أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣١٥)-৫১৮
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৬৫-৬৯ নং আয়াত:-
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودا
‘আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে (নাবী রূপে) পাঠিয়েছিলাম।
And to `Ad (the people, We sent) their brother Hud.
وَ اِلٰی عَادٍ اَخَاہُمۡ ہُوۡدًا ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۶۵﴾
‘আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে (নাবী রূপে) পাঠিয়েছিলাম। সে বললঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মা‘বূদ নেই, তোমরা কি সাবধান হবেনা?
قَالَ الۡمَلَاُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِہٖۤ اِنَّا لَنَرٰىکَ فِیۡ سَفَاہَۃٍ وَّ اِنَّا لَنَظُنُّکَ مِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۶۶﴾
তার জাতির নেতারা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখছি এবং আমরাতো তোমাকে নিশ্চিত রূপে মিথ্যাবাদী মনে করি।
قَالَ یٰقَوۡمِ لَیۡسَ بِیۡ سَفَاہَۃٌ وَّ لٰکِنِّیۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۶۷﴾
সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি হলাম সারা জাহানের রবের মনোনীত রাসূল।
اُبَلِّغُکُمۡ رِسٰلٰتِ رَبِّیۡ وَ اَنَا لَکُمۡ نَاصِحٌ اَمِیۡنٌ ﴿۶۸﴾
আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাংখী ।
اَوَ عَجِبۡتُمۡ اَنۡ جَآءَکُمۡ ذِکۡرٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ عَلٰی رَجُلٍ مِّنۡکُمۡ لِیُنۡذِرَکُمۡ ؕ وَ اذۡکُرُوۡۤا اِذۡ جَعَلَکُمۡ خُلَفَآءَ مِنۡۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّ زَادَکُمۡ فِی الۡخَلۡقِ بَصۜۡطَۃً ۚ فَاذۡکُرُوۡۤا اٰلَآءَ اللّٰہِ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۶۹﴾
তোমরা কি এতে বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের রবের পক্ষ হতে তাঁর বিধান ও উপদেশসহ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশে তোমাদের কাছে এসেছে? তোমরা সেই অবস্থার কথা স্মরণ কর যখন নূহের সম্প্রদায়ের পর আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে অন্যদের অপেক্ষা শক্তিতে অধিকতর বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে।
৬৫-৬৯ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতগুলোতে হূদ (আঃ) ও আদ জাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যাঁকে নূহ (আঃ)-এর পর প্রেরণ করা হয়েছিল।
আল্লাহ তা‘আলার গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহ (আঃ)-এর পরে আদ ছিল দ্বিতীয় জাতি। এরা খুবই দুর্ধর্ষ, শক্তিশালী, সুঠামদেহী ও বিরাট বপুস¤পন্ন ছিল। আদ ও সামূদ ছিল নূহ (আঃ)-এর পুত্র সামের বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। ইরামের পুত্র আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ উলা বা প্রথম আদ’ এবং অপর পুত্রের সন্তান সামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ সানী বা দ্বিতীয় আদ’ বলে খ্যাত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আ‘দ ও সামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সে-কারণে ইরাম নামটি আদ ও সামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। তাই কুরআনে কোথাও ‘আদ উলা’ (সূরা নাজম ৫৩:৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম’ (সূরা ফাজর ৮৯:৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আদ জাতির ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান হতে শুরু করে হাজরামাউত ও ইয়ামান পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। (কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি নাবী হিসেবে হূদ (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন। তিনি স্বীয় জাতিকে শির্ক বর্জন করে সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে পূর্তিপূজা ত্যাগ করার এবং জুলুম ও অত্যাচার পরিহার করে ন্যায়-বিচারের পথে চলার উদাত্ত আহ্বান জানান। এমনকি তিনি এ-কথাও বলেন, ‘আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে।’ (সূরা শুআরা ২৬:১২৭) সূরা হূদের ৫০-৫১নং আয়াতেও এ কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে অপরাধের ক্ষমা চাইতে এবং তাওবা করতে বললেন। এ কাজ করলে ‘তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষাবেন। তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সূরা হূদ ১১:৫২) তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার যে সকল নেয়ামত রয়েছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তিনি তাদেরকে দান করেছেন চতুষ্পদ জন্তু ও সন্তান-সন্ততি, উদ্যান ও ঝর্ণাধারা। (সূরা শুআরা ২৬:১৩৩-১৩৪)
