(Book# 668) [ وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلٌ ۚ প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রসূল ছিল। And for every nation is a messenger.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 668)
[ وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلٌ ۚ
প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রসূল ছিল।
And for every nation is a messenger.]
www.motaher21.net

وَ اِمَّا نُرِیَنَّکَ بَعۡضَ الَّذِیۡ نَعِدُہُمۡ اَوۡ نَتَوَفَّیَنَّکَ فَاِلَیۡنَا مَرۡجِعُہُمۡ ثُمَّ اللّٰہُ شَہِیۡدٌ عَلٰی مَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۴۶﴾
আর আমি তাদের সাথে যে শাস্তির অঙ্গীকার করছি, যদি ওর কিছু অংশ তোমাকে দেখিয়ে দিই, অথবা তোমাকে মৃত্যু দান করি, সর্বাবস্থায় তাদেরকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। আর আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মেরই সাক্ষী।
And whether We show you some of what We promise them, [O Muhammad], or We take you in death, to Us is their return; then, [either way], Allah is a witness concerning what they are doing

وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلٌ ۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوۡلُہُمۡ قُضِیَ بَیۡنَہُمۡ بِالۡقِسۡطِ وَ ہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۴۷﴾
প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রসূল ছিল। সুতরাং যখন তাদের রসূল এসেছে, তখন ন্যায়ভাবে তাদের ফায়সালা করা হয়েছে, আর তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হয়নি।
And for every nation is a messenger. So when their messenger comes, it will be judged between them in justice, and they will not be wronged

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৪৬-৪৭ নং আয়াত:-
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلٌ ۚ
প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রসূল ছিল।
And for every nation is a messenger.

৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে বলেন: আমি কাফির-মুশরিকদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যদি তারা কুফরী ও শির্কী কার্যকলাপের ওপর বহাল থাকে, এসব বর্জন করে ঈমান না আনে তাহলে তাদের ওপর ঐ শাস্তি আসবে যেরূপ শাস্তি পূর্ববর্তীদের ওপর এসেছিল। হে নাবী! তোমার জীবদ্দশায় সে শাস্তির কিছু অংশ দেখাব, যা দেখে তোমার চক্ষু শীতল হবে যেমন বদর প্রান্তরে তারা নির্মমভাবে নিহত হল। আর যদি তাদেরকে শাস্তি দেয়ার পূর্বেই তোমাকে মৃত্যু দিয়ে দিই তাহলে জেনে রেখ, তাদেরকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে। সেখানে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল কার্যকলাপের ব্যাপারে নিজেই সাক্ষী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللّٰهِ حَقٌّ ج فَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِيْ نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ)‏

“অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আমি তাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করি তার কিছু যদি দেখিয়েই দেই অথবা তোমার মৃত্যু ঘটাই তাহলে তাদের প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” (সূরা মু’মিন ৪০:৭৭)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(فَإِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَإِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ -‏ أَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنٰهُمْ فَإِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ)‏

“আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবু আমি তাদের প্রতিশোধ নিব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে তাদের ওপর আমার অবশ্যই পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৪১-৪২)

সুতরাং দুনিয়াতে তোমার জীবদ্দশায় তাদেরকে শাস্তি না দিলেও তারা তথায় কোন অবস্থায় আমার শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। তাদের কৃতকর্মের ফলাফল ভোগ করতেই হবে।

(وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلٌ)

অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির কাছে সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে। যেমন সূরা নাহলের ৩৬ নং, সূরা ফাতিরের ২৪ নং এবং সূরা যুমারের ২৩ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। এ আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে

১. প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর যখন রাসূলগণ তাদের দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব পূর্ণ করে দিয়েছেন তখন আমি তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দিতাম। অর্থাৎ নাবী ও তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের বাঁচিয়ে নিতাম আর অন্যান্যদেরকে ধ্বংস করে দিতাম। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰي نَبْعَثَ رَسُوْلًا)

“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।” (সূরা ইসরা ১৭:১৫)

আর এ ফায়সালা করাতে তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। কারণ জুলুম তখনই হবে যখন কোন গুনাহ ছাড়া তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করা হবে। অথবা পূর্ণ প্রমাণ পেশ করা ছাড়াই তাদেরকে পাকড়াও করা হবে।

