Book#565

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٦٢)-৫৬৫
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
১৫- ১৬ নং আয়াত:-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ زَحْفاً

O you who believe! When you meet those who disbelieve, in a battlefield,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا زَحۡفًا فَلَا تُوَلُّوۡہُمُ الۡاَدۡبَارَ ﴿ۚ۱۵﴾

وَ مَنۡ یُّوَلِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ دُبُرَہٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوۡ مُتَحَیِّزًا اِلٰی فِئَۃٍ فَقَدۡ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰہِ وَ مَاۡوٰىہُ جَہَنَّمُ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۱۶﴾

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন (যুদ্ধকালে) অবিশ্বাসী বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন (তাদের মুকাবিলা করতে) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করো না।

সেদিন যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন কিংবা স্বীয় দলে স্থান নেওয়া ব্যতীত অন্য কারণে কেউ তার পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে, সে তো আল্লাহর বিরাগভাজন হবে এবং তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম, আর তা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা!

১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যেমন ফযীলতপূর্ণ কাজ এবং দুনিয়াতে প্রচুর গনীমত লাভ করা যায় আর শহীদ হলে পরকালে জান্নাত পাওয়া যায়। তেমনি নেতার নির্দেশ অমান্য করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা বড় পাপের কাজ।

زَحْفًا অর্থ الدُنُوُّ قَلِيْلًا قَلِيْلًا

অল্প অল্প করে নিকটবর্তী হওয়া। অর্থাৎ যখন অল্প অল্প করে শত্রুদের নিকটে চলে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যাবে, তখন বিভক্ত হয়ে যাবে না এবং সাথীদেরকে ছেড়ে চলে আসবে না। এতে তোমাদের শক্তি কমে যাবে এবং শত্রুরা সহজেই তোমাদেরকে পরাস্ত করে ফেলবে। আর পরকালের কঠিন ধমকের কথা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।

(إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلٰي فِئَةٍ)

‘যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেয়া’ এখানে আল্লাহ তা‘আলা খুব কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন যে, দু’টি কারণ ছাড়া কোনক্রমেই যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা যাবে না। তাহল: ১. যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন করা। অর্থাৎ ডানদিকের সেনাদেরকে বামদিকে বা বামদিকের সেনাদেরকে ডানদিকে অথবা পিছনের সেনাদের সামনে বা বিপরীত ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করা। যেমন খালিদ বিন ওয়ালিদ মুতার যুদ্ধে অবলম্বন করেছিলেন। ২. মুসলিমদের একদল থেকে অন্য দলে মিলিত হবে এবং তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। বদর যুদ্ধকালে যখন এ আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন এটাই ছিল সাধারণ হুকুম যে, নিজেদের সৈন্য সংখ্যার সাথে প্রতিপক্ষের কোন তুলনা করা না গেলেও পশ্চাদপসরণ কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা যাবেনা। বদর যুদ্ধের অবস্থাও ছিল তাই। মাত্র তিনশর কিছু অধিক জনকে মোকাবেলা করতে হয়েছে তিনগুণ অর্থাৎ এক হাজারের অধিক সৈন্যের সাথে। পরবর্তীতে অবশ্য এ হুকুমটি শিথিল করার জন্য সূরা আনফালের ৬৫ ও ৬৬ নং আয়াত নাযিল হয়। ৬৫ নং আয়াতে বিশ জন মুসিলম দু’শত কাফিরের বিরুদ্ধে এবং একশত মুসলিম এক হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়। তারপর ৬৬ নং আয়াতে তা আরো শিথিল কারার জন্য এ বিধান অবতীর্ণ হয়

(اَلْئٰنَ خَفَّفَ عَلَيْكُمْ) ।

এতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, নিজেদের দ্বিগুণ সংখ্যক প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় মুসলিমদেরই জয়ী হবার আশা করা যায়। কাজেই এমন ক্ষেত্রে পশ্চাদপসরণ করা যাবেনা। তবে প্রতিপক্ষের সংখ্যা যদি দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করা জায়েয রয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি একা তিন ব্যক্তির মোকাবেলা থেকে পালিয়ে যায়, তা পলায়ন নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি দু’জনের মোকাবেলা থেকে পালায় সে পলাতক বলে গণ্য হবে।

তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য আকাক্সক্ষা করো না। তবে যদি মুখোমুখি হয়েই যাও তাহলে ধৈর্য ধারণ করবে, পিছপা হবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩০২৬)

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস হতে বেঁচে থাক। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ৪৯)

তবে একটি হাদীসে এসেছে নাবী (সাঃ) বলেছেন:

(مَنْ قَالَ: أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيَّ الْقَيُّومَ، وَأَتُوبُ إِلَيْهِ، غُفِرَ لَهُ، وَإِنْ كَانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ)

যে ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর দিকে ফিরে আসছি- আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন যদিও সে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে। (তিরমিযী হা: ৩৫৭৭, আবূ দাঊদ হা: ১৫১৭, সহীহ)

সুতরাং জিহাদ করা যেমন ফযীলতের কাজ তেমনি জিহাদ করতে গিয়ে পলায়ন করা বড় ধরণের গুনাহর কাজ। তাই শুধু জিহাদ করার আকাক্সক্ষা করলেই হবে না, বরং জিহাদ করতে গিয়ে যে সকল বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হবে তা সহ্য করার মত ধৈর্য ধারণ করার মন-মানসিকতাও তৈরি করতে হবে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. শত্রুদের মোকাবেলা করার আকাক্সক্ষা করা নিষেধ।
২. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
৩. দু’টি কারণে যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান পরিবর্তন করা যায়।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 15-16
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ زَحْفاً

O you who believe! When you meet those who disbelieve, in a battlefield,

Fleeing from Battle is prohibited, and its Punishment

Allah said, while warning against fleeing from the battlefield and threatening those who do it with the Fire,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ زَحْفاً

O you who believe! When you meet those who disbelieve, in a battlefield,

when you get near the enemy and march towards them,

فَلَ تُوَلُّوهُمُ الَادْبَارَ

never turn your backs to them.

do not run away from battle and leave your fellow Muslims behind.

وَمَن يُوَلِّهِمْ يَوْمَيِذٍ دُبُرَهُ إِلاَّ مُتَحَرِّفاً لِّقِتَالٍ

And whoever turns his back to them on such a day — unless it be a stratagem of war…

The Ayah says, whoever flees from the enemy by way of planning to pretend that he is afraid of the enemy, so that they follow him and he takes the chance and returns to kill the enemy, then there is no sin on him.

This is the explanation of Sa`id bin Jubayr and As-Suddi.

Ad-Dahhak also commented,

“Whoever went ahead of his fellow Muslims to investigate the strength of the enemy and make use of it,
أَوْ مُتَحَيِّزاً إِلَى فِيَةٍ
(or to retreat to a troop (of his own)),

meaning he leaves from here to another troop of Muslims to assist them or be assisted by them. So that is allowed for him, or even during the battle if he flees from his brigade to the commander. Or going to the grand Imam, would also fall under this permission.”

Umar bin Al-Khattab, may Allah be pleased with him, said about Abu Ubayd when he was fighting on the bridge in the land of the Persians, because of the many Zoroastrian soldiers,

“If he retreated to me then I would be as a troop for him.”

This is how it was reported by Muhammad bin Sirin from Umar.

In the report of Abu Uthman An-Nahdi from Umar, he said:

When Abu Ubayd was fighting, Umar said, “O people! We are your troop.”

Mujahid said that Umar said,

“We are the troop of every Muslim.”

Abdul-Malik bin Umayr reported from Umar,

“O people! Don’t be confused over this Ayah, it was only about the day of Badr, and we are a troop for every Muslim.”

Ibn Abi Hatim (recorded) that Nafi` questioned Ibn Umar,

“We are people who are not stationary when fighting our enemy, and we may not know where our troop is, be it that of our Imam or our army.”

So he replied, “The troop is Allah’s Messenger.”

