(Book# 678) [ ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪….. অনেক রাসূলকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছেন। We sent Messengers to their people. ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 678)
[ ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪…..
অনেক রাসূলকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছেন।
We sent Messengers to their people. ]
www.motaher21.net

ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہٖ رُسُلًا اِلٰی قَوۡمِہِمۡ فَجَآءُوۡہُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ فَمَا کَانُوۡا لِیُؤۡمِنُوۡا بِمَا کَذَّبُوۡا بِہٖ مِنۡ قَبۡلُ ؕ کَذٰلِکَ نَطۡبَعُ عَلٰی قُلُوۡبِ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ﴿۷۴﴾
তারপর আমরা নূহের পড়ে অনেক রাসূলকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই; অতঃপর তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এসেছিল। কিন্তু তারা আগে যাতে মিথ্যারোপ করেছিল তাতে ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমরা সীমালঙ্ঘনকারীসদের হৃদয় মোহর করে দেই।
Then We sent after him messengers to their peoples, and they came to them with clear proofs. But they were not to believe in that which they had denied before. Thus We seal over the hearts of the transgressors.
ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ مُّوۡسٰی وَ ہٰرُوۡنَ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَا۠ئِہٖ بِاٰیٰتِنَا فَاسۡتَکۡبَرُوۡا وَ کَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ ﴿۷۵﴾
তারপর আমরা আমাদের নিদর্শনসহ মূসা ও হারূনকে ফির’আউন ও তার সভাষদদের কাছে পাঠাই। কিন্তু তারা অহংকার করে এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায় ।
Then We sent after them Moses and Aaron to Pharaoh and his establishment with Our signs, but they behaved arrogantly and were a criminal people.
فَلَمَّا جَآءَہُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡۤا اِنَّ ہٰذَا لَسِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۷۶﴾
অতঃপর যখন তাদের প্রতি আমার নিকট হতে সত্য পৌঁছল, তখন তারা বলতে লাগল, ‘নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট যাদু।
So when there came to them the truth from Us, they said, “Indeed, this is obvious magic.”
قَالَ مُوۡسٰۤی اَتَقُوۡلُوۡنَ لِلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَکُمۡ ؕ اَسِحۡرٌ ہٰذَا ؕ وَ لَا یُفۡلِحُ السّٰحِرُوۡنَ ﴿۷۷﴾
মূসা বলল, ‘সত্য যখন তোমাদের কাছে পৌঁছল, তখন সে সম্পর্কে তোমরা কি বলছ, এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না।’
Moses said, “Do you say [thus] about the truth when it has come to you? Is this magic? But magicians will not succeed.”
قَالُوۡۤا اَجِئۡتَنَا لِتَلۡفِتَنَا عَمَّا وَجَدۡنَا عَلَیۡہِ اٰبَآءَنَا وَ تَکُوۡنَ لَکُمَا الۡکِبۡرِیَآءُ فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَا نَحۡنُ لَکُمَا بِمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۷۸﴾
তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তুমি কি তা থেকে আমাদেকরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের কাছে এসেছ এবং যাতে যমীনে তোমাদের দুজনের প্রতিপত্তি হয়, এজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি ঈমান আনয়নকারী নই।’
They said, “Have you come to us to turn us away from that upon which we found our fathers and so that you two may have grandeur in the land? And we are not believers in you.”

وَ قَالَ فِرۡعَوۡنُ ائۡتُوۡنِیۡ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیۡمٍ ﴿۷۹﴾
আর ফির’আউন বলল, ‘তোমরা আমার কাছে সমস্ত সুদক্ষ জাদুকরকে নিয়ে আস।‘
And Pharaoh said, “Bring to me every learned magician.”

فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَۃُ قَالَ لَہُمۡ مُّوۡسٰۤی اَلۡقُوۡا مَاۤ اَنۡتُمۡ مُّلۡقُوۡنَ ﴿۸۰﴾
অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসল তখন তাদেরকে মূসা বললেন, ‘তোমাদের যা নিক্ষেপ করার, নিক্ষেপ কর।’
So when the magicians came, Moses said to them, “Throw down whatever you will throw.”

فَلَمَّاۤ اَلۡقَوۡا قَالَ مُوۡسٰی مَا جِئۡتُمۡ بِہِ ۙ السِّحۡرُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَیُبۡطِلُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُصۡلِحُ عَمَلَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿۸۱﴾
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, তখন মূসা বললেন, ‘তোমরা যা এনেছ তা জাদু, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সেগুলোকে অসার করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কাজ সার্থক করেন না।’
And when they had thrown, Moses said, “What you have brought is [only] magic. Indeed, Allah will expose its worthlessness. Indeed, Allah does not amend the work of corrupters.
وَ یُحِقُّ اللّٰہُ الۡحَقَّ بِکَلِمٰتِہٖ وَ لَوۡ کَرِہَ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ﴿٪۸۲﴾
আর অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ্‌ তাঁর বাণীর মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
And Allah will establish the truth by His words, even if the criminals dislike it.”

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৭৪-৮২ নং আয়াত:-
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪…..
অনেক রাসূলকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছেন।
We sent Messengers to their people.

৭৪-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪……)

আল্লাহ তা‘আলা নূহ (عليه السلام)-এর পরেও প্রমাণ-পঞ্জিসহ অসংখ্য নাবী-রাসূলদেরকে পাঠিয়েছিলেন, যা প্রমাণ করত যে, এরা আসলেই আল্লাহ তা‘আলার নাবী। কিন্তু তারা তা বুঝার পরেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। কারণ তারা পূর্বেই যেহেতু রাসূলদেরকে কোন রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অস্বীকার করেছিল তাই তারা ভাবল যে, আমরা যেহেতু পূর্বেই অস্বীকার করেছি সেহেতু এখন আর ঈমান এনে লাভ হবে না। যার ফলে তারা ঈমান আনেনি। যেভাবে কুফরী ও মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের হৃদয় মোহরাংকিত হয়েছিল, ঐভাবেই ভবিষ্যতেও যে জাতি রাসূলগণকে মিথ্যাজ্ঞান করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, তাদের অন্তরও মোহরাংকিত হবে এবং পূর্ব জাতিসমূহের ন্যায় তারাও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে ।

(ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھِمْ مُّوْسٰی وَھٰرُوْنَ…… ِنَّ اللہَ لَا یُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِیْنَ)

পূর্বে নূহ (عليه السلام)-এর কথা ও অন্যান্য অনেক রাসূল প্রেরণ করার কথা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতগুলোতে মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام) সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন। আর রাসূলদের কথা বলার পর বিশেষভাবে তাদের দু‘জনের কথা উল্লেখ করার কারণ হল যে, তারা উভয়েই বিশিষ্ট রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের মাঝে ও তাদের শত্র“র মাঝে অনেক শিক্ষা রয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে স্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে প্রেরণ করেছেন ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট, কিন্তু তারা তাদের নিদর্শনকে মেনে নেয়নি। এ নিদর্শন সম্পর্কে সূরা ইসরার ১০১ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু তারা বড় বড় অপরাধমূলক কাজে অভ্যাসী ছিল, যার কারণে আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলকেও অহঙ্কার প্রদর্শন করল। কারণ এক পাপ কাজ অন্য পাপকে আকর্ষণ করে এবং পাপের ওপর অটল থাকলে বড় বড় পাপকর্ম সাধনে সাহস যোগায়। সুতরাং যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল তখন তা অস্বীকার করার কোন বিবেকগ্রাহ্য প্রমাণ না থাকায় অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বলে দেয় এটা জাদু। তাছাড়া মূসা (عليه السلام)-এর যুগে জাদুর প্রভাব বেশি ছিল, যেমন আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের সাহিত্য চর্চার প্রভাব বেশি ছিল। মূসা (عليه السلام) বললেন: তোমরা একটু চিন্তা করে দেখ, সত্যের দাওয়াত ও সঠিক কথাকে তোমরা জাদু বলছ! এটা কি জাদু হতে পারে? জাদুকর তো কখনো কৃতকার্যই হতে পারে না। অর্থাৎ ইচ্ছা অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করতে এবং অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে না। আমি তো আল্লাহ তা‘আলার রাসূল, আমি আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য পাই এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাকে মু’জিযাহ দেয়া হয়েছে। জাদু ও জাদুবিদ্যার আমার প্রয়োজনই বা কি আছে? তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার প্রদর্শিত মু’জিযার তুলনায় তার মূল্যই বা কতটুকু।

তারা মূসা (عليه السلام)-এর সমস্ত মু‘জিযা দেখার পর বলল যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে দীনের ওপর পেয়েছি তা থেকে অন্য দীনের ওপর সরে যাব না এবং এই জমিনে তোমাদের রাজত্ব কায়েম করতে দেব না। ফলে তাদের বাপ-দাদার মতবাদে অটল বিশ্বাস ও ধন-সম্পদের লোভ তাদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রেখেছে। পরবর্তীতে ফির‘আউনের জাদুকরদের ডাকা এবং মূসার জাদুকরদের মোকাবেলা করার কাহিনী সূরা আ‘রাফে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. প্রত্যেক রাসূলই দুনিয়াতে প্রমাণ নিয়ে এসেছেন।
২. যুগে যুগে যারা ঈমান আনেনি তাদের সকলের পরিণতি একই রকম হবে।
৩. মূসা ও হারূন (عليه السلام) হলেন বিশিষ্ট নাবীদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. নাবীদের মু‘জিযা কোন জাদু নয়।
৫. বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে সঠিক বিষয়ে আমল করা থেকে বিরত থাকা ঠিক নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নূহ (আঃ)-এর পরে অন্যান্য রাসুলদেরকেও তাদের কওমের নিকট দলীল প্রমাণাদি ও মু’জিযাসহ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পূর্বে যেভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, ওর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকলো। তারা পূর্ববর্তী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে গুনাহগার তো হয়েছিলই, তদুপরি এই রাসূলদের উপরও ঈমান আনলো না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর ও চক্ষুসমূহ হতে বুঝবার ও শুনবার যোগ্যতাই বের করে নিলাম।”

আল্লাহ্ পাকের উক্তিঃ “এভাবেই আল্লাহ কাফিরদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দেন।” অর্থাৎ যেমন পূর্ববর্তী উম্মতেরা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছিলাম, অনুরূপভাবে ঐ পথভ্রষ্টদের অনুসরণকারীদের অন্তরসমূহের উপরও আমি মোহর লাগিয়ে দিয়েছি। যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তির শিকারে পরিণত হবে, বিশ্বাস স্থাপন করবে না। ভাবার্থ এই যে, রাসূলদেরকে অস্বীকারকারী উম্মতদেরকে আল্লাহ্ তা’আলা ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং যারা তাদের উপর ঈমান এনেছে তাদেরকে তিনি মুক্তি দিয়েছেন। এটা নূহ (আঃ)-এর পরবর্তী লোকদের বর্ণনা। আসলে আদম (আঃ)-এর পরের যুগের লোকেরা তো ইসলামের উপরই কায়েম ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে প্রতিমা-পূজার প্রচলন হয়ে যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা তাদের নিকট নূহ (আঃ)-কে প্রেরণ করেন। এ কারণেই তো কিয়ামতের দিন মুমিনরা নূহ (আঃ)-কে বলবেঃ ‘আপনি হচ্ছেন দুনিয়ায় প্রেরিত প্রথম নবী।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর মাঝে দশ শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছিল। তারা সবাই ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নূহ (আঃ)-এর পরে আমি কতইনা যুগ খতম করেছি!” উপরোল্লিখিত আয়াত দ্বারা আরবের সেই মুশরিকদের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, যারা সর্বশেষ নবী (সঃ)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করছিল। পূর্ববর্তী নবীদেরকে অবিশ্বাসকারীদের শাস্তির কথা যখন আল্লাহ তাআলা এইভাবে উল্লেখ করলেন, তখন কুরায়েশরা যে নবী (সঃ)-কে অবিশ্বাস করছে, এ ব্যাপারে বাস্তবিকই চিন্তা করা উচিত যে, তারা তো আরো বেশী পাপে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ তিনি তো হচ্ছেন সর্বশেষ নবী (সঃ)! তার পরে আর কোন নবী আসবেন না যে, তারা হিদায়াত লাভের আর কোন সুযোগ পাবে।
৭৫-৭৮ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা বলেন, এই রাসূলদের পরে আমি ফিরআউন ও তার দলবলের কাছে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-কে পাঠালাম এবং তাদের সাথে আমার নিদর্শনাবলী, দলীল প্রমাণাদি ও মুজিযাসমূহও ছিল। কিন্তু ঐ পাপিষ্ঠ কওম সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য অস্বীকার করে বসে। যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য বিষয়গুলো পৌঁছে গেল, তখন তারা কোন চিন্তা না করেই বলতে লাগলো- এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। তারা যেন নিজেদের অবাধ্যতার উপর শপথই করে বসেছিল। অথচ তাদের নিজেদেরই বিশ্বাস ছিল যে, তারা যা কিছু বলছে প্রকৃতপক্ষে তা মিথ্যা ও অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। যেমন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা অস্বীকার তো করছে বটে, কিন্তু তাদের অন্তর স্বয়ং বিশ্বাস রাখছে যে, ওটা তাদের যুলুম ও অবাধ্যাচরণ। মোটকথা, মূসা (আঃ) তাদের দাবী খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন- সত্য যখন তোমাদের কাছে এসে যাচ্ছে, তখন তোমরা বলছো যে, এটা যাদু ছাড়া কিছুই নয়। অথচ যাদুকররা তো কখনো কল্যাণ ও মুক্তির মুখ দেখতে পারে না।

