أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٠١)-৫০৪
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৩৮-৩৯ নং আয়াত:-
قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ
তখন বলবেনঃ তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জাননা।
He will say:”For each one there is double (torment) but you know not.”
قَالَ ادۡخُلُوۡا فِیۡۤ اُمَمٍ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ فِی النَّارِ ؕ کُلَّمَا دَخَلَتۡ اُمَّۃٌ لَّعَنَتۡ اُخۡتَہَا ؕ حَتّٰۤی اِذَا ادَّارَکُوۡا فِیۡہَا جَمِیۡعًا ۙ قَالَتۡ اُخۡرٰىہُمۡ لِاُوۡلٰىہُمۡ رَبَّنَا ہٰۤؤُلَآءِ اَضَلُّوۡنَا فَاٰتِہِمۡ عَذَابًا ضِعۡفًا مِّنَ النَّارِ ۬ؕ قَالَ لِکُلٍّ ضِعۡفٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۸﴾
আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের পূর্বে মানব ও জিন হতে যে সব সম্প্রদায় গত হয়েছে, তাদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর। যখন কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসস্পাত করবে, পরিশেষে যখন তাতে সকলে জমায়েত হবে তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং আপনি এদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন! তখন আল্লাহ বলবেনঃ তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জাননা।
وَ قَالَتۡ اُوۡلٰىہُمۡ لِاُخۡرٰىہُمۡ فَمَا کَانَ لَکُمۡ عَلَیۡنَا مِنۡ فَضۡلٍ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَکۡسِبُوۡنَ ﴿٪۳۹﴾
অতঃপর পূর্ববর্তী লোকেরা পরবর্তী লোকদেরকে বলবেঃ আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাক।
৩৮-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
সর্বাবস্থায় তোমাদের প্রত্যেকটি দল কোন না কোন দলের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী দল ছিল। কোন দলের পূর্ববর্তী দল উত্তরাধিকার হিসেবে যদি তার জন্য ভুল ও বিপথগামী চিন্তা ও কর্ম রেখে গিয়ে থাকে, তাহলে সে নিজেও তো তার পরবর্তীদের জন্য একই ধরনের উত্তরাধীকার রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যদি একটি দলের পথভ্রষ্ট হবার কিছুটা দায়-দায়িত্ব তার পূর্ববর্তীদের ওপর বর্তায়, তাহলে তার পরবর্তীদের পথভ্রষ্ট হবার বেশ কিছু দায়-দায়িত্ব তার নিজের ওপরও বর্তায়। তাই বলা হয়েছে প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে। একটি শাস্তি হচ্ছে, নিজের ভুল পথ অবলম্বনের এবং অন্য শাস্তিটি অন্যদেরকে ভুল পথ দেখাবার। একটি শাস্তি নিজের অপরাধের এবং অন্য শাস্তিটি অন্যদের জন্য পূর্বাহ্নের অপরাধের উত্তরাধিকার রেখে আসার। এ বিষয়বস্তুটিকে হাদীসে নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ
وَمَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةَ ضَلاَلَةٍ لاَ يَرْضَاهَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ كَانَعَلَيْهِ مِنَ الاثمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَوْزَارِهِم شَيْئًا-
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূল অপছন্দ করেন এমন কোন নতুন বিভ্রান্তিকর কাজের সূচনা করে, তার ঘাড়ে সেই সমস্ত লোকের পথভ্রষ্টতার গোনাহও চেপে বসবে, যারা তার উদ্ভাবিত পথে চলেছে। তবে এ জন্য ঐ লোকেদের নিজেদের দায়-দায়িত্ব মোটেই লাঘব হবে না।”
অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছেঃ
لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا لأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ-
“এই দুনিয়ায় যে ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, সেই অন্যায় হত্যাকাণ্ডের পাপের একটি অংশ হযরত আদমের সেই প্রথম সন্তানটির আমলনামায় লিখিত হয়, যে তার ভাইকে হত্যা করেছিল। কারণ মানুষ হত্যার পথ সে-ই সর্বপ্রথম উন্মুক্ত করেছিল।”
