أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 647){মুনাফিক কি? ২১ নং বই} [أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ
মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না যে?
See they not that they are put in trial?]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
১২৪-১২৭ নং আয়াত:-
وَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ
মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না যে?
See they not that they are put in trial?
وَ اِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَۃٌ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّقُوۡلُ اَیُّکُمۡ زَادَتۡہُ ہٰذِہٖۤ اِیۡمَانًا ۚ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فَزَادَتۡہُمۡ اِیۡمَانًا وَّ ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿۱۲۴﴾
আর যখনই কোন সূরা নাযিল হয়। তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল ? অতঃপর যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়।
And whenever a surah is revealed, there are among the hypocrites those who say, “Which of you has this increased faith?” As for those who believed, it has increased them in faith, while they are rejoicing.
وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ مَّرَضٌ فَزَادَتۡہُمۡ رِجۡسًا اِلٰی رِجۡسِہِمۡ وَ مَا تُوۡا وَ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ ﴿۱۲۵﴾
আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরো কলুষ যুক্ত করে। আর তাদের মৃত্যু ঘটে কাফের অবস্থায়।
But as for those in whose hearts is disease, it has [only] increased them in evil [in addition] to their evil. And they will have died while they are disbelievers.
اَوَ لَا یَرَوۡنَ اَنَّہُمۡ یُفۡتَنُوۡنَ فِیۡ کُلِّ عَامٍ مَّرَّۃً اَوۡ مَرَّتَیۡنِ ثُمَّ لَا یَتُوۡبُوۡنَ وَ لَا ہُمۡ یَذَّکَّرُوۡنَ ﴿۱۲۶﴾
তারা কি দেখে না যে, ‘তাদেরকে প্রতিবছর একবার বা দু’বার বিপর্যস্ত করা হয় ?’ এর পরও তারা তাওবাহ্ করে না এবং উপদেশ গ্রহন করে না।
Do they not see that they are tried every year once or twice but then they do not repent nor do they remember?
وَ اِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَۃٌ نَّظَرَ بَعۡضُہُمۡ اِلٰی بَعۡضٍ ؕ ہَلۡ یَرٰىکُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ ثُمَّ انۡصَرَفُوۡا ؕ صَرَفَ اللّٰہُ قُلُوۡبَہُمۡ بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۱۲۷﴾
আর যখনই কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করছে কি?’ তারপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ্ তাদের হৃদয়কে সত্যবিমুখ করে দেন; কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভালভাবে বোঝে না।
And whenever a surah is revealed, they look at each other, [saying], “Does anyone see you?” and then they dismiss themselves. Allah has dismissed their hearts because they are a people who do not understand.
১২৪-১২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
মুনাফিকদের ব্যাপারে সূরা তাওবার এটা সর্বশেষ আলোচনা। বিধি-বিধান সম্বলিত কুরআনের কোন সূরা অবতীর্ণ হলে মুনাফিকরা কী বলে এবং তাদের অন্তরের কী অবস্থা হয় আর মু’মিনদের কী অবস্থা হয় এখানে সে সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। যখন পবিত্র কুরআনের কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন মুনাফিকরা বলে, এটা কি কারো ঈমান বৃদ্ধি করবে? মূলত: আল্লাহ তা‘আলার বাণী শুনে মু’মিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় আর মুনাফিকদের অন্তরের ব্যাধি আরো বেড়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ ھُوَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا ھُدًی وَّشِفَا۬ئٌﺚ وَالَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ فِیْٓ اٰذَانِھِمْ وَقْرٌ وَّھُوَ عَلَیْھِمْ عَمًیﺚ اُولٰ۬ئِکَ یُنَادَوْنَ مِنْ مَّکَانٍۭ بَعِیْدٍ)
“বল: মু’মিনদের জন্য এটা পথ-নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন যে, যেন তাদেরকে আহ্বান করা হয় বহু দূর হতে।” (হা-মীম সিজদাহ ৪১:৪৪)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদেরকে ভর্ৎসনার সাথে প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করছেন; তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছর দু’একবার বিভিন্ন বালা-মুসিবত ও দুর্যোগ দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবুও তারা তাওবাহ করে না?
