Book #615

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

(Book# 615)
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৪৬-৪৮ নং আয়াত:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 46-48

لاأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً
অবশ্যই তারা সে জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করত,
Certainly, they would have made some preparation for it,

وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَہٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِہَ اللّٰہُ انۡۢبِعَاثَہُمۡ فَثَبَّطَہُمۡ وَ قِیۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِیۡنَ ﴿۴۶﴾
আর যদি তারা বের হতে চাইত তবে অবশ্যই তারা সে জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহ্‌ অপছন্দ করলেন। কাজেই তিনি তাদেরকে অলসতার মাধ্যমে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে বলা হল, ‘যারা বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।‘
And if they had intended to go forth, they would have prepared for it [some] preparation. But Allah disliked their being sent, so He kept them back, and they were told, “Remain [behind] with those who remain.”

لَوۡ خَرَجُوۡا فِیۡکُمۡ مَّا زَادُوۡکُمۡ اِلَّا خَبَالًا وَّ لَا۠اَوۡضَعُوۡا خِلٰلَکُمۡ یَبۡغُوۡنَکُمُ الۡفِتۡنَۃَ ۚ وَ فِیۡکُمۡ سَمّٰعُوۡنَ لَہُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌۢ بِالظّٰلِمِیۡنَ ﴿۴۷﴾

যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে তোমাদের ফাসাদই বৃদ্ধি করত এবং ফিৎনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটোছুটি করত। আর তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শুনার লোক রয়েছে । আর আল্লাহ্‌ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত।
Had they gone forth with you, they would not have increased you except in confusion, and they would have been active among you, seeking [to cause] you fitnah. And among you are avid listeners to them. And Allah is Knowing of the wrongdoers.

لَقَدِ ابۡتَغَوُا الۡفِتۡنَۃَ مِنۡ قَبۡلُ وَ قَلَّبُوۡا لَکَ الۡاُمُوۡرَ حَتّٰی جَآءَ الۡحَقُّ وَ ظَہَرَ اَمۡرُ اللّٰہِ وَ ہُمۡ کٰرِہُوۡنَ ﴿۴۸﴾
অবশ্য তারা আগেও ফিৎনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তারা আপনার বহু কাজে ওলট-পালট করেছিল, অবশেষে সত্যের আগমন ঘটল এবং আল্লাহ্‌র হুকুম বিজয়ী হল , অথচ তারা ছিল অপছন্দকারী।
They had already desired dissension before and had upset matters for you until the truth came and the ordinance of Allah appeared, while they were averse.

