(Book# 114/٣٢٥) -৫২৮ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ১২৭-১২৯ নং আয়াত:- لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللّهِ وَاصْبِرُواْ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর। “Seek help in Allah and be patient,”

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٢٥) -৫২৮
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১২৭-১২৯ নং আয়াত:-

لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللّهِ وَاصْبِرُواْ
তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর।

“Seek help in Allah and be patient,”

وَ قَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ اَتَذَرُ مُوۡسٰی وَ قَوۡمَہٗ لِیُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ یَذَرَکَ وَ اٰلِہَتَکَ ؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبۡنَآءَہُمۡ وَ نَسۡتَحۡیٖ نِسَآءَہُمۡ ۚ وَ اِنَّا فَوۡقَہُمۡ قٰہِرُوۡنَ ﴿۱۲۷﴾
ফির‘আউন সম্প্রদায়ের সর্দাররা তাকে বললঃ তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য মুক্ত ছেড়ে দিবে এবং তোমাকে ও তোমার দেবতাদেরকে বর্জন করে চলার সুযোগ দিবে? সে বললঃ আমি তাদের সন্তানদের হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব, তাদের উপর আমাদের শক্তি ও ক্ষমতা প্রবল ও সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِہِ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِاللّٰہِ وَ اصۡبِرُوۡا ۚ اِنَّ الۡاَرۡضَ لِلّٰہِ ۟ۙ یُوۡرِثُہَا مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ؕ وَ الۡعَاقِبَۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۲۸﴾
মূসা তার সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর। এই পৃথিবীর সার্বভৌম মালিক আল্লাহ, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উহার উত্তরাধিকারী করেন, শুভ পরিণাম ও শেষ সাফল্য লাভ হয় আল্লাহভীরুদের জন্য।
قَالُوۡۤا اُوۡذِیۡنَا مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَاۡتِیَنَا وَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جِئۡتَنَا ؕ قَالَ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّہۡلِکَ عَدُوَّکُمۡ وَ یَسۡتَخۡلِفَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَیَنۡظُرَ کَیۡفَ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۲۹﴾٪
তারা বললঃ আপনি আমাদের নিকট (নাবী রূপে) আগমনের পূর্বেও আমরা (ফির‘আউন কর্তৃক) নির্যাতিত হয়েছি এবং আপনার আগমনের পরও নির্যাতিত হচ্ছি। সে (মূসা) বললঃ সম্ভবতঃ শীঘ্রই তোমাদের রাব্ব তোমাদের শক্রকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে তাদের রাজ্যে স্থলাভিষিক্ত করবেন, অতঃপর তোমরা কিরূপ কাজ কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন।

১২৭-১২৯ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, হযরত মূসা (আ) এর জন্মের পূর্বে দ্বিতীয় রামেসাসের আমলে নির্যাতনের একটা যুগ অতিবাহিত হয়। আর নির্যাতনের দ্বিতীয় যুগটি শুরু হয় হযরত মূসার নবুওয়াত লাভের পর। এ উভয় যুগেই বনী ইসরাঈলদের ছেলেদের হত্যা করা এবং মেয়েদেরকে জীবিত রাখা হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে তাদের বংশধারা বিলুপ্ত করার এবং এ জাতিটিকে অন্যজাতির মধ্যে বিলীন করে দেবার ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৯৬ সালে প্রাচীন মিসরের ধ্বংসাবশেষ খনন করার সময় সম্ভবত এ যুগেরই একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। তাতে এ মিনফাতাহ ফিরাউন নিজের কৃতিত্ব ও বিজয় ধারা বর্ণনা করার পর লিখেছে, “আর ইসরাঈলকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। তার বীজও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।”‍‍‍‌ (আরো জানার জন্য পড়ুন সূরা মু’মিন ২৫ আয়াত)।

সুরা: আল-মু’মিন
আয়াত নং :-25

فَلَمَّا جَآءَهُمْ بِالْحَقِّ مِنْ عِنْدِنَا قَالُوا اقْتُلُوْۤا اَبْنَآءَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ وَ اسْتَحْیُوْا نِسَآءَهُمْؕ وَ مَا كَیْدُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ

অতঃপর যখন সে আমার পক্ষ থেকে সত্য এনে হাজির করলো৩৮ তখন তারা বললো, যারা ঈমান এনে তার সাথে সামিল হয়েছে তাদের ছেলেদের হত্যা করো এবং মেয়েদের জীবিত রাখো।৩৯ কিন্তু কাফেরদের চক্রান্ত ব্যর্থই হয়ে গেল।৪০

তাফসীর :

 

টিকা:৩৮) অর্থাৎ যখন হযরত মূসা (আ) একের পর এক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে পুরোপুরি প্রমাণ করলেন যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত রসূল এবং মজবুত প্রমাণাদি দ্বারা তাঁর সত্য হওয়া সুস্পষ্ট করে দিলেন।

টিকা:৩৯) পূর্বেই সূরা আ’রাফের ১২৭ আয়াতে একথা উল্লেখিত হয়েছে যে, ফেরাউনের দরবারের লোকজন তাকে বলেছিলো, মূসাকে এভাবে অবাধে তৎপরতা চালানোর অধিকার আর কতদিন দেয়া যাবে এবং তার জবাবে ফেরাউন বলেছিলো অচিরেই আমি বনী ইসরাঈলদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করার এবং কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখার নির্দেশ দিতে যাচ্ছি। (তাফহীমুল কুরআন, আল আ’রাফ, টীকা ৯৩)। এ আয়াতটি থেকে জানা যাচ্ছে যে, ফেরাউনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত যে নির্দেশ জারী করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য ছিল হযরত মূসা (আ) এবং তাঁর সহযোগী ও অনুসারীদের এতটা ভীত সন্ত্রস্ত করে দেয়া যে, তারা যেন ভয়ের চোটে তার পক্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

টিকা:৪০) মূল আয়াতাংশ হচ্ছে وَمَا كَيْدُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ । এ আয়তাংশের আরেকটি অর্থ হতে পারে এই যে, ঐ কাফেরদের চক্রান্ত ছিল গোমরাহী, জুলুম-নির্যাতন এবং ন্যায় ও সত্যের বিরোধিতার খাতিরে। অর্থাৎ ন্যায় ও সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়া এবং মনে মনে তার সমর্থক হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিজেদের জিদ ও হঠকারিতা বৃদ্ধিই পেয়েছে এবং সত্যকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তারা জঘন্য থেকে জঘন্যতম পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধান্বিত হয়নি।

সুরা: আল-মু’মিন
আয়াত নং :-26

وَ قَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِیْۤ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَ لْیَدْعُ رَبَّهٗۚ اِنِّیْۤ اَخَافُ اَنْ یُّبَدِّلَ دِیْنَكُمْ اَوْ اَنْ یُّظْهِرَ فِی الْاَرْضِ الْفَسَادَ

একদিন৪১ ফেরাউন তার সভাসদদের বললোঃ আমাকে ছাড়ো, আমি এ মূসাকে হত্যা করবো।৪২ সে তার রবকে ডকে দেখুক। আমার আশঙ্কা হয়, সে তোমাদের দ্বীনকে পাল্টে দেবে কিংবা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।”৪৩

তাফসীর :

 

