أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 114/٣٩٠)-৫৯৪
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
০৩-০৬ নং আয়াত:-
فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَمَ اللّهِ
তুমি তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়।
Grant him protection so that he may hear the Word of Allah (the Qur’an) .
وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖۤ اِلَی النَّاسِ یَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَکۡبَرِ اَنَّ اللّٰہَ بَرِیۡٓءٌ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ۬ۙ وَ رَسُوۡلُہٗ ؕ فَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ غَیۡرُ مُعۡجِزِی اللّٰہِ ؕ وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ۙ﴿۳﴾
اِلَّا الَّذِیۡنَ عٰہَدۡتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ثُمَّ لَمۡ یَنۡقُصُوۡکُمۡ شَیۡئًا وَّ لَمۡ یُظَاہِرُوۡا عَلَیۡکُمۡ اَحَدًا فَاَتِمُّوۡۤا اِلَیۡہِمۡ عَہۡدَہُمۡ اِلٰی مُدَّتِہِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۴﴾
فَاِذَا انۡسَلَخَ الۡاَشۡہُرُ الۡحُرُمُ فَاقۡتُلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ حَیۡثُ وَجَدۡتُّمُوۡہُمۡ وَ خُذُوۡہُمۡ وَ احۡصُرُوۡہُمۡ وَ اقۡعُدُوۡا لَہُمۡ کُلَّ مَرۡصَدٍ ۚ فَاِنۡ تَابُوۡا وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ فَخَلُّوۡا سَبِیۡلَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۵﴾
وَ اِنۡ اَحَدٌ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ اسۡتَجَارَکَ فَاَجِرۡہُ حَتّٰی یَسۡمَعَ کَلٰمَ اللّٰہِ ثُمَّ اَبۡلِغۡہُ مَاۡمَنَہٗ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَعۡلَمُوۡنَ ٪﴿۶﴾
মহান হজ্জের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এ এক ঘোষণা যে, আল্লাহর সাথে অংশীবাদীদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রসূলের সাথেও নয়। যদি তওবা কর, তাহলে তোমাদের কল্যাণ হবে, আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করতে পারবে না। আর অবিশ্বাসীদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও।
তবে অংশীবাদীদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকেও সাহায্য করেনি, তোমরা তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন কর। নিশ্চয় আল্লাহ সাবধানীদেরকে ভালোবাসেন।
অতঃপর নিষিদ্ধ মাসগুলি অতিবাহিত হলে অংশীবাদীদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী কর, অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আর অংশীবাদীদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তুমি তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও। তা এ জন্য যে, তারা অজ্ঞ লোক।
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং এটা হয়েছে আবার বড় হজ্বের দিনে অর্থাৎ কুরবানীর ঈদের দিনে, যা হজ্বের সমস্ত দিন অপেক্ষা বড় ও উত্তম। ঐ ঘোষণা এই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত, অসন্তুষ্ট ও পৃথক। তবে হে মুশরিকদের দল! এখনও যদি তোমরা পথভ্রষ্টতা, শিক এবং দুষ্কার্য পরিত্যাগ কর তবে তা তোমাদের পক্ষে উত্তম হবে। আর যদি পরিত্যাগ না কর এবং পথভ্রষ্টতার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকো তবে তোমরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে এখনও নও এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। আর তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। তিনি তোমাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি কাফিরদেরকে দুনিয়াতেও শাস্তি প্রদান করবেন এবং পরকালেও আযাবে নিপতিত করবেন।
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “কুরবানীর দিন (১০ই যিলহজ্ব) আবু বকর (রাঃ) আমাকে লোকদের মধ্যে ঐ কথা প্রচার করতে পাঠালেন যার জন্যে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। আমি ঘোষণা করে দিলাম- এই বছরের পর কোন মুশরিক যেন হজ্ব করতে না আসে এবং কেউ যেন উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আলী (রাঃ)-কে পাঠান যে, তিনি যেন জনগণের মধ্যে সূরায়ে তাওবাহ প্রচার করে দেন। সুতরাং তিনি মিনায় আমাদের সাথে ঈদের দিন ঐ আহকামই প্রচার করেন। হজ্বে আকবার হচ্ছে বকরা ঈদের দিন। কেননা, জনগণ এটাকে হজ্বে আসগার বলে থাকতো। আবু বকর (রাঃ)-এর এই ঘঘাষণার পর হাজ্বাতুল বিদা বা বিদায় হজ্বে একজনও মুশরিক হজ্ব করতে আসেনি। (এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী (রঃ) কিতাবুল জিহাদের মধ্যে তাখরীজ করেছেন)
হুনাইনের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিরানা থেকে উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। অতঃপর ঐ বছর তিনি আবু বকর (রাঃ)-কে হজ্বের আমীর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। আবু বকর (রাঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে ঘোষণা দেয়ার জন্যে পাঠান। তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আলী (রাঃ)-কে সূরায়ে বারাআতের প্রচারের জন্যে পাঠিয়ে দেন। আলী (রাঃ)-এর আগমনের পরেও হজ্বের আমীর আবু বকর (রাঃ)-ই থাকেন। কিন্তু এই বর্ণনায় গুরবাত বা দুর্বলতা রয়েছে। কেননা, জিরানা থেকে উমরার ইহরাম বাঁধার বছরে হজের আমীর ছিলেন ইতা ইবনে উসাইদ (রাঃ)। আবূ বকর (রাঃ) তো নবম হিজরীতে হজ্বের আমীর ছিলেন। মুসনাদের রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ঐ বছর আলী (রাঃ)-এর সাথে আমি ছিলাম। আমরা সশব্দে ঘোষণা করতে থাকিঃ “জান্নাতে শুধুমাত্র মুমিনরাই যাবে। আগামী বছর থেকে কোন ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না। যাদের সাথে আমাদের চুক্তি ও সন্ধি রয়েছে তাদের মেয়াদ হচ্ছে আজ থেকে নিয়ে চার মাস পর্যন্ত। এই মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত ও সম্পর্কহীন হয়ে যাবেন। এই বছরের পর থেকে কোন কাফিরের বায়তুল্লাহর হজু করার অনুমতি নেই।” এই ঘোষণা দিতে দিতে আমার কণ্ঠস্বর বসে যায়। আলী (রাঃ)-এর গলা বসে যাওয়ার পর আমি ঘোষণা দিতে শুরু করেছিলাম। আর একটি বর্ণনায় আছে যে, যাদের সাথে চুক্তি রয়েছে তাদের মেয়াদ ওটাই। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ “আমার তো ভয় হচ্ছে যে, না জানি এ বাক্যটি কোন বর্ণনাকারীর সন্দেহের কারণে হয় তো এসেছে। কেননা, মেয়াদের ব্যাপারে এর বিপরীত বহু রিওয়ায়াত রয়েছে।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, সূরায়ে বারাআতের ঘোষণার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবু বকর (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। যখন তিনি যুলহুলাইফা নামক স্থানে। পৌছেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এটা প্রচার তো আমি নিজেই করবো অথবা আমার আহলে বায়তের কেউ করবে ।” অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
