(Book# 114/٣٢٩) -৫৩২ www.motaher21.net সুরা: আত্-তাওবা সুরা:৯ ১৯-২২ নং আয়াত:- أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানোকে এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে….? Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram…..?

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٢٩) -৫৩২
www.motaher21.net
সুরা: আত্-তাওবা
সুরা:৯
১৯-২২ নং আয়াত:-
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানোকে এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে….?

Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram…..?
اَجَعَلۡتُمۡ سِقَایَۃَ الۡحَآجِّ وَ عِمَارَۃَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ کَمَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ جٰہَدَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ لَا یَسۡتَوٗنَ عِنۡدَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۘ۱۹﴾
তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানোকে এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তাদের সমান সাব্যস্ত করে রেখেছ যারা আল্লাহ ও কিয়ামাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করে? তারা আল্লাহর সমীপে সমান নয়; যারা সীমা লংঘনকারী তাদেরকে আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেননা।
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ ہَاجَرُوۡا وَ جٰہَدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ ۙ اَعۡظَمُ دَرَجَۃً عِنۡدَ اللّٰہِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ ﴿۲۰﴾
যারা ঈমান এনেছে ও হিজরাত করেছে, আর নিজেদের ধন ও প্রাণ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা মর্যাদায় আল্লাহর কাছে অতি বড়, আর তারাই হচ্ছে পূর্ণ সফলকাম ।

یُبَشِّرُہُمۡ رَبُّہُمۡ بِرَحۡمَۃٍ مِّنۡہُ وَ رِضۡوَانٍ وَّ جَنّٰتٍ لَّہُمۡ فِیۡہَا نَعِیۡمٌ مُّقِیۡمٌ ﴿ۙ۲۱﴾

তাদের রাব্ব তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন রাহমাতের ও অতি সন্তুষ্টির, আর এমন জান্নাতের যার মধ্যে তাদের জন্য চিরস্থায়ী নি’আমাত থাকবে।
خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ ﴿۲۲﴾
ওর মধ্যে তারা অনন্তকাল থাকবে, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট রয়েছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

এর তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কাফিররা বলতোঃ “বায়তুল্লাহর খিদমত করা এবং হাজীদেরকে পানি পান করানো ঈমান ও জিহাদ হতে উত্তম। যেহেতু আমরা এ দুটো খিদমত আঞ্জাম দিচ্ছি সেহেতু আমাদের চেয়ে উত্তম আর কেউই হতে পারে না।” আল্লাহ তাআলা এখানে তাদের অহংকার ও দম্ভ এবং সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, হে কাফিররা! যখন তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তোমরা বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং সম্পূর্ণ উদাসীন থাকো। সুতরাং তোমাদের এসব গর্ব ও অহংকার বাজে ও অযৌক্তিক। এমনিতেই তো আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম, তদুপরি তোমাদের মুকাবিলায় এর গুরুত্ব আরো বেশী। কেননা, তোমাদের যে কোন সৎকর্মকেই তো শিরূক খেয়ে ফেলে। তাই আল্লাহ পাক বলেন, এ দু’টি দল কখনো সমান হতে পারে না। এই মুশরিকরা নিজেদেরকে আল্লাহর ঘরের আবাদকারী বলছে বটে, কিন্তু আল্লাহ তাদের নামকরণ করছেন যালিমরূপে। তার ঘরের যে তারা খিদমত করছে তা সম্পূর্ণ বৃথা বলে তিনি ঘোষণা করলেন।

আব্বাস (রাঃ) বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী থাকার সময় মুসলিমরা তাঁকে শিরকের কারণে নিন্দে করলে তিনি তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা যদি ইসলাম ও জিহাদে থেকে থাকে তবে আমরাও তো কাবা ঘরের খিদমত এবং হাজীদেরকে পানি পান করানোর কাজে ছিলাম।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয় যে, শিবৃকের অবস্থায় যে পুণ্যের কাজ করা হয় তার সবই বিফলে যায়। বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ (রাঃ) যখন আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করেন তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “আমরা মসজিদুল হারামের মুতাওয়াল্লী ছিলাম, গোলামদেরকে আমরা আযাদ করতাম, আমরা বায়তুল্লাহর উপর গিলাফ চড়াতাম এবং হাজীদেরকে পানি পান করাতাম।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

