أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٣١) -৫৩৪
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
১৪৪-১৪৭ নং আয়াত:-
الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الَارْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব করে বেড়ায়,
Those who behave arrogantly on the earth, without a right.
قَالَ یٰمُوۡسٰۤی اِنِّی اصۡطَفَیۡتُکَ عَلَی النَّاسِ بِرِسٰلٰتِیۡ وَ بِکَلَامِیۡ ۫ۖ فَخُذۡ مَاۤ اٰتَیۡتُکَ وَ کُنۡ مِّنَ الشّٰکِرِیۡنَ ﴿۱۴۴﴾
তিনি বললেন, হে মূসা! আমি আমার রিসালাত ও বাক্য দ্বারা লোকের মধ্যে তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, সুতরাং আমি যা দিলাম, তা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।
وَ کَتَبۡنَا لَہٗ فِی الۡاَلۡوَاحِ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ مَّوۡعِظَۃً وَّ تَفۡصِیۡلًا لِّکُلِّ شَیۡءٍ ۚ فَخُذۡہَا بِقُوَّۃٍ وَّ اۡمُرۡ قَوۡمَکَ یَاۡخُذُوۡا بِاَحۡسَنِہَا ؕ سَاُورِیۡکُمۡ دَارَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿۱۴۵﴾
আর আমি তোমার জন্য ফলকসমূহের উপর সর্ব বিষয়ের উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি,সুতরাং এগুলিকে শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে ঐগুলির মধ্যে যা শ্রেষ্ঠ তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও। আমি শীঘ্রই সত্যত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখাব।
سَاَصۡرِفُ عَنۡ اٰیٰتِیَ الَّذِیۡنَ یَتَکَبَّرُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ وَ اِنۡ یَّرَوۡا کُلَّ اٰیَۃٍ لَّا یُؤۡمِنُوۡا بِہَا ۚ وَ اِنۡ یَّرَوۡا سَبِیۡلَ الرُّشۡدِ لَا یَتَّخِذُوۡہُ سَبِیۡلًا ۚ وَ اِنۡ یَّرَوۡا سَبِیۡلَ الۡغَیِّ یَتَّخِذُوۡہُ سَبِیۡلًا ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ کَانُوۡا عَنۡہَا غٰفِلِیۡنَ ﴿۱۴۶﴾
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব করে বেড়ায়, তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী হতে ফিরিয়ে দেব; তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও ওতে বিশ্বাস করবে না। তারা সৎপথ দেখলেও ওকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে, তাকেই পথ হিসাবে গ্রহণ করবে।এটি এ কারণে যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা উদাসীন ছিল।
وَ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ لِقَآءِ الۡاٰخِرَۃِ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُہُمۡ ؕ ہَلۡ یُجۡزَوۡنَ اِلَّا مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۴۷﴾٪
যারা আমার নিদর্শনসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলে, তাদের কার্য নিষ্ফল হবে। তারা যা করবে সেই অনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেওয়া হবে।
১৪৪-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* [১] এটি সরাসরি কথা বলার দ্বিতীয় সুযোগ, মহান আল্লাহ যে সুযোগ মূসা (আঃ)-কে দিয়ে ধন্য করলেন। এর পূর্বে যখন মূসা (আঃ) আগুন নেওয়ার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন, তখনও তিনি সরাসরি কথা বলে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন এবং নবুঅত দান করেছিলেন।
*[১] তাওরাত কাষ্ঠফলক বা তক্তি রূপে দান করা হয়েছিল। যাতে তাদের ধর্মীয় আহকাম, আদেশ-নিষেধ, অনুপ্রেরণা দান, ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি সকল কিছুর বিস্তারিত আলোচনা বিদ্যমান ছিল।
[২] অর্থাৎ, তারা যেন তাই গ্রহণ করে যা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। যাতে অনুমতি আছে তা নয়; যেমন সুবিধাবাদী ও সুযোগ-সন্ধানীরা করে থাকে; যারা আমলে ফাঁকি দেওয়ার জন্য কেবল ফাঁক ও অনুমতি খুঁজে বেড়ায়।
[৩] বাসস্থান বলতে তাদের পরিণাম, অর্থাৎ, ধ্বংস। অথবা এর অর্থ ফাসেক (সত্যত্যাগী)-দের দেশে তোমাদেরকে শাসনক্ষমতা দান করব। আর তা হল শাম দেশ। যেখানে আমালেকাদের আধিপত্য ছিল; যারা ছিল আল্লাহর অবাধ্য। (ইবনে কাসীর)
