أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٣٩) -৫৪২
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
১৬৮-১৭০ নং আয়াত:-
يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
তারা এ তুচ্ছ (অবৈধ পার্থিব) সামগ্রী গ্রহণ করে।
(They chose (for themselves) the goods of this low life),
وَ قَطَّعۡنٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اُمَمًا ۚ مِنۡہُمُ الصّٰلِحُوۡنَ وَ مِنۡہُمۡ دُوۡنَ ذٰلِکَ ۫ وَ بَلَوۡنٰہُمۡ بِالۡحَسَنٰتِ وَ السَّیِّاٰتِ لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۱۶۸﴾
দুনিয়ায় আমি তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করলাম, তাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ ও কতক অন্যরূপ। আর মঙ্গল ও অমঙ্গলসমূহ দ্বারা আমি তাদেরকে পরীক্ষা করলাম, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ خَلۡفٌ وَّرِثُوا الۡکِتٰبَ یَاۡخُذُوۡنَ عَرَضَ ہٰذَا الۡاَدۡنٰی وَ یَقُوۡلُوۡنَ سَیُغۡفَرُ لَنَا ۚ وَ اِنۡ یَّاۡتِہِمۡ عَرَضٌ مِّثۡلُہٗ یَاۡخُذُوۡہُ ؕ اَلَمۡ یُؤۡخَذۡ عَلَیۡہِمۡ مِّیۡثَاقُ الۡکِتٰبِ اَنۡ لَّا یَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰہِ اِلَّا الۡحَقَّ وَ دَرَسُوۡا مَا فِیۡہِ ؕ وَ الدَّارُ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾
অতঃপর অযোগ্য উত্তরপুরুষরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়, তারা কিতাবের (ঐশীগ্রন্থের)ও উত্তরাধিকারী হয়। তারা এ তুচ্ছ (অবৈধ পার্থিব) সামগ্রী গ্রহণ করে এবং বলে, ‘আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে।’ কিন্তু ওর অনুরূপ সামগ্রী তাদের নিকট এলে সেটিকেও তারা গ্রহণ করে। কিতাবের অঙ্গীকার কি তাদের নিকট হতে নেওয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত (অসত্য) বলবে না? অথচ তারা তো ওতে যা আছে, তা অধ্যয়নও করেছে। যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়, তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেয়, তোমরা কি তা অনুধাবন কর না?
وَ الَّذِیۡنَ یُمَسِّکُوۡنَ بِالۡکِتٰبِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّا لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُصۡلِحِیۡنَ ﴿۱۷۰﴾
আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও নামায যথারীতি আদায় করে, নিশ্চয় আমি (তাদের মত) সংশোধনকারীদের শ্রমফল নষ্ট করি না।
১৬৮-১৭০ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আলোচ্য আয়াতগুলোতে ইয়াহূদীদের বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হবার কথা বলা হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিয়েছেন অথচ পূর্বে তারা সকলেই এক ও অভিন্ন ছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّقُلْنَا مِنْۭ بَعْدِه۪ لِبَنِيْ إِسْرَا۬ئِيْلَ اسْكُنُوا الْأَرْضَ فَإِذَا جَا۬ءَ وَعْدُ الْاٰخِرَةِ جِئْنَا بِكُمْ لَفِيْفًا)
“এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বললাম, ‘তোমরা ভূ- পেৃষ্ঠে বসবাস কর এবং যখন ক্বিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্র করে উপস্থিত করব।” (সূরা ইসরা ১৭:১০৪)
এদের মধ্যে অনেকে সৎ লোক ছিল এবং অনেকে অসৎ লোক ছিল। যেমন জিনেদের মধ্যে ভালমন্দ উভয় প্রকারই রয়েেেছ তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّأَنَّا مِنَّا الصَّالِحُوْنَ وَمِنَّا دُوْنَ ذٰلِكَ ط كُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا)
“এবং আমাদের কতক সৎ কর্মপরায়ণ এবং কতক এর ব্যতিক্রম, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী।” (জিন ৭২:১১)
بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ
‘মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম’ অর্থাৎ তাদেরকে সুখ সাচ্ছন্দ ও বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষা করেছি।
اَدْنٰي- (هَذَا الْأَدْنٰي)
শব্দটি دُنُوٌ থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ নিকটবর্তী। অর্থাৎ নিকটবর্তী (পার্থিব) সম্পদ গ্রহণ করে। অথবা এটি دَنَاءَةٌ থেকে এসেছে যার অর্থ, নিকৃষ্ট বা তুচ্ছ সম্পদ। উভয় অর্থই উদ্দেশ্য, তাদের পার্থিব সম্পদের প্রতি আসক্তির স্পষ্ট কারণ।
কাতাদাহ (রাঃ) বলেন:
