Book#564

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٦١) -৫৬৪
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
১১-১৪ নং আয়াত:-

إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ
স্মরণ কর, যখন তিনি তাঁর পক্ষ হতে নিরাপত্তা (ও শান্তি) দানের জন্য,
When He covered you with a slumber as a security from Him,

اِذۡ یُغَشِّیۡکُمُ النُّعَاسَ اَمَنَۃً مِّنۡہُ وَ یُنَزِّلُ عَلَیۡکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً لِّیُطَہِّرَکُمۡ بِہٖ وَ یُذۡہِبَ عَنۡکُمۡ رِجۡزَ الشَّیۡطٰنِ وَ لِیَرۡبِطَ عَلٰی قُلُوۡبِکُمۡ وَ یُثَبِّتَ بِہِ الۡاَقۡدَامَ ﴿ؕ۱۱﴾
اِذۡ یُوۡحِیۡ رَبُّکَ اِلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ اَنِّیۡ مَعَکُمۡ فَثَبِّتُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ سَاُلۡقِیۡ فِیۡ قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا الرُّعۡبَ فَاضۡرِبُوۡا فَوۡقَ الۡاَعۡنَاقِ وَ اضۡرِبُوۡا مِنۡہُمۡ کُلَّ بَنَانٍ ﴿ؕ۱۲﴾
ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ شَآقُّوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ۚ وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَاِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۱۳﴾
ذٰلِکُمۡ فَذُوۡقُوۡہُ وَ اَنَّ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابَ النَّارِ ﴿۱۴﴾

স্মরণ কর, যখন তিনি তাঁর পক্ষ হতে নিরাপত্তা (ও শান্তি) দানের জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যাতে তা দিয়ে তোমাদেরকে পবিত্র করেন, তোমাদের নিকট হতে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূরীভূত করেন,তোমাদের হৃদয় সুদৃঢ় করেন এবং তোমাদের পা স্থির রাখেন।

স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফিরিশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং তোমরা বিশ্বাসীগণকে অবিচলিত রাখ। যারা অবিশ্বাস করে, আমি অচিরেই তাদের হৃদয়ে আতঙ্ক প্রক্ষেপ করব। সুতরাং তাদের ঘাড়ের উপর আঘাত কর এবং আঘাত কর তাদের সর্বাঙ্গে।
এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করবে (তারা জেনে রাখুক,) নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
এটাই তোমাদের শাস্তি; সুতরাং তোমরা তার আস্বাদ গ্রহণ কর। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে দোযখের শাস্তি।

১১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

(إِذْ يُغَشِّيْكُمُ النُّعَاسُ أَمَنَةً)

‘স্মরণ কর, যখন তিনি তাঁর পক্ষ হতে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করলেন’ আল্লাহ তা‘আলা বদর প্রান্তরে মুসলিমদেরকে তিনটি পুরস্কার প্রদান করেছেন। প্রথমত: ফেরেশতা দ্বারা সহযোগিতা করা। দ্বিতীয়ত: উহুদ যুদ্ধের মত বদর যুদ্ধে তন্দ্রা দ্বারা আচ্ছন্ন করা। মুসলিমদের মনে একটি অস্বস্তি ও শরীরে ক্লান্তি এসেছিল, তা দূর করার জন্য। তৃতীয়ত: তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করা। যার ফলে বালুময় মাটিতে চলাচল সহজ হল, ওযু ও গোসল করা সহজ হল এবং শয়তান মু’মিনের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার নেক বান্দা হওয়া সত্ত্বেও পানি হতে দূরে অবস্থান করছ, অপবিত্র অবস্থায় যুদ্ধ করলে কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য পাবে আর তোমরা পিপাসিত, শত্রুরা পিপাসিত নয় ইত্যাদি দূর করার জন্য।

সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের কদমকে যুদ্ধের মাঠে মজবুত করার লক্ষে এসব নেয়ামত দ্বারা সহযোগিতা করলেন।

(أَنِّيْ مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا)

‘আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মু’মিনগণকে অবিচলিত রাখ’। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে জানিয়ে দিলেন, আমি আমার সাহায্য সহযোগিতা দ্বারা তোমাদের সাথে রয়েছি অতএব তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা করে ময়দানে অটল রাখ।

‘আল্লাহ সাথে রয়েছেন’ এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় তাদের সাথে মিলে একত্রে যুদ্ধ করছেন। বরং আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য-সহযোগিতা দ্বারা তাদের সাথে রয়েছেন। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللّٰهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِه۪ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا)