এসব কথা উল্লেখ করে তিনি যখনই তাওহীদ, তাওবা-ইস্তিগফার ও ন্যায়-নিষ্ঠার দাওয়াত দিতে শুরু করলেন তখনই লোকেরা তাকে নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করতে লাগল। তারা বলল: ‘তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক ‘আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার ইবাদত করত তা বর্জন করি? তারা আরো বলতে লাগল, ‘হে হূদ! তুমি আমাদের নিকট কোন স্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন করনি, তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব না এবং আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি না। ‘আমরা এটাই বলি: আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দৃষ্টি দ্বারা আবিষ্ট করেছে।” (সূরা হূদ ১১:৫৩-৫৪) তারা আরো বলল: তুমি কি আমাদের মা‘বূদদের থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এসেছ? তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তুমি যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আহকাফ ৪৬:২৬) তারা বলেছিল: আমাদের প্রতিপালকের এরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা অবতীর্ণ করতেন। অতএব, তুমি যেসব বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা প্রত্যাখান করছি। (সূরা ফুসসিলাত ৪১: ১৪)
তিনি তাদের এসব কথার জবাবে বলেন:
(يٰقَوْمِ لَيْسَ بِيْ سَفَاهَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَ)
‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রাসূল।’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৬৭) তিনি তাদের জবাবে আরো বলেন: ‘আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর; এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্বাধীন নয়; নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আছেন সরল পথে। ‘এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও (তবে জেনে রেখ) আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, অবশ্যই তা তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি; এবং আমার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে কোন সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সমস্ত কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (সূরা হূদ ১১: ৫৬-৫৭)
(رَجُلٍ مِّنْکُمْ)
‘তোমাদের মধ্য হতে একজন ব্যক্তি’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্য হতে একজনকে আল্লাহ তা‘আলা বাছাই করে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন- এতে তোমরা আশ্চর্যবোধ করছ। মূলতঃ এটা আশ্চর্যের কথা নয় বরং প্রত্যেক জাতির সম্প্রদায় থেকে একজনকে বাছাই করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল হিসেবে মনোনিত করেন।
(مِنْۭ بَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ)
‘নূহের সম্প্রদায়ের পরে’ অর্থাৎ নূহ (আঃ)-এর অবাধ্য জাতিকে মহা প্লাবনে ধ্বংসের পর তোমরা জমিনে বাস করছ, সেকথা বেশি দূরে নয়।
(وَّزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً)
‘এবং তোমাদের দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট-বলিষ্ঠ করেছেন।’ অর্থাৎ শক্তি, সামর্থ্যে ও দৈহিক গঠনে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অতএব আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতগুলো স্মরণ কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ)
“যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃষ্টি করা হয়নি” (সূরা ফাজর ৮৯:৮)
(فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا)
‘আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো’ এরূপ মক্কার কুরাইশরাও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর কাছে দাওয়াতের উত্তরে বলেছিল:
(اللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ هٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَا۬ءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)
“স্মরণ কর, যখন তারা বলছিল- ‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের ওপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দাও।” (সূরা আনফাল ৮:৩২)