৪৬-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে নবী! তাদের ওযর যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তার বাহ্যিক প্রমাণ এটাও যে, তাদের যুদ্ধে গমনের ইচ্ছা থাকলে কমপক্ষে তারা যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো। কিন্তু তারাতো যুদ্ধে গমনের ঘোষণা ও নির্দেশের পরেও এবং দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও হাতের উপর হাত রেখে বসে রয়েছে। তারা একটা খড়কুটাকেও এদিক থেকে ওদিকে নিয়ে যায়নি। অবশ্য তাদের তোমাদের সাথে বের হওয়াকে আল্লাহ তা’আলা পছন্দও করেননি। এ কারণেও তিনি তাদেরকে পিছনে সারিয়ে রেখেছেন। আর স্বাভাবিকভাবে তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন, যুদ্ধ থেকে দূরে অবস্থানকারীদের সাথে তোমরাও অবস্থান কর। হে মুসলিমরা! তোমাদের সাথে তাদের বের হওয়া আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ এই যে, তারা তো ভীরু ও বড় রকমের কাপুরুষ। যুদ্ধ করার সাহস তাদের মোটেই নেই। তোমাদের সাথে গেলেও তারা দূরে দূরেই থাকতো। তা ছাড়া তারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দিতো। তারা এদিকের কথা ওদিকে এবং ওদিকের কথা এদিকে লাগিয়ে দিয়ে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি করতে এবং কোন একটা নতুন ফিত্না খাড়া করে তোমাদের অবস্থাকে জটিল করে তুলতো। তোমাদের মধ্যে এমন লোকও বিদ্যমান রয়েছে যারা ঐসব লোককে মান্য করে চলে, তাদের মতামত সমর্থন করে এবং তাদের কার্যক্রমকে সুনজরে দেখে থাকে। তারা ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে বলে ঐসব লোকের দুঙ্কার্যের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে বে-খবর থাকে। মুমিনদের পক্ষে এর ফল খুবই খারাপ হয়। তাদের পরস্পরের মধ্যে অনাচার ও ঝগড়া-বিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে মুমিনগণ! ঐ সব লোকের গুপ্তচরও তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, যারা তোমাদের খুঁটিনাটি সংবাদও তাদের কাছে পৌঁছিয়ে থাকে। কিন্তু এ অর্থ করাতে ঐ সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা আয়াতের শুরুতে ছিল। অর্থাৎ ঐ লোকদের তোমাদের সাথে বের হওয়া এ জন্যেও অপছন্দনীয় যে, তোমাদের মধ্যে এমন কতকগুলো লোকও রয়েছে যারা তাদের কথা মেনে থাকে। এটা তো খুবই সঠিক কথা। কিন্তু তাদের বের না হওয়ার কারণের জন্যে গোয়েন্দাগিরির কোন বিশেষত্ব থাকতে পারে না। এ জন্যেই কাতাদা (রঃ) প্রমুখ মুফাসসিরদের উক্তি এটাই।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, অনুমতি প্রার্থনাকারীদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল এবং জাদ ইবনে কায়েসও ছিল। এরাই ছিল বড় বড় নেতা ও প্রভাবশালী মুনাফিক। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করে দেন। যদি তারা মুসলিমদের সাথে বের হতো তবে তাদের অনুগত লোকেরা সময় সুযোগে তাদের সাথে যোগ দিয়ে মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করতো। মুহাম্মাদী সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে যেতো। কেননা, এই মুনাফিকরা বাহ্যিক সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল। কিছু কিছু মুসলিম তাদের প্রকৃত অবস্থা অবহিত ছিল না। তাই তারা তাদের বাহ্যিক ইসলাম ও মুখরোচক কথায় পাগল ছিল এবং তখন পর্যন্ত তাদের অন্তরে তাদের প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান ছিল। এটা সত্য কথা যে, তাদের এ অবস্থা মুনাফিকদের আসল অবস্থা অবগত না হওয়ার কারণেই ছিল। পূর্ণ জ্ঞান তো আল্লাহ তা’আলারই রয়েছে। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত খবরই রাখেন। তিনি অদৃশ্যের সংবাদ রাখেন বলেই মুসলিমদেরকে বলছেন- হে মুসলিমরা! এই মুনাফিকদের যুদ্ধে গমন না করাকে তোমরা গনীমত মনে কর। যদি তারা তোমাদের সাথে থাকতো তবে ফিত্না-ফাসাদ সৃষ্টি করতো। তারা নিজেরাও ভাল কাজ করতো না এবং তোমাদেরকেও করতে দিতো না।

এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তবে তারা আবার নতুনভাবে ঐ কাজই করবে যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যদি তাদের অন্তরে কোন কল্যাণ নিহিত থাকতো তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনিয়ে দিতেন, আর যদি তিনি তাদেরকে শুনাতেনও তবে তারা তাচ্ছিল্যভরে ফিরে যেতো।” আর এক স্থানে আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি আমি তাদের উপর ফরয করে দিতাম (দিয়ে বলতাম)- তোমরা আত্মহত্যা কর কিংবা নিজেদের দেশ থেকে বেরিয়ে যাও, তবে অল্প কয়েকজন ব্যতীত এই আদেশ কেউই পালন করতো না, আর যদি তারা তাদেরকে যেরূপ উপদেশ দেয়া হয় তদনুযায়ী কাজ করতো, তবে তাদের জন্যে উত্তম হতো এবং ঈমানকে অধিকতর দৃঢ়কারী হতো। আর এ অবস্থায় আমি তাদেরকে বিশেষ করে আমার পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার প্রদান করতাম। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করতাম।” এ ধরনের আয়াত আরো অনেক রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-এর অন্তরে মুনাফিকদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক করার জন্যে বলেন, হে নবী! তুমি কি ভুলে গেছ যে, এই মুনাফিকরা বহুদিন ধরে ফিত্না ও ফাসাদের অগ্নি প্রজ্বলিত করতে রয়েছে এবং তোমার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার সব রকমের তদবীর চালিয়েছে। মদীনায় তোমার প্রতিষ্ঠা লাভের পরই সমস্ত আরব এক হয়ে বিপদের বৃষ্টি তোমার উপর বর্ষণ করেছে। মদীনার ইয়াহূদী ও মুনাফিকরা মদীনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে দেয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এক দিনেই তাদের সকলের কামান ভেঙ্গে চুরমান করে দেন। তিনি তাদের জোড় ঢিলা করে দেন এবং তাদের উত্তেজনা ঠাণ্ডা করে দেন। বদরের যুদ্ধ তাদেরকে হতবাক করে দেয় এবং তাদের মনের কামনা ও বাসনা মুছে ফেলেন অর্থাৎ তারা তাদের সফল হওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে যায়। মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তো পরিষ্কারভাবে বলে দেয়- “এ লোকগুলো এখন আমাদের ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এখন আমাদের এ ছাড়া কোন উপায় নেই যে, আমরা বাহ্যতঃ ইসলামের অনুকূলে থাকবো, কিন্তু অন্তরে যা আছে তা তো আছেই। সময় সুযোগ আসলে দেখা যাবে এবং দেখানো যাবে।” তারপর যতোই সত্যের উন্নতি হতে থাকে এবং তাওহীদ বিকাশ লাভ করতে থাকে, ততোই তারা হিংসার আগুনে দগ্ধীভূত হতে থাকে। অবশেষে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর কালেমার বিজয় ডংকা বেজে ওঠে। আর এদিকে এই মুনাফিকদের পেট ফুলতে থাকে এবং এটা তাদের কাছে খুবই অপ্রীতিকর বোধ হয়।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৪৬-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে সেই সকল মুনাফিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যারা মিথ্যা ওজর দেখিয়ে যুদ্ধে শরীক না হওয়ার অনুমতি চাচ্ছিল। সত্যিকারেই যদি জিহাদে যাওয়ার নিয়ত থাকত তাহলে কিছু না কিছু সরঞ্জামাদি তারা প্রস্তুত রাখত। তারপরেও যদি তারা জিহাদে বের হত- তাহলে মুসলিমদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত।

اَوْضَعُوْا এর মূল اِيْضَاعٌ শব্দের অর্থ হল: নিজ সওয়ারীকে দ্রুতবেগে দৌড়ানো। অর্থাৎ চোগলখোরী প্রভৃতি দ্বারা তোমাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ছুটাছুটি করত এবং তাতে তারা কোন প্রকার প্রচেষ্টার কমতি করত না। আর এখানে ‘ফেতনা’ থেকে উদ্দেশ্য আপোষের মাঝে বিচ্ছিন্নতা, শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুসলিম সমাজের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়ানক হচ্ছে মুনাফিকরা।
২. মুনাফিকদের কাজ হল সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নিজেদেরকে ভাল দাবি করা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] যারা মিথ্যা ওজর পেশ করে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি লাভ করেছিল এ কথা সেই মুনাফিক্বদের সম্বন্ধে বলা হচ্ছে যে, যদি তারা জিহাদে যাবার ইচ্ছা রাখত, তাহলে অবশ্যই তার জন্য প্রস্তুতি নিত।

[২] فثَبَّطَهُم শব্দের অর্থ হল, তাদেরকে বিরত রাখলেন। অর্থাৎ, পিছনে থেকে যাওয়া তাদের কাছে পছন্দনীয় বানিয়ে দেওয়া হল। সুতরাং তারা অলস হয়ে গেল এবং মুসলিমদের সাথে বের হল না। (আইসারুত্ তাফাসীর) উদ্দেশ্য হল যে, তাদের বদমায়েশি ও দুরভিসন্ধি সম্পর্কে আল্লাহ অবগত ছিলেন। এই জন্য আল্লাহর তকদীরগত ইচ্ছা এটাই ছিল যে, তারা না যাক।

[৩] এটা সেই আল্লাহর ইচ্ছার প্রকাশরূপ আদেশ, যা তকদীরে লেখা ছিল। অথবা অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়ে রসূল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঠিক আছে! তোমরা নারী, শিশু, রোগী ও বৃদ্ধদের দলে শামিল হয়ে তাদের মত ঘরে বসে থাক।
** [১] এই মুনাফিক্বরা যদি মুসলিম সৈন্যদলে শরীক হত, তাহলে এরা ভুল রায় ও পরামর্শ দিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির কারণ হত।

