Book#602

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

(Book# 114/٣٢٨)-৬০২
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
২৩-২৪ নং আয়াত:-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ابَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء

হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতৃগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তাহলে তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না।
The Prohibition of taking the Idolators as Supporters, even with Relatives

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡۤا اٰبَآءَکُمۡ وَ اِخۡوَانَکُمۡ اَوۡلِیَآءَ اِنِ اسۡتَحَبُّوا الۡکُفۡرَ عَلَی الۡاِیۡمَانِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّہُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۳﴾
قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡہَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَہَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَہَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ جِہَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰہُ بِاَمۡرِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿٪۲۴﴾

হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতৃগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তাহলে তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবক করবে, তারাই হবে অত্যাচারী।

বল, ‘তোমাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা, স্ত্রী ও আত্মীয়গণ, অর্জিত ধনরাশি এবং সেই ব্যবসা-বাণিজ্য তোমরা যার অচল হওয়ার ভয় কর এবং প্রিয় বাসস্থানসমূহ যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রসূল ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর আদেশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বস্তুতঃ আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।’

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন যারা কুফরীকে ভালবাসে, কুফরীকে প্রাধান্য দেয় যদিও তারা অতি নিকটাত্মীয় হয়। যদিও আয়াতগুলো মক্কায় অবস্থানরত মুসলিমদেরকে হিজরত করা ও কাফিরদের দেশ ত্যাগ করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে নাযিল হয়েছে কিন্তু আয়াতটি কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য যাদের অবস্থা এমন হবে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَادَّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه۫ وَلَوْ كَانُوْآ اٰبَا۬ءَهُمْ أَوْ أَبْنَا۬ءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيْرَتَهُمْ)

“যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে তুমি এমন লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা তাদের পুত্র অথবা তাদের ভাই অথবা তাদের জাতি-গোষ্ঠী হোক না কেন।”(সূরা মুজাদালাহ ৫৮:২২)

যারা এরূপ ব্যক্তিদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নেবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন ধমক দিয়ে যালেম বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: সে ব্যক্তিও তাদের মত মুশরিক যে ব্যক্তি শির্ককে পছন্দ করে। (কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর)

(أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوْلِه)

‘যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয়’ অর্থাৎ যদি আয়াতে উল্লিখিত আটটি জিনিসের কোন একটি তোমাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির অপেক্ষা কর। অর্থাৎ তাদের ভালবাসা ও মোহে যদি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমান এবং জিহাদ করা বর্জন কর তাহলে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির সম্মুখিন হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ পূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই। (সহীহ বুখারী হা: ১৪)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যখন তোমরা বাইয়ে ঈনাহ বা সূদভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় শুরু করবে, গরুর লেজ ধারণ করে থাকবে, অর্থাৎ কৃষি কাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে আর জিহাদ ছেড়ে দেবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে লাঞ্ছনায় পতিত করবেন; আর এ লাঞ্ছনা দূর হবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজেদের সঠিক দীনের দিকে ফিরে আসবে। (আবূ দাঊদ হা: ৩৪৬২, সহীহ)

হাদীসে এসেছে: শয়তান আদম সন্তানের তিনটি পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে- ১. ইসলাম গ্রহণ করতে বাধা দিয়ে বলে: তুমি তোমার ও বাপ-দাদার ধর্ম বর্জন করো না। কিন্তু আদম সন্তান তার কথা না শুনে ইসলাম গ্রহণ করে। ২. হিজরত করতে বাধা দিয়ে বলে: তুমি কি তোমার সম্পদ ও পরিবার ত্যাগ করবে? কিন্তু তার কথা না শুনে আদম সন্তান হিজরত করে। ৩. জিহাদের রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং বলে: তুমি জিহাদ করবে? তোমার পরিবারকে অন্যজনে বিবাহ করে নেবে, তাহলে তোমার সম্পদ বণ্টন করে নেবে। কিন্তু আদম সন্তান তার কথা না শুনে জিহাদ করে। আল্লাহ তা‘আলার ওপর ওয়াজিব এ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। (নাসায়ী হা: ৩১৩৪, মুসনাদ আহমাদ হা: ১৫৫২৮, সহীহ)