(فَخَلَفَ مِنْۭ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ)
‘অতঃপর অযোগ্য পূর্বপুরুষগণ একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্তরূপে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়’ আল্লাহ তা‘আলার শপথ! এরা অতি নিকৃষ্ট উত্তরসূরী। নাবীদের পরে এরা তাওরাত ও ইঞ্জিলের উত্তরাধিকারী ছিল। আল্লাহ তা‘আলা কিতাবে তাদের থেকে অঙ্গীকারও নিয়েছিলেন। যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَخَلَفَ مِنْۭ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلٰوةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا)
“তাদের পরে আসল অপদার্থ পরবর্তীগণ, তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা-পরবশ হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা মারইয়াম ১৯:৫৯)
তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশা রাখে এবং নিজেদের প্রতারিত করে। দুনিয়া অর্জনের কোন সুযোগ এলে তখন হালাল হারাম কিছুই দেখে না। কোন জিনিস তাদেরকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখতে পারে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আহলে কিতাবদের মধ্যে ভাল-মন্দ দু’ শ্রেণির লোক ছিল।
২. মূসা (আঃ)-এর জাতির অবাধ্যতার কথা জানলাম।
৩. মুত্তাকীদের জন্য দুনিয়ার চেয়ে পরকাল শ্রেষ্ঠ।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 168-170
يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
(They chose (for themselves) the goods of this low life),
The Children of Israel scatter throughout the Land
Allah tells;
وَقَطَّعْنَاهُمْ فِي الَارْضِ أُمَمًا
And We have broken them (the Jews) up into various separate groups on the earth:
Allah states that He divided the Jews into various nations, sects and groups,
وَقُلْنَا مِن بَعْدِهِ لِبَنِى إِسْرَءِيلَ اسْكُنُواْ الاٌّرْضَ فَإِذَا جَأءَ وَعْدُ الاٌّخِرَةِ جِيْنَا بِكُمْ لَفِيفًا
And We said to the Children of Israel after him (after Musa died):”Dwell in the land, then, when the final and the last promise comes near, We shall bring you altogether as a mixed crowd (gathered out of various nations).” (17:104)
مِّنْهُمُ الصَّالِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَلِكَ
some of them are righteous and some are away from that,
some of them are led aright and some are not righteous, just as the Jinns declared,
وَأَنَّا مِنَّا الصَّـلِحُونَ وَمِنَّا دُونَ ذَلِكَ كُنَّا طَرَايِقَ قِدَداً
“There are among us some that are righteous, and some the contrary; we are groups having different ways (religious sects).” (72:11)
Allah said here,
وَبَلَوْنَاهُمْ
And We tried them,
and tested them,
بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّيَاتِ
with good and evil,
with times of ease, difficulty, eagerness, fear, well-being and affliction,
لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
in order that they might turn (to Allah).
Allah said next
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُواْ الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
Then after them succeeded an (evil) generation, which inherited the Book, but they chose (for themselves) the goods of this low life,
This Ayah means, after the generation made up of righteous and unrighteous people, another generation came that did not have goodness in them, and they inherited the Tawrah and studied it.
Mujahid commented on Allah’s statement,
يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
(They chose (for themselves) the goods of this low life),
“They will consume anything they can consume in this life, whether legally or illegally. Yet, they wish for forgiveness,
وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مُّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ
Saying:”(Everything) will be forgiven for us.” And if (again) the offer of the like came their way, they would (again) seize them.”
