(Book# 657) [ وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল, Mankind were but one community, ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 657)
[ وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً
সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল,
Mankind were but one community, ]
www.motaher21.net

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
১৯ নং আয়াত:-
وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً
সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল,
Mankind were but one community,
وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً فَاخۡتَلَفُوۡا ؕ وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّکَ لَقُضِیَ بَیۡنَہُمۡ فِیۡمَا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۹﴾
সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। যদি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্ব-ঘোষণা না থাকত, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত।
And mankind was not but one community [united in religion], but [then] they differed. And if not for a word that preceded from your Lord, it would have been judged between them [immediately] concerning that over which they differ.

১৯ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

সূরা আল বাকারায় বলেছেন:-
আয়াত নং :-২১৩

كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً١۫ فَبَعَثَ اللّٰهُ النَّبِیّٖنَ مُبَشِّرِیْنَ وَ مُنْذِرِیْنَ١۪ وَ اَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِیَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ فِیْمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ١ؕ وَ مَا اخْتَلَفَ فِیْهِ اِلَّا الَّذِیْنَ اُوْتُوْهُ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَیِّنٰتُ بَغْیًۢا بَیْنَهُمْ١ۚ فَهَدَى اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖ١ؕ وَ اللّٰهُ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ

প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। (তারপর এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা হয়) তখন আল্লাহ‌ নবী পাঠান। তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়।—(এবং প্রথমে তাদেরকে সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়নি বলে এ মতভেদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, তা নয়) মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল। তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে। — কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ‌ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল। আল্লাহ‌ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন।

তাপসীর:-

অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ লোকেরা আন্দাজ ও অনুমানের ভিত্তিতে “ধর্মের” ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে বলেঃ মানুষের জীবনের সূচনা হয়েছে শিরকের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে। তারপর ক্রমিক বিবর্তন ও ক্রম-উন্নতির মাধ্যমে অন্ধকার অপসৃত হতে ও আলোকমালা বাড়তে থেকেছে। এভাবে অবশেষে একদিন মানুষ তৌহীদের দ্বারপ্রান্তের পৌঁছেছে। বিপরীতপক্ষে কুরআন বলছেঃ পরিপূর্ণ আলোর মধ্যেই দুনিয়ায় মানুষে জীবনকালের সূচনা হয়েছে। মহান আল্লাহ‌ সর্বপ্রথম যে মানুষটিকে সৃষ্টি করেছিলেন তাকে প্রকৃত সত্যের জ্ঞান দান করেছিলেন এবং তার জন্য সঠিক পথ কোন্‌টি তাও বলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত বনী আদম সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখন তারা একটি উম্মাত ও একই দলভুক্ত ছিল। অতঃপর লোকেরা নতুন নতুন পথ ও বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে থাকে। তাদের প্রকৃত সত্যের জ্ঞান ছিল না বলে তারা এমনটি করেছিল তা নয় বরং প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত থাকার পরও তাদের কেউ কেউ নিজেদের বৈধ অধিকারের চাইতে বেশী মর্যাদা, স্বার্থ ও লাভ অর্জন করতে চাইতো। এজন্য তারা পরস্পরের ওপর যুলুম, উৎপীড়ন ও বাড়াবাড়ি করার ইচ্ছা পোষণ করতো। এই গলদ ও অনিষ্টকারিতা দূর করার জন্য মহান আল্লাহ‌ নবী পাঠাতে শুরু করেন। নবীদেরকে এজন্য পাঠানো হয়নি যে, তাঁরা প্রত্যেকে একটি পৃথক ধর্মের ভিত গড়ে তুলবেন এবং প্রত্যেকের পৃথক উম্মাত গড়ে উঠবে। বরং মানুষের সামনে তাদের হারানো সত্যপথ সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে তাদেরকে পুনরায় একই উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত করাই ছিল তাঁদের পাঠাবার উদ্দেশ্য।

সূরা আল আন আমের বলেছেন:-
আয়াত নং :-৩৫

وَ اِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَیْكَ اِعْرَاضُهُمْ فَاِنِ اسْتَطَعْتَ اَنْ تَبْتَغِیَ نَفَقًا فِی الْاَرْضِ اَوْ سُلَّمًا فِی السَّمَآءِ فَتَاْتِیَهُمْ بِاٰیَةٍ١ؕ وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجٰهِلِیْنَ

তবুও যদি তাদের উপেক্ষা তোমার কাছে অসহনীয় হয়ে থাকে তাহলে তোমার মধ্যে কিছু শক্তি থাকলে তুমি ভূগর্ভে কোন সুড়ংগ খুঁজে নাও অথবা আকাশে সিঁড়ি লাগাও এবং তাদের কাছে কোন নিদর্শন আনার চেষ্টা করো। আল্লাহ চাইলে এদের সবাইকে হেদায়াতের ওপর একত্র করতে পারতেন। কাজেই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

তাফসীর :
যদি কেবলমাত্র সমস্ত মানুষকে কোন না কোনভাবে সত্যপন্থী বানানোই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে কিতাব নাযিল করা, মু’মিনদেরকে কাফেরদের মোকাবিলায় সংগ্রামরত করা এবং সত্যের দাওয়াতকে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের মনযিল অতিক্রম করাবার কি প্রয়োজন ছিল? আল্লাহর একটি মাত্র সৃজনী ইঙ্গিতেই এ কাজ সম্পন্ন হতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ এ কাজটি এ পদ্ধতিতে করতে চান না। তিনি চান সত্যকে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে লোকদের সামনে পেশ করতে। তারপর তাদের মধ্য থেকে যারা সঠিক ও নির্ভুল চিন্তা শক্তি প্রয়োগ করে সত্যকে চিনে নেবে, তারা নিজেদের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। নিজেদের চরিত্রকে তার ছাঁচে ঢালাই করে বাতিল পূজারীদের মোকাবিলায় নিজেদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে। নিজেদের শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন, উন্নত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, উত্তম জীবনধারা এবং পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্র মাধুর্যে মানব সমাজের সত্যনিষ্ঠ ও সদাচারী ব্যক্তিদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে থাকবে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি সংগ্রাম চালিয়ে স্বাভাবিক পরিবর্তনের পথ ধরে আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার মনযিলে পৌঁছে যাবে। এ কাজে আল্লাহ তাদেরকে পথ দেখাবেন এবং যে পর্যায়ে তারা আল্লাহর কাছ থেকে যে ধরনের সাহায্য লাভের যোগ্য বলে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারবে সে পর্যায়ে তাদেরকে সে সাহায্যও দিয়ে যেতে থাকবেন। কিন্তু যদি কেউ চায় এ স্বাভাবিক পথ পরিহার করে আল্লাহ নিছক তাঁর প্রবল পরাক্রান্ত শক্তির জোরে খারাপ চিন্তা নির্মূল করে মানুষের মধ্যে সুস্থ চিন্তার বিস্তার ঘটাবেন এবং অসুস্থ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিলোপ সাধন করে সৎ ও সুস্থ জীবনধারা নির্মাণ করে দেবেন, তাহলে এমনটি কখনো হবে না। কারণ, যে প্রজ্ঞাপূর্ণ কর্মনীতির ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় একটি দায়িত্বশীল প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তাকে কাজ করার ও আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুকে কাজে লাগাবার ক্ষমতা দিয়েছেন, আনুগত্য ও অবাধ্যতা করার স্বাধীনতা দান করেছেন, পরীক্ষার অবকাশ দিয়েছেন এবং তার প্রচেষ্টা অনুযায়ী পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের জন্য ফায়সালার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

* মহান আল্লাহ‌ যদি পূর্বাহ্নেই ফয়সালা না করে নিতেন যে, প্রকৃত সত্যকে মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না করে তাদের বুদ্ধি, জ্ঞান, বিবেক ও স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতিকে পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন এবং যে ব্যক্তি এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ভুল পথে যেতে চাইবে তাকে সে পথে যাবার ও চলার সুযোগ দেয়া হবে, তাহলে প্রকৃত সত্যকে আজই প্রকাশ ও উন্মুক্ত করে দিয়ে সমস্ত মতবিরোধের অবসান ঘটানো যেতে পারতো।