ঐ অবাধ্যরা মূসা (আঃ)-কে বললো- হে মূসা (আঃ)! আপনি তো আমাদের কাছে এজন্যেই এসেছেন যে, আমাদেরকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম থেকে ফিরিয়ে দিবেন, অতঃপর শ্রেষ্ঠত্ব, রাজত্ব এবং বিজয় গৌরব সবই হয়ে যাবে আপনার ও আপনার ভাই হারূন (আঃ)-এর জন্যে।

আল্লাহ পাক মূসা (আঃ) ও ফিরআউনের কাহিনী কয়েক জায়গায় বর্ণনা করেছেন। কেননা, এটা হচ্ছে বিস্ময়কর কাহিনী। ফিরআউন পূর্ব হতেই মূসা (আঃ) থেকে আতংকিত ছিল। কিন্তু কি আশ্চার্যজনক ব্যাপার যে, যে ফিরআউন মূসা (আঃ)-কে এতো ভয় করতো, আল্লাহ্ তা’আলা তার কাছেই তাঁকে লালিত পালিত করলেন। রাজকুমাররূপে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কাছে লালিত পালিত হতে থাকলেন। অতঃপর একটা বিপ্লব ঘটে গেল এবং এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে, তিনি ফিরআউনের কাছে আর টিকতে পারলেন না। তাকে তার নিকট থেকে পালিয়ে যেতে হলো। আল্লাহ পাক তাকে নবুওয়াত ও রিসালাত দান করে গৌরবান্বিত করলেন এবং তাকে এতো বড় সম্মান দিলেন যে, স্বয়ং তিনি তাঁর সাথে কথা বললেন। এরপর তিনি তাঁকে ঐ ফিরআউনের কাছেই নবীরূপে প্রেরণ করলেন এবং বলে দিলেন। তাকে গিয়ে বল যে, সে যেন আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং বে-দ্বীনীর পরিবর্তে দ্বীনের উপর চলে । অথচ ফিরআউন সেই সময় বিপুল ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী ছিল। যা হাক, আল্লাহ তাআলার নির্দেশক্রমে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কাছে পয়গাম নিয়ে। আসলেন। ঐ সময় তার ভাই হারূন (আঃ) ছাড়া তার আর কোন সাহায্যকারী ছিল না। ফিরআউন কিন্তু ক্ষমতার গর্বে গর্বিত হয়ে উঠলো এবং তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলো। সে এমন এক দাবী করে বসলো, যার সে মোটেই হকদার ছিল না। বানী ইসরাঈলের মুমিনদেরকে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করলো। এরূপ সংকীর্ণ পরিস্থিতিতেও মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) ফিরআউনের অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে নিলেন। একের পর এক মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে ফিরআউনের বিবাদ ও তর্ক বিতর্ক হতে থাকলো। মূসা (আঃ) এমন এমন নিদর্শন ও মু’জিযা পেশ করতে লাগলেন যে, যা দেখে হতবাক হতে হয় এবং স্বীকার করতে হয় যে, আল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কেউই এরূপ দলীল কখনো পেশ করতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফিরআউন ও তার দলবল এই শপথ করে বসলো যে, তারা কখনো মূসা (আঃ)-কে মানবে না। অবশেষে এমন শাস্তি নেমে আসলো যে, তা রদ করার ক্ষমতা কারো থাকলো না। একদিন ফিরআউন ও তার দলবলকে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হলো এবং এইভাবে ঐ অত্যাচারী কওমের মূলোচ্ছেদ হয়ে গেল।

৭৯-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:

মহান আল্লাহ যাদুকর ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী সূরায়ে আ’রাফে বর্ণনা করেছেন এবং সেখানে এর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। আর এই সূরায় এবং সূরায়ে তাহা ও সূরায়ে শুআরায়ও এটা বর্ণিত হয়েছে। ফিরআউন তার যাদুকরদের বাজে কথন এবং প্রতারণামূলক কলাকৌশলের মাধ্যমে মূসা (আঃ)-এর সুস্পষ্ট সত্যের মুকাবিলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সম্পূর্ণরূপে বিফল মনোরথ হয় এবং সাধারণ সমাবেশে আল্লাহ্ পাকের দলীল প্রমাণাদি ও মু’জিযাসমূহ জয়যুক্ত হয়। সমস্ত যাদুকর সিজদায় পড়ে যায় এবং বলে ওঠে “আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম। যিনি মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-এর প্রতিপালক।” ফিরআউনের তো বিশ্বাস ছিল যে, সে যাদুকরদের সাহায্যে আল্লাহর রাসূলের উপর বিজয় লাভ করবে। কিন্তু সে অকৃতকার্য হয় এবং তার জন্যে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায় । ফিরআউন নির্দেশ দিয়েছিল যে, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে যেন যাদুকরদেরকে একত্রিত করা হয়। ঐ যাদুকররা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “আপনি যে কাজ করতে চান করে ফেলেন। তাদের একথা বলার কারণ ছিল এই যে, ফিরআউন তাদের সাথে অঙ্গীকার করেছিলঃ “তোমরা যদি বিজয় লাভ করতে পার, তবে আমার নৈকট্য লাভ করবে এবং তোমাদেরকে বড় রকমের পুরস্কার দেয়া হবে।” যাদুকররা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “প্রথমে আপনি আপনার কর্মকৌশল দেখাবেন, না আমরাই প্রথমে দেখাবো?” উত্তরে মূসা (আঃ) বললেনঃ “তোমরাই প্রথমে তোমাদের কলাকৌশল প্রদর্শন কর।” এটা বলার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যাতে যাদুকররা কি পেশ করছে তা জনগণ দেখতে পারে। তারপর যেন সত্যের আগমন ঘটে এবং মিথ্যাকে মিথ্যারূপেই প্রমাণ করে। যাদুকররা তাদের যাদুর দড়িগুলো নিক্ষেপ করলো এবং জনগণের চোখে যাদু লাগিয়ে দিলো। তাদের দড়িগুলো সাপ হয়ে গেল, ফলে জনগণ ভয় পেয়ে গেল। তারা মনে করলো যে, যাদুকররা বড় রকমের যাদু পেশ করেছে। মূসা (আঃ)-ও ভয় পেয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক তখন মূসা (আঃ)-কে বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! ভয় করো না। তুমিই জয়যুক্ত হবে। তোমার লাঠিখানা তুমি মাটিতে নিক্ষেপ কর। ওটি অজগর হয়ে গিয়ে তাদের সাপগুলোকে গিলে ফেলবে। যাদুকরদের এই কর্মকৌশল তো যাদু ছাড়া কিছুই নয়। যাদুকররা কোনক্রমেই সফলতা লাভ করতে পারে না। এ অবস্থায় মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “এটা তো তোমাদের যাদুর খেলা। আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমাদের এ কাজকে মিথ্যা প্রমাণিত করবেন।”

আল্লাহ পাক বলেন- “আল্লাহ্ ফাসাদকারীদের কাজ সম্পন্ন হতে দেন না। তিনি সত্যকে সত্যরূপেই প্রমাণ করবেন, যদিও পাপাচারীদের কাছে তা অপছন্দনীয় হয়।”

ইবনে আবি সুলাইম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নিম্নের আয়াতগুলো আল্লাহ তা’আলার হুকুমে যাদুক্রিয়া থেকে আরোগ্য দানের কাজ করে থাকে। এই আয়াত পড়ে পানিতে ফুঙ্কার দিতে হবে। অতঃপর সেই পানি যাদুকৃত ব্যক্তির মাথায় ঢেলে দিতে হবে। আয়াতগুলো হচ্ছে সূরায়ে ইউনুসের নিম্নের আয়াতঃ (আরবী) পর্যন্ত। অন্য আয়াত হচ্ছেঃ (আরবী) (৭:১১৮) হতে শেষ চার আয়াত পর্যন্ত। আর (আরবী) (২০:৬৯) এই আয়াতটি।

তাপসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* সীমা অতিক্রমকারী লোক তাদেরকে বলে যারা একবার ভুল করার পর আবার নিজের কথার বক্রতা, একগুঁয়েমি ও হকগুয়েমী ও হঠকারিতার কারণে নিজের ভুলের ওপর অবিচল থাকে এবং যে কথা মেনে নিতে একবার অস্বীকার করেছে তাকে আর কোন প্রকার উপদেশ অনুরোধ-উপরোধ ও কোন উন্নত থেকে উন্নত পর্যায়ের যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে মেনে নিতে চায় না। এ ধরনের লোকদের ওপর শেষ পর্যন্ত আল্লাহর এমন লানত পড়ে যে, তাদের আর কোন দিন সঠিক পথে চলার সুযোগ হয় না।
* এ প্রসঙ্গে সূরা আরাফের ১৩ থেকে ২১ রুকুর মধ্যে মুসাও ফেরাউনের সংঘাতের ব্যাপারে আমি যে টীকাগুলো দিয়েছে সেগুলো পড়ে দেখা যেতে পারে। সেখানে যেসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করেছি এখানে আর সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করা হবে না।