“যদি তোমরা তাঁকে (রাসূলকে) সাহায্য না কর‎, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের একজন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, ‘চিন্তা কর না, নিশ্চয়ই‎ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা তাওবাহ ৯:৪০)

আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে সে গর্তে প্রবেশ করেননি (নাউযুবিল্লাহ)। বরং তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সাথে ছিলেন।

অতএব আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় আরশের উপরে আছেন। আর তাঁর শক্তি, দৃষ্টি ও শ্রবণ সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে, কিছুই তাঁর জ্ঞানায়ত্তের বাইরে নয়।

(فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ….. كُلَّ بَنَانٍ)

‘সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।’ এখানে আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের কৌশল শিক্ষা দিলেন, শত্রুদের কোথায় প্রহার করলে সহজে কাবু করা যাবে। তিনি বলেন: শত্রুদের ঘারের ওপর এবং শরীরের প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় প্রহার কর যাতে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে না পারে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَإِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ ط حَتّٰيٓ إِذَآ أَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ)

“তাই যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করাই (প্রথম কাজ) যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাজিত করে ফেলবে তখন (বন্দীদেরকে) কষে বাঁধবে।’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৪)

আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য তাদের এ শাস্তি। তাছাড়া আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে প্রজ্জ্বলিত আগুনের শাস্তি।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

* মু’মিনদের পুরস্কার ও আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত প্রদানের কারণ জানলাম।
* আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সাথে কিভাবে রয়েছেন এর অর্থ জানতে পারলাম।
* কাফিরদের জন্য দুনিয়াতে ও পরকালে অশুভ পরিণতি রয়েছে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 11-14
إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ

When He covered you with a slumber as a security from Him,
Slumber overcomes Muslims

Allah said,

إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ

(Remember) when He covered you with a slumber as a security from Him,

Allah reminds the believers of the slumber that He sent down on them as security from the fear they suffered from, because of the multitude of their enemy and the sparseness of their forces. They were given the same favor during the battle of Uhud, which Allah described,

ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُمْ مِّن بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُّعَاساً يَغْشَى طَأيِفَةً مِّنْكُمْ وَطَأيِفَةٌ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنْفُسُهُمْ

Then after the distress, He sent down security for you. Slumber overtook a party of you, while another party was thinking about themselves. (3:154)

Abu Talhah said,

“I was among those who were overcome by slumber during (the battle of) Uhud. The sword fell from my hand several times, and I kept picking it up again, several times. I also saw the Companions’ heads nodding while in the rear guard.”

Al-Hafiz Abu Ya`la narrated that Ali said,

“Only Al-Miqdad had a horse during Badr, and at some point, I found that all of us fell asleep, except the Messenger of Allah. He was praying under a tree and crying until dawn.”

Abdullah bin Mas`ud said,

“Slumber during battle is security from Allah, but during prayer, it is from Shaytan.”

Qatadah said,

“Slumber affects the head, while sleep affects the heart.”

Slumber overcame the believers on the day of Uhud, and this incident is very well-known. As for this Ayah (8:11), it is describing the battle of Badr, indicating that slumber also overcame the believers during Badr. Therefore, it appears that this will occur for the believers, whenever they are in distress, so that their hearts feel safe and sure of Allah’s aid, rewards, favor and mercy from Allah with them.

Allah said in other Ayat,

فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً

إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً

Verily, along with every hardship is relief. Verily, along with every hardship is relief. (94:5-6)

In the Sahih, it is recorded that;

on the day of Badr, while he was in the bunker with Abu Bakr, the Messenger and Abu Bakr were invoking Allah. Suddenly, slumber overcame the Messenger and he woke up smiling and declared,

أَبْشِرْ يَا أَبَابَكْرٍ هَذَا جِبْرِيلُ عَلَى ثَنَايَاهُ النَّقْع

“Good news, O Abu Bakr! This is Jibril with dust on his shoulders.”

He left the shade while reciting Allah’s statement,

سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ

Their multitude will be put to flight, and they will show their backs. (54:45)
Rain falls on the Eve of Badr

Allah said next,

وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّن السَّمَاء مَاء

and He caused rain to descend on you from the sky.)

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,

“When the Prophet arrived at Badr, he made camp. At the time, there was a sandy piece of land between the idolators and the water (the wells at Badr). Muslims felt weak and the Shaytan cast frustration into their hearts. He whispered to them, `You claim that you are Allah’s supporters and that His Messenger is among you! However, the idolators have taken over the water resource from you, while you pray needing purity.’

