Book#556

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٥٣) -৫৫৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
২০১- ২০২ নং আয়াত:-

اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡ
নিশ্চয়ই যারা সাবধান হয়,
The People of Taqwa ,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا اِذَا مَسَّہُمۡ طٰٓئِفٌ مِّنَ الشَّیۡطٰنِ تَذَکَّرُوۡا فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡصِرُوۡنَ ﴿۲۰۱﴾ۚ
وَ اِخۡوَانُہُمۡ یَمُدُّوۡنَہُمۡ فِی الۡغَیِّ ثُمَّ لَا یُقۡصِرُوۡنَ ﴿۲۰۲﴾
নিশ্চয়ই যারা সাবধান হয়, যখন শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আত্মসচেতন হয় এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়।

আর যারা শয়তানের ভাই, শয়তানেরা তাদেরকে ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না।

২০১-২০২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এ আয়াতগুলোতে নবী (সা.) কে প্রচার, পথনিদির্শনা দান, সংস্কার ও সংশোধন কৌশলের কতিপয় গুরুত্ব বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কেবল নবী (সা.) কে নয়, বরং নবী (সা.) এর স্থালাভিসিক্ত হয়ে যেসব লোক দুনিয়াবাসীকে সঠিক পথ দেখাবার দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসবে, তাদেরকেও তাঁরই মাধ্যমে এ একই কৌশল শিখানোও এর উদ্দেশ্য। এ বিষয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়ঃ

(১) ইসলামের আহবায়কের জন্য যে গুণগুলো সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাকে কোমল স্বভাবের, সহিষ্ণু ও উদার হৃদয় হতে হবে। তাকে হতে হবে নিজের সঙ্গী-সহযোগীদের জন্য স্নেহশীল, সাধারণ মানুষের জন্য দয়াদ্র হৃদয় এবং নিজের বিরোধীদের জন্য সহিষ্ণু। নিজের সাথীদের দুর্বলতাগুলোও তাকে সহ্য করে নিতে হবে এবং নিজের বিরোধীদের কঠোর ব্যবহারকেও। চরম উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্যেও তার নিজের আচরণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় কথাগুলোও উদার মনে এড়িয়ে যেতে হবে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যতই কড়া ভাষায় কথা বলা হোক, যতই দোষারোপ করা ও মনে ব্যাথা দেয়া হোক এবং যতই বর্বরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হোক না কেন, তাকে অবশ্যি এসবকিছুকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, কর্কশ আচরণ করা, তিক্ত ও কড়া কথা বলা এবং প্রতিশোধমূলক মানসিক উত্তেজনায় ভোগা এ কাজের জন্য বিষতুল্য। এতে গোটা কাজ পণ্ড হয়ে যায়। এ জিনিসটিকে নবী (সা.) এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “আমার রব আমাকে হুকুম দিয়েছেন, আমি যেন ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই ইনসাফের কথা বলি, যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার সাথে সম্পর্ক জুড়ি, যে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাকে তার অধিকার দান করি, যে আমার প্রতি জুলুম করে আমি তাকে মাফ করে দেই।” ইসলামের কাজে তিনি নিজের পক্ষ থেকে যাদেরকে পাঠাতেন, তাদেরকেও এ একই বিষয়গুলো মেনে চলার নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেনঃ

بَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا

“যেখানে তোমরা যাবে সেখানে তোমাদের পদার্পণ যেন লোকদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে দেখা দেয়, তা যেন লোকদের মধ্যে ঘৃণার সঞ্চার না করে। লোকদের জীবন যেন তোমাদের কারণে সহজ হয়ে যায়, কঠিন ও সংকীর্ণ হয়ে না পড়ে।”

আল্লাহ নিজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ গুণেরই প্রশংসা করেছেনঃ فَبِمَا رَحمَةٍ مِنَ الله لِنتَ لَهُم وَلَو كٌنتَ فَظًا غَلِيظَ القَلُبِ لاَنفَضُّوا من حَولِكَ- “আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের জন্য কোমল প্রমাণিত হয়েছো, নয়তো যদি তোমার ব্যবহার কর্কশ হতো এবং তোমার মন হতো সংকীর্ণ ও অনুদার, তাহলে এসব লোক তোমার চারদিক থেকে সরে যেতো।”-(আল ইমরানঃ ১৫৯)

