(Book# 674) [ اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের, Behold! The Awliya’ of Allah,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 674)
[ اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ
মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের,
Behold! The Awliya’ of Allah,]
www.motaher21.net

اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿ۚۖ۶۲﴾
জেনে রাখ! আল্লাহ্‌র বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
Unquestionably, [for] the allies of Allah there will be no fear concerning them, nor will they grieve.
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ کَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ ﴿ؕ۶۳﴾
যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।
Those who believed and were fearing Allah

لَہُمُ الۡبُشۡرٰی فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِکَلِمٰتِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿ؕ۶۴﴾
তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই; এটাই হচ্ছে বিরাট সফলতা।
For them are good tidings in the worldly life and in the Hereafter. No change is there in the words of Allah . That is what is the great attainment.

وَ لَا یَحۡزُنۡکَ قَوۡلُہُمۡ ۘ اِنَّ الۡعِزَّۃَ لِلّٰہِ جَمِیۡعًا ؕ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۶۵﴾
আর ওদের কথা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়। নিশ্চয়ই যাবতীয় শক্তি-সম্মান আল্লাহরই জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
And let not their speech grieve you. Indeed, honor [due to power] belongs to Allah entirely. He is the Hearing, the Knowing.

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৬২-৬৫ নং আয়াত:-
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ
মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের,
Behold! The Awliya’ of Allah,

৬২-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

(اَلَآ اِنَّ اَوْلِیَا۬ئَ اللہِ……. ذٰلِکَ ھُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ)

পূর্বের আয়াতে অবাধ্য ব্যক্তিদের কথা আলোচনা করার পর এখানে আল্লাহ তা‘আলার ওলীদের মর্যাদা ও সম্মানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আওলিয়া শব্দটি ওলীর বহুবচন। যার শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী, নৈকট্যশীল। ইসলামের পরিভাষায় ওলী হলেন, যারা ইসলামের সকল রুকনের ওপর বিশ্বাস করতঃ আমল করেন এবং সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করেন। যেমন ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলে দিয়েছেন। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার আদেশকে পালন করেন এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকেন এবং সর্বত্র তাক্বওয়া অবলম্বন করেন তারাই আল্লাহ তা‘আলার ওলী। আল্লাহ তা‘আলার ওলী হবার জন্য কারামত প্রকাশ করা আবশ্যক নয়, সংসার ছেড়ে বন-জঙ্গলে বেড়াতে হবে না, দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে না। কিছু লোক সমাজের এক শ্রেণির অর্ধ-উলঙ্গ, নোংরা এবং সালাত ও দীনের অন্যান্য ইবাদতের কোন খোঁজ-খবর নেই এমন ব্যক্তিদেরকে ওলী হিসেবে বুঝে থাকে এবং তাদেরকে অনেক বড় কিছু মনে করে থাকে। আসলে তারা আল্লাহ তা‘আলার ওলী নয়, ওরা হল শয়তানের ওলী। কারণ আল্লাহ তা‘আলার একজন ওলী কখনো শরীয়ত নির্দেশিত ফরয কাজ বর্জন করতে পারে না।

প্রকৃত ওলীদের মর্যাদা হল তাদের কোন ভয় নেই এবং দুশ্চিন্তাও নেই। এটা ইহকাল ও আখিরাত উভয় জগতে থাকবে। তারা দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কাউকে ভয় করবে না, তাদের রিযিকের ভয় থাকবে না, কোন অনিষ্টের ভয় থাকবে না। আখিরাতে কবরে তাদের কোন ভয় থাকবে না, হাশরের ময়দানে কোন ভয় থাকবে না। মোট কথা সকল প্রকার ভয় থেকে তারা নিরাপদে থাকবে এবং তারা কোন দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। এ দুটি জিনিসে ভয় না থাকা এবং দুশ্চিন্তা না থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কাউকে বলা হয় আপনাকে অনেক অর্থ-সম্পদ দেয়া হবে কিন্তু সর্বদা আপনি ভয়ে থাকবেন এবং দুশ্চিন্তায় থাকবেন, যেকোন সময় আপনাকে কেউ আক্রমন করতে পারে বা কোন ক্ষতি করতে পারে, তাহলে কি সে ব্যক্তি সে অর্থ নেবে? না, কারণ তার শান্তি ও নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকবে না। সে দুশ্চিন্তায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বে।

তাদের জন্য আরো রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ। দুনিয়াতে সুসংবাদ হল সুন্দর প্রশংসা, অন্তরের প্রশান্তি, মু’মিনদের প্রতি অন্তরে ভালবাসা, সত্য স্বপ্ন এবং সকল কাজে সহজতা দান। আর আখিরাতে সকল বিপদ থেকে মুক্তি দান করে জান্নাত লাভ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلٰ۬ئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ)‏