টিকা:৪১) এখান থেকে যে ঘটনার বর্ণনা শুরু হচ্ছে তা বনী ইসরাঈল জাতির ইতিহাসের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। অথচ বনী ইসরাঈল নিজেরাই তা বিস্মৃত হয়ে বসেছে। বাইবেল এবং তালমুদে এর কোন উল্লেখ নেই এবং অন্যান্য ইসরাঈলী বর্ণনায়ও তার কোন নাম গন্ধ পর্যন্ত দেখা যায় না। ফেরাউন এবং হযরত মূসার (আ) মধ্যকার সংঘাতের যুগে এক সময় এ ঘটনাটিও যে সংঘটিত হয়েছিলো বিশ্ববাসী কেবল কুরআন মজীদের মাধ্যমেই তা জানতে পেরেছে। ইসলাম ও কুরআরে বিরুদ্ধে শত্রুতায় অন্ধ হয়ে না থাকলে যে ব্যক্তিই এ কাহিনী পাঠ করবে সে একথা উপলব্ধি না করে পারবে না যে, ন্যায় ও সত্যের দিকে আহবানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ কাহিনী অত্যন্ত মূল্যবান ও বিশেষ মর্যাদার দাবীদার। তাছাড়া হযরত মূসার (আ) ব্যক্তিত্ব, তাঁর তাবলীগ ও প্রচার এবং তাঁর মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বিস্ময়কর মু’জিযাসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফেরাউনের নিজের সভাসদদের মধ্য থেকে কারো সঙ্গোপনে ঈমান গ্রহণ করা এবং মূসাকে (আ) হত্যার ব্যাপারে ফেরাউনকে উদ্যোগী হতে দেখে আত্মসংবরণ করতে না পারা বুদ্ধি-বিবেক ও যুক্তি বিরোধীও নয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদরা জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার লম্বা চওড়া দাবী সত্ত্বেও গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতায় অন্ধ হয়ে কুরআনের সুস্পষ্ট সত্যসমূহের ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলামের “মূসা” নামক প্রবন্ধের লেখক এ শিরোনামের প্রবন্ধে যা লিখেছেন তা থেকেই একথা বুঝা যায়। তিনি লিখছেনঃ “ফেরাউনের দরবারে একজন বিশ্বাসী মূসাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন, কুরআনের বর্ণিত এ কাহিনী সুস্পষ্ট নয় ( সূরা ৪০, আয়াত ২৮ )। আমরা কি তাহলে হাগগাদায় বর্ণিত কাহিনীর বিষয়বস্তুর সাথে এ কাহিনীর তুলনা করবো যাতে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে কাজ করার জন্য ইয়েথরো ফেরাউনের দরবারে পরামর্শ দিয়েছিলো? ” জ্ঞান গবেষণার এসব দাবিদারদের কাছে এটা যেন স্বতঃসিদ্ধ যে, কুরআনের প্রতিটি বিষয়ে অবশ্যই খুঁত বের করতে হবে। কুরআনের কোন বক্তব্যের মধ্যে যদি কোন খুঁত বের করার সুযোগ না-ই পাওয়া যায় তাহলেও অন্তত এতটুকু যেন বলা যায় যে, এ কাহিনী পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এভাবে ধীরে ধীরে পাঠকদের মনে এ সন্দেহও সৃষ্টি করে দেয়ার চেষ্টা করা যে, ইয়েথরো কর্তৃক মূসার (আ) জন্ম পূর্ব যে কাহিনী হাগগাদায় বর্ণিত হয়েছে মুহাম্মাদ ﷺ হয়তো কোথাও থেকে তা শুনে থাকবেন এবং সেটাই এখানে এভাবে বর্ণনা করে থাকবেন। এটা হচ্ছে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার একটা বিশেষ ষ্টাইল যা এসব লোকেরা ইসলাম, কুরআন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অবলম্বন করে চলেছে।

টিকা:৪২) একথার দ্বারা ফেরাউন এ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছে যেন কিছু লোক তাকে বিরত রেখেছে আর সেই কারণে সে মূসাকে (আ) হত্যা করছে না। তারা যদি বাঁধা না দিতো তাহলে বহু পূর্বেই সে তাঁকে হত্যা করে ফেলতো। অথচ প্রকৃতপক্ষে বাইরের কোন শক্তিই তাকে বাঁধা দিচ্ছিলো না। তার মনের ভীতিই তাকে আল্লাহর রসূলের গায়ে হাত তোলা থেকে বিরত রেখেছিলো।

