(Book# 641)[নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

(Book# 641)[নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
১১১-১১২ নং আয়াত:-
إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُوْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ

নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।
Verily, Allah has purchased of the believers their lives and their properties for (the price) that theirs shall be the Paradise.
اِنَّ اللّٰہَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَمۡوَالَہُمۡ بِاَنَّ لَہُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡہِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَہۡدِہٖ مِنَ اللّٰہِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِہٖ ؕ وَ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۱۱﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ (যুদ্ধে)র দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুর’আনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ। আর এটা হচ্ছে মহাসাফল্য।

Indeed, Allah has purchased from the believers their lives and their properties [in exchange] for that they will have Paradise. They fight in the cause of Allah, so they kill and are killed. [It is] a true promise [binding] upon Him in the Torah and the Gospel and the Qur’an. And who is truer to his covenant than Allah ? So rejoice in your transaction which you have contracted. And it is that which is the great attainment.
اَلتَّآئِبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحٰمِدُوۡنَ السَّآئِحُوۡنَ الرّٰکِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ النَّاہُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰہِ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۲﴾

তারা হচ্ছে তওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহর বিধি-সীমাসমূহের সংরক্ষণকারী। আর তুমি বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও।

[Such believers are] the repentant, the worshippers, the praisers [of Allah ], the travelers [for His cause], those who bow and prostrate [in prayer], those who enjoin what is right and forbid what is wrong, and those who observe the limits [set by] Allah . And give good tidings to the believers.

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

১১১-১১২ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তাদের কাজ হল তারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করবে, শত্রুদের হত্যা করবে, প্রয়োজনে নিজেরা নিহত হবে। ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যা দরকার যেমন; ক্রেতা, বিক্রতা, পণ্য মূল্য সবকিছু এখানে উল্লেখ করেছেন।

তাই একজন মু’মিন তার জীবনকে যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করবে এতটুকু তার ইখতিয়ার নেই। যেহেতু তার জান-মাল আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিক্রি করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার পথে বের হয়, একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর পথে জিহাদ ও রাসূলের সত্যতা প্রমাণ করা। যদি এ অবস্থাতেই মৃত্যু হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার যিম্মাদার যে, তিনি তাকে জান্নাতে দেবেন। আর যদি মারা না যায় তাহলে বাড়িতে গনীমত অথবা প্রতিদানসহ ফিরাবেন। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪৫৭)

যে মু’মিনদের জান-মাল আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন তাদের আরো বৈশিষ্ট্য ১১২ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন: সময়মত সালাত আদায় করা। আমি বললাম: তারপর কোন্টি? তিনি বলেন: পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা। আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করা। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৮২)

السَّآئِـحُوْنَ – দ্বারা উদ্দেশ্য সওম পালনকারী, রোযাদার। তবে শব্দটি জিহাদের অর্থেও ব্যবহার হয়। নাবী (সাঃ) বলেন: আমার উম্মাতের সিয়াহাত হল আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ। (আবূ দাঊদ হা: ২৪৮৬২, হাসান)

(وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللّٰهِ)

‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী;- অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে সুপ্রতিষ্ঠিত। হাসান বাসরী (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার ফরয বিধানাবলী যথাযথ পালনকারী। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

অতএব একজন মু’মিন যার জান-মাল আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিক্রিত সে কখনো নিজের ইচ্ছামত জীবন যাপন করতে পারে না, অবশ্যই তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মু’মিনদের জান-মাল আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।
২. আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ ও শাহাদাতের ফযীলত জানলাম।
৩. একজন মু’মিনের উচিত আয়াতে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত কিনা সে বিষয়ে নিজের প্রতি দৃষ্টিপাত করা।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-111

اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ١ؕ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ١۫ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ١ؕ وَ مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِكُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِهٖ١ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ

প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ‌ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সেজন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

তাফসীর :

* আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমানের যে ব্যাপারটা স্থিরকৃত হয় তাকে কেনাবেচা বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, ঈমান শুধুমাত্র একটা অতি প্রাকৃতিক আকীদা-বিশ্বাস নয়। বরং এটা একটি চুক্তি। এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা কবুল করে নেয় যে, মরার পর পরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু অনুধাবন করার জন্য সর্বপ্রথম কেনা-বেচার তাৎপর্য ও স্বরূপ কি তা ভালো ভাবে বুঝে নিতে হবে।

নিরেট সত্যের আলোকে বিচার করলে বলা যায় মানুষের ধন-প্রাণের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। কারণ তিনিই তার কাছে যা কিছু আছে সব জিনিসের স্রষ্টা। সে যা কিছু ভোগ ও ব্যবহার করেছে তাও তিনিই তাকে দিয়েছেন। কাজেই এদিক দিয়ে তো কেনাবেচার কোন প্রশ্নেই ওঠে না। মানুষের এমন কিছু নেই, যা সে বিক্রি করবে। আবার কোন জিনিস আল্লাহর মালিকানার বাইরেও নেই, যা তিনি কিনবেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন একটি জিনিস আছে, যা আল্লাহ‌ পুরোপুরি মানুষের হাতে সোর্পদ করে দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে তার ইখতিয়ার অর্থাৎ নিজের স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতা ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (Free will an freedom of choice)। এ ইখতিয়ারের কারণে অবশ্যই প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু মানুষ এ মর্মে স্বাধীনতা লাভ করে যে, সে চাইলে প্রকৃত সত্যকে মেনে নিতে পারে এবং চাইলে তা অস্বীকার করতে পারে। অন্য কথায় এ ইখতিয়ারের মানে এ নয় যে মানুষ প্রকৃত পক্ষে তার নিজের প্রাণের নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও শারীরিক শক্তির এবং দুনিয়ায় সে যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা লাভ করেছে, তার মালিক হয়ে গেছে। এ সঙ্গে এ জিনিসগুলো সে যেভাবে চাইবে সেভাবে ব্যবহার করার অধিকার লাভ করেছে, একথাও ঠিক নয়। বরং এর অর্থ কেবল এতটুকুই যে, তাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, আল্লাহর পক্ষে থেকে কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি ছাড়াই সে নিজেরই নিজের সত্তার ও নিজের প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর আল্লাহর মালিকানা ইচ্ছা করলে স্বীকার করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিজেই নিজের মালিক হয়ে যেতে পারে এবং নিজেই একথা মনে করতে পারে যে, সে আল্লাহ‌ থেকে বেপরোয়া হয়ে নিজের ইখতিয়ার তথা স্বাধীন কর্মক্ষমতার সীমানার মধ্যে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অধিকার রাখে। এখানেই কেনা-বেচার প্রশ্নটা দেখা দেয়। আসলে এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ‌ কিনতে চান, বরং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোর্পদ করেছেন এবং যে ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকার বা অবিশ্বস্ত হবার স্বাধীনতা তিনি মানুষকে দিয়ে রেখেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের দাবী করেন, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে (বাধ্য হয়ে নাও)। এ সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে (যা তোমার অর্জিত নয় বরং আমার দেয়া) আমার হাতে বিক্রি করে দাও তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করবো। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মু’মিন। ঈমান আসলে এ কেনা-বেচার আর এক নাম। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে অথবা অঙ্গীকার করার পরও এমন আচরণ করবে যা কেবলমাত্র কেনা-বেচা না করার অবস্থায় করা যেতে পারে সে কাফের। আসলে এ কেনা-বেচাকে পাস কাটিয়ে চলার পারিভাষিক নাম কুফরী। কেনা-বেচার এ তাৎপর্য ও স্বরূপটি অনুধাবন করার পর এবার তার অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করা যাকঃ