সুতরাং একজন মু’মিন কখনো আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ভালবাসার ওপর নিজেকে ও নিজের পিতা-মাতাসহ আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দিতে পারে না। যদি তাদের ভালবাসা দীনের পথে চলতে ও নির্দেশ মানতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সে পূর্ণ মু’মিন বলে বিবেচিত হবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. যারা কুফরীকে প্রাধান্য দেয় তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা আবশ্যক যদিও নিকটাত্মীয় হয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়ে আটটি জিনিস অধিক প্রিয় হলে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি অবধারিত।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 23-24

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ابَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء

The Prohibition of taking the Idolators as Supporters, even with Relatives.

The Prohibition of taking the Idolators as Supporters, even with Relatives

Allah says;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ابَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء إَنِ اسْتَحَبُّواْ الْكُفْرَ عَلَى الاِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

O you who believe! Take not as supporters your fathers and your brothers if they prefer disbelief to belief. And whoever of you befriends them, then he is one of the wrongdoers.

Allah commands shunning the disbelievers, even if they are one’s parents or children, and prohibits taking them as supporters if they choose disbelief instead of faith.

Allah warns,

لااَّ تَجِدُ قَوْماً يُوْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الااٌّخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَأدَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُواْ ءَابَأءَهُمْ أَوْ أَبْنَأءَهُمْ أَوْ إِخْوَنَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُوْلَـيِكَ كَتَبَ فِى قُلُوبِهِمُ الااِيمَـنَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّـتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الااٌّنْهَـرُ

You will not find any people who believe in Allah and the Last Day, making friendship with those who oppose Allah and His Messenger, even though they were their fathers or their sons or their brothers or their kindred (people). For such He has written (predetermined) faith in their hearts, and strengthened them with a Ruh (proof, light and true guidance) from Himself. And He will admit them to Gardens (Paradise) under which rivers flow. (58:22)

Al-Hafiz Al-Bayhaqi recorded that Abdullah bin Shawdhab said,

“The father of Abu Ubaydah bin Al-Jarrah was repeatedly praising the idols to his son on the day of Badr, and Abu Ubaydah kept avoiding him. When Al-Jarrah persisted, his son Abu Ubaydah headed towards him and killed him. Allah revealed this Ayah in his case,

لااَّ تَجِدُ قَوْماً يُوْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الااٌّخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَأدَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ

You will not find any people who believe in Allah and the Last Day, making friendship with those who oppose Allah and His Messenger.” (58:22)

Allah commanded His Messenger to warn thosقُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡہَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَہَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَہَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ جِہَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰہُ بِاَمۡرِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿٪۲۴﴾ e who prefer their family, relatives or tribe to Allah, His Messenger and Jihad in His cause

قُلْ إِن كَانَ ابَاوُكُمْ وَأَبْنَأوُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا

Say:If your fathers, your sons, your brothers, your wives, your kindred, the wealth that you have gained, (amassed and collected),

وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا

the commerce in which you fear a decline, and the dwellings in which you delight,

and prefer and love because they are comfortable and good. If all these things,

أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ

are dearer to you than Allah and His Messenger, and striving hard and fighting in His cause, then wait…

for what will befall you of Allah’s punishment and torment,

حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

until Allah brings about His decision. And Allah guides not the people who are rebellious.

Imam Ahmad recorded that Zuhrah bin Ma`bad said that his grandfather said,

“We were with the Messenger of Allah, while he was holding the hand of Umar bin Al-Khattab. Umar said, `By Allah! You, O Messenger of Allah, are dearer to me than everything, except for myself.’

The Messenger of Allah said,

لَاا يُوْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِه

None among you will attain faith until I become dearer to him than even himself.

Umar said, `Verily, now, you are dearer to me than myself, by Allah!’

The Messenger of Allah said,
الاْنَ يَا عُمَر
(Now, O `Umar)!”

Al-Bukhari also collected this Hadith.