এ থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি বা দল কোন ভুল চিন্তা বা কর্মনীতির ভিত্ রচনা করে সে কেবল নিজের ভুলের ও গোনাহের জন্য দায়ী হয় না বরং দুনিয়ায় যতগুলো লোক তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদের সবার গোনাহের দায়িত্বের একটি অংশও তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকে। যতদিন তার এ গোনাহের প্রভাব বিস্তৃত হতে থাকে, ততদিন তার আমলনামায় গোনাহ লিখিত হতে থাকে। তাছাড়া এ থেকে একথাও জানা যায় যে, প্রত্যেক ব্যক্তির নেকী বা গোনাহের দায়-দায়িত্ব কেবল তার নিজের ওপরই বর্তায় না বরং অন্যান্য লোকদের জীবনে তার নেকী ও গোনাহের কি প্রভাব পড়ে সেজন্য ও তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যভিচারীর কথাই ধরা যাক। যাদের শিক্ষা ও অনুশীলনের দোষে, যাদের সাহচর্যের প্রভাবে, যাদের খারাপ দৃষ্টান্ত দেখে এবং যাদের উৎসাহ দানের ফলে ঐ ব্যক্তির মধ্যে যিনা করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়, তারা সবাই তার যিনাকারী হয়ে গড়ে উঠার ব্যাপারে অংশীদার। আবার ঐ লোকগুলোও পূর্ববর্তী যেসব লোকদের কাছে থেকেই কুদৃষ্টি, কুচিন্তা, কুসংকল্প ও কুকর্মের প্ররোচনা উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করে তাদের কাঁধে পর্যন্তও তার দায়-দায়িত্ব গিয়ে পৌঁছায়। এমন কি এ ধারা অগ্রসর হতে হতে সেই প্রথম ব্যক্তিতে গিয়ে ঠেকে যে সর্বপ্রথম ভ্রান্ত পথে যৌন লালসা চরিতার্থ করে মানব জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। এ যিনাকারীর আমলনামার এ অংশটি তার সমকালীনদের ও পূর্ববর্তী লোকদের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া সে নিজেও নিজের যিনা ও ব্যভিচারের জন্য দায়ী। তাকে ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, তাকে যে বিবেকবোধ দান করা হয়েছিল, আত্মসংযমের যে শক্তি তার মধ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল, সৎলোকদের কাছ থেকে সে ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের যে জ্ঞান লাভ করেছিল, তার সামনে সৎলোকদের যেসব দৃষ্টান্ত সমুজ্জ্বল ছিল, যৌন অসদাচারের অশুভ পরিণামের ব্যাপারে তার যেসব তথ্য জানা ছিল-সে সবের কোনটিকেও সে কাজে লাগায়নি। উপরন্তু সে নিজেকে কামনা বাসনার এমন একটি অন্ধ আবেগের হাতে সোপর্দ করে দিয়েছিল যে কোন প্রকারে নিজের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করাই ছিল যার অভিপ্রায়। তার আমলনামার এ অংশটি তার নিজের সাথে সম্পর্কিত। তারপর এ ব্যক্তি যে গোনাহ নিজে করেছে এবং যাকে স্বকীয় প্রচেষ্টায় লালন করে চলেছে, তাকে অন্য লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। কোথাও থেকে কোন যৌন রোগের জীবাণু নিজের মধ্যে বহন করে আনে, তারপর তাকে নিজের বংশধরদের মধ্যে এবং না জানি আরো যে কত শত বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে কত শত লোকদের জীবন ধ্বংস করে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। কোথাও নিজের শুক্রবীজ রেখে আসে। যে শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব তারই বহন করা উচিত ছিল, তাকে অন্য একজনের উপার্জনের অবৈধ অংশীদার, তার সন্তানদের অধিকার থেকে জোরপূর্বক হিস্সা গ্রহণকারী এবং তার উত্তরাধিকারে অবৈধ শরীক বানিয়ে দেয়। এ অধিকার হরণের ধারা চলতে থাকে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বহুদূর পর্যন্ত। কোন কুমারী মেয়েকে ফুসলিয়ে ব্যভিচারের পথে টেনে আনে এবং তার মধ্যে এমন অসৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে যা তার থেকে অন্যদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে না জানি আরো কত দূর, কত পরিবার ও কত বংশধরদের মধ্যে পৌঁছে যায় এবং কত পরিবারে বিকৃতি আনে। নিজের সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সমাজের অন্যান্য লোকদের সামনে সে নিজের চরিত্রের একটি কুদৃষ্টান্ত পেশ করে এবং অসংখ্য লোকের চরিত্র নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে এর প্রভাব চলতে থাকে দীর্ঘকালব্যাপী। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, এ ব্যক্তি সমাজ দেহে যেসব বিকৃতি সৃষ্টি করলো সেগুলো তারই আমলনামায় লিখিত হওয়া উচিত এবং ততদিন পর্যন্ত লিখিত হওয়া উচিত যতদিন তার সরবরাহ করা অসৎ বৃত্তি ও অসৎকাজের ধারা দুনিয়ায় চলতে থাকে।