Allah sent down heavy rain, allowing the Muslims to drink and use it for purity. Allah also removed Shaytan’s whisper and made the sand firm when rain fell on it, and the Muslims walked on the sand along with their animals, until they reached the enemy.

Allah supported His Prophet and the believers with a thousand angels on one side, five hundred under the command of Jibril and another five hundred under the command of Mikhail on another side.”

An even a better narration is that collected by Imam Muhammad bin Ishaq bin Yasar, author of Al-Maghazi, may Allah have mercy upon him. Ibn Ishaq narrated that, Yazid bin Ruwman narrated to him that, Urwah bin Az-Zubayr said,

“Allah sent rain down from the sky on a sandy valley. That rain made the area where the Messenger of Allah and his Companions camped firmer so that it did not hinder their movement. Meanwhile, the part that the Quraysh were camping on became difficult to move in.”

Mujahid said,

“Allah sent down the rain on the believers before slumber overtook them, and the rain settled the dust, made the ground firmer, made them feel at ease and their feet firmer.”

Allah said next,

لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ

to clean you thereby,

using it after answering the call of nature or needing to wash oneself, and this involves cleansing what is on the out side,

وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ

and to remove from you the Rijz of Shaytan,

such as his whispers and evil thoughts, this involves sinner purification, whereas Allah’s statement about the residents of Paradise,
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ

وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ
(Their garments will be of fine green silk, and gold embroidery. They will be adorned with bracelets of silver), involves outer appearance,
وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا
(and their Lord will give them a pure drink), (76:21) that purifies the anger, envy and hatred that they might have felt. This is the inner purity.

Next, Allah said,

وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ

and to strengthen your hearts,

with patience and to encourage you to fight the enemies, and this is inner courage,

وَيُثَبِّتَ بِهِ الَاقْدَامَ

and make your feet firm thereby.

this involves outer courage.

Allah know best.
Allah commands the Angels to fight and support the Believers

Allah said next
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَليِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ امَنُواْ

(Remember) when your Lord revealed to the angels, “Verily, I am with you, so keep firm those who have believed.”

This is a hidden favor that Allah has made known to the believers, so that they thank Him and are grateful to Him for it. Allah, glorified, exalted, blessed and praised be He, has revealed to the angels — whom He sent to support His Prophet, religion and believing group — to make the believers firmer.

Allah’s statement,

سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ

I will cast terror into the hearts of those who have disbelieved.

means, `you — angels — support the believers, strengthen their (battle) front against their enemies, thus, implementing My command to you. I will cast fear, disgrace and humiliation over those who defied My command and denied My Messenger,

فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الَاعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

so strike them over the necks, and smite over all their fingers and toes.

strike them on their foreheads to tear them apart and over the necks to cut them off, and cut off their limbs, hands and feet.

According to Ad-Dahhak and Atiyyah Al-`Awfi,

فَوْقَ الَاعْنَاق
(over the necks), refers to striking the forehead, or the neck,

In support of the latter, Allah commanded the believers,

فَإِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّواْ الْوَثَاقَ

So, when you meet (in fight Jihad in Allah’s cause) those who disbelieve, smite (their) necks till when you have killed and wounded many of them, then bind a bond firmly (on them, take them as captives). (47:4)

Ar-Rabi bin Anas said,

“In the aftermath of Badr, the people used to recognize whomever the angels killed from those whom they killed, by the wounds over their necks, fingers and toes, because those parts had a mark as if they were branded by fire.”

Allah said,

وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

and smite over all their fingers and toes.

Ibn Jarir commented that this Ayah commands,

“O believers! Strike every limb and finger on the hands and feet of your (disbelieving) enemies.”

Al-Awfi reported, that Ibn Abbas said about the battle of Badr that;

Abu Jahl said, “Do not kill them (the Muslims), but capture them so that you make known to them what they did, their ridiculing your religion and shunning Al-Lat and Al-Uzza (two idols).”

Allah than sent down to the angels,

أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ امَنُواْ

سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ

فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الَاعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

Verily, I am with you, so keep firm those who have believed. I will cast terror into the hearts of those who have disbelieved, so strike them over the necks, and smite over all their fingers and toes.

In that battle, Abu Jahl (may Allah curse him) was killed along with sixty-nine men. `Uqbah bin Abu Mua`it was captured and then killed, thus bring the death toll of the pagans to seventy

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَأقُّواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ

This is because they defied and disobeyed Allah and His Messenger.

joining the camp that defied Allah and His Messenger not including themselves in the camp of Allah’s Law and faith in Him.