এক. এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ‌ মানুষকে দু’টি বড় বড় পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। প্রথম পরীক্ষাটি হচ্ছে, তাকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবার পর সে মালিকাকে মালিক মনে করার এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহের পর্যায়ের নেমে না আসার মতো সৎ আচরণ করে কিনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নিজের প্রভু ও মালিক আল্লাহর কাছ থেকে আজ নগদ যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে, না বরং মরার পর পরকালীন জীবনে যে মূল্য আদায় করার ওয়াদা তার পক্ষ থেকে করা হয়েছে তার বিনিময়ে নিজের আজকের স্বাধীনতা ও তার যাবতীয় স্বাদ বিক্রি করতে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে রাজী হয়ে যাবার মত আস্থা তার প্রতি আছে কিনা।

দুইঃ যে ফিকাহর আইনের ভিত্তিতে দুনিয়ার ইসলামী সমাজ গঠিত হয় তার দৃষ্টিতে ঈমান শুধুমাত্র কতিপয় বিশ্বাসের স্বীকৃতির নাম। এ স্বীকৃতির পর নিজের স্বীকৃতি ও অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে মিথ্যুক হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত শরীয়াতের কোন বিচারক কাউকে অমু’মিন বা ইসলামী মিল্লাত বহির্ভূত ঘোষণা করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ঈমানের তাৎপর্য ও স্বরূপ হচ্ছে, বান্দা তার চিন্তা ও কর্ম উভয়ের স্বাধীনতা ও স্বাধীন ক্ষমতা আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দিবে এবং নিজের মালিকানার দাবী পুরোপুরি তার সপক্ষে প্রত্যাহার করবে। কাজেই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের কালেমার স্বীকৃতি দেয় এবং নামায-রোযা ইত্যাদির বিধানও মেনে চলে, কিন্তু নিজেকে নিজের দেহ ও প্রাণের নিজের মন, মস্তিষ্ক ও শারীরিক শক্তির নিজের ধন-সম্পদ, উপায়, উপকরণ ইত্যাদির এবং নিজের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত জিনিসের মালিক মনে করে এবং সেগুলোকে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করার স্বাধীনতা নিজের জন্য সংরক্ষিত রাখে, তাহলে হয়তো দুনিয়ায় তাকে মু’মিন মনে করা হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে সে অবশ্যই অমু’মিন হিসেবে গণ্য হবে। কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে কেনা-বেচার ব্যাপারে ইমানের আসল তাৎপর্য ও স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর সাথে আদতে কোন কেনা-বেচার কাজই করেননি। যেখানে আল্লাহ‌ চান সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ না করা এবং যেখানে তিনি চান না সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ ও ব্যবহার করা-এ দু’টি কার্য ধারাই চূড়ান্তভাবে ফয়সালা করে দেয় যে, ইমানের দাবীদার ব্যক্তি তার ধন প্রাণ আল্লাহর হাতে বিক্রি করেইনি অথবা বিক্রির চুক্তি করার পরও সে বিক্রি করা জিনিসকে যথারীতি নিজের মনে করেছে।

তিনঃ ঈমানের এ তাৎপর্য ও স্বরূপ ইসলামী জীবনাচরণকে কাফেরী জীবনাচরণ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। তার আচরণে কোথাও স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটতে পারে না। তবে কোন সময় সাময়িকভাবে সে গাফলতির শিকার হতে পারে এবং আল্লাহর সাথে নিজের কেনা-বেচার চুক্তির কথা ভুলে গিয়ে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা অবলম্বন করাও তার পক্ষে সম্ভব। এটা অবশ্যই ভিন্ন ব্যাপার। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তার শরয়ী আইনের বিধিনিষেধ মুক্ত হয়ে কোন নীতি পদ্ধতি রাষ্ট্রীয় নীতি, তামাদ্দুনিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। কোন সাময়িক গাফলতির কারণে যদি সেটা অবলম্বন করেও থাকে তাহলে যখনই সে এ ব্যাপারে জানতে পারবে তখনই স্বাধীন ও স্বৈরাচারী আচরণ ত্যাগ করে পুনরায় বন্দেগীর আচরণ করতে থাকবে। আল্লাহর আনুগত্য মুক্ত হয়ে কাজ করা এবং নিজের ও নিজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নিজে নিজেই কি করবোনা করবো, সিদ্ধান্ত নেয়া অবশ্যই একটি কুফরী জীবনাচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যাদের জীবন যাপন পদ্ধতি এ রকম তারা মুসলমান নামে আখ্যায়িত হোক বা অমুসলিম নামে তাতে কিছু যায় আসে না।

