(Book# 114/٣٢٨) -৫৩১ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ১৪০-১৪২ নং আয়ত:- وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِين এবং বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবেনা। And follow not the way of the mischief-makers.

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٢٨) -৫৩১
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৪০-১৪২ নং আয়ত:-
وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِين
এবং বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবেনা।
And follow not the way of the mischief-makers.

قَالَ اَغَیۡرَ اللّٰہِ اَبۡغِیۡکُمۡ اِلٰـہًا وَّ ہُوَ فَضَّلَکُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۴۰﴾
সে বললঃ আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে তোমাদের জন্য অন্য মা‘বূদের সন্ধান করব? অথচ তিনিই হলেন একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে বিশ্ব জগতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন!
وَ اِذۡ اَنۡجَیۡنٰکُمۡ مِّنۡ اٰلِ فِرۡعَوۡنَ یَسُوۡمُوۡنَکُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ ۚ یُقَتِّلُوۡنَ اَبۡنَآءَکُمۡ وَ یَسۡتَحۡیُوۡنَ نِسَآءَکُمۡ ؕ وَ فِیۡ ذٰلِکُمۡ بَلَآءٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ عَظِیۡمٌ ﴿۱۴۱﴾٪
স্মরণ কর সেই সময়টির কথা, যখন আমি তোমাদেরকে ফির‘আউনের অনুসারীদের দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়েছি, যারা তোমাদেরকে অতিশয় মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক ও ন্যাক্কারজনক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা।

وَ وٰعَدۡنَا مُوۡسٰی ثَلٰثِیۡنَ لَیۡلَۃً وَّ اَتۡمَمۡنٰہَا بِعَشۡرٍ فَتَمَّ مِیۡقَاتُ رَبِّہٖۤ اَرۡبَعِیۡنَ لَیۡلَۃً ۚ وَ قَالَ مُوۡسٰی لِاَخِیۡہِ ہٰرُوۡنَ اخۡلُفۡنِیۡ فِیۡ قَوۡمِیۡ وَ اَصۡلِحۡ وَ لَا تَتَّبِعۡ سَبِیۡلَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿۱۴۲﴾
আমি মূসাকে ও‘য়াদা দিয়েছিলাম ত্রিশ রাতের জন্য এবং আরো দশ দ্বারা ওটা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময়টি চল্লিশ রাত দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। মূসা তার ভাই হারুনকে বলেছিলঃ তুমি আমার কাওমের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্তরূপে কাজ করবে এবং তাদেরকে সংশোধন করার কাজ করতে থাকবে, এবং বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবেনা।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মিসর থেকে বের হবার পর বনী ইসরাঈলীদের দাসসুলভ জীবনের অবসান ঘটলো। তারা একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদা লাভ করলো। এ সময় বনী ইসরাঈলীদেরকে একটি শরীয়াত দান করার জন্য মহান আল্লাহর হুকুমে মূসা (আ) কে সিনাই পাহাড়ে ডাকা হলো। কাজেই ওপরে যে ডাকের কথা বলা হয়েছে তা ছিল এ ব্যাপারে প্রথম ডাক। আর এর জন্য চল্লিশ দিনের মেয়াদ নির্দিষ্ট করার বিশেষ কারণ ছিল। হযরত মূসা চল্লিশ দিন পাহাড়ের ওপর কাটাবেন। রোযা রাখবেন। দিনরাত ইবাদত-বন্দেগী ও চিন্তা-গবেষণা করে মন-মস্তিষ্ককে একমুখী ও একনিষ্ঠ করবেন এবং এভাবে তাঁর ওপর যে গুরুত্বপূর্ণ বাণী নাযিল হতে যাচ্ছিল তাকে যথাযতভাবে গ্রহণ করার যোগ্যতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারবেন।