Allah said,

وَمَن يُشَاقِقِ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

And whoever defies and disobeys Allah and His Messenger, then verily, Allah is severe in punishment.

for He will crush whoever defies and disobeys Him. Nothing ever escapes Allah’s grasp nor can anything ever stand against His anger. Blessed and exalted He is, there is no true deity or Lord except Him.

This is (the torment), so taste it; and surely, for the disbelievers is the torment of the Fire.

This Ayah addresses the disbeliever, saying, taste this torment and punishment in this life and know that the torment of the Fire in the Hereafter is for the disbelievers.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
১১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে স্বীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, যুদ্ধের সময় তিনি তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের প্রতি ইহসান করেছেন। নিজেদের সংখ্যার স্বল্পতা এবং শত্রুদের সংখ্যাধিক্যের অনুভূতি তাদের মনে জেগেছিল বলে তারা কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছিল। তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের মনে প্রশান্তি আনয়ন করেন। এরূপ তিনি উহুদের যুদ্ধেও করেছিলেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অনন্তর আল্লাহ সেই দুঃখের পর তোমাদের প্রতি নাযিল করলেন শান্তি অর্থাৎ তন্দ্রা যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল।” (৩:১৫৪) হযরত আবু তালহা (রাঃ) বলেনঃ “উহুদের যুদ্ধের দিন আমারও তন্দ্রা এসেছিল এবং আমার হাত থেকে তরবারী পড়ে যাচ্ছিল। আমি তা উঠিয়ে নিচ্ছিলাম। আমি জনগণকেও দেখছিলাম যে, তারা ঢাল মাথার উপর করে তন্দ্রায় ঢলে পড়ছে।” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “বদরের দিন হযরত মিকদাদ (রাঃ) ছাড়া আর কারো কাছে সওয়ারী ছিল না। আমরা সবাই নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি গাছের নীচে সকাল পর্যন্ত নামায পড়ছিলেন এবং আল্লাহর সামনে কান্নাকাটি করছিলেন।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, যুদ্ধের দিন এই তন্দ্রা যেন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এক প্রকার শান্তি ও নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু নামাযে এই তন্দ্রাই আবার শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তন্দ্রা মাথায় হয় এবং ঘুম অন্তরে হয়। আমি বলি উহুদের যুদ্ধে মুমিনদেরকে তন্দ্রা আচ্ছন্ন করেছিল। আর এ খবর তো খুবই সাধারণ ও প্রসিদ্ধ। কিন্তু এখানে এই আয়াতে কারীমার সম্পর্ক রয়েছে বদরের ঘটনার সাথে। আর এ আয়াতটি এটা প্রমাণ করে যে, বদরের যুদ্ধেও মুমিনদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করা হয়েছিল এবং কঠিন যুদ্ধের সময় এভাবে মুমিনদের উপর তন্দ্রা ছেয়ে যেতো, যাতে তাদের অন্তর আল্লাহ তাআলার সাহায্যে প্রশান্ত ও নিরাপদ থাকে। আর মুমিনদের উপর এটা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা । যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই বর্তমান মুশকিলসমূহের সাথেই আসানী রয়েছে। এ জন্যেই সহীহ হাদীসে এসেছে যে, বদরের দিন নবী (সঃ) তাঁর জন্যে নির্মিত কুটিরে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে অবস্থান করছিলেন। ইতিমধ্যে নবী (সঃ)-এর উপর তন্দ্রা ছেয়ে যায়। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে তন্দ্রার ভাব কাটিয়ে উঠেন এবং বলেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)! সুসংবাদ গ্রহণ কর। ঐ দেখ, জিবরাঈল (আঃ) ধূলিমলিন বেশে রয়েছেন!” অতঃপর তিনি কুটির হতে বেরিয়ে আসলেন এবং পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শত্রুদের পরাজয় ঘটেছে এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করবে।” (৫৪:৪৫) ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন।” আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, বদরে যেখানে নবী (সঃ) অবতরণ করেছিলেন সেখানে মুশরিকরা বদর ময়দানের পানি দখল করে নিয়েছিল এবং মুসলমান ও পানির মাঝখানে তারা প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়েছিল। মুসলমানরা দুর্বলতাপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। ঐ সময় শয়তান মুসলমানদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে দেয়। সে তাদেরকে বলে- “তোমরা তো নিজেদেরকে বড়ই আল্লাহওয়ালা মনে করছে। আর তোমাদের মধ্যে স্বয়ং রাসূল (সঃ) বিদ্যমান রয়েছেন। পানির উপর দখল তো মুশরিকদের রয়েছে। আর তোমরা পানি থেকে এমনভাবে বঞ্চিত রয়েছে যে, নাপাক অবস্থাতেই নামায আদায় করছো!” তখন আল্লাহ তাআলা প্রচুর পানি বর্ষণ করলেন। মুসলমানরা পানি পান করলেন এবং পবিত্রতাও অর্জন করলেন। মহান আল্লাহ শয়তানের কুমন্ত্রণাও খাটো করে দিলেন। পানির কারণে মুসলমানদের দিকের বালু জমে শক্ত হয়ে গেল। ফলে জনগণের ও জানোয়ারগুলোর চলাফেরার সুবিধা হলো। আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ) ও মুমিনদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করলেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) একদিকে পাঁচশ’ ফেরেশতা নিয়ে বিদ্যমান ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মুশরিক কুরায়েশরা যখন আবু সুফিয়ানের কাফেলাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসে তখন তারা বদর কূপের উপর এসে শিবির স্থাপন করে। আর মুসলমানরা পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। পিপাসায় তারা ছটফট করে । নামাযও তারা নাপাকী এবং হাদাসের অবস্থায় পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে বিভিন্ন প্রকারের খেয়াল চেপে বসে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাঠে পানি বইতে শুরু করে। মুসলমানেরা পানিতে পাত্র ভর্তি করে নেয় এবং জানোয়ারগুলোকে পানি পান করায়। তাতে তারা গোসলও করে। এভাবে তারা পবিত্রতা লাভ করে। এর ফলে তাদের পাগুলোও অটল ও স্থির থাকে। (অনুরূপ বর্ণনা কাতাদা (রঃ) ও যহাক (রঃ) হতে বর্ণিত আছে) মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্য ভাগে বালুকারাশি ছিল। বৃষ্টি বর্ষণের ফলে বালু জমে শক্ত হয়ে যায়। কাজেই মুসলমানদের চলাফেরার সুবিধা হয়।