I said but Allah said,
إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ زَحْفاً
(when you meet those who disbelieve in the battlefield) to the end of the Ayah. So he said;

“This Ayah was about Badr, not before it nor after it.”

Ad-Dahhak commented that Allah’s statement,

أَوْ مُتَحَيِّزاً إِلَى فِيَةٍ

or to retreat to a troop,

refers to “Those who retreat to the Messenger of Allah and his Companions (when the Messenger was alive), and those who retreat in the present time to his commander or companions.”

However, if one flees for any other reason than those mentioned here, then it is prohibited and considered a major sin.

Al-Bukhari and Muslim recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَات

“Shun the seven great destructive sins.”

The people inquired, “O Allah’s Messenger! What are they?”

He said,

الشِّرْكُ بِاللهِ

وَالسِّحْرُ

وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ

وَأَكْلُ الرِّبَا

وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ

وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ

وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَتِ الْمُوْمِنَات

They are:

Joining others in worship with Allah,

magic,

taking life which Allah has forbidden, except for a just cause (according to Islamic law),

consuming Riba,

consuming an orphan’s wealth,

fleeing the battlefield at the time of fighting,

and false accusation to chaste women, who never even think of anything touching chastity and are good believers.

This is why Allah said here,

فَقَدْ بَاء

he indeed has drawn upon himself…,

and returned with,

بِغَضَبٍ مِّنَ اللّهِ وَمَأْوَاهُ

wrath from Allah. And his abode…,

destination, and dwelling place on the Day of Return,

جَهَنَّمُ وَبِيْسَ الْمَصِيرُ

is Hell, and worst indeed is that destination.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে জিহাদের মাঠ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কারীদেরকে ধমক দেয়া হচ্ছে। ঘোষণা করা হচ্ছে- হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধের মুখখামুখী হবে তখন তোমাদের সাথীদের ছেড়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবে না। হ্যা, তবে যদি কেউ চতুরতা করে পালিয়ে যায় যে, যেন ভয় পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আর এ ধারণা করে শত্রু তার পশ্চাদ্ধাবন করলো, তখন সে ঐ শত্রুকে একাকী পেয়ে তার দিকে ফিরে গেল এবং তাকে আক্রমণ করতঃ হত্যা করে দিলো। এই যৌক্তিকতায় পলায়ন করলে কোন দোষ নেই। (এটা সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং সুদ্দীর (রঃ) উক্তি) অথবা এই উদ্দেশ্যে পলায়ন করে যে, সে মুসলমানদের অন্য দলের সাথে মিলিত হবে এবং তাদেরকে সাহায্য করবে অথবা তারাই তাকে সাহায্য করবে। এই পলায়নও জায়েয। কেননা, সে স্বীয় ইমামের আশ্রয়ে যেতে চাচ্ছে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক প্রেরিত একটি ছোট সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক ছিলাম। লোকদের মধ্যে পলায়নের হিড়িক পড়ে যায়। আমিও পালিয়ে যাই। অতঃপর আমরা অনুভব করি যে, আমরা যুদ্ধ হতে পলায়নকারী। সুতরাং আমরা আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়েছি। এখন আমরা কি করবো? আমরা পরামর্শক্রমে ঠিক করলাম যে, মদীনায় গিয়ে আমরা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করবো। যদি তিনি আমাদের তাওবা কবুল করে নেন তবে তো ভাল কথা, নচেৎ আমরা দু’চোখ যেখানে যাবে সেখানেই চলে যাবো এবং কাউকেও মুখ দেখাবো না। অতএব আমরা ফজরের নামাযের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা কারা?” আমরা উত্তরে বললাম, আমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়নকারী। তখন তিনি বললেনঃ “না, না বরং তোমরা নিজেদের কেন্দ্রস্থলে আগমনকারী। আমি তোমাদের ও তোমাদের মুমিন দলের বন্ধন।” এ কথা শুনে আমরা এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর হস্ত চুম্বন করলাম।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এটুকু বেশী বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেই সময় (আরবী)-এ আয়াতটিও পাঠ করেন। আলেমগণ (আরবী) শব্দের অর্থ (আরবী) বা দূরদর্শী বলেছেন।

হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) ইরানের একটি পুলের উপর নিহত হন। তখন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “চতুরতা অবলম্বন করে তিনি পালিয়ে আসতে পারতেন। আমি তাঁর আমীর ও বন্ধন রূপে ছিলাম। তিনি আমার কাছে। চলে আসলেই হতো!” অতঃপর তিনি বলেনঃ “হে লোক সকল! এ আয়াতটিকে কেন্দ্র করে তোমরা ভুল ধারণায় পতিত হয়ো না। এটা বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে ছিল। এই সময় আমি প্রত্যেক মুসলমানের জামাআত বা দল!” হযরত নাফে’ (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ “শত্রুদের সাথে যুদ্ধের সময় আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে অটল থাকতে পারি না। আর আমাদের কেন্দ্র কোটা তা আমরা জানি না। অর্থাৎ ইমাম আমাদের কেন্দ্র কি সেনাবাহিনী কেন্দ্র তা আমাদের জানা। নেই।” তখন তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ), আমাদের কেন্দ্র।” আমি বললাম যে, আল্লাহ পাক ……. (আরবী)-এ আয়াত যে নাযিল করেছেন! তখন তিনি বলেনঃ “এ আয়াতটি বদরের দিনের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা বদরের পূর্বের সময়ের জন্যেও নয়, এর পরবর্তী সময়ের জন্যেও নয়।” -এর অর্থ হচ্ছে নবী (সঃ)-এর নিকট আশ্রয় গ্রহণকারী। অনুরূপভাবে এখনও কোন লোক তার আমীরের কাছে বা সঙ্গীদের কাছে আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু যদি এই পলায়ন এই কারণ ছাড়া অন্য কারণে হয় তবে তা হারাম এবং গুনাহে কাবীরার মধ্যে গণ্য হবে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাকো। (১) আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করা, (২) জাদু করা, (৩) কাউকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করা, (৪) সুদ ভক্ষণ করা, (৫) ইয়াতীমের মাল খেয়ে নেয়া, (৬) যুদ্ধক্ষেত্র হতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সতী সাধ্বী সরলা মুমিনা নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন) এ কথাটি আরও কয়েকভাবে প্রমাণিত আছে যে, এ আয়াতটি বদর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যে পালিয়ে যাবে সে আল্লাহর গযবে পরিবেষ্টিত হবে এবং তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর জাহান্নাম কতইনা নিকৃষ্ট স্থান!”

বাশীর ইবনে মা’বদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইআত গ্রহণের জন্যে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করলাম। তখন তিনি বাইআতের ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত আরোপ করলেন। তিনি বললেনঃ “তুমি সাক্ষ্য দেবে যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। নামায আদায় করবে। যাকাত প্রদান করবে। হজ্ব করবে। রমযানের রোযা রাখবে। আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।” আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এগুলোর মধ্যে দুটি কাজ আমার কাছে কঠিন বোধ হচ্ছে। প্রথম হচ্ছে জিহাদ যে, যদি জিহাদের অবস্থায় কেউ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যায় তবে আল্লাহর গযব তার উপর পতিত হবে এবং আমার ভয় হচ্ছে যে, না জানি আমি হয়তো মৃত্যুর ভয়ে এই পাপে জড়িয়ে পড়বো। দ্বিতীয় হচ্ছে সাদকা। আল্লাহর শপথ! গনীমত ছাড়া আমার আর কোন আয়-উপার্জন নেই। আর আমার কাছে দশটি উষ্ট্রী রয়েছে যেগুলোকে দোহন করে দুধ আমি পান করি এবং পরিবারের লোকদেরকে পান করিয়ে থাকি। আর ওগুলোর উপর আরোহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন আমার হাত চেপে ধরলেন এবং হাতকে আন্দোলিত করে বললেনঃ “তুমি জিহাদও করবে না এবং দান খায়রাতও করবে না, তাহলে জান্নাত লাভ করবে কিরূপে?” আমি জবাবে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি মেনে নিলাম এবং প্রত্যেক শর্তের উপরই দীক্ষা গ্রহণ করলাম। এ হাদীসটি গারীব। ছ’খানা সহীহ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে এটা বর্ণিত হয়নি। হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তিনটি জিনিসের অভাবে কোন সৎ আমলও ফলদায়ক হয় না। (১) আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করা, (২) পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং (৩) যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা।” এ হাদীসটিও গারীব।