২. অথবা তা কিয়ামতের দিনের সাথে সম্পৃক্ত। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উম্মাতের সাথে তাদের কাছে প্রেরিত রাসূলদেরকে সাথে নিয়ে আসা হবে, ফেরেশতারাও সাক্ষ্য দেবে এবং তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করা হবে। যেমন তার প্রমাণ বহন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَاَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّھَا وَوُضِعَ الْکِتٰبُ وَجِایْ۬ئَ بِالنَّبِیّ۪نَ وَالشُّھَدَا۬ئِ وَقُضِیَ بَیْنَھُمْ بِالْحَقِّ وَھُمْ لَا یُظْلَمُوْنَﮔوَوُفِّیَتْ کُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَھُوَ اَعْلَمُ بِمَا یَفْعَلُوْنَﮕﺟ)

“সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নাবীগণকে ও সাক্ষীগণকে হাজির করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে ও তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তি যা আমল করেছে তার পূর্ণ প্রতিফল তাকে দেয়া হবে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত।” (সূরা যুমার ৩৯:৬৯-৭০)

সুতরাং প্রত্যেক উম্মাতের আমল তাদের রাসূলদের সামনে পেশ করা হবে এবং ভাল মন্দ আমলের কিতাব তুলে ধরা হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সর্বাবস্থায় মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার দিকেই ফিরে যেতে হবে।
২. মানুষ যা করে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই সাক্ষী।
৩. রাসূল প্রেরণ করা ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে শাস্তি দেন না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সেদিন পূর্ণ প্রতিফল দেবেন।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন-হে রাসূল (সঃ)! তোমার মনে শান্তি আনয়নের জন্যে যদি তোমার জীবদ্দশাতেই তাদের (কাফিরদের) উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করি, অথবা তোমার মৃত্যু ঘটিয়ে দেই, তবে জেনে রেখো যে, সর্বাবস্থাতেই তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে হবে। যদি তুমি। দুনিয়ায় বেঁচে না-ও থাকো, তবুও তোমার পরে তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী আমি নিজেই হয়ে যাবো।

হুযাইফা ইবনে উসায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “গতরাত্রে আমার সামনে আমার প্রথম ও শেষের উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল।” একটি লোক তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার প্রথম উম্মতকে আপনার সামনে পেশ করা হয়েছিল এটা তো বুঝলাম। কিন্তু শেষের উম্মতকে কিরূপে পেশ করা হলো?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাদেরকে ‘খাকী’ (মেটো) আকারে আমার সামনে পেশ করা হয়। তোমাদের কোন লোক যেমন তার সঙ্গীকে চিনতে পারে, এর চেয়ে বেশী আমি তাদেরকে চিনতে পারবো।” (এই হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এক একজন রাসূল রয়েছে, যখন তাদের কাছে তাদের রাসূল এসে যায় তখন ন্যায়ভাবে তাদের মীমাংসা করা হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা কিয়ামতের দিনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যমীন আল্লাহর নূরের ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। প্রত্যেক উম্মতকে তাদের নবীর বিদ্যমান অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে পেশ করা হয়। তাদের সাথে থাকে তাদের ভাল বা মন্দ কাজের আমলনামা। এটা তাদের সাক্ষীরূপে কাজ করে। ফিরিশতাগণও সাক্ষী হন যাদেরকে তাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল। একের পর এক প্রত্যেক উম্মতকে পেশ করা হবে। এই উম্মত আখেরী উম্মত হলেও কিয়ামতের দিন এরাই প্রথম উম্মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম এদের ফায়সালাই করবেন। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যদিও আমরা সকলের শেষে এসেছি, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সর্বপ্রথম হবো। সমস্ত মাখলুকের পূর্বে আমাদেরই হিসাব নেয়া হবে।” এই উম্মত এই মর্যাদা লাভ করেছে একমাত্র তাদের রাসূল (সঃ)-এর বরকতে। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক!

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এ উম্মত শব্দটি এখানে শুধুমাত্র সম্প্রদায় অর্থে ব্যবহৃত হয়নি বরং একজন রসূলের আগমনের পর তার দাওয়াত যেসব লোকেরা কাছে পৌঁছে তারা সবাই তার উম্মত ভুক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া রসূলকে তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় উপস্থিত থাকতে হবে এটা এ জন্য অপরিহার্য নয়। বরং রসূলের পরেও যতদিন পর্যন্ত তার শিক্ষা অবিকৃত থাকবে এবং তিনি মূলত কিসের তালিম দিতেন এ বিষয়টি জানা প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে যতদিন সম্ভব হবে ততদিন পর্যন্ত দুনিয়ার সমস্ত মানুষ তারই উম্মত গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সামনে দিকে যে বিধানের আলোচনা আসছে তা তাদের ওপর কার্যকর হবে। এ দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ ﷺ এর আগমনের পর সারা দুনিয়ার মানুষ তার উম্মত ভুক্ত। যতদিন কুরআন তার নির্ভুল এ নির্ভেজাল অবস্থায় প্রকাশিত হতে থাকবে ততদিন এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। এ কারণে আয়াতে একথা বলা হয়নি যে, প্রত্যেক জাতির বা (সম্প্রদায়ের) মধ্যে একজন রসূল রয়েছে বরং বলা হয়েছে প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে।