“নিশ্চয়ই যারা বলে: আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলেঃ তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩০)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَتَتَلَقّٰهُمُ الْمَلٰ۬ئِكَةُ ط هٰذَا يَوْمُكُمُ الَّذِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ)‏

“মহাভীতি তাদেরকে চিন্তাযুক্ত করবে না এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এ বলে, ‘এ তোমাদের সে দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।’’ (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৩)

মু’মিন ব্যক্তির যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সাদা চেহারাবিশিষ্ট ফেরেশতারা সাদা কাপড় নিয়ে উপস্থিত হয় এবং বলে: হে পবিত্র আত্মা প্রশান্ত ও সুগন্ধির দিকে বের হয়ে আসো, প্রভু তোমার প্রতি রাগান্বিত নন। তখন আত্মা তার মুখ দিয়ে এমনভাবে বের হয়ে আসবে যেমন পাত্র থেকে পানির ফোয়ারা বের হয়ে আসে। (মুসাননাফ আব্দুর রাযযাক হা: ৬৭৩৭, সহীহ)

উমার (رضي الله عنهما)

হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মাঝে এমন বান্দাও রয়েছেন যারা নাবীও নন এবং শহীদও নন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন সে জন্য কিয়ামতের দিন নাবীরা এবং শহীদগণ তাদের মত হবার আকাক্সক্ষা করবে। বলা হল হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিন এবং তাদের এমন কি আমল, হয়তো শুনে তাদেরকে ভালবাসবো। তিনি বললেন: তারা এমন মানুষ, আত্মীয় সম্পর্ক ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য অন্যদেরকে ভালবাসে এবং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য অপরকে সম্পদ দান করে। আল্লাহ তা‘আলার শপথ তাদের চেহারা আলোকজ্জ্বল হবে, তারা নূরের মিম্বারে থাকবে। যখন মানুষ ভয় করবে তারা তখন ভয় করবে না, মানুষেরা যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে তখন তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (আবূ দাঊদ হা: ৩৫২৭, সহীহ)

সুতরাং আমাদের সর্বদা চেষ্টা করতে হবে আমরা যেন আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃত ওলী হতে পারি। ফলে আমরা দুনিয়াতেও সফল হবো এবং আখিরাতেও সফল হবো।

(وَلَا یَحْزُنْکَ قَوْلُھُمْﺭ ….. ھُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ)

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, কাফির-মুশরিকরা তোমাকে অপবাদ ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করাসহ যে সমস্ত কথা-বার্তা বলে তা যেন তোমাকে দুশ্চিন্তিত, ব্যথিত, দুর্দশাগ্রস্ত না করে। কারণ তারা যা বলে তা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। তোমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবে না, এবং সম্মানও দিতে পারবে না। কারণ সম্মান সবই আল্লাহ তা‘আলার নিকট, তিনি যাকে খুশি সম্মানিত করেন আবার যাকে খুশি অপমানিত করেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًا)

“যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক), সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য।” (সূরা ফাতির ৩৫:১০) যে তাঁর আনুগত্য করে আল্লাহ তা‘আলা তাকেই সম্মান দান করে থাকেন, যেমন
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

(يَقُوْلُوْنَ لَئِنْ رَّجَعْنَآ إِلَي الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ ط وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه۪ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ)‏

“তারা বলে: আমরা যদি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান হতে সম্মানিতরা অবশ্যই হীনদেরকে বহিস্কার করবে; কিন্তু মান-সম্মান তো আল্লাহরই, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৮)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁর কাছে সম্মান খুঁজতে হবে, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা সম্মান দিতে পারেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সত্য প্রচারে কারো তিরস্কারমূলক কথায় মন খারাপ করা যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ সম্মান বা অসম্মান দান করতে পারে না।
৩. যারা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু তাদের আখিরাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না।
৪. যারা ভাল কাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৬২-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ্ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর বন্ধু হচ্ছে ঐ লোকগুলো যারা ঈমান আনয়নের পর পরহেযগারীও অবলম্বন করে থাকে। সুতরাং যারা আল্লাহভীরু তারাই আল্লাহর বন্ধু । যখন তারা পারলৌকিক অবস্থার সম্মুখীন হবে তখন তারা মোটেই ভয় পাবে না। আর দুনিয়াতেও তারা কোন দুঃখ ও চিন্তায় পরিবেষ্টিত হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর অলী হচ্ছে ঐ লোকেরা যারা সদা-সর্বদা তাঁর স্মরণ ও চিন্তায় নিমগ্ন থাকে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর অলী কারা?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তারা হচ্ছে। ওরাই যাদেরকে তুমি দেখতে পাও যে, তারা আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন রয়েছে।”

