(Book #675)আমাদের ‌রুটীন কেমন হওয়া‌ উচিত।

আমাদের ‌রুটীন কেমন হওয়া‌ উচিত।

Book No. 14 : ‘ঘুম থেকে নামাজ উত্তম’

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 675)
[ الَّیۡلَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَ النَّہَارَ مُبۡصِرًا ؕ
তোমাদের জন্য রাত, যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং দেখার জন্য দিন।
For you the night to rest therein and the day]
www.motaher21.net

اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰہِ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَا یَتَّبِعُ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ شُرَکَآءَ ؕ اِنۡ یَّـتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا یَخۡرُصُوۡنَ ﴿۶۶﴾
মনে রেখো, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যত কিছু আছে নিঃসন্দেহে সে সব আল্লাহরই; আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য শরীকদেরকে আহবান করে, তারা কোন্ বস্তুর অনুসরণ করছে? তারা শুধু ধারণার অনুসরণ করছে এবং শুধু অনুমানপ্রসূত কথা বলছে।
Unquestionably, to Allah belongs whoever is in the heavens and whoever is on the earth. And those who invoke other than Allah do not [actually] follow [His] “partners.” They follow not except assumption, and they are not but falsifying.

ہُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الَّیۡلَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَ النَّہَارَ مُبۡصِرًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿۶۷﴾
তিনিই তৈরী করেছেন তোমাদের জন্য রাত, যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং দেখার জন্য দিন। যে সম্প্রদায় কথা শুনে নিশ্চয় তাদের জন্য এতে আছে অনেক নিদর্শন।
It is He who made for you the night to rest therein and the day, giving sight. Indeed in that are signs for a people who listen.

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৬৬-৬৭ নং আয়াত:-
الَّیۡلَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَ النَّہَارَ مُبۡصِرًا ؕতোমাদের জন্য রাত, যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং দেখার জন্য দিন।
For you the night to rest therein and the day.

৬৬-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এখানে আসলে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বক্তব্যকে অত্যন্ত সংক্ষেপে কয়েক কথায় বর্ণনা করা হয়েছে। দুনিয়ায় যারা অহী ও ইলহামের সাহায্যে সরাসরি প্রকৃত সত্যের সন্ধান পায় না, তাদের ধর্ম সম্বন্ধে মতামত প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দার্শনিক সুলভ তত্ত্বানুসন্ধান। এর উদ্দেশ্যে হলো, এ বিশ্বজাহানের বাহ্যত আমরা যা কিছু দেখছি ও অনুভব করছি তার পেছনে কোন সত্য লুকিয়ে আছে কিনা এবং থাকলে তা কি-এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করা। কোন ব্যক্তি চাই সে নাস্তিক্যবাদ অবলম্বন করুক বা শিরক অথবা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হোক। তার পক্ষে অবশ্যই কোন না কোন ধরনের দার্শনিক চিন্তা গবেষণা ও তত্ত্বানুসন্ধানের আশ্রয় না নিয়ে ধর্ম সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আর নবীগণ যে ধর্ম পেশ করেছেন তা কেবল এভাবেই যাচাই করা যেতে পারে। অর্থাৎ দার্শনিক সুলভ চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে মানুষকে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ততা অর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে যে, নবী তাকে বিশ্বজাহানের বিভিন্ন নিদর্শনের পেছনে যে গভীর তত্ত্ব ও সত্য লুকিয়ে থাকার সন্ধান দিচ্ছেন তার বিবেক মন তার প্রতি সায় দেয় কি না। এ অনুসন্ধানের সঠিক বা বেঠিক হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে অনুসন্ধান পদ্ধতির ওপর। এ পদ্ধতি ভুল হলে ভুল অভিমত গড়ে উঠবে এবং সঠিক হলে সঠিক অভিমত গড়ে উঠবে। এখন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক, দুনিয়ায় বিভিন্ন দল এ অনুসন্ধানের জন্য কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।

মুশরিকরা নির্জলা সংশয়, কল্পনা ও অনুমানের ওপর নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত গড়ে তুলেছে।

ইশরাকী সাধক ও যোগীরা যদিও মুরাকাবা তথা ধ্যানযোগের ভড়ৎ সৃষ্টি করেছেন এবং দাবী করেছেন যে, তারা বহিরিঙ্গের পেছনে উকি দিয়ে অভ্যন্তরের চেহারা দেখে নিয়েছেন কিন্তু আসলে তারা নিজেদের এ অনুসন্ধানের ভিত রেখেছেন আন্দাজ অনুমানের ওপর। তারা আসলে নিজেদের আন্দাজ অনুমানের বিষয় নিয়েই ধ্যান করেন। আর তারা এই যে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এটা আসলে এছাড়া আর কিছুই নয় যে, অনুমানের ভিত্তিতে যে ধারণাটা তারা দাঁড়া করিয়েছিল তারি ওপর তাদের চিন্তাভাবনা কে কেন্দ্রীভূত করেছেন। তারপর তার ওপর মস্তিস্কের চাপ সৃষ্টি করেছেন, ফলে সেই একই ধারণাকে নিজেদের সমানে চলমান দেখতে পেয়েছেন।