একটি মারাত্মক বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এখানে একথাটি বলা হয়েছে। সাধারণভাবে আজো লোকেরা এ বিভ্রান্তিজনিত জটিল সমস্যায় ভুগছে। কুরআন নাযিল হবার সময়ও এ সমস্যাটি তাদের সামনে ছিল। সমস্যাটি হচ্ছে, দুনিয়ায় বহু ধর্ম রয়েছে এবং প্রত্যেক ধর্মের লোকেরা তাদের নিজেদের ধর্মকে সত্য মনে করে। এ অবস্থায় এগুলোর মধ্যে কোন ধর্মটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা তাকে কেমন করে যাচাই করা যাবে? এ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এ ধর্ম বিরোধ ও মতপার্থক্য আসলে পরবর্তীকালের সৃষ্টি। শুরুতে সমগ্র মানব গোষ্ঠী একই ধর্মের আওতাভুক্ত ছিল। সেটিই ছিল সত্য ধর্ম। তারপর এ সত্যের ব্যাপারে মতবিরোধ করে লোকেরা বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্ম গড়ে যেতে থাকে। এখন যদি ধর্ম-বৈষম্য ও ধর্ম-বিরোধ দূর করার জন্য তোমাদের মতে বুদ্ধি ও চেতনার সঠিক ব্যবহারের পরিবর্তে শুধুমাত্র আল্লাহর নিজেকে সামনে এসে সত্যকে উন্মুক্ত ও আবরণমুক্ত করে তুলে ধরতে হয়, তাহলে বর্তমান পার্থিব জীবনে তা সম্ভব নয়। দুনিয়ার এ জীবনটাতো পরীক্ষার জন্য। এখানে সত্যকে না দেখে বুদ্ধি ও বিবেচনার সাহায্যে তাকে চিনে নেয়ার পরীক্ষা হয়ে থাকে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, সমস্ত আদম সন্তান প্রথমত তাওহীদে তথা আল্লাহ তা‘আলার একত্বে বিশ্বাসী একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন পৃথিবীর বুকে শির্কের কোন নাম-গন্ধও ছিল না। সকলেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করত, আল্লাহ তা‘আলাকে প্রভু হিসেবে মানত, তারা একই দীনের অনুসারী ছিল। কিন্তু কিছু যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর মানুষের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। যেমন নূহ (عليه السلام)-এর যুগ পর্যন্ত মানুষ তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে তাদের মাঝে একত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং কিছু মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যদেরকেও উপাস্য, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দুঃখ-কষ্ট মোচনকারী ভাবতে আরম্ভ করল এবং ইবাদত শুরু করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা রাসূল প্রেরণ করেন, যারা রাসূলের অনুসরণ করল তারা মুক্তি পেয়ে গেল আর যারা অস্বীকার করল তারা ধ্বংস হয়ে গেল।

(وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَّبِّكَ)
অর্থাৎ যদি আল্লাহ তা‘আলার এ ফায়সালা না হত যে, পূর্ণ প্রমাণ সাব্যস্ত হবার পূর্বে কাউকে শাস্তি দেব না অনুরূপ তিনি সৃষ্টি জগতের হিসাব নিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না করে থাকতেন তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের মাঝে ঘটিত মতবিরোধের ফায়সালা করে দিতেন এবং মু’মিনদেরকে বড় সুখী ও কাফিরদেরকে শাস্তি ও কষ্টের সম্মুখীন করতেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ধর্মের ব্যাপারে মতভেদ করা যাবে না।
২. তাওহীদের ওপর অটল থাকতে হবে।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করা প্রত্যেক মু’মিনের জন্য আবশ্যক।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

(আরবী) আল্লাহ পাকের এই উক্তির ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা কাউকেও শাস্তি দেন না যে পর্যন্ত তিনি তার কাছে নবী পাঠিয়ে দলীল ও হুজ্জত কায়েম করেন। আল্লাহ তা’আলা তো মাখলুককে একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবিত রেখে পরে মৃত্যু দান করে থাকেন। আর যে ব্যাপারে তারা পরস্পর মতভেদ করছিল, কিয়ামতের দিন তিনি তার ফায়সালা করে দিবেন। সেই দিনই মুমিনরা সফলকাম হবে, আর কাফিররা হবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ শিরক হল মানুষের নিজেদের মনগড়া কর্ম। কেননা, প্রথমে এর কোন অস্তিতত্ত্বই ছিল না। সকল মানুষ একই দ্বীন ও একই পথের পথিক ছিল। আর সে পথ হল ইসলামের পথ, যার আসল ভিত্তি হল তাওহীদ। নূহ (আঃ) পর্যন্ত মানুষ সেই তাওহীদের উপর অটল ছিল। পরবর্তীতে তাদের মাঝে একতত্ত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং কিছু মানুষ আল্লাহর সাথে, অন্যদেরকেও উপাস্য, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দুঃখ-কষ্ট মোচনকারী ভাবতে আরম্ভ করে।