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও রয়েছে যারা নবীও নয় এবং শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের উপর রিশক (আকাক্ষা) করবেন।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! তারা কারা?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তারা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে (ভালবেসেছে)। তাদের মধ্যে নেই কোন মালের সম্পর্ক এবং নেই কোন বংশের সম্পর্ক। তাদের চেহারা হবে নূরানী (উজ্জ্বল) এবং তারা নূরের মিম্বরের উপর থাকবে। যখন মানুষ ভয় পাবে, তখন তাদের কোন ভয় হবে না এবং মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখনও তাদের কোন দুঃখ ও চিন্তা থাকবে না।” অতঃপর তিনি পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর অলীদের জন্যে কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।”

আবৃ মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ লোকদের মধ্য হতে ও বিভিন্ন গোত্র হতে এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাদের পরস্পরের মধ্যে নেই কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক, তারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসবে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে আন্তরিকতাপূর্ণ প্রেম প্রীতি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্যে নূরের মিম্বর স্থাপন করবেন, যার উপর তারা উপবেশন করবে। মানুষ সেই দিন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকবে। কিন্তু এরা থাকবে সম্পূর্ণ শান্ত ও নিশ্চিন্ত; আল্লাহর অলী এসব লোকই বটে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আবু দারদা (রাঃ)-কে একটি লোক জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) -এই আয়াতের কিরূপ ব্যাখ্যা করেছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটা হচ্ছে ভাল স্বপ্ন যা কোন মুসলিম দেখে থাকে বা অন্য কোন মুসলিমকে তার সম্পর্কে ঐ স্বপ্ন দেখানো হয়।” আবু দারদা (রাঃ)। লোকটিকে বলেনঃ “তুমি আমাকে এই প্রশ্ন করলে, ইতিপূর্বে শুধু একবার একটি লোক নবী (সঃ)-কে এই প্রশ্ন করেছিল। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এটা হচ্ছে সঠিক ও সত্য স্বপ্ন যা কোন মুসলিম দেখে থাকে বা তার পক্ষে অন্য কাউকেও দেখানো হয়। এটা পার্থিব জীবনেও তার জন্যে শুভ সংবাদ এবং পরকালেও তার জন্যে জান্নাতের সুসংবাদ।” (এ হাদীসটি ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথাই বলেছিলেন- “তোমার পূর্বে কেউ আমাকে এ প্রশ্ন করেনি। (আরবী) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাল স্বপ্ন।” ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “এই আয়াতে আখিরাতের সুসংবাদ তো হচ্ছে জান্নাত, কিন্তু দুনিয়ার সুসংবাদ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “সত্য সপ্ন, যে স্বপ্ন কেউ দেখে বা তার সম্পর্কে কাউকে স্বপ্ন দেখানো হয়। আর এই সত্য স্বপ্নও হচ্ছে নবুওয়াতের সত্তর বা চুয়াল্লিশটি অংশের একটি অংশ।”

আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মানুষ ভাল কাজ করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে (এটা কিরূপ?)।” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটা যেন মুমিনের জন্যে দুনিয়াতেই জান্নাতের শুভ সংবাদ। আর এটা নবুওয়াতের উনপঞ্চাশটি অংশের একটি অংশ। সুতরাং যে ব্যক্তি ভাল স্বপ্ন দেখবে সে যেন জনগণের সামনে তা বর্ণনা করে দেয়। আর যে খারাপ স্বপ্ন দেখবে, তার এটা জেনে রাখা উচিত যে, ওটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। সে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্যেই এরূপ করে। সুতরাং তখন ঐ ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে ও তাকবীর পাঠ করে এবং জনগণের সামনে তা প্রকাশ না করে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

অন্য এক জায়গায় নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, উত্তম স্বপ্ন হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত শুভ সংবাদ। কথিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- মুমিনের মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ তাকে জান্নাত ও মাগফিরাতের শুভ সংবাদ দিয়ে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নিশ্চয়ই যারা বলেছে-আমাদের প্রতিপালক (হচ্ছেন একমাত্র) আল্লাহ অতঃপর তারা (ওর উপর) অটল রয়েছে, তাদের প্রতি (সুসংবাদ নিয়ে) ফিরিশতারা অবতীর্ণ হবে, (এবং বলবে যে,) তোমরা (আখিরাতের। বিপদসমূহের) ভয় করো না এবং (দুনিয়া ত্যাগের জন্যে) দুঃখও করো না, আর তোমরা সেই জান্নাতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে প্রদান। করা হতো। আমি পার্থিব জীবনেও তোমাদের সঙ্গী ছিলাম এবং পরলোকেও থাকবো, আর যা কিছু তোমাদের বাসনা হবে, তোমাদের জন্যে তাতে তা বিদ্যমান আছে, আর যা কিছু তোমরা চাবে, তাও তোমাদের জন্যে তাতে রয়েছে। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের সন্নিধান হতে মেহমানদারী।”