চারঃ এ কেনা-বেচার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর যে ইচ্ছার আনুগত্য মানুষের জন্য অপরিহার্য হয় তা মানুষের নিজের প্রস্তাবিত বা উদ্ভাবিত নয় বরং আল্লাহ‌ নিজে যেমন ব্যক্ত করেন তেমন। নিজে নিজেই কোন জিনিসকে আল্লাহর ইচ্ছা বলে ধরে নেয়া এবং তার আনুগত্য করতে থাকা মূলত আল্লাহর ইচ্ছা নয় বরং নিজেরই ইচ্ছার আনুগত্য করার শামিল। এটি এ কেনাবেচার চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী। যে ব্যক্তি ও দল আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর হেদায়াত থেকে নিজের সমগ্র জীবনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে একমাত্র তাকেই আল্লাহর সাথে কৃত নিজের কেনা-বেচার চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করা হবে।

এ হচ্ছে এ কেনা-বেচার অন্তনিহিত বিষয়। এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর এ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত।) দেবার কথা বলা হয়েছে কেন তাও আপনা আপনিই বুঝে আসে। বিক্রেতা নিজের প্রাণ ও ধন-সম্পদ আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দেবে কেবলমাত্র এ অঙ্গীকারের বিনিময়েই যে জান্নাত পাওয়া যাবে তা নয়। বরং বিক্রেতা নিজের পার্থিব জীবনে এ বিক্রি করা জিনিসের ওপর নিজের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার প্রত্যাহার করবে এবং আল্লাহ‌ প্রদত্ত আমানতের রক্ষক হয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করবে। এরূপ বাস্তব ও সক্রিয় তৎপরতার বিনিময়েই জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল ও শেষ হবার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরি মেনে চলেছে একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পূর্ণ হবে। এর আগে পর্যন্ত ইনসাফের দৃষ্টিতে সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।

এ বিষয় গুলো পরিষ্কার ভাবে বুঝে নেবার সাথে সাথে এ বর্ণনার ধারাবাহিকতায় কোন প্রেক্ষাপটে এ বিষয়বস্তুটির অবতারণা হয়েছে তাও জেনে নেয়া উচিত। ওপর থেকে যে ধারাবাহিক ভাষণ চলে আসছিল তাতে এমন সব লোকের কথা ছিল যারা ঈমান আনার অঙ্গীকার করেছিল ঠিকই কিন্তু পরীক্ষার কঠিন সময় সমুপস্থিত হলে তাদের অনেকে গাফলতির কারণে, অনেকে আন্তরিকতার অভাবে এবং অনেকে চূড়ান্ত মুনাফিকীর পথ অবলম্বন করার ফলে আল্লাহর ও তার দ্বীনের জন্য নিজের সময় ধন সম্পদ স্বার্থ ও প্রাণ দিতে ইতস্তত করেছিল। কাজেই এ বিভিন্ন ব্যক্তি ও শ্রেণীর আচরণের সমালোচনা করার পর এখন তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেয়া হচ্ছে, তোমরা যে ঈমান গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছো তা নিছক আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ব মেনে নেবার নাম নয়। বরং একমাত্র আল্লাহই যে তোমাদের জান ও তোমাদের ধন-সম্পদের মালিক ও অকাট্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব মেনে নেয়া ও এর স্বীকৃতি দেয়ার নামই ঈমান। কাজেই এ অঙ্গীকার করার পর যদি তোমরা এ প্রাণ ও ধন-সম্পদ আল্লাহর হুকুমে কুরবানী করতে ইতস্তত করো এবং অন্যদিকে নিজের দৈহিক ও আত্মিক শক্তিসমূহ এবং নিজের উপায়-উপকরণ সমূহ আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে থাকো তাহলে এ থেকে একথাই প্রমাণিত হবে যে, তোমাদের অঙ্গীকার মিথ্যা। সাচ্চা ঈমানদার একমাত্র তারাই যারা যথার্থই নিজেদের জান-মাল আল্লাহর হাতে বিকিয়ে দিয়েছে এবং তাকেই এ সবের মালিক মনে করেছে। তিনি এগুলো যেখানে ব্যয় করার নির্দেশ দেন সেখানে নির্দ্বিধায় এগুলো ব্যয় করে এবং যেখানে তিনি নিষেধ করেন সেখানে দেহ ও আত্মার সামান্যতম শক্তিও এবং আর্থিক উপকরণের নগন্যতম অংশও ব্যয় করতে রাজী হয় না।

* এ ব্যাপারে অনেক গুলো আপত্তি তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখানে যে ওয়াদার কথা বলা হয়েছে তা তাওরাত ও ইঞ্জিলে নেই। কিন্তু ইঞ্জিলের ব্যাপারে এ ধরনের কথা বলার কোন ভিত্তি নেই। বর্তমানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে যে ইঞ্জিলসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোর হযরত ঈসা (আ) এর এমন অনেক গুলো উক্তি পাওয়া যায় যেগুলো এ আয়াতের সমর্থক। যেমনঃ

ধন্য যাহারা ধার্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গরাজ্য তাহাদেরই। (মথি ৫: ১০)

যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে। (মথি ১০: ৩৯)

আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী কি ভ্রাতা, কি ভাগিনী কি পিতা ও মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শতগুণ পাইবে এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে। (মথি ১৯: ২৯)

তবে তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যায় তাতে অবশ্যই এ বিষয়বস্তুটি পাওয়া যায় না। শুধু এটি কেন, সেখানে তো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, শেষ বিচারের দিন ও পরকালীন পুরস্কার ও শাস্তির ধারণাই অনুপস্থিত। অথচ এ আকীদা সবসময় আল্লাহর সত্য দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান তাওরাতে এ বিষয়টির অস্তিত্ব না থাকার ফলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও ঠিক নয় যে, যথার্থই তাওরাতের এ অস্তিত্ব ছিল না। আসলে ইহুদীরা তাদের অবনতির যুগে এতই বস্তুবাদী ও দুনিয়াবি সমৃদ্ধির মোহে এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলো যে, তাদের কাছে নিয়ামত ও পুরস্কার এ দুনিয়ায় লাভ করা ছাড়া তার আর কোন অর্থই ছিলো না। এ কারণে আল্লাহর কিতাবে বন্দেগী ও আনুগত্যের বিনিময়ে তাদেরকে যেসব পুরস্কার দেবার ওয়াদা করা হয়েছিল সে সবকে তারা দুনিয়ার এ মাটিতেই নামিয়ে এনেছিল এবং জান্নাতের প্রতিটি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যকে তারা তাদের আকাংঙ্খিত ফিলিস্তিনের ওপর প্রয়োগ করেছিল। তাওরাতের বিভিন্ন স্থানে আমরা এ ধরনের বিষয়বস্তু দেখতে পাই। যেমনঃ

