أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 669)
[ قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
তুমি বলে দাও, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত আমি তো আমার নিজের জন্য কোন অপকার ও উপকারের মালিক নই।’
Say:”I have no power over any harm or profit to myself.”]
www.motaher21.net
وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۴۸﴾
আর তারা বলে, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও (তাহলে বল), এই অঙ্গীকার কখন (পূর্ণ) হবে?’
And they say, “When is [the fulfillment of] this promise, if you should be truthful?”
قُلۡ لَّاۤ اَمۡلِکُ لِنَفۡسِیۡ ضَرًّا وَّ لَا نَفۡعًا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰہُ ؕ لِکُلِّ اُمَّۃٍ اَجَلٌ ؕ اِذَا جَآءَ اَجَلُہُمۡ فَلَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ ﴿۴۹﴾
তুমি বলে দাও, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত আমি তো আমার নিজের জন্য কোন অপকার ও উপকারের মালিক নই।’ প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে; যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পৌঁছে যাবে, তখন তারা মুহূর্তকাল না বিলম্ব করতে পারবে, আর না ত্বরা করতে পারবে।
Say, “I possess not for myself any harm or benefit except what Allah should will. For every nation is a [specified] term. When their time has come, then they will not remain behind an hour, nor will they precede [it].”
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَتٰىکُمۡ عَذَابُہٗ بَیَاتًا اَوۡ نَہَارًا مَّاذَا یَسۡتَعۡجِلُ مِنۡہُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ﴿۵۰﴾
তুমি বল, তোমরা বল তো, যদি তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব রাতে অথবা দিনে এসে পড়ে, তাহলে আযাবের মধ্যে এমন কোন্ জিনিস রয়েছে যে, অপরাধীরা তা তাড়াতাড়ি চাচ্ছে?
Say, “Have you considered: if His punishment should come to you by night or by day – for which [aspect] of it would the criminals be impatient?”
اَثُمَّ اِذَا مَا وَقَعَ اٰمَنۡتُمۡ بِہٖ ؕ آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ کُنۡتُمۡ بِہٖ تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ ﴿۵۱﴾
তবে কি তোমরা এটা ঘটার পর তাতে ঈমান আনবে? এখন ?! অথচ তোমরা তো এটাকেই তাড়াতাড়ি পেতে চাইছিলে!
Then is it that when it has [actually] occurred you will believe in it? Now? And you were [once] for it impatient
ثُمَّ قِیۡلَ لِلَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِ ۚ ہَلۡ تُجۡزَوۡنَ اِلَّا بِمَا کُنۡتُمۡ تَکۡسِبُوۡنَ ﴿۵۲﴾
অতঃপর যালেমদেরকে বলা হবে, ‘চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো, তোমাদেরকে তো তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিফলই দেওয়া হচ্ছে।’
Then it will be said to those who had wronged, “Taste the punishment of eternity; are you being recompensed except for what you used to earn?”
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৪৮-৫২ নং আয়াত:-
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
তুমি বলে দাও, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত আমি তো আমার নিজের জন্য কোন অপকার ও উপকারের মালিক নই।’
Say:”I have no power over any harm or profit to myself.”