মুহাম্মাদ ইবনে কারীম (রঃ) বলেন যে, একদা তালহা ইবনে শায়বা (রাঃ), আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) এবং আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বসেছিলেন ও নিজ নিজ মর্যাদার কথা বর্ণনা করে গৌরব প্রকাশ করছিলেন। তালহা (রাঃ) বলেনঃ “আমি বায়তুল্লাহর চাবি রক্ষক। আমি ইচ্ছা করলে সেখানেই রাত্রি যাপন করতে পারি।” আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমি হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করিয়ে থাকি এবং আমি যমযম কূপের রক্ষক। আমি ইচ্ছা করলে সারারাত মসজিদেই কাটিয়ে দিতে পারি।” আলী (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা দু’জন যা বলছে তা আমার মোটেই বোধগম্য হচ্ছে না। আমি জনগণের ছয়মাস পূর্ব থেকে কিবলামুখী হয়ে সালাত পড়েছি। আমি একজন মুজাহিদও বটে।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। আব্বাস (রাঃ) আশংকা প্রকাশ করেন যে, না জানি তাঁকে হয়তো যমযম কূপের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “না, না, আপনি এ পদেই প্রতিষ্ঠিত থাকুন! আপনার জন্যে এতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ আয়াতের তাফসীরে একটি মারফু হাদীসও এসেছে। যা এখানেও উল্লেখ করা প্রয়োজন। নুমান ইবনে। বাশীর আল আনসারী (রাঃ) বলেনঃ “আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এক দল সাহাবীর সাথে তার মিম্বরের নিকট বসেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন লোক বলেনঃ “ইসলাম গ্রহণের পর হাজীদেরকে পানি পান করানো ছাড়া আমি আর কোন আমল না করলেও আমার কোন পরওয়া নেই। অন্য একটি লোক মসজিদে হারামের আবাদ করার কথা বললেন। তৃতীয় এক ব্যক্তি বললেনঃ “তোমরা দু’জন যে আমলের কথা বললে তার চেয়ে জিহাদই উত্তম।” তখন উমার (রাঃ) তাঁদেরকে ধমক দিয়ে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর মিম্বরের নিকট উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না।” ওটা ছিল জুমআর দিন। উমার (রাঃ) তাদেরকে বলেনঃ “জুমআর সালাত আদায় হলে পর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছো তা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করবো।” তিনি তাই করেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ (আরবী) পর্যন্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এ হাদীসটি আবদুর রাযযাক (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ), ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং ইবনে জারীর (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। আর এটা তারই শব্দ)

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura: At-Tawba
Sura:9
Verses:-19-22
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram….?

Providing Pilgrims with Water and maintaining the Sacred Masjid are not equal to Faith and Jihad

أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ امَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الاخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللّهِ

Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram as equal to the worth of those who believe in Allah and the Last Day, and strive hard and fight in the cause of Allah!

In his Tafsir, Al-`Awfi reported that Ibn Abbas explained this Ayah:

“The idolators said, `Maintaining Al-Masjid Al-Haram and providing water for pilgrims are better than embracing the faith and performing Jihad.’

They used to boast and show off among the people because they claimed, they were the people and maintainers of Al-Masjid Al-Haram. Allah mentioned their arrogance and rejection (of the faith), saying to `the people of Al-Haram’, who were idolators,

قَدْ كَانَتْ ءَايَـتِى تُتْلَى عَلَيْكُمْ فَكُنتُمْ عَلَى أَعْقَـبِكُمْ تَنكِصُونَ

مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ سَـمِراً تَهْجُرُونَ

Indeed My Ayat used to be recited to you, but you used to turn back on your heels (denying them, and refusing to listen to them with hatred). In pride, talking evil about it (the Qur’an) by night. (23:66-67)

They used to boast about being those who maintained the Sacred Sanctuary,
بِهِ سَـمِراً
(talking about it by night).