رجس এর প্রকৃত অর্থ নাপাকী, এখানে অর্থ হল শাস্তি।
যখন নিজেদের ধনৈশ্বর্যের মোহে এবং দুনিয়াবী শক্তির অহংকারে মত্ত হয়ে তারা নাবীর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল, বাপ-দাদার দোহায় দিয়ে দেব-দেবীর উপাসনায় মগ্ন রইল এবং অহংকার করে বলল: ‘আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী কে আছে?’ (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৫) তখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি অবধারিত হয়ে গেল।
(وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا)
‘আর আমার নিদর্শনকে যারা অস্বীকার করেছিল এবং যারা মু’মিন ছিল না তাদেরকে নির্মূল করেছি।’ অর্থাৎ এ জাতির ওপর প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়েছিল। যা সাত রাত ও সাত দিন ধারাবাহিকভাবে বয়ে চলছিল। ফলে তাদের লাশগুলো কাটা খেজুর গাছের কাণ্ডের মত মাটিতে পড়ে ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاَرْسَلْنَا عَلَیْھِمْ رِیْحًا صَرْصَرًا فِیْٓ اَیَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِیْقَھُمْ عَذَابَ الْخِزْیِ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَاﺚ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰی وَھُمْ لَا یُنْصَرُوْنَ)
“অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে অপমানজনক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অশুভ দিনে প্রেরণ করেছিলাম প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়। পরকালের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদের সাহায্যও করা হবে না।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৬৬ নং আয়াত) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاَمَّا عَادٌ فَاُھْلِکُوْا بِرِیْحٍ صَرْصَرٍ عَاتِیَةٍﭕ سَخَّرَھَا عَلَیْھِمْ سَبْعَ لَیَالٍ وَّثَمٰنِیَةَ اَیَّامٍﺫ حُسُوْمًاﺫ فَتَرَی الْقَوْمَ فِیْھَا صَرْعٰیﺫ کَاَنَّھُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِیَةٍﭖفَھَلْ تَرٰی لَھُمْ مِّنْۭ بَاقِیَةٍ)
“আর আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় দ্বারা। যা তিনি তাদের ওপর প্রবাহিত করেছিলেন বিরামহীনভাবে সাত রাত ও আট দিন, তুমি (উপস্থিত থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে খেজুর কান্ডের ন্যায় সেখানে ছিন্ন ভিন্নভাবে পড়ে আছে। তুমি কি তাদের কাউকেও অবশিষ্ট দেখতে পাও?” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৬-৮) এদের সম্পর্কে সূরা আহকাফের ২১-২৬, শুআরার ১২৩-১৪০, ক্বামারের ১৮-২২ ও সূরা হাক্কাহর ৪-৮ নং আয়াতের আলোচনা করা হয়েছে।
সুতরাং এ আদ জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, এরা শক্তি-সামর্থে ও দৈহিক গঠনে পৃথিবীতে অতুলনীয় ছিল। কিন্তু তাদের নাবী যখন তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে আসলেন আর তারা তা প্রত্যাখ্যান করল, নাবীকে পাগল বলতে লাগল এবং সকল মা‘বূদকে বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা অসম্ভব মনে করল তখন তাদের দৈহিক শক্তি তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রেহাই দিতে পারেনি ।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শির্ক, অন্যায়-অবিচার ও অহংকার প্রদর্শন করাই হল আল্লাহ তা‘আলার গযবের প্রধান কারণ।
২. যুগে যুগে যারাই নাবীদের আনিত বিধান প্রত্যাখ্যান করেছে তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, আদ সম্প্রদায় তাদের অন্যতম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত গযব বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; তা মোকাবেলা করার কেউ নেই। অনেকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলাকেই উপেক্ষা করা হয় যা ঈমানের পরিপন্থী।
৪. সকল ইবাদত পাওয়ার একমাত্র হকদার আল্লাহ তা‘আলা। সুতরাং সকল বাতিল মা‘বূদ বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করলে দুনিয়াতে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে আর পরকালেও নাজাত পাওয়া যাবে।
৫. বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে সত্য প্রত্যাখ্যান করা পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির আলামত।
৬. ইসলামী রীতি-নীতি ও অনুশাসন মেনে চলে সৎ আমল করলে দুনিয়ার সম্পদ ও সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 65-69
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودا
And to `Ad (the people, We sent) their brother Hud.