হে ইসরায়েল শুন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদা প্রভু, তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদা প্রভুকে প্রেম করিবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬: ৪, ৫)

আরো দেখিঃ তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্মাতা ও স্থিতি কর্তা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২: ৬)

কিন্তু আল্লাহর সাথে এ সম্পর্কের যে পুরস্কার বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, তোমরা এমন একটি দেশের মালিক হয়ে যাবে যেখানে দুধ ও মধুর নহর প্রবাহিত হচ্ছে অর্থাৎ ফিলিস্তিন। এর আসল কারণ হচ্ছে, তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে তা প্রথমত সম্পূর্ণ নয়, তাছাড়া নির্ভেজাল আল্লাহর বাণী সম্বলিত ও নয়। বরং তার মধ্যে আল্লাহর বানীর সাথে অনেক ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য ও সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ইহুদীদের জাতীয় ঐতিহ্য, বংশ প্রীতি, কুসংস্কার আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুল ধারণাও ফিকাহ ভিত্তিক ইজতিহাদের একটি বিরাট অংশ একই ভাষণ ও বানী পরস্পরার মধ্যে এমন ভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে যে, অধিকাংশ স্থানে আল্লাহর আসল কালামকে তার মধ্যে থেকে পৃথক করে বের করে নিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। (এ প্রসঙ্গে আরো দেখুন সূরা আলে ইমরানের ২ টীকা।)

সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-112

اَلتَّآئِبُوْنَ الْعٰبِدُوْنَ الْحٰمِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرّٰكِعُوْنَ السّٰجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ النَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ الْحٰفِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللّٰهِ١ؕ وَ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ

আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী১০৯ তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী, অসৎকাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনাবেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!

তাফসীর :

* মূল আয়াতে التَّائِبُونَ(আত্ তা-য়েবুন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর শাব্দিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় তাওবাকারী। কিন্তু যে বর্ণনা রীতিতে ও শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাওবা করা ঈমানদারদের স্থায়ী ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই এর সঠিক অর্থ হচ্ছে তারা কেবলমাত্র একবার তাওবা করে না বরং সবসময় তাওবা করতে থাকে। আর তাওবার আসল অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। কাজেই এ শব্দটির মূল প্রাণ সত্তা প্রকাশ কারার জন্য আমি এর ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ এভাবে করেছি তারা আল্লাহর দিকে বারবার ফিরে আসে। মু’মিন যদিও তার পূর্ণ চেতনা ও সংকল্প সহকারে আল্লাহর সাথে নিজের প্রাণ ও ধন-সম্পদ কেনা-বেচার কারবার করে কিন্তু যেহেতু বাইরের অবস্থার প্রেক্ষিতে এটাই অনুভূত হয় যে, প্রাণ তার নিজের এবং ধন ও তার নিজের আর তাছাড়া এ প্রাণ ও ধনের আসল মালিক মহান আল্লাহ। কোন অনুভূত সত্তা নন বরং একটি যুক্তিগ্রাহ্য সত্তা। তাই মু’মিনের জীবনের বারবার এমন সময় আসতে থাকে যখন সে সাময়িকভাবে আল্লাহর সাথে করা তার কেনা-বেচার চুক্তি ভুলে যায়। এ অবস্থায় এ চুক্তি থেকে গাফেল হয়ে সে কোন লাগামহীন কার্যকলাপ করে বসে। কিন্তু একজন প্রকৃতও যথার্থ মু’মিনের বৈশিষ্ট্য এই যে, এ সমায়িক ভুলে যাওয়ার হাত থেকে যখনই সে রেহাই পায়, তখনই নিজের গাফলতির পর্দা ছিড়ে সে বেরিয়ে আসে এবং অনুভব করতে থাকে যে, অবচেতনভাবে সে নিজের অঙ্গীকারের বিরুদ্ধাচরণ করে ফেলেছে তখনই সে লজ্জা অনুভব করে, তীব্র অনুশোচনা সহকারে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে ক্ষমা চায় এবং নিজের অঙ্গীকারকে পুনরায় তরতাজা করে নেয়। এ বারবার তাওবা করা, বারবার আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং প্রত্যেকটি পদস্খলনের পর বিশ্বস্ততার পথে ফিরে আসাই ঈমানের স্থিতি ও স্থায়িত্বের প্রতীক। নয়তো যেসব মানবিক দুর্বলতা সহকারে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলোর উপস্থিতিতে তার পক্ষে এটা কোন ক্রমেই সম্ভব নয় যে, সে আল্লাহর হাতে একবার ধন-প্রাণ বিক্রি করার পর চিরকাল পূর্ণ সচেতন অবস্থায় এ কেনা-বেচার দাবী পূরণ করতে থাকবে এবং কখনো গাফলতি ও বিস্মৃতির শিকার হবে না। তাই মহান আল্লাহ‌ মু’মিনের এ সংজ্ঞা বর্ণনা করেন না যে, বন্দেগীর পথে এসে কখনো যার পা পিছলে যায় না সে মু’মিন। বরং বার বার পা পিছলে যাবার পরও প্রতিবারই সে একই পথে ফিরে আসে, এটিকেই আল্লাহ‌ মু’মিনের প্রশংসনীয় গুণ হিসেবে গণ্য করেছেন। আর এটিই হচ্ছে মানুষের আয়ত্বের ভেতরের শ্রেষ্ঠতম গুণ।

