أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 628)[মুনাফিক কি? ১৫ নং বই]{তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথী হয়ে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করবে না।}
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৮১-৮৩ নং আয়াত:-
فَقُل لَّن تَخْرُجُواْ مَعِيَ أَبَدًا وَلَن تُقَاتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّا
তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথী হয়ে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করবে না;
Say:”Never shall you go out with me nor fight an enemy with me…”
فَرِحَ الۡمُخَلَّفُوۡنَ بِمَقۡعَدِہِمۡ خِلٰفَ رَسُوۡلِ اللّٰہِ وَ کَرِہُوۡۤا اَنۡ یُّجَاہِدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ قَالُوۡا لَا تَنۡفِرُوۡا فِی الۡحَرِّ ؕ قُلۡ نَارُ جَہَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا ؕ لَوۡ کَانُوۡا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۸۱﴾
যারা পিছনে রয়ে গেল তারা আল্লাহ্র রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না।‘ বলুন, ‘উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম ’যদি তারা বুঝত!
Those who remained behind rejoiced in their staying [at home] after [the departure of] the Messenger of Allah and disliked to strive with their wealth and their lives in the cause of Allah and said, ‘Do not go forth in the heat.” Say, “The fire of Hell is more intensive in heat” – if they would but understand.
فَلۡیَضۡحَکُوۡا قَلِیۡلًا وَّ لۡیَبۡکُوۡا کَثِیۡرًا ۚ جَزَآءًۢ بِمَا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ﴿۸۲﴾
কাজেই তারা অল্প কিছু হেসে নিক, তারা প্রচুর কাঁদবে সেসব কাজের প্রতিফল হিসেবে যা কিছু তারা করেছে।
So let them laugh a little and [then] weep much as recompense for what they used to earn.
فَاِنۡ رَّجَعَکَ اللّٰہُ اِلٰی طَآئِفَۃٍ مِّنۡہُمۡ فَاسۡتَاۡذَنُوۡکَ لِلۡخُرُوۡجِ فَقُلۡ لَّنۡ تَخۡرُجُوۡا مَعِیَ اَبَدًا وَّ لَنۡ تُقَاتِلُوۡا مَعِیَ عَدُوًّا ؕ اِنَّکُمۡ رَضِیۡتُمۡ بِالۡقُعُوۡدِ اَوَّلَ مَرَّۃٍ فَاقۡعُدُوۡا مَعَ الۡخٰلِفِیۡنَ ﴿۸۳﴾
অতঃপর আল্লাহ্ যদি আপনাকে তাদের কোন দলের কাছে ফেরত আনেন এবং তারা অভিযানে বের হওয়ার জন্য আপনার অনুমতি প্রার্থনা করে, তখন আপনি বলবেন, ‘তোমরা তো আমার সাথে কখনো বের হবে না এবং তোমরা আমার সঙ্গী হয়ে কখনো শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকাই পছন্দ করেছিলে; কাজেই যারা পিছনে থাকে তাদের সাথে বসেই থাক।’
If Allah should return you to a faction of them [after the expedition] and then they ask your permission to go out [to battle], say, “You will not go out with me, ever, and you will never fight with me an enemy. Indeed, you were satisfied with sitting [at home] the first time, so sit [now] with those who stay behind.”