[২] إيضاع শব্দের অর্থ হল নিজ সওয়ারীকে দ্রুতবেগে দৌড়ানো। অর্থাৎ চুগলখোরী প্রভৃতি দ্বারা তোমাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করায় ছুটাছুটি করত এবং তাতে তারা কোন একটি মিনিটও বরবাদ করত না। আর এখানে ‘ফিতনা’ থেকে উদ্দেশ্য আপোসের মাঝে বিচ্ছিন্নতা, শত্রুতা ও বিদ্বেষ।

[৩] এ থেকে জানা যায় যে, মুনাফিক্বদের গোয়েন্দাগিরী করার জন্য কিছু মানুষ মু’মিনদের সাথেও সৈন্যদলে শামিল ছিল, যারা মুনাফিক্বদের নিকট মুসলিমদের খবর পৌঁছে দিত।

*** [১] এই জন্য অতীত ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে তোমাকে অবহিত করা হয়েছে। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই মুনাফিক্বদল যে তোমাদের সাথে যায়নি তাতে তোমাদের জন্য মঙ্গলই হয়েছে। নচেৎ যদি তারা যেত, তাহলে তাদের কারণে এই সকল বিপর্যয় সৃষ্টি হত।

[২] অর্থাৎ, এই মুনাফিক্বরা যখন থেকে তুমি মদীনায় আমগন করেছ তখন থেকেই তোমার বিরুদ্ধে ফিতনা সৃষ্টি করতে এবং তোমার (ক্ষতি সাধনের) জন্য কর্মসমূহ উলট-পালট করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। পরিশেষে বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা তোমাকে বিজয় ও আধিপত্য দান করলেন; যা তাদের জন্য অসহনীয় ও অপছন্দনীয় ছিল। অনুরূপ উহুদ যুদ্ধেও ঐ মুনাফিক্বদল রাস্তা থেকেই ফিরে এসে সমস্যা সৃষ্টি করার এবং তারপরও প্রত্যেক জায়গাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেই আসছিল। পরিশেষে মক্কা জয় হল এবং অধিকাংশ আরববাসীরা মুসলমান হয়ে গেল। যার কারণে তারা আক্ষেপ ও আফসোসে হাত মলতে থেকে গেল।

তাফসীরে‌ আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ তারা চিন্তাশক্তি ও মতামতকে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে খাটিয়েছিল। তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছে আপনার দ্বীনকে অপমানিত করতে। যেমন প্রথম যখন আপনি মদীনায় আগমন করেছিলেন তখন আপনার বিরুদ্ধে ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারপর যখন বদরের যুদ্ধে মুসলিমরা জয়লাভ করল তখন আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ও তার সার্থীরা বলল, এ কাজ তো দেখি পথে উঠে এসেছে। তারপর তারা প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর যখনই কোথাও মুসলিমদের বিজয় দেখে তখনই তা তাদেরকে পীড়া দেয়। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ “আল্লাহর আদেশ বিজয় হল”, যাতে মুনাফিকরা মর্মপীড়া বোধ করছিল। এর দ্বারা ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, জয় বিজয় সবই আল্লাহর আয়ত্তে। যেমন ইতিপূর্বের যুদ্ধসমূহে আপনাকে জয়ী করা হয়েছে, তেমনি এ যুদ্ধেও জয়ী হবেন এবং মুনাফিকদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে পড়বে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

মনের তাগিদ ছাড়া অনিচ্ছায় যুদ্ধযাত্রা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ছিল না। কারণ তাদের মধ্যে যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করার প্রেরণা ও সংকল্প অনুপস্থিত ছিল এবং ইসলামের বিজয়ের জন্য প্রাণপাত করার কোন ইচ্ছাই তাদের ছিল না তখন শুধুমাত্র মুসলমানদের সামনে লজ্জিত হবার ভয়ে অসন্তুষ্ট মনে অথবা কোন অনিষ্ট করার উদ্দেশ্যে তারা জোরেশোরে এগিয়ে আসতো এবং এটা সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতো। পরবর্তী আয়াতে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 46-48

لاأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً

Certainly, they would have made some preparation for it,

Exposing Hypocrites

Allah said,

وَلَوْ أَرَادُواْ الْخُرُوجَ

And if they had intended to march out,

with you to participate in Jihad,

لاأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً

certainly, they would have made some preparation for it,

they would have prepared for such task,

وَلَـكِن كَرِهَ اللّهُ انبِعَاثَهُمْ

but Allah was averse to their being sent forth,

Allah hated that they should go with you,

فَثَبَّطَهُمْ

so He made them lag behind, and stay away (from Jihad),

وَقِيلَ اقْعُدُواْ مَعَ الْقَاعِدِينَ

and it was said (to them):”Sit you among those who sit (at home).”

as a part of what was decreed for them (not that He legislated that they stay behind).

Allah then explained why He disliked that they march with the believers, saying.

لَوْ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلاَّ خَبَالاً

Had they marched out with you, they would have added to you nothing except disorder,

because they are cowards and failures,

ولَاوْضَعُواْ خِلَلَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ

and they would have hurried about in your midst sowing sedition among you,

They would have rushed to spread false stories, hatred and discord among you,

وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ

and there are some among you who would have listened to them.

who would have obeyed them, given preference to their speech and words and asked them for advice, unaware of the true reality of these hypocrites. This might have caused corruption and great evil between the believers.

Muhammad bin Ishaq said,

“Those who sought permission (from the Messenger to lag behind) included some of the chiefs, such as Abdullah bin Ubayy bin Salul and Al-Jadd bin Qays, who were masters of their people. Allah also made them lag behind because He knew that if they went along with the Messenger they would sow sedition in his army.”

There were some in the Prophet’s army who liked these chiefs and were ready to obey them, because they considered them honorable,
وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ
(and there are some among you who would have listened to them).

Allah next reminds of His perfect knowledge, saying,

وَاللّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ

And Allah is the All-Knower of the wrongdoers.

Allah says that He knows what occurred, what will occur and if anything would have occurred, how it would occur, such as,
لَوْ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلاَّ خَبَالاً
(Had they marched out with you, they would have added to you nothing except disorder), indicating what they would have done had they marched, even though they did not.

Allah said in similar Ayat,

وَلَوْ رُدُّواْ لَعَـدُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَـذِبُونَ

But if they were returned (to the world), they would certainly revert to that which they were forbidden. And indeed they are liars. (6:28)

وَلَوْ عَلِمَ اللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لَاسْمَعَهُمْ وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعْرِضُونَ

Had Allah known of any good in them, He would indeed have made them listen; and even if He had made them listen, they would but have turned away with aversion (to the truth). (8:23)

and,

وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُواْ مِن دِيَـرِكُمْ مَّا فَعَلُوهُ إِلاَّ قَلِيلٌ مِّنْهُمْ وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُواْ مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْراً لَّهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتاً

وَإِذاً لاّتَيْنَـهُمْ مِّن لَّدُنَّـا أَجْراً عَظِيماً

وَلَهَدَيْنَـهُمْ صِرَطاً مُّسْتَقِيماً

And if We had ordered them (saying), “Kill yourselves (the innocent ones kill the guilty ones) or leave your homes,” very few of them would have done it; but if they had done what they were told, it would have been better for them, and would have strengthened their conviction.

And indeed We would then have bestowed upon them a great reward from Ourselves.

And indeed We would have guided them to the straight way. (4:66-68).

Allah encourages His Prophet against hypocrites

Allah says;

لَقَدِ ابْتَغَوُاْ الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ الاُمُورَ

Verily, they had plotted sedition before, and had upset matters for you,

`For a long time,’

Allah says, hypocrites thought and plotted against you and your Companions, as well as, failing and attempting to extinguish your religion.’

This occurred soon after the Prophet migrated to Al-Madinah, when pagan Arabs joined force and the Jews and hypocrites of Al-Madinah waged war against the Messenger. When Allah gave victory to the Prophet in Badr and raised high his word,

Abdullah bin Ubayy and his fellows said,

“This (Islam) is a matter that has prevailed.”

They embraced Islam outwardly, and whenever Allah elevated Islam and its people in might, hypocrites increased in rage and disappointment,

حَتَّى جَاء الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللّهِ وَهُمْ كَارِهُونَ

until the truth (victory) came and the decree of Allah became manifest though they hated it.

Leave a Reply