Imam Ahmad and Abu Dawud (this is the version of Abu Dawud) recorded that Ibn Umar said,

“I heard the Messenger of Allah saying,

إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ بِأَذْنَابِ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْكُمْ ذُلاًّ لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُم

If you transact in `Iynah (a type of Riba), follow the tails of cows (tilling the land), become content with agriculture and abandoned Jihad, Allah will send on you disgrace that He will not remove until, you return to your religion.
মোতাহার: content://com.android.chrome.FileProvider/images/screenshot/16470576001741951572679.jpg

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে মুমিনদেরকে নিষেধ করছেন, যদিও তারা তাদের মাতা, পিতা, ভাই, বোন প্রভৃতি হাক না কেন, যদি তারা ইসলামের উপর কুফরীকে পছন্দ করে নেয়। অন্য আয়াতে রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী!) যারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাদেরকে তুমি পাবে না যে, তারা বন্ধুত্ব রাখবে এমন লোকদের সাথে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাথে শত্রুতা রাখে, যদিও তারা তাদের পিতা হয় বা ছেলে হয় অথবা ভাই হয় কিংবা স্বগোত্রীয় হয়। এরা তারাই, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং স্বীয় বিশেষ রুহ দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন, তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবিষ্ট করবেন যেগুলোর নীচ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে।” (৫৮:২২)

ইমাম বায়হাকী (রঃ) স্বীয় হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, বদরের যুদ্ধের দিন আবু উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ (রাঃ)-এর পিতা তার সামনে এসে মূর্তির প্রশংসা করতে শুরু করে দেয়। তিনি তাকে বারবার বিরত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে বেড়েই চলে। তখন পিতা-পুত্রে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আবু উবাইদাহ (রাঃ) স্বীয় পিতাকে হত্যা করে দেন। তখন আল্লাহ তাআলা (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে আদেশ করছেন যে, যারা তাদের পরিবারবর্গকে, আত্মীয়-স্বজনকে এবং স্বগোত্রীয়দেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর প্রাধান্য দেয় তাদেরকে যেন তিনি ভীতি প্রদর্শন করে বলেনঃ “যদি তোমাদের পিতাগণ, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐ সব ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছে, আর ঐ ব্যবসা যাতে তোমরা মন্দা পড়বার আশংকা করছো, (যদি এই সব) তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর চেয়ে, তবে তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো এই পর্যন্ত যে, আল্লাহ নিজের নির্দেশ পাঠিয়ে দেন, আর আল্লাহ আদেশ অমান্যকারীদেরকে তাদের উদ্দিষ্ট স্থল পর্যন্ত পৌঁছান না।”

মা’বাদ (রাঃ) তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (তাঁর দাদা) বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর সাথে পথ চলছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) উমার (রাঃ)-এর হাত ধরেছিলেন। উমার (রাঃ) তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর কসম! আপনি আমার নিকট আমার প্রাণ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে প্রিয়তম।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমাদের কেউই (পূর্ণ) মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত আমি তার কাছে তার প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয় না হই।” উমার (রাঃ) তখন বললেনঃ “আপনি এখন আমার কাছে আমার জীবন থেকেও প্রিয়।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “হে উমার! তুমি এখন (পূর্ণ মুমিন হলে)।” (ইমাম বুখারী (রঃ) একাই এ হাদীসটি তাখরীজ করেছেন)

সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তোমাদের কেউই (পূর্ণ) মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান এবং সমস্ত লোক অপেক্ষা প্রিয়তম না হই।” মুসনাদে আহমাদে ও সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা ‘আয়ন’-এর ক্রয়-বিক্রয় শুরু করবে, বলদ-গাভীর লেজ ধারণ কবে এবং জিহাদ ছেড়ে দেবে তখন আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে লাঞ্ছনায় পতিত করবেন, আর তা দূর হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে।”