আবার এ প্রসঙ্গে মু’মিনের গুণাবলীর মধ্যে সবার আগে তাওবার কথা বলার আর একটি উপযোগিতাও রয়েছে। আগে থেকে যে ধারাবাহিক বক্তব্য চলে আসছে তাতে এমনসব লোকের উদ্দেশ্যে কথা বলা হয়েছে যাদের থেকে ঈমান বিরোধী কার্যকলাপের প্রকাশ ঘটেছিল। কাজেই তাদেরকে ঈমানের তাৎপর্য ও তার মৌলিক দাবী জানিয়ে দেবার পর এবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, মু’মিনের যে অপরিহার্য গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান গুণ হচ্ছেঃ যখনই বন্দেগীর পথ থেকে তাদের পা পিছলে যায় তারা যেন সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেদিকে ফিরে আসে। নিজেদের সত্য বিচ্যুতির ওপর যেন অবিচল হয়ে দাড়িয়ে না থাকে এবং পিছনের দিকে বেশী দূরে চলে না যায়।

* মূল ইবারতে السَّائِحُونَ(আস সায়েহুন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন الصَّائِمُون (আস সা-য়েমুন) অর্থাৎ যারা রোযা রাখে। কিন্তু السَّائِحُونَ আস সায়েহুনা বা বিচরণকারীকে রোযাদার অর্থে ব্যবহার করলে সেটা হবে তার রূপক ও পরোক্ষ অর্থ। এর প্রকৃত ও প্রত্যক্ষ অর্থ এটা নয়। আর যে হাদীসে বলা হয়েছে, নবী (সা.) নিজেই এ শব্দটির এ অর্থ বিশ্লেষণ করেছেন সেটিকে নবীর ﷺ ওপর প্রয়োগ করা ঠিক নয়। তাই আমরা একে এর প্রকৃত অর্থে গ্রহণ করাকেই বেশী সঠিক মনে করি। কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় ইসফাক শব্দটি সরল ও সাধারণ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, এর মানে হয় ব্যয় করা এবং এর উদ্দেশ্য আল্লাহর পথে ব্যয় করা। ঠিক তেমনি এখানে বিচরণ করা মানেও নিছক ঘোরাফেরা করা নয়। বরং এমন উদ্দেশ্যে যমীনে চলাফেরা করা, যা পবিত্র ও উন্নত এবং যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। যেমন, দীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা, কুফর শাসিত এলাকা থেকে হিরজত করা, দীনের দাওয়াত দেয়া, মানুষের চরিত্র সংশোধন করা, পরিছন্ন ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা , আল্লাহর নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা। এ গুণটিকে এখানে বিশেষভাবে মু’মিনদের গুণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ জন্য যে, যারা ঈমানের দাবী করা সত্ত্বেও জিহাদের আহবানে ঘর থেকে বের হয়নি তাদেরকে একথা জানিয়ে দেয়া যে, সত্যিকার মু’মিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। বরং সে আল্লাহর দীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে।

* মহান আল্লাহ‌ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সামাজিকতা, তামাদ্দুন অর্থনীতি-রাজনীতি আইন-আদালত এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন তারা তা পুরোপুরি মেনে চলে। নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্মকাণ্ড এ সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ রাখে। কখনো এ সীমা অতিক্রম করে ইচ্ছা মতো কাজ করতে থাকে না। আবার কখনো আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরী ভিন্নতর আইনকে জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। এছাড়াও আল্লাহর সীমারেখা গুলো প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এগুলো লঙ্ঘন করতে দেয়া যাবে না। কাজেই সাচ্চা ঈমানদারদের সংজ্ঞা কেবল এতটুকুই নয় যে, তারা নিজেরা আল্লাহর সীমা মেনে চলে বরং তাদের অতিরিক্ত গুণাবলী হচ্ছে এই যে, তারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলো অটুট রাখার জন্য নিজেরদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর পথে ব্যয়কৃত জান ও মালের বিনিময় হিসেবে জান্নাত প্রদান করবেন। আর এটা বিনিময় নয় বরং তার ফল, করম ও অনুগ্রহ। কেননা, বান্দাদের সাধ্যে যা ছিল তা তারা করেছে। এখন তিনি তার অনুগত বান্দাদের জন্যে কোন বিনিময় বা প্রতিদান ঠিক করলে জান্নাতই ঠিক করবেন। এ জন্যেই হাসান বসরী (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর বান্দাদের সাথে বেচাকেনা করলেন তখন তিনি তাদের খিদমতের বিরাট ও উচ্চমূল্য প্রদান করলেন। আর শামর ইবনে আতিয়্যা (রঃ) বলেন যে, এমন কোন মুসলিম নেই যার স্কন্ধে আল্লাহর অঙ্গীকার ও চুক্তি নেই, যা সে পূর্ণ করে এবং যার উপর সে মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। এ জন্যেই বলা হয় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে বের হলো সে যেন আল্লাহর সাথে বেচাকেনা করলো এবং আল্লাহ তার সাথে এই আ কবূল করে নিলেন ও তা পূর্ণ করলেন।

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কারাযী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) লাইলাতুল আকাবার সময় বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আল্লাহর জন্যে এবং আপনার জন্যেও যা ইচ্ছা হয় আমাদের উপর শর্ত আরোপ করুন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ সম্পর্কে আমি তোমাদের উপর এই শর্ত আরোপ করছি যে, তোমরা তার খাটি বান্দা হয়ে থাকবে, তাঁর ইবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। আর আমার সম্পর্কে তোমাদের উপর এই শর্ত আরোপ করছি যে, যেসব বিষয় থেকে তোমরা নিজেদের জান ও মালকে রক্ষা করে থাকো সেই সব বিষয়ে আমার ব্যাপারেও শুভাকাঙক্ষী হয়ে থাকবে।” তখন তিনি বলেনঃ “এর বিনিময়ে আমরা কি পাবো? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এর বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।” তাঁর এ কথা শুনে প্রশ্নকারীরা বললেনঃ “এটা তো বড় লাভের ব্যবসা। আমরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করবো না এবং আমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকারও ভঙ্গ করা হবে না।” তখন (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর হত্যা করে ও নিহত হয়। সাওয়াবের দিক দিয়ে দুটোই সমান হয়। তারা হত্যা করে গাযী হাক অথবা নিহত হয়ে শহীদ হাক। সর্বাবস্থাতেই তাদের জন্যে জান্নাত অবধারিত রয়েছে। এ জন্যেই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এসেছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে বের হয়, আর এই বের হওয়ার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তার পথে জিহাদ করা এবং তার রাসূলদের সত্যতা প্রমাণ করা, এ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়, আল্লাহ তার যিম্মাদার যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন। আর যদি মারা না যায় তবে আল্লাহ এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন যে, সে যেখান থেকে বের হয়েছে সেখানে তাকে তার লাভকৃত গনীমতের মালসহ পৌছিয়ে দিবেন।”