৮১-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এখানে সে সকল মুনাফিকদেরর কথা আলোচনা করা হচ্ছে যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তাবুক যুদ্ধে শরীক হয়নি এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করে না যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। এ জিহাদে না গিয়ে তারা খুব খুশী। خِلاَفٌ এর অর্থ পিছন অথবা বিরুদ্ধাচরণ। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চলে যাওয়ার পর তার পিছনে বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে মদীনাতে বসে থাকল।
(قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا)
বল: ‘জাহান্নামের আগুন ভীষণ উত্তপ্ত’ অর্থাৎ যদি তাদের এটা জানা থাকত যে, জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতার তুলনায়- দুনিয়ার (গ্রীষ্মের) গরমের উষ্ণতা কিছুই না তাহলে তারা কখনই পিছনে থাকত না। তাবুক যুদ্ধ গ্রীষ্মকালীন গরমে সংঘঠিত হয়েছিল। এ সকল মুনাফিকরা গরমের ভয়ে যুদ্ধে যায়নি। হাদীসে এসেছে: দুনিয়ার এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তরাংশের একাংশ মাত্র। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৬৫)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বনিম্ন যে শাস্তি দেয়া হবে তা হল আগুনের দু’টি জুতা পরিধান করিয়ে দেয়া হবে, জুতার তাপে তার মাথা টগবগ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ২১১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: যদি আমি তোমাকে তাবুক যুদ্ধ হতে এ সকল মুনাফিকদের কাছে মদীনাতে ফিরিয়ে আনি তাহলে মুনাফিকদের বলে দিও যে, তারা কখনো তোমার সাথে আর কোন যুদ্ধে শরীক হতে পারবে না। কেননা তারা প্রথমবারেই যায়নি। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِه۪ٓ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
“তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি আমিও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব।”(সূরা আনআম ৬:১১০)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তোমরা যখন গনীমতের মাল সংগ্রহ করতে যাবে তখন পেছনে পড়ে থাকা (বেদুঈনরা) তোমাদেরকে অবশ্যই বলবে, আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও। এরা আল্লাহর কথা বদলে দিতে চায়। বল: তোমরা কখনো আমাদের সাথে যেতে পারবে না, আল্লাহ আগেই এ কথা বলে দিয়েছেন। তখন তারা বলবে: তোমরাই বরং আমাদের সাথে হিংসা করছ’ (যদিও হিংসার কোনো কথা নয় ), বরং এরা সঠিক কথা কমই বুঝে।”(সূরা ফাতহ ৪৮:১৫)
(فَلْيَضْحَكُوْا قَلِيْلًا….)
‘অতএব তারা যেন কম হাসে এবং বেশি বেশি কাঁদে- অর্থাৎ কম কম হাসা ও বেশি বেশি কাঁদার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ নাবী (সাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা কম কম হাসতে আর বেশি বেশি কাঁদতে। আর খোলা মাঠে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফরিয়াদ করে আশ্রয় কামনা করতে। অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ যার (রাঃ) বলেন: হায়! আমি যদি গাছ হয়ে যেতাম, তাহলে আমাকে কেটে ফেলা হত (ফলে কোন হিসাব হত না)। (তিরমিযী হা: ২৩১২, ইবনু মাযাহ হা: ৪১৯০, সহীহ)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুগত্য বর্জন করায় খুশী হওয়া মুনাফিকের আলামত। অনুরূপভাবে তাদের আনুগত্যকে অপছন্দ করাও মুনাফিকের আলামত।
২. বেশি বেশি হাসি অপছন্দনীয়।
৩. স্বেচ্ছায় আনুগত্য বর্জন করলে আনুগত্য থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করছেন যারা তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে গমন করেনি এবং বাড়ীতে বসে থাকায় আনন্দিত হয়েছিল। আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা তাদের কাছে ছিল অপছন্দনীয়।
