(Book# 623) www.motaher21.net মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু।

  • أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

    (Book# 623)
    www.motaher21.net
    সুরা: আত্ তাওবাহ
    সুরা:০৯
    ৭১-৭২ নং আয়াত:-
    وَالْمُوْمِنُونَ وَالْمُوْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ
    মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু।
    The believers, men and women, are supporters of one another;
    وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُہُمُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۷۱﴾
    আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু , তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্‌ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

The believing men and believing women are allies of one another. They enjoin what is right and forbid what is wrong and establish prayer and give zakah and obey Allah and His Messenger. Those – Allah will have mercy upon them. Indeed, Allah is Exalted in Might and Wise.
وَعَدَ اللّٰہُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ وَ رِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿٪۷۲﴾
আল্লাহ্ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের—যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরও (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের । আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য।

Allah has promised the believing men and believing women gardens beneath which rivers flow, wherein they abide eternally, and pleasant dwellings in gardens of perpetual residence; but approval from Allah is greater. It is that which is the great attainment.

৭১-৭২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

পূর্বের আয়াতসমূহে মুনাফিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক, কার্যকলাপ এবং পরকালে তাদের অবস্থান ইত্যাদির কথা আলোচনা করার পর তাদের বিপরীত মু’মিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক কাজ-কর্ম ও পরকালে তাদের অবস্থানের আলোচনা নিয়ে আসা হয়েছে।

মু’মিনগণ একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে, সালাত কায়িম করে, যাকাত আদায় করে, সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসরণ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ যার একাংশ অপরাংশকে মজবুত করে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৮১)

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: মু’মিনদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি দেহের মত, দেহের একটি অংশে কষ্ট পেলে সমস্ত শরীরে তা সঞ্চারিত হয় ও সর্বাঙ্গই অসুস্থ হয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারী হা: ৬০১১)

এসকল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মু’মিনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। আমাদের উচিত মুনাফিকদের কাজকর্ম বর্জন করে মু’মিনদের কাজকর্ম করার মাধ্যমে জান্নাত লাভের চেষ্টা করা।

(وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّٰهِ أَكْبَرُ)

‘আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ’ অর্থাৎ জান্নাতীগণ জান্নাতে যে সকল নেয়ামত পাবে তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হল আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন: হে জান্নাতবাসীরা, তখন জান্নাতবাসীরা বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার দরবারে হাজির। আপনার হাতেই কল্যাণ। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হব না! আমাদেরকে এমন সব জিনিস দিয়েছেন যা আপনার সৃষ্টির কাউকে দান করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এর চেয়ে উত্তম কিছু কি তোমাদেরকে দেব? তারা বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! এর চেয়ে উত্তম আর কোন্ জিনিস আছে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হ্যাঁ আছে, জেনে রেখ, আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট, কখনো তোমাদের প্রতি রাগান্বিত হব না। (সহীহ বুখারী হা: ৭৫১৮)

সুতরাং আমরা মু’মিনদের বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হব এবং মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে থাকব।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মু’মিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
২. মু’মিনদের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী হবে তাও জানতে পারলাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদের সাথে সরাসরি কথা বলবেন।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের বদভ্যাসের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে মুমিনদের উত্তম স্বভাবের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন- এই মুমিনরা পরস্পর একে। অপরের সাহায্য করে থাকে এবং একে অন্যের বাহু স্বরূপ হয়ে থাকে। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে- “এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে দেয়াল স্বরূপ যার এক অংশ অপর অংশকে শক্ত ও মজবুত করে।”

তিনি এ কথা বলে তাঁর এক হাতের অঙ্গুলিগুলোকে অন্য হাতের অঙ্গুলিগুলোর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেখিয়ে দেন। অপর একটি সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “মুমিনদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি দেহের মত, দেহের একটি অংশে কষ্ট পৌঁছলে সমস্ত অংশে তা সঞ্চারিত হয় ও সর্বাঙ্গই অসুস্থ হয়ে পড়ে।”

আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে থাকে। অর্থাৎ মুমিনরা অন্যদের শিক্ষা দীক্ষার ব্যাপারেও উদাসীন থাকে না। বরং তারা সকলকেই ভাল বিষয়ের শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ হতে সাধ্যমত বিরত রাখার চেষ্টা করে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হওয়া উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে।”