(আরবী) আল্লাহ পাকের এই উক্তিটি তার ওয়ার্দার গুরুত্ব হিসেবে করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, তিনি নিজের পবিত্র সত্তার উপর এটা ফরয করে নিয়েছেন এবং তাঁর রাসূলদের উপর তাঁর এই ওয়াদার অহীও পাঠিয়েছেন, যা মূসা (আঃ)-এর উপর অবতারিত কিতাব তাওরাতে লিপিবদ্ধ আছে এবং ঈসা (আঃ)-এর উপর অবতারিত কিতাব ইঞ্জীলেও লিখিত রয়েছে, আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অবতারিত কিতাব আল কুরআনের মধ্যে লিখা আছে। তাদের সবারই উপর আল্লাহর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হাক।

মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ অপেক্ষা স্বীয় ওয়াদা অধিক পূর্ণকারী আর কে হতে পারে? কেননা, তিনি কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কথায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী আর কে আছে?” (৪:৮৭) আর এক স্থানে তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ কথা বলায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী আর কে হতে পারে?” (৪:১২২) এ জন্যেই ইরশাদ হচ্ছে-আল্লাহর সাথে তোমরা যে বেচা-কেনা করেছে এতে তোমরা খুশী হয়ে যাও এবং এই সফলতা হচ্ছে বিরাট সফলতা, যদি তোমরাও নিজেদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর।

এই পবিত্র আয়াতটি ঐ মুমিনদের প্রশংসায় অবতীর্ণ হয়েছে যাদের জান ও মালকে আল্লাহ তা’আলা তাদের এই উত্তম গুণাবলীর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা সমস্ত পাপ ও নির্লজ্জতাপূর্ণ কার্য থেকে বিরত থাকে, নিজেদের প্রতিপালকের ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিজেদের কথা ও কাজের উপর কড়া দৃষ্টি রাখে। কথার মধ্যে বিশিষ্ট বিষয় হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসা। এ জন্যেই মহান আল্লাহ (আরবী) বলেছেন। আর আমল ও কাজের দিক দিয়ে উত্তম কাজ হচ্ছে সিয়াম। সিয়াম বা রোযা বলা হয় পানাহার, স্ত্রী-সহবাস হতে বিরত থাকাকে। আর (আরবী) দ্বারা এই সিয়ামকেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা (আরবী) বলেছেন। যেমন তিনি (আরবী) শব্দ দ্বারা নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণীদের প্রশংসা করেছেন। এই (আরবী) দ্বারা (আরবী) ভাবার্থ নেয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে (আরবী) ও (আরবী) দ্বারা সালাত বা নামায অর্থ নেয়া হয়েছে এবং (আরবী) ও (আরবী) বলা হয়েছে। তারা শুধু নিজেদের উপকারের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ইবাদত করে না, বরং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদেরকেও সুপথ প্রদর্শন করতঃ “সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ”-এর উপর আমল করে উপকার পৌছিয়ে থাকে। কোন্ কাজ করা উচিত এবং কোন্ কাজ পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এসব কথা বাতলিয়ে থাকে আর জ্ঞান ও আমল উভয় প্রকারে হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহর সীমা সংরক্ষণের প্রতি তারা পূর্ণ দৃষ্টি রাখে। সুতরাং তারা আল্লাহর ইবাদত ও সৃষ্টজীবের মঙ্গল কামনা-এই উভয় প্রকারের ইবাদতে পতাকাধারী। এ জন্যেই মহান প্রতিপালক আল্লাহ বলেন-মুমিনদেরকে শুভ সংবাদ দিয়ে দাও, কেননা ও দুটোর সমষ্টির নামই হচ্ছে ঈমান এবং পূর্ণমাত্রায় সৌভাগ্য তো তারাই লাভ করেছে যারা এই দুটো গুণে গুণান্বিত।

(আরবী) দ্বারা (আরবী) বা রোযাকে বুঝানো হয়েছে।

সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) বা সিয়াম পালনকারীগণ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাক কুরআন কারীমের মধ্যে যেখানেই (আরবী) শব্দ ব্যবহার করেছেন সেখানেই উদ্দেশ্য হচ্ছে (আরবী) বা (আরবী) রোযা। যহহাকও (রঃ) এ কথাই বলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, এই উম্মতের (আরবী) হচ্ছে রমযানের সিয়াম পালন করা। মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ (রঃ), আতা (রঃ), আব্দুর রহমান (রঃ), যহ্হাক (রঃ) এবং সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা (রঃ) সবাই এই খেয়ালই রাখেন যে, দ্বারা রোযাদারদেরকে বুঝানো হয়েছে। হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রমযানের রোযাদারগণ। আবূ আমর আল আবদীও (রঃ) এ কথাই বলেন। একটি মারফ হাদীসেও এটাই এসেছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ সিয়ামকারী লোকদেরকে বলা হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন । এটা মাওকুফ, অত্যধিক বিশুদ্ধ) উবাইদ ইবনে উমাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ)-কে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “তারা হচ্ছে সিয়ামকারী।” (এ হাদীসটি ‘মুরসাল’ এবং খুবই উত্তম। আর এটা বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধতম উক্তি) এই উক্তিও আছে যে, (আরবী) দ্বারা জিহাদকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) স্বীয় কিতাব সুনানের মধ্যে আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আবেদন করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে ‘সিয়াহাত’-এর অনুমতি দিন!” তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “আমার উম্মতের ‘সিয়াহাত’ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।”

