Book#533

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٣٠) -৫৩৩
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৪৩ নং আয়াত:-

رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي

। সে তখন নিবেদন করলঃ হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে দর্শন দিন। আল্লাহ বললেনঃ তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পারবেনা,
“O my Lord! Show me (Yourself), that I may look upon You.”

وَ لَمَّا جَآءَ مُوۡسٰی لِمِیۡقَاتِنَا وَ کَلَّمَہٗ رَبُّہٗ ۙ قَالَ رَبِّ اَرِنِیۡۤ اَنۡظُرۡ اِلَیۡکَ ؕ قَالَ لَنۡ تَرٰىنِیۡ وَ لٰکِنِ انۡظُرۡ اِلَی الۡجَبَلِ فَاِنِ اسۡتَقَرَّ مَکَانَہٗ فَسَوۡفَ تَرٰىنِیۡ ۚ فَلَمَّا تَجَلّٰی رَبُّہٗ لِلۡجَبَلِ جَعَلَہٗ دَکًّا وَّ خَرَّ مُوۡسٰی صَعِقًا ۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبۡحٰنَکَ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۴۳﴾

মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনই দেখবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, যদি তা স্ব-স্থানে স্থির থাকে, তাহলে তুমি আমাকে দেখবে।’ সুতরাং যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতিষ্মান হলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। অতঃপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল, তখন বলল, ‘মহিমময় তুমি! আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে আমিই প্রথম।’

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
(وَوَاعَدْنَا مُوسٰي ثَلَاثِيْنَ لَيْلَةً)

অর্থাৎ ফির‘আউন ও তার দলবল ধ্বংস করার পর বানী ইসরাঈলদেরকে হিদায়াতের জন্য ধর্মগ্রন্থ দেবেন- এ জন্য মূসা (আঃ)-কে ত্রিশ রাত্রির জন্য তূর পাহাড়ে আহ্বান জানালেন। পরে আরো দশদিন যোগ করে চল্লিশ রাত্রি পূর্ণ করলেন।

পরের দশদিনের ব্যাপারে মুফাসসিরগণ মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ মুফাসসির বলেন:

ত্রিশরাত বলতে যুলকাদা মাসের ত্রিশরাত আর দশ রাত বলতে যুলহজ্জের দশরাত।

ইবনু আব্বাস, মুজাহিদসহ প্রমুখ মুফাসসির বলেন: এ হিসেবে মূসা (আঃ)-এর নির্দিষ্ট সময় কুরবানীর দিন পূর্ণ হয়। এ দিনেই মূসা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলেন আর এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (আঃ)-এর ওপর দীন ইসলামকে পূর্ণ করে দেন। যেমন বলেন:

(الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا)

মূসা (আঃ) তূর পাহাড়ে যাবার সময় হারূন (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। পরের আয়াতেই এর আলোচনা রয়েছে।

(لَنْ تَرَانِيْ)

মূসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে চাইলে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-কে বললেন: তুমি কখনো আমাকে দেখতে পাবে না। অর্থাৎ দুনিয়াতে চর্মচোখ দ্বারা আমাকে কখনো দেখা সম্ভব না। আখিরাতে মু’মিনগণ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে- এর প্রমাণাদি পূর্বের সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।

(بِرِسٰلٰتِيْ وَبِكَلَامِيْ)

অর্থাৎ মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা নবুওয়াত দান করলেন এবং সরাসরি তার সাথে কথা বললেন। আর তাদের যা প্রয়োজন ফলকে সবকিছু লিখে দিয়ে দিলেন-

মূসা (আঃ) চল্লিশ দিন পূর্ণ হবার পর লিখিত ফলকসহ ফিরে এসে যখন দেখলেন, তার উম্মাত গো-বৎস পূজায় লিপ্ত হয়ে গেছে তখন রাগে ফলক ফেলে দিলেন এবং হারূনের মাথা ধরে শাসাতে লাগলেন। পরে অবশ্য ফলক তুলে নিয়েছিলেন।

(وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسٰي مِنْۭ بَعْدِه۪)

অর্থাৎ মূসা (আঃ) যখন চল্লিশ রাত্রির জন্য তূর পাহাড়ে গেলেন, তখন সামেরী নামক জনৈক ব্যক্তি সম্প্রদায়ের সোনার অলঙ্কার জমা করে তা থেকে একটি বাছুর তৈরি করল। যার মধ্যে জিবরীল (আঃ)-এর ঘোড়ার পায়ের নীচের কিছু মাটি মিশিয়ে দিল যা তার কাছে রাখা ছিল এবং যার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা প্রাণ প্রতিষ্ঠার শক্তি রেখে দিলেন। যার কারণে বাছুরটি গরুর মত শব্দ করত। এ সম্পর্কে সূরা ত্বহার ৮৮-৮৯ নং আয়াতে বর্ণিত আছে।