বারা’র হাদীসে রয়েছে যে, যখন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন উজ্জ্বল চেহারা ও সাদা পোশাক বিশিষ্ট ফিরিশতা তার কাছে আগমন করেন এবং বলেনঃ “হে পবিত্র আত্মা! তার মুখ দিয়ে এমনভাবে বেরিয়ে যাও যেমনভাবে মশকের মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “কিয়ামতের আতংক তাদেরকে হতবুদ্ধি করবে না, ফিরিশতারা তাদেরকে বলবে- এটা হচ্ছে ঐদিন, তোমাদের সাথে যেই দিনের ওয়াদা করা হয়েছে। আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন তুমি মুমিন পুরুষ এবং মুমিনা নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের সামনের দিকে এবং ডান দিকে নূর (আলো) চলছে, (বলা হবে) আজ তোমাদেরকে ঐ জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে, যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।”

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

* [১] অবাধ্য ব্যক্তিদের কথা আলোচনার পর আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের কথা আলোচনা করছেন। তাঁরা হলেন আল্লাহর আওলিয়া। ‘আওলিয়া’ শব্দটি ওলীর বহুবচন। যার আভিধানিক অর্থ হল, নিকটবর্তী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওলিয়াউল্লাহর অর্থ হবে, ঐ সকল নেক ও খাঁটি মু’মিন ব্যক্তিগণ, যাঁরা আল্লাহর আনুগত্য করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থেকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই জন্য পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেই এই শব্দ দ্বারা তাঁদের প্রশংসা করেছেন, “তারা হচ্ছে সেই লোক যারা বিশ্বাস করেছে (ঈমান এনেছে) এবং সাবধানতা (পরহেযগারি) অবলম্বন করে থাকে।” আর ঈমান ও পরহেযগারি বা তাকওয়াই হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মূল ভিত্তি এবং একমাত্র উপায়। এই হিসাবে সকল মুত্তাকী মু’মিনই হচ্ছে আল্লাহর ওলী (বন্ধু)। পক্ষান্তরে কিছু মানুষের ধারণা যে, ওলী হতে হলে কারামত দেখানো জরুরী। অতঃপর তারা মনগড়া ওলীদের জন্য সত্য-মিথ্যা কিছু কারামতের কথা প্রচার করে থাকে। এ ধারণা ও কর্ম নেহাতই ভ্রান্ত। ওলী হওয়ার সাথে কারামতের না কোন সম্পর্ক আছে, আর না কারামত ওলী হওয়ার জন্য শর্ত। এটা স্বতন্ত্র ব্যাপার যে, যদি কোন ওলী দ্বারা কোন কারামত প্রকাশ হয়ে যায়, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছা, তাতে সেই বুযুর্গের ইচ্ছা প্রবিষ্ট থাকে না। কিন্তু কোন মুত্তাকী মু’মিন এবং সুন্নতের অনুসারী দ্বারা কোন কারামত প্রকাশ হোক বা না হোক, তাঁর বিলায়াতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

[২] আশংকা বা ভীতির সম্পর্ক ভবিষ্যতের সাথে এবং বিষণ্ণতা ও চিন্তার সম্পর্ক অতীতের সাথে। উদ্দেশ্য এই যে, যেহেতু তাঁদের পার্থিব জীবন আল্লাহ-ভীতির সাথে অতিবাহিত হয়ে থাকে, ফলে কিয়ামতের ভয়াবহতায় তাঁদের সে রকম ভয় থাকবে না, যেমন অন্যান্যদের থাকবে। বরং তাঁরা নিজ ঈমান ও তাকওয়ার কারণে আল্লাহর রহমত ও বিশেষ দয়ার আশাধারী এবং তাঁর প্রতি সুধারণা পোষণকারী হবেন। অনুরূপ পৃথিবীতে তাঁরা যা কিছু ছেড়ে যাবেন অথবা পৃথিবীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভে বঞ্চিত থাকার ফলে তাঁদের কোন দুশ্চিন্তা ও আফসোস হবে না। এর দ্বিতীয় এক অর্থ এই যে, পৃথিবীতে তাঁদের আকাঙ্ক্ষিত যে সব বস্তু তাঁরা অর্জন করতে পারেননি, তার জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করবেন না, কারণ তাঁরা জানেন যে, এসব কিছু আল্লাহর ফায়সালা ও ভাগ্যের ব্যাপার। তাতে তাঁদের অন্তর রুষ্ট হয় না; বরং তাঁদের অন্তর আল্লাহর ফায়সালার উপর খুশি ও সন্তুষ্ট থাকে।

* পার্থিব সুসংবাদ বলতে সত্য স্বপ্নকে বুঝানো হয়েছে অথবা সেই সুসংবাদকে বুঝানো হয়েছে যা মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ একজন মু’মিনকে দিয়ে থাকেন, যেমন কুরআন ও হাদীসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

* আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহর অলীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, তাদের প্রশংসা ও পরিচয় বর্ণনার সাথে সাথে তাদের প্রতি আখেরাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যারা আল্লাহর অলী তাদের না থাকবে কোন অপছন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা, আর না থাকবে কোন উদ্দেশ্যে ব্যর্থতার গ্রানি। এদের জন্য পার্থিব জীবনেও সংযবাদ রয়েছে এবং আখেরাতেও। দুনিয়াতেও তারা দুঃখ-ভয় থেকে মুক্ত। আর আখেরাতে তাদের মনে কোন চিন্তা-ভাবনা না থাকার অর্থ জান্নাতে যাওয়া। এতে সমস্ত জান্নাতবাসীই অন্তর্ভুক্ত।

আয়াতে উল্লেখিত ‘আওলিয়া’ শব্দটি অলী শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় অলী অর্থ ‘নিকটবর্তী’ও হয় এবং দোস্ত-বন্ধু’ও হয়। শরীআতের পরিভাষায় অলী বলতে বুঝায়ঃ যার মধ্যে দুটি গুণ আছেঃ ঈমান এবং তাকওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, “জেনে রাখ! আল্লাহর অলী তথা বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা, যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে”। [সূরা ইউনুসঃ ৬২-৬৩] যদি আল্লাহর অলী বলতে ঈমানদার ও মুত্তাকীদের বুঝায় তাহলে বান্দার ঈমান ও তাকওয়া অনুসারে আল্লাহর কাছে তার বেলায়াত তথা বন্ধুত্ব নির্ধারিত হবে। সুতরাং যার ঈমান ও তাকওয়া সবচেয়ে বেশী পূর্ণ, তার বেলায়াত তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশী হবে। ফলে মানুষের মধ্যে তাদের ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহর বেলায়াতের মধ্যেও তারতম্য হবে। আল্লাহর অলীদের সম্পর্কে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

আল্লাহর নবীরা তার সর্বশ্রেষ্ঠ অলী হিসাবে স্বীকৃত। নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন তার রাসূলগণ। রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেনঃ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ তথা নুহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সমস্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর অলীগণ দুশ্রেণীতে বিভক্তঃ প্রথম শ্রেণীঃ যারা অগ্রবর্তী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় শ্রেণীঃ যারা ডান ও মধ্যম পন্থী। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ “যখন যা ঘটা অবশ্যম্ভাবী (ক্ৰিয়ামত) তা ঘটবে, তখন তার সংঘটনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কেউ থাকবে না। তা কাউকে নীচ করবে, কাউকে সমুন্নত করবে। যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে যমীন। পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। ফলে তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পর্যবসিত হবে। এবং তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেনীতে- ডান দিকের দল; ডান দিকের দলের কি মর্যাদা! আর বাম দিকের দল; বাম দিকের দলের কি অসম্মান! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী। তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত- নেয়ামত পূর্ণ জান্নাতে। সূরা আল-ওয়াকি’আহঃ ১-১২] এখানে তিন শ্রেণীর লোকের উল্লেখ করা হয়েছেঃ যাদের একদল জাহান্নামের, তাদেরকে বামদিকের দল বলা হয়েছে। আর বাকী দু’দল জান্নাতের, তারা হলেনঃ ডানদিকের দল এবং অগ্রবর্তী ও নৈকট্যপ্রাপ্তগণ। তাদেরকে আবার এ সূরা আল-ওয়াকি’আরই শেষে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করে বলেছেন, “তারপর যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয় তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও নেয়ামত পূর্ণ জান্নাত। আর যদি সে ডান দিকের একজন হয় তবে তোমার জন্য সালাম ও শান্তি; কারণ সে ডানপন্থীদের মধ্যে”। [সূরা আল- ওয়াকি’আহঃ ৮৮-৯১] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অলীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিখ্যাত হাদীসে বলেনঃ “মহান আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর সাথে শক্রতা পোষণ করে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমার বান্দার উপর যা আমি ফরয করেছি তা ছাড়া আমার কাছে অন্য কোন প্রিয় বস্তু নেই যার মাধ্যমে সে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে। আমার বান্দা আমার কাছে নফল কাজ সমূহ দ্বারা নৈকট্য অর্জন করতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ভালবাসি। তারপর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণশক্তি হয়ে যাই যার দ্বারা সে শুনে, তার দৃষ্টি শক্তি হয়ে যাই যার দ্বারা সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যার দ্বারা সে ধারণ করে আর তার পা হয়ে যাই যার দ্বারা সে চলে। তখন আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তাকে তা অবশ্যই দেব, আমার কাছে আশ্রয় চাইলে আমি তাকে অবশ্যই উদ্ধার করব”। [বুখারী: ৬৫০২] এর মর্ম হলো এই যে, তার কোন গতি-স্থিতি ও অন্য যে কোন কাজ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় না। বস্তুতঃ এই বিশেষ ওলীত্ব বা নৈকট্যের স্তর অগণিত ও অশেষ। এর সর্বোচ্চ স্তর নবী-রাসূলগণের প্রাপ্য। কারণ, প্রত্যেক নবীরই ওলী হওয়া অপরিহার্য। আর এর সর্বোচ্চ স্তর হলো সাইয়্যেদুল আস্বীয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। এর পর প্রত্যেক ঈমানদার তার ঈমানের শক্তি ও স্তরের বৃদ্ধি-ঘাটতি অনুসারে বেলায়েতের অধিকারী হবে। সুতরাং নেককার লোকেরা হলোঃ ডান দিকের দল, যারা আল্লাহর কাছে ফরয আদায়ের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করে। তারা আল্লাহ তাদের উপর যা ফরয করেছেন তা আদায় করে, আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ করে। তারা নফল কাজে রত হয় না। কিন্তু যারা অগ্রবর্তী নৈকট্যপ্রাপ্ত দল তারা আল্লাহর কাছে ফরয আদায়ের পর নফলের মাধ্যমে নৈকট্য লাভে রত হয়।