প্রসিদ্ধ ঘটনা এই যে, নবী (সঃ) বদর অভিমুখে রওয়ানা হয়ে পানির নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করেন। হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আপনি যে এ স্থানে অবতরণ করেছেন এটা কি আল্লাহর নির্দেশক্রমে, যার বিরোধিতা করা যাবে না, না যুদ্ধের পক্ষে এটাকে উপযুক্ত স্থান মনে করেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যুদ্ধের জন্যে উপযুক্ত স্থান হিসেবেই আমি এখানে অবস্থান করেছি।” তখন হযরত হাবাব (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে আরও সামনে অগ্রসর হোন এবং পানির শেষাংশ পর্যন্ত দখল করে নিন। ওখানে হাউয তৈরী করে এখানকার সমস্ত পানি জমা করুন। তাহলে পানির উপর অধিকার আমাদেরই থাকবে এবং শক্রদের পানির উপর কোন দখল থাকবে না।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সামনে বেড়ে যান এবং ঐ কাজই করেন।

বর্ণিত আছে যে, হাবাব (রাঃ) যখন এই পরামর্শ দেন তখন ঐ সময়ে একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। ঐ ফেরেশতা বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ)-এর পরামর্শ আপনার জন্যে সঠিক পরামর্শই বটে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি এই ফেরেশতাকে চিনেন কি?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে দেখে বলেন, আমি সমস্ত ফেরেশতাকে চিনি না বটে, তবে এটা যে একজন ফেরেশতা এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা শয়তান অবশ্যই নয়।

হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে নবী (সঃ)-এর দিকের ভূমি জমে গিয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং ওর উপর চলতে সুবিধা হয়। পক্ষান্তরে কাফিরদের দিকের ভূমি নীচু ছিল। কাজেই ওখানকার মাটি দলদলে হয়ে যায়। ফলে তাদের পক্ষে ঐ মাটিতে চলাফেরা কষ্টকর হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি তার দ্বারা ইহসান করার পূর্বে বৃষ্টি বর্ষিয়ে ইহসান করেছিলেন। ধূলাবালি জমে গিয়েছিল এবং মাটি শক্ত হয়েছিল। সুতরাং মুসলমানরা খুব খুশী হয়েছিলেন এবং তাদের পায়ের স্থিরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। অতঃপর তাদের চোখে তন্দ্রা নেমে আসে। তাদের মন মগজ তাজা হয়ে যায়। সকালে যুদ্ধ। রাত্রে হালকা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আমরা গাছের নীচে গিয়ে বৃষ্টি থেকে আশ্রয় গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে থেকে জনগণের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন।”