Qatadah commented on Allah’s statement,
يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
(they chose (for themselves) the goods of this low life),
“This, by Allah, is an evil generation,
وَرِثُواْ الْكِتَابَ
(which inherited the Book) after their Prophets and Messengers, for they were entrusted with this job by Allah’s command to them. Allah said in another Ayah,
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُواْ الصَّلَـوةَ
Then, there has succeeded them a posterity who neglect the Salah (the prayers). (19:59)
Allah said next,
يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الادْنَى
وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا
(They chose the goods of this low life saying:”(Everything) will be forgiven to us”). They wish and hope from Allah, while deceiving themselves,
وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مُّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ
(And if (again) the offer of the like came their way, they would (again) seize them). Nothing stops them from this behavior, for whenever they are given an opportunity in this life, they will consume regardless of it being allowed or not.”
As-Suddi said about Allah’s statement,
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ
..
وَدَرَسُواْ مَا فِيهِ
Then after them succeeded an (evil) generation, until….. And they have studied what is in it (the Book).
“Every time the Children of Israel appointed a judge, he used to take bribes. The best ones among them held a counsel and took covenants from each that they would not take bribes. However, when one of them would take bribes in return for judgment and was asked, `What is the matter with you; you take a bribe to grant judgment’, he replied, `I will be forgiven.’ So the rest of his people would admonish him for what he did. But when he died, or was replaced, the one who replaced him would take bribes too. Therefore, Allah says, if the others (who admonished him) would have a chance to loot this world, they will take it.”‘
Allah said,
أَلَمْ يُوْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لاَّ يِقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقَّ
Was not the covenant of the Book taken from them that they would not say about Allah anything but the truth,
thus, admonishing them for this behavior. Allah took a pledge from them that they would declare the truth to people and not hide it.
Allah said in another Ayah,
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَـقَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَـبَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْاْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلً فَبِيْسَ مَا يَشْتَرُونَ
(And remember) when Allah took a covenant from those who were given the Scripture to make it known and clear to mankind, and not to hide it, but they threw it away behind their backs, and purchased with it some miserable gain! And indeed worst is that which they bought. (3:187)
Ibn Jurayj said that Ibn Abbas said about the Ayah,
أَلَمْ يُوْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لاَّ يِقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقَّ
(Was not the covenant of the Book taken from them that they would not say about Allah anything but the truth),
“Their claim that Allah will forgive the sins they keep committing without repenting from them.”
وَدَرَسُواْ مَا فِيهِ
And they have studied what is in it (the Book).
Allah said,
وَالدَّارُ الاخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَ تَعْقِلُونَ
And the home in the Hereafter is better for those who have Taqwa. Do not you then understand!
Encouraging them to seek Allah’s tremendous reward and warning them against His severe torment.
Allah says here, `My reward and what I have are better for those who avoid prohibitions, abandon lusts and become active in the obedience of their Lord.’
أَفَلَ تَعْقِلُونَ
Do not you then understand!
Allah says’ Do not these people, who preferred this life instead of what is with Me, have any sense to prohibit them from their foolish and extravagant ways!’
Allah then praises those who adhere to His Book, which directs them to follow His Messenger Muhammad.