তারা পরস্পর বলাবলি করছিলঃ “এই কঠিন গরমের সময় কোথায় যাবে?” তাবুকের যুদ্ধে বের হওয়ার সময়টা এমনই ছিল যে, একদিকে গরম ছিল অত্যন্ত কঠিন, অপরদিকে ফলগুলো সব পেকে গিয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাদের সম্পর্কে বলেন, তোমরা তোমাদের দুষ্কর্মের মাধ্যমে যে দিকে যাচ্ছ, তার মধ্যে এর চেয়ে বহুগুণ গরমের প্রখরতা রয়েছে। তা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন। দুনিয়ার আগুনতো ঐ আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
মুসনাদে আহমাদে আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের এই আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। অধিকন্তু এই আগুনকে সমুদ্রের পানি দ্বারা দু’বার নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। এরূপ করা না হলে তোমরা এ আগুন দ্বারা কোনই উপকার লাভ করতে পারতে না।”
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা এক হাজার বছর (জাহান্নামের) আগুনকে উত্তপ্ত করেন, তখন তা লাল বর্ণ ধারণ করে। তারপর আবার এক হাজার বছর উত্তপ্ত করেন, তখন তা সাদা হয়ে যায়। এরপর পুনরায় এক হাজার বছর তাপ দেন তখন তা কালো বর্ণ ধারণ করে। আর ওটা রাতের আঁধারের মত ভীষণ কালো হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ “আমি জানি না যে, ইয়াহইয়া (রঃ) ছাড়া অন্য কেউ এটাকে মার’ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।”)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) (২:২৪) এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “(জাহান্নামের) আগুনকে এক হাজার বছর উত্তপ্ত করা হয়, তখন তা সাদা হয়ে যায়। তারপর আরো এক হাজার বছর তাপ দেয়া হয়, তখন তা লাল বর্ণ ধারণ করে। তারপর আরো এক হাজার বছর উত্তপ্ত করা হয়, তখন তা রাতের আঁধারের মত কালো হয়ে যায়। ওর শিখায় কোন ঔজ্জ্বল্য অবশিষ্ট নেই।” (এ হাদীসটি আবু বকর ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
একটি হাদীসে এসেছে যে, জাহান্নামের আগুনের একটি স্ফুলিঙ্গ যদি পূর্ব দিকে থাকে তবে ওর উষ্ণতা পশ্চিম দিক পর্যন্ত পৌছে যাবে। (এ হাদীসটি আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) তাম্মাম ইবনে নাজীহ্ (রঃ)-এর হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন) আবু ইয়ালার (রঃ) একটি দুর্বল রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, যদি এই মসজিদে এক লক্ষ বা এর চেয়েও বেশী লোক থাকে এবং কোন জাহান্নামী এখানে এসে শ্বাস গ্রহণ করে তবে ওর উষ্ণতায় মসজিদ ও মসজিদে অবস্থিত সমস্ত লোক পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, জাহান্নামে যে লোকটির শাস্তি সবচেয়ে হাল্কা হবে তা হবে এই যে, তার পায়ে আগুনের জুতা পরানো হবে, যার ফলে তার মাথার খুলি টগবগ করে ফুটতে থাকবে। সে তখন মনে করবে যে, তাকেই সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে ওটাই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা হাল্কা শাস্তি। কুরআন কারীমে ঘোষিত হচ্ছে- “নিশ্চয়ই ওটা (জাহান্নামের অগ্নি) হচ্ছে জ্বলন্ত হলকা যা চর্ম পর্যন্ত খসিয়ে ফেলবে।” আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “তাদের মাথার উপর ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়া হবে, যার ফলে তাদের পেটের সমস্ত জিনিস এবং চামড়া ঝলসে যাবে। তারপর লোহার হাতুড়ী দ্বারা তাদের মস্তক পিষ্ট করা হবে। তারা যখন সেখান থেকে বের হতে চাইবে তখন তাদেরকে সেখানেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে- দাহনকারী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।” অন্য স্থানে আল্লাহ পাক বলেনঃ “যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছে আমি তাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করবো, যখন তাদের (গায়ের) চামড়া ঝলসে যাবে তখন আমি ওর পরিবর্তে অন্য চামড়া আনয়ন করবো, যেন তারা পূর্ণভাবে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করে। এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “(হে নবী!) তুমি বলে দাও- জাহান্নামের আগুন (এর চেয়ে) অধিকতর গরম, কি ভাল হতো যদি তারা বুঝতে পারতো!” অর্থাৎ যদি তারা এটা অনুধাবন করতো যে, জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা অত্যন্ত বেশী, তবে অবশ্যই গ্রীষ্মের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও খুশী মনে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে যুদ্ধে গমন করতো এবং নিজেদের জান ও মাল আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে মোটেই দ্বিধাবোধ করতো না।