সৎকাজ ও পূর্ণকর্মের ব্যাপারটিও অনুরূপ। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আমরা নেকীর ও সৎকাজের যে উত্তরাধিকার লাভ করেছি তার প্রতিদান তাদের সবার পাওয়া উচিত, যারা সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আমাদের যুগ পর্যন্ত ওগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাপারে অংশ নিয়েছেন। এ উত্তরাধিকার নিয়ে তাকে সযত্নে হেফাজত করার ও তার উন্নতি বিধানের জন্য আমরা যেসব প্রচেষ্টা চালাবো ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবো তার প্রতিদান আমাদেরও পাওয়া উচিত। তারপর নিজেদের সৎ প্রচেষ্টার যেসব চিহ্ন ও প্রভাব আমরা দুনিয়ায় রেখে যাবো সেগুলোও আমাদের সৎকাজের হিসেবের খাতায় ততদিন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লিখিত হওয়া উচিত যতদিন এ চিহ্ন ও প্রভাবগুলো দুনিয়ার বুকে অক্ষত থাকবে, মানব জাতির বংশধরদের মধ্যে এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকূল এর দ্বারা লাভবান হতে থাকবে।
প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই একথা স্বীকার করবেন যে, কুরআন মজীদ প্রতিদানের এই যে পদ্ধতি উপস্থাপন করেছে, একমাত্র এ পদ্ধতিতেই সঠিক ও পূর্ণ ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ সত্যটি ভালভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হলে যারা প্রতিদানের জন্য এ দুনিয়ায় বর্তমান জীবনকেই যথেষ্ট মনে করেছে এবং যারা মনে করেছে যে, জন্মান্তরের মাধ্যমে মানুষকে তার কাজের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া যেতে পারে তাদের সবার বিভ্রান্তিও সহজে দূর হয়ে যেতে পারে। আসলে এ উভয় দলই মানুষের কার্যকলাপ, তার প্রভাব, ফলাফল ও পরিণতির ব্যাপ্তি এবং ন্যায়সঙ্গত প্রতিদান ও তার দাবীসমূহ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। একজন লোকের বয়স এখন ষাট বছর। সে তার এ ষাট বছরের জীবনে ভাল-মন্দ যা কিছু করেছে না জানি উপরের দিকে কত দূর পর্যন্ত তার পূর্ব-পুরুষরা এ কাজের সাথে জড়িত এবং তাদের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়। আর তাদেরকে এর পুরস্কার বা শাস্তি দান করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তারপর এ ব্যক্তি আজ যে ভাল বা মন্দ কাজ করেছে তার মৃত্যু সাথে সাথেই তা বন্ধ হয়ে যাবে না বরং তার প্রভাব চলতে থাকবে আগামী শত শত বছর পর্যন্ত। হাজার হাজার, লাখো লাখো, বরং কোটি কোটি মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে। এর প্রভাব চলা ও বিস্তৃত হওয়া পর্যন্ত তার আমলনামার পাতা খোলা থাকবে। এ অবস্থায় আজই এ দুনিয়ার জীবনে এ ব্যক্তিকে তার উপার্জনের সম্পূর্ণ ফসল প্রদান করা কেমন করে সম্ভব? কারণ তার উপার্জনের এক লাখ ভাগের এক ভাগও এখনো অর্জিত হয়নি। তাছাড়া এ দুনিয়ার সীমিত জীবন ও এর সীমিত সম্ভাবনা আদতে এমন কোন অবকাশই রাখেনি যার ফলে এখানে কোন ব্যক্তি তার উপার্জনের পূর্ণ ফসল লাভ করতে পারে। মনে করুন, কোন ব্যক্তি দুনিয়ায় এক মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং তার এ মারাত্মক অপকর্মের বিপুল বিষময় কুফল হাজার বছর পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যক্তির এ ধরনের অপরাধের কথা একবার কল্পনা করুন। এ দুনিয়ায় যত বড় ধরনের দৈহিক, নৈতিক, মানসিক অথবা বস্তুগত শাস্তি দেয়া সম্ভব, তার কোনটিও কি তার এ অপরাধের ন্যায়সঙ্গত পরিপূর্ণ শাস্তি হতে পারে? অনুরূপভাবে দুনিয়ার সবচাইতে বড় যে পুরস্কারের কথা কল্পনা করা যেতে পারে, তার কোনটিও কি এমন এক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হতে পারে, যে সারা জীবন মানবজাতির কল্যাণার্থে কাজ করে গেছে এবং হাজার হাজার বছর পর্যন্ত অসংখ্য মানব সন্তান যার প্রচেষ্টার ফসল থেকে লাভবান হয়ে চলেছে? যে ব্যক্তি কর্ম ও প্রতিদানের বিষয়টিকে