(২) সত্যের দাওয়াতের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, দাওয়াতদানকারীরা দার্শনিক তত্ব ও সূক্ষাতিসূক্ষ্ম তত্বালোচনার পরিবর্তে লোকদেরকে এমনসব সহজ-সরল সৎকাজের নির্দেশ দেবেন যা সবার কাছে সৎকাজ হিসেবে পরিচিত অথবা যাদের সৎকাজ হবার ব্যাপারটি বুঝার জন্য প্রত্যেক মানুষের সাধারণ জ্ঞানই (Common sence) যথেষ্ট হয়। এভাবে সত্যের আহবায়কের আবেদন সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সবাইকে প্রভাবিত করে এবং প্রত্যেকটি শ্রোতার কান থেকে হৃদয় অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ সে নিজেই তৈরী করে নেয়। এ ধরনের পরিচিত সৎকর্মের দাওয়াতের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদের ঝড় তোলে, তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতা ও এ দাওয়াতের সাফল্যের পথ প্রসস্ত করে। কারণ সাধারণ মানুষ যতই বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হোক না কেন যখন তারা দেখে যে, একদিকে সৎ, ভ্দ্র ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি সরল-সহজভাবে, সোজাসুজি সৎকাজের দাওয়াত দিচ্ছে এবং অন্যদিকে এক দল লোক তার বিরোধিতায় নেমে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করছে যা নৈতিকতা ও মানবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সত্য বিরোধীদের প্রতি তাদের মন বিরূপ হয়ে উঠতে থাকে এবং সত্যের আহবায়কের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত মোকাবিলার ময়দানে কেবলমাত্র এমন সব লোক থেকে যায়, বাতিল ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার মধ্যে যাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ নিহিত অথবা পূর্ববর্তীদের অন্ধ অনুকরণের প্রেরণা ও জাহেলী বিদ্বেষ যাদের মনে যে কোন ধরনের আলো গ্রহণ করার ক্ষমতা বিনষ্ট করে দিয়েছে। এ কর্মকৌশলের বদৌলতেই নবী (সা.) আরবে সাফল্য অর্জন করেন এবং তারপর মাত্র কিছু দিনের মধ্যে নিকটবর্তি দেশগুলোয় ইসলাম এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যে, সেখানে কোথাও মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা একশ ভাগ, কোথাও নব্বই ভাগ এবং কোথাও আশি ভাগ।

(৩) সত্যের এ দাওয়াতের ক্ষেত্রে যেখানে একদিকে ন্যায় ও কল্যাণ অনুসন্ধানীদেরকে সৎকাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরী, সেখানে মূর্খদের সাথে কোন প্রকার সংঘর্ষ ও বিরোধে জড়িয়ে না পড়াও অপরিহার্য, চাই তারা সংঘর্ষ ও বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য যত চেষ্টাই করুক। যারা ন্যায়সঙ্গতভাবে বুদ্ধি বিবেচনার সাথে বক্তব্য অনুধাবন করতে চায়, আহবায়কের উচিত একমাত্র তাদেরই সম্বোধন করা। এ ব্যাপারে তাঁকে অতি সাবধানী হতে হবে। অন্যদিকে যখন কোন ব্যক্তি নিরেট মূর্খের মত ব্যবহার শুরু করে দেয়, তর্ক-বিতর্ক, গোঁয়ার্তুমি, ঝগড়-ঝাটি ও গালিগালাজের পর্যায়ে নেমে আসে, তখন আহবায়কের তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অস্বীকার করা উচিত। কারণ এ ধরনের বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাঁটিতে লিপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। বরঞ্চ এতে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আহবায়কের যে শক্তি ইসলামী দাওয়াত সম্প্রসারণ ও ব্যক্তি চরিত্র সংশোধনের কাজে ব্যয়িত হওয়া উচিত, তা অযথা এ বাজে কাজে ব্যয় হয়ে যায়।