আরবের একজন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি তোমার জীবনকে ঠাণ্ডা ও গরম হতে বাঁচানোর চেষ্টায় কাটিয়ে দিয়েছো, অথচ তোমার উচিত ছিল যে, তুমি আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকবে, তাহলে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে।”
এখন আল্লাহ তা’আলা এই মুনাফিকদের সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করছেন যে, অল্পদিন তারা এই নশ্বর জগতে হাসি-তামাশা ও আমোদ আহলাদ করে জীবনটা কাটিয়ে দিক, অতঃপর ভবিষ্যতের চিরস্থায়ী জীবনে তাদেরকে শুধু কাঁদতেই হবে যা কখনো শেষ হবে না।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা ক্রন্দন কর। যদি তোমাদের ক্রন্দন না আসে তবে ক্রন্দনের ভান কর। কেননা, জাহান্নামবাসীরা কাঁদতে থাকবে, এমন কি কেঁদে তাদের গণ্ডদেশে নদীর মত গর্ত হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত অশ্রু শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তাদের চক্ষুগুলো রক্ত বর্ষণ করতে শুরু করবে। তাদের চক্ষু দিয়ে এতো বেশী অশ্রু ও রক্ত বর্ষিত হবে যে, কেউ যদি ওর উপর দিয়ে নৌকা চালানোর ইচ্ছে করে তবে চালাতে পারবে।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল ইয়ালা আল মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশের পর কাঁদতে থাকবে। এতো বেশী কাঁদবে যে, অশ্রু শেষ হবার পর পুঁজ বের হতে থাকবে। ঐ সময় জাহান্নামের দারোগা তাদেরকে ডাক দিয়ে বলবেঃ “ওরে হতভাগ্যের দল! করুণার জায়গাতে তো তোমরা কখনো ক্রন্দন করনি। এখন এখানে কান্নাকাটি করা বৃথা।” তখন তারা উচ্চৈঃস্বরে চীকার করে জান্নাতবাসীদের নিকট ফরিয়াদ করবেঃ “হে জান্নাতবাসিগণ! হে পিতা, মাতা ও পুত্রদের দল! আমরা কবর থেকে পিপাসার্ত অবস্থায় উঠেছিলাম। তারপর হাশরের ময়দানেও পিপাসার্ত রয়েছিলাম এবং আজ পর্যন্ত এখানেও পিপাসার্ত অবস্থায় রয়েছি। সুতরাং আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর। কিছু পানি আমাদের দিকে বহিয়ে দাও এবং যে আহার্য আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে দান করেছেন তার থেকে আমাদেরকে কিছু দান কর।” চল্লিশ বছর পর্যন্ত তারা এভাবে (কুকুরের মত) চীষ্কার করতে থাকবে। চল্লিশ বছর পর তাদেরকে উত্তর দেয়া হবেঃ “তোমাদেরকে এ অবস্থাতেই অবস্থান করতে হবে।” শেষ পর্যন্ত তারা সমস্ত কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন- হে রাসূল! যদি আল্লাহ তাআলা তোমাকে এই যুদ্ধ হতে নিরাপদে মদীনায় ফিরিয়ে আনেন এবং এই মুনাফিকদের কোন দল অন্য কোন যুদ্ধে তোমার সাথে গমনের জন্যে প্রার্থনা জানায় তবে তুমি শাস্তি দান হিসেবে স্পষ্টভাবে তাদেরকে বলে দেবে আমার সাথে যুদ্ধে গমনকারীদের সাথে তোমরা গমন করতে পারবে না এবং আমার সাথী হয়ে তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেও সক্ষম হবে না। তোমরা যখন যথা সময়ে প্রতারণা করেছে এবং প্রথমবার যুদ্ধে গমন না করে বাড়ীতেই বসে থেকেছো তখন এ সময়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির কি অর্থ হতে পারে। সুতরাং এই আয়াতটি (আরবী) (৬:১১০) এই আয়াতটির মতই। পাপের প্রতিফল পাপকার্যের পরেই পাওয়া যায়। যেমন পুণ্যের প্রতিদান পুণ্য কার্যের পরেই লাভ করা যায়। হুদায়বিয়ার উমরার পর কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন গনীমতের মাল গ্রহণ করতে যাবে তখন (যুদ্ধে গমন না করে) পিছনে অবস্থানকারী এই লোকগুলো বলবে- আমাদেরকে অনুমতি দাও, আমরাও তোমাদের সাথে যাবো।” (৪৮:১৫) এখানে বলা হচ্ছে- হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এই (মুনাফিক) লোকদেরকে বলে দাও, যারা