এ দৃষ্টিতে বিচার করবে সে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে যে, কর্মফলের জন্য আসলে আর একটি জগতের প্রয়োজন, যেখানে পূর্বের ও পরের সমগ্র মানব গোষ্ঠি একত্র হবে, সকল মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে, হিসেব গ্রহণ করার জন্য একজন সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানময় আল্লাহ বিচারের আসনে বসবেন এবং কর্মের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য মানুষের কাছে সীমাহীন জীবন ও তার চারদিকে পুরস্কার ও শাস্তির অঢেল সম্ভাবনা বিরাজিত থাকবে।
আবার এই একই দিক সম্পর্কে চিন্তা করলে জন্মান্তরবাদীদের আর একটি মৌলিক ভ্রান্তির অপনোদনও হতে পারে। এ ভ্রান্তিটিই তাদের পুনর্জন্মের ধারণা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। তারা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারেনি যে, মাত্র একটি সংক্ষিপ্ত পঞ্চাশ বছরের জীবনের কর্মফল ভোগের জন্য তার চাইতে হাজার গুণ বেশী দীর্ঘ জীবনের প্রয়োজন হয়। অথচ পুনর্জন্মবাদের ধারণা মতে তার পরিবর্তে পঞ্চাশ বছরের জীবন শেষ হতেই দ্বিতীয় আর একটি দায়িত্বপূর্ণ জীবন, তারপর তৃতীয় জীবন এ দুনিয়াতেই শুরু হয়ে যায়। আবার এসব জীবনে পুনরায় শাস্তিযোগ্য বা পুরস্কারযোগ্য বহু কাজ করা হতে থাকে। এভাবে তো হিসেব চুকে যাওয়ার পরিবর্তে আরো বাড়তেই থাকবে এবং কোন দিন তা খতম হওয়া সম্ভব হবে না।
জাহান্নামবাসীদের এ পারস্পরিক সংলাপ ও তর্ক-বিতর্ক কুরআন মজীদের আরো কয়েকটি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা সাবার ৪ রুকূ’ তে বলা হয়েছেঃ হায়! তোমরা যদি সেই সময়টি দেখতে পেতে যখন এ জালেমরা নিজেদের রবের সামনে দাঁড়াবে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে থাকবে। যাদেরকে দুনিয়ায় দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল তাদেরকে বলবেঃ তোমরা না থাকলে আমরা মুমিন হতাম। বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল, তারা দুর্বল করে রাখা লোকদেরকে জবাব দেবেঃ তোমাদের কাছে যখন হেদায়াত এসেছিল তখন আমরা কি তা গ্রহণ করতে তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম? না, তা নয়, বরং তোমরা নিজেরাই অপরাধী ছিলে। এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা আবার কবে হেদায়াতের প্রত্যাশী ছিলে? আমরা যদি তোমাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দাসে পরিণত করে থাকি, তাহলে তোমরা লোভী ছিলে বলেই তো আমাদের ফাঁদে পা দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদেরকে কিনে নিয়ে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো বিকোবার জন্য তৈরী ছিলে, তবেই না আমরা কিনতে পেরেছিলাম। যদি আমরা তোমাদেরকে বস্তুবাদ, বৈষয়িক লালসা, জাতিপূজা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন প্রকার গোমরাহী ও অসৎকাজে লিপ্ত করে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দুনিয়ার পূজারী সেজেছিলে, তবেই না তোমরা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানকারীদেরকে ত্যাগ করে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদের ধর্মের আবরণে প্রতারিত করে থাকি, তাহলে যে জিনিসগুলো আমরা পেশ করছিলাম এবং তোমরা লুফে নিচ্ছিলে, সেগুলোর চাহিদা তো তোমাদের নিজেদের মধ্যেই ছিল। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব প্রয়োজন পূরণকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে, যারা তোমাদের কাছে কোন নৈতিক বিধানের আনুগত্যের দাবী না করেই কেবলমাত্র তোমাদের ইস্পিত কাজই করে যেতে থাকতো। আমরা সেই সব প্রয়োজন পুরণকারী তৈরী করে তোমাদেরকে দিয়েছিলাম। তোমরা আল্লাহর আদেশ নিষেধ থেকে বেপরোয়া হয়ে দুনিয়ার কুকুর হয়ে গিয়েছিলে এবং তোমাদের পাপ মোচনের জন্য এমন এক ধরনের সুপারিশকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে যারা তোমাদের গোনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে নেবে। আমরা সেই সব সুপারিশকারী