হযরত মূসা এ নির্দেশ পালন করার উদ্দেশ্যে সিনাই পাহাড়ে যাবার সময় বর্তমান মানচিত্রে বনী সালেহ ও সিনাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ওয়াদি আল শায়খ (আল শায়খ উপত্যকা) নামে অভিহিত স্থানটিতে বনী ইসরাঈলকে রেখে গিয়েছিলেন। এ উপত্যকার যে অংশে বনী ইসরাঈল তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করেছিল বর্তমানে তার নাম আল রাহা প্রান্তর। উপত্যকার এক প্রান্তে একটি ছোট পাহাড় অবস্থিত। স্থানীয় বর্ণনা অনুযায়ী হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম সামূদের এলাকা থেকে হিজরত করে এখানে এসে অবস্থান করেছিলেন। বর্তমানে সেখানে তাঁর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে জাবাল-ই-হারুণ নামে আর একটি ছোট পাহাড়। কথিত আছে, হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলদের বাছুর পূজায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুদ্ধ হয়ে এখানে এসে বসেছিলেন। তৃতীয় দিকে রয়েছে সিনাইয়ের উঁচু পর্বত! এর ওপরের ভাগ সবসময় মেঘে আচ্ছন্ন থাকে। এর উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট। এ পাহাড়ের শিখর দেশে অবস্থিত একটি গুহা আজো তীর্থ যাত্রীদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়ে আছে। এ গুহায় হযরত মূসা (আ) চিল্লা দিয়েছিলেন অর্থাৎ চল্লিশ দিন রোযা রেখে দিনরাত আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও চিন্তা-গবেষণায় কাটিয়েছিলেন। এর কাছেই রয়েছে মুসলমানদের একটি মসজিদ ও খৃস্টানদের একটি গীর্জা। অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশে রোম সম্রাট জস্টিনিনের আমলের একটি খানকাহ আজো সশরীরে বিরাজ করছে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আন নামল ৯ – ১০ টীকা)।

[[টিকা:৯) আলোচনার প্রেক্ষাপট থেকে মনে হয় যে, এটা ছিল শীতকালের একটি রাত। হযরত মূসা একটি অপরিচিত এলাকা অতিক্রম করছিলেন। এ এলাকার ব্যাপারে তাঁর বিশেষ জানা-শোনা ছিল না। তাই তিনি নিজের পরিবারের লোকদের বললেন, আমি সামনের দিকে গিয়ে একটু জেনে আসি আগুন জ্বলছে কোন্ জনপদে, সামনের দিকে পথ কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাছাকাছি কোন্ কোন্ জনপদ আছে। তবুও যদি দেখা যায়, ওরাও আমাদের মত চলমান মুসাফির যাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না, তাহলেও অন্ততপক্ষে ওদের কাছ থেকে একটু অংগার তো আনা যাবে। এ থেকে আগুন জ্বালিয়ে তোমরা উত্তাপ লাভ করতে পারবে।

হযরত মূসা (আ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খৃস্টান বাদশাহ কনষ্টানটাইন ৩৬৫ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঠিক যে জায়গায় এ ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে একটি গীর্জা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এর দু’শো বছর পরে সম্রাট জাষ্টিনিয়ান এখানে একটি আশ্রম (Monasterery) নির্মাণ করেন। কনষ্টান্টাইনের গীর্জাকেও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ আশ্রম ও গীর্জা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। এটি গ্রীক খৃস্টীয় গীর্জার (Greek Orthoox Church) পাদরী সমাজের দখলে রয়েছে। আমি ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে এ জায়গাটি দেখি। পাশের পাতায় এ জায়গার কিছু ছবি দেয়া হলো। ( এই এ্যাপের হোমস্ক্রীণে মানচিত্র অধ্যায় দেখুন) ]]

[[টিকা:১০) সূরা কাসাসে বলা হয়েছে, আওয়াজ আসছিল একটি বৃক্ষ থেকেঃ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ এ থেকে ঘটনাটির যে দৃশ্য সামনে ভেসে ওঠে তা হচ্ছে এই যে, উপত্যাকার এক কিনারে আগুনের মতো লেগে গিয়েছিল কিন্তু কিছু জ্বলছিল না এবং ধোঁয়াও উড়ছিল না। আর এ আগুনের মধ্যে একটি সবুজ শ্যামল গাছ দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকে সহসা এ আওয়াজ আসতে থাকে।

আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সাথে এ ধরণের অদ্ভূত ব্যাপার ঘটা চিরাচরিত ব্যাপার। নবী ﷺ যখন প্রথম বার নবুওয়াতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন তখন হেরা গিরিগূহায় একান্ত নির্জনে সহসা একজন ফেরেশতা আসেন। তিনি তাঁর কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাতে থাকেন। হযরত মূসার ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তি সফর কালে এক জায়গায় অবস্থান করছেন। দূর থেকে আগুন দেখে পথের সন্ধান নিতে বা আগুন সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে আসেন। অকস্মাৎ সকল প্রকার আন্দাজ অনুমানের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী স্বয়ং আল্লাহ‌ তাঁকে সম্বোধন করেন। এসব সময় আসলে এমন একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বাইরেও এবং নবীগণের মনের মধ্যেও বিরাজমান থাকে যার ভিত্তিতে তাঁদের মনে এরূপ প্রত্যয় জন্মে যে, এটা কোন জিন বা শয়তানের কারসাজী অথবা তাদের নিজেদের কোন মানসিক ভাবান্তর নয় কিংবা তাঁদের ইন্দ্রিয়ানুভূতিও কোন প্রকার প্রতারিত হচ্ছে না বরং প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু অথবা তাঁর ফেরেশতাই তাঁদের সাথে কথা বলছেন। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নাজম, ১০ নং টীকা )]]

[[টিকা:১০) অর্থাৎ দিনের আলোতে, পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় এবং খোলা চোখে মুহাম্মাদ ﷺ যা কিছু দেখলেন সে সম্পর্কে তাঁর মন বলেনি যে, এসব দৃষ্টিভ্রম কিংবা আমি কোন জ্বিন বা শয়তান দেখছি কিংবা আমার সামনে কোন কাল্পনিক ছবি ভেসে উঠেছে এবং জেগে জেগেই কোন স্বপ্ন দেখছি। বরং তাঁর চোখ যা দেখছিলো মন হুবহু তাই বিশ্বাস করেছে। তিনি যে সত্যি সত্যিই জিবরাঈল এবং যে বাণী তিনি পৌঁছিয়ে দিচ্ছিলেন তাও বাস্তবে আল্লাহ‌র অহী সে ব্যাপারে তার মনে কোন সন্দেহ জাগেনি।

এখানে প্রশ্ন জাগে যে, কি কারণে এ বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখা সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ্‌ ﷺ এর মনে আদৌ কোন সন্দেহ সৃষ্টি হলো না এবং তিনি পূর্ণ নিশ্চয়তা সহ জানতে পারলেন যে, তাঁর চোখ যা দেখছে তা প্রকৃতপক্ষেই সত্য ও বাস্তব, কোন কাল্পনিক বস্তু বা কোন জিন কিংবা শয়তান নয়? এ প্রশ্ন নিয়ে আমরা যখন গভীরভাবে চিন্তা করি তখন পাঁচটি কারণ আমাদের বোধগম্য হয়।

প্রথম কারণ, যে পারিপার্শিক অবস্থা ও পরিবেশ দেখার কাজটি সংঘটিত হয়েছিল সেটাই তার সত্যতা সম্পর্কে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করে দেয়। রসূলুল্লাহ্‌ ﷺ অন্ধকারে মুরাকাবারত অবস্থায় স্বপ্নে কিংবা অর্ধ জাগ্রত অবস্থায় এ দর্শন লাভ করেছিলেন না, বরং তখন সকালের পরিষ্কার আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত ছিল, তিনি পুরোপুরি জাগ্রত ছিলেন, খোলা আকাশে এবং দিনের পূর্ণ আলোতে তিনি নিজ চোখে ঠিক তেমনিভাবে এ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলেন যেমন কোন ব্যক্তি পৃথিবীর অন্যান্য জিনিস দেখে থাকে। এতে যদি সন্দেহের অবকাশ থাকে তাহলে আমরা দিনের বেলা নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, মানুষ, ঘরবাড়ী, মোট কথা যা কিছু দেখে থাকি তা সবই সন্দেহ যুক্ত এবং শুধু দৃষ্টিভ্রম ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা।