তোমার সাথে জিহাদে গমন না করে বাড়ীতেই বসেছিল, বাড়ীতে অবস্থানকারীদের সাথে তোমরাও অবস্থান কর, যারা স্ত্রীলোকদের মত বাড়ীতেই লেজ গুটিয়ে বসে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে সেই মুনাফিকবদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যারা তাবুক যুদ্ধে শরীক হয়নি এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করে না যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। خِلاف এর অর্থ হল পিছন অথবা বিরুদ্ধাচরণ। অর্থাৎ, রসূল (সাঃ)-এর চলে যাওয়ার পর তাঁর পিছনে অথবা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে মদীনাতে বসে থাকল।
[২] অর্থাৎ, যদি তাদের এটা জানা থাকত যে, দোযখের আগুনের উষ্ণতার তুলনায় দুনিয়ার (গ্রীষ্মের) উষ্ণতা কিছুই নয়, তাহলে তারা কখনই পিছনে থাকত না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, দুনিয়ার এই আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ অংশের একাংশ। অর্থাৎ, জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতা দুনিয়ার আগুনের থেকে ৬৯ গুণ বেশী। (বুখারীঃ সৃষ্টি রচনা অধ্যায় জাহান্নামের বিবরণ পরিচ্ছেদ) হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সে আগুন হতে রক্ষা করো।
* قَلِيلًا আর كَثِيرًا শব্দ দু’টি হতে পারে মাসদারের সিফাত (ক্রিয়ামূলের বিশেষণ), অর্থাৎ, ضَحِكًا قَلِيلًا এবং بُكَاءً كَثِيرًا অথবা যারফ (ক্রিয়া-বিশেষণ), (অর্থাৎ, زَمَانًا قَلِيلًا وَزَمَانًا كَثِيرًا অনুযায়ী দুই যবর রয়েছে। আর উভয় শব্দ দু’টিই হল আদেশসূচক, যা খবরের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। তার মানে হল, এরা ইহকালে হাসবে কম এবং পরকালে কাঁদবে বেশী।
* [১] এ সম্প্রদায় থেকে মুনাফিক্বদল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, যদি আল্লাহ তাআলা তোমাকে তাবুক থেকে মদীনায় সহী-সালামতে ফিরিয়ে আনেন, যেখানে পিছনে থেকে যাওয়া মুনাফিক্বরাও রয়েছে।
[২] অর্থাৎ, কোন অন্য যুদ্ধে সাথে যাবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।
[৩] এ হল আগামীতে সাথে না নিয়ে যাওয়ার কারণ। অর্থাৎ, তোমরা যেহেতু প্রথমবার সাথে যাওনি, সেহেতু এখন তোমরা এর যোগ্য নও যে, তোমাদেরকে কোন যুদ্ধে সাথে নিয়ে যাওয়া হবে।
[৪] অর্থাৎ, এখন তোমাদের এমন অবস্থা যে, তোমরা সেই নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সাথে বসে থাক, যারা যুদ্ধে শরীক হওয়ার পরিবর্তে ঘরে বসে থাকে। নবী (সাঃ)-কে এই নির্দেশ এই জন্য দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের সেই দুঃখ-বেদনা আরো বৃদ্ধি পায়, যা তারা পিছনে থাকার কারণে পেয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আয়াতে উল্লেখিত (مخلفون) শব্দটি (مخلف) এর বহুবচন। অর্থ- “পরিত্যক্ত’। অর্থাৎ যাকে পরিহার করা ও পিছনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী] এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এরা নিজেরা একথা মনে করে আনন্দিত হচ্ছে যে, আমরা নিজেদেরকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিতে পেরেছি এবং জিহাদে শামিল হতে হয়নি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের এহেন সম্মান পাবার যোগ্য মনে করেননি। কারণ তারা হয় মুসলিমদের ক্ষতি করত না হয় তাদের অন্তর অপবিত্র হওয়ার কারণে জিহাদের সৌভাগ্য তাদের নসীব হয়নি। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] কাজেই এরা জিহাদ ‘বর্জনকারী’ নয়; বরং জিহাদ থেকে বর্জিত’। কারণ, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বর্জনযোগ্য মনে করেছেন। [কুরতুবী]