এ সকল মুনাফিকদের উপস্থিতিতে কোন সূরা অবতীর্ণ হলে ঠাট্টা ও অস্বীকারবশতঃ একজন অপরজনের প্রতি চোখের মাধ্যমে ইশারা করত। কারণ এতে এমন কিছু নাযিল হয়েছে যাতে তাদের দোষ-ত্র“টির বর্ণনা করা হয়েছে।
অতঃপর তারা বলতঃ যদি তোমরা উঠে চলে যাও তাহলে কি কেউ দেখবে? যদি না দেখে তাহলে লাঞ্ছনার ভয়ে তারা নাবী (সাঃ)-এর কাছ থেকে উঠে চলে যেত । (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ২০৭)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আনুগত্য করার মাধ্যমে মু’মিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় ও অবাধ্য কাজে লিপ্ত হলে কমে যায়।
২. ঈমান ও সৎ আমল করে আনন্দিত হওয়া বৈধ।
৩. অন্তরের ব্যাধির কোন চিকিৎসা নেই, তবে যদি আল্লাহ তা‘আলা আরোগ্য দান করেন।
৪. মুনাফিকরা বিশ্বাসে ও আমলে কাফিরদের চেয়েও জঘন্য।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বেড়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা, আশা-আকাংখা, চিন্তা-ভাবনা মতবাদ, পরিচিত আচার-আচরণ, স্বার্থ, আরাম-আয়েশ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে কষ্ট স্বীকার করে নেয়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা ও পরিপুষ্ট হয়। পক্ষান্তরে, এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণ শক্তি নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। কাজেই জানা গেলো, ঈমান কোন অনড়, নিশ্চল ও স্থির জিনিসের নাম নয়। এটা শুধুমাত্র একবার মানা ও না মানার ব্যাপার নয়। একবার না মানলে শুধুমাত্র একবারই না মানা হলো এবং একবার মেনে নিলে কেবলমাত্র একবারই মেনে নেয়া হলো এমন নয়। বরং মানা ও না মানা উভয়ের মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি রয়েছে। প্রত্যেকটি অস্বীকৃতির মাত্রা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। আবার এমনিভাবে প্রত্যেকটি স্বীকৃতি ও মেনে নেয়ার মাত্রাও বাড়তে কমতে পারে। তবে ফিকাহর বিধানের দিক দিয়ে তামাদ্দুনিক ব্যবস্থায় অধিকার ও মর্যাদা নির্দিষ্ট করার সময় মানা ও না মানার ব্যাপাটির একবারই গণ্য করা হয়। ইসলামী সমাজে সকল স্বীকৃতি দানকারীর (মু’মিন) আইনগত অধিকার ও মর্যাদা সমান। তাদের মধ্যে মানার (ঈমান) ব্যাপারে বহুতর পার্থক্য থাকতে পারে। তাতে কিছু আসে যায় না। আবার সকল অস্বীকৃতিদানকারী একই পর্যায়ের যিম্মী বা হরবী (যুদ্ধমান) অথবা চুক্তিবদ্ধ ও আশ্রিত গণ্য হয়, তাদের মধ্যে কুফরীর ব্যাপারে যতই পার্থক্য থাক না কেন।
* এমন কোন বছর অতিবাহিত হয় না যখন তাদের ঈমানের দাবী এক দুবার পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না এবং এভাবে তার অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ হয়ে যায় না। কখনো কুরআনে এমন কোন হুকুম আসে যার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তির আশা আকাংখার ওপর কোন নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। কখনো দ্বীনের এমন কোন দাবী সামনে এসে যায় যার ফলে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। কখনো এমন কোন আভ্যন্তরীণ, সংকট সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে তারা নিজেদের পার্থিব সম্পর্ক এবং নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোত্রীয় স্বার্থের মোকাবিলায় আল্লাহর ও তার রসূলের দ্বীনকে কি পরিমাণ ভালবাসে তার পরীক্ষা করাই উদ্দেশ্য হয়। কখনো এমন কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয় যার