দ্বিতীয় কারণ, নবী ﷺ এর মানসিক অবস্থাও এর সত্যতার স্বপক্ষে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করেছিলো। তিনি পূর্ণরূপে স্বজ্ঞান ও সুস্থ ছিলেন। তাঁর ইন্দ্রিয়সমূহ সুস্থ ও সচল ছিল। তাঁর মন-মগজে পূর্ব থেকে এরূপ কোন খেয়াল চেপে ছিল না যে, এ ধরনের কোন দর্শন লাভ হওয়া উচিত বা হতে যাচ্ছে। এরূপ চিন্তা এবং তা অর্জন করার চেষ্টা থেকে মন-মগজ সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিল। এ পরিস্থিতিতে তিনি আকস্মিকভাবে এ ঘটনার মুখোমুখি হলেন। তাই সন্দেহ করার আদৌ কোন অবকাশ ছিল না যে, চোখ কোন বাস্তব দৃশ্য দেখছে না, বরং সামনে এসে দাঁড়ানো একটি কাল্পনিক বস্তু দেখছে।

তৃতীয় কারণ, এ পরিস্থিতিতে তাঁর সামনে যে সত্ত্বা আবির্ভূত হয়েছিল তা এত বিরাট, এত জাঁকালো, এত সুন্দর এবং এতই আলোকোদ্ভাসিত ছিল যে, ইতিপূর্বে নবীর ﷺ চিন্তায় ও ধ্যান-ধারণায় এরূপ সত্ত্বার কল্পিত রূপও আসেনি। সুতরাং তা তাঁর কল্পনা প্রসূতও ছিল না। কোন জিন বা শয়তান এমন জাঁকালো হতে পারে না। তাই তিনি তাকে ফেরেশতা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেননি। হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ থেকে বর্থিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেনঃ সে সময় আমি জিবরাঈলকে দেখেছি, তাঁর তখন ছয়শত ডানা ছিল (মুসনাদে আহমাদ)। অপর একটি বর্ণনায় আবদুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আরো ব্যাখ্যা করেছেন যে, জিবরাঈল আলাইহিস সালামের এক একটি ডানা এমন বিশাল ছিল যে, গোটা দিগন্ত জুড়ে আছে বলে মনে হচ্ছিল (মুসনাদে আহমাদ)। আল্লাহ‌ তায়ালা নিজে তাঁর অবস্থাকে شَدِيدُ الْقُوَى এবং ذُو مِرَّةٍ শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন।

চতুর্থ কারণ, সে সত্ত্বা যেসব শিক্ষা দান করেছিলেন তাও এ সাক্ষাতের সত্যতা সম্পর্কে প্রশান্তিদায়ক ছিল। তাঁর মাধ্যমে তিনি হঠাৎ যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং গোটা মহাবিশ্বের প্রকৃত সত্য ও তাৎপর্যের ধারক যেসব জ্ঞান লাভ করলেন তাঁর মন-মগজে সে সম্পর্কে কোন ধারণাও ছিল না। তাই তিনি সন্দেহ করেননি যে, আমারই ধ্যান-ধারণা ও কল্পনা সুবিন্যস্ত হয়ে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে। অনুরূপভাবে ঐ জ্ঞান সম্পর্কে এমন সন্দেহ পোষণেরও কোন অবকাশ ছিল না যে, শয়তান ঐ আকৃতিতে এসে তাঁকে ধোঁকা দিচ্ছে। কারণ, মানুষকে শিরক ও মূর্তিপূজার পরিবর্তে নির্ভেজাল তাওহীদের শিক্ষা দেয়া কি কখনো শয়তানের কাজ হতে পারে, না শয়তান কোনদিন এমন কাজ করেছে? আখেরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে কি শয়তান কখনো মানুষকে সাবধান করেছে? জাহেলীয়াত ও তার রীতিনীতির বিরুদ্ধে কি মানুষকে কখনো ক্ষেপিয়ে তুলেছে? নৈতিক গুণাবলীর প্রতি কি আহবান জানিয়েছে? না কি কোন ব্যক্তিকে বলেছে তুমি নিজে শুধু এ শিক্ষাকে গ্রহণ কর তাই নয়, বরং গোটা বিশ্বের বুক থেকে শিরক জুলুম এবং পাপ পঙ্কিলতাকে উৎখাত এবং ঐসব দুস্কৃতির জায়গায় তাওহীদ, ন্যায়বিচার এবং তাকওয়ার সুফলসমূহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাও?