আম্মারা ইবনে গাযিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট (আরবী) সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে ও প্রত্যেক উঁচু স্থানের উপর তাকবীর পাঠ করাকে (আরবী) বানিয়েছেন।” ইকরামা (রঃ)-এর খেয়াল এই যে, এর দ্বারা বিদ্যা অন্বেষণকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মুহাজিরদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এই উক্তি দু’টি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এখানে এটা মনে রাখার বিষয় যে, এই স্থালে ‘সিয়াহাত’ দ্বারা ঐ অর্থ বুঝানো হয়নি যা কোন কোন দরবেশ ও বনবাসী প্রকৃতির লোক বুঝেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে একাকী সফর করা এবং ঐ লোকগুলোর উদ্দেশ্য, যারা পাহাড়-পর্বতে, খাল-খন্দকে এবং বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় ও জনপদ থেকে পলায়ন করে। কেননা এরূপ করা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে হ্যাঁ, যদি ফিৎনার যুগ হয় এবং দ্বীনের মধ্যে অসঙ্গতিপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে সেটা অন্য কথা। যেমন সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অচিরেই এমন এক যামানা আসবে যখন কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম মাল হবে তার বকরীগুলো, যেগুলোকে সে পাহাড়-পর্বতে ও বৃষ্টিবর্ষণের স্থানে চরিয়ে নিয়ে বেড়াবে এবং ফিত্না হতে বাঁচার উদ্দেশ্যে নিজের দ্বীন নিয়ে পালাতে থাকবে।”

(আরবী) দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা ঐ সব। লোককে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ যথাযথভাবে পালন করে এবং তার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] এখানে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও দয়ার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তিনি মু’মিনদেরকে তাদের জান ও ঐ সম্পদ যা তাঁরা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করেছেন। অথচ এই জান ও মালও সেই আল্লাহরই দান। আবার মূল্য ও বদলা হিসাবে যা দান করেছেন, অর্থাৎ সেই জান্নাত নেহাতই মূল্যবান।

[২] এটা উক্ত ক্রয়-বিনিময়ের তা’কীদ যে, আল্লাহ তাআলা এই সত্য অঙ্গীকার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং কুরআনেও করেছেন। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক অঙ্গীকার পূরণকারী কে হতে পারে?

[৩] এ কথা মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই আনন্দ তখনই করা যাবে, যখন মুসলিমগণ উক্ত ব্যবসা মেনে নেবে। অর্থাৎ, আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করতে কোন দ্বিধা করবে না।

* এখানে ঐ সকল মু’মিন ব্যক্তিদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে, যাদের জান ও মাল আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে তওবাকারী হবে, নিয়মিত আপন প্রভূর ইবাদতকারী হবে, আর মুখে আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনাকারী এবং এই আয়াতে বর্ণিত সকল গুণের অধিকারী হবে। অধিকাংশ তফসীরবিদদের মতে سَائحُون এর অর্থ রোযাপালনকারী। এই অর্থকেই ইবনে কাসীর (রহঃ) সহীহ ও প্রসিদ্ধ মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। অনেকে তার অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ বলেছেন। এরপরেও ‘সিয়াহাত’ এর অর্থ দেশ-ভ্রমণ নয় যেমন অনেকে এই অর্থ নিয়েছেন। অনুরূপ ইবাদতের জন্য পাহাড়ের চূড়া, গুহা এবং নির্জন মরুভূমিতে গিয়ে বসবাস করাও এর অর্থ নয়। কারণ তা বৈরাগ্যবাদের একটা অংশ যা ইসলাম ধর্মে নেই। তবে হ্যাঁ, ফিতনার সময় নিজের দ্বীন বাঁচানোর তাগীদে শহর ও জনবসতি ত্যাগ করে জঙ্গল ও মরুভূমিতে গিয়ে বাস করার অনুমতি হাদীসে দেওয়া হয়েছে। (বুখারী)

* উদ্দেশ্য হল যে, বিশ্বাসী বা পূর্ণ মু’মিন ঐ ব্যক্তি; যে কথা ও কর্মে ইসলামী শিক্ষার উত্তম নমুনা হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারী নয় বরং তার সংরক্ষণকারী হয়। এরূপ পূর্ণ মু’মিনরাই সুসংবাদের অধিকারী। এটা সেই কথাই, যা কুরআনে (آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَات) শব্দ দ্বারা বার বার উক্ত হয়েছে। এখানে কিছু নেক আমলের কথা কিঞ্চিৎ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

তাফসীরে‌ আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

[১] আয়াতের শুরুতে ক্রয় শব্দের ব্যবহার করা হয়। মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে, ক্রয় বিক্রয়ের এই সওদা তোমাদের জন্য লাভজনক ও বরকতময়; কেননা, এর দ্বারা অস্থায়ী জান-মালের বিনিময়ের স্থায়ী জান্নাত পাওয়া গেল। মালামাল হলো আল্লাহরই দান। মানুষ শূন্য হাতেই জন্ম নেয়। তারপর আল্লাহ তাকে অর্থ সম্পদের মালিক করেন এবং নিজের দেয়া সে অর্থের বিনিময়েই বান্দাকে জান্নাত দান করেন। তাই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এ এক অভিনব বেচা-কেনা, মাল ও মূল্য উভয়ই তোমাদেরকে দিয়ে দিলেন আল্লাহ। [বাগভী] হাসান বসরী বলেন, ‘লক্ষ্য কর, এ কেমন লাভজনক সওদা, যা আল্লাহ সকল মুমিনের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন’। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দান করেছেন, তা থেকে কিছু ব্যয় করে জান্নাত ক্রয় করে নাও। [বাগভী] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জামিন হয়ে যান যিনি তাঁর রাস্তায় বের হয়। তাকে শুধুমাত্র আমার রাহে জিহাদই এবং আমার রাসূলের উপর বিশ্বাসই বের করেছে। আল্লাহ তার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন যে, যদি সে মারা যায় তবে তাকে জান্নাত দিবেন অথবা সে যা কিছু গনীমতের মাল পেয়েছে এবং সওয়াব পেয়েছে তা সহ তাকে তার সে ঘরে ফিরে পৌঁছিয়ে দিবেন যেখান থেকে বের হয়েছে’। [বুখারী: ৩১২৩; মুসলিম: ১৮৭৬]।