[২] অর্থাৎ যদি আল্লাহর এই ফায়সালা না হত যে, “পূর্ণ প্রমাণ সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বে কাউকে শাস্তি দিব না”, অনুরূপ তিনি সৃষ্টি-জগতের (হিসাব-নিকাশের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না করে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের মাঝে ঘটিত মতবিরোধের ফায়সালা করে দিতেন এবং মু’মিনদেরকে বড় সুখী ও কাফেরদেরকে শাস্তি ও কষ্টের সম্মুখীন করতেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ সমস্ত আদম সন্তান প্রথমে একত্ববাদে বিশ্বাসী একই উম্মত ও একই জাতি ছিল। শির্ক ও কুফরের নামও ছিল না। পরে একত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি করে বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়। একই উম্মত এবং সবার মুসলিম থাকার সময়কাল কতদিন এবং কবে ছিল তা বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নূহ আলাইহিস সালাম-এর যুগ পর্যন্ত এমনি অবস্থা ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আদম ও নৃহের মধ্যে দশ প্রজন্ম ছিল যারা তাওহীদের উপর ছিল। [তাবারী; ইবন কাসীর] এরপর মানুষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং ঈমানের বিরুদ্ধে কুফরী ও শির্কী বিস্তার লাভ করে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা তার নবী-রাসূলদেরকে ভীতিপ্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদানকারী হিসেবে কিতাবসহ প্রেরণ করেন। “যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর জীবিত থাকে।” [সূরা আল-আনফাল ৪২] [ইবন কাসীর]

[২] কোন কোন মুফাসসির বলেন, সে কলেমাটি হচ্ছে এই যে, তিনি এ উম্মতকে সবশেষে আনবেন এবং তাদেরকে দুনিয়াতে আযাব না দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। যদি এ অবকাশ না থাকত তবে অবশ্যই তাদের আযাব দিয়ে শেষ করে দেয়া হতো অথবা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যেত। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, এখানে কালেমা’ বলে এটাই বোঝানো হয়েছে যে, তিনি কাউকে দলীল-প্রমাণাদি ছাড়া পাকড়াও করবেন না। আর সেটা হচ্ছে, রাসূল প্রেরণ। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই” [সূরা আল-ইসরা ১৫] কারও কারও মতে, এখানে ‘কালেমা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে বর্ণিত একটি কালেমাকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে এসেছে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রাধান্য পাবে’ [বুখারী: ৭৫৫৩; মুসলিম: ২৭৫১] যদি তা না হতো তবে তিনি অপরাধীদেরকে তাওবার সময় দিতেন না। [কুরতুবী]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 19
وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً
Mankind were but one community,
Mankind were but one community, then they differed (later); and had not it been for a Word that went forth before from your Lord, it would have been settled between them regarding what they differed.

Allah then tells us that Shirk was new among mankind. It was not in existence in the beginning. He tells us that people were believers in one religion and that religion was Islam.

Ibn Abbas said:

“There were ten centuries between Adam and Nuh. They were all on Islam. Then differences among people took place. They worshipped idols and rivals. So Allah sent extensive evidence and irrefutable proof with His Messengers.”

لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَن بَيِّنَةٍ وَيَحْيَى مَنْ حَىَّ عَن بَيِّنَةٍ

So that those who were to be destroyed (for rejecting the faith) might be destroyed after a clear evidence, and those who were to live might live after a clear evidence. (8:42)

Allah’s statement:

وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ

And had not it been for a Word that went forth before from your Lord…

means that if Allah had not decreed He would not punish anyone until the evidence is established against them. And also that if He had not given creatures a respite until a defined term had passed, He would have judged among them in what they disputed. Then He would have caused the believers to be happy and delighted and the disbelievers to be miserable and wretched.

Leave a Reply