[২] আয়াতে উল্লেখিত (خلاف) শব্দের দুটি অর্থ হতে পারে, একঃ পেছনে বা পরে, আবু ওবায়দা রহমাতুল্লাহ আলাইহি এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। তাতে এর মর্মার্থ দাঁড়ায় এই যে, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিহাদে চলে যাবার পর তাঁর পেছনে রয়ে যেতে পারল বলে আনন্দিত হচ্ছে যা বাস্তবিক পক্ষে আনন্দের বিষয়ই নয়। দ্বিতীয় অর্থ এক্ষেত্রে (خلاف) অর্থ (مخالفت) তথা বিরোধিতাও হতে পারে। অর্থাৎ এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরোধিতা করে ঘরে বসে রইল। আর শুধু নিজেরাই বসে রইল না; বরং অন্যান্য লোকদেরকেও এ কথাই বুঝাল যে, “গরমের সময়ে জিহাদে বেরিয়ো না”। [বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর; জালালাইন: ফাতহুল কাদীর]
[২] একথা পূর্বেই জানা গেছে যে, তাবুক যুদ্ধের অভিযান এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছিল, যখন প্রচন্ড গরম পড়ছিল। [ইবন কাসীর] আল্লাহ তা’আলা তাদের এ কথার উত্তরদান প্রসঙ্গে বলেছেন-
(قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا)
অর্থাৎ এই হতভাগারা এ সময়ের উত্তাপ তো দেখছে এবং তা থেকে বাঁচার চিন্তা করছে। মূলত এর ফলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের না-ফরমানীর দরুন যে জাহান্নামের আগুনে সম্মুখীন হতে হবে সে কথা ভাবছেই না তাহলে কি মওসুমের এ উত্তাপ জাহান্নামের উত্তাপ অপেক্ষা বেশী? জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, তোমাদের এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তরভাগের একভাগ বলা হল যে, হে আল্লাহর রাসূল! এতটুকুই তো যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ আগুনের চেয়েও সেটা উনসত্তর গুণ বেশী, প্রতিটির উত্তাপই এর মত [বুখারী: ৩২৬৫; মুসলিম: ২৮৪৩] জাহান্নামের আগুনের আরও আন্দাজ পাওয়া যায় এ হাদীস থেকে, যাতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে হাল্কা আযাব কিয়ামতের দিন যার হবে, তার আগুনের দুটি জুতা ও পিতা থাকবে, কিন্তু তার উত্তাপে তার মগজ এমনভাবে উৎরাতে থাকবে যেমন পাতিল উনুনের তাপে উতরায়। সে জাহান্নামীদের কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিপ্রাপ্ত মনে করবে না। অথচ সে সবচেয়ে হাল্কা আযাবপ্রাপ্ত। [বুখারী: ৬৫৬২; মুসলিম: ২১৩]
*আয়াতের শব্দার্থ করলে “তারা যেন কম হাসে এবং বেশী বেশী কাঁদে” এ বাক্যটি যদিও নির্দেশবাচক পদ আকারে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তফসীরবিদ মনীষীবৃন্দ একে সংবাদবাচক সাব্যস্ত করেছেন এবং নির্দেশবাচক পদ ব্যবহারের এই তাৎপর্য বর্ণনা করেছে যে, এমনি ঘটা অবধারিত ও নিশ্চিত। অর্থাৎ নিশ্চিতই এমনটি ঘটবে যে, তাদের এ আনন্দ ও হাসি হবে অতি সাময়িক। এরপর আখেরাতে তাদেরকে চিরকাল কাঁদতে হবে [বাগভী; কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] এ আয়াতের তফসীরে ইবন আব্বাস থেকে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে “দুনিয়া সামান্য কয়েক দিনের অবস্থানস্থল, এতে যত ইচ্ছা হেসে নাও। তারপর দুনিয়া যখন শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হবে, তখনই কান্নার পালা শুরু হবে যা আর নিবৃত্ত হবে না।” [ইবন কাসীর]
*এরা যদি ভবিষ্যতে কোন জিহাদে অংশগ্রহনের ইচ্ছা বা আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে যেহেতু তাদের অন্তরে ঈমান নেই, সেহেতু এদের সে ইচ্ছাও নিষ্ঠাপূর্ণ হবে না; যখন রওয়ানা হবার সময় হবে, পূর্বেকার মতই নানা রকম ছলছুতার আশ্রয় নেবে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নির্দেশ হল যে, তারা নিজেরাও যখন কোন জিহাদে অংশগ্রহনের কথা বলবে, তখন আপনি প্রকৃত বিষয়টি তাদেরকে বাতলে দিন যে, তোমাদের কোন কথা বা কাজে বিশ্বাস নেই। তোমরা না যাবে জিহাদে, না আমার পক্ষ হয়ে ইসলামের কোন শক্রর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অধিকাংশ তফসীরবিদ বলেছেন যে, এ হুকুমটি তাদের জন্য পার্থিব শাস্তি হিসাবে প্রবর্তন করা হয় যে, সত্যিকারভাবে তারা কোন জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও যেন তাদেরকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া না হয়। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; আদওয়াউল বায়ান] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা’আলা মুনাফিকদেরকে অনুরূপ ভাল কাজে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, “তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য যাবে তখন যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল, তারা বলবে, ‘আমাদেরকে তোমাদের সংগে যেতে দাও। তারা আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে চায়। বলুন, ‘তোমরা কিছুতেই আমাদের সংগী হতে পারবে না। আল্লাহ আগেই এরূপ ঘোষণা করেছেন।” [সূরা আল-ফাতহ। ১৫] কারণ, তাদের এক অপরাধ অন্য অপরাধকে ডেকে এনেছে, আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “আর তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি, তেমনি আমরাও তাদের অন্তরসমূহ ও দৃষ্টিসমূহ পাল্টে দেব এবং আমরা তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরপাক খাওয়া অবস্থায় ছেড়ে দেব” [সূরা আল-আনআমঃ ১১০]
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 81-83
فَقُل لَّن تَخْرُجُواْ مَعِيَ أَبَدًا وَلَن تُقَاتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّا
Say:”Never shall you go out with me nor fight an enemy with me…”
Hypocrites rejoice because They remained behind from Tabuk!
Allah says;
فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَفَ رَسُولِ اللّهِ
Those who stayed away (from Tabuk expedition) rejoiced in their staying behind the Messenger of Allah;
Allah admonishes the hypocrites who lagged behind from the battle of Tabuk with the Companions of the Messenger of Allah, rejoicing that they remained behind after the Messenger departed for the battle,
وَكَرِهُواْ أَن يُجَاهِدُواْ
they hated to strive and fight, (along with the Messenger),
بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَقَالُواْ
with their properties and their lives in the cause of Allah, and they said, (to each other),
لَا تَنفِرُواْ فِي الْحَرِّ
“March not forth in the heat.”
Tabuk occurred at a time when the heat was intense and the fruits and shades became delightful. This is why they said,
لَا تَنفِرُواْ فِي الْحَرِّ
(“March not forth in the heat).”
Allah said to His Messenger,
قُلْ
Say, (to them),
نَارُ جَهَنَّمَ
“The fire of Hell…,
which will be your destination because of your disobedience,
أَشَدُّ حَرًّا
“. ..is more intense in heat;”
than the heat that you sought to avoid; it is even more intense than fire.
Imam Malik narrated that Abu Az-Zinad said that Al-A`raj narrated that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
نَارُ بَنِي ادَمَ الَّتِي تُوقِدُونَهَا جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّم
The fire that the son of Adam kindles is but one part of seventy parts of the Fire of Jahannam.
They said, “O Allah’s Messenger! This fire alone is enough.”
He said,
فُضِّلَتْ عَلَيْهَا بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا
(Hellfire) was favored by sixty-nine parts.
The Two Sahihs collected this Hadith.
Al-A`mash narrated that Abu Ishaq said that An-Nu`man bin Bashir said that the Messenger of Allah said,
إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِمَنْ لَهُ نَعْلَنِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِي الْمِرْجَلُ لَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَشَدُّ عَذَابًا مِنْهُ وَإِنَّهُ أَهْوَنُهُمْ عَذَابًا
On the Day of Resurrection, the person who will receive the least punishment among the people of the Fire, wears two slippers made from the Fire of Jahannam causing his brain to boil, just as a pot boils. He thinks that none in the Fire is receiving a more severe torment than he, when in fact he is receiving the least torment.