মাধ্যমে তারা যে দ্বীনের ওপর ঈমান আনার দাবী করছে তার জন্য ধন, প্রাণ, সময় ও শ্রম ব্যয় করতে তারা কতটুকু আগ্রহী তার পরীক্ষা হয়ে যায়। এ ধরনের সকল অবস্থায় কেবল তাদের মিথ্যা অঙ্গীকারের মধ্যে যে মুনাফিকীর আবর্জনা চাপা পড়ে আছে তা শুধু উন্মুক্ত হয়ে সামনে চলে আসে না বরং যখন তারা ঈমানদের দাবী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পালাতে থাকে তখন তাদের ভেতরের ময়লা আবর্জনা আগের চাইতে আরো বেশী বেড়ে যায়।
* নিয়ম ছিল, কোন সূরা নাযিল হওয়ার সাথে সাথেই নবী (সা.) মুসলমানদের সম্মেলন আহবান করতেন তারপর সাধারণ সভায় ভাষণের আকারে সূরাটি পড়ে শুনাতেন। এ ধরনের মহফিলে ঈমানদাররা পূর্ণ মনোযোগ সহকারে ভাষণ শুনতেন এবং তার মধ্যে ডুবে যেতেন। কিন্তু মুনাফিকদের ওপর এর ভিন্নতর প্রভাব পড়তো। হাযির হওয়ার হুকুম ছিল বলে তার হাযির হয়ে যেতো। তাছাড়া মাহফিলে শরীক না হলে তাদের মুনাফিকী প্রকাশ হয়ে যাবে, একথা মনে করেও তারা সম্মেলনে হাযির হতো। কিন্তু এ ভাষণের ব্যাপারে তাদের মনে কোন আগ্রহ জাগতো না। অত্যন্ত অনীহা ও বিরক্তি সহকারে তারা সেখানে বসে থাকতো। নিজেদের উপস্থিতি গণ্য করাবার পর তাদের চিন্তা হতো, কিভাবে দ্রুত এখান থেকে পালাবে। তাদের এ অবস্থার চিত্র এখানে আঁকা হয়েছে।
* এ নির্বোধরা নিজেরাই নিজেদের স্বার্থ বুঝে না। নিজেদের কল্যাণের ব্যাপারে তারা গাফেল এবং নিজেদের ভালর কথা চিন্তা করে না। তারা যে এ কুরআন ও এ পয়গম্বরের মাধ্যমে কত বড় নিয়ামত লাভ করেছে তার কোন অনুভূতিই তাদের নেই। নিজেদের সংকীর্ণ জগত এবং এর নিতান্ত নিম্ন পর্যায়ের কার্যকলাপের মধ্যে তারা কুয়ার ব্যাঙের মতো ডুবে আছে। যার ফলে যে মহা জ্ঞান ও অতি উন্নত পর্যায়ের পথ নির্দেশনার বদৌলতে তারা আরবের এ মরু প্রান্তরের সংকীর্ণ অন্ধকারাচ্ছান্ন গর্ত থেকে বের হয়ে সমগ্র বিশ্ব মানবতার নেতা ও সর্বাধিনায়কে পরিণত হতে পারে এবং শুধুমাত্র এ নশ্বর দুনিয়াতেই নয় বরং পরবর্তী অনন্তকালীণ অবিনশ্বর জীবনেও চিরন্তন সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়, সেই জ্ঞান ও শিক্ষার মূল্য ও মর্যাদা তারা বুঝতে পারে না। এ অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার স্বাভাবিক ফলশ্রুতিতে আল্লাহ লাভবান হবার সুযোগ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছেন। যখন কল্যাণ ও সাফল্য এবং শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের এ সম্পদ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে এবং সৌভাগ্যবানরা দুহাতে তা লুটতে থাকে তখন এ দুর্ভাগাদের মন অন্য কোন দিকে বাধা পড়ে এবং এ অবসরে কত বড় মহামূল্যবান সম্পদ থেকে যে তারা বঞ্চিত হয়ে গেছে তা তারা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২৪-১২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন এই সূরা অবতীর্ণ হয় তখন মুনাফিকরা একে অপরকে বলে-আচ্ছা, এই সূরাটি মুসলিমদের মধ্যে এমন কোন অতিরিক্ত ঈমান এবং অতিরিক্ত সৌন্দর্য সৃষ্টি করলো? তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হ্যাঁ, হ্যা, নিশ্চয়ই মুসলিমদের মধ্যে অধিক ঈমান সৃষ্টি হয়েছে। আর তারা এতে খুশীও হয়েছে।
এই আয়াতটি এই ব্যাপারে বড় দলীল যে, ঈমান বাড়ে এবং কমে। এটা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ আলেমের মাযহাব। এমন কি অধিকাংশের উক্তি এই যে, এই ইতেকাদ বা বিশ্বাসের উপর উম্মতের ইজমা হয়েছে। শারহে বুখারীর শুরুতে এই মাসআলার উপর দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে।