আলী (রাঃ) বলেন, সূরায়ে বারাআতের দশটি আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “তুমি এগুলো নিয়ে গিয়ে মক্কাবাসীকে শুনিয়ে দাও।” তারপর আমাকে ডেকে তিনি বলেনঃ “তুমি যাও এবং আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হও। যেখানে তাকে পাবে সেখানে তার নিকট থেকে কিতাব গ্রহণ করতঃ মক্কা চলে যাবে এবং লোকদেরকে তা পড়ে শুনাবে।” আমি রওয়ানা হলাম এবং ‘জুহফা নামক স্থানে আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করলাম। তাঁর নিকট থেকে আমি কিতাব নিয়ে নিলাম আর তিনি ফিরে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমার ব্যাপারে কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ না, জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেছেন- “এ পয়গাম হয় আপনি নিজেই প্রচার করুন, না হয় আপনার আহলে বায়তের কোন লোককে তা প্রচার করতে বলুন।” এই সনদে দুর্বলতা রয়েছে। আর এর দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য নয় যে, আবু বকর (রাঃ) তখনই ফিরে এসেছিলেন। বরং তাঁর নেতৃত্বেই ঐ হজ্ব পালিত হয়। হজ্ব পর্ব সমাপ্ত করে তিনি ফিরে আসেন। যেমন অন্যান্য রিওয়ায়াতে পরিষ্কারভাবে এটা বর্ণিত আছে। এক হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন আলী (রাঃ)-কে এটা প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করেন তখন তিনি ওযর পেশ করে বলেনঃ “আমি বয়সের দিক থেকে এবং ভাষণ দেয়ার দিক দিয়ে নিজের মধ্যে ঘাটতি অনুভব করছি।” তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “কিন্তু প্রয়োজন এটাই যে, হয় আমি নিজেই এটা প্রচার করবো, না হয় তুমি করবে।” তখন আলী (রাঃ) বলেনঃ “তা হলে ঠিক আছে, আমিই যাচ্ছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “যাও, আল্লাহ তোমার ভাষা ঠিক রাখুন এবং অন্তরে হিদায়াত দান করুন!” তারপর তিনি স্বীয় হস্ত মুবারক তাঁর মুখের উপর রাখলেন। জনগণ আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আপনাকে আবু বকর (রাঃ)-এর কি কথা প্রচারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিলেন?” তিনি তখন উপরের চারটি বিষয়ের কথা বললেন। মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে কয়েকটি পন্থায় এটা এসেছে। তাতে রয়েছে- “যাদের সাথে চুক্তি রয়েছে, তাদের চুক্তি মেয়াদ পর্যন্তই বলবৎ থাকবে।” অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জনগণ বলেছিলেনঃ “আপনি এই হজ্বে আবু বকর (রাঃ)-কে আমীর করে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই এই প্রচারের দায়িত্ব দিলেও তো চলতো!” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এটা হয় আমাকেই প্রচার করতে হবে, না হয় আমার আহলে বায়তের কাউকে করতে হবে।” আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ‘আযবা’ নামী উস্ত্রীর উপর সওয়ার হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে পথে দেখে আবু বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি সরদার নিযুক্ত হয়ে এসেছেন, না অধীনস্থ হিসেবে?” আলী (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “না, বরং আমি অধীনস্থ হিসেবেই এসেছি। সেখানে পৌছে আবু বকর (রাঃ) হজ্বের ব্যবস্থাপনায় লেগে পড়েন এবং ঈদের দিন (১০ই যিলহজ্ব) আলী (রাঃ) জনগণকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই আহকাম জানিয়ে দেন। অতঃপর তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট ফিরে আসেন। মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে যতদিনের চুক্তি ছিল তা ঠিকই থাকলো। অন্য রিওয়ায়াতে আছে যে, আলী (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবু বকর (রাঃ)-কে হজ্বের আমীর নিযুক্ত করে পাঠান এবং পরে আমাকে সূরায়ে বারাআতের চল্লিশটি আয়াতসহ তাঁর কাছে প্রেরণ করেন। আবু বকর (রাঃ) আরাফার দিন (৯ই যিলহজ্ব) আরাফার মাঠে জনগণের সামনে ভাষণ দেন। অতঃপর আমাকে বলেন, উঠুন এবং জনগণকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পয়গাম শুনিয়ে দিন! আমি তখন দাঁড়িয়ে ঐ চল্লিশটি আয়াত পাঠ করি। তারপর মিনায় গিয়ে জামরার উপর কংকর নিক্ষেপ করি এবং কুরবানী করে মাথা মুণ্ডন করি। তারপর আমি অবগত হই যে, ভাষণের সময় সবাই উপস্থিত ছিলেন না। তাই আমি ডেরায় ডেরায় এবং তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে ঘোষণা করতে থাকি। আমার ধারণা এই যে, সম্ভবতঃ এ কারণেই সাধারণ মানুষ এটাকে ১০ই যিলহজ্বের ঘটনা মনে করেছে অথচ আসল পয়গাম আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্ব তারিখেই পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছিল।”
আবু ইসহাক (রঃ) বলেনঃ “আমি আবু হুজাইফা (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হজ্বে আকবার কোন দিন? তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘আরাফার দিন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এটা নিজের পক্ষ থেকে বলেছেন, না সাহাবীদের কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি জবাব দিলেনঃ সব কিছু এটাই বটে। আতাও (রঃ) এটাই বলেন। উমার (রাঃ) একথাই বলার পর বলেনঃ “সুতরাং এই দিনে কেউ যেন রোযা না রাখে ।” বর্ণনাকারী বলেন, আমি আমার পিতার পরে হজ্ব করেছি। মদীনায় পৌঁছে আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে আজকাল সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তারা উত্তরে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাঃ)-এর নাম বললেন। আমি তখন তাঁর খিদমতে হাযির হয়ে তাকে বললাম, আমি মদীনাবাসীকে এখানকার সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা আপনারই নাম বললেন। তাই আমি আপনার নিকট এসেছি। আচ্ছা বলুন তো, আরাফার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “আপনাকে আমি আমার চেয়ে একশগুণ বেশী উত্তম ব্যক্তির নাম বলছি এবং তিনি হচ্ছেন উমার (রাঃ)। তিনি এই দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করতেন এবং এই দিনকেই তিনি হজ্বে আকবার’ বলতেন।” (এটা ইবনে জারীর (রঃ) ও ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ) এবং তাউস (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা আরাফার দিনকে হজ্বে আকবারের দিন বলেছেন) একটি মুরসাল হাদীসেও রয়েছে যে, আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভাষণ দেন এবং বলেনঃ “এটা হজ্বে আকবারের দিন।”
দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর দ্বারা করা ঈদের দিনকে বুঝানো হয়েছে। আলী (রাঃ) এ কথাই বলেছেন। একবার ঈদুল আযহার দিন তিনি তাঁর সাদা খচ্চরের উপর সওয়ার হয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় একটি লোক এসে তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরে নেন এবং হজ্বে আকবার কোন দিন তা জিজ্ঞেস করেন। তিনি উত্তরে বলেনঃ “আজকের দিনটিই হচ্ছে হজ্বে আকবারের দিন। সুতরাং লাগাম ছেড়ে দাও। আবদুল্লাহ ইবনে আওফার (রাঃ) এটাই উক্তি। মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) তাঁর ঈদের ভাষণে বলেনঃ “আজকের দিনটি হচ্ছে আযহার দিন, আজই হচ্ছে কুরবানীর এবং আজকের দিনটিই হচ্ছে হজ্বে আকবারের দিন।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। আরো বহু গুরুজন এটাই সাব্যস্ত করেছেন যে, হজ্বে আকবার হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। ইমাম ইবনে জারীরেরও (রঃ) পছন্দনীয় উক্তি এটাই। সহীহ বুখারীর উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, আবু বকর (রাঃ) ঈদের দিন মিনায় ঘোষণাকারীকে ঘোষণার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিদায় হজ্বে ১০ই যিলহজ্ব তারিখে জামরাতের নিকটে দাঁড়িয়ে বলেনঃ “আজকের দিনই হচ্ছে হজ্বে আকবারের দিন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তার উম্ভীটি ছিল লাল রং এর । তিনি জনগণকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আজকে কোন দিন তা জান কি?” জনগণ উত্তরে বলেনঃ “আজকে কুরবানীর দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “তোমরা সত্য কথাই বলেছো। আজকের দিনটিই হচ্ছে হজ্বে আকবারের দিন।” অন্য একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) উষ্ট্রীর উপর সওয়ার ছিলেন। জনগণ ওর লাগাম ধরেছিল। তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আজকে কোন্ দিন তা জান কি?” (বর্ণনাকারী বলেনঃ) আমরা এই ধারণায় নীরব থাকলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এই দিনের অন্য কোন নাম বলবেনঃ “এটা হজ্বে আকবারের দিন নয় কি?” অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, জনগণ তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেনঃ “এটা হচ্ছে হজ্বে আকবারের দিন।”
সাঈদ ইবন মুসাইয়াব (রাঃ) বলেন যে, হজ্বে আকবারের দিন হচ্ছে ঈদের দিনের পরের দিন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হজ্বের সমস্ত দিনেরই নাম এটাই । সুফিয়ানও (রঃ) এ কথাই বলেন। যেমন ইয়াওমে জামাল’ (উষ্ট্রের যুদ্ধের দিন) এবং ‘ইয়াওমে সিফফীন’ (সিফফীনের যুদ্ধের দিন) ঐ যুদ্ধগুলোর সমস্ত দিনেরই নাম। অনুরূপভাবে এটাও তাই। হাসান বসরী (রঃ)-কে এই সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “তোমাদের এটা জেনে লাভ কি? এটা তো ছিল ঐ বছর যে বছর আবু বকর (রাঃ) হজ্বে আমীর নিযুক্ত হয়েছিলেন।” ইবনে সীরীন (রঃ) এই প্রশ্নের উত্তরে বলেনঃ “এটা ছিল ঐ দিন যেই দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও সাধারণ লোকদের হজ্ব পালিত হয়েছিল।”
পূর্বে বর্ণিত হাদীসগুলো এবং এই আয়াতের বিষয়বস্তু একই। এর দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যাদের সাথে সাধারণভাবে সন্ধি (চুক্তি) ছিল তাদেরকে তো চার মাসের অবকাশ দেয়া হয়, এর মধ্যে তারা যা ইচ্ছা তাই করুক। আর যাদের সাথে কোন একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সন্ধি-চুক্তি হয়েছে ঐসব চুক্তি ঠিক থাকবে, যদি তারা চুক্তির শর্তাবলীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তারা নিজেরাও মুসলিমদেরকে কোন কষ্ট দেয় না এবং মুসলিমদের শত্রুদেরকেও সাহায্য সহযোগিতা করে না। যারা ওয়াদা বা অঙ্গীকার পূর্ণ করে তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন ও পছন্দ করেন।
সম্মানিত মাস দ্বারা এখানে ঐ চার মাসকে বুঝানো হয়েছে যার বর্ণনা-(আরবী) (৯:৩৬) এই আয়াতে রয়েছে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে শেষ সম্মানিত মাস হচ্ছে মুহাররামুল হারাম। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। কিন্তু এতে কিছু চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বরং এখানে ঐ চার মাস উদ্দেশ্য যে মাসগুলোতে মুশরিকরা মুক্তি লাভ করেছিল এবং তাদেরকে বলা হয়েছিল- এর পরে তোমাদের সাথে যুদ্ধ হবে। এই সূরারই অন্য আয়াতে এর বর্ণনা রয়েছে, যা পরে আসছে। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যাবে তখন ঐ মুশরিকদের যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং ঘাটিস্থলসমূহে তাদের সন্ধানে অবস্থান কর।” আল্লাহ পাক বলেনঃ “যেখানেই পাও’, সুতরাং এটা সাধারণ নির্দেশ। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের যেখানেই পাওনা কেন, তাদেরকে বধ কর, পাকড়াও কর ইত্যাদি। কিন্তু প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, এটা সাধারণ নির্দেশ নয়, বরং বিশেষ নির্দেশ। হারাম শরীফে যুদ্ধ চলতে পারে না। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তাদের সাথে মসজিদুল হারামের পাশে যুদ্ধ করো না যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা করে। যদি তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তবে তোমাদেরকেও সেখানে তাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হলো। ইচ্ছা করলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করতে পার, বন্দী করতে পার, তাদের দুর্গ অবরোধ করতে পার এবং তাদের প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থেকে সামনে পেলেই মেরে ফেলতে পার। অর্থাৎ তোমাদেরকে শুধু এই অনুমতি দেয়া হচ্ছে না যে, তাদেরকে সামনে পেয়ে গেলে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, বরং তোমাদের জন্যে এ অনুমতিও রয়েছে যে, তোমরা নিজেদের পক্ষ থেকেই তাদের উপর আক্রমণ চালাবে, তাদের পথরোধ করে দাড়াবে এবং তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করতে অথবা যুদ্ধ করতে বাধ্য করবে। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তারা তাওবা করতঃ নামায প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তাদের রাস্তা খুলে দেবে এবং তাদের উপর থেকে সংকীর্ণতা উঠিয়ে নেবে।” এই আয়াতটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেই আবু বকর (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। যুদ্ধ করা এই শর্তে হারাম যে, তারা ইসলামের মধ্যে দাখিল হয়ে যাবে এবং ইসলামের অবশ্যকরণীয় কাজগুলো পালন করবে। মহান আল্লাহ এই আয়াতে ইসলামের রুকনগুলো তরতীব বা বিন্যাস সহকারে বর্ণনা করেছেন। বড় থেকে শুরু করে হোটর দিকে এসেছেন। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল’ এই সাক্ষ্যদানের পর ইসলামের সর্বাপেক্ষা বড় রুকন হচ্ছে সালাত, যা মহামহিমান্বিত আল্লাহর হক। সালাতের পরে হচ্ছে যাকাত, যার উপকার ফকীর, মিসকীন ও অভাবগ্রস্তেরা লাভ করে থাকে। এর মাধ্যমে মাখলুকের বিরাট হক, যা মানুষের দায়িত্বে রয়েছে তা আদায় হয়ে যায়। এ কারণেই অধিকাংশ জায়গাতেই আল্লাহ তাআলা সালাতের সাথে সাথেই যাকাতের উল্লেখ করেছেন।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এই মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবো যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত দেয়।” আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তোমাদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠিত করার এবং যাকাত প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি যাকাত দেবে না তার সালাতও হবে না।” আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা কারো সালাত কখনো কবূল করবেন না যে পর্যন্ত না সে যাকাত প্রদান করে। আল্লাহ তা’আলা আবু বকর (রাঃ)-এর উপর দয়া করুন! তিনি সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ছিলেন। (কেননা, তিনি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন)।”