৪৮-৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
কাফির-মুশরিকদের হঠকারিতার অন্যতম একটি দিক হল তারা কিয়ামতকে অসম্ভব মনে করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলে; তুমি আমাদেরকে যে কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা কখন হবে? মূলত তারা এ কথার দ্বারা রাসূলের সাথে ঠাট্টা করত এবং কিয়ামত দিবসকে বিশ্বাস করত না। কিন্তু তারা যে উদ্দেশ্যে তা দ্রুত কামনা করছে তা হাসিল হবে না এবং তা তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাদের উচিত ছিল কিয়ামত দিবসকে ভয় করা এবং তার প্রতি ঈমান আনা। যেমন মু’মিনরা করে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِهَا ج وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مُشْفِقُوْنَ مِنْهَا لا وَيَعْلَمُوْنَ أَنَّهَا الْحَقُّ)
“যারা এর প্রতি বিশ্বাস করে না তারাই এটার (কিয়ামত) জন্য তড়িঘড়ি করে। আর যারা বিশ্বাসী তারা একে ভয় করে এবং জানে যে, এটা সত্য।” (সূরা শুরা ৪২:১৮)
মুশরিকরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে দ্রুত শাস্তি নিয়ে আসার জন্য যেভাবে আবেদন করত তারই উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিচ্ছেন, হে নাবী! তুমি বলে দাও অন্য কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করা তো দূরের কথা আমি তো নিজেরই কোন উপকার বা ক্ষতির মালিক নই; এমনকি শাস্তিকে আগ-পিছ করার ক্ষমতাও রাখি না। তবে হ্যাঁ, এসব ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার হাতে এবং তিনি নিজের ইচ্ছামত কাউকে কল্যাণ বা অকল্যাণ দান করার ফায়সালা করেন বা শাস্তিকে যেকোন সময় নিয়ে আসতে পারেন।
সুতরাং উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে, যেখানে নাবী-রাসূলগণ কোন কল্যাণ বা অকল্যাণ করার মালিক নন সেখানে সাধারণ মানুষ বা তথাকথিত ভণ্ড বাবা, পীর, গাউস কুতুবরা মানুষের দুঃখ-কষ্ট কিভাবে দূর করতে পারবে? অথবা যার সন্তান হয় না তার সন্তান দিতে পারবে? তাহলে এ কথা যে ভ্রান্ত তা-কি এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে না? সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা এরূপ দাবী করে তারা মিথ্যা বলে। এ সমস্ত লোকদের কাছে তো কিছু চাওয়া যাবেই না এমনকি রাসূলের কাছেও যদি এমন জিনিস চাওয়া হয় তাহলেও তা শির্ক হবে যা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা সকল উম্মাতের জন্য একটি সময় নির্ধারিত রেখেছেন। সেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন সেই নির্ধারিত সময় এসে যায় তখন এক মুর্হূতও আগ-পিছ হয় না। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُوْنَ)
“কোন জাতি তার নির্দিষ্ট সময়কে অতিক্রম করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।” (সূরা হিজর ১৫:৫)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(إِنَّ أَجَلَ اللّٰهِ إِذَا جَا۬ءَ لَا يُؤَخَّرُ ﻣ لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা এটা জানতে!” (সূরা নূহ ৭১:৪)
আল্লাহ তা‘আলা তাদের এই তাড়াহুড়া দেখে বলছেন, যদি দিবাভাগে বা রাত্রিকালে কোন এক সময় হঠাৎ শাস্তি এসেই পড়ে তখন কি করবে? কাজেই তাড়াতাড়ি করছ কেন?
যদি শাস্তি এসেই পড়ে তখন কি ঈমান আনবে? তখন আর ঈমান আনয়নের সময় থাকবে না। যখন তাদের কাছে শাস্তি এসে যাবে তখন তাদেরকে বলা হবে যে শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছিলে তা আস্বাদন কর। শাস্তি এসে গেলে তারা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। যেমন
ফির‘আউন সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حثج اِذَآ اَدْرَکَھُ الْغَرَقُﺫ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّھ۫ لَآ اِلٰھَ اِلَّا الَّذِیْٓ اٰمَنَتْ بِھ۪ بَنُوْٓا اِسْرَا۬ءِیْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِیْنَﮩاٰ۬لْئٰنَ وَقَدْ عَصَیْتَ قَبْلُ وَکُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِیْنَﮪ)