(৪) তিন নম্বরে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেই প্রসঙ্গে আরো নির্দেশ হচ্ছে এই যে, সত্যের আহবায়ক যখনই বিরোধীদের জুলুম, নির্যাতন ও অনিষ্টকর কার্যকলাপ এবং তাদের মূর্খতা প্রসূত অভিযোগ-আপত্তির কারণে মানসিক উত্তেজনা অনুভব করবে তখনই তার বুঝে নেয়া উচিত যে, এটি শয়তানের উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। তখনই তার আল্লাহর কাছে এ মর্মে আশ্রয় চাওয়া উচিত যে, আল্লাহ‌ যেন তাঁর বান্দাকে এ উত্তেজনার স্রোতে ভাসিয়ে না দেন এবং তাকে এমন অসংযমী ও নিয়ন্ত্রনবিহীন না করেন যার ফলে সে সত্যের দাওয়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মত কোন কাজ করে বসে। সত্যের দাওয়াতের কাজ ঠাণ্ডা মাথায়ই করা যেতে পারে। আবেগ-উত্তেজনার বশবর্তী না হয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সময়-সুযোগ দেখে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে পদক্ষেপটি নেয়া হয় একমাত্র সেটিই সঠিক হতে পারে। কিন্তু শয়তান যেহেতু এ কাজটির উন্নতি কখনো দুচোখে দেখতে পারে না, তাই সে হামেশা নিজের সঙ্গী-সাথীদের সাহায্যে সত্যের আহবায়কের ওপর নানান ধরনের আক্রমণ পরিচালনার চেষ্টা চালায়। আবার প্রত্যেকটি আক্রমণের পর সে আহবায়ককে এই বলে ক্ষেপাতে থাকে যে, এ আক্রমণের জবাব তো অবশ্যই দেয়া দরকার। আহবায়কের মনের দুয়ারে শয়তানের এ আবেদন অধিকাংশ সময় অতিশয় প্রতারণাপূর্ণ ব্যাখ্যা ও ধর্মীয় সংস্কারের মোড়কে আবৃত হয়ে আসে। কিন্তু এর গভীরে সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাই শেষ দুআয়াতে বলা হয়েছেঃ যারা মুক্তাকী (অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে কাজ করে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে চায়) তারা নিজেদের মনে কোন শয়তানী প্ররোচানার প্রভাব এবং কোন অসৎ চিন্তার ছোয়া অনুভব করতেই সাথে সাথেই সজাগ হয়ে ওঠে। তারপর এ পর্যায়ে কোন ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বনে দ্বীনের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং সত্য প্রীতির প্রকৃত দাবী কি তা তারা পরিষ্কার দেখতে পায়। আর যাদের কাজের সাথে স্বার্থপ্রীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং এ জন্য শয়তানের সাথে যাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তারা অবশ্যি শয়তানী প্ররোচনার মোকাবিলায় টিকে থাকতে পারে না এবং তার কাছে পরাজিত হয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। তারপর শয়তান তাদেরকে নাকে রশি লাগিয়ে যেখানে ইচ্ছা ঘোরাতে থাকে এবং কোথাও গিয়ে স্থির হতে দেয় না। বিরোধীদের প্রত্যেকটি গালির জবাবে তাদের কাছে গালির স্তুপ এবং তাদের প্রত্যেকটি অপকৌশলের জবাবে তার চাইতেও বড় অপকৌশল তাদের কাছে তৈরী থাকে।

এ বক্তব্যের একটি সাধারণ প্রয়োগ ক্ষেত্রও রয়েছে। মুত্তাকী লোকেরা নিজেদের জীবনে সাধারণত অমুত্তাকী লোকদের থেকে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে এবং সর্বান্তকরণে অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে চায়, তাদের মনে কখনো যদি অসৎ চিন্তার সামান্যতম স্পর্শও লাগে, তাহলে তাদের মনকে তা ঠিক তেমনিভাবে আহত করে যেমন আঙুলে কাঁটা বিঁধে গেলে বা চোখে বালির কণা পড়লে মানুষ যন্ত্রনা বোধ করে। যেহেতু তারা অসৎ চিন্তা, অসৎ কামনা-বাসনা ও অসৎ সংকল্প করতে অভ্যস্ত নয় তাই জিনিসগুলো তাদের জন্য আঙুলে কাঁটা ফুটে যাওয়া, চোখে বালি পড়া অথবা স্পর্শকাতর ও পরিচ্ছন্নতা প্রিয় ব্যক্তির কাপড় কালির দাগ লেগে যাওয়া বা ময়লার ছিঁটে পড়ার মত অস্বস্তিকর বোধ হয়। তারপর তাদের মনে এভাবে অস্বস্তির কাঁটা বিঁধে যাবার পর তাদের চোখ খুলে যায় এবং তাদের বিবেক জেগে উঠে, অসৎ প্রবণতার এ ধূলোমাটি ঝেড়ে ফেলার কাজে ব্যাপৃত হয়। অন্যদিকে যারা আল্লাহকে ভয় করে না, অসৎকাজ থেকে বাঁচতেও চায় না এবং শয়তানের সাথে নিবিড় সম্পর্কও কায়েম করে রেখেছে, তাদের মনে অসৎ চিন্তা, অসৎ সংকল্প ও অসৎ উদ্দেশ্য পরিপক্কতা লাভ করতে থাকে এবং তারা এসব পচা দুর্গন্ধময় আবর্জনায় কোন প্রকার অস্বস্তি অনুভব করে না। তাদের অবস্থা হয় ঠিক তেমনি যেমন কোন ডেকচিতে শুয়োরের মাংস রান্না করা হচ্ছে কিন্তু ডেকচি এর কোন খবরই রাখে না যে, তার মধ্যে কি রান্না হচ্ছে। অথবা কোন ধাঙড়ের সারা দেহ ও কাপড় চোপড় ময়লায় ভরে গেছে এবং তা থেকে ভীষণ দুর্গন্ধও বেরুচ্ছে কিন্তু তার মধ্যে কোন অনুভূতিই নেই যে, সে কিসের মধ্যে আছে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 201-202
اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡ
The People of Taqwa ,