* [১] এখানে গর্ব বা অহংকারের অর্থ হল, মহান আল্লাহর আয়াত ও আহকামের মোকাবেলায় নিজেকে বড় মনে করা এবং অন্য লোকদের তুচ্ছ মনে করা। এই শ্রেণীর অহংকার মানুষের জন্য মোটেই শোভনীয় নয়। কারণ আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা আর মানুষ সৃষ্ট। সৃষ্ট হয়ে সৃষ্টিকর্তার মোকাবেলা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, তার আহকাম ও হিদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা উদাসীন হওয়া কোন মতেই বৈধ নয়। সেই কারণে অহংকার মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত ঘৃণ্য জিনিস। এই আয়াতে অহংকারের পরিণতিও ব্যক্ত করা হয়েছে। আর তা এই যে, মহান আল্লাহ নিজ আয়াত (নিদর্শন) হতে দূরে রাখেন এবং সে এত দূরে সরে যায় যে, কোন প্রকার নিদর্শন তাকে হকের (সত্যের) পথে আনতে সফল হয় না। যেমন, অন্যত্র বলা হয়েছে, {إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ، وَلَوْ جَاءتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الأَلِيمَ} অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে যাদের সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সত্য হয়েছে, তারা বিশ্বাস করবে না; যদিও তাদের নিকট সমস্ত নিদর্শন আগত হয়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করেছে। (সূরা ইউনুস ১০:৯৬-৯৭ আয়াত)
[২] এখানে আল্লাহর বিধি-বিধান থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে রাখে তাদের আরো একটি আচরণ ও অভ্যাসের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, হিদায়াতের কোন কথা তাদের সামনে এলে তারা তা মেনে নেয় না; কিন্তু ভ্রষ্টতার কোন জিনিস দেখলেই তারা তা সাদরে গ্রহণ করে। কুরআন কারীমের বর্ণিত এই বাস্তবতা সকল যুগেই লক্ষণীয়। আজ আমরাও সকল স্থানে ও সব সমাজেই এমন কি মুসলিম সমাজেও দেখতে পাচ্ছি যে, নেকী মুখ ঢেকে বেড়াচ্ছে। আর পাপকে প্রত্যেকেই লুফে লুফে গ্রহণ করছে।
[৩] এখানে এই কথার কারণ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, মানুষ নেকীর পরিবর্তে গোনাহ ও হকের তুলনায় বাতিলকে কেন বেশি গ্রহণ করে? কারণ হল, আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যাজ্ঞান এবং তা হতে ঔদাস্য ও বৈমুখ্য প্রকাশ করা। আর এ আচরণ প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক সমাজেই প্রচলিত।
* [১] এই আয়াতে যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা ভাবে ও পরকালকে অবিশ্বাস করে তাদের পরিণাম ব্যক্ত করা হয়েছে। যেহেতু তাদের কর্মের বুনিয়াদ ন্যায় ও হক নয় বরং অন্যায় ও বাতিলের উপর, সেই জন্য তাদের (কর্ম আপাতদৃষ্টিতে ভালো হলেও) আমলনামায় কেবল পাপই লিখিত হবে; যার কোন মূল্যই মহান আল্লাহর নিকট নেই। পরন্তু তাদের অন্যায়ের প্রতিফল সেখানে অবশ্যই দেওয়া হবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 144-147
الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الَارْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
Those who behave arrogantly on the earth, without a right.
Allah chooses Musa and gives Him the Tablets
Allah says;
قَالَ يَا مُوسَى إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَمِي
(Allah) said:”O Musa I have chosen you above men by My Messages, and by My speaking (to you).
Allah states that He spoke to Musa directly and informed him that He has chosen him above the people of his time, by His Message and by speaking to him.
Here we should mention that there is no doubt that Muhammad is the chief of all the Children of Adam, the earlier and later ones among them. This is why Allah has chosen him to be the Final and Last Prophet and Messenger, whose Law shall remain dominant and valid until the commencement of the Last Hour. Muhammad’s followers are more numerous than the followers of all Prophets and Messengers. After Muhammad, the next in rank of honor and virtue is Ibrahim upon him be peace,, then Musa, son of Imran, who spoke to the Most Beneficent directly.