(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা হাদাসে আসগার (অযু না থাকা অবস্থা) এবং হাদাসে আকবার (গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা) থেকে পবিত্র করার জন্যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যেন তিনি তোমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণার পর পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। এটা ছিল অন্তরের পবিত্রতা। যেমন জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ “পরিধানের জন্যে তাদেরকে রেশমী কাপড় দেয়া হবে, আর দেয়া হবে তাদেরকে সোনা ও রূপার অলংকার।” এটা হচ্ছে বাহ্যিক সৌন্দর্য। আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পবিত্র সুরা পান করাবেন এবং হিংসা বিদ্বেষ থেকে তাদেরকে পাক-পবিত্র করবেন। এটা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য। বৃষ্টি বর্ষণ করার এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের অন্তরে প্রশান্তি আনয়ন করে তোমাদেরকে ধৈর্যশীল করবেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদেরকে অটল রাখবেন। এই ধৈর্য ও মনের স্থিরতা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ বীরত্ব এবং যুদ্ধে অটল থাকা হচ্ছে বাহ্যিক বীরত্ব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। মহান আল্লাহর উক্তি-(আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! ঐ সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের কাছে অহী করলেন আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং তোমরা ঈমানদারদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অবিচল রাখো। এটা হচ্ছে গোপন নিয়ামত যা আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের উপর প্রকাশ করছেন, যেন তারা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। তিনি হচ্ছেন কল্যাণময় ও মহান। তিনি ফেরেশতাদেরকে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁরা যেন নবী (সঃ)-কে, নবী (সঃ)-এর দ্বীনকে এবং মুসলিম জামাআতকে সাহায্য করেন। যাতে তাদের মন ভেঙ্গে না যায় এবং তারা সাহস হারা না হয়। সুতরাং হে ফেরেশতার দল! তোমরাও ঐ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর। কথিত আছে যে, ফেরেশতা কোন মুসলমানের কাছে আসতেন এবং বলতেন, আমি এই কওমকে অর্থাৎ মুশরিকদেরকে বলতে শুনেছি- “যদি মুসলমানরা আমাদেরকে আক্রমণ করে তবে আমরা যুদ্ধের মাঠে টিকতে পারবো না।” এভাবে কথাটি এক মুখ হতে আর এক মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সাহাবীদের মনোবল বাড়তে থাকে এবং তাঁরা বুঝতে পারেন যে, মুশরিকদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি কাফিরদের হৃদয়ে ভীতি সৃষ্টি করে দেবো।” অর্থাৎ হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা মুমিনদেরকে অটল ও স্থির রাখে এবং তাদের হৃদয়কে দৃঢ় কর।

(আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাদের স্কন্ধে আঘাত হাননা।’ (আরবী) অর্থাৎ ‘তোমরা আঘাত হাননা তাদের অঙ্গুলিসমূহের প্রতিটি জোড়ায় জোড়ায়।’ মুফাসসিরগণ (আরবী)-এর অর্থের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মাথায় মারা অর্থ নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ অর্থ নিয়েছেন গর্দানে মারা। এই অর্থের সাক্ষ্য নিম্নের আয়াতে পাওয়া যায়ঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে তখন তাদের গর্দানে মারবে, শেষ পর্যন্ত যখন তাদেরকে খুব বেশী হত্যা করে ফেলবে তখন (হত্যা করা বন্ধ করে অবশিষ্টদেরকে) দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলবে।” (৪৭:৪) হযরত কাসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর শাস্তিতে জড়িত করার জন্যে প্রেরিত হইনি। (অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত শাস্তি, যেমন পূর্ববর্তী উম্মতবর্গের উপর অবতীর্ণ হতো), বরং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি তাদের গর্দান উড়িয়ে দেবো এবং তাদেরকে শক্তভাবে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করবো এ জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি।” ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা গর্দানে আঘাত করা ও মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়া বুঝানো হয়েছে। মাগাযী উমভী’তে রয়েছে যে, বদরের যুদ্ধের দিন নবী (সঃ) নিহতদের পার্শ্ব দিয়ে গমনের সময় বলছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মাথা কর্তিত অবস্থায় পড়ে আছে।’ তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ কথার সাথেই ছন্দ মিলিয়ে দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এমন লোকদের মাথাগুলো কর্তিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যারা আমাদের উপর অহংকার প্রকাশ করতো। কেননা, তারা ছিল বড় অত্যাচারী ও অবাধ্য।” এখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ছন্দের প্রাথমিক দু’টি শব্দ উচ্চারণ করলেন এবং অপেক্ষমান থাকলেন যে, আবু বকর (রাঃ) একে কবিতা বানিয়ে ছন্দ পূর্ণ করে দিবেন। কেননা, কবি রূপে পরিচিত হওয়া তাঁর জন্যে শোভনীয় ছিল না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং এটা তার জন্যে উপযুক্তও নয়।” (৩৬:৬৯) বদরের দিন জনগণ ঐ নিহত ব্যক্তিদেরকে চিনতে পারতো যাদেরকে ফেরেশতাগণ হত্যা করেছিলেন। কেননা ঐ নিহতদের যখম ঘাড়ের উপর থাকতো বা জোড়ের উপর থাকতো। আর ঐ যখম এমনভাবে চিহ্নিত হয়ে যেতে যেন আগুনে দগ্ধ করা হয়েছে।

