أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 114/٣٢٤)-৫৯৮
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
১৩-১৫ নং আয়াত:-
أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُواْ أَيْمَانَهُمْ
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না?
Will you not fight a people who have violated their oaths?
اَلَا تُقَاتِلُوۡنَ قَوۡمًا نَّکَثُوۡۤا اَیۡمَانَہُمۡ وَ ہَمُّوۡا بِاِخۡرَاجِ الرَّسُوۡلِ وَ ہُمۡ بَدَءُوۡکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ ؕ اَتَخۡشَوۡنَہُمۡ ۚ فَاللّٰہُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشَوۡہُ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۳﴾
قَاتِلُوۡہُمۡ یُعَذِّبۡہُمُ اللّٰہُ بِاَیۡدِیۡکُمۡ وَ یُخۡزِہِمۡ وَ یَنۡصُرۡکُمۡ عَلَیۡہِمۡ وَ یَشۡفِ صُدُوۡرَ قَوۡمٍ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿ۙ۱۴﴾
وَ یُذۡہِبۡ غَیۡظَ قُلُوۡبِہِمۡ ؕ وَ یَتُوۡبُ اللّٰہُ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۱۵﴾
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রসূলকে বহিষ্কার করার সংকল্প করেছে? ওরাই প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধে বিবাদ সৃষ্টি করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? আল্লাহই এ বিষয়ে বেশী হকদার যে, তোমরা তাঁকে ভয় কর; যদি তোমরা মু’মিন (বিশ্বাসী) হয়ে থাক।
তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর। তোমাদের হাতে আল্লাহ ওদেরকে শাস্তি দেবেন, ওদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, ওদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং বিশ্বাসীদের হৃদয় প্রশান্ত করবেন।
এবং ওদের হৃদয়ের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তওবা করার তওফীক দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৩-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা এখানে মুসলমানদেরকে পূর্ণমাত্রায় জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করে বলছেন, এই চুক্তি ও কসম ভঙ্গকারী কাফির ওরাই যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দেশান্তর করার পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল যে, তারা তাকে বন্দী করবে বা হত্যা করে ফেলবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করবে। তারা চক্রান্ত করলো, কিন্তু আল্লাহ তাদের চক্রান্ত বানচাল করলেন এবং আল্লাহ উত্তম চক্রান্ত (বানচাল) কারী। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তারা রাসূল (সঃ)-কে ও তোমাদেরকে (মুমিনদেরকে) এ কারণেই বের করেছিল যে, তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছো।”
বিবাদ সৃষ্টি প্রথমে তারাই করেছে। বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে, যেই দিন তারা তাদের বাণিজ্যিক কাফেলাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। তাদের যাত্রীদল রক্ষা পেয়ে গেল। কিন্তু তারা দম্ভ ও অহংকারের সাথে আল্লাহর সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদর প্রান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। এর পূর্ণ ঘটনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
তারা সন্ধি-চুক্তি ভঙ্গ করতঃ তাদের মিত্রদের সাথে মিলিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। খুযাআ’র বিরুদ্ধে বানু বকরকে সাহায্য করে। এই ওয়াদা খেলাফের কারণে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে পদানত করেন। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে।
আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা এই (অপবিত্র) লোকদেরকে ভয় করছো? তোমরা যদি মুমিন হও তবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করা তোমাদের উচিত নয়। তিনি এরই হকদার যে, মুমিনরা শুধুমাত্র তাঁকেই ভয় করবে। অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকেই ভয় কর। আমার প্রতাপ, আমার আধিপত্য, আমার শাস্তি, আমার ক্ষমতা এবং আমার অধিকার অবশ্যই এই যোগ্যতা রাখে যে, সর্বসময়ে প্রতিটি অন্তর আমার ভয়ে কাঁপতে থাকবে। সমুদয় কাজ কারবার আমার হাতে রয়েছে। আমি যা চাই তা করতে পারি এবং করে থাকি। আমার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হতে পারে না।”
মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরয হওয়ার রহস্য বর্ণনা করা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করলে এই কাফির ও মুশরিকদেরকে যে কোন শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু হে মুমিনরা! তিনি তোমাদের হাত দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দিতে চান। তাদেরকে তোমরা নিজেরাই ধ্বংস করে দাও। যাতে তোমাদের মনের ঝাল ও আক্রোশ মিটে যায় এবং তোমাদের মনে প্রশান্তি নেমে আসে ও প্রফুল্লতা লাভ কর। এটা সমস্ত মুমিনের জন্যে সাধারণ। মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা খুযাআ গোত্রকে বুঝানো হয়েছে যাদের উপর কুরায়েশরা সন্ধি-চুক্তি ভঙ্গ করে তাদের মিত্রদের সাথে মিলিত হয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল। (আরবী)-এর সর্বনামটিও তাদেরই দিকে প্রত্যাবর্তিত। ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন। যে, আয়েশা (রাঃ) যখন রাগান্বিত হতেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাকটি ধরে নিতেন এবং (আদর করে) বলতেন- হে উওয়ায়েশ! এ দু’আটি পাঠ করঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার অন্তরের ক্রোধ দূর করুন! আর আমাকে বিভ্রান্তিকর ফিত্না থেকে রক্ষা করুন।”
ঐ আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের মধ্যকার যার প্রতি ইচ্ছা হয় তার তাওবা কবুল করে থাকেন। বান্দাদের জন্যে কল্যাণকর কি তা তিনি ভালরূপেই জানেন। তিনি তাঁর সমস্ত কাজ-কর্মে, সমস্ত শরঈ বিধানে ও সমস্ত হুকুমকরণে অতি নিপুণ ও বিজ্ঞানময়। তিনি যা চান তাই করেন এবং যা ইচ্ছা করেন তাই নির্দেশ দেন। তিনি ন্যায় বিচারক ও হাকিম। তিনি অত্যাচার করা থেকে পবিত্র। তিনি অণু পরিমাণও ভাল বা মন্দ নষ্ট করেন না, বরং তার প্রতিদান দুনিয়ায় ও আখিরাতে দিয়ে থাকেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 13-15
أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُواْ أَيْمَانَهُمْ
Will you not fight a people who have violated their oaths?
Encouragement to fight the Disbelievers, and some Benefits of fighting Them
Allah says;
أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُواْ أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّواْ بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ
Will you not fight a people who have violated their oaths and intended to expel the Messenger,
These Ayat encourage, direct and recommend fighting against the idolators who break the terms of their covenants, those who tried to expel the Messenger from Makkah.
Allah said in other Ayat,
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَـكِرِينَ
And (remember) when the disbelievers plotted against you to imprison you, or to kill you, or to expel you; they were plotting and Allah too was plotting; and Allah is the best of those who plot. (8:30)
يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّـكُمْ أَن تُوْمِنُواْ بِاللَّهِ رَبِّكُمْ
and have driven out the Messenger and yourselves (from your homeland) because you believe in Allah your Lord! (60:1)
and,
وَإِن كَادُواْ لَيَسْتَفِزُّونَكَ مِنَ الاٌّرْضِ لِيُخْرِجُوكَ مِنْهَا
And verily, they were about to frighten you so much as to drive you out from the land. (17:76)
Allah’s statement,
وَهُم بَدَوُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ
while they did attack you first,
refers to the battle of Badr when the idolators marched to protect their caravan. When they knew that their caravan escaped safely, they still went ahead with their intent to fight Muslims out of arrogance, as we mentioned before.
It was also said that these Ayat refer to the idolators breaking the peace agreement with Muslims and aiding Bani Bakr, their allies, against Khuza`ah, the ally of the Messenger of Allah. This is why the Messenger of Allah marched to Makkah in the year of the victory, thus conquering it, all thanks and praise is due to Allah.
Allah said,
أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّوُمِنِينَ
Fight against them so that Allah will punish them by your hands, and disgrace them and give you victory over them, and heal the breasts of a believing people.
This Ayah includes all believers, even though Mujahid, Ikrimah and As-Suddi said that it refers to Khuza`ah.
Concerning the believers, Allah said
Do you fear them!
Allah has more right that you should fear Him if you are believers.
Allah says here, `Do not fear idolators, but fear Me instead, for I am worthy of being feared by the servants due to My might and punishment. In My Hand lies the matter; whatever I will occurs, and whatever I do not will does not occur.’