(وَاخْتَارَ مُوسٰي قَوْمَه۫ سَبْعِيْنَ)

মূসা (আঃ) নিজ জাতির সত্তরজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করলেন তূর পাহাড়ে নিয়ে যাবার জন্য। এ সত্তরজন ব্যক্তি কারা ছিল তা নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে।

একটি মত হল: যখন মূসা (আঃ) তাদেরকে তাওরাতের আহকাম শোনালেন, তারা বলল- আমরা কেমন করে বিশ্বাস করব যে, এ কিতাব সত্যিই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যতক্ষণ আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে স্বয়ং কথা বলতে না শুনব ততক্ষণ এটাকে মানব না। সুতরাং তিনি সত্তর জন ব্যক্তিকে বেছে নিলেন এবং তাদেরকে তূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বললেন যা তারাও শুনল। কিন্তু তারা নতুন দাবী করে বসল যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলাকে আমরা নিজ চোখে না দেখব ততক্ষণ ঈমান আনব না।

দ্বিতীয় মত হল: এ সত্তর জন ব্যক্তি হল তারা যাদেরকে পুরো জাতির তরফ হতে বাছুর পূজার মহাপাপ থেকে তাওবাহ করার জন্য তূর পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তৃতীয় মত হল: এ সত্তর জন ব্যক্তি বানী ইসরাঈলকে বাছুর পূজা করতে দেখেছিলেন। কিন্তু তারা নিষেধ করেনি। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ দ্বিতীয় মত গ্রহণ করেছেন।

(إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ)

‘আমরা তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছি’ এ আয়াত থেকেই অনেকে বলেন, মূসা (আঃ)-এর অনুসারীদেরকে এ জন্য ইয়াহূদী বলা হয়।

(وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ)

এটি আল্লাহ তা‘আলার করুণার পরিব্যাপ্তি বটে যে, পৃথিবীতে সৎ অসৎ সবাই আল্লাহ তা‘আলার করুণা হতে উপকৃত হচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলার রহমতের একশত অংশ আছে। তার মধ্যে একটি অংশ দুনিয়াতে দিয়েছেন। যার কারণে সকল সৃষ্টি একে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকে। এমনকি পশুরাও নিজ নিজ বাচ্চার ওপর মায়া করে নিজের পা তুলে নেয়। আর তিনি রহমতের নিরানব্বই ভাগ অংশ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা এ দয়া প্রদর্শন করবেন। (সহীহ মুসলিম হা: ২১০৮, ইবনু মাযাহ হা. ৪২৯৩)

(الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ)

উম্মি নাবী অর্থ হল, নিরক্ষর নাবী। যিনি লেখাপড়া জানেন না। এখানে উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মাদ (সাঃ)। কারণ তিনি লেখাপড়া জানতেন না।

(إِنِّيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ إِلَيْكُمْ جَمِيْعَا)

এ আয়াতও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাত সার্বজনীন রিসালাত প্রমাণিত হবার জন্য স্পষ্ট দলীল, এতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-কে আদেশ করছেন যেন তিনি ঘোষণা করে দেন, হে বিশ্বের মানুষ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। তিনি বিশ্বের সকল মানব জাতির জন্য ত্রাণকর্তা ও রাসূল। তাই পরিত্রাণ ও সুপথ খৃস্ট ধর্মে নেই, ইয়াহূদী ধর্মে নেই এবং অন্য কোন ধর্মেও নেই। পরিত্রাণ ও সুফল যদি থাকে তাহলে কেবল ইসলাম ধর্মেই রয়েছে।

(يُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَكَلِمٰتِهِ)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর কালেমার প্রতি ঈমান আনে, এখানে কালিমার কথা বলা হল। কালিমার পরিমাণ অন্যত্র উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمٰتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِه ۪ مَدَدًا)‏

“বল:‎ ‘আমার প্রতিপালকের কালিমা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- আমরা এটার সাহায্যের জন্য অনুরূপ আরও সমুদ্র আনলেও।’ (সূরা কাহ্ফ ১৮:১০৯)

অন্যত্র বলেন:

(وَلَوْ أَنَّ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَّالْبَحْرُ يَمُدُّه۫ مِنْۭ بَعْدِه۪ ۪ ۪ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمٰتُ اللّٰهِ ط إِنَّ اللّٰهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ)‏

“আর সমগ্র পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যে সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরও সাতটি সমুদ্র শামিল হয়ে কালি হয় তবুও আল্লাহ তা‘আলার কালিমা লেখা শেষ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রতাপশালী, মহা প্রজ্ঞাময়।” (সূরা লুকমান ৩১:২৭)

আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আবূ বাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) এর মাঝে বিতর্ক হল, আবূ বকর (রাঃ) উমার (রাঃ) কে রাগিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর রাগান্বিত অবস্থায় উমার সেখান থেকে চলে গেলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু নিলেন, কিন্তু উমার (রাঃ) ক্ষমা করলেন না, বরং তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে আসলেন। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন: আমরা তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে ছিলাম, ঘটনা শোনার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তোমাদের এ সঙ্গী আবূ বকর (রাঃ) আগে কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি বলেন: এতে উমার (রাঃ) লজ্জিত হলেন এবং সালাম করে নাবী (সাঃ) এর পাশে বসে পড়লেন ও সব কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে বর্ণনা করলেন। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন: এতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসন্তুষ্ট হলেন। আবূ বকর (রাঃ) বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)! আমি অধিক দোষী ছিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথীর ক্রটি উপেক্ষা করবে কি? তোমরা আমার খাতিরে আমার সঙ্গীর ক্রটি উপেক্ষা করবে কি? এমন একদিন ছিল যখন আমি বলেছিলাম: হে মানুষেরা! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসূল, তখন তোমরা বলেছিলে, “তুমি মিথ্যা বলেছ” আর আবূ বকর (রাঃ) বলেছিল, আপনি সত্য বলেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪০)

– أسْبَاطُ – (وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا)

শব্দটি سَبْطٌ এর বহুবচন, অর্থ পৌত্র। এখানে গোত্রের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ইয়াকুব (আঃ)-এর বারটি সন্তান থেকে বারটি গোত্র আবির্ভূত হল। প্রত্যেক গোত্রের জন্য এক একটি দলপতি নিযুক্ত করেছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيْبًا)

“তাদের মধ্য হতে বার জন নেতা নিযুক্ত করেছিলাম” (সূরা মায়িদাহ ৫:১২)

পরের আয়াতগুলো সম্পর্কে সূরা বাক্বারায় আলোচনা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

* মূসা (আঃ) সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলেছেন।
* চর্ম চোখে আল্লাহ তা‘আলাকে দুনিয়াতে দেখা অসম্ভব।
* আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন এবং তাঁর কথার আওয়াজ রয়েছে।
* নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সারা জাহানের নাবী। তাঁর খবর যার কাছেই পৌঁছবে অতঃপর ঈমান আনবে না, সে কাফির।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 143

رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي

“O my Lord! Show me (Yourself), that I may look upon You.”

Musa asks to see Allah

Allah tells;

وَلَمَّا جَاء مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ

And when Musa came at the time and place appointed by Us, and his Lord (Allah) spoke to him; he said:

Allah said that when Musa came for His appointment and spoke to Him directly, he asked to see Him,

رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي

“O my Lord! Show me (Yourself), that I may look upon You.”

Allah said:”You cannot see Me,”

`You cannot’ (Lan) by no means indicates that seeing Allah will never occur, as (the misguided sect of) Al-Mutazilah claimed.

The Hadiths of Mutawatir grade narrated from the Messenger of Allah, affirm that the believers will see Allah in the Hereafter. We will mention these Hadiths under the explanation of Allah’s statement,

وُجُوهٌ يَوْمَيِذٍ نَّاضِرَةٌ

إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ

Some faces that Day shall be radiant. Looking at their Lord. (75:22-23)

In earlier Scriptures, it was reported that Allah said to Musa, “O Musa! No living soul sees Me, but will perish, and no solid but will be demolished.”

وَلَـكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي

Allah said:”You cannot see Me, but look upon the mountain; if it stands still in its place then you shall see Me.”

Allah said here,

فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ موسَى صَعِقًا

So when his Lord appeared to the mountain, He made it collapse to dust, and Musa fell down unconscious.

In his Musnad Imam Ahmad recorded from Anas bin Malik that;

the Prophet said about Allah’s saying;
فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ
(And when his Lord appeared to the mountain),

هكذا

Like this, then he held out the tip of his little finger.