(আরবী) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের শত্রুদেরকে তাদের জোড়ের উপর আঘাত কর, যেন তাদের হাত-পা ভেঙ্গে যায়। (আরবী) শব্দটি হচ্ছে শব্দের বহুবচন। প্রত্যেক জোড়কে (আরবী) বলা হয়। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা ঐ কাফিরদের চেহারা ও চোখের উপর আঘাত কর এবং এমনভাবে আহত করে দাও যে, যেন ওগুলোকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দ্বারা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর কোন কাফিরকে বন্দী করে নেয়ার পর হত্যা করা জায়েয নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বদরের ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, অবুি জেহেল বলেছিলঃ “তোমরা মুসলমানদেরকে হত্যা করার পরিবর্তে জীবিত ধরে রাখো, যেন তোমরা তাদেরকে আমাদের ধর্মকে মন্দ বলা, আমাদেরকে বিদ্রুপ করা এবং লতি’ ও উ’কে অমান্য করার স্বাদ গ্রহণ করাতে পার।” তাই আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। তোমরা মুমিনদেরকে অটল রাখো। আমি কাফিরদের অন্তরে মুসলমানদের আতঙ্ক সৃষ্টি করবো। তোমরা তাদের গর্দানে ও জোড়ে জোড়ে মারবে। বদরের নিহতদের মধ্যে আবু জেহেল ৬৯ (উনসত্তর) নম্বরে ছিল। অতঃপর উকবা ইবনে আবি মুঈতকে বন্দী করে হত্যা করে দেয়া হয় এবং এভাবে ৭০ (সত্তর) পূর্ণ হয়।

(আরবী) -এর কারণ এই ছিল যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং শরীয়ত ও ঈমান পরিহারের নীতি অবলম্বন করেছিল। (আরবী) শব্দটি (আরবী) থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ “সে লাঠিকে দু’টুকরো করেছে।” ইরশাদ হচ্ছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা করে, তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর হস্ত । তিনি কোন কিছুই ভুলে যাবেন না। তাঁর গযবের মুকাবিলা কেউই করতে পারে না।”

(আরবী) এটাই হচ্ছে তোমাদের শাস্তি, সুতরাং তোমরা এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, তোমাদের জানা উচিত যে, সত্য অস্বীকারকারীদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শাস্তি। এখানে এ কথা কাফিরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা দুনিয়াতে এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর এবং জেনে রেখো যে, কাফিরদের জন্যে আখিরাতেও জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।

তাফসীরে‌ আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] দ্বিতীয় পুরস্কার হল, উহুদ যুদ্ধের মত বদরের যুদ্ধেও মহান আল্লাহ মুসলিমদের উপর তন্দ্রা আচ্ছন্ন করেন। যার ফলে তাঁদের হৃদয়-ভার অনেকটা হাল্কা হয়ে যায় এবং দেহ-মনে প্রশান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে।

[২] তৃতীয় পুরস্কার তাঁদেরকে এই দান করলেন যে, তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। যার ফলে প্রথমতঃ বালুময় মাটিতে চলাফেরা সহজ হল। দ্বিতীয়তঃ ওযূ ও গোসল করা সহজ হল। তৃতীয়তঃ শয়তান মু’মিনদের অন্তরে যে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যে, (১) তোমরা আল্লাহর নেক বান্দা হওয়া সত্ত্বেও পানি হতে এত দূরে অবস্থান করছ। (২) অপবিত্র অবস্থায় যুদ্ধ করলে তোমরা কিভাবে আল্লাহর দয়া ও সাহায্য পেতে পারবে? (৩) তোমরা পিপাসিত অথচ তোমাদের শত্রুরা পিপাসিত নয় ইত্যাদি ইত্যাদি– তা দূর হয়ে গেল।