টিকা:৪৩) অর্থাৎ আমি তার পক্ষ থেকে বিপ্লবের আশঙ্কা করছি। আর সে যদি বিপ্লব করতে নাও পারে তাহলে এতটুকু বিপদাশঙ্কা অন্তত অবশ্যই আছে যে, তার কর্ম-তৎপরতার ফলে দেশে অবশ্যই বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই সে মৃত্যুদণ্ড লাভের মত কোন অপরাধ না করলেও শুধু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার (Maintenance of public order) খাতিরে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। সে ব্যক্তির ব্যক্তি সত্তা আইন শৃঙ্খলার জন্য সত্যিই বিপজ্জনক কিনা তা দেখার দরকার নেই। সেজন্য শুধু “হিজ ম্যাজেষ্টি”র সন্তুষ্টিই যথেষ্ট। মহামান্য সরকার যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হন যে, এ লোকটি বিপজ্জনক তাহলে মেনে নিতে হবে, সে সত্যিই বিপজ্জনক এবং সেজন্য শিরোচ্ছেদের উপযুক্ত। এ স্থানে “দ্বীন পাল্টে দেয়া”র অর্থও ভালভাবে বুঝে নিন, যার আশঙ্কায় ফেরাউন হযরত মূসাকে (আ) হত্যা করতে চাচ্ছিলো। এখানে দ্বীন অর্থ শাসন ব্যবস্থা। তাই ফেরাউনের কথার অর্থ হলো انى اخاف ان يغير سلطانكم (روح المعانى ج 24 ص 56) । অন্য কথায়, ফেরাউন ও তার খান্দানের চূড়ান্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে ধর্ম, রাজনীতি, সভ্যতা ও অর্থনীতির যে ব্যবস্থা মিসরে চলছিলো তা ছিল তৎকালে ঐ দেশের ‘দ্বীন’। ফেরাউন হযরত মূসার আন্দোলনের কারণে এ দ্বীন পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলো। কিন্তু প্রত্যেক যুগের কুচক্রী ও ধূরন্ধর শাসকদের মত সেও একথা বলছে না যে, আমার হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তাই আমি মূসাকে হত্যা করতে চাই। বরং পরিস্থিতিকে সে এভাবে পেশ করছে যে, হে জনগণ, বিপদ আমার নয়, তোমাদের। কারণ মূসার আন্দোলন যদি সফল হয়, তাহলে তোমাদের দ্বীন বদলে যাবে। নিজের জন্য আমার চিন্তা নেই। আমি তোমাদের চিন্তায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে, আমার ক্ষমতার ছত্রছায়া থেকে বঞ্চিত হলে তোমাদের কি হবে। তাই যে জালেমের দ্বারা তোমাদের ওপর থেকে এ ছত্রছায়া উঠে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। কারণ সে দেশ ও জাতি উভয়ের শত্রু।

সুরা: আল-মু’মিন
আয়াত নং :-27

وَ قَالَ مُوْسٰۤى اِنِّیْ عُذْتُ بِرَبِّیْ وَ رَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا یُؤْمِنُ بِیَوْمِ الْحِسَابِ۠

মূসা বললো, যেসব অহংকারী হিসেবের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে না, তাদের প্রত্যেকের মোকাবিলায় আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় গ্রহণ করেছি।৪৪

তাফসীর :

 

টিকা:৪৪) এখানে দু’টি সমান সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ দু’টি সম্ভাবনার কোনটিকেই অগ্রাধিকার দেয়ার কোন ইঙ্গিত এখানে নেই। একটি সম্ভাবনা হচ্ছে, হযরত মূসা নিজেই সে সময় দরবারে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই ফেরাউন তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং হযরত মূসা (আ) তাকে ও তার সভাসদদের উদ্দেশ্য করে তখনই সবার সামনে প্রকাশ্যে এ জবাব দেন। অপর সম্ভাবনাটি হচ্ছে, ফেরাউন হযরত মূসার (আ) অনুপস্থিতিতে তার সরকারের দায়িত্বশীল লোকদের কোন মজলিসে একথা প্রকাশ করে এবং হযরত মূসাকে (আ) তার এ আলোচনার খবর কিছু সংখ্যক ঈমানদার লোক পৌঁছিয়ে দেয়, আর তা শুনে তিনি তাঁর অনুসারীদের একথা বলেন। এ দু’টি অবস্থার যেটিই বাস্তবে ঘটে থাকুক না কেন হযরত মূসার (আ) কথায় স্পষ্টত প্রকাশ পাচ্ছে যে, ফেরাউনের হুমকি তাঁর মনে সামান্যতম ভীতিভাবও সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার হুমকির জবাব তার মুখের ওপরেই দিয়ে দিয়েছেন। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কুরআন মজীদে এ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে আপনা আপনি একথা প্রকাশ পায় যে, “হিসেবের দিন” সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে যেসব জালেমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিলো তাদের জন্যও সে একই জবাব।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 127-129

لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللّهِ وَاصْبِرُواْ

“Seek help in Allah and be patient,”

Fir`awn vows to kill the Children of Israel, Who complain to Musa; Allah promises Them Victory

Allah mentions the conspiracy of Fir`awn and his people, their ill intentions and their hatred for Musa and his people.

وَقَالَ الْمَلُ مِن قَوْمِ فِرْعَونَ

The chiefs of Fir`awn’s people said, (to Fir`awn),

أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ

“Will you leave Musa and his people!”

will you let them be free,

لِيُفْسِدُواْ فِي الَارْضِ

“to spread mischief in the land,”

spreading unrest among your subjects and calling them to worship their Lord instead of you.

Amazingly, these people were worried that Musa and his people would cause mischief! Rather, Fir`awn and his people are the mischief-makers, but they did not realize it. They said,

وَيَذَرَكَ وَالِهَتَكَ

“and to abandon you and your gods.”

`Your gods’,

According to Ibn Abbas, as As-Suddi narrated from him,

“Were cows. Whenever they saw a beautiful cow, Fir`awn would command them to worship it. This is why As-Samiri, made the statue of a calf that seemed to moo for the Children of Israel.”

Fir`awn accepted his people’s recommendation,

قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءهُمْ وَنَسْتَحْيِـي نِسَاءهُمْ

He said:”We will kill their sons, and let their women live,”

thus reiterating his previous order concerning the Children of Israel.

وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ

and we have indeed irresistible power over them.”

He had tormented them (killing every newly born male) before Musa was born, so that Musa would not live. However, the opposite of what Fir`awn sought and intended occurred. The same end struck Fir`awn that he intended to subjugate and humiliate the Children of Israel with. Allah gave victory to the Children of Israel, humiliated and disgraced Fir`awn, and caused him to drown along with his soldiers. When Fir`awn insisted on his evil plot against the Children of Israel

قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللّهِ وَاصْبِرُواْ

Musa said to his people:”Seek help in Allah and be patient,”

and promised them that the good end will be theirs and that they will prevail, saying,

إِنَّ الَارْضَ لِلّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ

وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

قَالُواْ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِينَا وَمِن بَعْدِ مَا جِيْتَنَا

“Verily, the earth is Allah’s. He gives it as a heritage to whom He wills of His servants; and the (blessed) end is for the pious and righteous persons.”

They said:”We suffered troubles before you came to us, and since you have come to us.”

The Children of Israel replied to Musa, `they (Fir`awn and his people) inflicted humiliation and disgrace on us, some you witnessed, both before and after you came to us, O Musa’!

Musa replied, reminding them of their present situation and how it will change in the future,

قَالَ عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ

“It may be that your Lord will destroy your enemy. ..”

encouraging them to appreciate Allah when the afflictions are removed and replaced by a bounty.

وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الَارْضِ

فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

and make you successors on the earth, so that He may see how you act!”