মুসনাদে আহমাদে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল, আর তারা আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে, আমাদের যবেহকৃত (প্রাণী) ভক্ষণ করে এবং আমাদের সালাতের ন্যায় সালাত পড়ে। (যখন তারা এরূপ করবে তখন আমাদের উপর তাদের রক্ত এবং তাদের মাল হারাম হয়ে যাবে, ইসলামের হক ব্যতীত। তারা তখন ঐ সব হকের অধিকারী হয়ে যাবে যেসব হক অন্যান্য মুসলিমদের রয়েছে এবং অন্যান্য মুসলিমদের দায়িত্বে যা কিছু রয়েছে, তাদের দায়িত্বেও সেগুলো এসে যাবে।” (এ রিওয়ায়াতটি সহীহ বুখারীতে রয়েছে এবং সুনানে ইবনে মাজাহ ছাড়া অন্যান্য সুনানেও রয়েছে)
ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর (রঃ) স্বীয় গ্রন্থে রাবী ইবনে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়া হতে এমন অবস্থায় বিদায় গ্রহণ করে যে, সে খাটি ভাবে আল্লাহরই ইবাদত করেছে এবং তার সাথে আর কাউকেও অংশীদার করেনি, সে ঐ অবস্থায় গমন করলো যে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন।” আনাস (রাঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন। সমস্ত নবী এটাই আনয়ন করেছিলেন এবং তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে নিজ নিজ উম্মতের কাছে কথা এদিক ওদিক ছড়িয়ে যাওয়ার পূর্বে এবং ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি বিভিন্ন হওয়ার পূর্বে দাওয়াত পৌছিয়ে দিয়েছিলেন। এর সত্যতার সাক্ষ্য আল্লাহ তা’আলার শেষ অহীর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন-(আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর যদি তারা সালাত, প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” অন্য আয়াতে এই তিনটি কাজের পরে রয়েছে-(আরবী) অর্থাৎ “তখন তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (৯:১১) যহাক (রঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে তরবারীর আয়াত যা মুশরিকদের সাথে কৃত সমস্ত সন্ধি-চুক্তিকে কর্তন করে দিয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, সূরায়ে বারাআত অবতীর্ণ হওয়ার চার মাস পরে কোন সন্ধি ও চুক্তি অবশিষ্ট থাকেনি। পূর্বশর্তগুলো সমতার ভিত্তিতে ভেঙ্গে দেয়া হয়। এখন রাকী শুধু ইসলাম ও জিহাদ। আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে চারটি তরবারীসহ পাঠিয়েছেন। প্রথম তরবারী আরবের মুশরিকদের মধ্যে প্রয়োগের জন্যে। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর।” এ রিওয়ায়াতটি এভাবে সংক্ষিপ্ত আকারেই আছে। (আলী রাঃ বলেনঃ) আমার ধারণা এই যে, দ্বিতীয় তরবারী হচ্ছে আহলে কিতাবের সাথে যুদ্ধের জন্যে। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আহলে কিতাবদের ঐ লোকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করতে থাকো, যারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না এবং দ্বীন কবুল করে না, যে পর্যন্ত না তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জিযিয়া প্রদানে স্বীকৃত হয়।” (৯:২৯) তৃতীয় তরবারী হলো মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে। প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদার সাথে যুদ্ধ কর।” (৯:৭৩)। চতুর্থ তরবারী হচ্ছে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের জন্য। ইরশাদ হচ্ছে-(আরবী) অর্থাৎ “যদি মুমিনদের দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায় তবে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি আনয়ন কর, অতঃপর যদি একটি দল অপর দলটির উপর বিদ্রোহ ঘোষণা করে তবে তোমরা ঐ বিদ্রোহী দলটির সাথে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।” (৪৯:৯) যহ্হাক (রঃ) ও সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এই তরবারীর আয়াতটি (আরবী) (অতঃপর হয় অনুগ্রহ করে ছেড়ে দাও অথবা ফিদইয়া নিয়ে ছেড়ে দাও) (৪৭:৪) এই আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর কাতাদা (রঃ) এর বিপরীত বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেন, আমি তোমাকে যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি তাদের মধ্য হতে কেউ যদি তোমার কাছে। নিরাপত্তা প্রার্থনা করে তবে তুমি তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবে ও নিরাপত্তা দেবে, যেন তারা কুরআন কারীম শুনতে পায় ও তোমার কথা শুনবার সুযোগ লাভ করে। আর তারা দ্বীনের তালীম অবগত হয় এবং আল্লাহর হুজ্জত পরিপূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর নিরাপত্তার মাধ্যমেই তাকে তার স্বদেশে নির্ভয়ে পাঠিয়ে দেবে, যেন সে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যেতে পারে। এর ফলে হয়তো বুঝে সুঝে ও চিন্তা ভাবনা করে সে সত্য দ্বীন কবূল করে নেবে। এটা এই কারণে যে, তারা অজ্ঞ ও মূখ লোক। সুতরাং তাদের কাছে দ্বীনী শিক্ষা পৌঁছিয়ে দাও। আল্লাহর দাওয়াত তাঁর বান্দাদের কানে পৌছিয়ে দিতে কোন ত্রুটি করো না।
এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- যে কেউই তোমার কাছে ধর্মীয় কথা শুনবার জন্যে আসে সে নিরাপত্তা লাভ করবে যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর কালাম না শুনে, অতঃপর যেখান থেকে এসেছিল সেখানে নিরাপদে ফিরে যায়। এজন্যেই, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে দ্বীন বুঝবার জন্যে বা কোন পয়গাম নিয়ে আসতো তাকে তিনি নিরাপত্তা দান করতেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর এটাই হয়েছিল। কুরায়েশের যতগুলো দূত এসেছিল তাদের কোন ভয় বিপদ ছিল না। উরওয়া ইবনে মাসউদ, মাকরাম ইবনে হাফস, সাহল ইবনে আমর প্রমুখ একের পর এক আসতে থাকে। এখানে এসে তাদের ঐ শান শওকত দৃষ্টিগোচর হয় যা রোম সম্রাট কায়সার এবং পারস্য সম্রাট কিসরার দরবারেও তারা দেখতে পায়নি। একথা তারা তাদের কওমের কাছে গিয়ে বর্ণনা করে। সুতরাং এ বিষয়টিও বহু লোকের হিদায়াতের মাধ্যম হয়েছিল। ভণ্ড নবী মুসায়লামা কায্যাবের দূত যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করে তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি মুসায়লামার রিসালাতকে স্বীকার করেছো?” সে উত্তরে বললোঃ “হ্যা।” তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “আমার নিকট দূতকে হত্যা করা যদি নাজায়েয না হতো তবে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। অবশেষে এ লোকটি ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাতে কুফার শাসন ক্ষমতায় থাকার সময় নিহত হয়। লোকটিকে ইবনে নাওয়াহা বলা হতো। ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখন অবহিত হন যে, সে মুসায়লামাকে নবী বলে স্বীকারকারী তখন তাকে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ “এখন তুমি দূত নও। সূতরাং এখন তোমাকে হত্যা করার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।” অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়। তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হাক!