At-Tirmidhi recorded this in the chapter of Tafsir for this Ayah, then he said; “This Hadith is Hasan Sahih Gharib.”

This was also recorded by Al-Hakim in his Mustadrak through the route of Hamad bin Salamah, and he said; “This Hadith is Sahih according to the criteria of Muslim and they did not record it.”

And As-Suddi reported that Ikrimah reported from Ibn Abbas about Allah’s saying,
فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ
(And when his Lord appeared to the mountain),

Only the extent of the little finger appeared from Him,
جَعَلَهُ دَكًّا
(He made it collapse) as dust;
وَخَرَّ موسَى صَعِقًا
(And Musa fell down unconscious) fainting from it.

Ibn Jarir recorded these because of the relation to the word Al-Ghashi.

فَلَمَّا أَفَاقَ

Then when he (Musa) recovered his senses, (after he lost consciousness),

قَالَ سُبْحَانَكَ

he said:”Glory be to You,”

thus, praising, glorifying and honoring Allah since no living soul could see Him in this life and remain alive.

Musa’ statement,

تُبْتُ إِلَيْكَ

“I turn to You in repentance,”

According to Mujahid,

means, from asking you to look at you,

وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُوْمِنِينَ

“and I am the first of the believers.”

among the Children of Israel, according to Ibn Abbas, Mujahid, and Ibn Jarir preferred this view.

Or, according to another narration from Ibn Abbas, the meaning of,
وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُوْمِنِينَ
(and I am the first of the believers), is that

`none shall see You (in this life).’

Allah said,
وَخَرَّ موسَى صَعِقًا
(And Musa fell down unconscious),

Abu Sa`id Al-Khudri and Abu Hurayrah narrated a Hadith from the Prophet that is suitable to mention here.

As for the Hadith from Abu Sa`id, Al-Bukhari recorded in his Sahih that he said:

A Jew came to the Prophet after his face was smacked, and said, “O Muhammad! One of your companions from Al-Ansar smacked me on the face.”

The Prophet said,
ادْعُوه
(Summon him)and he was summoned.

The Prophet asked him,

لِمَ لَطَمْتَ وَجْهَهُ

Why did you smack his face?

He said, “O Allah’s Messenger! I passed by that Jew and heard him swearing, `No, by He Who has chosen Musa over mankind!’

I said, `Over Muhammad too’, and I became angry and struck his face.”

The Prophet said,

لَاا تُخَيِّرُونِي مِنْ بَيْنِ الاْاَنْبِيَاءِ فَإِنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى اخِذٌ بِقَايِمَةٍ مِنْ قَوَايِمِ الْعَرْشِ فَلَا أَدْرِي أَفَاقَ قَبْلِي أَمْ جُوزِيَ بِصَعْقَةِ الطُّور

Do not prefer me above the Prophets. Verily, on the Day of Resurrection, people will be struck unconscious, and I (feel that I) am the first to wake up. Thereupon I will find that Musa is holding onto a pillar of the Throne (Arsh of Allah). I will not know if he woke up before me or he received his due (because of his) unconsciousness on (Mount) At-Tur.

Al-Bukhari recorded this Hadith in many locations of his Sahih, as did Muslim and Abu Dawud.