* সে নিজের বিপুল বৈভব, রাজক্ষমতা ও শান-শওকতের নেশায় মত্ত হয়ে নিজেরাই নিজেকে ভৃত্যের আসন থেকে ওপরে তুলে নিয়েছে এবং আনুগত্যর শির নত করার পরিবর্তে গর্বোন্নত হয়েছে।
* হযরত মূসার বাণী শুনে তারা সেই একই কথা বলেছিল যা মক্কার কাফেররা বলেছিল হযরত মুহাম্মাদ (স) এর কথা শুনে। কাফেররা বলেছিল এ ব্যক্তি তো পাক্কা যাদুকর। (দেখুন এ সূরা ইউনুসের দ্বিতীয় আয়াত ) এখানে প্রাসঙ্গিক আলোচনার প্রতি দৃষ্টি রাখলে একথা স্পষ্টই ধরা পড়ে যে, আসলে হযরত নূহ (আ) এবং তার পরে সাইয়িদুনা মুহাম্মাদ ﷺ পর্যন্ত সকল নবী পর্যায়ক্রমে যে দায়িত্ব নিযুক্ত হয়েছেন হযরত মূসা ও হারুন(আ) সেই একই দায়িত্ব নিযুক্ত হয়েছিলেন এ সূরার শুরু থেকে একই বিষয়বস্তু চলে আসছে। এ বিষয়বস্তুটি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ‌ রাব্বুল আলামীনকে নিজের রব ও ইলাহ হিসেবে মেনে নাও। এই সঙ্গে একথা স্বীকার কর নাও যে, জীবনের পরে আর একটি জীবন আসছে, সেখানে তোমাদের আল্লাহ‌ সামনে হাযির হতে এবং নিজেদের কাজের হিসাব দিতে হবে। তারপর যারা নবীর এ দাওয়াত মনে নিতে অস্বীকার করছিল তাদেরকে বুঝানো হচ্ছে। শুধুমাত্র তোমাদের কল্যাণ নয় বরং সমগ্র বিশ্ব মানবতার কল্যাণ চিরকাল একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এসেছে। সে বিষয়টি হচ্ছে, তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসের আহবানে সাড়া দেয়া। প্রতি যুগে আল্লাহর নবীগণ এ আহবানই জানিয়েছেন। তারা এ আহবানে সাড়া দিয়ে নিজের ব্যবস্থাকে এরই ভিত্তিতে কায়েম করার তাগিদ করেছেন। যারা একাজ করেছে একমাত্র তারাই কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করেছে। আর যে জাতি একে অস্বীকার করেছে তারা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে। এটিই এ সূরার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। এ প্রেক্ষাপটে যখন ঐতিহাসিক নজীর হিসেবে অন্যান্য নবীদের প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে তখন অনিবার্যভাবে দাওয়াত এর অর্থ হয়েছে এই যে, এ সূরায় যে দাওয়াত দেয়া হয়েছে সেইই ছিল সকল নবীর দাওয়াত এবং এ দাওয়াত নিয়েই হযরত মুসা ও হারুণকেও ফেরাউন ও তার কওমের সরদারদের কাছে গিয়েছিলেন। কোন কোন লোক যেমন মনে করে থাকেন, হযরত মুসা ও হারুনের দায়িত্ব ছিল একটি বিশেষ জাতিকে অন্যান্য জাতির গোলামী থেকে মুক্ত করা। যদি এটিই সত্য হতো তাহলে এ প্রেক্ষাপটি এ ঘটনাটিকে ঐতিহাসিক নজীর হিসেবে পেশ করা একেবারেই বেমানান হতো। নিঃসন্দেহে বনী ইসরাঈলকে (একটি মুসলিম কওম) একটি কাফের কওমের আধিপত্য (যদি তারা নিজেদের কুফরীর ওপর অটল থাকে) মুক্ত করা এদের দুজনের মিশনের একটি অংশ ছিল। কিন্তু এটি ছিল তাদের নবুওয়াতের একটি আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য, মূল উদ্দেশ্য ছিল না। আসল উদ্দেশ্য তাই ছিল যা কুরআনের দৃষ্টিতে সকল নবীর নবুওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল এবং সূরা নাযিআতে যে সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করে বলে দেয়া হয়েছেঃ

اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى – فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ تَزَكَّى – وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى

ফেরাউনের কাছে যাও, কারণ সে গোলামীর সীমা অতিক্রম করে গেছে এবং তাকে বলো, তুমি কি নিজেকে শুধরে জন্য তৈরী আছো? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাবো, তুমি কি তাকে ভয় করবে?

কিন্তু যেহেতু ফেরাউন ও তার রাজ্যের প্রধানগণ এ দাওয়াত গ্রহণ করেনি এবং শেষ পর্যন্ত হযরত মূসাকে নিজের মুসলিম কওমকে তার অধীনতার নাগপাশ থেকে বের করে আনতে হয়েছিল। তাই তার মিশনের এ অংশটিই ইতিহাসে প্রাধান্য লাভ করেছে এবং কুরআনেও একে ঠিক ইতিহাসে যেভাবে আছে তেমনিভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তি কুরআনের বিস্তারিত বিবরণগুলোকে তার মৌলিক বক্তব্য থেকে আলাদা করে দেখার মতো ভুল করে না বরং সেগুলোকে সমগ্র বক্তব্যের অধীনেই দেখে থাকে, সে কখনো একটি জাতির দাসত্ব মুক্তিকে কোন নবীর নবুওয়াতের আসল উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর সত্য দ্বীনকে দাওয়াতকে নিছক তার আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য মনে করার মত বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হতে পারে না। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সুরা ত্বা-হা ৪৪ থেকে ৫২ আয়াত , যুখরুফ ৪৬ থেকে ৫৬ আয়াত এবং মুযাম্মিল ১৫ থেকে ১৬ আয়াত)।

*এর মানে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে মুজিযা ও যাদুর মধ্যে যে সাদৃশ্য রয়েছে তার ফলে তোমরা নির্দ্বিধায় তাকে যাদু গণ্য করেছো। কিন্তু মূর্খের দল, তোমরা একটুও ভেবে দেখ না, যাদুকররা কোন ধরনের চরিত্রের অধিকারী হয় এবং তারা কি উদ্দেশ্যে যাদু করে। একজন যাদুকর কি কখনো কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই এবং কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই বেধড়ক একজন স্বৈরাচারী শাসকের দরবারে আসে, তাকে তার ভ্রষ্টতার জন্য ধমক দেয় ও তিরস্কার করে এবং তার প্রতি আল্লাহর আনুগত্য করার ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করার আহবান জানায়? তোমাদের কাছে কোন যাদুকর এলে প্রথমে রাজ সম্মুখে নিজের তেলেসমাতি দেখাবার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য দরবারের পরিষদবর্গের খোশামোদ করতে থাকতো। তারপর দরবারে প্রবেশ করার সৌভাগ্য হলে সাধারণ তোষামোদকারীদের থেকেও বেশী নির্লজ্জতার সাথে অভিবাদন পেশ করতো, চীৎকার করে করে রাজার দীর্ঘায়ু কামনা করতো, তার সৌভাগ্যের জন্য দোয়া করতো এবং বড়ই কাতর কাকুতিমিনতি সহকারে নিবেদন করতো, হে রাজন! আপনার একজন উৎসর্গিত প্রাণ সেবাদাসের কৃতিত্ব কিছুটা দর্শন করুন। আর তার যাদু দেখে নেবার পর সে পুরস্কার লাভের আশায় নিজের হাত পাততো। এ সমগ্র বিষয়বস্তুটি শুধু একটি মাত্র বাক্যের মধ্যে গুটিয়ে নিয়ে বলা হয়েছে, যাদুকর কোন কল্যাণ প্রাপ্ত লোক হয় না।
*বনী ইসরাঈলকে উদ্ধার করা যদি হযরত মূসা (আ) ও হারুনের (আ) মূল দাবী হতো তাহলে ফেরাউন ও তার দরবারের লোকদের এ ধরনেরআশঙ্কা করার কোন প্রয়োজন ছিল না যে, এ দুই মহান ব্যক্তির দাওয়াত ছড়িয়ে পড়লে সারা মিসরের লোকদের ধর্ম বদলে যাবে এবং দেশে তাদের পরিবর্তে এদের দু’জনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। হযরত মূসা (আ) মিসরবাসীকে আল্লাহর বন্দেগীর প্রতি যে আহবান জানাচ্ছিলেন এটিই তো ছিল তাদেরআশঙ্কার কারণ। এর ফলে যে মুশরিকী ব্যবস্থার ওপর ফেরাউনের বাদশাহী, তার সরদারদের নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল তা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা আরাফের ৬৬ এবং সূরা মু’মিনের ৪৩ টীকা)।
* আমি যা দেখিয়েছি তা যাদু ছিল না বরং তোমরা এই যা দেখাচ্ছো এ হচ্ছে যাদু।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* [১] এমন প্রমাণ ও মু’জিযাসমূহ নিয়ে এসেছিলেন, যা প্রমাণ করত যে, সত্য সত্যই তাঁরা আল্লাহর রসূল; যাঁদেরকে আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াত ও পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেছেন।