Allah commanded Musa, saying,
فَخُذْ مَا اتَيْتُكَ
So hold to that which I have given you,
of My Speech and conversation with you,
وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ
and be of the grateful,
for it and do not ask for what is beyond your capacity to bear
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الَالْوَاحِ مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلً لِّكُلِّ شَيْءٍ
And We wrote for him on the Tablets the exhortation all things and the explanation for all things:
Allah stated that He has written lessons and exhortation for all things and explanations for all things on the Tablets.
It was said that in the Tablets, Allah wrote advice and the details of the commandments for lawful and prohibited matters. The Tablets contained the Tawrah, that Allah described;
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى الْكِتَـبَ مِن بَعْدِ مَأ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ الاٍّولَى بَصَأيِرَ لِلنَّاسِ
And indeed We gave Musa — after We had destroyed the generations of old — the Scripture as an enlightenment for mankind. (28:43)
It was also said that Allah gave Musa the Tablets before the Tawrah, and Allah knows best.
Allah said next,
فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ
Hold unto these with firmness,
be firm on the obedience,
وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُواْ بِأَحْسَنِهَا
and enjoin your people to take the better therein.
Sufyan bin Uyaynah said, “Abu Sa`d narrated to us from Ikrimah from Ibn Abbas that;
“Musa, peace be upon him, was commanded to adhere to the toughest of what was ordained on his people.”
Allah’s statement,
سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ
I shall show you the home of the rebellious,
means, you will witness the recompense of those who defy My order and deviate from My obedience, the destruction, demise and utter loss they will suffer.
Arrogant People will be deprived of Allah’s Ayat
Allah said,
سَأَصْرِفُ عَنْ ايَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الَارْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
I shall turn away from My Ayat those who behave arrogantly on the earth, without a right.
Allah says, “I shall deprive the hearts of those who are too proud to obey Me, and arrogant with people without right, from understanding the signs and proofs that testify to My Might, Law and Commandments.”
And just as they acted arrogantly without justification, Allah has disgraced them with ignorance. Allah said in another Ayah,
وَنُقَلِّبُ أَفْيِدَتَهُمْ وَأَبْصَـرَهُمْ كَمَا لَمْ يُوْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ
And We shall turn their hearts and their eyes away (from guidance), as they refused to believe therein for the first time. (6:110)
and,
فَلَمَّا زَاغُواْ أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ
So when they turned away (from the path of Allah), Allah turned their hearts away (from the right path). (61:5)
Sufyan bin Uyaynah commented on this Ayah,
سَأَصْرِفُ عَنْ ايَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الَارْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
(I shall turn away from My Ayat those who behave arrogantly on the earth, without a right),
“(Allah says) I shall snatch away comprehension of the Qur’an from them and turn them away from My Ayat.”
Ibn Jarir commented on Sufyan’s statement that,
“This indicates that this part of the Ayah is addressed to this Ummah.”
This is not necessarily true, for Ibn `Uyaynah actually meant that this occurs in every Ummah and that there is no difference between one Ummah and another Ummah in this regard.
Allah knows best.
Allah said next,
وَإِن يَرَوْاْ كُلَّ ايَةٍ لاَّ يُوْمِنُواْ بِهَا
and (even) if they see all the Ayat, they will not believe in them.
Allah said in a similar Ayah,
إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَا يُوْمِنُونَ
وَلَوْ جَأءَتْهُمْ كُلُّ ءايَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الاٌّلِيمَ
Truly, those, against whom the Word (wrath) of your Lord has been justified, will not believe. Even if every sign should come to them, until they see the painful torment. (10:96-97)
Allah’s statement,
وَإِن يَرَوْاْ سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلً
And if they see the way of righteousness, they will not adopt it as the way,
means, even if the way of guidance and safety appears before them, they will not take it,
وَإِن يَرَوْاْ سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلً
but if they see the way of error, they will adopt that way,
but if the way that leads to destruction and misguidance appears to them, they adopt that way.
Allah explains why they do this,
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُواْ بِأيَاتِنَا
that is because they have rejected Our Ayat,
in their hearts,
وَكَانُواْ عَنْهَا غَافِلِينَ
and were heedless of them.
gaining no lessons from the Ayat.
Allah’s statement.
وَالَّذِينَ كَذَّبُواْ بِأيَاتِنَا وَلِقَاء الاخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ
Those who deny Our Ayat and the meeting in the Hereafter, vain are their deeds.
indicates that whoever among them does this, remaining on this path until death, then all his deeds will be in vain.