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তারা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত দিয়ে থাকে। অর্থাৎ একদিকে তারা আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর ইবাদত করে, আর অন্য দিকে তার মাখলুকের প্রতি ইহসান করে।

তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা করতে আদেশ করেছেন তা তারা পালন করে এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকে।

এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন। অর্থাৎ যারা উপরোক্ত গুণের অধিকারী হবে তারা অবশ্যই আল্লাহর করুণা লাভের হকদার। আল্লাহ তা’আলা হচ্ছেন মহাক্ষমতাবান। অর্থাৎ যারা তাঁর অনুগত হয় তাদেরকে তিনি মর্যাদা দিয়েই থাকেন। কেননা, মর্যাদা হচ্ছে আল্লাহর জন্যে, তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্যে এবং মুমিনদের জন্যে।

আল্লাহ হচ্ছেন হিকমতওয়ালা। এটা তাঁর হিকমত ও নিপুণতা যে, তিনি মুমিনদেরকে এসব গুণের অধিকারী করেছেন এবং মুনাফিকদের ঐ সব বদ স্বভাবের অধিকারী করেছেন। তার প্রতিটি কাজ নিপুণতায় পরিপূর্ণ। তিনি বড়ই কল্যাণময় ও মর্যাদাবান।

মুমিন পুরুষ এবং মুমিনা নারীদের জন্যে আল্লাহ তাআলা যে কল্যাণ ও চিরস্থায়ী নিয়ামতরাজি প্রস্তুত রেখেছেন, এখানে তিনি তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি তাদের জন্যে এমন জান্নাতসমূহ তৈরী করে রেখেছেন যেগুলোর নিম্নদেশে নির্মল পানির প্রস্রবণ বইতে থাকে। সেখানে রয়েছে সুউচ্চ, সুন্দর, ঝকঝকে এবং সাজসজ্জাপূর্ণ প্রাসাদসমূহ! যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দু’টি জান্নাত শুধু সোনার তৈরী, ও দু’টির পাত্র এবং ও দুটির মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবই সোনার তৈরী। আর দুটি জান্নাত রয়েছে রূপার তৈরী, ও দু’টির পাত্র এবং অন্য যা কিছু রয়েছে সবই রূপার তৈরী । তারা (জান্নাতবাসীরা) তাদের প্রতিপালকের দিকে এমন অবস্থায় তাকাবে যে, তাঁর চেহারার ঔজ্জ্বল্যময় চাদর ছাড়া অন্য কোন পর্দা থাকবে না। এটা আদন নামক জান্নাতের মধ্যে হবে।” অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, মুমিনদের জন্যে জান্নাতে একটি তাবু থাকবে যা একটি মাত্র মুক্তা দ্বারা নির্মিত হবে। ওর দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। সেখানে মুমিনদের স্ত্রীরা থাকবে যাদের কাছে তারা যাতায়াত করবে, কিন্তু তারা একে অপরকে দেখতে পাবে না।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান এনেছে, সালাত কায়েম করেছে ও রমযানের রোযা রেখেছে, আল্লাহ তা’আলার উপর এ হক রয়েছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন, সে হিজরত করে থাকুক বা বাড়ীতে বসেই থাকুক।”

লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ “আমরা অন্যদেরকেও এ হাদীস শুনিয়ে দিবো কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “জান্নাতে একটি শ্রেণী রয়েছে, যেগুলোকে আল্লাহ তার পথে জিহাদকারীদের জন্যে বানিয়েছেন। প্রতি দু’শ্রেণীর মাঝে এতোটা দূরত্ব রয়েছে যতটা দূরত্ব রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। সুতরাং যখনই তোমরা আল্লাহর কাছে জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করবে। ওটা সবচেয়ে উঁচু ও সর্বাপেক্ষা উত্তম জান্নাত। জান্নাতসমূহের সমস্ত নহর ওখান থেকেই বের হয়। ওর উপরেই রহমানের (আল্লাহর) আরশ রয়েছে।”

সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসীরা জান্নাতী প্রাসাদগুলোকে ঐরূপ দেখবে যেরূপ তোমরা আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো দেখে থাকো।” প্রকাশ থাকে যে, জান্নাতে একটি সুউচ্চ স্থান রয়েছে, যাকে ‘ওয়াসীলা’ বলা হয়, যা আরশের নিকটবর্তী স্থানে রয়েছে। ওটাই হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জান্নাতের বাসস্থান। যেমন আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তখন আল্লাহর কাছে আমার জন্যে ‘ওয়াসীলা’ চাইবে।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ‘ওয়াসীলা’ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “ওটা হচ্ছে জান্নাতের একটি উচ্চতম শ্রেণী (প্রকোষ্ঠ), যা একটি মাত্র লোক লাভ করবে। আমি প্রবল আশা রাখি যে, ঐ লোকটি আমিই।” আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যখন তুমি মুআযযিনের আযান শুনবে তখন যে শব্দগুলো সে উচ্চারণ করে তুমিও সেগুলো উচ্চারণ করবে। অতঃপর তোমরা আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করবে। যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূপ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করেন। অতঃপর আমার জন্যে ওয়াসীলা চীও। এটা জান্নাতের এমন একটি মনযিল যা আল্লাহ তা’আলার সমস্ত সৃষ্টির মধ্য হতে একটি মাত্র লোক লাভ করবে। আমি আশা রাখি যে, ওটা আমাকেই দান করা হবে। যে ব্যক্তি আমার জন্যে এ ওয়াসীলা চাবে তার জন্যে কিয়ামতের দিন। আমার শাফাআত বৈধ হবে। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) আবূ হুরাইরা (রঃ) হতে তাখরীজ
করেছেন)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমার জন্যে ওয়াসীলা যাঞা কর। যে কেউ আমার জন্যে ওয়াসীলা যা করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো।”

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের কাছে জান্নাতের বর্ণনা দিন! ওর ভিত্তি কোন জিনিসের হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ওর ভিত্তি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইটের। ওর গারা হবে খাঁটি মিশক। ওর কংকর হবে মুক্তা ও ইয়াকূত। ওর মাটি হবে জাফরান। সেখানে যে যাবে সে ঐ সুখ সম্ভোগের মধ্যে থাকবে যা কখনও শেষ হবে না। সেখানে সে চিরস্থায়ী জীবন লাভ করবে, যার পরে মৃত্যুর কোন ভয় নেই। না তার কাপড় খারাপ হবে, না যৌবনে কোন ভাটা পড়বে।” আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা বলেনঃ “জান্নাতে এমন প্রকোষ্ঠ বা কক্ষ রয়েছে যার ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যাবে এবং বাইরের অংশ ভিতর থেকে দেখা যাবে।” একথা শুনে একজন বেদুইন উঠে জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ প্রকোষ্ঠ কার জন্যে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “যে ভাল কথা বলে, খানা খেতে দেয়, রোযা রাখে এবং রাত্রে লোকদের দ্রিা অবস্থায় (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে।”

উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতের আকাক্ষী এবং ওর জন্যে পরিশ্রমকারী কেউ আছে কি? জান্নাতকে সীমাবদ্ধকারী ওর চতুপার্শ্বে কোন প্রাচীর নেই। কা’বার প্রতিপালকের (আল্লাহর) শপথ! ওটা তো উজ্জ্বল নূর, সুগন্ধময় ফুলের বাগান, সুউচ্চ ও চাকচিক্যময় প্রাসাদ, তরঙ্গযুক্ত প্রবহমান নদী, পরিপুষ্ট ও পাকা পাকা ফলের গুচ্ছ, সুন্দর দেহ বিশিষ্টা ও পবিত্র চরিত্রের অধিকারিণী হুর, মূল্যবান রঙ্গীন রেশমী পোশাক, চিরস্থায়ী স্থান, শান্তি নিকেতন, ফল মূল, সবুজ শ্যামল পরিবেশ, প্রশস্ততা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, নিয়ামত, রহমত এবং সুউচ্চ ও সুদৃশ্য প্রাসাদ।” এ কথা শুনে জনগণ বলে উঠলেনঃ “হ্যা, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা এই জান্নাতের আকাঙ্ক্ষী ও এর জন্যে পরিশ্রমকারী।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ “ইনশাআল্লাহ বল। লোকেরা তখন ইনশাআল্লাহ বললেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত)- অর্থাৎ তাদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি যা তাদের সমুদয় ভোগ্য বস্তু অপেক্ষা বড় ও মর্যাদাপূর্ণ। মুসনাদে আহমাদে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহা মহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাত বাসীদেরকে ডাক দিয়ে বলবেনঃ “হে জান্নাতবাসীরা!” তখন তারা (সমস্বরে) বলে উঠবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার দরবারে হাযির আছি। আপনার হাতেই কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তখন বলবেনঃ “তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছো কি?” তারা উত্তরে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিসই দান করেছেন যা আপনার সৃষ্টির মধ্যে আর কাউকেই দান করেননি।” আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেনঃ “এর চেয়ে উত্তম জিনিস কি আমি তোমাদেরকে দান করবো না?” তারা জবাব দেবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এর চেয়ে উত্তম জিনিস আর কি আছে?” আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “হ্যা, হ্যা আছে, জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করলাম । আজকের পর আমি তোমাদের উপর কখনো অসন্তুষ্ট হব না।”

জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, জান্নাতবাসীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন মহিমান্বিত আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ “তোমরা আর কিছু চাও কি? চাইলে আমি অতিরিক্ত আরো দেবো।” তারা উত্তরে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে?” আল্লাহ তা’আলা তখন বলবেনঃ “ওটা হচ্ছে আমার সন্তুষ্টি, যা সবচেয়ে বড় (নিয়ামত)।” ইমাম হাফিজ যিয়া মাকদিসি (রঃ) জান্নাতের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ বর্ণনায় একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেনঃ “এ হাদীসটি আমার নিকট সহীহ এর শর্তের উপর রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

মুনাফিকরা যেমন একটি জাতি বা দল তেমনি মু’মিনরাও একটি স্বতন্ত্র দল। যদিও উভয় দলই প্রকাশ্যে ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং বাহ্যত ইসলামের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে সমানভাবে অংশ নেয়। কিন্তু তবুও উভয়ের স্বভাব-প্রকৃতি, আচর,-আচরণ, অভ্যাস, চিন্তা-পদ্ধতি ও কর্মধারা পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেখানে কেবল মুখে ঈমানের দাবী কিন্তু অন্তরে সত্যিকার ঈমানের ছিঁটেফোটা ও নেই সেখানে জীবনের সমগ্র কর্মকাণ্ড তার প্রতিটি পদক্ষেপের মাধ্যমে ঈমানের দাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। বাইরে লেবেল আটা রয়েছে, মিশক(মৃগনাভি) বলে। কিন্তু লেবেলের নীচে যা কিছু আছে তা অন্যদিকে ঈমান যেখানে তার মূল তাৎপর্য সহকারে বিরাজিত সেখানে মিশক, তার নিজের চেহারা আকৃতিতে নিজের খোশবু-সুরভিতে এবং নিজের বৈশিষ্ট্য-গুণাবলীতে সব ব্যাপারেই ও সব পরীক্ষাতেই নিজের মিশক, হবার কথা সাড়ম্বরে প্রকাশ করে যাচ্ছে। ইসলাম ও ঈমানদের পরিচিত নামই বাহ্যত উভয় দলকে এক উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে। নয়তো আসলে মুনাফিক মুসলমানের নৈতিক বৃত্তি ও স্বভাব প্রকৃতি সত্যিকার ও সাচ্চা ঈমানদার মুসলমান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ কারণে মুনাফিকী স্বভাবের অধিকারী পুরুষ ও নারীরা একটা পৃথক দলে পরিণত হয়ে গেছে। আল্লাহ‌ থেকে গাফেল হয়ে যাওয়া, অসৎ কাজে আগ্রহী হওয়া, নেকীর কাছ থেকে দূরে থাকা এবং সৎকাজের সাথে অসহযোগিতা করার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো তাদেরকে পরস্পরের সাথে যুথিবদ্ধ করেছে এবং মু’মিনদের সাথে কার্যত সম্পর্কহীন করে দিয়েছে। অন্যদিকে সাচ্চা মু’মিন পুরুষ ও নারীরা একটি পৃথক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা নেকীর কাজে আগ্রহী এবং গুনাহের কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। আল্লাহর স্মরণ তাদের জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার জন্য তাদের অন্তর ও হাত সারাক্ষণ উন্মুক্ত থাকে। আল্লাহ‌ ও রসূলের আনুগত্য তাদের জীবনাচরণের অন্তর্ভুক্ত। এ সাধারণ নৈতিক বৃত্তি ও জীবন যাপন পদ্ধতি তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছে এবং মুনাফিকদের দল থেকে আলাদা করে দিয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] মুনাফিক্বদের নিন্দনীয় গুণের তুলনায় মু’মিনদের প্রশংসনীয় গুণ উল্লেখ করা হচ্ছে। তাদের প্রথম গুণ হল, তারা এক অপরের বন্ধু, সাহায্যকারী ও সহানুভুতিশীল। যেমন, হাদীসে এসেছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, “মু’মিন মুমিনের জন্য দেওয়ালস্বরূপ; যার এক ইঁট অপর ইঁটকে শক্ত করে ধরে থাকে।” (বুখারীঃ নামায অধ্যায়, মুসলিম) তিনি আরো বলেছেন, “পরস্পর সম্প্রীতি ও দয়া-দাক্ষিণ্যে মু’মিনদের উপমা হল একটি দেহের মত, যখন তার কোন এক অঙ্গ কষ্ট পায়, তখন তার সারা দেহ জ্বর ও ব্যথায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। (বুখারীঃ আদব অধ্যায়, মুসলিম)