তৈরী করে তোমাদের কাছে সরবরাহ করেছিলাম। তোমরা নিরস ও স্বাদ-গন্ধহীন দ্বীনদারী, পরহেজগারী, কুরবানী এবং প্রচেষ্টা ও সাধনার পরিবর্তে নাজাত লাভের জন্য অন্য কোন পথের সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা চাচ্ছিলে এ পথে তোমাদের প্রবৃত্তি ও লালসা চরিতার্থ করতে, নানা প্রকার স্বাদ আহরণ করতে কোন বাধা না থাকে এবং প্রবৃত্তি ও লালসা যেন সব রকমের বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকে। আমরা এ ধরনের সুদৃশ্য ধর্ম উদ্ভাবন করে তোমাদের সামনে রেখেছিলাম। মোটকথা দায়-দায়িত্ব কেবল আমাদের একার নয়। তোমরাও এতে সমান অংশীদার। আমরা যদি গোমরাহী সরবরাহ করে থাকি, তাহলে তোমরা ছিলে তার খরিদ্দার।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 38-39
قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ
He will say:”For each one there is double (torment) but you know not.”
People of the Fire will dispute and curse Each Other
Allah mentioned what He will say to those who associate others with Him, invent lies about Him, and reject His Ayat,
قَالَ ادْخُلُواْ فِي أُمَمٍ
(Allah) will say:Enter you in the company of nations,
who are your likes and similar to you in conduct,
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم
Who passed away before you,
from the earlier disbelieving nations,
مِّن الْجِنِّ وَالاِنسِ فِي النَّارِ
Of men and Jinn, into the Fire.
Allah said next,
كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا
Every time a new nation enters, it curses its sister nation (that went before),
Al-Khalil (Prophet Ibrahim), peace be upon him, said,
ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ
“But on the Day of Resurrection, you shall deny each other. (29:25)
Also, Allah said,
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُواْ مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الاٌّسْبَابُ
وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُواْ لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُواْ مِنَّا كَذَلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَـلَهُمْ حَسَرَتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُم بِخَـرِجِينَ مِنَ النَّارِ
When those who were followed declare themselves innocent of those who followed (them), and they see the torment, then all their relations will be cut off from them. And those who followed will say:”If only we had one more chance to return (to the worldly life), we would declare ourselves as innocent from them as they have declared themselves as innocent from us.”
Thus Allah will show them their deeds as regrets for them. And they will never get out of the Fire. (2:166-167)
Allah’s statement,
حَتَّى إِذَا ادَّارَكُواْ فِيهَا جَمِيعًا
until they are all together in the Fire,
means, they are all gathered in the Fire,
قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لاُولَاهُمْ
The last of them will say to the first of them,
that is, the nation of followers that enter last will say this to the first nations to enter.
This is because the earlier nations were worse criminals than those who followed them, and this is why they entered the Fire first. For this reason, their followers will complain against them to Allah, because they were the ones who misguided them from the correct path, saying,
رَبَّنَا هَـوُلاء أَضَلُّونَا فَأتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ
“Our Lord! These misled us, so give them a double torment of the Fire.”
multiply their share of the torment.