The Story of Hud, Peace be upon Him, and the Lineage of the People of `Ad
Allah says,
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلَ تَتَّقُونَ
And to `Ad (the people, We sent) their brother Hud. He said:”O my people! Worship Allah! You have no other god but Him. Will you then not have Taqwa!”
Allah says, just as We sent Nuh to his people, similarly, to the `Ad people, We sent Hud one of their own brethren.
Muhammad bin Ishaq said that the tribe of `Ad were the descendants of `Ad, son of Iram, son of `Aws, son of Sam, son of Nuh.
I say, these are indeed the ancient people of `Ad whom Allah mentioned, the children of `Ad, son of Iram who were living in the deserts with lofty pillars or statues.
Allah said,
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ
الَّتِى لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى الْبِلَـدِ
Have you not seen how your Lord dealt with `Ad (people). Of Iram like (lofty) pillars. The like of which were not created in the land. (89:6-8),
because of their might and strength.
Allah said in another instance,
فَأَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُواْ فِى الاٌّرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُواْ مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّ اللَّهَ الَّذِى خَلَقَهُمْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً
وَكَانُواْ بِـَايَـتِنَا يَجْحَدُونَ
As for `Ad, they were arrogant in the land without right, and they said:”Who is mightier than us in strength!”
See they not that Allah Who created them was mightier in strength than them. And they used to deny Our Ayat! (41:15)
The Land of `Ad
The people of `Ad lived in Yemen, in the area of Ahqaf, which means sand mounds.
Muhammad bin Ishaq narrated that Abu At-Tufayl Amir bin Wathilah said that;
he heard Ali (bin Abi Talib) saying to a man from Hadramawt (in Yemen), “Have you seen a red sand mound, where there are a lot of Arak and Lote trees in the area of so-and-so in Hadramawt?
Have you seen it?”
He said, “Yes, O Commander of the faithful! By Allah, you described it as if you have seen it before.”
Ali said, `I have not seen it, but it was described to me.”
The man asked, “What about it, O Commander of the faithful?”
Ali said, “There is the grave of Hud, peace be upon him, in its vicinity.”
Ibn Jarir recorded this statement, which gives the benefit of indicating that `Ad used to live in Yemen, since Prophet Hud was buried there. Prophet Hud was among the noble men and chiefs of `Ad, for Allah chose the Messengers from among the best, most honorable families and tribes.
Hud’s people were mighty and strong, but their hearts were mighty and hard, for they were among the most denying of Truth among the nations.
Prophet Hud called `Ad to worship Allah alone without partners, and to obey and fear Him.
Debate between Hud and his People
Allah tells;
قَالَ الْمَلُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوْمِهِ
The leaders of those who disbelieved among his people said…
meaning, the general public, chiefs, masters and commanders of his people said,
إِنَّا لَنَرَاكَ فِي سَفَاهَةٍ وِإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الْكَاذِبِينَ
“Verily, we see you in foolishness, and verily, we think you are one of the liars.”
meaning, you are misguided because you call us to abandon worshipping the idols in order to worship Allah Alone.
Similarly, the chiefs of Quraysh wondered at the call to worship One God, saying,
أَجَعَلَ الاٌّلِهَةَ إِلَـهاً وَحِداً
“Has he (Muhammad) made the gods (all) into One God!” (38:5)
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِي سَفَاهَةٌ وَلَكِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
(Hud) said:”O my people! There is no foolishness in me, but (I am) a Messenger from the Lord of all that exists!”
Hud said, I am not as you claim. Rather, I brought you the Truth from Allah, Who created everything, and He is the Lord and King of all things,
أُبَلِّغُكُمْ رِسَالاتِ رَبِّي وَأَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ
“I convey unto you the Messages of my Lord, and I am a trustworthy adviser for you.”