দার্শনিকগণ যুক্তির সাহায্যে গৃহীত সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত রূপে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আসলে তা আন্দাজ-অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এ আন্দাজ অনুমান ভিত্তিক যুক্তি যে একেবারেই খোড়া যুক্তি, সে কথা উপলব্ধির করে তারা তর্কশাস্ত্র সম্মত যুক্তি প্রদান ও কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক যষ্ঠির ওপর ভর দিয়ে তাকে চালাবার চেষ্টা করেছেন এবং এর নাম দিয়েছেন যুক্তি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞানীগণ যদিও বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য তাত্ত্বিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তবুও অতিপ্রাকৃতের সীমানায় পা ফেলার সাথে সাথেই তারাও তাত্ত্বিক পদ্ধতি পরিহার করে আন্দাজ অনুমান ও ধারণা কল্পনার পেছনে চলেছেন।

আবার এ দলগুলোর আন্দাজ-অনুমান সংকীর্ণ দল প্রীতি, অন্ধ বিদ্বেষ ও স্বার্থ প্রীতি রোগেও আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তারা অন্যের কথা না শোনার জিদ ধরে বসেছে এবং নিজেদের প্রিয় পথের ওপর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে।

কুরআন এ ধরনের অনুসন্ধান পদ্ধতিকে আগাগোড়াই ভুল গণ্য করে। কুরআন বলে, তোমাদের পথভ্রষ্টতার আসল কারণ হচ্ছে এই যে, তোমরা সত্যানুসন্ধানের ভিত্তি রাখো আন্দাজ-অনুমান ও ধারণা-কল্পনার ওপর। আবার অন্ধ দল প্রীতি ও সংকীর্ণ স্বার্থ বিদ্বেষের শিকার হয়ে অন্যের যুক্তিসঙ্গত কথাও শুনতে রাজী হও না। এ দ্বিবিধ ভুলের কারণে তোমাদের পক্ষে সত্যের সন্ধান লাভ অসম্ভব তো ছিলই এমন কি নবীগণ যে দান পেশ করেছেন তাকে যাচাই পর্যালোচনা করে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়াও অসম্ভব হয়ে গেছে।

এর মোকাবিলায় কুরআন দার্শনিক অনুসন্ধান গবেষণার জন্য যে সঠিক তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথের সন্ধান দিয়েছে তা হচ্ছে এই যে, যারা দাবী করছে, আমরা ধারণা-কল্পনা, আন্দাজ-অনুমান ও ধ্যান-তপস্যার মাধ্যমে নয় বরং প্রথমে তাদের বর্ণনা সকল প্রকার সংকীর্ণ দল প্রীতি ও স্বার্থ বিদ্বেষ মুক্ত হয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনা। তারপর বিশ্বজাহানে যেসব নিদর্শন (কুরআনের পরিভাষায় আয়াত সমূহ) তোমাদের দৃষ্টিগোচর ও অভিজ্ঞতা লব্ধ হয় সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করো, সেগুলোর সাক্ষ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করো এবং অনুসন্ধান করতে থাকো যে, এ বাহ্যিক অবয়বের পেছনে যে সত্যের প্রতি এরা আঙ্গুলই নির্দেশ করেছেন তার প্রতি ইঙ্গিতকারী আলামত তোমরা ঐ বাহ্যিক অবয়বেই পাচ্ছো কিনা? যদি ও ধরনের আলামত দৃষ্টিগোচর হয় এবং তাদের ইঙ্গিতও সুস্পষ্ট হয় তাহলে যাদের বর্ণনা নিদর্শনসমূহের সাক্ষ্য অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে অযথা মিথ্যুক বলার আর কোন কারণ নেই। এ দর্শণ পদ্ধতিই ইসলামের ভিত্তি। দুঃখের বিষয় এ পদ্ধতি পরিত্যাগ করে মুসলিম দার্শনিকগণও প্লেটো ও এরিষ্টটলের পদাংক অনুসরণ করেছেন।