The Whispering of Shaytan and the People of Taqwa

Allah says;
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَواْ إِذَا مَسَّهُمْ طَايِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ

and (indeed) they then see (aright).

they become aright and aware of the error of their ways.
A Brethren of Devils among Mankind lure to Falsehood

Allah said next,

وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ إِنَّ الْمُبَذرِينَ كَانُواْ إِخْوَنَ الشَّيَـطِينِ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ

and they never stop short.

for the devils never cease inciting mankind to commit errors.

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented on Allah’s statement,
وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ
(But (as for) their brothers they plunge them deeper into error, and they never stop short),

“Neither mankind stop short of the evil that they are doing nor the devils stop short of luring them.”

Therefore,
لَا يُقْصِرُونَ
(they never stop short),

refers to the devils getting tired or stopping their whispering.

Allah said in another Ayah,

أَلَمْ تَرَ أَنَّأ أَرْسَلْنَا الشَّيَـطِينَ عَلَى الْكَـفِرِينَ تَوُزُّهُمْ أَزّاً

See you not that We have sent Shayatin against the disbelievers to push them to do evil! (19:83)

persistently luring the disbelievers to commit evil, according to Ibn Abbas and others.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

২০১-২০২ নং আয়াতের তাফসীর:

যেসব বান্দা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে, তাদেরকে যদি কোন সময় শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজে নিমগ্ন করে তবে সত্বরই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। (আরবী) শব্দটিকে কেউ কেউ (আরবী) পড়েছেন। এই দু’ কিরআতই প্রসিদ্ধ। এ দু’টোর অর্থও একই। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, অর্থে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ এর অর্থ ক্রোধ বলেছেন। অন্য কেউ বলেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- ‘শয়তান যখন তাকে কোন দুর্ঘটনায় ফেলে। আবার এর অর্থ ‘পাপের কারণে লজ্জা ও দুঃখ’ এরূপও করা হয়েছে। কোন কোন লোক এর অর্থ ‘পাপ কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়া করেছেন। এই লোকদের আল্লাহর শাস্তি, দান, সওয়াব, তাঁর ওয়াদা, ভয় প্রদর্শন ইত্যাদি স্মরণ হয়ে যায়। ফলে তৎক্ষণাৎ তারা তাওবা করে ফেলে এবং আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে। আর ঐ মুহূর্তেই তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতঃ তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করে। সাথে সাথেই তাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়। অজ্ঞান থাকলে তাদের জ্ঞান ফিরে আসে।

কথিত আছে যে, একজন নারী নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। তার। মৃগীর রোগ ছিল। সে আরয করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার আরোগ্যের জন্যে আল্লাহর নিকট দুআ করুন।” তিনি বললেনঃ “আমি যদি দুআ করি তবে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। কিন্তু তুমি যদি ধৈর্যধারণ কর তবে কিয়ামতের দিন তোমাকে হিসাব দিতে হবে না।” তখন ঐ মহিলাটি বললোঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি রোগের উপর ধৈর্য অবলম্বন করবো, কেননা এর বিনিময়ে আমি জান্নাত পাবো। তবে আমার মৃগী ও মুৰ্ছা রোগ রয়েছে বলে আমার জ্ঞান লোপ পেয়ে যায় এবং শরীর থেকে কাপড় খুলে পড়ে। তাই আপনি আমার জন্যে দুআ করুন যেন রোগ দূর না হলেও কমপক্ষে আমার দেহ থেকে কাপড় খুলে না যায়। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার জন্যে দুআ করেন এবং তখন থেকে আর কখনও ঐ রোগ উঠার সময় তার দেহ থেকে কাপড় খুলে যেতো না। (এ হাদীসটি ইবনে মিরদুওয়াই ও একাধিক আহলে সুনান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর বিশুদ্ধ)

বর্ণিত আছে যে, একজন যুবক মসজিদে বসে ইবাদত করতো। একটি মহিলা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে একদা তার বাড়ীতে এসেই পড়ে। সাথে সাথে (আরবী) তার এ আয়াতটি স্মরণ হয়ে যায় এবং তৎক্ষণাৎ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে আবার সে এ আয়াতটি পাঠ করে এবং এবার সে মারাই যায়। হযরত উমার (রাঃ) এসে তার পিতার নিকট সমবেদনা প্রকাশ করেন। রাত্রিকালে তাকে দাফন করা হয়। হযরত উমার (রাঃ) তাঁর কয়েকজন সাথীকে নিয়ে তার কবরের কাছে গমন। করেন এবং তার জানাযার নামায আদায় করেন। অতঃপর তিনি তাকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে যুবক!

(আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করলো, তার জন্যে দু’টি জান্নাত রয়েছে।” (৫৫:৪৬) এ আয়াতটি শুনে যুবকটি কবরের মধ্য থেকেই উত্তর দিলোঃ “হে উমার (রাঃ)! মহা মহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে দু’টি জান্নাতই দান করেছেন!” (হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের সঙ্গী মানবরূপী শয়তানরা তাদেরকে বিভ্রান্তির পথে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানদের ভাই।” (১৭:২৭) অর্থাৎ তাদের অনুসারীদেরকে ও তাদের কথা মান্যকারীদেরকে তারা গুমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। পাপকাজ তাদের কাছে তারা সহজ করে দেয় এবং তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে বাড়াবাড়ি। অর্থাৎ অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তিতে তারা বাড়াবাড়ি করে।

(আরবী) অর্থাৎ এই শয়তানরা তাদের চেষ্টায় মোটেই কোন ত্রুটি করে । হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- মানুষ অসৎ কাজ সম্পাদনে আদৌ অবহেলা প্রদর্শন করে না এবং শয়তানরাও তাদেরকে বিপথে চালিত করার কাজে মোটেই ক্রটি করে না। গুমরাহীর দিকে আকৃষ্টকারীরা হচ্ছে। জ্বিন ও শয়তান , যারা নিজেদের মানব বন্ধুদের কাছে অহী পাঠিয়ে থাকে এবং ঐ কাজে মোটেই ক্রটি করে না। কারণ তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবই এই রূপ। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) ! তুমি কি দেখনি যে, আমি শয়তানদেরকে কাফিরদের নিকট পাঠিয়ে থাকি, যারা ঐ কাফিরদেরকে নাফরমানীর দিকে আকৃষ্ট করে। থাকে?” (১৯:৮৩)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এতে আল্লাহ-ভীরু লোকেদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা শয়তান হতে সদা সতর্ক থাকে। طيف، طائف সেই কল্পনাকে বলা হয় যা অন্তরে বা স্বপ্নে উদয় হয়। এখানে শয়তানের কুমন্ত্রণার অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ শয়তানের কুমন্ত্রণাও খেয়ালী কল্পনার সদৃশ হয়ে থাকে। (ফাতহুল কাদীর)
* অর্থাৎ, শয়তানরা কাফেরদের বিভ্রান্তির দিকে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর (কাফেররা বিভ্রান্তির দিকে যেতে) অথবা শয়তানরা তাদেরকে বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে যেতে কোন প্রকার ক্রটি করে না। لاَ يَقْصِرُونَ এর কর্তা কাফেরগণ ও হতে পারে, আর তাদের ভাই শয়তানরাও হতে পারে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকিদের গুণাগুণ বর্ণনা করছেন, যারা সর্বদা তাঁর আদেশ পালন করে ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকে। যদি শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয় তাহলে তখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে ভয় করে সওয়াবের আশায় শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফিরে আসে।

طٰ۬ئِفٌ শব্দটিকে কেউ কেউ طَائفٌ পড়েছেন। এর সঠিক অর্থ হল:

عارض من وسوسة السيطان

শয়তানের কুমন্ত্রণায় আক্রান্ত হওয়া।

(فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ)

‘তৎক্ষণাৎ তাদের ঈমান চক্ষু খুলে যায়’ অর্থাৎ তখন জেনে শুনে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে লিপ্ত হয় না। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ আঁকড়ে ধরে এবং শয়তানের অবাধ্য হয়। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১৭৬৫)

পক্ষান্তরে যারা মুত্তাকী নয় বরং শয়তানের ভাই, তাদেরকে শয়তান ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এ বিষয়ে কোন কমতি করে না।

(وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِمْ بِاٰيَةٍ)

‘তুমি যখন তাদের নিকট কোন নিদর্শন উপস্থিত কর’ অর্থাৎ এমন মু’জিযাহ উদ্দেশ্য যা তাদের ইচ্ছানুসারে তাদের কথামত প্রকাশ করা হবে। যেমন তাদের কিছু দাবী সূরা বানী ইসরাঈলের ৯০-৯৩ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।

Leave a Reply