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

এটা সেই বিষয় যে ব্যাপারে কুরআন কারীমে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ৩:২৮, ৩:১১৮, সূরা মায়িদাহ ৫:৫১, সূরা মুজাদালাহ ৫৮:২২ নং আয়াত দ্রষ্টব্য) এখানে জিহাদ ও হিজরতের আলোচনায় আনুষঙ্গিকভাবে (যেহেতু এ বিষয়ের গুরুত্ব স্পষ্ট তাই) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, জিহাদ ও হিজরতের ব্যাপারে তোমাদের বাপ-ভাই ইত্যাদির মহব্বত যেন বাধা সৃষ্টি না করে। কেননা, তারা যদি এখনো পর্যন্ত কাফের হয়, তাহলে তারা তোমাদের ভালোবাসার পাত্র হতেই পারে না। বরং তারা তোমাদের শত্রু। আর যদি তোমরা তাদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখ, তাহলে স্মরণ রেখো যে, তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এই আয়াতেও উপরোক্ত বিষয়কে বড় তাকীদের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। عَشِيرَة শব্দটি বহুবচনমূলক বিশেষ্য, এর অর্থঃ সেই নিকটতম আত্মীয়-স্বজন যাদের সাথে দিন-রাত বাস করে মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়। অর্থাৎ, স্ববংশ ও স্বগোত্রের লোকজন। اقتراف অর্থ হল উপার্জন করা। تجارة লাভের উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা)-কে বলা হয়। كساد অচল হওয়াকে বলা হয়; অর্থাৎ, পণ্য মজুদ থাকে, কিন্তু ক্রয়-বিক্রয় হয় না। কিংবা পণ্যের প্রয়োজন সময় পার হয়ে গেছে, যার কারণে লোকের কাছে তার চাহিদা থাকে না। مَسَاكن থেকে উদ্দেশ্য হল সেই বাসস্থান বা ঘর-বাড়ি, যা মানুষ শীত-গ্রীষ্ম ও ঝড়-বৃষ্টির কষ্ট, শত্রু ও হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হতে বাঁচা ও আশ্রয় নেওয়ার জন্য, ইজ্জত রক্ষা করে বসবাস করা এবং নিজ সন্তান-সন্ততির হিফাযতের জন্য তৈরী করে থাকে। এই সমস্ত জিনিস স্ব-স্ব স্থানে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ সবের গুরুত্ব ও উপকারিতাও অনস্বীকার্য। মানুষের হৃদয়ে এ সবের ভালোবাসাও প্রকৃতিগত ভালোবাসা এবং যা নিন্দনীয় নয়। কিন্তু এ সবের ভালোবাসা যদি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ভালোবাসা থেকে অধিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে এ কথা আল্লাহর নিকট কঠিনভাবে অপছন্দনীয় এবং তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ। আর এ কাজ এমন অবাধ্যতা যার কারণে মানুষ আল্লাহর হিদায়াত হতে বঞ্চিত হতে পারে; যেমন আয়াতের শেষাংশে হুমকিমূলক শব্দ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে। হাদীসের মধ্যে নবী (সাঃ)ও এই বিষয়টিকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যেমন, একদা উমার (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার জান ছাড়া সমস্ত বস্তু থেকে অধিক প্রিয়।’ তিনি বললেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমি কারো নিকট তার জান থেকে প্রিয় না হয়েছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মু’মিন হতে পারে না।” উমার (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার জান থেকেও প্রিয়।’ তিনি বললেন, “হে উমার! এখন (তুমি পূর্ণ মু’মিন)।” (বুখারীঃ কসম ও নযর অধ্যায়) এক দ্বিতীয় বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, “তাঁর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয়তম হয়েছি।” (বুখারীঃ ঈমান অধ্যায়, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়) এক অন্য হাদীসে জিহাদের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ (কোন জিনিসকে কিছু দিনের জন্য ধারে বিক্রয় করে পুনরায় সেই জিনিসকে কম দামে ক্রয় করে নেওয়ার) ব্যবসা করবে এবং গরুর লেজ ধরে কেবল চাষ-বাস নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে আর জিহাদ ত্যাগ করে বসবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর এমন হীনতা চাপিয়ে দেবেন; যা তোমাদের হৃদয় থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত দূর করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের দ্বীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছ।”

(আহমাদ ২/২৮,৪২, ৮৪, আবু দাঊদ ৩৪৬২নং, বাইহাকী ৫/৩১৬)

Leave a Reply