১২৭-১২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

এখানে ফিরাউনও তার দলবলের পাস্পরিক পরামর্শের সংবাদ দেয়া হচ্ছে। ঐ লোকদের অন্তরে মূসা (আঃ)-এর প্রতি কত বেশী হিংসা ছিল তাদের এ পরামর্শের দ্বারা তা বুঝা যাচ্ছে। ফিরাউনকে তার পরিষদের লোকেরা বলছে-“আপনি কি মূসা (আঃ)-কে এমন মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিবেন যে, সে পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে এবং দেশবাসীকে ফিত্না ফাসাদের মধ্যে নিক্ষেপ করবে, আর তাদের মধ্যে আল্লাহর কথা প্রচার করবে? কি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, এ লোকগুলো অন্যদেরকে মূসা (আঃ) ও মুমিনদের ফাসাদ থেকে সাবধান করছে, অথচ তারা নিজেরাই ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী! তাদের নিজেদেরই খবর নেই! কেউ কেউ বলেন যে, (আরবী)–এর (আরবী) অক্ষরটি এখানে ‘এবং’ -এর অর্থ প্রকাশক নয়, বরং (আরবী)-এর অর্থ প্রকাশ করছে। ভাবার্থ হচ্ছে – “হে ফিরাউন! আপনি কি মূসা (আঃ) -কে এই অনুমতি দিয়েছেন যে, সে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে, অথচ সে আপনার আনুগত্য স্বীকার করে না এবং আপনার দেবতাদের উপাসনা পরিত্যাগ করেছে?” হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) এটাকে (আরবী) এভাবে পড়েছেন। এটা ইবনে জারীর (রাঃ)-এর বর্ণনা। কেউ কেউ আবার এই (আরবী) কে (আরবী) বলেছেন। তখন ভাবার্থ হবে- “হে ফিরাউন! আপনি কি মূসা (আঃ)-কে এমন মুক্তভাবে ছেড়ে দেবেন যে, সে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে পরিত্যাগ করবে?” কেউ কেউ এটাকে (আরবী) পড়েছেন। এর অর্থ নেয়া হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ আপনার উপাসনা পরিত্যাগ করবে? (এটা ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ) এবং অন্যান্য হতে বর্ণিত হয়েছে) প্রথম কিরআতের উপর ভিত্তি করে কেউ কেউ এই ফলাফলে পৌছেছেন যে, ফিরাউনও। গোপনীয়ভাবে একটি মূর্তির পূজা করতো। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তার গলায় একটি মূর্তি লটকানো থাকতো। ওকেই সে সিজদা করতো। এর উপর ভিত্তি করেই হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐ লোকগুলো যখন কোন সুন্দর গাভী দেখতো তখন ফিরাউন তাদেরকে ওর পূজা করার নির্দেশ দিতো। এ জন্যেই সামেরী একটি গরু বানিয়েছিল যার মধ্য থেকে শব্দ বের হতো । মোটকথা, ফিরাউন তার দরবারের লোকদের কথা মেনে নিলো এবং বললোঃ “আমি তার বংশ কেটে ফেলার জন্যে তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করবো এবং মেয়েদেরকে জীবিত রাখবো।” এই প্রকারের এটা ছিল দ্বিতীয় অত্যাচার। ইতিপূর্বেও হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্মের পূর্বে সে এরূপই করেছিল, যেন দুনিয়াতে তার অস্তিত্বই না আসে। কিন্তু ঘটলো তার বিপরীত যা ফিরাউন কামনা করেছিল। শেষ পর্যন্ত মূসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং বেঁচেও থাকেন। দ্বিতীয়বারও সে এরূপ করারই ইচ্ছা করলো । সে বানী ইসরাঈলকে লাঞ্ছিত করে তাদের উপর বিজয় লাভের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু এখানেও তার বাসনা পূর্ণ হয়নি। আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-কে সম্মান দেন এবং ফিরাউনকে লাঞ্ছিত করেন, আর তাকে ও তার দলবলকে নদীতে ডুবিয়ে দেন। ফিরাউন যখন বানী ইসরাঈলের ক্ষতিসাধন করার দৃঢ় সংকল্প করে বসে তখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলে- “তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর।” হযরত মূসা (আঃ) তাদের সাথে শুভ পরিণামের ওয়াদা করলেন। তিনি বানী ইসরাঈলকে বললেনঃ “রাজ্য তোমাদেরই হয়ে যাবে। যমীন হচ্ছে আল্লাহর। তিনি যাকে চান তাকেই রাজ্যের শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে থাকেন এবং ভাল পরিণাম মুত্তাকীদেরই বটে।” মূসা (আঃ)-এর সঙ্গী-সাথীগণ তাঁকে সম্বোধন করে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি আমাদের কাছে আগমনের পূর্বেও আমাদেরকে কঠিন দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং আপনি আসার পরেও স্বচক্ষে দেখছেন যে, আমাদেরকে কতইনা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হচ্ছে!” বানী ইসরাঈল যে তাদের বর্তমান অবস্থার উপর ধৈর্যধারণ করছে সেই জন্যে হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেনঃ “অতিসত্বরই আল্লাহ পাক তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দিবেন। এই আয়াতের মাধ্যমে বানী ইসরাঈলকে আল্লাহর নিয়ামতের শাকরিয়া আদায় করার জন্যে উত্তেজিত ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-
[১] এ কালেমায় দুটি কেরাআত আছে, (এক) (وَاٰلِهَتَكَ) অর্থাৎ আপনার মা’বুদদেরকে। তখন এর অর্থ হবেঃ ফিরআউন নিজে ইলাহ হওয়ার দাবী করলেও তার আরও কিছু মা’বুদ ছিল। তার জাতির নেতা শ্রেণীর লোকেরা বলতে লাগল যে, কিভাবে এরা আপনাকে এবং আপনার মা’বুদদের ইবাদত ত্যাগ করার মত দুঃসাহস দেখাতে পারে? (দুই) (والاهتك) অর্থাৎ আপনার ইবাদতকে। তখন এর অর্থ হবেঃ ফিরআউন আর কোন মা’বুদের ইবাদত করত না, বরং তার জাতির নেতা গোছের লোকেরা তাকে এ বলে উস্কাতে লাগল যে, তাদের কেমন সাহস যে, তারা আপনার ইবাদতকে ত্যাগ করতে পারে? [তাবারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