وَالَّذِينَ يُمَسَّكُونَ بِالْكِتَابِ
And as to those who hold fast to the Book,
adhere to it, implement its commands and refrain from its prohibitions,
وَأَقَامُواْ الصَّلَةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ
and perform the Salah, certainly We shall never waste the reward of those who do righteous deeds.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৬৮-১৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
ইরশাদ হচ্ছে- আল্লাহ তা’আলা বানী ইসরাঈলকে দলে দলে বিভক্ত করে দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেনঃ “এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বলেছিলাম- ভু-পৃষ্ঠে অবস্থান করতে থাক, যখন পরকালের দিন আসবে তখন আমি তোমাদের সকলকেই একত্রিত করবো।” এই বানী ইসরাঈলের মধ্যে ভাল লোকও রয়েছে এবং মন্দ লোকও রয়েছে। যেমন জ্বীনেরা বলতো- “আমাদের মধ্যে ভাল জ্বীনও রয়েছে এবং মন্দ জ্বীনও রয়েছে। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন দল রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি তাদেরকে শান্তি ও আরামের যুগ দিয়ে এবং ভয় ও বিপদের যুগ দিয়ে দু’প্রকারেই পরীক্ষা করেছি, যেন তারা শিক্ষা গ্রহণ করে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ এরপর তাদের অযোগ্য উত্তরসুরীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় এবং তারা কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হয়ে এই নিকৃষ্ট দুনিয়ার স্বার্থাবলী করায়ত্ত করে। এই স্থলাভিষিক্ত লোকদের মধ্যে কোনই মঙ্গল। নিহিত নেই। তারা শুধু নিজেরাই তাওরাত পাঠ করার ওয়ারিস হয়। অপরকে তারা পাঠ করায়নি। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা খ্রীষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। বরং এ আয়াতটিতে আরো সাধারণ । খ্রীষ্টান ও অখ্রীষ্টান সবাই সত্য কথা বিক্রী করে এবং এর দ্বারা পার্থিব সম্পদ উপার্জন করে। আর নিজেকে এইভাবে প্রতারিত করে যে, পরে তাওবা করে নেবে। কিন্তু আবার এরূপ কোন সুযোগ পেয়ে গেলে তখনও তারা পূর্বের ন্যায় দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রী করে ফেলে। কিতাবের আয়াতগুলোর পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয় এবং ভুল ফতওয়া দিয়ে বসে। পার্থিব সম্পদ লাভ করার যখনই তারা সুযোগ পায় তখনই সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। হারাম ও হালালের মোটেই পরওয়া করে না। দুনিয়ার হারাম বস্তু তারা গ্রহণ করে এবং পরে তাওবার কাজে বসে পড়ে। এভাবে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু আবার যখন দুনিয়ার কোন সম্পদ তাদের সামনে আসে তখন তারা ঐদিকে পা বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহর কসম! এরা অতি নিকৃষ্ট উত্তরসুরী। নবীদের পরে এরাইতো ছিল তাওরাত ও ইঞ্জীলের উত্তরাধিকারী । আর আল্লাহ তা’আলা কিতাবে তাদের কাছে অঙ্গীকারও নিয়েছিলেন। অন্য জায়গায় ইরশাদ হচ্ছে- “ঐ ভাল লোকদের পর এমন খারাপ লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় যারা নামাযকে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহর কাছে বহু দূরের আশা রাখে এবং নিজেকে প্রতারিত করে। দুনিয়া কামাবার কোন সুযোগ এসে গেলে তখন তারা (হারাম-হালাল) কিছুই দেখে না। কোন জিনিসই তাদেরকে পাপকার্য থেকে বিরত রাখতে পারে না। যা পায় তা-ই খায়। না হালালের কোন পরওয়া করে, না হারামের প্রতি কোন লক্ষ্য রাখে।”