হযরত জাদী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বলে- (আরবী) অর্থাৎ “আমি ঐ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি তার কাছে তাওবা করছি।” তার পাপরাশি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার পাপও করে থাকে। এ হাদীসটিও গারীব বা দুর্বল। নবী (সঃ)-এর খাদেম হযরত যায়েদ (রাঃ) এ হাদীসটি ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করেননি। কেউ কেউ এই হুকুম লাগিয়েছেন যে, জিহাদের মাঠ থেকে পলায়ন করা সাহাবীদের উপর হারাম ছিল। কেননা, ঐ সময় তাঁদের উপর জিহাদ ফরয ছিল। কেউ কেউ বলেছেন যে, জিহাদ শুধুমাত্র আনসারদের উপর ফরয ছিল। কেননা, তারা কষ্ট ও আরাম সর্বাবস্থায় নবী (সঃ)-এর নির্দেশ পালনের উপর দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই হুকুম শুধু আহলে বদরের সাথে নির্দিষ্ট। (এটা আমর (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবু হুরাইরা (রাঃ), আবু সাঈদ (রাঃ), নাফে’ (রঃ), হাসান বসরী (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ), ইকরামা (রাঃ), কাতাদা (রাঃ), যহহাক (রাঃ) প্রমুখ হতে বর্ণিত আছে) এর উপর এই দলীল পেশ করা হয়েছে যে, ঐ সময় পর্যন্ত মুসলমানদের কোন নিয়মিত শান শওকতযুক্ত দল ছিলেনই না। যা কিছু ছিলেন এই মুষ্টিপূর্ণ লোকই ছিলেন। এ জন্যে এইরূপ হুকুমের খুবই প্রয়োজন ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের হাদীসটি এই অবস্থার উপরই আলোকপাত করেঃ “হে আল্লাহ! যদি আপনি এই মুষ্টিপূর্ণ দলটিকেও ধ্বংস করে দেন তবে দুনিয়ায় আপনার ইবাদত করার কেউই থাকবে না!” হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা বদরের দিন জরুরী ছিল। কিন্তু এখন যদি কেউ স্বীয় ইমাম বা স্বীয় দুর্গের কাছে আশ্রয় নেয় তবে কোন দোষ হবে না। কেননা, বদরের দিন পলায়নকারীদের জন্যে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বাসস্থান করেছেন বটে, কিন্তু ঐ পলায়নকারীদেরকে তিনি এই হুকুমের বহির্ভূত করেছেন যারা শত্রুদেরকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় বা নিজেদের দলে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসে! এর পরে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হলে আল্লাহ তাআলা (আরবী) (৩:১৫৫) -এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এর সাত বছর পর হুনায়েনের যুদ্ধ সংঘটিত হলে তিনি (আরবী) (৯:২৫) এবং (আরবী) (৯:২৭) এ কথাগুলো বলেন। আর এখানে (আরবী)-এ কথা বলেছেন। এ আয়াতটি আহলে বদরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এসব ব্যাখ্যায় এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, আহলে বদর ছাড়া অন্যেরাও যদি জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে তবে ওটাও হারাম হওয়া উচিত। যদিও এই আয়াত বদরের যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল তথাপি যখন এটাকে সাতটি ধ্বংসকারী জিনিসের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে তখন এটা হারাম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
زحفا এর অর্থ হল এক অন্যে সম্মুখীন হওয়া। অর্থাৎ, মুসলিম ও কাফের যখন এক অপরের সম্মুখীন হবে, তখন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করার অনুমতি নেই। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, إجتنبوا السبع الموبقات সাতটি ধ্বংসকারী পাপ হতে বাঁচ, এই সাতটির মধ্যে একটি হল التولى يوم الزحف শত্রু সম্মুখীন অবস্থায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা (পলায়ন করা)। (বুখারীঃ কিতাবুল অসা-ইয়া, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়)