[২] ফির’আউনের সভাষদ নেতা গোছের লোকেরা ফির’আউনকে বলল যে,তাহলে কি তুমি মূসা এবং তার সম্প্রদায়কে এমনি ছেড়ে দেবে, যাতে তোমাকে এবং তোমার উপাস্যদেরকে পরিহার করে দেশময় দাঙ্গা-ফাসাদ করতে থাকবে? এতে বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা নেব যে, তাদের মধ্যে কোন পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে হত্যা করব শুধু কন্যা-সন্তানদের বাঁচতে দেব। যার ফলে কিছুকালের মধ্যেই তাদের জাতি পুরুষশূন্য হয়ে পড়বে; থাকবে শুধু নারী আর নারী। আর তারা হবে আমাদের সেবাদাসী। তাছাড়া তাদের উপর তো আমাদের পরিপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছেই; যা ইচ্ছা তাই করব। এরা আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।
[৩] ফির’আউন মূসা আলাইহিস সালামের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতায় পরাজিত হয়ে বনীইসরাঈলের ছেলেদেরকে হত্যা করে মেয়েদেরকে জীবিত রাখার আইন তৈরী করে দিল। এতে বনী-ইসরাঈলরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল যে, মূসা আলাইহিস সালামের জন্মের পূর্বে ফিরআউন তাদের উপর যে আযাব চাপিয়ে দিয়েছিল তা আবার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর মূসা আলাইহিস সালাম যখন তা উপলদ্ধি করলেন, তখন একান্তই রাসূলজনোচিত সোহাগ ও দর্শনানুযায়ী সে বিপদ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য তাদেরকে দু’টি বিষয় শিক্ষাদান করলেন। (এক) শক্রর মোকাবেলায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা এবং (দুই) কার্যসিদ্ধি পর্যন্ত সাহস ও ধৈর্য ধারণ। সেই সঙ্গে একথাও বাতলে দিলেন যে, এই ব্যবস্থা যদি অবলম্বন করতে পার, তাহলে এ দেশ তোমাদের, তোমরাই জয়ী হবে। আর একথা নিশ্চিত যে, শেষ পর্যন্ত মুত্তাকীরাই কৃতকার্যতা লাভ করে থাকে।

Leave a Reply