These, indeed, are the qualities of the Prophets:conveying, sincerity and honesty
أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَى رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ
“Do you wonder that there has come to you a Reminder from your Lord through a man from among you to warn you!”
Prophet Hud said, do not wonder because Allah sent a Messenger to you from among yourselves to warn you about Allah’s Days (His torment) and meeting with Him. Rather than wondering, you should thank Allah for this bounty.
وَاذكُرُواْ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاء مِن بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ
“And remember that He made you successors (generations after generations) after the people of Nuh…”
meaning, remember Allah’s favor on you in that He made you among the offspring of Nuh, because of whose supplication Allah destroyed the people of the earth after they defied and opposed him.
وَزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً
“and increased you amply in stature.”
making you taller than other people.
Similarly, Allah said in the description of Talut (Saul),
وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ
And has increased him abundantly in knowledge and stature. (2:247)
Hud continued,
فَاذْكُرُواْ الاء اللّهِ
“So remember the graces (bestowed upon you) from Allah.”
in reference to Allah’s favors and blessings
لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“so that you may be successful.”
৬৫-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যেমনভাবে আমি নূহ (আঃ)-এর কওমের কাছে। রাসূল পাঠিয়েছিলাম তেমনিভাবে হূদ (আঃ)-কে আ’দ সম্প্রদায়ের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম। তারা আ’দ ইবনে ইরামের বংশধর ছিল। তারা বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করতো। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তোমার প্রতিপালক আ’দ সম্প্রদায়ের সাথে কি ব্যবহার করেছিলেন তা তোমার জানা নেই? অর্থাৎ ইরামদের সাথে, যারা সুউচ্চ ও বড় বড় প্রাসাদের মালিক ছিল? যার তুল্য (প্রাসাদ) কোন নগরে তৈরী হয়নি। এটা ছিল তাদের ভীষণ দৈহিক শক্তির প্রকৃষ্ট প্রমাণ। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “কিন্তু আ’দ সম্প্রদায় ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে অহংকারে ফেটে পড়লো এবং বললো-আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর কে আছে? তারা কি চিন্তা করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? তারা আমার আয়াতসমূহ ও মু’জিযাসমূহকে অস্বীকার করতো। তাদের বাসভূমি ছিল ইয়ামান দেশের আহকাফ নামক জায়গায়। তারা ছিল মরুচারী ও পাহাড়ীয় লোক। হযরত আলী (রাঃ) হারামাউতের একজন অধিবাসীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি হারা মাউতের সরযমীনে এমন কোন রঙ্গীন পাহাড় দেখেছো যার মাটি লাল বর্ণের? সেই পাহাড়ের অমুক অমুক ধারে কুল (বরই) ও পীলুর বহু গাছ রয়েছে লোকটি উত্তরে বললোঃ “হ্যা। হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর শপথ! আপনি এমনভাবে বললেন যে, যেন আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি স্বচক্ষে দেখিনি বটে, কিন্তু এরূপ হাদীস আমার কাছে। পৌঁছেছে।” লোকটি বললোঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যাপারে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “সেখানে হূদ (আঃ)-এর সমাধি রয়েছে। এ হাদীস দ্বারা এটা জানা গেল যে, আ’দ সম্প্রদায়ের বাসস্থান ইয়ামানেই ছিল। হযরত হূদ (আঃ) সেখানেই সমাধিস্থ হয়েছিলেন। হযরত হূদ (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। সমস্ত রাসূলই মর্যাদা সম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। হযরত হূদ (আঃ)-এর কওম দৈহিক ও অবয়বের দিক দিয়ে যেমন ছিল কঠিন তেমনই তাদের অন্তরও ছিল অত্যন্ত কঠিন। সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে তারা অন্যান্য সমস্ত উম্মতের ঊর্ধ্বে ছিল। এ কারণেই হূদ (আঃ) তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর সেই কাফির দলটি তাকে বলে- “হে হূদ (আঃ)! আমরা তো তোমাকে বড়ই নির্বোধ ও পথভ্রষ্ট দেখছি, তুমি আমাদেরকে প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের পরামর্শ দিচ্ছ!” যেমন কুরাইশরা নবী (সঃ) -এর এরূপ দাওয়াতের উপর বিস্ময় বোধ করে বলেছিলঃ “তিনি কি বহু মা’বুদকে একই মা’বুদ বানিয়ে দিয়েছেন?” মোটকথা, হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে লোক সকল! আমার মধ্যে নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর রাসূল। আমি আল্লাহর নিকট হতে সত্য বাণী নিয়ে এসেছি। সমস্ত কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁরই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। সঠিক অর্থে আমি তোমাদের হিতাকাক্ষী।” এটা হচ্ছে ঐ গুণ যে গুণে রাসূলগণ ভূষিত থাকেন। অর্থাৎ সদুপদেশদাতা ও আমানতদার। তিনি আরো বলেনঃ “তোমরা কি এতে বিস্ময়বোধ করছো যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার বিধান ও উপদেশ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে এসেছে?” অর্থাৎ তোমাদের তো এতে বিস্মিত হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের তো এজন্যে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি নূহ (আঃ)-এর কওমকে ধ্বংস করে দেয়ার পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি সেই কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা তাদের রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া তোমাদের এ জন্যেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি তোমাদেরকে সবচেয়ে বেশী দৈহিক শক্তি প্রদান করেছেন। তোমরা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে বেশী লম্বা ও চওড়া। এ ধরনের বর্ণনা তালুতের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন যে, ইলমী ও দৈহিক শক্তিতে তালূত (আঃ) বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে-তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। অর্থাৎ তোমাদের উপর আল্লাহর যে নিয়ামত ও অনুগ্রহরাশি রয়েছে সেগুলোর কথা স্মরণ করে তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (আরবী) অর্থাৎ সম্ভবতঃ তোমরা সফলকাম হবে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] ‘আদ’ ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি। ‘আদ’ প্রকৃতপক্ষে নূহ ‘আলাইহিস সালামের পুত্র সামের বংশধরের এক ব্যক্তির নাম। তার বংশধর ও গোটা সম্প্রদায় ‘আদ’ নামে খ্যাত হয়ে গেছে। কুরআনুল কারীমে আদের সাথে কোথাও ‘আদে উলা’ বা ‘প্রথম আদ’ এবং কোথাও ‘আদ ইরাম’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, ‘আদ সম্প্রদায়কে ‘ইরাম’ও বলা হয় এবং প্রথম আদের বিপরীতে কোন দ্বিতীয় ‘আদও রয়েছে। এ সম্পর্কে তাফসীরবিদ ও ইতিহাসবিদদের উক্তি বিভিন্ন রূপ। অধিক প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, দ্বিতীয় আদ হলো সামূদ জাতি। এ বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, আদ ও সামূদ উভয়ই ইরামের দু’শাখা। এক শাখাকে প্রথম আদ এবং অপর শাখাকে সামূদ অথবা দ্বিতীয় ‘আদ বলা হয়। ইরাম শব্দটি আদ ও সামূদ উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। [তাফসীর ইবন কাসীর; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া]
কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল ‘আহকাফ’ এলাকা। এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী রুবযুল খালী’র দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামানের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাদরামাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শণাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিন আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংসস্তুপ দেখা যায়। সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে।