As for the Hadith from Abu Hurayrah, Imam Ahmad and the Two Sheikhs (Al-Bukhari and Muslim) collected his narration.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, যখন মূসা (আঃ) ওয়াদার স্থানে আসলেন এবং আল্লাহ পাকের সাথে কথা বলার মর্যাদা তার লাভ হয় তখন তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট আবেদন জানিয়ে বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনাকে দেখতে চাই। আপনাকে দেখার সুযোগে আমাকে দান করুন।” তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে বললেনঃ “তুমি কখনই আমাকে দেখতে পার না।” (আরবী)-এর মধ্যে যে (আরবী) শব্দটি রয়েছে, এটা আলিমদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। কেননা, (আরবী) শব্দটি চিরস্থায়ী অস্বীকৃতি বুঝাবার জন্যে এসে থাকে। এর উপর ভিত্তি করেই মু’তাযিলা সম্প্রদায় দলীল গ্রহণ করেছেন যে, দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থলেই আল্লাহ তাআলার দর্শন অসম্ভব। কিন্তু তাদের এই উক্তি খুবই দুর্বল। কেননা, এ ব্যাপারে ক্রমাগত হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিনরা আখিরাতে আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ করবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন কতকগুলো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের পানে তাকাবে। এর দ্বারা মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহকে পরকালে দেখতে পাবে। অতঃপর কাফিরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে পাবে না। যেমন তিনি বলেনঃ “কখনই না, ওরা সেদিন ওদের রব থেকে থাকবে অন্তরীণ।” এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই (আরবী) বা অস্বীকৃতি দুনিয়ার জন্যে নির্দিষ্ট, আখিরাতের জন্যে নয়। এইভাবে এখন বাক্যের মধ্যে সামঞ্জস্য আসছে যে, আখিরাতে আল্লাহর দৃর্শন সত্য ও সঠিক, দুনিয়ায় নয়। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই স্থলে এই কথার অর্থ ঠিক এরূপই যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “দৃষ্টিসমূহ তাকে দেখতে পায় না, কিন্তু তিনি দৃষ্টিসমূহকে দেখতে পান, তিনি সুক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞাত।” (৬:১০৩) সূরায়ে আনআমে এর উপর যথেষ্ট আলোচনা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে রয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! কোন জীবিত মৃত্যুর পূর্বে আমাকে দেখতে পারে না। শুষ্ক জিনিসও আমার আলোক সম্পাৎ করণে ধ্বংস হয়ে যায়। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, প্রতিপালক যখন পাহাড়ের উপর স্বীয় আলোকে সম্পাৎ করলেন তখন পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল এবং মূসা (আঃ) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তা’আলা পাহাড়ের উপর স্বীয় আলোক সম্পাৎ করেন ( সেই সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা ইশারাও করেন) তখন ওটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন- আবু ইসমাঈলও (রঃ) এটা বলার সময় আমাদের দিকে স্বীয় শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেন। এই হাদীসের ইসনাদে একজন বর্ণনাকারীর নাম অজ্ঞাত আছে। নবী (সঃ) (আরবী)-এ আয়াতটি পড়ার সময় স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিটি কনিষ্ঠাঙ্গুলির উপরের পোরের উপর রেখে বলেনঃ “এটুকু আলোক সম্পাতের কারণে পাহাড় চূর্ণ হয়ে যায়।” (এটা ইবনে জারীর (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম তিরমীযী (রঃ), আহমদ (রঃ) এবং হাকিম (রঃ) এরই কাছাকাছি বর্ণনা করেছেন)

হামীদ সার্বিতকে বলেনঃ “দেখ, এইভাবে। তখন সাবিত স্বীয় হাতখানা হামীদের বক্ষের উপর মেরে বলেনঃ “এ কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন এবং আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তাহলে আমি কি এটা গোপন করবো?” ইমাম আহমাদও (রঃ) এরূপই বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা শুধু কনিষ্ঠাঙ্গুলি বরাবর আলোক সম্পাৎ করেন, এর ফলেই পাহাড় জ্বলে উঠে এবং মাটি হয়ে যায়। সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, পাহাড় যমীনের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং নিমজ্জিত হতেই রয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত ওটা আর প্রকাশিত হবে না। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন পাহাড়গুলোর উপর আলোক সম্পাৎ করা হয় তখনই ছয়টি পাহাড় উড়ে যায়। তিনটি মক্কায় এসে পড়ে এবং তিনটি পড়ে মদীনায় । মদীনায় পতিত পাহাড় তিনটি হচ্ছে-(১) উহুদ, (২) অরকান এবং রাওয়া। আর মক্কায় পতিত তিনটি পাহাড় হচ্ছে- (১) হেরা, (২) সাবীর এবং (৩) সাওর। এই হাদীসটি গারীব, এমন কি মুনকারও বটে।