বানী ইসরাঈলের মধ্যে যে কাযী হতে সে ঘুষখোর হতো। তাদের ভাল লোকেরা ঐ ঘুষখোর কাযীকে সরিয়ে অন্য কাযী নিযুক্ত করতো। তার উপর চাপ দেয়া হতো যে, ঘুষ নিয়ে যেন মুকদ্দমার ফায়সালা না করা হয়। সে ওয়াদা অঙ্গীকার করে যখন কাযী নিযুক্ত হয়ে যেতো তখন দু’হাতে ঘুষ লুটতে শুরু করে দিতো এবং বলতোঃ “চিন্তার কোন কারণ নেই, আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।” অন্যেরা তাতে আপত্তি করতো এবং তাকে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও ভৎসনা করতো। কিন্তু যখন এই ঘুষখোর মারা যেতো এবং ভৎসনাকারীদের কাযী নিযুক্ত করে দেয়া হতো তখন তারাও ঘুষ খেতে শুরু করে দিতো। এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, দুনিয়া তাদের কাছে আসলো, আর তারা ওকে একত্রিত করতে শুরু করে দিলো । আল্লাহ পাক বলেনঃ “তাদের নিকট হতে কি কিতাবের ওয়াদা নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া কিছুই বলবে না?” তাদের কাছে ওয়াদা নেয়া হয়েছিল যে, তারা মানুষকে সত্য বলার উপদেশ দেবে এবং সত্য কথাকে গোপন করবে না। কিন্তু তারা সেই হুকুমকে পৃষ্ঠের পিছনে ছুঁড়ে ফেলে এবং অল্প মূল্যের বিনিময়ে আয়াতগুলোকে বদলিয়ে দেয় বা ওগুলোর ভুল অর্থ করে । তাদের এই উপার্জন কতই না নিকৃষ্ট উপার্জন। তারা আল্লাহর কাছে পাপমোচনের আশা রাখে বটে, কিন্তু পাপকার্য ছাড়তে চায় না এবং তাওবার উপর কায়েম থাকে না।
ইরশাদ হচ্ছে- “যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে আখিরাতের ঘর তোমাদের জন্যে উত্তম। দুনিয়ার উপর তোমরা জীবন দিচ্ছ কেন? তোমরা কি এতটুকু কথাও অনুধাবন করতে পার না?” আল্লাহ তা’আলা বড় ও উত্তম পুরস্কারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করছেন এবং পাপের মন্দ পরিণাম থেকে ভয় দেখাচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, এই দ্বীন বিক্ৰীকারীরা কি এতটুকুও জ্ঞান রাখে না? অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকদের প্রশংসা করছেন যারা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে, যে কিতাব তাদেরকে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অনুসরণের দিকে আহ্বান করছে। এ সবকিছু তাদের কিতাব তাওরাত এবং ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যারা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামায কায়েম করে, তার আদেশ নিষেধকে পূর্ণভাবে মেনে চলে, আর পাপকার্য থেকে বিরত থাকে, তাদের জেনে রাখা উচিত যে, এরূপ সঙ্কৰ্মশীলদের কর্মফল আমি কখনও বিনষ্ট করি না।”
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এই আয়াতে ইয়াহুদীদের বিভিন্ন দলে উপদলে ভাগ হয়ে যাওয়ার ও তাদের মধ্যে কিছু লোকের সৎ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে এবং তাদেরকে দু’ভাবেই পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে; যাতে তারা নিজেদের দুষ্কর্ম থেকে ফিরে আসে ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
[১] خَلَف (লামের যবরের সাথে) সৎ সন্তান এবং خَلْف (লামে জযমের সাথে) অসৎ ও অযোগ্য সন্তানদেরকে বলা হয়।
[২] أدنى শব্দটি دُنُو থেকে নেওয়া হয়েছে; যার অর্থ নিকটবর্তী। অর্থাৎ, নিকটবর্তী (পার্থিব) সম্পদ গ্রহণ করে। অথবা এটি دناءة থেকে নেওয়া হয়েছে; যার অর্থ হল নিকৃষ্ট বা তুচ্ছ সম্পদ। উভয় অর্থেরই উদ্দেশ্য, তাদের পার্থিব সম্পদের প্রতি আসক্তির স্পষ্টীকরণ।
[৩] অর্থাৎ, তারা দুনিয়াদার হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা প্রাপ্তির আশা রাখে। যেমন আজকের যুগের মুসলিমদের অবস্থা।
[৪] এ সত্ত্বেও তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হতে বিরত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ ক্ষমার কথা যা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
[৫] دَرَسوا এর অন্য এক অর্থ মুছে দেওয়াও হতে পারে। যেমন বলা হয়, درست الريح الآثار অর্থাৎ, হাওয়া নিদর্শন (পদচিহ্ন) মুছে ফেলেছে। অর্থাৎ, কিতাবের কথাগুলোকে মুছে দিয়েছে। যার মতলব কিতাবের উপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছে।