They used to talk about this by night while shunning the Qur’an and the Prophet.

Allah declared that faith and Jihad with the Prophet are better than the idolators’ maintaining Al-Masjid Al-Haram and providing water for pilgrims. These actions — maintaining and serving Allah’s House — will not benefit them with Allah because they associate others with Him.

Allah the Exalted said,

لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللّهِ وَاللّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

They are not equal before Allah. And Allah guides not those people who are the wrongdoers.

those who claimed they are the maintainers of the House. Allah described them with injustice, on account of their Shirk, and thus, their maintaining the Masjid will not avail them.”

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,

“This Ayah was revealed about Al-Abbas bin Abdul-Muttalib, for when he was captured in the battle of Badr, he said, `If you rushed before us to embrace Islam, perform Hijrah and Jihad, we were maintaining Al-Masjid Al-Haram, providing water for the pilgrims and setting the indebted free.’

Allah, the Exalted and Ever High, said,

أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ امَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الاخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللّهِ

لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللّهِ وَاللّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram as equal to the worth of those who believe in Allah and the Last Day, and strive hard and fight in the cause of Allah! They are not equal before Allah. And Allah guides not those people who are the wrongdoers.

Allah says, `All these actions were performed while committing Shirk, and I do not accept the (good deeds) that are performed while in a state of Shirk.”‘

Ad-Dahhak bin Muzahim said,

“Muslims came to Al-Abbas and his friends who were captured during the battle of Badr and admonished them for their Shirk. Al-Abbas said, `By Allah! We used to maintain Al-Masjid Al-Haram, release the indebted, serve the House (or cover it, or maintain it) and provide water for pilgrims.’ Allah revealed this verse,
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ
(Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims…”‘

There is a Hadith (from the Prophet) about the Tafsir of this Ayah that we should mention.

Abdur-Razzaq recorded that An-Nu`man bin Bashir said that;

a man said, “I do not care if I do not perform an action after embracing Islam other than providing drinking water for pilgrims (who visit the Ka`bah at Makkah).”

Another man said, “I do not care if I do not perform an action after embracing Islam other than maintaining Al-Masjid Al-Haram.”

A third man said, “Jihad in the cause of Allah is more righteous than what you have said.”

Umar admonished them, “Do not raise your voices next to the Minbar of the Messenger of Allah,”

and as it was a Friday, he said, “but after we pray the Friday prayer, we will go to the Prophet and ask him.”

This verse was revealed,
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
(Do you consider the providing of drinking water to the pilgrims and the maintenance of Al-Masjid Al-Haram), until,
لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللّهِ
(They are not equal before Allah).

Then Allah said;

الَّذِينَ امَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللّهِ وَأُوْلَيِكَ هُمُ الْفَايِزُونَ

Those who believed and emigrated and strove hard and fought in Allah’s cause with their wealth and their lives, are far higher in degree with Allah. They are the successful.

يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ

Their Lord gives them glad tidings of mercy from Him, and His being pleased (with them), and of Gardens (Paradise) for them wherein are everlasting delights.

خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا إِنَّ اللّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
They will dwell therein forever. Verily, with Allah is a great reward.

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-
[১] সুতরাং জিহাদ ও আল্লাহর উপর ঈমান এ দুটি অবশ্যই হাজীদেরকে পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের আবাদ বা সেবা করা থেকে বহুগুণ উত্তম। কেননা, ঈমান হচ্ছে দ্বীনের মূল, এর উপরই আমল কবুল হওয়া নির্ভর করে এবং চারিত্রিক মাধুর্যতা প্রকাশ পায়। আর আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে দ্বীনের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, যার মাধ্যমে দ্বীনে ইসলামী সংরক্ষিত হয়, প্রসারিত হয়, সত্য জয়যুক্ত হয় এবং মিথ্যা অপসৃত হয়। পক্ষান্তরে মসজিদুল হারামের সেবা করা এবং হাজিদেরকে পানি পান করানো যদিও সৎকাজ, কিন্তু এ সবই ঈমানের উপর নির্ভরশীল। ঈমান ও জিহাদে দ্বীনের যে স্বার্থ আছে তা এতে নেই। [সা’দী]।