পঞ্চম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আল্লাহ‌ তা’আলা যখন কোন ব্যক্তিকে নবুওয়াত দানের জন্য বাছাই করেন তখন তাঁর হৃদয়-মনকে সব রকম সন্দেহ সংশয় ও শয়তানী প্ররোচনা থেকে মক্ত করে দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয় দ্বারা পূর্ণ করে দেন। এ অবস্থায় তাঁর চোখ যা দেখে এবং কান যা শোনে তার সত্যতা সম্পর্কে তাঁর মন-মগজে সামান্যতম দ্বিধা-দ্বন্দ্বও সৃষ্টি হয় না। তিনি সম্পূর্ণ উদার ও উন্মুক্ত মনে এমন প্রতিটি সত্যকে গ্রহণ করে নেন যা তাঁর রবের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে প্রকাশ হয়। তা চোখে দেখার মত প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষন হতে পারে, ইলহামী জ্ঞান হিসেবে তার মনে সৃষ্টি করা হতে পারে কিংবা অহীর পয়গাম হিসেবে আসতে পারে একটি একটি করে যার প্রতিটি শব্দ শুনানো হয়ে থাকে। এর সবকটি ক্ষেত্রেই নবীর এ উপলব্ধি পুরোপুরিই থাকে যে, তিনি সব রকম শয়তানী হস্তক্ষেপ থেকে চূড়ান্তভাবে সুরক্ষিত। যে আকারেই হোক না কেন যা কিছু তাঁর কাছে পৌঁছেছে তা অবিকল তাঁর প্রভুর নিকট থেকে এসেছে। আল্লাহ‌ প্রদত্ত সমস্ত অনুগ্রহ ও নিয়ামতের মত নবীর এ উপলব্ধি ও অনুভূতিও এমন একটি নিশ্চিত জিনিস যার মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি বা বিভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। মাছের যেমন তার সাঁতারু হওয়া সম্পর্কে অনুভূতি আছে এবং তা আল্লাহ‌ প্রদত্ত। এতে যেমন বিভ্রান্তির লেশমাত্র থাকতে পারে না। অনুরূপ নবীর তাঁর নবী হওয়া সম্পর্কে যে অনূভূতি তাও আল্লাহ‌ প্রদত্ত হয়ে থাকে। কখনো এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর মনে এ সন্দেহ জাগে না যে, নবী হওয়ার ব্যাপারে হয়তো সে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে।]]

* হযরত হারুন আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের চেয়ে তিন বছরের বড়। তবুও নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনি ছিলেন তাঁর সাহায্যকারী। তাঁর নবুওয়াত স্বতন্ত্র ছিল না। বরং হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়ে তাকে নিজের উজীর নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কুরআন মজীদের সামনের দিকের আলোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 140-142
وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِين
And follow not the way of the mischief-makers.

Reminding the Children of Israel of Allah’s Blessings for Them

Allah tells;

قَالَ أَغَيْرَ اللّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـهًا

وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ

وَإِذْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ الِ فِرْعَونَ يَسُومُونَكُمْ سُوَءَ الْعَذَابِ يُقَتِّلُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ

وَفِي ذَلِكُم بَلء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ

He said:”Shall I seek for you an ilah (a god) other than Allah, while He has given you superiority over the nations.”

And (remember) when We rescued you from Fir`awn’s people, who were afflicting you with the worst torment, killing your sons and letting your women live. And in that was a great trial from your Lord.