এখানে আরও একটি বিষয় জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর অলীগণ অন্যান্য মানুষদের থেকে প্রকাশ্যে কোন পোষাক বা বেশ-ভূষা দ্বারা বিশেষভাবে পরিচিত হন না। বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাতের মধ্যে প্রকাশ্য বিদ’আতকারী ও অন্যায়কারী ছাড়া সর্বস্তরে আল্লাহর অলীগণের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাদের অস্তিত্ব রয়েছে কুরআনের ধারক-বাহকদের মাঝে, জ্ঞানী-আলেমদের মাঝে, জিহাদকারী ও তরবারী-ধারকদের মাঝে, ব্যবসায়ী, কারিগর ও কৃষকের মাঝে।

আল্লাহর অলীগণের মধ্যে নবী-রাসূলগণ ছাড়া আর কেউ নিষ্পাপ নন, তাছাড়া কোন অলীই গায়েব জানেনা, সৃষ্টি বা রিফিক প্রদানে তাদের কোন প্রভাবও নেই। তারা নিজেদেরকে সম্মান করতে অথবা কোন ধন-সম্পদ তাদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করতে মানুষদেরকে আহবান করেন না। যদি কেউ এমন কিছু করে তাহলে সে আল্লাহর অলী হতে পারে না, বরং মিথ্যাবাদী, অপবাদ আরোপকারী, শয়তানের আলী হিসাবে বিবেচিত হবে।

আল্লাহর অলী হওয়ার জন্য একটিই উপায় রয়েছে, আর তা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রঙে রঞ্জিত হওয়া, তার সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ করা। যারা এ ধরনের অনুসরণ করতে পেরেছেন তাদের মর্যাদাই আলাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহর এমন কিছু বান্দা রয়েছে যাদেরকে শহীদরাও ঈর্ষা করবে। বলা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? হয়ত তাদের আমরা ভালবাসবো। রাসূল বললেনঃ “তারা কোন সম্পদ বা আতীয়তার সম্পর্ক ব্যতীতই একে অপরকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবেসেছে। নূরের মিম্বরের উপর তাদের চেহারা হবে নূরের। মানুষ যখন ভীত হয় তখন তারা ভীত হয় না। মানুষ যখন পেরেশান ও অস্থির হয় তখন তারা অস্থির হয় না।” তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। [ইবনে হিব্বানঃ ৫৭৩, আবুদাউদঃ ৩৫২৭] অন্য বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “বিভিন্ন দিক থেকে মানুষ আসবে এবং বিভিন্ন গোত্র থেকে মানুষ এসে জড়ো হবে, যাদের মাঝে কোন আত্বীয়তার সম্পর্ক থাকবে না। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবেসেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে কাতারবন্দী হয়েছে। আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তাদের জন্য নূরের মিম্বরসমূহ স্থাপন করবেন, তারপর তাদেরকে সেগুলোতে বসাবেন। তাদের বৈশিষ্ট হলো মানুষ যখন ভীত হয় তখন তারা ভীত হয় না, মানুষ যখন পেরেশান হয় তখন তারা পেরেশান হয় না। তারা আল্লাহর অলী, তাদের কোন ভয় ও পেরেশানী কিছুই থাকবে না। [মুসনাদে আহমাদ [৫/৩৪৩]। [উসুলুল ঈমান ফী দাওয়িল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত, পৃ. ২৮২-২৮৬ (বাংলা সংস্করণ)]
* [১] এখানে আল্লাহর অলীদের জন্য দুনিয়ার সুসংবাদ বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যে, তা হলো “কোন মুসলিম তার জন্য কোন ভাল স্বপ্ন দেখা বা তার জন্য অন্য কেউ কোন ভাল স্বপ্ন দেখা” [মুসলিমঃ ২৬৪২, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১৫, ৬/৪৪৫, তিরমিযীঃ ২২৭৩, ২২৭৫, ইবনে মাজাহঃ ৩৮৯৮] কোন কোন হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যখন সময় (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন মুসলিম ব্যক্তির স্বপ্ন প্রায় সত্য হবে। তোমাদের মধ্যে যে বেশী সত্যবাদি তার স্বপ্নও বেশী সত্য। মুসলিম ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের পয়তাল্লিশ ভাগের একভাগ। স্বপ্ন তিন প্রকারঃ সৎ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। আরেক প্রকার স্বপ্ন হচ্ছে শয়তানের পুঞ্জিভূত করা বিষয়াদি। অন্য আরেক প্রকার স্বপ্ন আছে যা কোন ব্যক্তির নিজের সাথে কৃত কথাবার্তা। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখে সে যেন উঠে সালাত আদায় করে এবং কাউকে না বলে।” [বুখারীঃ ৭০১৭, মুসলিমঃ ২২৬৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মুবাশশিরাত ব্যতীত নবুওয়তের আর কিছু বাকী নেই। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ মুবাশশিরাত কি? তিনি বললেনঃ সৎস্বপ্ন”। [মুসলিমঃ ৪৭৯]