[২] এ আয়াত এবং এর পরবর্তী তিনটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তা হল মক্কার অনেক মুশরিক মুসলিমদের মোকাবেলায় গর্ব সহকারে বলতঃ মসজিদুলহারামের আবাদ ও হাজীদের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আমরাই করে থাকি। এর উপর আর কারো কোন আমল শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হতে পারে না। নুমান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক জুমআর দিন তিনি কতিপয় সাহাবার সাথে মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারের পাশে বসা ছিলেন। উপস্থিত একজন বললেনঃ ইসলাম ও ঈমানের পর এবং এর মোকাবেলায় আর কোন আমলের ধার আমি ধারি না। তার উক্তি খণ্ডন করে অপরজন বললেনঃ মসজিদুল হারাম আবাদ করার মত উত্তম আমল আর নেই এবং এর মোকাবেলায় আর কোন আমলের ধার আমি ধারি না। অপর আরেকজন বললেনঃ আল্লাহর রাহে জিহাদ করার মত উত্তম আমল আর নেই এবং এর মোকাবেলায় আর কোন আমলের ধার আমি ধারি না। এভাবে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ চলতে থাকে। উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের ধমক দিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারের কাছে শোরগোল বন্ধ কর! জুম’আর সালাতের পর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি পেশ কর। কথামত প্রশ্নটি তার কাছে রাখা হল। এর প্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়। [সহীহ মুসলিমঃ ১৮৭৯] এতে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহের উপর জিহাদকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

সে যাই হোক, প্রকৃতপক্ষে মুশরিকদের কা’বা নিয়ে গর্বের অন্ত ছিল না। আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-মুমেনুনের ৬৬, ৬৭ নং আয়াতেও তা উল্লেখ করেছেন। আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল মুলতঃ মুশরিকদের অহংকার নিবারণ উদ্দেশ্যে। অতঃপর মুসলিমদের পরস্পরের মধ্যে যে সকল ঘটনা ঘটে, তার সম্পর্কে প্রমাণ উপস্থাপিত করা হয় এ সকল আয়াত থেকে। যার ফলে শ্রোতারা ধরে নিয়েছে যে, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াতগুলো নাযিল হয়। উপরোক্ত আয়াতে যে সত্যটি তুলে ধরা হয় তা হল, শির্ক মিশ্ৰিত আমল তা যত বড় আমলই হোক কবুল যোগ্য নয় এবং এর কোন মূল্যমানও নেই। সে কারণে কোন মুশরিক মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহ দ্বারা মুসলিমদের মোকাবেলায় ফযীলত ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। অন্যদিকে ইসলাম গ্রহণের পর ঈমান ও জিহাদের মর্যাদা মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি পান করানোর জায়গায় আসলেন এবং পানি চাইলেন, আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে ফযল! তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকে পানি নিয়ে আস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে পানি পান করাও। আব্বাস বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। এরা পাত্রের পানিতে হাত ঢুকিয়ে ফেলে। তিনি বললেন, আমাকে পানি দাও। অতঃপর তিনি তা থেকে পান করলেন। তারপর তিনি যমযমের কাছে আসলেন, দেখলেন তারা সেখানে কাজ করছে। তখন তিনি বললেন, তোমরা কাজ করে যাও, তোমরা ভালো কাজ করছ। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তোমাদের কাজের উপর ব্যাঘাত আসার সম্ভাবনা না থাকত তাহলে আমিও নীচে নামতাম এবং এর উপর অর্থাৎ ঘাড়ের উপরে করে পানি নিয়ে আসতাম। [বুখারী: ১৬৩৫]

মোটকথা: নেক আমলগুলোর মর্যাদার তারতম্য রয়েছে। সেমতে আমলকারীর মর্যাদায়ও তারতম্য হবে। অর্থাৎ সকল আমলকারীকে একই মর্যাদায় অভিষিক্ত করা যাবে না। আর একটি কথা হল, আমলের আধিক্যের উপর ফযীলত নির্ভরশীল নয়; বরং আমলের সৌন্দর্যের উপর তা নির্ভরশীল। সূরা আল-মুলকের দ্বিতীয় আয়াতে আছেঃ

(لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا)

অর্থাৎ “যাতে আল্লাহ্ পরীক্ষা করতে পারেন তোমাদের কার আমল কত সৌন্দর্যমণ্ডিত।”

[৩] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে,’ আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না’। এখানে যুলুমের সর্বশেষ পর্যায় অর্থাৎ কুফর ও শির্ক বোঝানোই উদ্দেশ্য। সুতরাং যারা কুফরী করবে তারা কখনো ভাল কাজ দ্বারা উপকৃত হওয়ার সুযোগ পাবে না। তারা ভাল কাজ করার তাওফীকও পাবে না। [মুয়াসসার] বস্তুত: ঈমান হল আমলের প্রাণ। ঈমানবিহীন আমল প্রাণশূন্য দেহের মত যা গ্রহণের অযোগ্য। আখেরাতের মুক্তির ক্ষেত্রে এর কোন দাম নেই। গোনাহ ও পাপাচারের ফলে মানুষের বিবেক ও বিচারশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে সে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। এর বিপরীতে অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি ভাল-মন্দ পার্থক্যের শক্তি দান করবেন ” সূরা আল-আনফাল: ২৯ অর্থাৎ ইবাদাত-বন্দেগী ও তাকওয়া-পরহেযগারীর ফলে বিবেক প্রখর হয়, সুষ্ঠ বিচারবিবেচনার শক্তি আসে। তাই সে ভাল-মন্দের পার্থক্যে ভুল করে না। পক্ষান্তরে যারা যালিম, যারা নিজেদের নাফসের উপর যুলুম করেছে, তারা ভাল-মন্দের পার্থক্যে ভুল করে, ফলে তাদের হিদায়াত নসীব হয় না।

[৪] এ আয়াতে পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লেখিত সমান নয়’ এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] বলা হয়েছেঃ “যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে মাল ও জান দিয়ে যুদ্ধ করেছে, আল্লাহর কাছে রয়েছে তাদের বড় মর্যাদা এবং তারাই সফলকাম।” পক্ষান্তরে তাদের প্রতিপক্ষ মুশরিকদের কোন সফলতা আল্লাহ দান করেন না। তবে সাধারণ মুসলিমগণ এ সফলতার অংশীদার, কিন্তু দেশত্যাগী মুজাহিদগণের সফলতা সবার উর্ধ্বে। তাই পূর্ণ সফলতার অধিকারী হল তারা। সে হিসেবে অর্থ দাঁড়ায়, “যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে তারা তাদের থেকে উত্তম যারা ঈমান আনলেও হিজরত করেনি। কারণ, তারা হিজরত না করার কারণে অনেক জিহাদেই অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এ আয়াতে হিজরত বলে মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করা বোঝানো হয়েছে। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

[৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেউ জান্নাতে যাবে, সে শুধু নে’আমতই প্রাপ্ত হবে, কখনও নিরাশ হবে না, তার প্রতি কঠোরতা করা হবে না। তার কাপড় কখনও পুরান হবে না, তার যৌবনও কখনও শেষ হবে না। [মুসলিম: ২৮৩৬] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ জিনিস দেব। তারা বলবে, হে আমাদের রব! এর থেকেও শ্রেষ্ঠ জিনিস কি? তিনি বলবেন, আমার সন্তুষ্টি ‘ [তাবারী]
[৬] আরাম-আয়েশের স্থায়িত্বের জন্য দুটি বিষয় আবশ্যক। এক. নেয়ামতের স্থায়িত্ব। দুই. নেয়ামত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়া। তাই আল্লাহর সৎ বান্দাদের জন্যে এ আয়াতে এবং পূর্বের আয়াতে এ দু’টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। আয়াতে আল্লাহর সৎ বান্দাদের জন্য যে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে তার বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে, তাদের অন্তরে খুশীর অনুপ্রবেশ ঘটানো, তাদের সফলতার নিশ্চয়তা, আল্লাহ্‌ তা’আলা যে তাদের উপর সন্তুষ্ট সেটা জানিয়ে দেয়া, তিনি যে তাদের প্রতি দয়াশীল সেটার বর্ণনা, তিনি যে তাদের জন্য স্থায়ী নে আমতের ব্যবস্থা করেছেন সেটার পরিচয় দেয়া। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