Allah said next,
هَلْ يُجْزَوْنَ إِلاَّ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
Are they requited with anything except what they used to do!
meaning, `We only recompense them according to the deeds that they performed, good for good and evil for evil. Surely, as you bring forth, you reap the harvest thereof.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৪৪-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলেছেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আমি তোমাকে রিসালাতের জন্যে ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্যে সমস্ত লোকের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছি।” এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, মুহাম্মাদ (সঃ) হযরত আদম (আঃ)-এর সমস্ত সন্তানের সরদার বা নেতা। এজন্যেই তো আল্লাহ তা’আলা তাঁকে খাতেমুল আম্বিয়া বানিয়েছেন। তাঁর শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে এবং তাঁর উম্মতের সংখ্যা সমস্ত নবীর উম্মতের সংখ্যা অপেক্ষা অধিক হবে। মর্যাদা ও ফযীলতের দিক দিয়ে তার পরে হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ)-এর স্থান। অতঃপর হযরত মূসা ইবনে ইমরান কালীমুল্লাহ (আঃ)-এর স্থান।
আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “আমি তোমাকে যে কালাম ও মুনাজাত দান করেছি তা তুমি গ্রহণ কর এবং সে জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যা সহ্য করার তোমার শক্তি নেই তা যাজ্ঞা করো না।” এরপর সংবাদ দেয়া হচ্ছে যে, এই তাখতী বা ফলকে প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক হুকুমের ব্যাখ্যা বিদ্যমান রয়েছে। কথিত আছে যে, এই ফলক ছিল মণি-মানিক্যের তৈরী। আল্লাহ পাক তাতে উপদেশাবলী ও নির্দেশাবলী বিস্তারিতভাবে লিখে দিয়েছিলেন এবং সমস্ত হারাম এবং হালালও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এই ফলকের উপর তাওরাত লিখিত ছিল। আল্লাহ পাক বলেনঃ “কুরূনে উলাকে ধ্বংস করে দেয়ার পর আমি মূসা (আঃ)-কে কিতাব প্রদান করেছি ,যার মধ্যে লোকদের জন্যে অন্তদৃষ্টি রয়েছে।” এটাও কথিত আছে যে, এই ফলক তাওরাত লিখার পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। মোটকথা, এটা ছিল দর্শনের প্রার্থনা না মঞ্জুর করার বিনিময় ।
‘দৃঢ় হস্তে শক্তভাবে গ্রহণ কর’ অর্থাৎ আনুগত্যের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ কর এবং স্বীয় সম্প্রদায়কেও নির্দেশ দাও যে, তারা যেন, উত্তমরূপে এর উপর আমল করে। মূসা (আঃ)-এর হুকুমের সাথে (আরবী) শব্দ রয়েছে, আর তাঁর কওমের সাথে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মূসা (আঃ)-কে তাগিদ করা হচ্ছে যে, তিনি যেন সর্বপ্রথম দৃঢ়তার সাথে ওর উপর আমল করেন এবং এরপর যেন তাঁর কওম উত্তম পন্থায় আমল করে।
(আরবী) অর্থাৎ হে মূসা (আঃ)! যারা আমার বিরুদ্ধাচরণ করবে ও আমার আনুগত্যের বাইরে চলে যাবে তাদের পরিণাম কি হবে অর্থাৎ কিভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তা আমি শীঘ্রই তোমাকে দেখাবো। একথাটি ঠিক ঐ কথার মত যেমন কেউ স্বীয় সম্বোধনকৃত ব্যক্তিকে বলে- যদি তুমি আমার হুকুম অমান্য কর তবে কাল আমি তোমাকে দেখে নেবো।’ এখানে নির্দেশ অমান্যকারীদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। (এই অর্থ মুজাহিদ (রঃ) ও হাসান বসরী (রঃ) থেকে নকল করা হয়েছে) আবার একথাও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে-আমি আমার অনুগতদেরকে ফাসেকদের রাজ্য অর্থাৎ সিরিয়া দান করবো। অথবা এর দ্বারা ফিরাউন সম্প্রদায়ের মনযিলকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম কথাটিই বেশী পছন্দনীয়। আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। কেননা, এটা ছিল হযরত মূসা (আঃ)-এর মিসর ত্যাগ করার পরের ফরমান। আর এই দ্বিতীয় উক্তি দ্বারা তো বানী ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং এটা হচ্ছে ‘তীহ ময়দানে প্রবেশ করার পূর্বের সম্বোধন।