“পরিশেষে যখন সে ডুবতে শুরু করল তখন বলল: ‘আমি ঈমান এনেছি যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই যাঁর প্রতি ঈমান এনেছে বানী ইসরাঈল এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ ‘এখন! ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।” (সূরা ইউনুস ১০:৯০-৯১) কিন্তু তাদের ঈমান তখন আর কোন কাজে আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا قَالُوْٓا اٰمَنَّا بِاللہِ وَحْدَھ۫ وَکَفَرْنَا بِمَا کُنَّا بِھ۪ مُشْرِکِیْنَﮣ فَلَمْ یَکُ یَنْفَعُھُمْ اِیْمَانُھُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَاﺚ سُنَّةَ اللہِ الَّتِیْ قَدْ خَلَتْ فِیْ عِبَادِھ۪ﺆ وَخَسِرَ ھُنَالِکَ الْکٰفِرُوْنَﮤﺟ)
“অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বললোঃ আমরা এক আল্লাহতেই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” (সূরা মু’মিন ৪০:৮৪-৮৫)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّاٰتِ ج حَتّٰي إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّيْ تُبْتُ الْئٰنَ)
“আর তাদের জন্য কোন তাওবাহ কবূল করা হয় না যারা পাপ কাজ করতেই থাকে এমনকি তাদের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে আমি এখন তাওবাহ করছি।” (সূরা নিসা ৪:১৮)
সুতরাং যারা ঈমান আনবে তাদের উচিত শাস্তি প্রকাশ পাবার পূর্বেই ঈমান নিয়ে আসা। শাস্তি শুরু হয়ে গেলে ঈমান দ্বারা আর কোন ফায়দা লাভ করা যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামত একদিন অবশ্যই সংঘটিত হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসে গেলে কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কারো কাছে কোন কিছু চাওয়া যাবে না।
৪. প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে, এই সময়ের পূর্বে কেউ মৃত্যুবরণ করবে না।
৫. শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়।
৭. শাস্তি প্রকাশ পাবার পূর্বেই ঈমান আনতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪৮-৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন- এই মুশরিকরা শাস্তির জন্যে তাড়াতাড়ি করছে এবং সময় আসার পূর্বেই যাজ্ঞা করছে। এতে তাদের জন্যে কোনই মঙ্গল নেই। কাফিররা তো শাস্তির জন্যে তাড়াতাড়ি করছে, কিন্তু মুমিনরা এর থেকে ভয় করছে। তারা বিশ্বাস রাখছে যে, শাস্তি অবশ্য অবশ্যই আসবে, যদিও এর নির্দিষ্ট সময় জানা নেই। এ জন্যেই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে শিখিয়ে দিচ্ছেন- হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও, আমি নিজের জীবনেরও লাভ ও ক্ষতির মালিক নই। আমি শুধু ঐটুকু বলি যেটুকু আমাকে বলে দেয়া হয়েছে। যদি আমি কিছু পাওয়ার ইচ্ছে করি, তবে আমি ওর উপর সক্ষম নই, যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাকে তা প্রদান করেন। আমি তো শুধু তার একজন বান্দা এবং তোমাদের কাছে প্রেরিত একজন দূত। আমি তোমাদেরকে সংবাদ প্রদান করেছি যে, কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। কিন্তু এর সময় আমার জানা নেই। কারণ এটা আমাকে বলে দেয়া হয়নি। প্রত্যেক কওমের জন্য (শাস্তির) একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে। যখন ঐ সময় এসে যাবে তখন আর মুহূর্তকালও তারা পিছনে সরতে পারবে না এবং সামনেও অগ্রসর হতে পারবে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ কাউকেও কোন অবকাশ দেন না, যখন তার নির্দিষ্ট সময় এসে পড়ে।” (৬৩:১১) কাফিরদের উপর আল্লাহর শাস্তি অকস্মাৎ এসে যাবে। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কেই তাদেরকে বলেছেন- যদি রাত্রিকালে বা দিবাভাগে কোন এক সময় আকস্মিকভাবে তোমাদের উপর শাস্তি এসে পড়ে, তখন কি করবে? কাজেই তাড়াতাড়ি করছো কেন? যদি শাস্তি এসেই পড়ে, তবে কি তখন ঈমান আনবে? তখন আর ঈমান আনয়নের সময় কোথায়? ঐ সময় তাদেরকে বলা হবে- যে শাস্তির জন্যে তোমরা তাড়াতাড়ি করছিলে, এখন এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। ঐ সময় তারা বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমরা দেখলাম ও শুনলাম ।শাস্তি এসে পড়লেই তারা বলে উঠবেঃ “এখন আমরা এক আল্লাহকে মানছি এবং অন্যান্য সমস্ত মা’বুদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।” কিন্তু ঐ সময়ের ঈমান কোনই কাজে আসবে না। বান্দাদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি তো এরূপই চলে আসছে।