Musa reminded the Children of Israel of Allah’s blessings, such as saving them from Fir`awn, his tyranny and the humiliation and disgrace they suffered. He reminded them of the glory and revenge against their enemy, when they watched them suffering in disgrace, destroyed by drowning and meeting utter demise. We mentioned this subject in the Tafsir of Surah Al-Baqarah

Musa fasts and worships Allah for Forty Days

Allah reminds the Children of Israel of the guidance that He sent to them by speaking directly to Musa and revealing the Tawrah to him. In it, was their law and the details of their legislation.

وَوَاعَدْنَا مُوسَى ثَلَثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً

And We appointed for Musa thirty nights and added ten, and he completed the term, appointed by his Lord, of forty nights.

Allah stated here that He appointed thirty nights for Musa. The scholars of Tafsir said that Musa fasted this period, and when they ended, Musa cleaned his teeth with a twig. Allah commanded him to complete the term adding ten more days, making the total forty. When the appointed term finished, Musa was about to return to Mount Tur, as Allah said,

يبَنِى إِسْرَءِيلَ قَدْ أَنجَيْنَـكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَـكُمْ جَانِبَ الطُّورِ الاٌّيْمَنَ

O Children of Israel! We delivered you from your enemy, and We made a covenant with you on the right side of the Mount. (20:80)

وَقَالَ مُوسَى لَاخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي

وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ

And Musa said to his brother Harun:”Replace me among my people, act in the right way and follow not the way of the mischief-makers.”

Musa left his brother Harun with the Children of Israel and commanded him to use wisdom and refrain from mischief.

This was only a reminder, for Harun was an honorable and noble Prophet who had grace and exalted standard with Allah, may Allah’s peace and blessings be upon him and the rest of the Prophets.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

১৪০-১৪২ নং আয়াতের তাফসীর:

মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে আল্লাহ তা’আলার নিয়ামতসমূহ স্মরণ করাতে গিয়ে বলছেনঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে ফিরাউনের বন্দীত্ব ও প্রভুত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং রেহাই দিয়েছেন অপমানজনক কাজ থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন মর্যাদা ও সম্মান। তোমাদের শত্রুদেরকে তিনি তোমাদের চোখের সামনে ধ্বংস করে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কে হতে পারে? এর বিস্তারিত বিবরণ সূরায়ে বাকারায় দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা বানী ইসরাঈলের উপর যে ইহসান করেছেন তা তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেনঃ তোমাদেরকে আমি হিদায়াত দান করেছি। তোমাদের নবী মূসা (আঃ) আমার সাথে কথা বলেছেন। আমি তাকে তাওরাত (আসমানী কিতাব) প্রদান করেছি। এর মধ্যে নির্দেশাবলী ও শরীয়তের যাবতীয় কথা বিস্তারিতভাবে লিবিপদ্ধ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-এর সাথে ত্রিশ রাত্রির ওয়াদা করেছিলেন। মুফাসসিরগণ বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ) ঐদিনগুলোতে রোযা রেখেছিলেন। যখন এই ত্রিশ দিন পূর্ণ হলো তখন আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ দিন পূর্ণ করার নির্দেশ দিলেন। অধিকাংশ মুফাসির বলেন যে, যিকাদা মাসের ছিল ত্রিশ দিন এবং যিলহাজ্ব মাসের ছিল দশ দিন। এভাবে ঈদের দিন পর্যন্ত চল্লিশ দিন পূর্ণ হয়। এরপর মূসা (আঃ) আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলেন এবং ঐ দিনেই দ্বীনে মুহাম্মাদী পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্যে পূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নিয়ামত তোমাদের জন্যে পরিপূর্ণ করেছি আর তোমাদের জন্যে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছি। মোটকথা, যখন মেয়াদ পূর্ণ হলো এবং মূসা (আঃ) ভূরের দিকে গেলেন, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে শত্রু থেকে মুক্তি দিয়েছি এবং তুরের সোজা পথের দিকে আহ্বান করেছি।” তখন তিনি স্বীয় ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে তার স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে যান এবং অবস্থা ও পরিবেশ ভাল রাখার উপদেশ দেন, যেন ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয়। হারূন (আঃ)-কে তাঁর উপদেশ দান শুধু সতর্কতামূলক ছিল। নচেৎ, হারূনও (আঃ) স্বয়ং নবী ছিলেন এবং মহামর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী ছিলেন। তাঁর উপর এবং সমস্ত নবীর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-
* আমরা বনী-ইসরাঈলকে সাগর পার করে দিয়েছি। ফিরআউন সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় বনী-ইসরাঈলের যে অলৌকিক কৃতকার্যতা ও প্রশান্তি লাভ হয়, তার সে প্রতিক্রিয়াই হয়েছে যা সাধারণতঃ প্রাচুর্য আসার পর বস্তুবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারাও ভোগবিলাসের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করল। ঘটনাটি হল এই যে, এই জাতি মূসা ‘আলাইহিস সালামের মু’জিযা বলে সদ্য লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল এবং গোটা ফির’আউন সম্পপ্রদায়ের সাগরে ডুবে মরার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল, কিন্তু তা সত্বেও একটু অগ্রসর হতেই তারা এমন এক মানব গোষ্ঠীর বাসভূমির উপর দিয়ে অতিক্রম করল, যারা বিভিন্ন মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। এই দেখে বনী ইসরাঈলেরও তাদের সেসব রীতি-নীতি পছন্দ হতে লাগল। তাই মূসা ‘আলাইহিসসালামের নিকট আবেদন জানাল, এসব লোকের যেমন বহু উপাস্য রয়েছে, আপনি আমাদের জন্যও এমনি ধরণের কোন একটা উপাস্য নির্ধারণ করে দিন, যাতে আমরা একটা দৃষ্ট বস্তুকে সামনে রেখে ইবাদাত করতে পারি, আল্লাহর সত্তা তো আর সামনে আসে না। মূসা ‘আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমাদের মধ্যে বড়ই মূর্খতা রয়েছে”। যাদের রীতি-নীতি তোমরা পছন্দ করছ, তাদের সমস্ত আমল তো বিনষ্ট ও বরবাদ হয়ে গেছে। এরা মিথ্যার অনুগামী। তাদের এসব ভ্রান্ত রীতি-নীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি তোমাদের জন্য অন্য কোন উপাস্য বানিয়ে দেব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়াবাসীর উপর বিশিষ্টতা দান করেছেন। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্ববাসীর উপর মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। কারণ, তখন মূসা আলাইহিস সালামের উপর যারা ঈমান এনেছিল, তারাই ছিল অন্যান্য লোক অপেক্ষা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন ও উত্তম। অতঃপর বনী-ইস্রাঈলকে তাদের বিগত অবস্থা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে যে, ফিরআউনের কওমের হাতে তারা এমনই নির্যাতিত ও দুর্দশাগ্রস্ত ছিল যে, তাদের ছেলেদেরকে হত্যা করে নারীদেরকে অব্যাহতি দেয়া হত সেবাদাসী বানিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ মূসা ‘আলাইহিস সালামের বদৌলতে এবং তার দো’আর বরকতে তাদেরকে সে আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এই অনুগ্রহের প্রভাব কি এই হওয়া উচিত যে, তোমরা সেই রাববুল আলামীনের সাথে দুনিয়ার নিকৃষ্টতম পাথরকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে। এ যে মহা যুলুম। এই থেকে তাওবাহ কর।

[১] (وٰعَدْنَا) শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল দু’পক্ষ থেকে প্রতিজ্ঞ বা প্রতিশ্রুতি দান করা। এখানেও আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে ছিল তাওরাত দানের প্রতিশ্রুতি আর মূসা আলাইহিস্ সালামের পক্ষ থেকে চল্লিশ রাত এবং এতেকাফের প্রতিজ্ঞা। কাজেই (وَوَعَدْنَا) না বলে (وَوٰعَدْنَا) বলা হয়েছে। ওয়াদার তাৎপর্য হল, কাউকে লাভজনক কোন কিছু দেয়ার পূর্বে তা প্রকাশ করে দেয়া যে, তোমার জন্য অমুক কাজ করব। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি স্বীয় কিতাব নাযিল করার ওয়াদা করেছেন এবং সেজন্য শর্ত আরোপ করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম ত্রিশ রাত্রি তুর পর্বতে আল্লাহর ইবাদাতে অতিবাহিত করবেন। অতঃপর এই ত্রিশ রাত্রির উপর আরো দশ রাত্রি বাড়িয়ে চল্লিশ রাত্রি করে দিয়েছেন।