কিন্তু যাদের অন্তরে পীড়া রয়েছে, এই আয়াতের মাধ্যমে তাদের সন্দেহ আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা হচ্ছে (অন্তর রোগের) শিফা।” (১৭:৮২) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি মুমিনদেরকে বলে দাও যে, কুরআন হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে হিদায়াত ও শিফা। আর যারা ঈমান আনে না, (কুরআনের দিক থেকে) তাদের কানে বধিরতা রয়েছে, তাদের চক্ষুগুলো অন্ধ হয়ে আছে, তাদেরকে যেন এতো দূর থেকে ডাকা হচ্ছে যে, তারা শুনতে পাচ্ছে না।” (৪১:৪৪) এটা কতই না দুর্ভাগ্যের কথা যে, যে জিনিস অন্তরের হিদায়াতের যোগ্যতা রাখে, সেটাই তাদের পথভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। যেমন রুগ্ন ব্যক্তিকে ভাল খাবার দিলেও তা তার ক্ষতি সাধনই করে থাকে।
* ১২৬-১২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেন- এই মুনাফিকরা কি এটুকুও বুঝে না যে, প্রতি বছর তাদেরকে একবার বা দু’বার ফিত্যায় জড়িয়ে ফেলা হয়। তথাপি তারা তাদের পূর্ববর্তী গুনাহ্ থেকে বিরত থাকছে না এবং এই ব্যাপারে আগামীতে তাদের যে অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে তা থেকে একটুও ভয় করছে না? কাতাদা (রঃ) বলেন যে, যুদ্ধের বিপদ তাদের মাথায় পতিত হতো। সাহাবীগণ বলেনঃ “প্রতি বছর আমরা কোন না কোন মিথ্যা গুজব শুনতাম যার ফলে অধিকাংশ লোক বিভ্রান্ত হয়ে পড়তো। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “কাঠিন্যের যুগ বেড়ে চলছে, হীনমন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রত্যেক বছর পূর্ব বছরের তুলনায় খারাপ অনুভূত হচ্ছে।” উল্লিখিত আয়াত মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়েছে যে, নবী (সঃ)-এর উপর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বলে- তোমাদেরকে কেউ দেখছে না তো? তারপর তারা সত্য থেকে ফিরে যায়। দুনিয়ায় এই মুনাফিকদের অবস্থা এই যে, না তারা সত্যের সামনে আসে, না তা বুঝে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের কি হলো যে, তারা এই উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? যেন তারা বন্য গাধা যারা ব্যাঘ্র হতে পলায়ন করছে।” (৭৪:৪৯-৫১) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুতরাং কাফিরদের কি হলো যে, তারা (এসব বিষয় জেনে নেয়া সত্ত্বেও তা মিথ্যা প্রতিপাদনের জন্যে) তোমার দিকে দৌড়িয়ে আসছে ডনি দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে দলবদ্ধভাবে?” (৭০:৩৬-৩৭) তারা যেন বন্য পশু। তারা ব্যাঘ্র হতে পলায়ন করছে এবং একবার ডান দিকে যাচ্ছে, একবার বাম দিকে যাচ্ছে। সত্য থেকে মিথ্যার দিকে তারা ঝুঁকে পড়ছে। আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। না তারা আল্লাহর ডাক বুঝতে পারছে, না বুঝবার চেষ্টা করছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই সূরাতে মুনাফিকদের যে স্বভাব-চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে, এই আয়াতটি তারই পরিশিষ্ট ও পরিপূরক। এই আয়াতে বলা হচ্ছে যে, যখন তাদের অনুপস্থিতিতে কোন সূরা বা তার কোন অংশ অবতীর্ণ হত এবং যখন তারা জানতে পারত তখন তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ স্বরূপ নিজেরা পরস্পর বলাবলি করত যে, ‘এর দ্বারা তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি হল?’