আলোক সম্পাতের পূর্বে তূর পাহাড়টি চর্চকে ও পরিষ্কার ছিল। আলোক সম্পাতের পর তাতে গুহা হয়ে গেছে এবং ফাটল ধরে গেছে। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাকের এ উক্তি- “হে মূসা (আঃ)! পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি ওটা প্রতিষ্ঠিত থাকে তবে বুঝবে যে, তুমি আমাকে দেখতে পারবে। নচেৎ, দেখতে পারবে না। এটা তিনি এ কারণেই বলেছেন যে, পাহাড়ের সৃষ্টি ও মজবুতি তো মানুষের চাইতে বহুগুণে বড় ও শক্ত! সুতরাং সেই পাহাড়ও আল্লাহর আলোক সম্পাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর তাফসীর মতে (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে সংজ্ঞাহীনতা। (এটা ইবনে জারীর আত্ তাবারী (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে সুদ্দীরও (রঃ) এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে) কাতাদা (রঃ) এর অর্থ নিয়েছেন মৃত্যু। আভিধানিক দিক দিয়ে এ অর্থটিও সঠিক। যেমন কুরআন মাজীদে রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ “যখন সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে তখন যতকিছু আকাশে ও পৃথিবীতে রয়েছে, সবাই মরে যাবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে।” মোটকথা, এখানে অর্থ মৃত্যুও হতে পারে এবং সংজ্ঞাহীনতাও হতে পারে। সংজ্ঞাহীনতা অর্থ এজন্যে হতে পারে যে, এরপরেই আল্লাহ পাক (আরবী) বলেছেন। আর চৈতন্য তো সংজ্ঞাহীনতার পরেই হয়ে থাকে, মৃত্যুর পরে নয়। সুতরাং এখানে সংজ্ঞাহীনতার অর্থ নেয়াই ঠিক হবে।

চৈতন্য ফিরে আসলে হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র। আপনার প্রতি কেউই দৃষ্টি রাখতে পারে না। দৃষ্টিপাত করলেই সে জ্বলে পুড়ে মরে যাবে। আপনাকে দেখতে চেয়ে আমি যে ভুল করেছি তার জন্যে তাওবা করছি। এখন আমার বিশ্বাস হয়ে গেছে এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী।” এখানে ঈমান দ্বারা ঈমান ও ইসলাম উদ্দেশ্য নয়। বরং এখানে বুঝানো হয়েছে- “আমার এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনার মাখলুক আপনাকে দেখতে পারে না।”

ইবনে জারীর (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর বর্ণনায় একটি বিস্ময়কর হাদীস নকল করেছেন এবং প্রধানতঃ তিনি একথাগুলো ইসরাঈলিয়াতের দফতর হতে পেয়েছেন। আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।

(আরবী) -এই আয়াত সম্পর্কীয় হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা রয়েছে, তিনি বলেন যে, একজন ইয়াহূদী এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে অভিযোগ করলোঃ “আপনার একজন আনসারী সাহাবী আমার মুখের উপর এক থাপ্পড় মেরেছে।” ঐ সাহাবীকে ডেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি এই লোকটিকে বলতে শুনেছি – “আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে সমস্ত মানুষের উপর ফযীলত দান করেছেন। আমি তখন বললাম, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপরও কি? সে বললোঃ “হা।” এতে আমার ক্রোধ হয়ে যায়। তাই আমি তাকে এক থাপ্পড় মেরে দেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমরা আমাকে নবীদের উপর মর্যাদা দিয়ো না। মানুষ কিয়ামতের দিন অজ্ঞান হয়ে যাবে। সর্বপ্রথম চৈতন্য লাভ আমারই হবে। কিন্তু আমি দেখবো যে, হযরত মূসা (আঃ) আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি জানি না যে, আমার পূর্বে তাঁরই চৈতন্য লাভ হয়েছে, অথবা তিনি অজ্ঞানই হননি। কেননা, ভূরে আলোক সম্পাতের সময় তিনি একবার সংজ্ঞাহীন হয়েছিলেন। কাজেই মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন হয়তো তাঁকে সংজ্ঞাহীন হওয়া থেকে মুক্ত রাখবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আবু বকর ইবনে আবি দীনার বলেন যে, এই বিবাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)। কিন্তু সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এটা আলোচিত হয়েছে যে, উনি ছিলেন আনসারদের একটি লোক। আর হযরত আবু বকর (রাঃ) তো আনসারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন মুহাজির।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী)-এ উক্তি তাঁর এই উক্তির মতই যে, তিনি বলেছেন। (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আমাকে নবীদের উপর ও ইউনুস ইবনে মাত্তার উপর মর্যাদা প্রদান করো না।” বলা হয়েছে যে, এ কথা তিনি বিনয়, নম্রতা ও ভদ্রতার খাতিরে বলেছিলেন! অথবা আল্লাহ তাআলা যে তাকে অন্যান্য নবীদের উপর মর্যাদা দান করেছেন।