মোটকথা, যদি কোন অমুসলিম দেশ থেকে কোন দূত বা ব্যবসায়ী অথবা সন্ধি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি কিংবা জিযিয়া আনয়নকারী ব্যক্তি কোন মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করে এবং ইমাম বা নায়েবে ইমাম তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন তবে যে পর্যন্ত সে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করবে এবং স্বদেশে না পৌঁছবে সেই পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হারাম। কিন্তু আলেমগণ বলেন যে, এরূপ ব্যক্তিকে বছর ধরে বাস করতে দেয়া চলবে না। বড়জোর তাকে চার মাস পর্যন্ত এখানে বাস করার অধিকার দেয়া যেতে পারে। আর চার মাসের অধিক ও এক বছরের কম সময় পর্যন্ত তাকে দারুল ইসলামে বাস করতে দেয়ার ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও অন্যান্য ইমামদের (রঃ) দু’টি উক্তি রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেন, আমি তোমাকে যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি তাদের মধ্য হতে কেউ যদি তোমার কাছে। নিরাপত্তা প্রার্থনা করে তবে তুমি তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবে ও নিরাপত্তা দেবে, যেন তারা কুরআন কারীম শুনতে পায় ও তোমার কথা শুনবার সুযোগ লাভ করে। আর তারা দ্বীনের তালীম অবগত হয় এবং আল্লাহর হুজ্জত পরিপূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর নিরাপত্তার মাধ্যমেই তাকে তার স্বদেশে নির্ভয়ে পাঠিয়ে দেবে, যেন সে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যেতে পারে। এর ফলে হয়তো বুঝে সুঝে ও চিন্তা ভাবনা করে সে সত্য দ্বীন কবূল করে নেবে। এটা এই কারণে যে, তারা অজ্ঞ ও মূখ লোক। সুতরাং তাদের কাছে দ্বীনী শিক্ষা পৌঁছিয়ে দাও। আল্লাহর দাওয়াত তাঁর বান্দাদের কানে পৌছিয়ে দিতে কোন ত্রুটি করো না।
এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- যে কেউই তোমার কাছে ধর্মীয় কথা শুনবার জন্যে আসে সে নিরাপত্তা লাভ করবে যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর কালাম না শুনে, অতঃপর যেখান থেকে এসেছিল সেখানে নিরাপদে ফিরে যায়। এজন্যেই, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে দ্বীন বুঝবার জন্যে বা কোন পয়গাম নিয়ে আসতো তাকে তিনি নিরাপত্তা দান করতেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর এটাই হয়েছিল। কুরায়েশের যতগুলো দূত এসেছিল তাদের কোন ভয় বিপদ ছিল না। উরওয়া ইবনে মাসউদ, মাকরাম ইবনে হাফস, সাহল ইবনে আমর প্রমুখ একের পর এক আসতে থাকে। এখানে এসে তাদের ঐ শান শওকত দৃষ্টিগোচর হয় যা রোম সম্রাট কায়সার এবং পারস্য সম্রাট কিসরার দরবারেও তারা দেখতে পায়নি। একথা তারা তাদের কওমের কাছে গিয়ে বর্ণনা করে। সুতরাং এ বিষয়টিও বহু লোকের হিদায়াতের মাধ্যম হয়েছিল। ভণ্ড নবী মুসায়লামা কায্যাবের দূত যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করে তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি মুসায়লামার রিসালাতকে স্বীকার করেছো?” সে উত্তরে বললোঃ “হ্যা।” তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “আমার নিকট দূতকে হত্যা করা যদি নাজায়েয না হতো তবে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। অবশেষে এ লোকটি ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাতে কুফার শাসন ক্ষমতায় থাকার সময় নিহত হয়। লোকটিকে ইবনে নাওয়াহা বলা হতো। ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখন অবহিত হন যে, সে মুসায়লামাকে নবী বলে স্বীকারকারী তখন তাকে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ “এখন তুমি দূত নও। সূতরাং এখন তোমাকে হত্যা করার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।” অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়। তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হাক!
মোটকথা, যদি কোন অমুসলিম দেশ থেকে কোন দূত বা ব্যবসায়ী অথবা সন্ধি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি কিংবা জিযিয়া আনয়নকারী ব্যক্তি কোন মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করে এবং ইমাম বা নায়েবে ইমাম তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন তবে যে পর্যন্ত সে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করবে এবং স্বদেশে না পৌঁছবে সেই পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হারাম। কিন্তু আলেমগণ বলেন যে, এরূপ ব্যক্তিকে বছর ধরে বাস করতে দেয়া চলবে না। বড়জোর তাকে চার মাস পর্যন্ত এখানে বাস করার অধিকার দেয়া যেতে পারে। আর চার মাসের অধিক ও এক বছরের কম সময় পর্যন্ত তাকে দারুল ইসলামে বাস করতে দেয়ার ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও অন্যান্য ইমামদের (রঃ) দু’টি উক্তি রয়েছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 03-06
فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَمَ اللّهِ
Grant him protection so that he may hear the Word of Allah (the Qur’an) .
Allah says,
وَأَذَانٌ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ
And a declaration from Allah and His Messenger,
and a preface warning to the people,
إِلَى النَّاسِ
to mankind
يَوْمَ الْحَجِّ الَاكْبَرِ
on the greatest day of Hajj,
the day of Sacrifice, the best and most apparent day of the Hajj rituals, during which the largest gathering confers.
أَنَّ اللّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ
that Allah is free from (all) obligations to the Mushrikin and so is His Messenger.
also free from all obligations to them.
Allah next invites the idolators to repent,
فَإِن تُبْتُمْ
So if you repent,
from the misguidance and Shirk you indulge in,
فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ
it is better for you, but if you turn away,
and persist on your ways,
فَاعْلَمُواْ أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللّهِ
then know that you cannot escape Allah,
Rather, Allah is capable over you, and you are all in His grasp, under His power and will,
وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
And give tidings of a painful torment for those who disbelieve.
earning them disgrace and affliction in this life and the torment of chains and barbed iron bars in the Hereafter.
Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said,
“Abu Bakr sent me during that Hajj with those dispatched on the day of Sacrifice to declare in Mina that no Mushrik will be allowed to attend Hajj after that year, nor will a naked person be allowed to perform Tawaf.”
Humayd said,
“The Prophet then sent Ali bin Abi Talib and commanded him to announce Bara’ah.”
Abu Hurayrah said,
“Ali publicized Bara’ah with us to the gathering in Mina on the day of Sacrifice, declaring that no Mushrik shall perform Hajj after that year, nor shall a naked person perform Tawaf around the House.”
Al-Bukhari also collected this Hadith. this narration of which, Abu Hurayrah said,
“On the day of Nahr, Abu Bakr sent me along with other announcers to Mina to make a public announcement that `No pagan is allowed to perform Hajj after this year, and no naked person is allowed to perform the Tawaf around the Ka`bah.’
Abu Bakr was leading the people in that Hajj season, and in the year of `The Farewell Hajj’ when the Prophet performed Hajj, no Mushrik performed Hajj.”‘
This is the narration that Al-Bukhari recorded in the Book on Jihad.
Muhammad bin Ishaq reported a narration from Abu Jafar Muhammad bin Ali bin Al-Hussein who said,
“When Bara’ah was revealed to Allah’s Messenger, and he had sent Abu Bakr to oversee the Hajj rites for the people, he was asked, `O Messenger of Allah! Why not send this (message) to Abu Bakr?’ So he said,
لَاا يُوَدِّي عَنِّي إِلاَّ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي
It will not be accepted to have been from me if it is not from a man from my family.
Then he called for Ali and said to him,
اخْرُجْ بِهذِهِ الْقِصَّةِ مِنْ صَدْرِ بَرَاءَةَ وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ يَوْمَ النَّحْرِ إِذَا اجْتَمَعُوا بِمِنًى أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ كَافِرٌ وَلَا يَحُجُّ بَعْدَ الْعَامِ مُشْرِكٌ وَلَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ وَمَنْ كَانَ لَهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلّم عَهْدٌ فَهُوَ لَهُ إِلَى مُدَّتِه
Take this section from the beginning of Bara’ah and proclaim to the people on the day of the Sacrifice while they are gathered at Mina that no disbeliever will enter Paradise, no idolator will be permitted to perform Hajj after the year, there will be no Tawaf while naked, and whoever has a covenant with Allah’s Messenger (peace be upon him), then it shall be valid until the time of its expiration.
Ali rode the camel of Allah’s Messenger named Al-Adba until he caught up with Abu Bakr in route. When Abu Bakr saw him he said, `Are you here as a commander or a follower.’
Ali replied, `A follower.’