এ যালিমদেরকে বলা হবে- “এখন তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।” এইভাবে তাদেরকে খুব ধমক দিয়ে এ কথা বলা হবে। জাহান্নামের যে শাস্তির কথা তারা অস্বীকার করতো ঐ শাস্তির মধ্যে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফেলে দেয়া হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ঐ দিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে। (বলা হবেঃ) এটা হচ্ছে ঐ আগুন যা তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। এটাই কি যাদু? না, বরং তোমরা দেখছো না (অনুধাবন করছো না)। তোমরা (এখন) জাহান্নামে প্রবেশ কর। তোমরা ধৈর্যধারণ কর আর নাই কর, এটা সমান কথা, তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিদান অবশ্যই প্রাপ্ত হবে।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
আমি কবে একথা বলেছিলাম যে, আমিই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করবো এবং অমান্য কারীদেরকে আমিই শাস্তি দেবো? কাজেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হুমকি কবে কার্যকরী করা হবে, একথা আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? হুমকি তো আল্লাহ দিয়েছেন। তিনিই তার ফয়সালা বাস্তাবায়িত করবেন। কখন ফয়সালা করবেন এবং কিভাবে তা তোমাদের সামনে আনবেন তা সব তারই ইচ্ছাধীন।
* এ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাড়াহুড়া করেন না। যখনই রসূলের দাওয়াত কোন ব্যক্তি বা দলের কাছে পৌঁছে যায়, তখনই যারা ঈমান আনে কেবল তারাই রহমতের হকদার হবে এবং যারা তা মানতে অস্বীকার করবে অথবা মেনে নিতে ইতস্তত করবে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা আল্লাহর রীতি নয়। বরং আল্লাহর রীতি হচ্ছে, নিজের বাণী পৌঁছিয়ে দেবার পর তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিগত মর্যাদা অনুযায়ী এবং প্রত্যেক দল ও জাতিকে তার সামগ্রিক মর্যাদা অনুসারে চিন্তা-ভাবনা ও বোঝাপড়া করার জন্য যথেষ্ট সময় দেন। এ অবকাশকাল অনেক সময় শত শত বছর ধরে চলতে থাকে। এ ব্যাপারে কার কতটা অবকাশ পাওয়া উচিত তা আল্লাহই ভাল জানেন। তারপর পুরোপুরি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া এ অবকাশ যখন পূর্ণ হয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দল তার বিদ্রোহাত্মক নীতি পরিবর্তন করতে চায় না তখন এরই ভিত্তিতে তার ওপর আল্লাহ তার ফয়সালা কার্যকর করেন। এ ফায়সালার সময়টি আল্লাহর নির্ধারিত সময় থেকে এক মুহূর্ত আগেও আসতে পারে না এবং সময় এসে যাবার পর মুহূর্তকালের জন্য তাকে ঠেকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
* আল্লাহ তা’আলা এখানে কাফেরদের কুফরির সংবাদ দিয়ে বলছেন যে, কাফেররা যে আল্লাহর আযাবকে তাড়াতাড়ি চাচ্ছে এবং এর জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের কথা বলছে, এতে তাদের কোন লাভ নেই। অন্যত্রও আল্লাহ এ কথা বলেছেন, “যারা এটাতে ঈমান রাখে না তারাই তা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তা থেকে ভীত থাকে এবং তারা জানে যে, তা অবশ্যই সত্য ” [সূরা আশ-শূরা:১৮] আরও বলেন, “আর তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি কখনো ভংগ করেন না। আপনার রব-এর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান” [সূরা আল-হজ: ৪৭] আরও বলেন, “তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।” [সূরা আল-আনকাবৃত: ৫৪] তাছাড়া এ সূরার ৫০ নং আয়াতে তাদেরকে রীতিমত সাবধানও করেছেন।
* সারা জীবন তারা যে জিনিসটিকে মিথ্যা বলতে থাকে, যাকে মিথ্যা মনে করে সারাটা জীবন ভুল কাজে ব্যয় করে এবং যারা সংবাদদানকারী নবী-রাসূলদেরকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকে, সেই জিনিসটি যখন তাদের সমস্ত প্রত্যাশাকে গুড়িয়ে দিয়ে অকস্মাৎ সামনে এসে দাঁড়াবে তখন তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। নিজের কৃতকর্মের হাত থেকে বাচার কোন পথ থাকবে না। মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। লজ্জায় ও আক্ষেপে অন্তর ভিতরে ভিতরেই দমে যাবে। সুতরাং কত বড় বিপদকে তারা তাড়াতাড়ি ডেকে আনছে? [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