[২] এখান থেকে একটি বিষয় সাব্যস্ত হয় যে, নবী-রাসূলগণের শরী’আতে তারিখের হিসাব ধরা হতো রাত থেকে। কারণ, এ আয়াতে ত্রিশ দিনের ক্ষেত্রে ত্রিশ রাত্রি আর চল্লিশ দিনের ক্ষেত্রে চল্লিশ রাত্রি উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ সৌর হিসাব পার্থিব লাভের জন্য, আর চান্দ্র হিসাব হলো ইবাদতের জন্য। [কুরতুবী]

[৩] মূসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তা’আলার ওয়াদা অনুসারে তূর পর্বতে গিয়ে যখন এতেকাফ করার ইচ্ছা করেন, তখন স্বীয় ভাই হারূন আলাইহিস সালামকে বললেনঃ “আমার অবর্তমানে আপনি আমার সম্প্রদায়ে আমার স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করুন।” এতে প্রমাণিত হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত হন তবে প্রয়োজনবোধে কোথাও যেতে হলে সে কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য কোন লোক নিয়োগ করে যাওয়া উত্তম। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ রীতি এই ছিল যে, কখনো যদি তাকে মদীনার বাইরে যেতে হত, তখন তিনি কাউকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে যেতেন। একবার তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন এবং একবার আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে খলীফা নিযুক্ত করেন। এমনিভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে মদীনায় খলীফা নিযুক্ত করে তিনি বাইরে যেতেন। [কুরতুবী]

মূসা ‘আলাইহিস সালাম হারূন ‘আলাইহিস সালামকে খলীফা নিযুক্ত করার সময় তাকে কয়েকটি উপদেশ দান করেন। তাতে প্রমাণিত হয় যে,কাজের সুবিধার জন্য প্রতিনিধিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা উপদেশ দিয়ে যেতে হয়। এই হেদায়াত বা নির্দেশাবলীর মধ্যে প্রথম নির্দেশ হল (وَاَصْلِحْ) এখানে (اَصْلِحْ) এর কোন কর্ম উল্লেখ করা হয়নি যে, কার ইসলাহ বা সংশোধন করা হবে। এতে বুঝা যায় যে, নিজেরও ইসলাহ করবেন এবংসঙ্গে সঙ্গে স্বীয় সম্প্রদায়েরও ইসলাহ করবেন। অর্থাৎ তাদের মাঝে দাঙ্গা-হাঙ্গামাজনিত কোন বিষয় আঁচ করতে পারলে তাদেরকে সরল পথে আনয়নের চেষ্টা করবেন। দ্বিতীয় হেদায়াত হল এই যে,

(وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ)

অর্থাৎ দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেন না। বলাবাহুল্য, হারূন আলাইহিস সালাম হলেন আল্লাহর নবী, তার নিজের পক্ষে ফাসাদে পতিত হওয়ার কোন আশংকাই ছিল না। কাজেই এই হেদায়াতের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কোন সাহায্য-সহায়তা করবেন না। সুতরাং হারূন আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন, তার সম্প্রদায় সামের’-এর অনুগমন করতে শুরু করে দিয়েছে, তখন তার সম্প্রদায়কে এহেন ভণ্ডামী থেকে বাধা দান করলেন এবং সামেরীকে সে জন্য শাসলেন। অতঃপর ফিরে এসে মূসা ‘আলাইহিস সালাম যখন ধারণা করলেন যে, হারূন ‘আলাইহিস সালাম আমার অবর্তমানে কর্তব্য পালনে অবহেলা করেছেন, তখন তার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করলেন।

Leave a Reply