[২] এটা হল ঈমানদারদের দ্বিতীয় বিশেষ গুণ। مَعرُوف (সৎ) সেই কাজকে বলা হয়, যাকে শরীয়ত নেক ও ভাল বলে চিহ্নিত করেছে। আর مُنكَر (অসৎ) সেই কাজকে বলা হয়, যাকে শরীয়ত মন্দ ও খারাপ বলে আখ্যায়িত করেছে। সেই কাজ সৎ বা অসৎ নয়, যা লোকেরা নিজেদের খেয়াল-খুশী মত ভাল বা মন্দ বলে থাকে।

[৩] নামায হল আল্লাহর হকসমূহের মধ্যে একটি প্রধান ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর যাকাত বান্দার হকসমূহের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। এই জন্য এই দু’টিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তারা সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে।

* যা মণিমুক্তা দ্বারা বানানো হয়েছে। عَدن শব্দের কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অর্থ হল চিরস্থায়ী।

হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতে সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে জান্নাতীদের সব থেকে বড় নিয়ামত হিসাবে যা লাভ হবে, তা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। (বুখারী, মুসলিম, রিক্বাক ও জান্নাত অধ্যায়)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
* হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনগণকে তুমি দেখবে তাদের দয়া, ভালবাসা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে এক শরীরের ন্যায়। যার এক অংশে ব্যাথা হলে তার সারা শরীর নির্ঘুম ও জ্বরে ভোগে। [বুখারী: ৬০১১; মুসলিম: ২৫৮৬]
* জান্নাতের বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসেও এসেছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীরা জান্নাতের কামরাগুলোকে এমনভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশে তারকা দেখতে পাও”। [বিখারী: ৬৫৫৫]। অনা হাদীসে এসেছে, ‘জান্নাতে এমন কিছু কক্ষ আছে যে কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের অংশ দেখা যায় আর বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা’আলা এগুলো তো তাদের জন্য তৈরী করেছেন, যারা অপরকে খাদ্য খাওয়ায়, নম্রভাবে কথা বলে, নিয়মিত সাওম পালন করে এবং যখন মানুষ ঘুমন্ত, তখন সালাত আদায় করে। [মুসনাদ আহমাদ: ৫/৩৪৩] অন্য হাদীসে এসেছে, “জান্নাতের প্রাসাদের এক ইট হবে রৌপ্যের, আরেক ইট হবে স্বর্ণের। …”। [মুসনাদ আহমাদ: ২/৩০৪] অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “মুমিন ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি তাবু থাকবে, যা হবে মাত্র একটি ফাঁপা মুক্তা, আর যার উচ্চতা হবে ষাট মাইল। মুমিন ব্যক্তির জন্য তাতে পরিবার-পরিজন থাকবে, সে তাদের কাছে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তাদের একজন আরেকজনকে দেখতে পাবে না।” [বুখারী: ৪৮৭৯, মুসলিম: ২৮৩৪] আর আরশের অধিক নিকটবর্তী, জান্নাতের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানের নাম ওয়াসীলা। এটাই জান্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসস্থান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি তোমরা মুয়াৰ্যযিনের আযান শোন, তবে সে আযানের জবাব দাও। অতঃপর আমার উপর সালাত পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার সালাত পাঠ করেন। তারপর আমার জন্য তোমরা ‘ওয়াসীলা’র প্রার্থনা কর। আর ওয়াসীলা হল জান্নাতের এমন এক মর্যাদাসম্পন্ন স্থান, যা কেবলমাত্র একজন বান্দা ছাড়া আর কারও উপযুক্ত নয়। আর আমি আশা করি, আমি-ই সে বান্দা। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ওয়াসীলার প্রার্থনা করবে, সে কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত পাবে।” [মুসলিম: ১৩৮৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবে, ‘হে জান্নাতবাসীরা!’ তখন তারা বলবে, হে রব আমরা হাজির, আমরা হাজির, আর সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন তিনি বলবেন, ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট? তখন তারা বলবে, আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন, যা আপনার কোন সৃষ্টিকেই দেন নি? তখন তিনি বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেব না? তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম কী হতে পারে? তখন তিনি বলবেন, আমি আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর অবতরণ করাব; এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না।” [বুখারী: ৬৫৪৯, মুসলিম: ২৮২৯]

Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 71-72
وَالْمُوْمِنُونَ وَالْمُوْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

The believers, men and women, are supporters of one another;
Qualities of Faithful Believers

After Allah mentioned the evil characteristics of the hypocrites, He then mentioned the good qualities of the believers,

وَالْمُوْمِنُونَ وَالْمُوْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

The believers, men and women, are supporters of one another;

they help and aid each other.

Surely, an authentic Hadith states,

الْمُوْمِنُ لِلْمُوْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا

The believer to the believer is just like a building, its parts support each other.

and the Prophet crossed his fingers together.

In the Sahih it is recorded,

مَثَلُ الْمُوْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ الْوَاحِدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَايِرُ الْجَسَدِ بِالْحُمَّى وَالسَّهَر

The example of the believers in the compassion and mercy they have for each other, is the example of one body:if a part of it falls ill, the rest of the body suffers with fever and sleeplessness.

Allah’s statement,

يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
they enjoin good, and forbid evil,

this is similar to,

وَلْتَكُن مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ

Let there arise out of you a group of people inviting to all that is good, enjoining Al-Ma`rufand forbidding the Munkar… (3:104)

Allah said next,

وَيُقِيمُونَ الصَّلَةَ وَيُوْتُونَ الزَّكَاةَ

they perform the Salah, and give the Zakah,

they obey Allah and are kind to His creation,

وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ

and obey Allah and His Messenger,

concerning what he commands and refraining from what he prohibits,

أُوْلَـيِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ

Allah will have mercy on them.

Therefore, Allah will give mercy to those who have these qualities,

إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ

Surely, Allah is All-Mighty,

He grants glory to those who obey Him, for indeed, might and glory is from Allah Who gives it to His Messenger and the believers,

حَكِيمٌ

All-Wise,

in granting these qualities to the believers, while giving evil characteristics to hypocrites.

Surely, Allah’s wisdom is perfect in all His actions; praise and glory be to Him.
Good News for the Believers of Eternal Delight

Allah tells;

وَعَدَ اللّهُ الْمُوْمِنِينَ وَالْمُوْمِنَاتِ

Allah has promised the believers — men and women, —

Allah describes the joys and eternal delight He has prepared for the believers, men and women in,

جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا

Gardens under which rivers flow to dwell therein forever, (for eternity),

وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً

فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ

and beautiful mansions,

built beautifully in good surroundings.

In the Two Sahihs, it is recorded that Abu Musa, Abdullah bin Qays Al-Ashari said that the Messenger of Allah said,

جَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ انِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ انِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا

وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْن

Two gardens, their pots and whatever is in them are made of gold, and two gardens, their pots and whatever is in them are made of silver.

Only the Veil of Pride of Allah’s Face separates the people from gazing at Him, in the garden of Eden.