* পূর্বের আয়াতে যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হতে দুটি অবস্থা ব্যতিক্রম। প্রথমতঃ যুদ্ধ-কৌশল অবলম্বন। দ্বিতীয়তঃ স্বীয় বাহিনীর কেন্দ্রস্থলে স্থান নেওয়া। প্রথমটির অর্থ এক দিকে সরে যাওয়া; অর্থাৎ, যুদ্ধ-কৌশল পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বা শত্রুদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য যুদ্ধরত অবস্থায় পিছু হটা। যাতে শত্রু মনে করতে পারে যে, তারা হেরে গিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ নতুন শক্তি নিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। এটি পৃষ্ঠপ্রদর্শন নয়; বরং একটি যুদ্ধ কৌশল। যা কখনো কখনো উপকারী ও জরুরী হয়। تحيز এর অর্থ মিলিত হওয়া বা আশ্রয় নেওয়া। কোন মুজাহিদ যুদ্ধ করতে করতে একা হয়ে পড়ে, তাহলে রণ-কৌশল হিসাবে যুদ্ধ ময়দান হতে সরে পড়া এবং নিজ বাহিনীর নিকট আশ্রয় নেওয়া এবং তাদের সাহায্যে পুনর্বার আক্রমণ করা। এই দুই অবস্থাই বৈধ।

* অর্থাৎ, এই দুই অবস্থা ব্যতীত কেউ পালিয়ে গেলে তার জন্য রয়েছে এই কঠিন সতর্কবাণী।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
শত্রুর প্রবল চাপের মুখে নিজেদের পেছনের কেন্দ্রে ফিরে আসা অথবা নিজেদেরই সেনাদলের অন্য কোন অংশের সাথে যোগ দেবার জন্য সুপরিকল্পিত পশ্চাদপসরণ (Orderly Retreat) নাজায়েয নয়। তবে যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে নয় বরং নিছক কাপুরুষতা ও পরাজিত মানসিকতার কারণে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালানো (Rout) হারাম। কারণ এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের তুলনায় মানুষের প্রাণটাই তার কাছে বেশী প্রিয় হয়ে উঠে। এ পালানোকে কবীরা গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। তাই নবী ﷺ বলেন, তিনটি গুনাহ এমন যে, তার সাথে কোন নেকী সংযুক্ত হলে কোন লাভ নেই। এক, শিরক। দুই, বাপ-মায়ের অধিকার নষ্ট করা। তিন, আল্লাহর পথে লড়াই এর ময়দান থেকে পালানো। এভাবে তিনি আর একটি হাদীসে এমন সাতটি বড় বড় গুনাহের কথা বর্ণনা করেছেন, যা মানুষের জন্য ধ্বংসকর এবং পরকালেও তাকে ভয়াবহ পরিণামের মুখোমুখি করবে। এর মধ্যে একটি গুনাহ হচ্ছে, কুফর ও ইসলামের যুদ্ধে কাফেরদের সামনে থেকে পালানো। এটা একটা কাপুরুষোচিত কাজ বলেই যে একে এতবড় গুনাহ গণ্য করা হয়েছে তা নয়। বরং এর কারণ হচ্ছে, একজন সৈনিকের ছুটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে বেরিয়ে যাওয়া অনেক সময় পুরো একটি বাহিনীকে ভীত-সন্ত্রস্ত ও দিশেহারা করে দেয় এবং পালাতে উদ্বুদ্ধ করে। আর একবার যখন একটি সেনাদলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি ও পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তখন তাদের বিপর্যয় ও ধ্বংস যে কতদূর গিয়ে ঠেকাবে তা বলা যায় না। এ ধরনের ছুটাছুটি ও পলায়নপরতা শুধু সেনাদলের জন্যই ধ্বংসকর নয় বরং যে দেশের সেনাদল এ ধরনের পরাজয় বরণ করে, তার জন্যও বিপর্যয়কর।

Leave a Reply