Allah next said, while ordering the believers and explaining the wisdom of ordaining Jihad against them, all the while able to destroy their enemies with a command from Him,
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّوْمِنِينَ
وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ
and remove the anger of their hearts,
then
وَيَتُوبُ اللّهُ عَلَى مَن يَشَاء
Allah accepts the repentance of whom He wills,
from His servants,
وَاللّهُ عَلِيمٌ
Allah is All-Knowing,
in what benefits His servants,
حَكِيمٌ
All-Wise,
in His actions and statements, whether narrative or legislative.
Allah does what He wills, decides what He wills, and He is the Just Who never wrongs any. Not even the weight of an atom of good or evil is ever neglected with Him, but rather, He compensates for it in this life and the Hereafter.
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] মহান আল্লাহ এখানে মুসলিমদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
[২] এ থেকে দারুন নাদওয়ার সেই পরামর্শ উদ্দেশ্য, যাতে মক্কার সর্দাররা নবী (সাঃ)-কে দেশ হতে বহিষ্কার, কারাবদ্ধ অথবা হত্যা করার ব্যাপারে মন্ত্রণা করেছিল।
[৩] এ থেকে উদ্দেশ্য বদর যুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের সেই আচরণ, যাতে তারা নিজেদের বাণিজ্যিক কাফেলার হিফাযতের জন্যই বের হয়েছিল। কিন্তু কাফেলা রক্ষা পেয়ে পার হয়ে গেছে দেখেও তারা বদর প্রান্তরে মুসলিমদের সাথে লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে লাগল এবং তাঁদেরকে উত্ত্যক্ত করে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালো। যার কারণে পরিশেষে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েই গেল। কিম্বা এ থেকে কাবীলা বানী বাকরের সেই সাহায্য উদ্দেশ্য যা কুরাইশরা তাদের জন্য করেছিল। অথচ তারা রসূল (সাঃ)-এর অঙ্গীকারবদ্ধ মিত্র বানী খুযাআহ গোত্রের উপর হামলা করেছিল। বাস্তবপক্ষে কুরাইশদের এই সাহায্য চুক্তির পরিপন্থী ছিল।
মুসলিমরা যখন দুর্বল ছিল তখন মুশরিকরা তাদের উপর অত্যাচার করত। যার কারণে মুসলিমদের হৃদয় দুঃখ-পীড়িত ও ব্যথিত ছিল। যখন তোমাদের হাতে ওরা খুন হবে এবং অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের ভাগে আসবে, তখন স্বাভাবিকভাবে অত্যাচারিত মুসলিমদের কলিজা ঠান্ডা হবে ও তাদের মনের রাগ ও ক্ষোভ দূর হয়ে যাবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখান থেকে ভাষণটি মুসলমানদের দিকে মোড় নিচ্ছে। তাদেরকে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোনো প্রকার সম্পর্ক, নিকট আত্মীয়তা ও বৈষয়িক সুবিধার কথা একটুও বিবেচনায় না আনার কঠোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ভাষণের এ অংশটির সমগ্র প্রাণসত্তা ও মর্ম অনুধাবন করার জন্য সে সময় যে অবস্থা ও পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল তা আর একবার ভেবে দেখা দরকার। সন্দেহ নেই, ইসলাম এ সময় দেশের একটি বড় অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আরবে এমন কোন বড় শক্তি তখন ছিল না, যে তাকে শক্তি পরীক্ষার আহবান জানাতে পারতো। তবুও এ সময় যে সিদ্ধান্তকর ও চরম বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছিল স্থুল দৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা তাতে অনেক বিপদের ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছিল।
একঃ সমস্ত মুশরিক গোত্রগুলোকে একই সঙ্গে সকল চুক্তি বাতিল করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে দেয়া, মুশরিকদের হজ্জ বন্ধ করে দেয়া, কাবার অভিভাবকের পরিবর্তন এবং জাহেলী রসম রেওয়াজের একেবারেই মুলোৎপাটন-এসবের অর্থ ছিল একই সঙ্গে সারাদেশে আগুন জ্বলে ওঠবে এবং মুশরিক ও মুনাফিকরা নিজেদের স্বার্থ ও গোত্রীয় বৈশিষ্ট্যের হেফাজতের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত প্রবাহিত করতে উদ্ধুদ্ধ হবে।
