أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٠٧)-৫১০
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৫০-৫১ নং আয়াত:-
اِنَّ اللّٰہَ حَرَّمَہُمَا عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿ۙ۵۰﴾
আল্লাহ এ দু’টি জিনিস কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
:”Both Allah has forbidden to the disbelievers.””
وَ نَادٰۤی اَصۡحٰبُ النَّارِ اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ اَنۡ اَفِیۡضُوۡا عَلَیۡنَا مِنَ الۡمَآءِ اَوۡ مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ ؕ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰہَ حَرَّمَہُمَا عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿ۙ۵۰﴾
জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবেঃ আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ প্রদত্ত তোমাদের জীবিকা হতে কিছু প্রদান কর। তারা বলবেঃ আল্লাহ এ দু’টি জিনিস কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَہُمۡ لَہۡوًا وَّ لَعِبًا وَّ غَرَّتۡہُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ۚ فَالۡیَوۡمَ نَنۡسٰہُمۡ کَمَا نَسُوۡا لِقَآءَ یَوۡمِہِمۡ ہٰذَا ۙ وَ مَا کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۵۱﴾
তারা নিজেদের দীনকে ক্রীড়া-কৌতুকের বস্তুতে পরিণত করেছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকব যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল এবং যেমনভাবে তারা আমার নিদর্শন ও আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল।
৫০-৫১ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
জাহান্নামীদের লাঞ্ছনা এবং কিভাবে তারা জান্নাতবাসীদের নিকট খাদ্য ও পানীয় চাইবে আল্লাহ তাআলা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন; জান্নাতীরা। তাদেরকে কিছুই দেবে না। ইরশাদ হচ্ছে- জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে বলবে, তোমাদের খাদ্য ও পানীয় আমাদেরকেও কিছু প্রদান কর। পুত্র পিতার নিকট এবং ভাই ভাই-এর নিকট চাইবে এবং বলবে, আমি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েছি, সুতরাং আমাকে অল্পকিছু পানি দাও। কিন্তু তারা এই জবাবই দেবে-আল্লাহ এ দুটো জিনিস কাফিরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন।
আবু মূসা সাফফার (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, উত্তম সাদকা কোনটি? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বোত্তম সদকা হচ্ছে পানি। তোমরা কি শুননি যে, জাহান্নামবাসী জান্নাতবাসীর কাছে পানি ও খাদ্য চাইবে?” আবু সালিহ্ হতে বর্ণিত আছে যে, যখন আবু তালিব অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন জনগণ তাকে বলে-“আপনি আপনার ভ্রাতুস্পুত্রকে বলে পাঠান যে, তিনি যেন একটি জান্নাতী আঙ্গুরগুচ্ছ নিয়ে আসেন, হয়তো এর বরকতে আপনি আরোগ্য লাভ করবেন।” তখন তার দূত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আগমন করেন। সেই সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বললেনঃ “আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের উপর জান্নাতের প্রত্যেকটা জিনিস হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেনঃ কাফিররা কিভাবে দুনিয়ায় মাযহাব ও দ্বীনকে খেল-তামাসার বস্তুতে পরিণত করেছে এবং দুনিয়ার মধ্যে কিভাবে ভুলের মধ্যে পড়ে রয়েছে, আর কিরূপেই বা দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্যের মধ্যে নিমগ্ন রয়েছে! কেমন করে তারা আখিরাতের পণ্য ক্রয় করা থেকে উদাসীন রয়েছে!
