أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٩٧)-৫০০
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৩২ নং আয়াত:-
مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللّهِ ؟
যে সব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে নিষিদ্ধ করেছে?
Who has forbidden the adornment given by Allah?
قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِیۡنَۃَ اللّٰہِ الَّتِیۡۤ اَخۡرَجَ لِعِبَادِہٖ وَ الطَّیِّبٰتِ مِنَ الرِّزۡقِ ؕ قُلۡ ہِیَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا خَالِصَۃً یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ کَذٰلِکَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۲﴾
তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যে সব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে নিষিদ্ধ করেছে? তুমি ঘোষণা করে দাও – এই সমস্ততো তাদের জন্যই যারা পার্থিব জীবনে এবং বিশেষ করে কিয়ামাত দিবসে বিশ্বাস করে। এমনিভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করে থাকি।
৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তো তাঁর দুনিয়ার সমস্ত শোভা-সৌন্দর্য এবং সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস তাঁর বান্দাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কাজেই এগুলো বান্দাদের জন্য হারাম করে দেয়া কখনো তার উদ্দেশ্য হতে পারে না। এখন যদি কোন ধর্ম বা নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এগুলোকেহারাম, ঘৃণ্য অথবা আত্মিক উন্নতির প্রতিবন্ধক গণ্য করে তাহলে তার এ কাজটিই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনি। বাতিল ধর্মমতগুলোর বিরুদ্ধে কুরআন যেসব যুক্তি-প্রমাণ পেশ করেছে এটি তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি। বস্তুত কুরআনের যুক্তি উপস্থাপন পদ্ধতি অনুধাবন করার জন্য এ যুক্তিটি অনুধাবন করা একান্ত অপরিহার্য।
অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত জিনিস দুনিয়ার জীবনেও ঈমানদারদের জন্যই। কারণ তারাই আল্লাহর বিশ্বস্ত প্রজা। আর একমাত্র নিমকহালাল, বিশ্বস্ত ও অনুগত লোকেরাই অনুগ্রহলাভের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থাপনা যেহেতু পরীক্ষা ও অবকাশদানের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাই এখানে অধিকাংশ সময় আল্লাহর অনুগ্রহগুলো নিমকহারাম ও অকৃতজ্ঞদের মধ্যেও বন্টিত হতে থাকে। আর অনেক সময় বিশ্বস্ত ও নিমক হালালদের তুলনায় তাদের ওপরই বেশী অনুগ্রহ বর্ষণ করা হয়ে থাকে। তবে আখেরাত (যেখানকার সমস্ত ব্যবস্থাপনা হক, সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে) জীবনের আরাম আয়েশের সমস্ত উপকরণ এবং সমস্ত পবিত্র খাদ্য ও পানীয় একমাত্র অনুগত, কৃতজ্ঞ ও নিমকহালাল বান্দাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। যেসব নিমকহারাম বান্দা তাদের রবের দেয়া খাদ্য-পানীয়ে জীবন ধারণ করার পরও তাঁরই বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা উড়িয়েছে তারা এর থেকে কোন অংশই পাবে না।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] কোন বস্তু হালাল অথবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। কাজেই সেসব লোক দণ্ডনীয়, যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট পোষাক অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যকে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণাবস্থায় থাকা ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। খোরাক ও পোষাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সুন্নাতের সারকথা এই যে, ‘এসব ব্যাপারে লৌকিকতা পরিহার করতে হবে। যেরূপ পোষাক ও খোরাক সহজলভ্য তাই কৃতজ্ঞতা সহকারে ব্যবহার করতে হবে। ’আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, আরবরা জাহিলিয়াতে কাপড়-চোপড় সহ বেশ কিছু জিনিস হারাম করত। অথচ এগুলো আল্লাহ হারাম করেননি। যেমন যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ বলুন, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ?” [সূরা ইউনুস: ৫৯] তখন আল্লাহ্ তা’আলা আলোচ্য এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী] কাতাদা বলেন, “এ আয়াত দ্বারা জাহেলিয়াতের কাফেররা বাহীরা, সায়েবা, ওসীলা, হাম ইত্যাদি নামে যে সমস্ত প্রাণী হারাম করত সেগুলোকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।’ [তাবারী]
[২] আয়াতের এ বাক্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, দুনিয়ার সব নেয়ামত উৎকৃষ্ট পোষাক ও সুস্বাদু খাদ্য প্রকৃতপক্ষে আনুগত্যশীল মুমিনদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের কল্যাণেই অন্যেরা ভোগ করতে পারছে। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত নেয়ামত ও সুখ কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। আয়াতের এ বাক্যে বলা হয়েছে, “আপনি বলে দিনঃ সব পার্থিব নেয়ামত প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনেও মুমিনদেরই প্রাপ্য এবং কেয়ামতের দিন তো এককভাবে তাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে।” [তাবারী ইবন আব্বাস হতে] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অপর মতে এ বাক্যটির অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আখেরাতে শাস্তির কারণ হবে না- এ বিশেষ অবস্থাসহ তা একমাত্র অনুগত মুমিন বান্দাদেরই প্রাপ্য। কাফের ও পাপাচারীর অবস্থা এরূপ নয়। পার্থিব নেয়ামত তারাও পায় বরং আরো বেশী পায়; কিন্তু এসব নেয়ামত আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ও স্থায়ী আযাবের কারণ হবে। কাজেই পরিণামের দিক দিয়ে এসব নেয়ামত তাদের জন্য সম্মান ও সুখের বস্তু নয়। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদের মতে এর অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামতের সাথে পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ও নানারকম দুঃখ-কষ্ট লেগে থাকে, নির্ভেজাল নেয়ামত ও অনাবিল সুখের অস্তিত্ব এখানে নেই। তবে কেয়ামতে যারা এসব নেয়ামত লাভ করবে, তারা নির্ভেজাল অবস্থায় লাভ করবে। এগুলোর সাথে কোনরূপ পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচু্যত হওয়ার আশংকা এবং কোন চিন্তা-ভাবনা থাকবে না। [বাগভী] উপরোক্ত তিন প্রকার অর্থই আয়াতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই সাহাবী ও তাবেয়ী তাফসীরবিদগণ এসব অর্থই গ্রহণ করেছেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 32
مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللّهِ ؟
Who has forbidden the adornment given by Allah?
Allah refutes those who prohibit any type of food, drink or clothes according to their own understanding, without relying on what Allah has legislated,
قُلْ
Say,
O Muhammad, to the idolators who prohibit some things out of false opinion and fabrication,
مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللّهِ الَّتِيَ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالْطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ
Who has forbidden the adornment with clothes given by Allah, which He has produced for His servants and At-Tayyibat (good things) of sustenance!”
قُلْ هِي لِلَّذِينَ امَنُواْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
Say:”They are, in the life of this world, for those who believe, (and) exclusively for them (believers) on the Day of Resurrection.”
meaning, these things were created for those who believe in Allah and worship Him in this life, even though the disbelievers share in these bounties in this life. In the Hereafter, the believers will have all this to themselves and none of the disbelievers will have a share in it, for Paradise is prohibited for the disbelievers.
كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الايَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
Thus We explain the Ayat in detail for people who have knowledge.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এই আয়াতে ঐ ব্যক্তির দাবী খণ্ডন করা হচ্ছে যে পানাহার বা পরিধানের কোন জিনিস নিজের উপরে হারাম করে থাকে, অথচ শরীয়তে তা হারাম নয়। মহান আল্লাহ নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যেসব মুশরিক বাতিল মতাদর্শের বশবর্তী হয়ে নিজেদের উপর এক একটা জিনিস হারাম করে নিয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আল্লাহর দেয়া এই শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা কে হারাম করেছে? আল্লাহ এগুলো তো স্বীয় মুমিন বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। যদিও এই পার্থিব নিয়ামতে কাফিরগণও শরীক রয়েছে, কিন্তু এই নিয়ামতগুলোর হক মুমিনরাই আদায় করে থাকে এবং বিশেষ করে এ নিয়ামতগুলো কিয়ামতের দিন তারাই লাভ করবে। সেখানে কাফিররা শরীক হবে না। কেননা জান্নাতের নিয়ামতসমূহ কাফিরদের জন্যে হারাম। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আরববাসী উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহ যিয়ারত করার সময় বাঁশি ও তালি বাজাত। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এই পোশাক তো হচ্ছে আল্লাহর সৌন্দর্য । সুতরাং তোমরা পোশাক পরিধান করে তাওয়াফ কর।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
তৎকালীন মক্কার মুশরিকরা যেমন নিজেদের ওপর হালাল জিনিসকে বিভিন্নভাবে হারাম করে নিত যেমন সায়ীবা, ওয়াসিলা, হাম ইত্যাদি জন্তু, আবার তাওয়াফ করার সময় পোশাক পরিধান করা হারাম মনে করত; তেমনি যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরেও আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হালাল বস্তু ও খাদ্যকে হারাম করে নেয় তাদেরকে এ আয়াতে তিরস্কার করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে তারা বলে- জীব হত্যা মহাপাপ আবার কেউ কেউ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বর্জন করে নিরামিষ জীবন যাপন করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা বৈধ করে দিয়েছেন। দুনিয়াতে কাফির মু’মিন সবই দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সৌন্দর্য ভোগ করতে পারে। কিন্তু পরকালে আরাম-আয়েশ একমাত্র মু’মিনদের জন্যই থাকবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইচ্ছামত দীন পালন করলে চলবে না বরং দীন পালন করতে হবে তার বিধানানুযায়ী।
২. আল্লাহ তা‘আলা নিজে অথবা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম, বাকি সব হালাল।