দুইঃ হজ্জকে শুধুমাত্র তাওহীদবাদীদের জন্য নির্দিষ্ট করা এবং মুশরিকদের জন্য কাবা ঘরের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার অর্থ ছিল, দেশের জনসংখ্যার যে একটি বিরাট অংশ তখনো মুশরিক ছিল, ধর্মীয় কাজ কর্মের জন্য তাদের কাবাঘরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু এ নয়, সমকালীন আরবের অর্থনৈতিক জীবনে কাবার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম এবং কাবার ওপর আরবদের অর্থনৈতিক জীবন বিপুলভাবে নির্ভরশীল ছিল। কাজেই এভাবে কাবার দরজা বন্ধ করার কারণে তারা কাবাঘর থেকে কোন প্রকার অর্থনৈতিক সুবিধাদি লাভ করতে পারবে না।
তিনঃ যারা হোদাইবিয়ার চুক্তি ও মক্কা বিজয়ের পর ঈমান এনেছিলেন তাদের জন্য এটি ছিল কঠিন পরীক্ষার বিষয়। কারণ তাদের অনেক জ্ঞাতি-ভাই, আত্মীয়-স্বজন তখনো মুশরিক ছিল। তাদের মধ্যে এমন অনেক লোকও ছিল পুরাতন ব্যবস্থার বিভিন্ন পদমর্যাদার সাথে যাদের স্বার্থ বিজড়িত ছিল। এখন বাহ্যত আরবের মুশরিকদের গোটা সমাজ ব্যবস্থা ছিন্নভিন্ন করে দেবার যে আয়োজন চলছিল তার মানে ছিল মুসলমানরা নিজেদের হাতেই নিজেদের বংশ, পরিবার ও কলিজার টুকরাদেরকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে এবং তাদের মান, মর্যাদা ও শত শত বছরের প্রতিষ্ঠিত বৈশিষ্ট্যসমূহ চিরতরে খতম করে দেবে।
যদিও বাস্তবে এর মধ্যে থেকে কোন একটা বিপদও কার্যত সংঘটিত হয়নি। দায় মুক্তির ঘোষণার পর সারা দেশে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠার পরিবর্তে বরং দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেসব মুশরিক গোত্র এতদিন নির্লিপ্ত ছিল তাদের এবং বিভিন্ন আমীর, রইস ও রাজন্যবর্গের প্রতিনিধি দল মদীনায় আসতে শুরু করলো। তারা নবী ﷺ এর সামনে ইসলাম গ্রহণ করে আনুগত্যের শপথ নিতে লাগলো। ইসলাম গ্রহণ করার পর নবী ﷺ তাদের প্রত্যেককে নিজের পদমর্যাদায় বহাল রাখলেন। কিন্তু এ নতুন নীতি ঘোষণা করার সময় তার এ ফলাফলকে কেউ আগাম অনুমান করতে পারেনি। তাছাড়া এ ঘোষণার সাথে সাথেই যদি মুসলমানরা শক্তি প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়িত করার জন্য পুরোপুরি তৈরী না হয়ে যেতো, তাহলে সম্ভবত এ ধরনের ফলাফল দেখাই যেতো না। কাজেই এ সময় মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করার উদ্দীপনা ও আবেগ সৃষ্টি করা এবং এ নীতি কার্যকর করতে গিয়ে তাদের মনে যেসবআশঙ্কা দেখা দিয়েছিল সেগুলো দূর করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। এ সঙ্গে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য তাদের কোন জিনিসের পরোয়া না করা উচিত। এ বক্তব্যই আলোচ্য ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
এখানে একটি সম্ভাবনার দিকে হালকা ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এটি বাস্তব ঘটনার রূপে আত্মপ্রকাশ করে। মুসলমানরা মনে করেছিল, এ ঘোষণার সাথে সাথেই দেশে রক্তের নদী বয়ে যাবে। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য ইশারা-ইঙ্গিতে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ কঠোর নীতি অবলম্বন করার কারণে যেখানে একদিকে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে লোকদের তাওবার সৌভাগ্য লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু এ ইঙ্গিতকে খুব বেশী শানিত ও স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ এর ফলে একদিকে মুসলমানদের যুদ্ধ প্রস্তুতি স্তিমিত হয়ে পড়তো এবং অন্যদিকে যে হুমকিটি মুশরিকদেরকে তাদের অবস্থানের নাজুকতার কথা ভাবার এবং পরিশেষে তাদের ইসলামী ব্যবস্থার মধ্যে বিলীন হবার জন্য উদ্বুদ্ধ করে ছিল তা হালকা ও নিষ্প্রভ হয়ে যেতো।