Allah said in another instance,
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِى النَّارِ يَقُولُونَ يلَيْتَنَأ أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا
وَقَالُواْ رَبَّنَأ إِنَّأ أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلْ
رَبَّنَأ ءَاتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ
On the Day when their faces will be turned over in the Fire, they will say:”Oh! Would that we had obeyed Allah and obeyed the Messenger.” And they will say:”Our Lord! Verily, we obeyed our chiefs and our great ones, and they misled us from the (right) way. Our Lord! Give them a double torment.” (33:66-68)
Allah said in reply,
قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ
He will say:”For each one there is double (torment) but you know not.”
We did what you asked, and recompensed each according to their deeds.’
Allah said in another Ayah,
الَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَـهُمْ عَذَابًا
Those who disbelieved and hinder (men) from the path of Allah, for them We will add torment. (16:88)
Furthermore, Allah said,
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَّعَ أَثْقَالِهِمْ
And verily, they shall bear their own loads, and other loads besides their own. (29:13)
and,
وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ
And also (some thing) of the burdens of those whom they misled without knowledge. (16:25)
وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لاُخْرَاهُمْ
The first of them will say to the last of them,
meaning, the followed will say to the followers,
فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ
“You were not better than us. ..”
meaning, you were led astray as we were led astray, according to As-Suddi.
فَذُوقُواْ الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
“So taste the torment for what you used to earn.”
Allah again described the condition of the idolators during the gathering (of Resurrection), when He said;
قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ أَنَحْنُ صَدَدنَـكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ جَأءَكُمْ بَلْ كُنتُمْ مُّجْرِمِينَ
وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ بَلْ مَكْرُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَأ أَن نَّكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَندَاداً وَأَسَرُّواْ النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُاْ اْلَعَذَابَ وَجَعَلْنَا الاٌّغْلَـلَ فِى أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُواْ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلاَّ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
And those who were arrogant will say to those who were deemed weak:”Did we keep you back from guidance after it come to you! Nay, but you were criminals.”
Those who were deemed weak will say to those who were arrogant:”Nay, but it was your plotting by night and day, when you ordered us to disbelieve in Allah and set up rivals to Him!”
And each of them (parties) will conceal their own regrets, when they behold the torment. And We shall put iron collars round the necks of those who disbelieved. Are they requited aught except what they used to do! (34:32-33).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৩৮-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ পাক তার উপর মিথ্যা আরোপকারী মুশরিকদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, যখন তাদেরকে বলা হবে- তোমরা তোমাদের মত ঐ দলগুলোর সাথে মিলিত হয়ে যাও যাদের মধ্যে তোমাদের গুণাবলী বিদ্যমান ছিল এবং যারা তোমাদের পূর্বে দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেছিল। তারা মানবের অন্তর্ভুক্তই হাক অথবা দানবেরই অন্তর্ভুক্ত হাক। অতঃপর তোমরা সবাই জাহান্নামের পথ ধর। (আরবী)-এটা (আরবী) -এর (আরবী) হতে পারে আবার এও সম্ভাবনা রয়েছে যে, (আরবী) ব্যবহৃত হয়েছে (আরবী)-এর অর্থে।