* তাদের মধ্যে যারা তাকওয়া, পরহেযগারি ও সাবধানতার পথ অবলম্বন করবে, কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করবে; যার অর্থঃ আসল তাওরাতের উপর আমল করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতের উপর ঈমান আনবে, নামায ইত্যাদির উপর দৃঢ় থাকবে। তাহলে এমন সৎকর্মশীলদের কর্মফল আল্লাহ নষ্ট করবেন না। এখানে ঐ সকল আহলে কিতাবের (বিশেষভাবে ইয়াহুদীদের) কথা বর্ণনা রয়েছে। যারা কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে এবং তাদের জন্য পরকালের সুসংবাদও রয়েছে; এর অর্থ হল, তারা যেন মুসলমান হয়ে যায় ও শেষনবীর রিসালাতের উপর ঈমান আনে। কারণ, এখন শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনা ছাড়া পরকালের সুসংবাদ লাভ সম্ভব নয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-**
গুনাহ করে। তারা জানে এ কাজটি করা গুনাহ তবুও এ আশায় তারা এ কাজটি করে যে, কোন না কোনভাবে তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। কারণ তারা মনে করে, তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং তারা যত কঠিন অপরাধই করুক না কেন তাদের ক্ষমালাভ অপরিহার্য। এ ভুল ধারণার ফলে কোন গুনাহ করার পর তারা লজ্জিত হয় না এবং তাওবাও করে না। বরং ঐ একই ধরনের গুনাহ করার সুযোগ এলে তারা আবার তাতে জড়িয়ে পড়ে। এ হতভাগ্য লোকেরা এমন একটি কিতাবের উত্তরাধীকারী ছিল, যা তাদেরকে দুনিয়ার নেতৃত্বের পদে আসীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হীনমন্যতা ও নীচাশয়তার ফলে, তারা এ সৌভাগ্যের পরশমণিটির সাহায্যে তুচ্ছ পার্থিব সম্পদ আহরণ করার চাইতে বড় কোন জিনিস উপার্জনের হিম্মতই করলো না। তারা দুনিয়ার ন্যায়-ইনসাফ, সত্য-সততার পতাকাবাহী এবং কল্যাণ ও সুকৃতির অগ্রপথিক ও পদপ্রদর্শক হবার পরিবর্তে নিছক দুনিয়ার কুকুর হয়েই রইল।
* অর্থাৎ তারা নিজেরাই জানে, তাওরাতের কোথাও বনী ইসরাঈলের জন্য শর্তহীন মুক্তি সনদ দেয়ার উল্লেখ নেই। আল্লাহ কখনো তাদেরকে একথা বলেননি এবং তাদের নবীগণও কখনো তাদেরকে এ ধরনের নিশ্চয়তা দেননি যে, তোমরা যা ইচ্ছা করতে পারো, তোমাদের সকল গুনাহ অবশ্যি মাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া আল্লাহ নিজে যে কথা কখনো বলেননি, তাকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করার কি অধিকারই বা তাদের থাকতে পারে? অথচ তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল যে, আল্লাহর নামে কোন অসত্য কথা তারা বলবে না।
* এ আয়াতটির দু’টি অনুবাদ হতে পারে। একটি অনুবাদ আমি এখানে করেছি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, “আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকদের জন্য তো আখেরাতের আবাসই ভাল।” প্রথম অনুবাদের আলোকে আয়াতের তাৎপর্য হবে এই যে, মাগফেরাত কারোর একচেটিয়া ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অধিকার নয়। তুমি এমন কাজ করবে যা শাস্তি লাভের যোগ্য, কিন্তু আখেরাতে তুমি নিছক ইহুদী বা ইসরাঈলী হবার কারণে ভাল জায়গা পেয়ে যাবে, এটা কখনো হতে পারে না। তোমাদের মধ্যে সামান্যতম বিবেক-বুদ্ধি থাকলেও তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারবে যে, আখেরাতের ভাল জয়গা একমাত্র তারাই পেতে পারে যারা দুনিয়ায় আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে কাজ করে। আর দ্বিতীয় অনুবাদটি গ্রহণ করলে মর্ম এ দাঁড়ায় যে, যেসব লোক আল্লাহর ভয়ে ভীত নয় একমাত্র তারাই দুনিয়াবী লাভ ও স্বার্থকে আখেরাতের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকেরা নিশ্চিতভাবে আখেরাতের স্বার্থকে দুনিয়ার স্বার্থের ওপর এবং আখেরাতের কল্যাণ ও লাভকে দুনিয়ার আয়েশ-আরামের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।