কোন তীর্থ কেন্দ্রে পূর্বপুরুষদের গদিনশীন হওয়া, তার রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং এমন কিছু লোকদেখানো ধর্মীয় কাজ করা যার ওপর লোকেরা বৈষয়িক পর্যায়ে সাধারণত মর্যাদা ও পবিত্রতার ভিত গড়ে তোলে আল্লাহর কাছে এগুলোর কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই। আল্লাহর পতি ঈমান আনা ও তার পথে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করাই যথার্থ মূল্য ও মর্যাদার অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব গুণের অধিকারী হয়, সে কোন উচ্চ বংশ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত না হলেও এবং তার কপালে কোন বিশেষ গুণের তকমা, আটা না থাকলেও সে-ই যথার্থ মর্যাদাবান ব্যক্তি। কিন্তু যারা এসব গুণের অধিকারী নয়, তারা নিছক বিরাট সম্মানিত ও বুজর্গ ব্যক্তির সন্তান, দীর্ঘকাল থেকে তাদের পরিবারে গদিনশীন প্রথা চলে আসছে এবং বিশেষ সময়ে তারা বেশ ধুমধাম সহকারে কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকে বলেই কোন প্রকার মর্যাদার অধিকারী হবে না। উপরন্তু এ ধরনের মেকী মৌরুসী অধিকারকে স্বীকৃতি দান করে পবিত্র স্থানসমূহ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলো এ অযোগ্য ও অপাংক্তেয় লোকদের হাতে রেখে দেয়াও কোন ক্রমেই বৈধ হতে পারে না।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:

সাহাবী নুমান বিন বাশীর আল আনসারী (রাঃ) বলেন: একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একদল সাহাবীর সাথে তাঁর মিম্বারের নিকট বসেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন লোক বললেন: ইসলাম গ্রহণ করার পর হাজীদের পানি পান করানো ছাড়া আমি আর কোন আমল না করলেও আমার কোন পরওয়া নেই। অন্য একটি লোক মাসজিদে হারাম আবাদ করার কথা বললেন। আরেকজন লোক বললেন: তোমরা যা বলেছ তা থেকে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করা উত্তম। উমার (রাঃ) তাদের ধমক দিলেন এবং বললেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মিম্বারের নিকট তোমরা আওয়াজ উঁচু করো না। সেটা জুমুআর দিন ছিল। উমার (রাঃ) তাদেরকে বললেন: জুমুআর সালাত আদায় করার পর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছো তা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করব। তিনি তা-ই করলেন। তখন

(أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ…)

‘হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মাসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে …’ আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১৮৭৯)

মোটকথা এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখা যে সবচেয়ে বেশি উত্তম আমল সে কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে কথা প্রসঙ্গে এখানে জিহাদের গুরুত্ব ও মাহাত্ম বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা ছাড়া কোন আমলই তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

শির্ক মিশ্রিত আমল যত বড়ই হোক কবুল করা হবে না এবং কোন মূল্যায়নও করা হবে না। সে কারণে কোন মুশরিক মাসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহ দ্বারা মুসলিমদের সমান ফযীলত ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। অন্যদিকে ইসলাম গ্রহণের পর ঈমান ও জিহাদের মর্যাদা মাসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহ করার তুলনায় অনেক বেশি। তাই যে মুসলিম ঈমান ও জিহাদে অগ্রগামী সে অন্য মুসলিমদের থেকে অনেক মর্যাদার অধিকারী।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আমল যত বড়ই হোক ঈমান আনা ছাড়া কখনো তা কবূল হবে না এবং শির্ক মিশ্রিত হলেও কবুল হবে না।
২. ইসলামে জিহাদের ফযীলত অপরিসীম।

Leave a Reply