* [১] এ গুণাবলী হলো সেসব মুমিনের যাদের সম্পর্কে পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে- আল্লাহ্‌ জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন’। আল্লাহ্‌র রাহে জিহাদকারী সবাই এ আয়াতের মর্মভুক্ত। তবে এখানে যে সমস্ত গুণাবলীর উল্লেখ হয়েছে, তা শর্তরূপে নয়। কারণ, আল্লাহর রাহে কেবল জিহাদের বিনিময়েই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে এ গুণাবলী উল্লেখের উদ্দেশ্য এই যে, যারা জান্নাতের উপযুক্ত, তারা এ সকল গুণের অধিকারী হয়। [কুরতুবী]

[২] অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে আয়াতে উল্লেখিত (السائحون) দ্বারা উদ্দেশ্য সাওম পালনকারীগণ। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, কুরআন মাজীদে ব্যবহৃত (سائحون) শব্দের অর্থ রোযাদার। [বাগভী; কুরতুবী] তাছাড়া (سائح) বলে জিহাদকারীদেরকেও বুঝায়। তবে মূল শব্দটি (سياحة) যার অর্থঃ দেশ ভ্রমণ। বিভিন্ন ধর্মের লোক দেশ ভ্রমণকে ইবাদাত মনে করতো। অর্থাৎ মানুষ পরিবার পরিজন ও ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে ধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াত। ইসলাম একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে [ইবন কাসীর] এর পরিবর্তে সিয়াম পালনের ইবাদতকে এর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। আবার কতিপয় বর্ণনায় জিহাদকেও দেশ ভ্রমনের অনুরূপ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমার উম্মতের দেশভ্রমণ হলো জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ।’ [আবুদাউদ: ২৪৮৬]

[৩] আলোচ্য আয়াতে মুমিন মুজাহিদের আটটি গুণ উল্লেখ করে নবম গুণ হিসেবে বলা হয়েছে “আর আল্লাহর দেয়া সীমারেখার হেফাযতকারী” মূলতঃ এতে রয়েছে উপরোক্ত সাতটি গুণের সমাবেশ অর্থাৎ সাতটি গুণের মধ্যে যে তাফসীল রয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত সার হলো যে, এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা তথা শরী’আতের হুকুমের অনুগত ও তার হেফাযতকারী। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 111-112

إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُوْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ

Verily, Allah has purchased of the believers their lives and their properties for (the price) that theirs shall be the Paradise.
Allah has purchased the Souls and Wealth of the Mujahidin in Return for Paradise

Allah says,

إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُوْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ

Verily, Allah has purchased of the believers their lives and their properties for (the price) that theirs shall be the Paradise.

Allah states that He has compensated His believing servants for their lives and wealth — if they give them up in His cause — with Paradise. This demonstrates Allah’s favor, generosity and bounty, for He has accepted the good that He already owns and bestowed, as a price from His faithful servants.

Al-Hasan Al-Basri and Qatadah commented,

“By Allah! Allah has purchased them and raised their worth.”

Shimr bin Atiyyah said,

“There is not a Muslim but has on his neck a sale that he must conduct with Allah; he either fulfills its terms or dies without doing that.”

He then recited this Ayah.

This is why those who fight in the cause of Allah are said to have conducted the sale with Allah, meaning, accepted and fulfilled his covenant.

Allah’s statement,

يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ

They fight in Allah’s cause, so they kill and are killed.

indicates that whether they were killed or they kill the enemy, or both, then Paradise will be theirs.

The Two Sahihs recorded the Hadith,

وَتَكَفَّلَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ لَا يُخْرِجُهُ إِلاَّ جِهَادٌ فِي سَبِيلِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي بِأَنْ تَوَفَّاهُ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ أَوْ يَرْجِعَهُ إِلَى مَنْزِلِهِ الَّذِي خَرَجَ مِنْهُ نَايِلً مَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَة

Allah has made a promise to the person who goes out (to fight) in His cause; `And nothing compels him to do so except Jihad in My Cause and belief in My Messengers.’

He will either be admitted to Paradise if he dies, or compensated by Allah, either with a reward or booty if He returns him to the home which he departed from.

Allah’s statement,
.
وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالاِنجِيلِ وَالْقُرْانِ

It is a promise in truth which is binding on Him in the Tawrah and the Injil and the Qur’an.

affirms this promise and informs us that Allah has decreed this for His Most Honorable Self, and revealed it to His Messengers in His Glorious Books, the Tawrah that He sent down to Musa, the Injil that He sent down to Isa, and the Qur’an that was sent down to Muhammad, may Allah’s peace and blessings be on them all.

Allah said next,

وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ

And who is truer to his covenant than Allah,

affirming that He never breaks a promise.

Allah said in similar statements,

وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثاً

And who is truer in statement than Allah, (4:87)

and,

وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلً

And whose words can be truer than those of Allah. (4:122)

Allah said next,

فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

Then rejoice in the bargain which you have concluded. That is the supreme success.

meaning, let those who fulfill the terms of this contract and uphold this covenant receive the good news of great success and everlasting delight.
This is the description of the believers from whom Allah has purchased their souls and wealth, who have these beautiful and honorable qualities,

التَّايِبُونَ

who repent,

from all sins and shun all evils,

الْعَابِدُونَ

who worship,

their Lord and preserve the acts of worship that include statements and actions. Praising Allah is among the best statements.

This is why Allah said next,

الْحَامِدُونَ

who praise (Him),

Fasting is among the best actions, involving abstaining from the delights of food, drink and sexual intercourse, this is the meaning hereby,

السَّايِحُونَ
As-Sa’ihun (who fast),

Allah also described the Prophet’s wives that they are,
سَـيِحَـتٍ
(Sa’ihat) (66:5),

meaning, they fast.

As for prostrating and bowing down, they are acts of the prayer,

الرَّاكِعُونَ السَّاجِدونَ

who bow down, who prostrate themselves,

الامِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللّهِ

who enjoin good and forbid evil, and who observe the limits set by Allah.

These believers also benefit Allah’s creation and direct them to His obedience by ordaining righteousness and forbidding evil. They have knowledge about what should be performed and what should be shunned.

This includes abiding by Allah’s limits in knowledge and action, meaning, what He allowed and what He prohibited. Therefore, they worship the True Lord and advise creation.

This is why Allah said next,

وَبَشِّرِ الْمُوْمِنِينَ

And give glad tidings to the believers.

since faith includes all of this, and the supreme success is for those who have faith.

Leave a Reply