They continued on. Abu Bakr lead the people in Hajj while the Arabs were camping in their normal locations from Jahiliyyah. On the day of Sacrifice, Ali bin Abi Talib stood and proclaimed,
`O people! No disbeliever will be admitted into Paradise, no idolator will be permitted to perform Hajj next year, there shall be no Tawaf while naked, and whoever has a covenant with Allah’s Messenger, then it shall be valid until its time of expiration.’
So no idolator performed Hajj after that year, Tawaf around the House while naked ceased.
Then they returned to Allah’s Messenger. So this was the declaration of innocence, whoever among the idolators had no treaty, then he had a treaty of peace for one year, if he had a particular treaty, then it was valid until its date of expiration.
Existing Peace Treaties remained valid until the End of Their Term
Allah says;
إِلاَّ الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنقُصُوكُمْ شَيْيًا وَلَمْ يُظَاهِرُواْ عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّواْ إِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ إِلَى مُدَّتِهِمْ
Except those of the Mushrikin with whom you have a treaty, and who have not subsequently failed you in aught, nor have supported anyone against you. So fulfill their treaty for them until the end of their term.
This is an exception regulating the longest extent of time for those who have a general treaty – with out time mentioned – to four months. They would have four months to travel the lands in search of sanctuary for themselves wherever they wish. Those whose treaty mentioned a specific limited term, then the longest it would extend was to the point of its agreed upon termination date.
Hadiths in this regard preceded. So anyone who had a treaty with Allah’s Messenger, it lasted until its specific termination date. However, those in this category were required to refrain from breaking the terms of the agreement with Muslims and from helping non-Muslims against Muslims. This is the type whose peace agreement with Muslims was carried out to its end.
Allah encouraged honoring such peace treaties, saying,
إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
Surely, Allah loves those who have Taqwa.
who keep their promises.
This is the Ayah of the Sword
Allah said next,
فَإِذَا انسَلَخَ الَاشْهُرُ الْحُرُمُ
So when the Sacred Months have passed…,
meaning, `Upon the end of the four months during which We prohibited you from fighting the idolators, and which is the grace period We gave them, then fight and kill the idolators wherever you may find them.’
Mujahid, Amr bin Shu`ayb, Muhammad bin Ishaq, Qatadah, As-Suddi and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said that;
the four months mentioned in this Ayah are the four-month grace period mentioned in the earlier Ayah,
فَسِيحُواْ فِي الَارْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ
(So travel freely for four months throughout the land).
Allah’s statement next,
فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ
then fight the Mushrikin wherever you find them,
means, on the earth in general, except for the Sacred Area, for Allah said,
وَلَا تُقَـتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَـتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِن قَـتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ
And fight not with them at Al-Masjid Al-Haram, unless they fight you there. But if they attack you, then fight them. (2:191)
Allah said here,
وَخُذُوهُمْ
and capture them,
executing some and keeping some as prisoners,
وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ
and besiege them, and lie in wait for them in each and every ambush,
do not wait until you find them. Rather, seek and besiege them in their areas and forts, gather intelligence about them in the various roads and fairways so that what is made wide looks ever smaller to them. This way, they will have no choice, but to die or embrace Islam,
فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلَةَ وَاتَوُاْ الزَّكَاةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
But if they repent and perform the Salah, and give the Zakah, then leave their way free. Verily, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.
Abu Bakr As-Siddiq used this and other honorable Ayat as proof for fighting those who refrained from paying the Zakah.
These Ayat allowed fighting people unless, and until, they embrace Islam and implement its rulings and obligations.
Allah mentioned the most important aspects of Islam here, including what is less important. Surely, the highest elements of Islam after the Two Testimonials are the prayer, which is the right of Allah, the Exalted and Ever High, then the Zakah, which benefits the poor and needy. These are the most honorable acts that creatures perform, and this is why Allah often mentions the prayer and Zakah together.
In the Two Sahihs, it is recorded that Ibn Umar said that the Messenger of Allah said,
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَيُقِيمُوا الصَّلَةَ وَيُوْتُوا الزَّكَاة
I have been commanded to fight the people until they testify that there is no deity worthy of worship except Allah and that Muhammad is the Messenger of Allah, establish the prayer and pay the Zakah.
This honorable Ayah (9:5) was called the Ayah of the Sword, about which Ad-Dahhak bin Muzahim said,
“It abrogated every agreement of peace between the Prophet and any idolator, every treaty, and every term.”
Al-Awfi said that Ibn Abbas commented:
“No idolator had any more treaty or promise of safety ever since Surah Bara’ah was revealed. The four months, in addition to, all peace treaties conducted before Bara’ah was revealed and announced had ended by the tenth of the month of Rabi Al-Akhir.
Idolators are granted Safe Passage if They seek It
Allah said to His Prophet, peace be upon him,
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ
And if anyone of the Mushrikin,
whom you were commanded to fight and We allowed you their blood and property,’
اسْتَجَارَكَ
seeks your protection,
asked you for safe passage,
فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَمَ اللّهِ
then grant him protection so that he may hear the Word of Allah (the Qur’an)
then accept his request until he hears the Words of Allah, the Qur’an. Recite the Qur’an to him and mention a good part of the religion with which you establish Allah’s proof against him,
ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُ
and then escort him to where he can be secure,
and safe, until he goes back to his land, his home, and area of safety,
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَعْلَمُونَ
that is because they are men who know not.
The Ayah says, `We legislated giving such people safe passage so that they may learn about the religion of Allah, so that Allah’s call will spread among His servants.
Ibn Abi Najih narrated that Mujahid said that this Ayah,
“Refers to someone who comes to you to hear what you say and what was revealed to you (O Muhammad). Therefore, he is safe until he comes to you, hears Allah’s Words and then proceeds to the safe area where he came from.”
The Messenger of Allah used to thereafter grant safe passage to those who came to him for guidance or to deliver a message.
On the day of Hudaybiyyah, several emissaries from Quraysh came to him, such as Urwah bin Mas`ud, Mikraz bin Hafs, Suhayl bin `Amr and several others. They came mediating between him and the Quraysh pagans. They witnessed the great respect the Muslims had for the Prophet, which astonished them, for they never before saw such respect for anyone, kings nor czars. They went back to their people and conveyed this news to them; this, among other reasons, was one reason that most of them accepted the guidance.
When Musaylimah the Liar sent an emissary to the Messenger of Allah, he asked him, “Do you testify that Musaylimah is a messenger from Allah”
He said, “Yes.”
The Messenger of Allah said,
لَوْلَا أَنَّ الرُّسُلَ لَا تُقْتَلُ لَضَرَبْتُ عُنُقَك
I would have cut off your head, if it was not that emissaries are not killed.
That man, Ibn An-Nawwahah, was later beheaded when Abdullah bin Mas`ud was the governor of Al-Kufah. When it became known that he still testified that Musaylimah was a messenger from Allah, Ibn Mas`ud summoned him and said to him, “You are not delivering a message now!”
He commanded that Ibn An-Nawwahah be decapitated, may Allah curse him and deprive him of His mercy.
In summary, those who come from a land at war with Muslims to the area of Islam, delivering a message, for business transactions, to negotiate a peace treaty, to pay the Jizyah, to offer an end to hostilities, and so forth, and request safe passage from Muslim leaders or their deputies, should be granted safe passage, as long as they remain in Muslim areas, until they go back to their land and sanctuary.
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
সহীহায়ন (বুখারী, মুসলিম) ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে প্রমাণিত যে, মহান বা বড় হজ্জ বলতে কুরবানীর (১০ই যিলহজ্জ) দিনকে বোঝানো হয়েছে। (বুখারী ৪৬৫৫, মুসলিম ৯৮২, তিরমিযী ৯৫৭নং) এই দিনে মিনাতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা শুনানো হয়। ১০ই যুলহজ্জকে বড় হজ্জের দিন এই জন্য বলা হয় যে, এই দিনে হজ্জের সব থেকে অধিক ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী আদায় করা হয়ে থাকে। আর সাধারণতঃ লোকেরা উমরাহকে ‘হাজ্জে আসগার’ (ছোট হজ্জ) বলত। এই জন্য উমরাহ থেকে পৃথক করার জন্য হজ্জকে ‘হাজ্জে আকবার’ (বড় হজ্জ) বলা হয়। পক্ষান্তরে জনসাধারণের মাঝে এই কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, জুমআর দিনে হজ্জের (আরাফাতের) দিন পড়লে তা বড় হজ্জ (বা আকবরী হজ্জ) হয়। কিন্তু এ কথার কোন দলীল নেই, এ হল ভিত্তিহীন কথা।
* এটা হল মুশরিকদের চতুর্থ দল। তাদের সাথে যত দিনের চুক্তি ছিল সেই সময় পর্যন্ত তাদেরকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেননা, তারা চুক্তি পালন করেছিল এবং তার পরিপন্থী কোন আচরণ প্রদর্শন করেনি। এই জন্য মুসলিমদের পক্ষেও চুক্তি পালনকে জরুরী করা হয়েছিল।
* [১] সেই ‘নিষিদ্ধ মাসগুলি’ বলতে কোন্ কোন্ মাস উদ্দেশ্য তাতে মতভেদ রয়েছে। একটি রায় হল যে, তা থেকে উদ্দেশ্য হল ঐ চার মাস, যা হারাম (বা নিষিদ্ধ) বলে প্রসিদ্ধ; অর্থাৎ, রজব, যুলক্বাদ্, যুলহাজ্জ ও মুহাররাম মাস। আর সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা ১০ই যুলহজ্জ তারীখে করা হয়েছিল। এই হিসাবে তাদেরকে ঘোষণার পর ৫০ দিন অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, নিষিদ্ধ মাসগুলি অতিবাহিত হওয়ার পর মুশরিকদেরকে গ্রেপ্তার ও হত্যা করার আদেশ জারী করা হয়। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর বলেছেন যে, এখানে ‘নিষিদ্ধ মাসগুলি’ বলতে হারামকৃত ঐ চার মাস নয়; বরং এখানে ১০ই যিলহজ্জ থেকে ১০ই রবীউস সানী পর্যন্ত চার মাসকে বুঝানো হয়েছে। আর এই চার মাসকে নিষিদ্ধ মাস এই জন্য বলা হয়েছে যে, সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা হিসাবে এই চার মাসে সেই সব মুশরিকদের সাথে লড়াই ও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুমতি ছিল না। সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা হিসাবে এই ব্যাখ্যা যথোপযুক্ত বলে মনে হয়। আর এ ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জানেন।
[২] কোন কোন মুফাসসিরগণ এই আদেশকে ব্যাপক বলে মনে করেছেন। অর্থাৎ, বৈধ ও নিষিদ্ধ যে জায়গাতেই পাও তাদেরকে হত্যা কর। আর কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আদেশকে {وَلاَ تُقَاتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِن قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ} “আর মাসজিদুল হারামের (কা’বা শরীফের) নিকট তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো না; যতক্ষণ না তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে তোমরা তাদেরকে হত্যা কর।” (সূরা বাকারাহ ২:১৯১ আয়াত) এই আয়াত দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কেবল হারাম শরীফের সীমানার বাইরে হত্যা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (ইবনে কাসীর)
[৩] অর্থাৎ, তাদেরকে বন্দী কর অথবা হত্যা কর।
[৪] অর্থাৎ এটাই যথেষ্ট মনে করো না যে, তাদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বরং যেখানে যেখানে তাদের আশ্রয়স্থল, দুর্গ ও ঘাঁটি আছে সেখানে তাদের প্রতীক্ষায় থাকো; এমনকি তোমাদের অনুমতি ছাড়া তাদের যেন কোথাও যাওয়া-আসা পর্যন্ত সম্ভব না হয়।
[৫] অর্থাৎ, তাদের বিরুদ্ধে কোন রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। কেননা, তারা মুসলমান হয়ে গেছে। বুঝা গেল যে, ইসলাম গ্রহণ করার পর নামায কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা জরুরী। যদি কোন ব্যক্তি তার মধ্যে কোন একটি ত্যাগ করে, তাহলে তাকে মুসলিম ভাবা যাবে না। যেমন আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) এই আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করে যাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। আর বলেছিলেন যে, ‘আল্লাহর কসম! আমি সেই সব লোকদের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়ব, যারা নামায ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে।’ (বুখারী, মুসলিম) অর্থাৎ, নামায তো পড়ে; কিন্তু যাকাত প্রদান করে না।
* এই আয়াতে পূর্বোক্ত জঙ্গী কাফেরদের ব্যাপারে এক অনুমতি দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোন কাফের আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও। অর্থাৎ, তাকে নিজেদের হিফাযত ও নিরাপত্তায় রাখ; যাতে কোন মুসলিম তাকে হত্যা করতে না পারে। আর যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনা ও ইসলাম সম্পর্কে জানার অবকাশ পায়। সম্ভবতঃ এইভাবে তার তাওবাহ ও ইসলাম কবুল করার পথ বেরিয়ে আসবে। অতঃপর যদি সে আল্লাহর বাণী শোনা সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ না করে, তাহলে তাকে তার নিজ নিরাপদ জায়গায় পৌঁঁছে দাও। উদ্দেশ্য এই যে, নিজেদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পালন করতে হবে; যতক্ষণ না সে নিজের গন্তব্যস্থলে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যায়। যেহেতু তার প্রাণ রক্ষা করা তোমাদের দায়িত্ব।
* অর্থাৎ, আশ্রয়প্রার্থী (শরণার্থী)-দেরকে আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি এই জন্য দেওয়া হয়েছে যে, এরা হল অজ্ঞ লোক। সম্ভবতঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা তাদের কানে এলে এবং মুসলিমদের আখলাক-চরিত্র দেখলে সে ইসলামের সত্যতার বিশ্বাসী হয়ে যাবে এবং ইসলাম গ্রহণ করে আখেরাতের আযাব থেকে বেঁচে যাবে। যেমন হুদাইবিয়ার চুক্তির পর বহু সংখ্যক কাফের নিরাপত্তা চেয়ে মদীনায় আসা-যাওয়া করত। যার ফলে মুসলিমদের চরিত্র ও আচরণ প্রত্যক্ষ করে ইসলাম বুঝা তাদের জন্য সহজ হল। অতঃপর তাদের মধ্যে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করল।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
১০ যিলহজ্জ। একে “ইয়াওমুন নহর” বা যবেহ করার দিন বলা হয়। সহীহ হাদীসে বলা হয়েছেঃ বিদায় হজ্জে ভাষণ দিতে গিয়ে নবী (সা.) উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞেস করেনঃ আজকের এ দিনটি কোন দিন? লোকেরা জবাব দেয়ঃ ইয়াওমুন নহর-আজ যবেহ করার দিন। তিনি বলেনঃ هَذَا يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ অর্থাৎ আজ হজ্জে আকরব তথা বড় হজ্জের দিন। এখানে বড় হজ্জ শব্দটি এসেছে ছোট হজ্জের বিপরীত শব্দ হিসেবে। আরববাসীরা উমরাহ কে ছোট হজ্জ বলে থাকে। এর মোকাবিলায় যিলহজ্জের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে যে হজ্জ করা হয় তাকে বলা হয় বড় হজ্জ।
* যারা তোমাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেনি তোমরা তাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করবে, এটা হবে তাকওয়া বিরোধী কাজ। আল্লাহর কাছে তাই প্রিয় ও পছন্দনীয়, যারা সব অবস্থায়তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