অবশ্য কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে দুনিয়ার সুসংবাদ বলতে মুমিন বান্দাদের মৃত্যুর সময় তারা যে জান্নাত ও রহমতের ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে উত্তম আচরণ পেয়ে থাকেন তাই বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] যেমন সুরা ফুসসিলাতের ৩০-৩২ নং আয়াতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বারা’ ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত এক বড় হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুকালীন সময়ে মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তি কি কি দেখতে পায় এবং তার কি অবস্থা হয় তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। [দেখুনঃ মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৮৭-২৮৮, আবু দাউদঃ ৪৭৫৩] মূলতঃ উভয় তাফসীরই বিশুদ্ধ। এতে কোন স্ববিরোধিতা নেই।

আর আখেরাতে সুসংবাদ হচ্ছে জান্নাত ও উত্তম ব্যবহার। যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও রাসূলের বিভিন্ন হাদীসে বিস্তারিত এসেছে। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “তাদেরকে (হাশরের মাঠের) কঠিন ভীতিকর অবস্থা পেরেশান করবে না, আর ফেরেশতাগণ তাদের সাক্ষাৎ করে বলবে, এটা তো ঐ দিন যার ওয়াদা তোমাদের করা হতো” [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ১০৩] অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “সেদিন আপনি দেখবেন মুমিন নর-নারীদের সামনে ও ডানে তাদের জ্যোতি ছুটতে থাকবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে, এটাই মহাসাফল্য ” [সূরা আল-হাদীদঃ১২]

[২] উপরে আল্লাহ্ তা’আলা মুমিন মুত্তাকীদের সাথে যে ওয়াদা করেছেন তা কখনো পরিবর্তনশীল নয়। এটা স্থায়ী অঙ্গীকার। [কুরতুবী]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 62-65
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ
Behold! The Awliya’ of Allah,

Identifying the Awliya’ of Allah

Allah tells;

أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ

Behold! The Awliya’ of Allah,

Allah tells us that His Awliya’ (friends and allies) are those who believe and have Taqwa of Allah as He defined them. Every pious, God-fearing person is a friend of Allah, therefore,

لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ

no fear shall come upon them,

from the future horrors they will face in the Hereafter.

وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

nor shall they grieve.

over anything left behind in this world.
الَّذِينَ امَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ

Those who believed, and have Taqwa.

Ibn Jarir recorded that Abu Hurayrah said that Allah’s Messenger said:

إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ عِبَادًا يَغْبِطُهُمُ الاَْنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاء

Among the servants of Allah there will be those whom the Prophets and the martyrs will consider fortunate.

It was said:”Who are these, O Messenger of Allah, so we may love them?”

He said:

هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا فِي اللهِ مِنْ غَيْرِ أَمْوَالٍ وَلَا أَنْسَابٍ وُجُوهُهُمْ نُورٌ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ لَا يَخَافُون إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاس

These are people who loved one another for the sake of Allah without any other interest like money or kinship. Their faces will be light, upon platforms of light. They shall have no fear (on that Day) when fear shall come upon people. Nor shall they grieve when others grieve.

Then he recited:
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

Behold!! Verily, the Awliya’ (friends and allies) of Allah, no fear shall come upon them nor shall they grieve.
The True Dream is a Form of Good News

Ibn Jarir narrated from Ubadah bin As-Samit that he (recited) to Allah’s Messenger.
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الاخِرَةِ

For them is good news, in the life of the present world, and in the Hereafter.

(and said,) “We know the good news of the Hereafter, it is Paradise. But what is the good news in this world?”