He also narrated that the Messenger of Allah said,

إِنَّ لِلْمُوْمِنِ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُوْلُوَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ طُولُهَا سِتُّونَ مِيلً فِي السَّمَاءِ لِلْمُوْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ يَطُوفُ عَلَيْهِمْ لَا يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضًا

For the believer in Paradise there is a tent like a hollow pearl which is sixty miles high in the sky, and in the tent the believer will have (so large) a family that he visits them all and some of them would not be able to see the others.

The Two Sahihs collected this Hadith.

It is recorded in the Two Sahihs that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

مَنْ امَنَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَأَقَامَ الصَّلَةَ وَصَامَ رَمَضَانَ فَإِنَّ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ هَاجَرَ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا

Whoever believes in Allah and His Messenger, offers prayer perfectly and fasts the month of Ramadan, will rightfully be granted Paradise by Allah, no matter whether he emigrates in Allah’s cause, or remains in the land where he is born.

The people said, “O Allah’s Messenger! Shall we acquaint the people with this good news”

He said,

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِايَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِهِ بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالاَْرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ أَعْلَى الْجَنَّةِ وَأَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَن

Paradise has one-hundred grades which Allah has prepared for the Mujahidin who fight in His cause, the distance between each two grades is like the distance between the heaven and the earth. So, when you ask Allah, ask Him for Al-Firdaws which is the best and highest part of Paradise, from it gush forth the rivers of Paradise and above it is the `Arsh (Throne) of the Beneficent.

Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said, that the Messenger of Allah said,

إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَيَّ فَسَلُوا اللهَ لِيَ الْوَسِيلَة

If you invoke Allah for Salah (blessings) on me, then also invoke Him to grant me Al-Wasilah.

He was asked, “What is Al-Wasilah, O Allah’s Messenger!”

He said,

أَعْلَى دَرَجَةٍ فِي الْجَنَّةِ لَا يَنَالُهَا إِلاَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُو

The highest grade in Paradise, it will be for only one man, and I hope I am that man.

The Musnad contains a Hadith from Sa`d bin Mujahid At-Ta’i, that Abu Al-Mudillah said, that Abu Hurayrah said,

“We said, `O Allah’s Messenger! Talk to us about Paradise, what is it built of?’

He said,

لِبَنَةُ ذَهَبٍ وَلِبَنَةُ فِضَّةٍ وَمِلَطُهَا الْمِسْكُ وَحَصْبَاوُهَا اللُّوْلُوُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرَابُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ لَا يَبْأَسُ وَيَخْلُدُ لَايَمُوتُ لَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُه

A brick of gold and a brick of silver. Its mortar is from musk, its gravel is pearls and rubies. Its sand is saffron. Whoever enters it will enjoy the delights, will never be hopeless, and will live forever and will not die. His clothes will never decay nor will his youth ever end.”

Allah said next,

وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّهِ أَكْبَرُ

But the greatest bliss is the good pleasure of Allah,

meaning, Allah’s pleasure is more grand, greater and better than the delight the believers will be enjoying (in Paradise).

Imam Malik narrated, that Zayd bin Aslam said that `Ata’ bin Yasar said that Abu Sa`id Al-Khudri said that the Messenger of Allah said,

إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ لاَِهْلِ الْجَنَّةِ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ

Allah, the Exalted and Ever High, will say to the people of Paradise, `O residents of Paradise!’

فَيَقُولُونَ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْكَ

They will say, `Labbayka (here we are!), our Lord, and Sa`dayk (we are happy at your service!) and all the good is in Your Hand.’

فَيَقُولُ هَلْ رَضِيتُمْ

He will ask them, `Are you pleased?’

فَيَقُولُونَ وَمَا لَنَا لَا نَرْضَى يَا رَبِّ وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ

They will say, `Why would not we be pleased, O Lord, while You have given us what You have not given any other of your creation!’

فَيَقُولُ أَلَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ

He will say, `Should I give you what is better than all this?’

فَيَقُولُونَ يَا رَبِّ وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ

They will say, `O Lord! What is better than all this!’

فَيَقُولُ أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا

He will say, `I will grant you My pleasure and will never afterwards be angry with you.’

The Two Sahihs collected the Hadith of Malik.

And,

ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

That is the supreme success.

Leave a Reply