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ “আজকে আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকবো যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল। এই ভুলে যাওয়া শব্দটি পরস্পর আদান প্রদান ও বিনিময় হিসেবে বলা হয়েছে। নতুবা আল্লাহ তা’আলা কখনো কাউকেও ভুলে থাকতে পারেন না। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেন, (আরবী) (২০:৫২) এখানে উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পাল্টা ভাবের কথা বলা। যেমন তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন।” (৯:৬৭) তিনি আরও বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরূপই তোমার কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এসে ছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে, দ্রুপ আজকে তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। (১২৬:২০) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেমন তোমরা তোমাদের এদিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে দ্রুপ আমিও তোমাদেরকে আজকে ভুলে গেলাম।” (৫১:৭) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাদের কল্যাণ করা ভুলে গেছেন, কিন্তু তাদেরকে শাস্তি দিতে ভুলেননি।
হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন বান্দাদেরকে বলবেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে প্রদান করিনি এবং তোমাদেরকে কি পুরস্কৃত করিনি? তোমাদেরকে কি আমি উট, ঘোড়া, হাতী ও সজি-সরঞ্জাম প্রদান। করেছিলাম না? তোমরা কি দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিতে না?” বান্দা উত্তরে বলবেঃ “হে আল্লাহ! হ্যা, আপনি আমাদেরকে সবকিছুই প্রদান করেছিলেন। আল্লাহ পুনরায় তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ “আমার সামনে তোমাদেরকে হাজির হতে হবে এটা কি তোমাদের বিশ্বাস ছিল?” তারা বলবেনঃ “হে আল্লাহ! না, আমাদের এটার প্রতি বিশ্বাস ছিল না। আল্লাহ তা’আলা তখন বলবেনঃ “তোমরা যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তেমনি আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে গেলাম।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 50-51
اِنَّ اللّٰہَ حَرَّمَہُمَا عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿ۙ۵۰﴾
:”Both Allah has forbidden to the disbelievers.””
The Favors of paradise are Prohibited for the People of the Fire
Allah emphasizes the disgrace of the people of the Fire. They will ask the people of Paradise for some of their drink and food, but they will not be given any of that.
He says;
وَنَادَى أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُواْ عَلَيْنَا مِنَ الْمَاء أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ
And the dwellers of the Fire will call to the dwellers of Paradise:”Pour on us some water or anything that Allah has provided you with.”
As-Suddi said,
“That is food”.
Ath-Thawri said that Uthman Ath-Thaqafi said that Sa`id bin Jubayr commented on this Ayah,
“One of them will call his father or brother, `I have been burned, so pour some water on me.’
The believers will be asked to reply, and they will reply,
قَالُواْ إِنَّ اللّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
They will say:”Both Allah has forbidden to the disbelievers.””
Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said that,
إِنَّ اللّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
(“Both Allah has forbidden to the disbelievers).”
“Refers to the food and drink of Paradise.”
Allah says,
الَّذِينَ اتَّخَذُواْ دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
“Who took their religion as amusement and play, and the life of the world deceived them.”
Allah describes the disbelievers by what they used to do in this life, taking the religion as amusement and play, and being deceived by this life and its adornment, rather than working for the Hereafter as Allah commanded,
فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُواْ لِقَاء يَوْمِهِمْ هَـذَا
So this Day We shall forget them as they forgot their meeting of this Day,
meaning, Allah will treat them as if He has forgotten them. Certainly, nothing escapes Allah’s perfect watch and He never forgets anything.
Allah said in another Ayah,
فِى كِتَـبٍ لاَّ يَضِلُّ رَبِّى وَلَا يَنسَى
In a Record. My Lord neither errs nor forgets. (20:52)
Allah said — that He will forget them on that Day — as just recompense for them, because,
نَسُواْ اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ
They have forgotten Allah, so He has forgotten them. (9:67)
كَذَلِكَ أَتَتْكَ ايَـتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى
Like this:Our Ayat came unto you, but you disregarded them, and so this Day, you will be neglected. (20:126)
and,
وَقِيلَ الْيَوْمَ نَنسَاكُمْ كَمَا نَسِيتُمْ لِقَأءَ يَوْمِكُمْ هَـذَا
And it will be said:”This Day We will forget you as you forgot the meeting of this Day of yours.” (45:34)
Al-Awfi reported that Ibn Abbas commented on,
فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُواْ لِقَاء يَوْمِهِمْ هَـذَا
(So this Day We shall forget them as they forgot their meeting of this Day),
“Allah will forget the good about them, but not their evil.”
And Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,
“We shall forsake them as they have forsaken the meeting of this Day of theirs.”
