أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٨٩)-৫৯২
www.motaher21.net
সুরা: আল্ – আনফাল।
সুরা:৮
৭৪-৭৫ নং আয়াত:-
الْمُوْمِنُونَ حَقًّا
তারাই প্রকৃত মু’মিন।
These are the believers in truth,
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ ہَاجَرُوۡا وَ جٰہَدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ الَّذِیۡنَ اٰوَوۡا وَّ نَصَرُوۡۤا اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ حَقًّا ؕ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ رِزۡقٌ کَرِیۡمٌ ﴿۷۴﴾
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ ہَاجَرُوۡا وَ جٰہَدُوۡا مَعَکُمۡ فَاُولٰٓئِکَ مِنۡکُمۡ ؕ وَ اُولُوا الۡاَرۡحَامِ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلٰی بِبَعۡضٍ فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿٪۷۵﴾
যারা ঈমান এনেছে, (দ্বীনের জন্য স্বদেশত্যাগ) হিজরত করেছে, আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা (মু’মিনদেরকে) আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারাই প্রকৃত মু’মিন (বিশ্বাসী)। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও তোমাদের সঙ্গে থেকে জিহাদ করেছে, তারাও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর বিধানে নিকটাত্মীয়গণ একে অন্যের (অন্য অপেক্ষা) অধিক হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৭৪-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় মুহাজির ও আনসাদের বর্ণনা নিয়ে এসেছেন এবং এখানে তাদের অন্যতম আরেকটি গুণ উল্লেখ করেছেন যে, তারাই প্রকৃত মু’মিন। প্রকৃত মু’মিনের গুণাগুণ সম্পর্কে অত্র সূরার শুরুর দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْۭ بَعْدُ)
‘যারা (আনসার ও মুহাজিরদের) পরে ঈমান এনেছে’এটা হল চতুর্থ দলের বিবরণ যারা ফযীলতে প্রথম দু’ দলের পরবর্তী এবং তৃতীয় দলের (যারা হিজরত করেনি) পূর্ববর্তী স্তরের সাহাবী ছিলেন। অর্থাৎ যেসকল সাহাবীগণ মক্কা বিজয়ের পর ঈমান এনে পূর্ববর্তী ঈমান আনয়নকারী সাহাবীদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন।
(فَأُولٰ۬ئِكَ مِنْكُمْ)
‘তারাও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত’অর্থাৎ তারা তা-ই পাবে তোমরা যা পাবে, তাদের ওপর তা-ই বর্তাবে তোমাদের ওপর যা বর্তাবে। এ ঈমানী সম্পর্ক ইসলামের সূচনাতে ছিল এবং এ সম্পর্কের অনেক গুরুত্ব ছিল, এমনকি একে অপরের উত্তরাধিকার হতো।
পরে এ আয়াত নাযিল হল
(وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلٰي بِبَعْضٍ)
‘এবং আত্মীয়গণ আল্লাহর বিধানে একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার।’অর্থাৎ সাহাবীগণ ভ্রাতৃত্ব ও মিত্রতার ভিত্তিতে উত্তরাধিকারীরূপে পরস্পর যে অংশীদার হতেন এ আয়াত দ্বারা তা রহিত করা হল। এখন ওয়ারিশ কেবল সেই হবে, যে বংশ অথবা বৈবাহিক সূত্রে নিকাটাত্মীয়।
(فِيْ كِتٰبِ اللّٰهِ)
বা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব বলতে লাওহে মাহফূজ উদ্দেশ্য। ভ্রাতৃত্বের খাতিরে কেবল সাময়িকভাবে একে অপরের ওয়ারিশ বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। যা এখন প্রয়োজন না থাকার কারণে রহিত করা হল এবং মূল নির্দেশ বহাল রাখা হল।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আনসার ও মুহাজিরদের ফযীলত জানতে পারলাম।
২. পরবর্তীতে যারা ঈমান এনেছে তাদের ফযীলত জানতে পারলাম।
৩. ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের ওয়ারিশ রহিত হয়ে গেছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 74-75
الْمُوْمِنُونَ حَقًّا
These are the believers in truth,
Believers in Truth
Allah says;
وَالَّذِينَ امَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ اوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـيِكَ هُمُ الْمُوْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
And those who believed, and emigrated and strove hard in the cause of Allah (Al-Jihad), as well as those who gave (them) asylum and aid — these are the believers in truth, for them is forgiveness and a generous provision.