[২] কিন্তু এই জাতি রসূলদের দাওয়াতের উপর ঈমান আনেনি, শুধু এই কারণে যে, যখন পূর্বে এই সকল রসূল তাদের নিকট এসেছিলেন, তখন তারা চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সাথে সাথে তাদেরকে অস্বীকার করে দিয়েছিল। তাদের প্রথমবারের এই অস্বীকার তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র অন্তরায় হয়ে গিয়েছিল। আর তারা এটাই ভেবেছিল যে, আমরা তো প্রথমে অস্বীকার করে ফেলেছি, এখন আর তা মেনে কি হবে? ফল এই দাঁড়ালো যে, তারা ঈমান থেকে বঞ্চিত থাকল।

[৩] যেভাবে কুফরী ও মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের হৃদয় মোহরাংকিত হয়েছিল, ঐভাবেই ভবিষ্যতেও যে জাতি রসূলগণকে মিথ্যাজ্ঞান করবে এবং আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, তাদের অন্তরও মোহরাংকিত হবে এবং পূর্ব জাতিসমূহের মত তারাও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

 

* [১] এখানে রসূলগণের কথা সাধারণভাবে আলোচনা করার পর মূসা ও হারূনের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। অথচ তাঁরাও রসূলগণের বর্ণনায় শামিল। কিন্তু যেহেতু তাঁরা বিশিষ্ট রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত, তাই বিশেষভাবে আলাদা করে তাঁদের কথা বর্ণনা করেছেন।

[২] মূসা (আঃ)-এর এ সকল নিদর্শনাবলী (মু’জিযা) প্রসিদ্ধ আছে, বিশেষ করে ন’টি স্পষ্ট নিদর্শন, যা সূরা বানী ইস্রাঈলের ১৭:১০১ নং আয়াতে বর্ণনা করেছেন।

[৩] অর্থাৎ, যেহেতু তারা বড় বড় অপরাধ ও পাপকর্মে অভ্যাসী ছিল, যার কারণে তারা আল্লাহর প্রেরিত রাসূলকেও অহংকার প্রদর্শন করল। কারণ এক পাপ অন্য পাপকে আকর্ষণ করে এবং পাপের উপর অটল থাকলে, বড় বড় পাপকর্ম সাধনে সাহস যোগায়।

* যখন অস্বীকার করার কোন বিবেকগ্রাহ্য প্রমাণ না থাকে, তখন তা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বলে দেয় যে, এটা তো যাদু!
* যখন মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা একটু চিন্তা করে দেখ, সত্যের দাওয়াত ও সঠিক কথাকে তোমরা যাদু বলছ! এটা কি যাদু হতে পারে? যাদুকর তো কখনো কৃতকার্যই হতে পারে না। অর্থাৎ ইচ্ছা আনুযায়ী চাহিদা পূরণ এবং অবাঞ্ছিত পরিণতি থেকে বাঁচতে সে অকৃতকার্যই থেকে যায়। আর আমি তো আল্লাহর রসূল, আমি আল্লাহর সাহায্য পাই এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে মু’জিযা ও স্পষ্ট নিদর্শন প্রদান করা হয়েছে। যাদু ও যাদুবিদ্যার আমার প্রয়োজনই বা কি আছে? তাছাড়া আল্লাহ তাআলার প্রদর্শিত মু’জিযার তুলনায় তার মূল্যই বা কতটুকু?

* এটা অস্বীকারকারীদের অন্য একটি কাটহুজ্জতি; যা তারা প্রমাণাদি পেশ করতে অক্ষম হয়ে প্রয়োগ করে থাকে। প্রথম এই যে, তুমি আমাদেরকে আমাদের বাপ-দাদার পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছ। দ্বিতীয় এই যে, ধন-সম্পদ ও কর্তৃত্ব আমাদের হাতে, তা আমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তুমি নিজের আয়ত্তে করতে চাচ্ছ। ফলে আমরা কখনই তোমার প্রতি ঈমান আনব না। অর্থাৎ, বাপ-দাদার মতবাদে অটল অন্ধ বিশ্বাস এবং পার্থিব ধন-সম্পদ ও মর্যাদার বাসনা তাদেরকে ঈমান গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছিল। এর পরবর্তীতে ফিরআউনের বিচক্ষণ যাদুকরদের ডাকা এবং মূসা ও যাদুকরদের মুকাবিলা করার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা আ’রাফে উল্লেখ হয়েছে এবং সূরা ত্বহাতেও তার বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ।

* [১] সুতরাং এমনই হল, মিথ্যা কি আর সত্যের মুকাবিলায় জয়ী হতে পারে? যাদুকররা তাদের যাদু-বিদ্যায় যতই দক্ষতা অর্জন করে থাকুক, তারা যা কিছু পেশ করেছিল, তা যাদু ও ইন্দ্রজাল (চোখের ভেলকিই) ছিল। কিন্তু মূসা (আঃ) যখন আল্লাহর আদেশে তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন সে সকল ইন্দ্রজালকে এক পলকে শেষ করে দিল।

[২] আর এই সব যাদুকররাও অশান্তি সৃষ্টিকারী ছিল। তারা শুধু পার্থিব সুখ অর্জনের জন্য যাদু শিক্ষা করেছিল আর যাদুর ভেলকি দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানাতো। আল্লাহ তাআলা তাদের এই দুষ্কর্মকে কিভাবে সার্থকতা দান করবেন?