[৩] এটি ছিল চতুর্থ পুরস্কারঃ অন্তর ও পা দৃঢ়ীকরণ।

[৪] এখানে মহান আল্লাহ ফিরিশতা দ্বারা এবং বিশেষভাবে নিজ পক্ষ হতে যেভাবে বদরে মুসলিমদের সাহায্য করেছেন তার বর্ণনা রয়েছে।

[২] بنان হাত ও পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগ। অর্থাৎ, তাদের হাত-পায়ের আঙ্গুল কেটে দিলে তারা অসহায় হয়ে পড়বে। আর এভাবে তারা হাত দ্বারা তরবারি চালাতে ও পা ছাড়া পালাতে সক্ষম হবে না। (অথবা উদ্দেশ্য তাদের সর্বাঙ্গে আঘাত কর।)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* অহোদ যুদ্ধেও মুসলমানদের এ একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১১ রুকূ’তে একথা আলোচিত হয়েছে। উভয় জায়গায় কারণ একটিই ছিল। অর্থাৎ যখনই প্রচণ্ড ভীতি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, তখনই আল্লাহ‌ মুসলমানদের দিল বিপুল নিশ্চিন্ততায় ভরে দিয়েছেন। এর ফলে তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল।

* যে রাতটি পোহাবার পরের দিন সকালে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, এটি ছিল সেই রাতের ঘটনা। এ বৃষ্টির সুফল ছিল তিনটি। এক, মুসলমানরা বিপুল পরিমাণ পানি পেয়ে গিয়েছিল। তারা সঙ্গে সঙ্গেই জলাধার তৈরী করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। দুই, মুসলমানরা উপত্যকার ওপরের দিকে অবস্থান করছিল। কাজেই বৃষ্টির ফলে বালি জমাট বেঁধে যথেষ্ট শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর দিয়ে মুসলমানদের বলিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা সহজ হয়েছিল। তিন, কাফেরদের সেনাদল ছিল নীচের দিকে। বৃষ্টির পানি সেখানে জমে গিয়ে কাদা হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেখানে হাটতে গেলেই পা দেবে যাচ্ছিল। মুসলমানদের মধ্যে প্রথম দিকে যে ভীতির অবস্থা বিরাজমান ছিল, তাকেই শয়তানের ছুঁড়ে দেয়া নাপাকী বলা হয়েছে।

* কুরআন থেকে আমরা যে নীতিগত কথাগুলো জানতে পারি তার ভিত্তিতে আমরা মনে করি, যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফেরেশতারা হয়তো প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করেননি এবং তরবারি হাতে নিয়ে সরাসরি মারামারি-কাটাকাটিতে অংশও নেননি। সম্ভবত তারা এভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল যে, কাফেরদের ওপর মুসলমানরা যে আঘাত হানছিল তা ফেরেশতাদের সহযোগিতায় সঠিক জায়গায় পড়ছিল এবং প্রতিটি আঘাত হচ্ছিল চূড়ান্ত ও মারাত্মক। অবশ্যি সঠিক ব্যাপার আল্লাহই ভাল জানেন।

* এ পর্যন্ত এক এক করে বদর যুদ্ধের যে ঘটনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো, “আনফাল” শব্দের অন্তর্নিহিত তত্ব উদঘাটন করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। শুরুতে বলা হয়েছিল, কেমন করে তোমরা এ গনীমতের মালকে নিজেদের প্রচেষ্টা ও মেহনতের ফল মনে করে এর মালিক বনে যেতে চাচ্ছো? এতো আসলে আল্লাহর দান। দাতা নিজেই তার সম্পদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। এর স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে এ ঘটনাগুলো শুনিয়ে দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই হিসাব লাগিয়ে দেখে নাও, এ ব্যাপারে তোমাদের নিজেদের প্রচেষ্টা, মেহনত ও সাহসিকতার অংশ কি পরিমাণ ছিল এবং আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের অংশ ছিল কি পরিমাণ?
* এখান থেকে হঠাৎ কাফেরদেরকে সম্বোধন করা শুরু হয়েছে। যাদেরকে একটু আগে শাস্তি লাভের যোগ্য বলা হয়েছিল।

Leave a Reply