The Two Sahihs collected this Hadith.
There are many other Ayat and Prophetic Hadiths on this subject.
Allah said in His Glorious Book,
كَلَّ إِنَّهَا لَظَى
نَزَّاعَةً لِّلشَّوَى
By no means! Verily, it will be the Fire of Hell. Taking away (burning completely) the scalp! (70:15-16)
هَـذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُواْ فِى رَبِّهِمْ فَالَّذِينَ كَفَرُواْ قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارِ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ
يُصْهَرُ بِهِ مَا فِى بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ
وَلَهُمْ مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ
كُلَّمَأ أَرَادُواْ أَن يَخْرُجُواْ مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيهَا وَذُوقُواْ عَذَابَ الْحَرِيقِ
Al-Hamim (boiling water) will be poured down over their heads. With it will melt (or vanish away) what is within their bellies, as well as (their) skins. And for them are hooked rods of iron (to punish them). Every time they seek to get away therefrom, from anguish, they will be driven back therein, and (it will be said to them):”Taste the torment of burning!” (22:19-22)
and,
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِـَايَـتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَاراً كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَـهُمْ جُلُوداً غَيْرَهَا لِيَذُوقُواْ الْعَذَابَ
Surely, those who disbelieved in Our Ayat, We shall burn them in Fire. As often as their skins are roasted through, We shall change them for other skins that they may taste the punishment. (4:56)
Allah said here,
قُلْ
نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا
لَّوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ
Say:”The fire of Hell is more intense in heat;” if only they could understand!
meaning, if they have any comprehension or understanding, they would have marched with the Messenger of Allah during the heat, so as to save themselves from the Fire of Jahannam, which is much more severe. Allah, the Exalted, then warns the hypocrites against their conduct.
فَلْيَضْحَكُواْ قَلِيلً
So let them laugh a little…
Ibn Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented,
“Life is short, so let them laugh as much as they like in it. But when life ends and they are returned to Allah, the Exalted and Most Honored, they will start crying forever without end.”
وَلْيَبْكُواْ كَثِيرًا جَزَاء بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
and (they will) cry much as a recompense of what they used to earn (by committing sins).
Hypocrites are barred from participating in Jihad
Allah commands His Messenger, peace be upon him,
فَإِن رَّجَعَكَ اللّهُ
If Allah brings you back,
from this battle,
إِلَى طَأيِفَةٍ مِّنْهُمْ
to a party of them,
in reference to the twelve (hypocrite) men, according to Qatadah,
فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ
and they ask your permission to go out,
with you to another battle,
فَقُل لَّن تَخْرُجُواْ مَعِيَ أَبَدًا وَلَن تُقَاتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّا
say:”Never shall you go out with me nor fight an enemy with me…”
as an admonishment and punishment for them.
Allah mentioned the reason for this decision,
إِنَّكُمْ رَضِيتُم بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ
“You were pleased to sit (inactive) on the first occasion…”
Allah said in a similar Ayah,
وَنُقَلِّبُ أَفْيِدَتَهُمْ وَأَبْصَـرَهُمْ كَمَا لَمْ يُوْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ
And We shall turn their hearts and their eyes away (from guidance), as they refused to believe therein for the first time. (6:110)
The recompense of an evil deed includes being directed to follow it with another evil deed, while the reward of a good deed includes being directed to another good deed after it. For instance, Allah said concerning the Umrah of Hudaybiyyah,
سَيَقُولُ الْمُخَلَّفُونَ إِذَا انطَلَقْتُمْ إِلَى مَغَانِمَ لِتَأْخُذُوهَا
Those who lagged behind will say, when you set forth to take the spoils. (48:15)
Allah said next,
فَاقْعُدُواْ مَعَ الْخَالِفِينَ
“…then you sit (now) with those who lag behind.”
in reference to the men who lagged behind from (Tabuk) battle, according to Ibn Abbas.