আয়াতের অন্য অর্থ এও হতে পারে যে, বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি তাঁর শাস্তি তোমাদের উপর রাতে অথবা দিনে এসে পড়ে তাহলে অপরাধীরা কোন জিনিস পেতে তাড়াতাড়ি করছে? আযাব তো তাদের খুব কাছের জিনিস। সকাল বা সন্ধ্যা যে কোন সময় এসে যেতে পারে। [দেখুন, বাগভী]
* অর্থাৎ তোমরা কি তখন ঈমান আনবে, যখন তোমাদের উপর আযাব পতিত হয়ে যাবে? চাই তা মৃত্যুর সময়ে হোক কিংবা তার পূর্বে। কিন্তু তখন তোমাদের ঈমানের উত্তরে কি বলা হবে- (آٰلۡـٰٔنَ) এতক্ষণে ঈমান আনলে, যখন ঈমানের সময় চলে গেছে? যেমন, জলমগ্ন হবার সময়ে ফিরআউন যখন বললঃ “আমি ঈমান আনছি, নিশ্চয়ই কোন হক উপাস্য নেই তিনি ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলরা” [সূরা ইউনুসঃ ৯০]। উত্তরে বলা হয়েছিল- (آٰلۡـٰٔنَ) অর্থাৎ এতক্ষণে ঈমান আনলে? বস্তুতঃ তার ঈমান কবুল করা হয়নি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ না তার মৃত্যুকালীন উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়”। [তিরমিয়ীঃ ৩৫৩৭, মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৩২, হাকেম মুস্তাদরাকঃ ৪/২৫৭, ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৩, ইবনে হিব্বানঃ ৬২৮] অর্থাৎ মৃত্যুকালীন গরগরা বা উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর ঈমান ও তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে দুনিয়াতে আযাব সংঘটিত হওয়ার পূর্বাহ্নে তাওবা কবুল হতে পারে। কিন্তু আযাব এসে যাবার পর আর তাওবা কবুল হয় না। আয়াতের শেষে এবং সূরা গাফেরের ৮৪ ও ৮৫ নং আয়াতদ্বয়ে একথাটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরার শেষাংশে ইউনুস আলাইহিস সালামএর কওমের ঘটনা আসছে যে, তাদের তাওবা কবুল করে নেয়া হয়েছিল, তা এই মূলনীতির ভিত্তিতেই হয়েছিল। কারণ, তারা দূরে থেকে আযাব আসতে দেখেই বিশুদ্ধ-সত্য মনে কেদে-কেটে তাওবা করে নিয়েছিল। তাই আযাব সরে যায়। যদি আযাব তাদের উপর পতিত হয়ে যেত, তবে আর তাওবা কবুল হত না।
* এটা তাদেরকে ধমকের সুরে বলা হবে। কারণ তারা এ আযাবকে অস্বীকার করেছিল। সূরা আত-তুরের ১৩-১৬ নং আয়াতেও তা বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
মুশরিকরা নবী (সাঃ)-কে আল্লাহর আযাব উপস্থিত করার জন্য বলত, তারই উত্তরে বলা হচ্ছে যে, আমি তো নিজেরই কোন লাভ বা ক্ষতির মালিক নই; অন্য কাউকে ক্ষতি বা লাভ দেওয়া তো দূরের কথা। হ্যাঁ, এসব ক্ষমতা আল্লাহর হাতে এবং তিনি নিজের ইচ্ছামত কাউকে ক্ষতি বা লাভ দেওয়ার ফায়সালা করেন। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা সকল উম্মতের জন্য একটি সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন। সেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তিনি তাদেরকে ঢিল ও অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন সেই নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও আগে-পিছে হবে না।
সতর্কতাঃ এখানে এ কথাটি অতি গুরুতত্ত্বপূর্ণ যে যখন সৃষ্টির সেরা, রসূলগণের সর্দার মুহাম্মাদ (সাঃ) কারোর লাভ-ক্ষতি বা উপকার-অপকার করার ক্ষমতা রাখেন না, তখন তাঁর পরে মানুষের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি এমনও কি হতে পারে যে, সে কারো প্রয়োজন পূরণ এবং সমস্যা দূর করার ক্ষমতা রাখে? অনুরূপ আল্লাহর পয়গম্বরের নিকট সাহায্য চাওয়া, তাঁর নিকট ফরিয়াদ করা, “ইয়া রাসূলাল্লাহ মাদাদ” এবং ‘أغثني يارسول الله’ (হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সাহায্য করুন, আমাকে উদ্ধার করুন) ইত্যাদি শব্দ দ্বারা আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করা কোন মতেই বৈধ নয়। কারণ এটা কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত এবং এরূপ অন্যান্য স্পষ্ট নির্দেশের পরিপন্থী; বরং এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।فنعوذ بالله من هذا
* শাস্তি তো এক অতি অপছন্দনীয় বস্তু, যা মন অপছন্দ করে এবং প্রকৃতিগতভাবে মন তা অস্বীকার করে, কিন্তু ওরা এর মাঝে এমন কি ভালাই দেখল যে, তা তাড়াতাড়ি উপস্থিত করার জন্য বলে?
