Book#591

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٨٨)-৫৯১
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
৭৩ নং আয়াত:-

وَالَّذينَ كَفَرُواْ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

যারা অবিশ্বাস করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু।
And those who disbelieve are allies of one another,

وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ اِلَّا تَفۡعَلُوۡہُ تَکُنۡ فِتۡنَۃٌ فِی الۡاَرۡضِ وَ فَسَادٌ کَبِیۡرٌ ﴿ؕ۷۳﴾

যারা অবিশ্বাস করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। যদি তোমরা তা না কর, তাহলে দেশে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
উপরে আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা করলেন যে, মুমিনরা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু । আর এখানে তিনি বর্ণনা করছেন যে, কাফিররা একে অপরের বন্ধু এবং তিনি মুসলমান ও কাফিরের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেন। যেমন মুসতাদরিকে হাকিমে উসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ ‘দু’টি ভিন্ন মাযহাবের লোক একে অপরের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। না পারে মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হতে এবং না পারে কাফির মুসলিমের ওয়ারিস হতে।” অতঃপর এ আয়াতটিই পাঠ করেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুসলিম কাফিরের এবং কাফির মুসলিমের ওয়ারিস হতে পারে না।” মুসনদি ও সুনান গ্রন্থে রয়েছে যে, দুটি ভিন্ন মাযহাবের লোক একে অপরের ওয়ারিস হয় না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আসহাবুস সুনান তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন) আবু জাফর ইবনে জারীর (রঃ) যুহরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একজন নবদীক্ষিত মুসলমানের নিকট অঙ্গীকার গ্রহণ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্ব করবে, রমযানুল মুবারাকের রোযা রাখবে এবং যেখানে শিরকের আগুন জ্বলে উঠবে সেখানে তুমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।” এ হাদীসটি মুরসাল। বিস্তারিত বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এমন মুসলমান হতে দায়িত্বমুক্ত যে মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করে। দু’ধারে প্রজ্বলিত আগুন কি সে দেখতে পায় না?” (এ হাদীসটিকে ইবনে জারীর (রঃ) মুরসাল ও মুত্তাসিলরূপে তাখরীজ করেছেন) সুনানে আবি দাউদে সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের মধ্যে অবস্থান করে সে তারই মত।” হাফিয আবু বকর ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) আবূ হাতিম আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে,

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন এমন ব্যক্তি তোমাদের কাছে আগমন করে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তোমরা তার বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তোমরা এ কাজ না কর তবে ভূ-পৃষ্ঠে ফিত্না ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “তার মধ্যে যদি কিছু থাকে?” তিনি পুনরায় বললেনঃ “যদি তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তির বাগদান আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তার বিয়ে দিয়ে দাও।” এ কথা তিনি তিনবার বললেন। আয়াতের এই শব্দগুলোর ভাবার্থ হচ্ছে- তোমরা যদি মুশরিকদের থেকে দূরে না থাকো এবং মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না কর তবে ভীষণ ফিত্না সৃষ্টি হয়ে যাবে। কাফিরদের সাথে মুসলমানদের এই মেলামেশা খারাপ পরিণতি টেনে আনবে এবং ভূ-পৃষ্ঠে মহা বিপর্যয় দেখা দেবে।

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 73

وَالَّذينَ كَفَرُواْ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

And those who disbelieve are allies of one another,

The Disbelievers are Allies of Each Other; the Muslims are not their Allies

Allah says;

وَالَّذينَ كَفَرُواْ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

And those who disbelieve are allies of one another,

After Allah mentioned that the believers are the supporters of one another, He severed all ties of support between them and the disbelievers.

In his Mustadrak, Al-Hakim recorded that Usamah said that the Prophet said,

لَاا يَتَوَارَثُ أَهْلُ مِلَّتَيْنِ وَلَاا يَرِثُ مُسْلِمٌ كَافِرًا وَلَاا كَافِرٌ مُسْلِمًا

No followers of two religions inherit from each other. Therefore, neither a Muslim inherits from a disbeliever nor a disbeliever from a Muslim.

The Prophet recited this Ayah,

وَالَّذينَ كَفَرُواْ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ إِلاَّ تَفْعَلُوهُ تَكُن فِتْنَةٌ فِي الَارْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ

And those who disbelieve are supporters of one another, (and) if you (Muslims) do not do so (protect one another), there will be Fitnah on the earth, and great corruption.)

Al-Hakim said, “Its chain is Sahih, and they did not record it.”

However, the following, from Usamah bin Zayd, is in the Two Sahihs; the Messenger of Allah said,

لَاا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلَاا الْكَافِرُ الْمُسْلِم

Neither a Muslim inherits from a disbeliever nor a disbeliever inherits from a Muslim.