* এর অর্থ হচ্ছে, রসূলের দাওয়াত কোন মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফয়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত কোন যুক্তি বা সাক্ষ্য-প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে এ ফয়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি ও মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তার কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে এ শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি সেই কাফেরদের ব্যাপারে অঙ্গীকার করছি যে, যদি তারা কুফরী ও শিরকের উপর অনড় থাকে, তবে তাদের উপরেও আল্লাহর ঐরূপ শাস্তি আসতে পারে, যেরূপ পূর্ববর্তী জাতির উপর এসেছে। সেই শাস্তির কিছু অংশ তোমার জীবদ্দশায় প্রেরণ করাও সম্ভব, যা দেখে তোমার চক্ষু শীতল হবে। কিন্তু যদি তার পূর্বেও তোমাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, তবুও কোন ব্যাপার নয়। কারণ সেই সকল কাফেরদেরকে অবশেষে আমার নিকটেই ফিরে আসতে হবে। তাদের সকল আমল ও অবস্থা আমার জানা আছে। সেখানে তারা আমার শাস্তি থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে? অর্থাৎ, পৃথিবীতে আমার বিশেষ হিকমতের ফলে ওরা শাস্তি থেকে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু আখেরাতে আমার শাস্তি থেকে বাঁচার কোন উপায় তাদের থাকবে না। কারণ কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার উদ্দেশ্যই হল, সেখানে অনুগতকে তার আনুগত্যের প্রাপ্য এবং অবাধ্যকে তার অবাধ্যতার শাস্তি প্রদান করা হবে।

* এর একটি অর্থ এই যে, সকল জাতির নিকট আমি রসূল প্রেরণ করেছি। আর যখন রসূল তার তবলীগের দায়িত্ব পূর্ণ করে দিত, তখন আমি তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দিতাম। অর্থাৎ, পয়গম্বর ও তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে বাঁচিয়ে নিতাম আর অন্যান্যদেরকে ধ্বংস করে দিতাম। কারণ, (وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا) অর্থাৎ, “কোন রসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি প্রদান করি না।” (সূরা ইসরা’ ১৭:১৫) আর এই ফায়সালাতে তাদের প্রতি কোন রকম অবিচার ও অত্যাচার হয় না। কারণ অত্যাচার তখনই হবে, যখন কোন গুনাহ ছাড়া তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করা হবে। অথবা কোন পূর্ণ প্রমাণ পেশ করা ছাড়াই তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। (ফাতহুল কাদীর) এর দ্বিতীয় অর্থ এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর সম্পর্ক হচ্ছে কিয়ামতের দিনের সাথে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সমস্ত উম্মত যখন আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, তখন সেই উম্মতের প্রতি প্রেরিত রসূলও তাদের সাথে থাকবেন, সকলের আমলনামাও থাকবে এবং সাক্ষী স্বরূপ ফিরিশতাগণও উপস্থিত হবেন এবং এইভাবে সমস্ত উম্মত ও তাদের রসূলের মাঝে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করা হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর ফায়সালা সর্বপ্রথম করা হবে। যেমন নবী (সাঃ) বলেন,”যদিও আমরা সর্বশেষে এসেছি, কিন্তু কিয়ামতের দিন সকলের অগ্রভাগে থাকব এবং সমস্ত সৃষ্টির আগেই আমাদের ফায়সালা করা হবে।” (মুসলিম, তাফসীর ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
* যদি আপনার জীবদ্দশায়ই তাদের উপর কোন প্রতিশ্রুত শাস্তি এসে পড়ে অথবা আপনাকে তার পূর্বেই মৃত্যু দিয়ে দেই তারপরও তো তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল আমার কাছেই। আমি তাদের কাজ-কর্মের সাক্ষী। সে অনুসারেই তাদের বিচার করব।
* [১] বলা হয়েছে, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রাসূল রয়েছে।” এ ধরনের আয়াত আরো দেখুন, সূরা আন-নাহলঃ ৩৬, সূরা ফাতেরঃ ২৪। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বের দাবী রাখে তা হলো, আল্লাহ তা’আলা যদিও রাসূলকে সার্বজনিন করেছেন তারপরও তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে হেদায়াতকারীদের প্রেরণ করে থাকেন। তারা নবী বা রাসূল না হলেও নবী-রাসূলদের বাণী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে বহন করে থাকেন। এ ব্যাপারে সূরা রা’দ এর ৭ নং আয়াতে এসেছে যে, “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াতকারী বা পথপ্রদর্শক আছেন”।