* পারিভাষিক অর্থে যে মাসগুলোকে হজ্জ ও উমরাহ করার সুবিধার জন্য হারাম মাস গণ্য করা হয়েছে এখানে সে মাসগুলোর কথা বলা হয়নি। বরং মুশরিকদের যে চর মাসের অবকাশ দেয়া হয়েছিল সেই চারটি মাসের কথা এখানে বলা হয়েছে। যেহেতু এ অবকাশকালিন সময়ে মুশরিকদের ওপর আক্রমণ করা মুসলমানদের জন্য জায়েয ছিল না তাই এগুলোকে হারাম মাস বলা হয়েছে।
* কুফর ও শিরক থেকে নিছক তাওবা করে নিলেই ব্যাপাটি খতম হয়ে যাবে না। বরং তাদের কার্যত নামায কায়েম করতে ও যাকাত দিতে হবে। এটা না হলে তারা যে কুফরী ত্যাগ করে ইসলামকে অবলম্বন করেছে, একথা মেনে নেয়া যাবে না। হযরত আবু বকর (রা.) মুরতাদ হবার ফিতনা দেখা দেবার সময় এ আয়াত থেকেই যুক্তি সংগ্রহ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নবী (সা.) এর ইন্তেকালের পর যারা গোলযোগ সৃষ্টি করেছিল তাদের একটি দল বলতো, আমরা ইসলামকে অস্বীকার করি না। আমরা নামায পড়তে প্রস্তুত কিন্তু যাকাত দেবো না। সাহাবায়ে কেরাম সাধারণভাবে এ ভেবে বিব্রত হচ্ছিলেন যে, এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে কেমন করে তরবারি ওঠানো যেতে পারে? কিন্তু হযরত আবু বকর (রা.)ও আয়াতটির বরাত দিয়ে বললেন, আমাদের তো কেবলমাত্র যখন এরা শিরক থেকে তাওবা করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে তখনই এদেরকে ছেড়ে দেবার হুকুম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন এ তিন শর্তের মধ্য থেকে একটি শর্ত এরা উড়িয়ে দিচ্ছে তখন আমরা এদের ছেড়ে দেই কেমন করে?
* যুদ্ধ চলার মাঝখানে যদি কোন শত্রু তোমাদের কাছে আবেদন করে, আমি ইসলামকে জানতে ও বুঝতে চাই তাহলে তাকে নিরাপত্তা দান করে নিজেদের কাছে আসতে দেয়া এবং তাকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝানো মুসলমানদের উচিত। তারপর যদি সে ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে নিজেদের নিরাপত্তায় তাকে আবাস স্থলে পৌঁছিয়ে দেয়া উচিত এ ধরনের লোক যারা নিরাপত্তা নিয়ে দারুল ইসলামের আসে, ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে তাদের “মুস্তামিন” তথা নিরাপত্তা প্রার্থী বলা হয়।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
দশই যিলহাজ্জকে বড় হাজ্জের দিন বলার কারণ হল, এ দিনে হাজ্জের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পন্ন করা হয়। মানুষের মাঝে প্রচলন আছে যে, জুমুআর দিন আরাফা হলে ঐ হাজ্জকে বড় হাজ্জ বা হাজ্জে আকবার বলা হয়, এরূপ কথা ভিত্তিহীন। মূলত বড় হাজ্জ দ্বারা হাজ্জকে বুঝানো হয়েছে, যেহেতু উমরাকে ছোট হাজ্জ বলা হয়।
(إِلا الَّذِينَ عَاهَدْتُمْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ)
‘তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ’ অর্থাৎ পূর্বের বিধান থেকে ঐ সকল মুশরিকরা আলাদা যারা নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ আর তোমাদের সাথে খিয়ানত করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের সহযোগিতাও করেনি। তাহলে তাদের সাথে মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর।
(فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ)
‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে’এখানে হারাম মাস বলতে কোন্ মাসকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে একাধিক মত পাওয়া যায়।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: যে মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। তাহল যুলক্বা‘দাহ, যুলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব। প্রবীণ মুফাসসিরদের মধ্যে ইমাম ইবনু কাসীর (রাঃ)ও এ মত পোষণ করেছেন।
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوهُمْ)
‘মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা কর’অনেকে এ আয়াতকে ব্যাপক বলেছেন। অর্থাৎ যেখানে পাও সেখানেই মুশরিকদেরকে হত্যা কর। কিন্তু মাসজিদে হারামের সীমানায় হত্যা করা নিষেধ এটাই প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَأَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ أَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ج وَلَا تُقٰتِلُوْهُمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتّٰي يُقَاتِلُوْكُمْ فِيْهِ ج فَإِنْ قٰتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ ط كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِيْنَ)
“তাদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তারা তোমাদেরকে যেখান থেকে বহিষ্কৃত করেছে তোমরাও তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দাও, আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (কুফর ও শির্ক) গুরুতর অপরাধ এবং তোমরা তাদের সাথে মাসজিদুল হারামের নিকট যুদ্ধ কর না যে পর্যন্ত না তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ করে; কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ কর। কাফিরদের প্রতিফল এরূপই।” (সূরা বাকারাহ ২:১৯১, ইবনে কাসীর, ৪/১২০)
مَرْصَدٍ শত্রুরা যেখানে থাকে তাকে মারসাদ বা ঘাঁটি বলা হয়। অর্থাৎ শত্রুদের প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক, সুযোগ পেলেই হামলা করবে।
(فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ)
‘অতঃপর তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে..’ অর্থাৎ যদি তারা শির্ক বর্জন করে তাওবাহ করতঃ ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। কেননা তখন তারা তোমাদের দীনী ভাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ ط وَنُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)
“অতঃপর তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনী ভাই; জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শন স্পষ্টরূপে বর্ণনা করি।”(সূরা তাওবাহ ৯:১১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর রাসূল- এ সাক্ষ্য দিয়ে সালাত কায়িম করবে, যাকাত দেবে; নচেৎ আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সহীহ বুখারী হা: ২৫)
(وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ)
‘মুশরিকদের মধ্যে যদি কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে’অর্থাৎ যে সকল মুশরিকদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্য হতে কেউ যদি নিরাপত্তা চায় তাহলে তাকে এমনভাবে নিরাপত্তা দাও যেন কুরআন শ্রবণ করতে পারে। আশা করা যায়, সে ঈমান আনবে। যদি কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে তাদের বাসস্থানে নিরাপদে পৌঁছে দাও।
সুতরাং যেখানে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল কাফির-মুশরিকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিয়েছেন সেখানে কোন মু’মিনের সম্পর্ক রাখা ঈমানের পরিচায়ক হতে পারে না। এটা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তারা কখনো আমাদের জন্য কল্যাণ চায় না, যদিও বাহ্যিক হিতাকাক্সিক্ষতা প্রকাশ করে। তবে তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দীনী ভাই, তাদের সাথে সম্পর্ক করতে পারবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
দশই যিলহাজ্জকে হাজ্জে আকবার বলা হয়।
কোন ব্যক্তি তাওবাহ করতঃ সালাত কায়েম করলে, যাকাত প্রদান করলে সে মুসলিম ভাই বলে গণ্য হবে।
কোন মুশরিক নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তা দেয়া যাবে। তবে এমনভাবে নিরাপত্তা দেয়া উচিত যাতে সে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়, আশা করা যায় এতে সে ইসলাম গ্রহণ করবে।