কুরআনের বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র এ পদ্ধতি অবলম্বনের নির্দেশ দেয়াই হয়নি বরং বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনসমূহ পেশ করে তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এবং প্রকৃত সত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছার যথারীতি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এভাবে চিন্তা ভাবান ও অনুসন্ধান করার এ পদ্ধতি মন মস্তিস্কে বদ্ধমূল হবে। এখানে এ আয়াতেও উদাহরণস্বরূপ শুধুমাত্র দু’টি নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ রাত ও দিন। আসলে সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্বের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃংখল পরিবর্তনের কারণে রাত দিনের ওলটপালট ও বিপ্লব সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক এবং সমগ্র বিশ্ব জগতের ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট কুশলতা, নৈপুণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিযার সমস্ত বস্তুর অসংখ্য প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রভুত্ব, কৃপাশীলতা ও প্রতিপালনের সুস্পষ্ট আলামতও পাওয়া যায়। কারণ এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোও সরবরাহ করেন। এ থেকে এও জানা যায় যে, এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র, একজন, তিনি কোন ক্রীড়ামোদী বা তামাসা প্রিয় নন, খেলাচ্ছলে এ বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেননি এবং সেভাবে একে চালাচ্ছেনও না বরং তিনি প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞানময় এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তিনি কাজ করেছেন। এ থেকে এও জানা যায় যে, অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধিনস্থ দাস। এইসব নিদর্শনগত সুস্পষ্ট সাক্ষ্যের মোকাবিলায় মুশরিকরা আন্দাজ অনুমান ও ধারণা-কল্পনার ভিত্তিতে যে ধর্ম উদ্ভাবন করেছে তা কিভাবে সঠিক হতে পারে?

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৬৬-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা‘আলা খবর দিচ্ছেন যে, আকাশ ও জমিনে জীব ও জড় যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুর মালিক ও স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, কোনক্রমেই এগুলোর সৃষ্টি ও রাজত্বে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কেউ অংশীদার নেই। সৃষ্টির পরিচালনা ও মালিকত্ব্ েআল্লাহ তা‘আলা একক ও অদ্বিতীয়। সুতরাং ইবাদত পাওয়ার প্রকৃত মালিক ও হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কিন্তু যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে, অন্যকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী মনে করে তারা কোন প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তারা শুধু ধারণা ও আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে তাদের ইবাদত করে। যেমন অত্র সূরার ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে। মানুষ যদি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিবেকে বিচার করে তাহলে অনুধাবণ করতে পারবে, আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তারা যাদের ইবাদত করছে তারা কি আসলে ইবাদত পাওয়ার হকদার? তারা কোন কিছু সৃষ্টি করেনি, কাউকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, কারো উপকার করার ক্ষমতা রাখে না, তাহলে কী জন্য তাদের ইবাদত করব? সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যদের ইবাদত করে, তাদের ধারণা এরা আল্লাহ তা‘আলার ওলী, এরা অনেক ক্ষমতা রাখে, তাদের কাছে চাইলে হয়তো অনেক উপকার করে দিতে পারবে। আমরা পাপ করতে করতে বড় গুনাহগার বান্দা হয়ে গেছি, তাই সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইলে তিনি হয়তো দেবেন না, আর এরা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল বান্দা, তাই তাদের মাধ্যমে চাই। এসব হল ধারণা, যা সত্যের কোন উপকারে আসে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সত্য জানিয়ে দিয়েছেন, বান্দা আমার কাছে চাইলে আমি তা কবূল করি। বান্দা ক্ষমা চাইলে আমি ক্ষমা করি, বান্দা অসুস্থ হলে সুস্থতা দান করি, ইত্যাদি সব আল্লাহ তা‘আলা করে থাকেন। সুতরাং অনুমান ও ধারণা করে নয়, বরং ইবাদত করতে হবে দলীল প্রমাণের সাথে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিনের মত দিন-রাতের স্রষ্টা। তিনি রাতকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের বিশ্রামের জন্য। এ জন্য রাতকে অন্ধকার করে দিয়েছেন, যাতে ঘুমাতে পারে, আরাম নিতে পারে। আলোকজ্জল থাকলে তা পরোপূরি হাসিল হতো না। বর্তমান বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে দিনের বেলা ঘুমানো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আবার দিনকে করে দিয়েছেন আলোকময়। যাতে মানুষ কাজ-কর্ম, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত ও অন্যান্য সকল কিছু করতে পারে। এছাড়াও দিনের আলোর মধ্যে রয়েছে অনেক হিকমত, যেমন দিনের আলো না হলে কোন উদ্ভিদ জন্মাতো না, দিনের আলো না হলে মানুষ ফসল ফলাতে পারত না ইত্যাদি। সুতরাং এসব সৃষ্টির মধ্যে যারা চিন্তাশীল ও দেখে শুনে চলে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, রয়েছে শিক্ষা। এগুলো এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি, এগুলোর একজন স্রষ্টা রয়েছেন, সে স্রষ্টা হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. এই আয়াতগুলো আল্লাহ তা‘আলার রব হবার প্রমাণ বহণ করে।
২. আল্লাহ তা‘আলার কোন কিছুতে কারো কোন অংশীদার নেই।
৩. দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে বিশাল হিকমত নিহিত রয়েছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