[২] আল্লাহ তাআলা বলেন, যে সূরা অবতীর্ণ হয় তাতে অবশ্যই মু’মিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং মু’মিনরা আপন ঈমান বৃদ্ধি হওয়াতে আনন্দিত হয়। এই আয়াতটিও মানুষের ঈমান কম-বেশি হওয়ার প্রমাণ বহন করে; যেমন মুহাদ্দিসগণের মত।
* অন্তরে রোগের অর্থ হল মুনাফিকি এবং আল্লাহর আয়াত বিষয়ে সন্দেহ। (আল্লাহ তাআলা) বলেন, এই সূরাসমূহ মুনাফিকদেরকে তাদের মুনাফিকি ও অপবিত্রতা আরো বৃদ্ধি করে এবং তারা নিজেদের কুফরী ও মুনাফিকিতে এমন সুদৃঢ় হয়ে যায় যে, তাদের ভাগ্যে তওবা করার সুযোগই লাভ হয় না। ফলে কুফরীর উপরেই তাদের মৃত্যু ঘটে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য স্থানে বলেছেন, “আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও করুণা, কিন্তু তা সীমালংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” (বানী ইস্রাঈল ১৭:৮২) এটা ঠিক তাদের চূড়ান্ত দুর্ভাগ্য যে, যে জিনিস দ্বারা মানুষের অন্তর হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, সেই জিনিসই তাদের ভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন কোন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও পেট খারাপ থাকলে, যে খাবার দ্বারা মানুষ শক্তি ও সুস্বাদ গ্রহণ করে, সেই খাবার সেই ব্যক্তির রোগ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
* يُفْتَنُوْنَ এর অর্থ ‘পরীক্ষা করা হয়’ বিপদ বা দুর্যোগে ফেলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি। (কিন্তু এই অর্থ বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।) অথবা বিপদ বলতে শারীরিক অসুস্থতা ও কষ্ট অথবা যুদ্ধে শরীক হওয়ার সময় যে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় তা বুঝানো হয়েছে। পূর্বাপর বাক্য অনুযায়ী এই অর্থই অধিক সঠিক হবে।
* তাদের উপস্থিতিতে যখন এমন সূরা অবতীর্ণ হয়, যাতে মুনাফিকদের বদমায়েশি ও চক্রান্তের দিকে ইঙ্গিত থাকে, তখন তারা একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করে চুপি চুপি কেটে পড়ে, ইঙ্গিতে অথবা মনে মনে বলে, মুসলিমদের কেউ তোমাদেরকে দেখছে না তো?
* আল্লাহর আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরকে কল্যাণ ও হিদায়াত-বিমুখ করে দিয়েছেন।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, কুরআনের আয়াতের তেলাওয়াত, চিন্তা-ভাবনা এবং সে অনুযায়ী আমল করার ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। তার উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি ঘটে। ঈমানের নূর ও আস্বাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা সহজ হয়ে উঠে। ইবাদাতে স্বাদ পায়, গুনাহের প্রতি স্বাভাবিক ঘৃণা জন্মে ও কষ্টবোধ হয়। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঈমান যখন অন্তরে প্রবেশ করে, তখন এটি নূরের শ্বেতবিন্দুর মত দেখায়। তারপর যতই ঈমানের উন্নতি হয়, সেই শ্বেতবিন্দু সম্প্রসারিত হয়ে উঠে। এমনকি শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর নূরে ভরপুর হয়ে যায়। তেমনি গোনাহ ও মুনাফিকীর ফলে প্রথমে অন্তরে একটি কাল দাগ পড়ে। তারপর পাপাচার ও কুফরীর তীব্রতার সাথে সাথে সে কাল দাগটিও বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর কালো হয়ে যায়। [বাগভী] এজন্য সাহাবায়ে কেরাম একে অন্যকে বলতেন আস, কিছুক্ষন একত্রে বসি এবং দ্বীন ও পরকাল সম্পর্কে আলোচনা করি, যাতে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। [বুখারী]
* এখানে মুনাফিকদের সতর্ক করা হয়েছে যে, তাদের কপটতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ প্রভৃতি অপরাধের পরিণতিতে প্রতিবছরই তারা কখনো একবার, কখনো দু’বার নানা ধরনের বিপদে বা পরীক্ষায় নিপতিত হয়। মুজাহিদ বলেন, তারা দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধায় পতিত হয়। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অথবা রোগ-শোকে। হাসান বসরী বলেন, রাসূলের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণের মাধ্যমে [কুরতুবী] তাছাড়া কখনো তাদের কাফের মিত্ররা পরাজিত হয়, কখনো তাদের গোপন অভিসন্ধি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ফলে তারা দিবানিশি মর্মপীড়া ভোগ করে। [বাগভী]
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 124-127
وَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ
See they not that they are put in trial?