He said:

الرُّوْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الْعَبْدُ أَوْ تُرَى لَهُ وَهِيَ جُزْءٌ مِنْ أَرْبَعَةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا أَوْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّة

It is the good dream that a servant may see or it is seen about him. This dream is one part from forty-four or seventy parts of Prophethood.

Imam Ahmad recorded that Abu Dharr said,

“O Messenger of Allah! What about a man who does deeds that the people commend him for?”

Allah’s Messenger said,

تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُوْمِن

That is the good news that has been expedited for the believer.

Imam Ahmad recorded that Abdullah bin Amr said that Allah’s Messenger said:

لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الاخِرَةِ

For them is good news, in the life of the present world

Then he said,

الرُّوْيَا الصَّالِحَةُ يُبَشَّرُهَا الْمُوْمِنُ جُزْءٌ مِنْ تِسْعَةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ فَمَنْ رَأَى ذَلِكَ فَلْيُخْبِرْ بِهَا

وَمَنْ رَأَى سِوَى ذَلِكَ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيُحْزِنَهُ فَلْيَنْفُثْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَثًا وَلْيُكَبِّرْ وَلَا يُخْبِرْ بِهَا أَحَدًا

The good dream that comes as a good news for the believer is a part of forty-nine parts of Prophethood. So if anyone of you has a good dream, he should narrate it to others.

But if he has a dream that he dislikes, then it is from Shaytan to make him sad. He should blow to his left three times, and say:”Allahu Akbar,” and should not mention it to anyone.”

And it was also said,

“The good news here is the glad tidings the angels bring to the believer at the time of death. They bring him the good news of Paradise and forgiveness.”

Similarly, Allah said:

إِنَّ الَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَـمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَـيِكَةُ أَلاَّ تَخَافُواْ وَلَا تَحْزَنُواْ وَأَبْشِرُواْ بِالْجَنَّةِ الَّتِى كُنتُمْ تُوعَدُونَ

نَحْنُ أَوْلِيَأوُكُمْ فِى الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَفِى الاٌّخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِى أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ

نُزُلاً مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ

Verily, those who say:”Our Lord is Allah (alone),” and then they stand straight and firm, on them the angels will descend (at the time of their death) (saying):”Fear not, nor grieve! But receive the glad tidings of Paradise which you have been promised!

We have been your friends in the life of this world and are (so) in the Hereafter. Therein you shall have (all) that your souls desire, and therein you shall have (all) for which you ask.

An entertainment from (Allah), the Oft-Forgiving, Most Merciful.” (41:30-32)

In the Hadith narrated by Al-Bara’, the Prophet said:

إِنَّ الْمُوْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمُوتُ جَاءَهُ مَلَيِكَةٌ بِيضُ الْوُجُوهِ بِيضُ الثِّيَابِ فَقَالُوا اخْرُجِي أَيَّتُهَا الرُّوحُ الطَّيِّبَةُ إِلَى رُوْحٍ وَرَيْحَانٍ وَرَبَ غَيْرِ غَضْبَانَ

فَتَخْرُجُ مِنْ فَمِهِ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فَمِ السِّقَاء

When death approaches the believer, angels with white faces and white clothes come to him and say:”O good soul! Come out to comfort and provision and a Lord who is not angry.”

The soul then comes out of his mouth like a drop of water pouring out of a water skin.

Their good news in the Hereafter is as Allah said:

لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الااٌّكْبَرُ وَتَتَلَقَّـهُمُ الْمَلَـيِكَةُ هَـذَا يَوْمُكُمُ الَّذِى كُنتُمْ تُوعَدُونَ

The greatest terror (on the Day of Resurrection) will not grieve them, and the angels will meet them, (with the greeting:) “This is your Day which you were promised.” (21:103)

and,

يَوْمَ تَرَى الْمُوْمِنِينَ وَالْمُوْمِنَـتِ يَسْعَى نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَـنِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّـتٌ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الاٌّنْهَـرُ خَـلِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

On the Day you shall see the believing men and the believing women — their light running forward before them and by their right hands. Glad tidings for you this Day! Gardens under which rivers flow (Paradise), to dwell therein forever! Truly, this is the great success! (57:12)

Allah then said:

لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ

No change can there be in the Words of Allah.

meaning, this promise doesn’t change or breach or fall short. It is decreed and firm, and going to happen undoubtedly.

ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

This is indeed the supreme success.
All Might and Honor is for Allah — He Alone has Full Authority within the Universe

Allah said to His Messenger,

وَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ

Do not grieve over their speech,

Do not grieve because of the remarks of these idolators, and depend on Allah and ask for His help. Put your trust in Him.

إِنَّ الْعِزَّةَ لِلّهِ جَمِيعًا

For all power and honor belong to Allah.

All might and honor belong to Him, His Messenger and the believers.

هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

He is the All-Hearer, the All-Knower.

He hears the utterances of His servants and knows their affairs.

Leave a Reply