[২] আল্লাহ্ তা’আলাই তাদের হেদায়াতের জন্য হুদ আলাইহিস সালামকে নবীরূপে প্রেরণ করেন। তিনি আদ জাতিকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং অত্যাচার উৎপীড়ন ত্যাগ করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে আদেশ করেন। কিন্তু তারা স্বীয় ধনৈশ্বর্যের মোহে মত্ত হয়ে তার আদেশ অমান্য করে। তারা শক্তিমত্ত হয়ে বলে বসলঃ “আমাদের চাইতে শক্তিশালী কে”? [ সূরা ফুসসিলাত ১৫] এর পরিণতিতে তাদের উপর প্রথম আযাব নাযিল হয় এবং তিন বছর পর্যন্ত উপর্যুপরি বৃষ্টি বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত্র শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। বাগান জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। কিন্তু এতদস্বত্ত্বেও তারা শির্ক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করল না। অতঃপর আট দিন সাত রাত্রি পর্যন্ত তাদের উপর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আযাব সওয়ার হয়। ফলে তাদের অবশিষ্ট বাগবাগিচা ও দালানকোঠা মাটির সাথে মিশে যায়। মানুষ ও জীব-জন্তু শূন্যে উড়তে থাকে। অতঃপর উপুড় হয়ে মাটিতে পড়তে থাকে। এভাবে আদ জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তাই বলা হয়েছেঃ “আমরা মিথ্যারোপকারীদের বংশ কেটে দিয়েছি”। হুদ ‘আলাইহিস সালামের আদেশ অমান্য করা এবং কুফর ও শির্কে লিপ্ত থাকার কারণে যখন আদ জাতির উপর আযাব নাযিল হয়, তখন হুদ আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীদেরকে আল্লাহ রক্ষা করেন। হুদ আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীরা আযাব থেকে মুক্তি পেলেন। বিস্তারিত ঘটনা [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আদ জাতির উপর ঘূর্ণিঝড়ের আকারে আযাব আসা কুরআনুলকারীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে। সূরা আল- মুমিনূনে নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনী উল্লেখ করার পর বলা হয়েছেঃ “অতঃপর আমি তাদের পরে আরো একটি সম্পপ্রদায় সৃষ্টি করেছি”। বাহ্যতঃ এরাই হচ্ছে ‘আদ’ জাতি। পরে এ সম্প্রদায়ের কাজকর্ম ও কথাবার্তা বর্ণনা করার পর বলা হয়েছেঃ একটি বিকট শব্দ তাদেরকে পাকড়াও করল। এ আয়াতের ভিত্তিতে কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ “আদ জাতির উপর বিকট ধরনের শব্দের আযাব এসেছিল। কিন্তু উভয় মতের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। এটা সম্ভব যে, বিকট শব্দ ও ঘূর্ণিঝড় উভয়টিই হয়েছিল। [তাফসীর ইবন কাসীর ৫/৪৭৪; সূরা আল-মুমিনুনের ৪১ নং আয়াতের তাফসীর]
[৩] অর্থাৎ তারা মনে করতে থাকল যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা বলছেন তা মিথ্যা। [মুয়াসসার] যদিও তারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে মিথ্যাবাদী মনে করত না। কারণ নবীগণ সর্বযুগেই সত্যবাদী ছিলেন।
[৪] অর্থাৎ সম্প্রদায়ের নেতা গোছের লোকেরা বললঃ “আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধারণা তুমি একজন মিথ্যাবাদী। ” এটা প্রায় নূহ আলাইহিসসালামের সম্প্রদায়ের প্রত্যুত্তরের মতই– শুধু কয়েকটি শব্দের পার্থক্য মাত্র। হুদ আলাইহিস্সালাম এর উত্তরে বললেনঃ আমার মধ্যে কোন নিবুদ্ধিতা নেই। ব্যাপার শুধু এতটুকুই যে, আমি বিশ্ব পালনকর্তার কাছ থেকে রাসূল হয়ে এসেছি। তার বার্তা তোমাদের কাছে পৌছাই। আমি সুস্পষ্টভাবে তোমাদের হিতাকাংখী। তাই তোমাদের পৈত্রিক মুখতায় তোমাদের সঙ্গী হওয়ার পরিবর্তে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য কথা তোমাদের কাছে পৌছে দেই। কিন্তু তা তোমাদের মনঃপুত নয়।
[৫] এখানে আদ জাতির সে আপত্তির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের পূর্বে নুহ ‘আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় উত্থাপন করেছিল। অর্থাৎ আমরা নিজেদেরই মত কোন মানুষকে নেতারূপে কিভাবে মেনে নিতে পারি? কোন ফিরিশতা হলে মেনে নেয়া সম্ভবপর ছিল। এর উত্তরেও হুদ আলাইহিস সালাম তেমনি জবাব দিয়েছিলেন, যা নূহ ‘আলাইহিস সালাম দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, কোন মানুষ আল্লাহর রাসূল হয়ে মানুষকে ভয় প্রদর্শনের জন্য আসবেন। কেননা, মানুষকে বুঝানোর জন্য মানুষেরই নবী হওয়া বাস্তবসম্মত হতে পারে।
[৬] আদ জাতির পূর্বে নুহ ‘আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের উপর পতিত মহাশক্তির স্মৃতি তখনো মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তাই হুদ আলাইহিস সালাম আযাবের কঠোরতা বর্ণনা করা প্রয়োজন মনে করেননি। বরং এতটুকু বলাই যথেষ্ট মনে করেছেন যে, তোমরা কি ভয় করনা?