Mujahid said,
“We shall leave them in the Fire.”
As-Suddi said,
“We shall leave them from any mercy, just as they left any action on behalf of the meeting on this Day of theirs.”
It is recorded in the Sahih that Allah will say to the servant on the Day of Resurrection:
أَلَمْ أُزَوِّجْكَ
أَلَمْ أُكْرِمْكَ
أَلَمْ أُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالاِْبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ
فَيَقُولُ بَلَى
فَيَقُولُ أَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَقِيَّ
فَيَقُولُ لَا
فَيَقُولُ اللهُ تَعَالَى فَالْيَوْمَ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي
“Have I not gotten you married?
Have I not honored you?
Have I not made horses and camels subservient for you and allowed you to become a leader and a master?”
He will say, “Yes.”
Allah will say, “Did you think that you will meet Me?”
He will say, “No.”
Allah the Exalted will say, `Then this Day, I will forget you as you have forgotten Me.”
وَمَا كَانُواْ بِأيَاتِنَا يَجْحَدُونَ
and as they used to reject Our Ayat.
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের রবকে কেয়ামতের দিন দেখতে পাব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দীদার সংক্রান্ত কথা উল্লেখ করে বললেনঃ ‘তারপর আল্লাহ তার কোন এক বান্দার সাথে সাক্ষাত করে বলবেন, হে অমুক! তোমাকে কি আমি সম্মানিত করিনি? নেতৃত্ব দেইনি? বিয়ে করাইনি? তোমার জন্য ঘোড়া ও উট আয়ত্ত্বাধীন করে দেইনি? তোমাকে কি প্রধান এবং শুল্ক আদায়কারী বানাইনি? (তোমাকে এমন আরামে রেখেছি যে, তোমার কোন কষ্ট অনুভূত হয়নি।) সে বলবেঃ হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমার সাক্ষাতে বিশ্বাসী ছিলে? সে বলবেঃ না। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়েছিলে।’ [মুসলিমঃ ২৯৬৮]
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
জান্নাতবাসী, জাহান্নামবাসী ও আরাফবাসীদের এ পারস্পরিক সংলাপ থেকে পরকালীন জীবনে মানুষের শক্তির সীমানা কতদূর বিস্তৃত হবে তা কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে। সেখানে দৃষ্টিশক্তি এতটা প্রসারিত হবে যার ফলে জান্নাত, জাহান্নাম বা আরাফের লোকেরা যখন ইচ্ছা পরস্পরকে দেখতে পারবে। সেখানে আওয়াজ ও শ্রবণশক্তিও হবে বহু দূরপাল্লার। ফলে এ পৃথক পৃথক জগতের লোকেরা পরস্পরের সাথে অতি সহজেই কথাবার্তা বলতে পারবে। পরকালীন জগত সম্পর্কে এ বর্ণনা এবং এ ধরনের আরো যেসব বর্ণনা কুরআনে উদ্বৃত্ত হয়েছে তা এ ধারণা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট যে, সেখানকার জীবন যাপনের বিধান আমাদের এ দুনিয়ার প্রাকৃতিক বিধান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর হবে। অবশ্যি এখানে আমাদের যে ব্যক্তি-সত্তা রয়েছে সেখানেও তাই থাকবে। তবে যেসব লোকের মস্তিষ্ক এ প্রাকৃতিক জগতের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে রয়ে গেছে এবং বর্তমান জীবন ও এর সংক্ষিপ্ত পরিমাপগুলো ছাড়া ব্যাপকতর কোন জিনিসের ধারণা যাদের মস্তিষ্কে সংকুলান হয় না, তারা কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বর্ণনাগুলোকে অবাক দৃষ্টিতে দেখে থাকে এবং কখনো কখনো এগুলোকে বিদ্রূপও করে থাকে। এভাবে তারা তাদের বুদ্ধির স্বল্পতারই প্রমাণ দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের বুদ্ধির পরিসর যতটা সংকীর্ণ জগত ও জীবনের সম্ভাবনাগুলো ততটা সংকীর্ণ নয়।