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ যখন একটা নতুন দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন একদল অপর দলকে ভালমন্দ বলতে শুরু করবে। হযরত খলীল (আঃ) বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন এক কাফির অন্য কাফিরের বিরোধী হয়ে যাবে এবং একে অপরকে ভালমন্দ বলবে। ইরশাদ হচ্ছে- যখন অনুসারী কাফিররা অনুসৃত কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে এবং যখন তারা আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে, আর তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, তখন এই অনুসারীরা বলবেঃ “যদি পুনরায় আমাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে যেমন আজ এরা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে তেমনই আমরাও এদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রতিশোধ নিয়ে নিতাম!” আল্লাহ তাআলা এভাবেই তাদের আমল দুঃখ ও আফসোসরূপে তাদের সামনে পেশ করবেন। কিন্তু জাহান্নাম থেকে কোনক্রমেই তারা বের হতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তারা সবাই জাহান্নামে একত্রিত হবে। জাহান্নামে প্রবেশ করার পর অনুসারীরা অনুসৃতদের বিরুদ্ধে আল্লাহ পাকের নিকট অভিযোগ করবে। কারণ তাদের তুলনায় অনুসৃতদের অপরাধ বেশী ছিল এবং তারা তাদের পূর্বেই জাহান্নামে প্রবেশ করেছিল। তারা বলবেঃ “হে আমাদের প্রভু! এরাই আমাদেরকে সোজা-সরল পথ থেকে ভ্রষ্ট করেছিল। সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যেই দিন আগুনে পোড়ে তাদের মুখমণ্ডল কালো হয়ে যাবে, তারা বলবে- যদি আমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর অনুসরণ করতাম! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের বড়দের কথা মেনে চলেছিলাম। তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আল্লাহ! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন! আল্লাহ তা’আলা তখন বলবেন না, বরং তোমাদের সকলকেই আমি দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করবো।” যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যারা কুফরী করে এবং লোকদেরকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়, আমি তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করে দেবো, তারা নিজেদের পাপের বোঝাও বহন করবে এবং অন্যদের পাপের বোঝাও বহন করবে।” যা হাক, অনুসৃতেরা অনুসারীদেরকে বলবে-আজকে আমাদের উপর তোমাদের কি শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে? আমরা যেমন নিজে নিজেই পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম, তোমরাও দ্রুপ আপনা আপনি পথভ্রষ্ট হয়েছিল। সুতরাং এখন নিজেদের আমলের স্বাদ গ্রহণ কর। তাদের অবস্থা এই রূপই যার সংবাদ আল্লাহ পাক দিয়েছেনঃ “হে নবী (সঃ)! যদি তুমি ঐ কাফিরদেরকে দেখতে যে, তারা তাদের প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান থাকবে এবং একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে। অনুসারীরা অনুসৃতদেরকে বলবে- তোমরা না থাকলে আমরা মুমিন হতাম। তখন অনুসৃতরা অনুসারীদেরকে বলবে- আমরা তো তোমাদেরকে হিদায়াত লাভে বাধা প্রদান করিনি বরং তোমরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিলে। তোমরা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দ্বারা কাজ কেন করনি? তখন অনুসারীরা অনুসৃতদেরকে বলবে- এটাতো ছিল আমাদেরকে তোমাদের রাত দিন পথভ্রষ্ট করারই ফল! তোমরা আমাদেরকে কুফরী করতে বাধ্য করতে এবং আল্লাহর শরীক স্থাপন করতে! তারপর তারা মনে মনে লজ্জিত হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় তারা আল্লাহর শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে এবং আমি (আল্লাহ) তাদের স্কন্ধে গলাবন্ধ পরিয়ে দেবো এবং তারা যেরূপ কাজ করতো সেরূপই বিনিময় প্রাপ্ত হবে।”
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ যখনই কোন ধর্মাবলম্বী জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখনই সে তার ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আগে যারা প্রবেশ করেছে তাদেরকে অভিসম্পাত দিতে থাকবে। সুতরাং মুশরিকরা মুশরিকদেরকে, ইয়াহুদীরা ঈয়াহুদীদেরকে, নাসারারা নাসারাদেরকে , সাবেয়ীয়া সাবেয়ীদের , অগ্নি উপাসকরা অগ্নি উপাসকদেরকে লা’নত দিতে থাকবে। তাদের পরবর্তীরা পুর্ববর্তীদের অভিসম্পাদ দিবে। [তাবারী]
[২] এ আয়াতে তাদেরকে কি কারণে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়নি। সূরা আল-আহযাবের ৬৭ নং আয়াতে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা ছিল তাদের নেতা গোছের লোক। তাদের নেতৃত্বের প্রভাবেই এরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। সূরা সাবা’র ৩১ ও ৩২ নং আয়াতে এর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। [আদওয়াউল বায়ান]
এ থেকে জানা গেল যে, যে ব্যক্তি বা দল কোন ভুল চিন্তা বা কর্মনীতির ভিত রচনা করে সে কেবল নিজের ভুলের ও গোনাহের জন্য দায়ী হয় না বরং দুনিয়ায় যতগুলো লোক তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদের সবার গোনাহের একটি অংশও তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকে। এ বিষয়টি বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।