* কিন্তু শাস্তি চলে আসার পর মেনে নেওয়ায় লাভ কি?
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 48-52
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
Say:”I have no power over any harm or profit to myself.”
The Deniers of the Day of Resurrection wish to hasten its Coming and their Response
Allah tells;
وَيَقُولُونَ مَتَى هَـذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
And they say:”When will be this promise (the torment or the Day of Resurrection), if you speak the truth”
Allah told us about the idolators who reject faith through their demand that the punishment be hastened, inquiring about the time of punishment. The response to such question is not inherently beneficial, yet they inquired anyway.
Allah said:
يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِهَا وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ مُشْفِقُونَ مِنْهَا وَيَعْلَمُونَ أَنَّهَا الْحَقُّ
Those who believe not therein seek to hasten it, while those who believe are fearful of it, and know that it is the very truth. (42:18)
They know that it is the truth for it is definitely going to happen. It is going to take place even if they have no idea when it will occur. This is why Allah instructed His Messenger to answer them saying.
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
Say:”I have no power over any harm or profit to myself.”
I will not say except what He has taught me. I also have no authority over anything that Allah has not shown to me. I am Allah’s servant and His Messenger to you. I was told that the Hour is going to come, but He has not told me when it will occur.
إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ
except what Allah may will.
لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ
For every Ummah, there is a term appointed;
meaning that for every generation or community there is a set term appointed for them.
إِذَا جَاء أَجَلُهُمْ
when their term comes,
When the end of that term approaches,
فَلَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
neither can they delay it nor can they advance it an hour (or a moment).
This is similar to what Allah said in another Ayah:
وَلَن يُوَخِّرَ اللَّهُ نَفْساً إِذَا جَأءَ أَجَلُهَأ
And Allah grants respite to none when his appointed time (death) comes. (63:11)
Allah instructed His Messenger to tell the people that His punishment would come suddenly. He said:
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُهُ بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُونَ أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ امَنْتُم بِهِ الانَ وَقَدْ كُنتُم بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ
Say:”Tell me, if His torment should come to you by night or by day, which portion thereof would the criminals hasten on Is it then that when it has actually befallen, you will believe in it What! Now (you believe) And you used (aforetime) to hasten it on!”
When the punishment befalls them, they will say:
رَبَّنَأ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا
“Our Lord! We have now seen and heard.” (32:12)
Allah also said:
فَلَمَّا رَأَوْاْ بَأْسَنَا قَالُواْ ءَامَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَـفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ
فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَـنُهُمْ لَمَّا رَأَوْاْ بَأْسَنَا سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِى قَدْ خَلَتْ فِى عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَـفِرُونَ
So when they saw Our punishment, they said:”We believe in Allah alone and reject (all) that we used to associate with Him as (His) partners.
Then their faith could not avail them when they saw Our punishment. (Like) this has been the way of Allah in dealing with His servants. And there the disbelievers lost utterly (when Our torment covered them).” (40:84-85)
ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُواْ ذُوقُواْ عَذَابَ الْخُلْدِ
Then it will be said to them who wronged themselves:”Taste you the everlasting torment!”
This will be said to them on the Day of Resurrection, blaming and rebuking them. As Allah said in another Ayah:
يَوْمَ يُدَعُّونَ إِلَى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا
هَـذِهِ النَّارُ الَّتِى كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ
أَفَسِحْرٌ هَـذَا أَمْ أَنتُمْ لَا تُبْصِرُونَ
اصْلَوْهَا فَاصْبِرُواْ أَوْ لَا تَصْبِرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْكُمْ إِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
The Day when they will be pushed down by force to the fire of Hell, with a horrible, forceful pushing. This is the Fire that you used to belie. Is this magic or do you not see Taste you therein its heat and whether you are patient of it or impatient of it, it is all the same. You are only being requited for what you used to do. (52:13-16)
هَلْ تُجْزَوْنَ إِلاَّ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
Are you recompensed (aught) save what you used to earn!