* এই ‘কালেমা’ বা বাণী হল ঐ সকল প্রমাণ ও স্পষ্ট দলীল, যা আল্লাহ তাআলা আপন কিতাবে অবতীর্ণ করে এসেছেন এবং যা তিনি পয়গম্বরগণকে প্রদান করতেন। অথবা ঐ সকল মু’জিযা (অলৌকিক কর্মকান্ড) যা আল্লাহ তাআলার আদেশে পয়গম্বরগণের হাতে প্রকাশ হত, অথবা আল্লাহর সেই আদেশ যা তিনি ‘কুন’ শব্দ দ্বারা দিয়ে থাকেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
*এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কয়েকটি মত রয়েছে,

আল্লাহ্ তা’আলা নূহের পরে রাসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠান; কিন্তু নবীগণ তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসার পরও সে সমস্ত সম্প্রদায় নবীরা যা নিয়ে এসেছিল তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল যেমনিভাবে তারা নবী আসার পূর্বে অস্বীকার করত। [কুরতুবী]

আল্লাহ তা’আলা নূহের পরে রাসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠান; কিন্তু তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসার পরেও সে সমস্ত সম্প্রদায় নবীরা যা নিয়ে এসেছিল তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল যেমনিভাবে নূহের জাতি নূহ আলাইহিস্‌সালামের দাওয়াতকে এর আগে অস্বীকার করেছিল। [তাবারী; ফাতহুল কাদীর]

আল্লাহ্ তা’আলা নূহের পরে রাসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠান; কিন্তু তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসার পরেও সে সমস্ত সম্প্রদায় নবীরা যা নিয়ে এসেছিল তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল; তারা আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী আসার পূর্বেই তড়িঘড়ি করে রাসূলদের দাওয়াত মানতে অস্বীকার করেছিল, ফলে যখন তাদের কাছে রাসূলগণ নিদর্শনাবলী নিয়ে আসলেন তখন পূর্বে অস্বীকার করণের শাস্তি স্বরূপ তাদের ঈমান আনার সৌভাগ্য হলো না। এটা ছিল তাদের জন্য এক প্রকার শাস্তি। কারণ তারা পূর্বে সামর্থ থাকা সত্বেও ঈমান আনেনি। সুতরাং নিদর্শনাবলী দেখার পরেও পূর্বোক্ত হটকারিতার কারণে তাদেরকে ঈমানের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে হলো। [তাবারী; ফাতহুল কাদীর] এ অর্থের সমর্থনে অন্যত্র এসেছে, “তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি তেমনি আমিও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব”। [সূরা আল-আন’আম: ১১০] [সা’দী]

[২] সীমা অতিক্রমকারী লোক তাদেরকে বলে যারা ভুল করার পর আবার নিজের কথার বক্রতা, একগুঁয়েমী ও হঠকারীতার কারণে নিজের ভুলের ওপর অবিচল থাকে এবং যে কথা মেনে নিতে একবার অস্বীকার করেছে তাকে আর কোন প্রকার উপদেশ, অনুরোধ-উপরোধ ও কোন উন্নত থেকে উন্নত পর্যায়ের যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে মেনে নিতে চায় না। এ ধরনের লোক যারা কুফরী ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে সীমা অতিক্রম করে যায় তাদের ওপর শেষ পর্যন্ত আল্লাহর এমন লানত পড়ে যে, তাদের আর ঈমান নসীব হয় না। [কুরতুবী] তাদের আর কোনদিন সঠিক পথে চলার সুযোগ হয় না। তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে, ফলে সেখানে কোন কল্যাণ প্রবেশ করে না। এতে স্পষ্ট হলো যে, আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেন নি। বরং তারাই তাদের কাছে হক আসার পরে হককে প্রতিহত করে এবং প্রথমবার হকের সাথে মিথ্যারোপ করে তাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছিল। [সা’দী]

* [১] তারা নিজেদের ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে হক গ্রহণ করতে অহংকার করেছিল। [কুরতুবী]।

[২] মুশরিক সম্প্রদায়। [কুরতুবী] |

* মূসার বাণী শুনে তারা সেই একই কথা বলেছিল যা মক্কার কাফেররা বলেছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনে। কাফেররা বলেছিল, “এ ব্যক্তি তো পাক্কা জাদুকর ” [সূরা ইউনুস; ২, অনুরূপ দেখুন, সূরা ছোয়াদ ৪] মূসা ও হারূন আলাইহিমাসসালামের দায়িত্ব তা-ই ছিল যা কুরআনের দৃষ্টিতে সকল নবীর নবুওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল এবং সূরা নাযিআতে যে সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে বলে দেয়া হয়েছেঃ “ফিরআউনের কাছে যান, কারণ সে সীমা অতিক্রম করে গেছে এবং তাকে বলেন, তুমি কি নিজেকে শুধরে নেবার জন্য তৈরী আছো? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাবো তুমি কি তাঁকে ভয় করবে?” [১৭-১৯] কিন্তু ফির’আউন ও তার রাজ্যের প্রধানগণ এ দাওয়াত গ্রহণ করেনি।
* তোমরা এসব গুণাগুণ দেখে অবশ্যই বুঝতে পার যে আসলে এটা কি জাদু নাকি জাদু নয়। তাছাড়া জাদুকররা দুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও সফলকাম হয় না। সুতরাং তোমরা দেখো কার পরিণাম কেমন হয়, আর কে-ই বা সফল হয়। পরবর্তীতে তারা ঠিকই সেটা জানতে পেরেছিল এবং প্রত্যেকের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, মূসা আলাইহিস সালামই সফলকাম। তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সবখানেই সফল [সা’দী] এ সমগ্র বিষয় শুধু একটি বাক্যের মধ্যে গুটিয়ে নিয়ে বলা হয়েছে, “জাদুকর কোন কল্যাণ প্রাপ্ত লোক হয় না।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 74-82
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪…..
We sent Messengers to their people.

Meaning; Then after Nuh We sent Messengers to their people.

Allah said:

ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِ رُسُلً إِلَى قَوْمِهِمْ فَجَأوُوهُم بِالْبَيِّنَاتِ

Then after him We sent Messengers to their people. They brought them clear proofs,

Allah tells that they brought them clear proofs and evidences of the truth that they came with.