আল্লাহ পাক বলেনঃ যারা আমার আনুগত্য অস্বীকার করে এবং বিনা কারণে মানুষের কাছে অহংকার প্রকাশ করে, তাদেরকে আমি শরীয়ত ও আহকাম অনুধাবন করা থেকে বঞ্চিত করে দেবো যা আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও একত্বের উপর অকাট্য প্রমাণ। অজ্ঞতা ও মূখর্তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর ও চক্ষুকে পরিবর্তন করে দিয়েছি, কেননা তাদেরকে বুঝানো সত্ত্বেও তারা প্রথমবারই ঈমান আনয়ন করেনি। অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যখন তারা বেঁকে গেল তখন আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরকেও বাঁকা করে দিলেন, যেন যেমন তারা বুঝছে না তেমন কখনই না বুঝে।” কোন কোন পূর্ববর্তী গুরুজন বলেন যে, অহংকারী বিদ্যা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করতেই পারে না। সে তো গৌররেই ফেটে পড়ে। যে ব্যক্তি অল্প কিছুদিনের তরে জ্ঞান ও বিদ্যা শিক্ষার কষ্ট সহ্য করতে পারলো না, তাকে চিরদিনের জন্যে বিদ্যা থেকে বঞ্চিত থাকার লাঞ্ছনা সহ্য করতেই হবে।
এ জন্যেই আল্লাহ পাক তাদের থেকে কুরআন বুঝবার মূল পদার্থ ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং স্বীয় নিদর্শনাবলী থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছেন। এই আয়াতের ইঙ্গিত এই উম্মতের দিকেও রয়েছে। এটা হচ্ছে ইবনে উয়াইনার চিন্তাধারা। কিন্তু এটা অবশ্যম্ভাবী নয়। ইবনে উয়াইনা তো এটাকে প্রত্যেক উম্মতের ব্যাপারেই প্রযোজ্য বলে থাকেন এবং উম্মতদের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখান না। আল্লাহ তা’আলা সর্বাপেক্ষা অধিক জ্ঞানের অধিকারী।
ইরশাদ হচ্ছে- তারা যতই আয়াত শ্রবণ করুক না কেন, ঈমান আনবে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে লোকদের ব্যাপারে আল্লাহর কথা পূর্ণ হয়ে গেছে। যে, তারা সঠিক পথের উপর আসবে না, তাদের কাছে যতই আয়াত আসুক না কেন তারা কখনও ঈমান আনবে না, যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।”
আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তারা সৎ পথ দেখতেও পায় তবুও সেই পথ গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা যদি ভ্রান্ত ও গুমরাহীর পথ দেখতে পায় তবে ওকেই জীবন পথরূপে গ্রহণ করবে। এর কারণ এই যে, আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং তা থেকে সম্পূর্ণরূপে অমনোযোগী থেকেছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমার আয়াতসমূহকে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং পরকালের সাক্ষাৎকে অবিশ্বাস করেছে, আর মৃত্যু পর্যন্ত ঐ ধারণার উপরই প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তাদের নেক আমলের সাথে ঈমান না থাকার কারণে তাদের সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং এ সবগুলো ছিনিয়ে নেয়া হবে।” ইরশাদ হচ্ছে-“তাদের আমল অনুযায়ী আমি তাদেরকে প্রতিফল প্রদান করবো।” অর্থাৎ ঈমানের সাথে ভাল আমল করলে ভাল প্রতিফল দেয়া হবে এবং মন্দ আমল করলে মন্দ প্রতিফলই দেয়া হবে। যেমন কর্ম তেমনই ফল।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* বাইবেলে এ দু’টি ফলক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এ দু’টি ছিল প্রস্তর ফলক। এ ফলকে লেখার কাজটিকে কুরআন ও বাইবেল উভয় কিতাবেই স্বয়ং আল্লাহর কীর্তি বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে আল্লাহ নিজের কুদরত তথা অসীম ক্ষমতা বলে নিজেই সরাসরি এ ফলকে লেখার কাজ সম্পাদন করেছিলেন, না কোন ফেরেশতাকে দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন অথবা এ কাজে হযরত মূসার হাত ব্যবহার করেছিলেন, এ ব্যাপারটি জানার কোন মাধ্যম আমাদের হাতে নেই। (তূলনামূলক অধ্যয়নের জন্য পড়ুনঃ বাইবেল, যাত্রা পুস্তক ৩১: ১৮, ৩২: ১৫-১৬ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ৫: ৬-২২) ।
* অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের সরল, সোজা ও সুস্পষ্ট মর্ম ও তাৎপর্য গ্রহণ করো। একজন সহজ-সরল বিবেক সম্পন্ন মানুষ, যার মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ও বক্রতা নেই, সে সাধারণ বুদ্ধি দ্বারা যে অর্থ বোঝে, এখানে তার কথাই বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর বিধানের সরল-সোজা অর্থবোধক শব্দগুলো থেকে জটিল আইনগত মার-প্যাঁচ এবং বিভ্রাট-বিভ্রান্তি ও কলহ-কোন্দল সৃষ্টির পথ খুঁজে বের করে, তাদের সেই সব কূটতর্ককে যাতে আল্লাহর কিতাবের অনুমোদিত বিষয় মনে না করা হয় তাই এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
* অর্থাৎ সামনে অগ্রসর হয়ে তোমরা এমন সব জাতির প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখবে যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং ভুল পথে চলার ব্যাপারে অবিচল ছিল। সেই ধ্বংসাবশেষ গুলো দেখে এ ধরনের কর্মনীতি অবলম্বনের পরিণাম কি হয় তা তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে।
* আমার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের লোকেরা কোন শিক্ষাপ্রদ ঘটনা অনুধাবন করতে এবং কোন শিক্ষানীয় বিষয় থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে না। “বড়র আসন গ্রহণ করা” বা “বড়াই করে বেড়ানো” বাকাংশটি কুরআন মজিদে এমন এক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা থেকে বুঝা যায় যে, বান্দা নিজেকে আল্লাহর বন্দেগী করার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়, আল্লাহর আদেশ নিষেধের কোন ধার ধারে না এবং এমন একটি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে যাতে মনে হয়, সে আল্লাহর বান্দা নয় এবং আল্লাহ তার রব নয়। একটি মিথ্যা ও ভূয়া আত্মম্ভরিতা ছাড়া এ ধরনের অহংকারের কোন অর্থ হয় না। কারণ আল্লাহর যমীনে বাস করে কোন মানুষের অন্যের বান্দা হয়ে থাকার কোন অধিকার নেই। তাই এখানে বলা হয়েছেঃ “কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়।”
* ব্যর্থ হয়ে গেছে অর্থাৎ ফলদায়ক হয়নি এবং তা অলাভজনক ও অর্থহীন হয়ে পড়েছে। কারণ আল্লাহর দরবারে মানুষের সমস্ত প্রচেষ্টা ও কর্ম সফল হওয়া নির্ভর করে দু’টি বিষয়ের ওপর। এক, সেই প্রচেষ্টা ও কর্মটি অনুষ্ঠিত হতে হবে শরীয়তের আইনের আওতাধীনে। দুই, দুনিয়ার পরিবর্তে আখেরাতের সাফল্য হবে সেই প্রচেষ্টা ও কর্মের লক্ষ্য। এ শর্ত দু’টি পূর্ণ না হলে অনিবার্যভাবেই সমস্ত কৃতকর্ম পণ্ড বা বৃথা হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর হেদায়াত গ্রহণ করে না বরং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে বিদ্রোহাত্মক পদ্ধতিতে দুনিয়ায় কাজ করে, সে কোনক্রমেই আল্লাহর কাছে কোন প্রকার প্রতিদানের আশা করার অধিকার রাখে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্যই সব কিছু করে এবং আখেরাতের জন্য কিছুই করে না, সোজা কথায় বলা যায়, আখেরাতে তার কোন সুফল লাভের আশা করা উচিত নয় এবং সেখানে তার কোন ধরনের সুফল লাভ করার কোন কারণও নেই। আমার মালিকানাধীন জমিকে কোন ব্যক্তি যদি আমার অনুমোদন ছাড়াই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে থাকে তাহলে আমার পক্ষ থেকে শাস্তি পাওয়া ছাড়া সে আর কিসের প্রত্যাশা করতে পারে? আর সেই জমির ওপর অন্যায়ভাবে নিজের দখলী স্বত্ব বহাল রাখার সময় যদি এ সমস্ত কাজ সে নিজে এ উদ্দেশ্যেই করে থাকে যে, যত দিন আসল মালিক তার অন্যায় ধৃষ্টতাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সে এ দ্বারা লাভবান হতে থাকবে এবং জমি পুনরায় মালিকের দখলে চলে যাওয়ার পর সে আর তা থেকে লাভবান হবার আশা করবে না বা লাভবান হতে চাইবে না। তাহলে এ ধরনের অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে নিজের জমি ফেরত নেবার পর কি কারণে আমি আবার নিজের উৎপন্ন ফসলের কিছু অংশ অনর্থক তাকে দিতে থাকবো?