এটা তা অবহিত হওয়ার পূর্বের কথা। অথবা তাঁর একথার উদ্দেশ্য ছিল“তোমরা ক্রোধে পতিত হয়ে গোঁড়ামি বা বদ্ধমূল ধারণার উপর ভিত্তি করে আমাকে মর্যাদা প্রদান করো না।” অথবা তার কথার ভাবার্থ ছিল- “তোমরা শুধুমাত্র স্বীয় মতানুসারে আমাকে ফযীলত প্রদান করো না।” আল্লাহ তা’আলাই সর্বাপেক্ষা অধিক জ্ঞানের অধিকারী।

কিয়ামতের দিন লোকেরা অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এটা স্পষ্ট কথা যে, মানুষের এভাবে চৈতন্য হারিয়ে ফেলা কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের কারণেই হবে। খুব সম্ভব যে, এটা ঐ সময়ের ঘটনা হবে যখন আল্লাহ তাআলা লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্যে আসবেন। সেই সময় তাঁর আলোক সম্পাতের ফলে লোকেরা বেহুশ হয়ে যাবে। যেমন হযরত মূসা (আঃ) তাজাল্লী সহ্য করতে পারেননি। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “না জানি হয়তো আমার চৈতন্য লাভের পূর্বেই মূসা (আঃ)-এর চৈতন্য লাভ হবে অথবা ভূরের অচৈতন্য হয়ে যাওয়ার বিনিময়ে তিনি এখানে চেতনাই হারাবেন না।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর আলোক সম্পাৎ হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তি এত তীব্র হয় যে, দশ ক্রোশ দূর হতে রাত্রির অন্ধকারে কোন কঙ্করময় ভূমিতে চলমান পিপীলিকাকেও তিনি দেখতে পেতেন।” হযরত আবু বকর (রাঃ)। বলেনঃ “এদিক দিয়ে এটা তো কোন অসম্ভব কথা নয় যে, এই বৈশিষ্ট্য আমাদের নবীও (সঃ) লাভ করেছেন। কেননা মেরাজে তিনি আয়াতে কুবরা বা বড় সব নিদর্শন স্বচক্ষে দেখেছিলেন।” এই কথার মাধ্যমে তিনি যেন এই হাদীসের সত্যতা সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু হাদীসের সত্যতার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এই হাদীসে অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছেন। আর এসব কথা যে পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] কুরআনের প্রকৃষ্ট শব্দের দ্বারাই প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ তা’আলা মূসা ‘আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন। তাঁর এ কালাম দ্বারা উদ্দেশ্য প্রথমতঃ সেসব কালাম যা নবুওয়াত দানকালে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়তঃ সেসব কালাম যা তাওরাত দানকালে হয়েছিল এবং যার আলোচনা এ আয়াতে করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলার সাথে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলা হক ও বাস্তব। এতে বিশ্বাস করতেই হবে। এর মাধ্যমে আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ কথা বলা সাব্যস্ত হচ্ছে। [দেখুন, সিফাতুল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াসসুন্নাহ, ২১৬-২১৯]

[২] দর্শন যদিও অসম্ভব নয়, কিন্তু যার প্রতি সম্বোধন করা হয়েছে অর্থাৎ মূসা ‘আলাইহিস সালাম বর্তমান অবস্থায় তা সহ্য করতে পারবেন না। পক্ষান্তরে দর্শন যদি আদৌ সম্ভব না হত, তাহলে (لَنْ تَرٰنِىْ) না বলে বলা হত (لَنْ اُرَى) “আমার দর্শন হতে পারে না।” এতে প্রমাণিত হয় যে, যৌক্তিকতার বিচারে পৃথিবীতে আল্লাহর দর্শন লাভ যদিও সম্ভব, কিন্তু তবুও এতে তার সংঘটনের অসম্ভবতা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আর এটাই হল অধিকাংশ আহলে সুন্নাহর মত যে, এ পৃথিবীতে আল্লাহর দীদার বা দর্শন লাভ যুক্তিগতভাবে সম্ভব হলেও শরীআতের দৃষ্টিতে সম্ভব নয়। যেমন হাদীসে রয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে পারবে না। [মুসলিমঃ ২৯৩১, আবু দাউদঃ ৪৩২০, ইবন মাজাহঃ ৪০৭৭] এ ব্যাপারে সূরা আল-আন’আমের ১০নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

[৩] এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমান অবস্থায় দর্শক আল্লাহর দর্শন সহ্য করতে পারবে না বলেই পাহাড়ের উপর যৎসামান্য ছটা বিকিরণ করে বলে দেয়া হয়েছে যে, তাও আপনার পক্ষে সহ্য করা সম্ভবপর নয়; মানুষ তো একান্ত দুর্বলচিত্ত সৃষ্টি; সে তা কেমন করে সহ্য করবে?