فَمَا كَانُواْ لِيُوْمِنُواْ بِمَا كَذَّبُواْ بِهِ مِن قَبْلُ

But they would not believe what they had already rejected beforehand,

meaning the nations did not believe what their Messengers brought to them because they already rejected it from the beginning.

Allah said:

وَنُقَلِّبُ أَفْيِدَتَهُمْ وَأَبْصَـرَهُمْ

And We shall turn their hearts and their eyes away (from guidance). (6:110)

He then said here,

كَذَلِكَ نَطْبَعُ عَلَى قُلوبِ الْمُعْتَدِينَ

Thus We seal the hearts of the transgressors.

This means that as Allah has set seals on the hearts of those people, such that they would not believe since they previously rejected faith, He would also set seals on the hearts of the people that are like them, who will come after them.

They would not believe until they see the severe torment. This means that Allah destroyed the nations after Nuh. He destroyed the nations that rejected the Messengers and saved those who believed from among them.

From the time of Adam to Nuh, people followed Islam. Then they invented the worship of idols. So Allah sent Nuh to them. That is why the believers will say to him on the Day of Resurrection, “You are the first Messenger Allah sent to the people of the earth.”

Ibn Abbas said:

“There were ten generations between Adam and Nuh, and all of them were following Islam.”

Allah also said:

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِن بَعْدِ نُوحٍ

And how many generations have We destroyed after Nuh! (17:17)

This was a serious warning to the Arab pagans, who rejected the leader and last of the Messengers and Prophets. If the people before them who rejected their Messengers had received this much punishment, then what did they think will happen to them since they perpetrated even greater sins than others before them.

The Story of Musa and Fir`awn

Allah said:

ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم

Then after them We sent

meaning after these Messengers,

مُّوسَى وَهَارُونَ إِلَى فِرْعَوْنَ وَمَلَيِهِ

Musa and Harun to Fir`awn and his chiefs,

meaning his people

بِأيَاتِنَا

with Our Ayat.

meaning; `Our proofs and evidences.’

فَاسْتَكْبَرُواْ وَكَانُواْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ

But they behaved arrogantly, and were a people who were criminals.

meaning they were too arrogant to follow the truth and submit to it, and they were criminals.
فَلَمَّا جَاءهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُواْ إِنَّ هَـذَا لَسِحْرٌ مُّبِينٌ

So, when came to them the truth from us, they said:”This is indeed clear magic.”

They were as if they gave an oath that what they had said was the truth. But they knew that what they were saying was a mere lie.

As Allah said:

وَجَحَدُواْ بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَأ أَنفُسُهُمْ ظُلْماً وَعُلُوّاً

And they belied them wrongfully and arrogantly, though they themselves were convinced thereof. (27:14)

Musa criticized them saying:

قَالَ مُوسَى أَتقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءكُمْ أَسِحْرٌ هَـذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ

قَالُواْ أَجِيْتَنَا لِتَلْفِتَنَا

Musa said:”Say you (this) about the truth when it has come to you Is this magic But the magicians will never be successful.”

They said:”Have you come to us to turn us away…

عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ ابَاءنَا

from that we found our fathers following (their religion).

وَتَكُونَ لَكُمَا

and that you two may have…

الْكِبْرِيَاء

greatness,

means grandeur and leadership

فِي الَارْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُوْمِنِينَ

in the land, We are not going to believe you two!
Between Musa and the Magicians

Allah mentioned the story of the magicians and Musa in Surah Al-A`raf (there is a commentary on it in that Surah), this Surah, Surah Ta Ha, and in Surah Ash-Shu`ara’.

Fir`awn, may Allah’s curse be upon him, wanted to deceive the people and impress them with the tricks of the magicians in direct opposition to the plain truth that Musa brought. The result was the exact opposite and he therefore didn’t attain his goal. The signs of the Lord prevailed in that public festival.

وَأُلْقِىَ السَّحَرَةُ سَـجِدِينَ

قَالُواْ ءَامَنَّا بِرَبِّ الْعَـلَمِينَ

رَبِّ مُوسَى وَهَـرُونَ

And the sorcerers fell down prostrate. They said:”We believe in the Lord of all that exists — the Lord of Musa and Harun.” (7:120-122)

Fir`awn thought that he would achieve victory through the magicians over the Messenger sent by Allah, the All-Knower of all hidden things. But he failed, lost Paradise and was deserving of the Hellfire.

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ايْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ فَلَمَّا جَاء السَّحَرَةُ قَالَ لَهُم مُّوسَى أَلْقُواْ مَا أَنتُم مُّلْقُونَ

And Fir`awn said:”Bring me every well-versed sorcerer.” And when the sorcerers came, Musa said to them:”Cast down what you want to cast!”

They stood in line after they received the promise of Fir`awn to become closer to him and obtain a generous reward. Musa wanted them to begin. He wanted the people to see what the magicians had made, then he would come with the truth after that to triumph over their falsehood.

قَالُواْ يمُوسَى إِمَّأ أَن تُلْقِىَ وَإِمَّأ أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى

قَالَ بَلْ أَلْقُواْ

They said:”O Musa! Either you throw first or we be the first to throw.”

(Musa) said:”Nay, throw you (first)!” (20:65-66)

When the magicians cast their spells they bewitched the eyes of the people through their display of mighty sorcery.

At that time,

فَأَوْجَسَ فِى نَفْسِهِ خِيفَةً مُّوسَى

قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنتَ الاٌّعْلَى

وَأَلْقِ مَا فِى يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُواْ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّـحِرُ حَيْثُ أَتَى

Musa conceived fear in himself. We (Allah) said:”Fear not! Surely, you will have the upper hand. And throw that which is in your right hand! It will swallow up that which they have made. That which they have made is only a magician’s trick, and the magician will never be successful, to whatever amount (of skill) he may attain.” (20:67-69)

فَلَمَّا أَلْقَواْ قَالَ مُوسَى

Then when they had cast down, Musa said:

مَا جِيْتُم بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ

وَيُحِقُّ اللّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

What you have brought is sorcery, Allah will surely make it of no effect. Verily, Allah does not set right the work of the evildoers. And Allah will establish and make apparent the truth by His Words, however much the criminals may hate (it).

Leave a Reply