sects), religious sects, just like those who follow the various sects, desires and misguidance – then Allah has purified His Messenger from their ways.
In a similar Ayah, Allah said,
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الِدِينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِى أَوْحَيْنَأ إِلَيْكَ
He (Allah) has ordained for you the same religion which He ordained for Nuh, and that which We have revealed to you. (42:13)
A Hadith reads,
نَحْنُ مَعَاشِرُ الاَْنْبِيَاءِ أَوْلَادُ عَلَّتٍ دِينُنَا وَاحِد
We, the Prophets, are half brothers but have one religion.
This, indeed, is the straight path which the Messengers have brought and which commands worshipping Allah alone without partners and adhering to the Law of the last Messenger whom Allah sent. All other paths are types of misguidance, ignorance, sheer opinion and desires; and as such, the Messengers are free from them. Allah said here,
لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
(You have no concern with them in the least…).
Allah’s statement,
إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللّهِ ثُمَّ يُنَبِّيُهُم بِمَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ
Their affair is only with Allah, Who then will tell them what they used to do.
is similar to His statement,
إِنَّ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالصَّـبِيِينَ وَالنَّصَـرَى وَالْمَجُوسَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُواْ إِنَّ اللَّهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيـمَةِ
Verily, those who believe, and those who are Jews, and the Sabians, and the Christians, and the Majus, and those who worship others besides Allah; truly, Allah will judge between them on the Day of Resurrection. (22:17).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এ আয়াতটি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নবুওয়াতের পূর্বে ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানেরা পরস্পর মতানৈক্য সৃষ্টি করতে এবং নিজ নিজ ধর্ম পৃথক সাব্যস্ত করতো। যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রেরিত হন তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। বলা হয়, হে নবী (সঃ)! যারা নিজেদের ধর্মের মধ্যে নানা মতবাদ সৃষ্টি করতঃ ওকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই এবং তোমার সাথে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। এরা হচ্ছে বিদআতী, সন্দেহ পোষণকারী পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়। কিন্তু এই হাদীসে একটি সনদ ঠিক নয়।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, এটা এই উম্মতের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়। আর (আরবী) দ্বারা খারেজীদেরকে বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদআতীরা। এ হাদীসটিও গারীব এবং মারফু’ রূপেও বিশুদ্ধ নয়। (এটা হচ্ছে মুজাহিদ (রঃ), কাতাদাহ (রঃ), যহহাক (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ)-এর উক্তি) তবে প্রকাশ্য কথা এই যে, এ আয়াতটি সাধারণ । এমন প্রত্যেক ব্যক্তির উপরই এটা প্রযোজ্য হতে পারে যে আল্লাহর দ্বীনে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে এবং দ্বীনের বিরোধী হয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সত্য ধর্মের হিদায়াতসহ প্রেরণ করেছেন যেন তিনি সমস্ত দ্বীনের উপর দ্বীনে ইসলামকে জয়যুক্ত করেন। ইসলামের পথ একটাই। তাতে কোন মতভেদ ও বিচ্ছিন্নতা নেই। যারা পথক দল অবলম্বন করেছে, যেমন বাহাত্তর দল বিশিষ্ট লোকেরা, আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এ আয়াতটি ঐ আয়াতের মতই, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমাদের জন্যে আমি ঐ দ্বীনকেই পছন্দ করেছি যা নূহ (আঃ) -এর জন্যে ছিল।” হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা নবীরা বৈমাত্রেয় সন্তানদের মত। যেমন বৈমাত্রেয় সন্তানদের পিতা একজনই হয় তেমনই আমাদের সকলেরই দ্বীন বা ধর্ম একটাই। এটাই হচ্ছে সিরাতে মুসতাকীম এবং এটাই হচ্ছে ঐ হিদায়াত যা রাসূলগণ এক আল্লাহর। ইবাদত সম্পর্কে পেশ করেছেন এবং সর্বশেষ রাসূল (সঃ)-এর শরীয়তকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করাকে সিরাতে মুসতাকীম বানিয়েছেন। এটা ছাড়া সমস্ত কিছুই পথভ্রষ্টতা ও মূর্খতা। রাসূলগণ ওগুলো থেকে মুক্ত । যেমন আল্লাহ পাক এখানে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। এরপর ইরশাদ হচ্ছে-তাদের বিষয়টি আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দাও। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ “যারা ঈমান এনেছে, আর যারা ইয়াহূদী রয়েছে বা তারকাপূজক, খ্রীষ্টান, মাজুস কিংবা মুশরিক রয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন।” এখন এরপর আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন স্বীয় হুকুম এবং বিচারের মধ্যেও নিজের স্নেহ ও দয়ার বর্ণনা পরবর্তী আয়াতে দিচ্ছেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতে মুশরিক, ইয়াহূদী, নাসারা ও মুসলিম সবাইকে ব্যাপকভাবে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাদেরকে আল্লাহর সরল পথ পরিহার করার অশুভ পরিণতি সম্পর্কে হুশিয়ার করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হয়েছে যে, এসব ভ্রান্ত পথের মধ্যে কিছু পথ সরল পথের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখীও রয়েছে; যেমন, মুশরিক ও আহলে-কিতাবদের অনুসৃত পথ এবং কিছু পথ রয়েছে যা বিপরীতমুখী নয়, কিন্তু সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে ডানে-বামে নিয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে সন্দেহযুক্ত ও বিদ’আতের পথ। এগুলোও মানুষকে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত করে দেয়। “যারা দ্বীনের মধ্যে বিভিন্ন পথ আবিস্কার করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের কাজ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সম্পর্কিত। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের কাছে তাদের কৃতকর্মসমূহ বিবৃত করবেন।” আয়াতে উল্লেখিত দ্বীনে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়ার অর্থ দ্বীনের মূলনীতিসমূহের অনুসরণ ছেড়ে স্বীয় ধ্যান-ধারণা ও প্রবৃত্তি অনুযায়ী কিংবা শয়তানের ধোঁকা ও সন্দেহে লিপ্ত হয়ে দ্বীনে কিছু নতুন বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া অথবা কিছু বিষয় তা থেকে বাদ দেয়া। কিছু লোক দ্বীনের মূলনীতি বর্জন করে সে জায়গায় নিজের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এ উম্মতের বিদ’আতীরাও নতুন ও ভিত্তিহীন বিষয়কে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। তারা সবাই আলোচ্য আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টি বর্ণনা করে বলেন, বনী-ইসরাঈলরা যেসব অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, আমার উম্মতও সেগুলোর সম্মুখীন হবে। তারা যেমন কর্মে লিপ্ত হয়েছিল, আমার উম্মতও তেমনি হবে। বনী-ইসরাঈলরা ৭২ টি দলে বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মতে ৭৩ টি দল সৃষ্টি হবে। তন্মধ্যে একদল ছাড়া সবাই জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম আর্য করলেনঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি? উত্তর হল, যে দল আমার ও আমার সাহাবীদের পথ অনুসরণ করবে,তারাই মুক্তি পাবে’। [তিরমিযীঃ ১৫৪০,২৬৪১] অনুরূপভাবে ইরবায ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পর জীবিত থাকবে, তারা বিস্তর মতানৈক্য দেখতে পাবে। তাই (আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি যে,) তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে শক্তভাবে আঁকড়ে থেকো। নতুন নতুন পথ থেকে সযত্নে গা বাঁচিয়ে চলো। কেননা, দ্বীনে নতুন সৃষ্ট প্রত্যেক বিষয়ই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আতই পথভ্রষ্টতা। [আবুদাউদ ৪৬০৭; তিরমিয়ী: ২৬৭৬; ইবন মাজাহঃ ৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪/১২৬]
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৪১) এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদ্বীনের সকল অনুসারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বক্তব্যের সার নির্যাস হচ্ছেঃ এক আল্লাহকে ইলাহ ও রব বলে মেনে নাও। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা-ইখতিয়ার ও অধিকারে কাউকে শরীক করো না। আল্লাহর সামনে নিজেকে জবাবদিহি করতে হবে মনে করে আখেরাতের প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ তাঁর রসূলদের ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে যে ব্যাপক মূলনীতি ও মৌল বিষয়ের শিক্ষা দিয়েছেন সে অনুযায়ী জীবন যাপন করো। এগুলোই চিরকাল আসল দ্বীন হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে এবং এখনো যথার্থ দ্বীন বলতে এগুলোকেই বুঝায়। জন্মের প্রথম দিন থেকে মানুষকে এ দ্বীনই দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যুগের লোকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তি ও লালসার মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবে বা ভক্তির আতিশয্যে এ আসল দ্বীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার ধর্মের সৃষ্টি করেছে। এ দ্বীনের মধ্যে তারা নতুন নতুন কথা মিশিয়ে দিয়েছে। নিজেদের কুসংস্কার, কল্পনা, বিলাসিতা, আন্দাজ-অনুমান ও নিজেদের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার ছাঁচে ফেলে তার আকীদা বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং কাটাই ছাঁটাই এর মাধ্যমে তাকে পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছে। অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে তার বিধানসমূহের সাথে জুড়ে দিয়েছে। মনগড়া আইন রচনা করেছে। আইনের খুটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যেসব নবী-রসূল এ দ্বীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মহান মনীষী ও বুযর্গ এ দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় জীবনপাত করে গেছেন তাদের কারোর কারোর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে অত্যধিক বাড়াবাড়ি করেছে আবার কারোর কারোর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে চলেছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানব সমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানব সমাজ দ্বন্দ্বমুখর দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে। কাজেই বর্তমানে যে ব্যক্তিই আসল দ্বীনের অনুসারী হবে, তার জন্য এসব বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও দলাদলি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এবং তাদের থেকে নিজেদের পথকে আলাদা করে নেয়াই হবে অপরিহার্য।