[২] এর অর্থ হচ্ছে, রাসূলের দাওয়াত কোন মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফায়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত যুক্তি বা সাক্ষ্য-প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে এ ফায়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি ও মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তাঁর কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে এ শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়। তাদের কাছে রাসূল এ জন্যই পাঠাতে হয়, কারণ আল্লাহ্ তা’আলা রাসূল না পাঠিয়ে, মানুষদেরকে সাবধান না করে কাউকে শাস্তি দেন না। আল্লাহ বলেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।” [সূরা আল-ইসরা ১৫][দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

তাছাড়া এ আয়াতের আরেক প্রকার ব্যাখ্যাও বর্ণিত হয়েছে, মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে রাসূলদের আগমন করার অর্থঃ কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে তাদের আগমণের কথা বুঝানো হয়েছে। যেমনটি সূরা আয-যুমারের ৬৯ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ “যমীন তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে, ‘আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবীগণকে ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে ও তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না”। সুতরাং প্রত্যেক উম্মতের আমলনামাই তাদের নবী-রাসূলদের উপস্থিতিতে পেশ করা হবে। তাদের ভাল-মন্দ আমল তাদের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে আমল সংরক্ষণকারী ফিরিশ্‌তাগণদের মধ্য থেকেও সাক্ষী থাকবে। এভাবেই উম্মতের পর উম্মতের মধ্যে ফয়সালা করা হবে। উম্মতে মুহাম্মাদীয়ারও একই অবস্থা হবে তবে তারা সবশেষে আসা সত্বেও সর্বপ্রথম তাদের হিসাব-নিকাশ করা হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমরা সবশেষে আগমণকারী তবে কিয়ামতের দিন সবার অগ্রে থাকব। [বুখারীঃ ৮৭৬] অপর হাদীসে এসেছে, “সমস্ত সৃষ্টিজগতের পূর্বে তাদের বিচার-ফয়সালা করা হবে”। [মুসলিমঃ ৮৫৫]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 46-47
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلٌ ۚ
And for every nation is a messenger.

The Criminals will certainly be avenged — whether in This World or in the Hereafter

Allah said to His Messenger:

وَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ

Whether We show you some of what We promise them (the torment),

We shall avenge them in your lifetime so your eye will be delighted.

أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ

Or We cause you to die — still unto Us is their return,

ثُمَّ اللّهُ شَهِيدٌ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ

and moreover Allah is Witness over what they used to do.

Allah will then be the Witness watching over their actions for you.

Allah then said.

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولٌ فَإِذَا جَاء رَسُولُهُمْ

And for every Ummah there is a Messenger; when their Messenger comes,

Mujahid said:

“This will be on the Day of Resurrection.”

قُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ

(the matter will be judged between them with justice,)

is similar to the Ayah:

وَأَشْرَقَتِ الاٌّرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا

And the earth will shine with the light of its Lord (Allah), (39:69)

So every nation will be presented before Allah in the presence of its Messenger and the Book of its deeds. All good and evil deeds will be witnessed upon them. Their guardian angels will be witnesses too. The nations will be brought forth, one by one. Our noble Ummah, while it is the last of the nations, is the first one on the Day of Resurrection to be questioned and judged. This was stated by Allah’s Messenger in a Hadith recorded by both Al-Bukhari and Muslim.

Allah’s Messenger said:

نَحْنُ الاْخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمَقْضِيُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلَيِق

We are the last, the first on the Day of Resurrection. We will be judged before the rest of the creatures.

His Ummah attains the honor of precedence only by the honor of its Messenger, may Allah’s peace and blessings be upon him forever, until the Day of Judgement.

وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

and they will not be wronged.

Leave a Reply