After Allah affirmed the ruling of loyalty and protection between the believers in this life, He then mentioned their destination in the Hereafter. Allah also affirmed the faith of the believers, just as mentioned in the beginning of this Surah, and that He will reward them with forgiveness and by erasing their sins, if they have any. He also promised them honorable provisions that are abundant, pure, everlasting and eternal; provisions that never end or run out, nor will they ever cause boredom, for they are delightful and come in great varieties.
وَالَّذِينَ امَنُواْ مِن بَعْدُ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ مَعَكُمْ فَأُوْلَـيِكَ مِنكُمْ
And those who believed afterwards, and emigrated and strove hard along with you, they are of you.
Allah then mentioned that those who follow the path of the believers in faith and performing good deeds, will be with them in the Hereafter.
Just as Allah said,
وَالسَّـبِقُونَ الاٌّوَّلُونَ
And the foremost to embrace Islam… (9:100), until the end of the Ayah.
He also said,
وَالَّذِينَ جَأءُوا مِن بَعْدِهِمْ
And those who came after them (59:10)
A Hadith that is in the Two Sahihs, which is Mutawatir and has several authentic chains of narrations, mentions that the Messenger of Allah said,
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَب
One will be in the company of those whom he loves.
Another Hadith states,
مَنْ أَحَبَّ قَوْمًا فَهُوَ مِنْهُم
He who loves a people is one of them,
and in another narration, he said,
حُشِرَ مَعَهُم
will be gathered with them (on the Day of Resurrection).
Inheritance is for Designated Degrees of Relatives
Allah said,
وَأُوْلُواْ الَارْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللّهِ
But kindred by blood are nearer to one another (regarding inheritance) in the decree ordained by Allah,
meaning, in Allah’s decision.
This Ayah encompasses all relatives, not only the degrees of relative who do not have a fixed, designated share in the inheritance, as some people claim and use this Ayah to argue.
According to Ibn Abbas, Mujahid, Ikrimah, Al-Hasan, Qatadah and several others, this Ayah abrogated inheriting from those with whom one had ties of treaties or brotherhood, as was the case in the beginning of Islam. So it applies to all relatives, and as for those who do not inherit, then this is supported by the Hadith,
إِنَّ اللهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقَ حَقَّهُ فَلَ وَصِيَّةٍ لِوَارِث
Indeed Allah had allotted every right to the one who deserves it, so there may be no will for an heir.
Therefore, this Ayah also includes those who have a fixed share of inheritance. Allah knows best.
إِنَّ اللّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
Verily, Allah is the All-Knower of everything.
This is the end of the Tafsir of Surah Al-Anfal, all praise and thanks are for Allah, in Him we trust, and He is sufficient for us, what an excellent supporter He is.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৭৪-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের পার্থিব হুকুম বর্ণনা করার পর আখিরাতে তাদের জন্যে কি রয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি তাদের ঈমানের সত্যতা প্রকাশ করছেন। যেমন এই সূরার প্রথম দিকে এ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা দান প্রাপ্ত হবে, তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তারা সম্মানজনক জীবিকা লাভ করবে, যা হবে চিরস্থায়ী এবং পাক ও পবিত্র। সেগুলো হবে বিভিন্ন প্রকারের উপাদেয় খাদ্য এবং সেগুলো কখনো নিঃশেষ হবে না। তাদের যারা অনুসারী এবং ঈমানে ও ভাল আমলে তাদের সাথে অংশগ্রহণকারী তারা আখিরাতেও সমমর্যাদা লাভ করবে। যেমন আল্লাহ পাক (আরবী) (৯:১০০) এবং (আরবী) (৫৯:১০) বলেছেন। এটা সর্বসম্মত মত এমন কি মুতাওয়াতির হাদীসেও রয়েছে যে, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালবাসে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে ভালবাসা রাখে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, তার হাশরও ওদের সাথেই হবে। মুসনাদে আহমাদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাজির ও আনসার একে অপরের ওলী বা অভিভাবক। মক্কা বিজয়ের পরের মুসলমান কুরায়েশী এবং সাকীফের আযাদকৃত ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত একে অপরের অভিভাবক।