 

আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলছেন- মুশরিকদের কথা যেন তোমাকে দুঃখিত না করে। তাদের উপর জয়যুক্ত হওয়ার জন্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাঁরই উপর নির্ভরশীল হও। সর্বপ্রকারের সম্মান ও বিজয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সঃ) এবং মুমিনদের জন্যে। মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের কথা শুনে থাকেন এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই। মুশরিকরা যে প্রতিমাগুলোর পূজা করছে সেগুলো তাদের ক্ষতি ও লাভ কিছুই করতে সক্ষম নয়। আর তাদের কাছে এর যুক্তিসম্মত কোন দলীলও নেই। এই মুশরিকরা তো শুধু মিথ্যা, অযৌক্তিক ও অনুমানপ্রসূত মতেরই অনুসরণ করছে।

এরপর ইরশাদ হচ্ছে- আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন, যেন তারা সারা দিনের শ্রান্তি ও ক্লান্তির পর আরাম ও শান্তি লাভ করতে পারে। আর তিনি দিবসকে জীবিকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল করেছেন। তারা দিনে সফর করে থাকে এবং আলোকের মধ্যে তাদের জন্যে আরো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দলীল প্রমাণাদি দেখে ও শুনে যারা উপদেশ ও শিক্ষা লাভ করে থাকে তাদের জন্যে এই আয়াতগুলোর মধ্যে নিদর্শনসমূহ রয়েছে। এগুলো সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা কোন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নয়; বরং তা শুধু ধারণা, আন্দাজ ও অনুমানের কারসাজি। মানুষ এখনও যদি নিজের জ্ঞান ও বুঝশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে, তাহলে অবশ্যই তার নিকট এ কথা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আল্লাহ তাআলার কোন অংশীদার নেই। যদি তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করাতে একক, কেউ তাঁর শরীক নয়, তাহলে ইবাদতে অন্যরা কিভাবে শরীক হতে পারে?

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

আয়াতের অন্য অনুবাদ হচ্ছে, যারা আল্লাহ্‌কে ছাড়া অন্যদের ডাকে, তারা মূলত শরীকদের অনুসরণ করে না। কেননা, যাকে প্রকৃত অর্থে ডাকতে হবে, তিনি হবেন রব। আর এ সমস্ত শরীকগুলো কখনও রব হতে পারে না। তাদেরকে তারা শরীক বললেও প্রকৃত প্রস্তাবে তারা আল্লাহ্‌র শরীক নয়। আল্লাহ্‌র রবুবিয়াতে শরীক সাব্যস্ত করা অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং তারা কেবল ধারণার অনুসরণ করে থাকে। [কুরতুবী] তাছাড়া কোন কোন মুফাসসির অনুবাদ করেছেন, আল্লাহ্‌কে ছাড়া অন্য যাদেরকে তারা ডাকে, তারা তো তাদের ধারণা অনুসারে তাদেরই সাব্যস্ত করা শরীক। প্রকৃত অর্থে তারা শরীক নয়। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, এর অর্থ, তারা যাদেরকে আল্লাহ্‌ ছাড়া শরীক সাব্যস্ত করে থাকে সে সমস্ত নবী ও ফিরিশতাগণ তো আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করেন না। সুতরাং তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করো? [ফাতহুল কাদীর]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 66-67
الَّیۡلَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَ النَّہَارَ مُبۡصِرًا ؕFor you the night to rest therein and the day

أَلا إِنَّ لِلّهِ مَن فِي السَّمَاوَات وَمَن فِي الَارْضِ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ شُرَكَاء إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ

Behold! Verily, to Allah belongs whosoever is in the heavens and whosoever is in the earth. And those who worship and invoke others besides Allah, in fact they follow not the partners, they follow only a conjecture and they do nothing but lie.

Allah stated that to Him is the dominion of the heavens and earth. But the idolators worship idols, that own nothing and can neither harm nor benefit anyone. They have no evidence to base their worship on them. They only follow their own conjecture, lies, and ultimately – falsehood.

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُواْ فِيهِ

He it is Who has appointed for you the night that you may rest therein, and the day to make things visible (to you).

Allah informed us that He is the One Who made the night for His servants to rest therein from weariness and exhaustion.

وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا

And the day to make things visible (to you).

bright and clear for them to seek livelihood and to travel to fulfill their needs.

إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

Verily, in this are Ayat for a people who listen.

Those who hear these proofs and take a lesson from them. These Ayat can lead them to realize the greatness of their Creator and Sustainer.

Leave a Reply