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
আদ ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি। আরবের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এদের কাহিনী প্রচলিত ছিল। ছোট ছোট শিশুরাও তাদের নাম জানতো। তাদের অতীত কালের প্রতাপ-প্রতিপত্তি ও গৌরব গাঁথা প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছিল। তারপর দুনিয়ার বুক থেকে তাদের নাম-নিশানা মুছে যাওয়াটাও প্রবাদের রূপ নিয়েছিল। আদ জাতির এ বিপুল পরিচিতির কারণেই আরবী ভাষায় প্রত্যেকটি প্রাচীন ও পুরাতন জিনিসের জন্য আদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে আদিয়াত বলা হয়। যে জমির মালিক বেঁচে নেই এবং চাষাবাদকারী না থাকার কারণে যে জমি অনাবাদ পড়ে থাকে তাকে আদি-উল-আরদ বলা হয়। প্রাচীন আরবী কবিতায় আমরা এ জাতির নামের ব্যবহার দেখি প্রচুর পরিমাণে। আরবের বংশধারা বিশেষজ্ঞগণও নিজেদের দেশের বিলুপ্ত জাতিদের মধ্যে সর্বপ্রথম এ জাতিটির নামোচ্চারণ করে থাকেন। হাদীসে বলা হয়েছে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বনু যহল ইবনে শাইবান গোত্রের এক ব্যক্তি আসেন। তিনি আদ জাতির এলাকার অধিবাসী ছিলেন। তিনি প্রাচীনকাল থেকে তাদের এলাকার লোকদের মধ্যে আদজাতি সম্পর্কে যেসব কিংবদন্তী চলে আসছে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনান।
কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল আহকাফ এলাকা। এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী রাবয়ুল খালীর দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। এখন থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামনের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরা মাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শনাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিণ আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংস স্তুপ দেখা যায়। সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে। হাজরা মাউতে এক জায়গায় হযরত হূদ আলাইহিস সালামের নামে একটি কবরও পরিচিত লাভ করেছে। ১৮৩৭ খৃস্টাব্দে James R.Welleste নামক একজন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি হিসনে গুরাবে একটি পুরাতন ফলকের সন্ধান লাভ করেন। এতে হযরত হূদ আলাইহিস সালামের উল্লেখ রয়েছে। এ ফলকে উৎকীর্ণ লিপি থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি হযরত হূদের শরীয়াতের অনুসারীদের লেখা ফলক। (আল আহকাফ দেখুন)।
মূল শব্দটি হচ্ছে আলা-। এর আভিধানিক অর্থ নিয়ামতসমূহ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রতীকসমূহ এবং প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলী। আয়াতের সার্বিক মর্ম এই যে, আল্লাহর অপার অনুগ্রহের কথাও মনে রেখো, আবার এটাও ভুলে যেও না যে, তিনি তোমাদের কাছ থেকে প্রদত্ত অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেয়ারও ক্ষমতা রাখেন।