এরপর উলুল আরহামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এখানে উলুল আরহাম দ্বারা ঐ আত্মীয়দের উদ্দেশ্য করা হয়নি যাদেরকে ফারায়েয শাস্ত্রবিদদের পরিভাষায় উলুল আরহাম বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যাদের কোন অংশ নির্ধারিত নেই এবং যারা আসাবাও (আল্লাহ তাআলার কিতাবে যেসব ওয়ারিসের অংশ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে অংশ দেয়ার পর বাকী অংশ যেসব ওয়ারিস পেয়ে থাকে তাদেরকে ফারায়েযের পরিভাষায় আসাবা বলা) নয়। যেমন মামা, খালা, ফুফু, কন্যার ছেলেমেয়ে, বোনের ছেলেমেয়ে ইত্যাদি। কারো কারো মতে এখানে উলুল আরহাম দ্বারা এদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তারা এ আয়াতটিকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এই ব্যাপারে তাকে স্পষ্টভাবে ওলী বলে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। বরং সঠিক কথা এই যে, এ আয়াতটি আম বা সাধারণ। এটা সমস্ত আত্মীয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), হাসান (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, মিত্রদের পরস্পর ওয়ারিশ হওয়া এবং বানানো ভাইদের পরস্পর ওয়ারিশ হওয়া, যা পূর্বে প্রথা ছিল, এ আয়াতটি এটাকে মানসূখ বা রহিতকারী। সুতরাং এটা বিশেষ নামের সাথে ফারায়েযের আলেমদের যাবিল আরহামকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আর যারা এদেরকে ওয়ারিস বলেন না তাদের কয়েকটি দলীল রয়েছে। তাদের সবচেয়ে মজবুত দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসটিঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিসের জন্যে অসিয়ত নেই।” তারা বলেন যে, এরা যদি হকদার হতো তবে আল্লাহর কিতাবে এদেরও হক নির্ধারিত হতো। কিন্তু তা যখন নেই তখন তারা ওয়ারিসও নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এটা মুহাজিরীন ও আনসারদের সেই দুই দলের বর্ণনা যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। এখানে তার পুনর্বার উল্লেখ তাঁদের ফযীলত ও মর্যাদার বর্ণনার জন্য করা হয়েছে। আর পূর্বের উল্লেখ তাঁদের আপোসে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার আবশ্যকতা বর্ণনা করার জন্য ছিল।
* এটা এক চতুর্থ দলের বিবরণ; যাঁরা ফযীলতে প্রথম দুই দলের পরবর্তী এবং তৃতীয় দলের (যাঁরা হিজরত করেননি তাঁদের) পূর্ববর্তী স্তরের সাহাবা ছিলেন।
* সাহাবীগণ ভ্রাতৃত্ব ও মিত্রতার ভিত্তিতে উত্তরাধিকারীরূপে পরস্পর যে অংশীদার হতেন এই আয়াতে তা রহিত করা হল। এখন ওয়ারেস (উত্তরাধিকারী) কেবল সেই হবে, যে বংশ অথবা বৈবাহিকসূত্রে নিকটাত্মীয় হবে। আল্লাহর কিতাব কিম্বা আল্লাহর বিধান থেকে উদ্দেশ্য হল, ‘লাওহে মাহ্ফূযে’ মূল নির্দেশ এটাই ছিল। কিন্তু ভ্রাতৃত্বের খাতিরে কেবলমাত্র সাময়িকভাবে এককে অপরের ওয়ারেস বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা এখন প্রয়োজন না থাকার কারণে রহিত করা হল এবং মূল নির্দেশ বহাল করে দেওয়া হল।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এর মানে হচ্ছে, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে তাদের পরস্পরের উত্তরাধিকার বণ্টন করা হবে না। বংশধারা ও বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বীনী ভাইরা পরস্পরের ব্যাপারে সেসব অধিকারও লাভ করবে না। এসব ব্যাপারে ইসলামি সম্পর্কের পরিবর্তে আত্মীয়তার সম্পর্কই আইনগত অধিকারের ভিত্তির কাজ করবে। হিজরতের পর নবী (সা.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কায়েম করেছিলেন তার ফলে এ দ্বীনী ভাইরা পরস্পরের ওয়ারিসও হবে বলে কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছিলেন। তাদের এ ভাবনা যে ঠিক নয় তা বুঝাবার জন্য আল্লাহ একথা বলছেন।