Allah said next,

إِلاَّ تَفْعَلُوهُ تَكُن فِتْنَةٌ فِي الَارْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ

If you do not do so, there will be Fitnah and oppression on the earth, and a great corruption,

meaning, if you do not shun the idolators and offer your loyalty to the believers, Fitnah will overcome the people. Then confusion (polytheism and corruption) will be rampant, for the believers will be mixed with disbelievers, resulting in tremendous, widespread trials (corruption and mischief) between people.

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

সবচেয়ে কাছের বাক্যটির সাথে যদি এ বাক্যটির সম্পর্ক মেনে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে, যেভাবে কাফেররা পরস্পর সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা ঈমানদাররা যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না করো তাহলে পৃথিবীতে বিরাট ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে যাবে। আর যদি ৭২ আয়াত থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো হেদায়াত দেয়া হয়েছে তার সবগুলোর সাথে যদি এর সম্পর্ক মেনে নেয়া হয় তাহলে এ উক্তির অর্থ হবেঃ যদি দারুল ইসলামের মুসলমানরা পরস্পরের অলী ও অভিভাবক না হয়, হিজরত করে যেসব মুসলমান দারুল ইসলামের আসেনি এবং যেসব মুসলমান দারুল কুফরে বসবাস করছে তাদেরকে যদি দারুল ইসলামের অধিবাসীরা নিজেদের রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব বহির্ভূত মনে না করে, যদি বাইরের মজলুম মুসলমানদের সাহায্য চাওয়ার পর তাদের সাহায্য না করা হয়, আর যদি এ সঙ্গে যে জাতির সাথে মুসলমানদের চুক্তি থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যের আবেদনকারী মুসলমানদের সাহায্য না করার নীতিও না মেনে চলা হয় এবং যদি মুসলমানরা কাফেরদের সাথে সহযোগিতায় সম্পর্ক খতম না করে, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ, যেমন কাফেররা এক অপরের বন্ধু এবং পৃষ্ঠপোষক, ঠিক তেমনি যদি তোমরাও ঈমানের ভিত্তিতে একে অপরের পৃষ্ঠপোষক এবং কাফেরদল থেকে নিঃসম্পর্ক না হও, তাহলে বড় ধরনের ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি হবে। আর তা হল এই যে, মু’মিন ও কাফেরদের মাঝে মিশ্র সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের ফলে দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ ও তোষামোদ সৃষ্টি হবে। কেউ কেউ بَعْضُهُمْ أَوْلِيآءُ بَعْض এর অর্থ উত্তরাধিকারী বলেছেন। অর্থাৎ, কাফেররা একে অপরের উত্তরাধিকারী। উদ্দেশ্য এই যে, একজন মুসলিম কোন কাফেরের এবং একজন কাফের কোন মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। যেমন হাদীসমূহে এ কথার স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। মোট কথা, যদি তোমরা উত্তরাধিকারের ব্যাপারে কুফর ও ঈমানকে দৃষ্টিচ্যুত করে কেবল আত্মীয়তাকে বুনিয়াদ বানাও, তাহলে তাতে বড় ফিতনা, ফাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

(إِلَّا تَفْعَلُوْه۫ تَكُنْ فِتْنَةٌ)

‘যদি তোমরা সেটা না কর‎ (অর্থাৎ মু’মিনগণ পরস্পর সাহায্য না কর) তবে দেশে ফিত্না ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।’ অর্থাৎ যেমন কাফিররা একে অপরের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক, ঠিক তেমনি তোমরাও ঈমানের ভিত্তিতে একে অপরের পৃষ্ঠপোষক ও বন্ধু। আর যদি তোমরা কাফিরদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন না কর এবং নিজেদের মাঝে পরস্পর আন্তরিকতা গড়ে না তোল তাহলে বড় ধরনের ফেতনা ও অশান্তি— সৃষ্টি হবে। তা হল এই যে, মু’মিন ও কাফিরদের সাথে মিশ্র সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের ফলে দীনের ব্যাপারে সন্দেহ ও তোষামোদ সৃষ্টি হবে। তোমরা নির্যাতিত হবে, তোমাদের দীন স্বচ্ছ থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যখন তোমাদের কাছে এমন কেউ বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দীনদারিত্ব ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট তাহলে বিবাহ দিয়ে দাও, যদি তা না কর তাহলে জমিনে ফেতনা সৃষ্টি হবে এবং বড় ধরণের ফাসাদ হবে। (সহীহ বুখারী হা: ১০৮৫)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

কাফিরদের সাথে মু’মিনরা দীনের ব্যাপারে কোন সম্পর্ক রাখবে না, বরং মু’মিনরা নিজের মাঝে আন্তরিকতা গড়ে তুলবে তাহলে পৃথিবীতে বিজয়ী থাকবে।

Leave a Reply