[৪] আরবী অভিধানে (تَجَلّٰى) অর্থ প্রকাশিত ও বিকশিত হওয়া। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলির মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলিটি রেখে ইঙ্গিত করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলার এতটুকু অংশই শুধু প্রকাশ করা হয়েছিল, যাতে পাহাড় পর্যন্ত ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল। অবশ্য এতে গোটা পাহাড়ই যে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে হবে তা অপরিহার্য নয়; বরং পাহাড়ের যে অংশে আল্লাহর তাজালী বিচ্ছুরিত হয়েছিল, সে অংশটিই হয়ত প্রভাবিত হয়ে থাকবে। [আহমাদঃ ৩/১২৫, তিরমিযীঃ ৩০৭৪, হাকেমঃ ২/৩২০]

[৫] মূসা ‘আলাইহিস সালাম সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলায় তার পুরস্কারস্বরূপ হাশরের মাঠে তাকে প্রথম সচেতন হিসাবে দেখা যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের মাঠে মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে, আমিই সর্বপ্রথম সংজ্ঞা ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা আল্লাহর আরশের খুঁটি ধরে দাড়িয়ে আছেন। আমি জানি না তিনি কি আমার আগে সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছেন, না কি তুর পাহাড়ে যে সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন, তার বিনিময়ে তিনি সচেতনই ছিলেন। [বুখারীঃ ৪৬৩৮, মুসলিমঃ ২৩৭৪]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান তাফসীরে:-
[১] যখন মূসা (আঃ) ত্বূর পাহাড়ে গেলেন। সেখানে মহান আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি কথা বললেন। মূসা (আঃ)-এর অন্তরে আল্লাহকে দেখার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হল এবং নিজের মনের কথা رَبِّ أرِني (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও) বলে প্রকাশ করলেন। যার উত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, لَن تَراني (তুমি আমাকে কখনই দেখবে না)। মু’তাযিলা ফির্কা এখান থেকে প্রমাণ করতে চায় যে, لن শব্দটি নাবাচক অর্থে সর্বকালের জন্য ব্যবহার হয়। সেই জন্য মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ না পৃথিবীতে সম্ভব, আর না পরকালে। কিন্তু মু’তাযিলাদের এই মত সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীত। বলা বাহুল্য, সহীহ ও শক্তিশালী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কিয়ামত দিবসে মু’মিনরা আল্লাহ তাআলাকে দেখবেন এবং জান্নাতেও আল্লাহর মুখমন্ডল দর্শন লাভে ধন্য হবেন। সকল আহলে সুন্নাহর এই আকীদাহ বা বিশ্বাস। এখানে যে (‘তুমি আমাকে কখনই দেখবে না’ বলে) দর্শনের কথা খন্ডন করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র পৃথিবীর ক্ষেত্রে। পৃথিবীর মানুষের কোন চোখ মহান আল্লাহকে দেখতে সক্ষম নয়। কিন্তু পরকালে মহান আল্লাহ এই চোখে এমন দৃষ্টিশক্তি দান করবেন, যা আল্লাহর নূরকে সহ্য করতে পারবে।

[২] অর্থাৎ, ঐ পাহাড়ও মহান আল্লাহর প্রকাশ হওয়াকে সহ্য করতে পারল না এবং মূসা (আঃ)ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। হাদীসে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামত দিবসে সবাই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। (এই জ্ঞানশূন্যতা ইবনে কাসীরের মতে ঐ সময় হবে যখন হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহ বিচারের জন্য আবির্ভূত হবেন।) অতঃপর যখন সবাই জ্ঞান ফিরে পাবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম জ্ঞানপ্রাপ্ত হব এবং দেখব যে, মূসা (আঃ) আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু আমি জানি না যে, তিনি আমার আগেই জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন, নাকি ত্বূর পাহাড়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে হাশরের ময়দানে সংজ্ঞাহীন হওয়া থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে।” (বুখারীঃ তাফসীর সূরাতুল আরাফ, মুসলিমঃ মূসা (আঃ)-এর ফযীলত)

[৩] ‘বিশ্বাসীদের মধ্যে আমিই প্রথম’ তোমার মর্যাদা ও মাহাত্ম্যে এবং সেই সাথে এ কথায় যে, আমি তোমার অসহায় ও দুর্বল বান্দা; পৃথিবীতে তোমার দর্শনলাভে অক্ষম।

Leave a Reply