Faith of the Believers increases, while Hypocrites increase in Doubts and Suspicion
Allah said,
وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ
And whenever there comes down a Surah,
then among the hypocrites are,
فَمِنْهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَـذِهِ إِيمَانًا
some of them say:”Which of you has had his faith increased by it!”
They say to each other, who among you had his faith increased by this Surah (from the Qur’an).
Allah the Exalted said,
فَأَمَّا الَّذِينَ امَنُواْ فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
As for those who believe, it has increased their faith, and they rejoice.
This Ayah is one of the mightiest evidences that faith increases and decreases, as is the belief of most of the Salaf and later generations of scholars and Imams.
Many scholars said that there is a consensus on this ruling. We explained this subject in detail in the beginning of the explanation of Sahih Al-Bukhari, may Allah grant him His mercy.
Allah said next.
وَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ
But as for those in whose hearts is a disease, it will add Rijs to their Rijs.
The Surah increases them in doubt, and brings more suspicion on top of the doubts and suspicion that they had before. Allah said in another Ayah,
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْءَانِ مَا هُوَ شِفَأءٌ
And We send down in the Qur’an that which is a healing. (17:82)
and,
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدًى وَشِفَأءٌ وَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ فِى ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى أُوْلَـيِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ
Say:”It is for those who believe, a guide and a healing. And as for those who disbelieve, there is heaviness (deafness) in their ears, and it (the Qur’an) is blindness for them. They are those who are called from a place far away (so they neither listen nor understand).” (41:44)
This indicates the misery of the hypocrites and disbelievers, since, what should bring guidance to their hearts is instead a cause of misguidance and destruction for them. Similarly, those who get upset by a type of food, for instance, will be upset and anxious even more if they are fed that food!
وَمَاتُواْ وَهُمْ كَافِرُونَ
and they die while they are disbelievers.
Hypocrites suffer Afflictions
Allah says,
أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ
See they not that they are put in trial,
being tested,
فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ
once or twice every year! Yet, they turn not in repentance, nor do they learn a lesson.
They neither repent from their previous sins nor learn a lesson for the future.
Mujahid said that;
hypocrites are tested with drought and hunger.
Allah said;
وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُم مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُواْ صَرَفَ اللّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُون
And whenever there comes down a Surah, they look at one another (saying):”Does any one see you!” Then they turn away. Allah has turned their hearts because they are a people that understand not.
This describes the hypocrites that when a Surah is revealed to the Messenger of Allah,
نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ
(they look at one another), they turn their heads, right and left, saying,
هَلْ يَرَاكُم مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُواْ
(“Does any one see you!” Then they turn away. ..) turning away from, and shunning the truth.
This is the description of hypocrites in this life, for they do not remain where the truth is being declared, neither accepting nor understanding it, just as Allah said in other Ayat,
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِينَ
كَأَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنفِرَةٌ
فَرَّتْ مِن قَسْوَرَةٍ
Then what is wrong with them that they turn away from admonition As if they were wild donkeys. Fleeing from a lion. (74:49-51)
and,
فَمَالِ الَّذِينَ كَفَرُواْ قِبَلَكَ مُهْطِعِينَ
عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ عِزِينَ
So what is the matter with those who disbelieve that they hasten to hear from you. (Sitting) in groups on the right and on the left. (70:36-37)
This Ayah also means, what is the matter with these people who turn away from you to the right and to the left, to escape from truth and revert to falsehood.
Allah’s statement,
ثُمَّ انصَرَفُواْ صَرَفَ اللّهُ قُلُوبَهُم
Then they turn away. Allah has turned their hearts (from Truth) is similar to,
فَلَمَّا زَاغُواْ أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ
So when they turned away, Allah turned their hearts away. (61:5).
Allah said next,
بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُون
because they are a people that understand not.
They neither understand Allah’s Word nor attempt to comprehend it nor want it. Rather, they are too busy, turning away from it. This is why they ended up in this condition.