(Book# 680) [ امَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ যদি তোমরা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনে থাক, তবে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর, If you have believed in Allah, then put your trust in Him. www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 680)
[ امَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
যদি তোমরা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনে থাক, তবে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর,
If you have believed in Allah, then put your trust in Him.
www.motaher21.net
وَ قَالَ مُوۡسٰی یٰقَوۡمِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰہِ فَعَلَیۡہِ تَوَکَّلُوۡۤا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّسۡلِمِیۡنَ ﴿۸۴﴾
মূসা বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখ, তাহলে তাঁরই উপর ভরসা কর; যদি তোমরা মুসলিম হও।
And Moses said, “O my people, if you have believed in Allah, then rely upon Him, if you should be Muslims.”

فَقَالُوۡا عَلَی اللّٰہِ تَوَکَّلۡنَا ۚ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَۃً لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۙ۸۵﴾
তারা বলল, ‘আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালেম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করো না।
So they said, “Upon Allah do we rely. Our Lord, make us not [objects of] trial for the wrongdoing people.

وَ نَجِّنَا بِرَحۡمَتِکَ مِنَ الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۸۶﴾
আর তুমি তোমার নিজ করুণায় অবিশ্বাসী সম্প্রদায় হতে আমাদেরকে রক্ষা কর।’
And save us by Your mercy from the disbelieving people.”
وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسٰی وَ اَخِیۡہِ اَنۡ تَبَوَّاٰ لِقَوۡمِکُمَا بِمِصۡرَ بُیُوۡتًا وَّ اجۡعَلُوۡا بُیُوۡتَکُمۡ قِبۡلَۃً وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۸۷﴾
আমি মূসা ও তার ভায়ের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) করলাম, ‘তোমরা উভয়ে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরে গৃহ নির্মাণ কর। আর তোমরা নিজেদের সেই গৃহগুলোকে নামায পড়ার স্থানরূপে গণ্য কর এবং নামায প্রতিষ্ঠা কর। আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।’
And We inspired to Moses and his brother, “Settle your people in Egypt in houses and make your houses [facing the] qiblah and establish prayer and give good tidings to the believers.”
وَ قَالَ مُوۡسٰی رَبَّنَاۤ اِنَّکَ اٰتَیۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَاَہٗ زِیۡنَۃً وَّ اَمۡوَالًا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۙ رَبَّنَا لِیُضِلُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِکَ ۚ رَبَّنَا اطۡمِسۡ عَلٰۤی اَمۡوَالِہِمۡ وَ اشۡدُدۡ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ فَلَا یُؤۡمِنُوۡا حَتّٰی یَرَوُا الۡعَذَابَ الۡاَلِیۡمَ ﴿۸۸﴾
আর মূসা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ দান করেছ। হে আমাদের প্রতিপালক! যার কারণে তারা তোমার পথ হতে (মানুষকে) বিভ্রান্ত করে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দাও এবং তাদের অন্তরকে কঠিন করে দাও,যাতে তারা যন্ত্রণাময় শাস্তি না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস স্থাপন না করতে পারে।’
And Moses said, “Our Lord, indeed You have given Pharaoh and his establishment splendor and wealth in the worldly life, our Lord, that they may lead [men] astray from Your way. Our Lord, obliterate their wealth and harden their hearts so that they will not believe until they see the painful punishment.”

قَالَ قَدۡ اُجِیۡبَتۡ دَّعۡوَتُکُمَا فَاسۡتَقِیۡمَا وَ لَا تَتَّبِعٰٓنِّ سَبِیۡلَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۹﴾
তিনি বললেন, ‘আপনাদের দুজনের দো’আ কবূল হল, কাজেই আপনারা দৃঢ় থাকুন এবং আপনারা কখনো যারা জানে না তাদের পথ অনুসরণ করবেন না।’
[ Allah ] said, “Your supplication has been answered.” So remain on a right course and follow not the way of those who do not know.”
وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَہُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُہٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَکَہُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِہٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۹۰﴾
আর আমরা বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করালাম । আর ফির’আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য সহকারে সীমালংঘন করে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল তখন বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম যে, নিশ্চয় তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
And We took the Children of Israel across the sea, and Pharaoh and his soldiers pursued them in tyranny and enmity until, when drowning overtook him, he said, “I believe that there is no deity except that in whom the Children of Israel believe, and I am of the Muslims.”

آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ کُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿۹۱﴾
এখন (ঈমান আনছ)? অথচ ইতিপূর্বে তুমি অবাধ্য ছিলে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
Now? And you had disobeyed [Him] before and were of the corrupters?

فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡکَ بِبَدَنِکَ لِتَکُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَکَ اٰیَۃً ؕ وَ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ ﴿٪۹۲﴾
অতএব আজ আমি তোমার দেহকে রক্ষা করব, যেন তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক; আর নিঃসন্দেহে অনেক লোকই আমার নিদর্শনাবলী হতে উদাসীন।
So today We will save you in body that you may be to those who succeed you a sign. And indeed, many among the people, of Our signs, are heedless.
وَ لَقَدۡ بَوَّاۡنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ مُبَوَّاَ صِدۡقٍ وَّ رَزَقۡنٰہُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ ۚ فَمَا اخۡتَلَفُوۡا حَتّٰی جَآءَہُمُ الۡعِلۡمُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ یَقۡضِیۡ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۹۳﴾
আমি বানী ইস্রাঈলকে বসবাস করার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করলাম, আর আমি তাদেরকে আহার করবার জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করলাম। অতঃপর তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতভেদ করল। যাতে তারা মতভেদ করত নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক কিয়ামত দিবসে তাদের মধ্যে তার ফায়সালা করবেন।
And We had certainty settled the Children of Israel in an agreeable settlement and provided them with good things. And they did not differ until [after] knowledge had come to them. Indeed, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection concerning that over which they used to differ.

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৮৪-৯৩ নং আয়াত:-
[ امَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
যদি তোমরা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনে থাক, তবে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর,
If you have believed in Allah, then put your trust in Him.

৮৪-৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

পরবর্তীতে মূসা (عليه السلام) তাদেরকে ভয় মুক্ত হবার জন্য আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে বললেন। যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা কর তবে আল্লাহ তা‘আলার শত্র“ ও তোমাদের শত্র“ ফির‘আউন তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এবং আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য প্রার্থনা কর। তখন তারা একথা শুনে আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করল এবং তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করল এবং ফির‘আউনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তারা আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আও করেছিল।

আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবূল করলেন।

৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি ওয়াহী করলেন যে, তারা যেহেতু ঈমান এনেছে অতএব তারা ইবাদত করার জন্য যেন যার যার ঘরে একটি করে ইবাদতখানা তৈরী করে নেয়। যাতে করে ইবাদত করার জন্য তোমাদের বাইরে যেতে না হয়। কারণ বাইরে ফির‘আউন ও তার দলবলের অত্যাচারের আশঙ্কা রয়েছে। তখন তারা ইবাদতখানা তৈরী করে নিল।

৮৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে যে, মূসা (عليه السلام) বললেন, যখন তিনি দেখলেন যে, তাঁর ওয়াজ, নসীহত কোন উপকারে আসছে না তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে বদদু‘আ করলেন যে, তিনি যেন ফেরাউনের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দেন এবং ফির‘আউন যেন কঠিন শাস্তি না দেখা পর্যন্ত ঈমান না আনে। অর্থাৎ সে যদিও ঈমান আনে তবে যেন শাস্তি দেখার পর আনে যে ঈমান তার কোন কাজে আসবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবূল করলেন এবং তাদেরকে তাদের বদদু‘আর ওপর অটল থাকার নির্দেশ দিলেন। আর যারা সত্যের অনুসরণ করে না তাদের মত যেন না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক করলেন এবং তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে বললেন এবং তারা যেন তার ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা হিকমত ও কৌশল অনুযায়ী অবিলম্বে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন।

৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন যে, আমি বাণী ইসরাইলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অর্থাৎ সমুদ্র চিরে তাতে শুষ্ক রাস্তা তৈরী করে দিলাম। যেমন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَأَوْحَيْنَآ إِلٰي مُوْسٰٓي أَنِ اضْرِبْ بِّعَصَاكَ الْبَحْرَ ط فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيْمِ)

“অতঃপর মূসার প্রতি ওয়াহী করলাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ বিশাল পবর্তসদৃশ হয়ে গেল।” (সূরা শুআরা ২৬:৬৩)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিলেন যে, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর। যার ফলে ডান দিকের পানি ডান দিকে এবং বাম দিকের পানি বাম দিকে সরে গিয়ে স্থির হয়ে গেল আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরী হয়ে গেল। যা দিয়ে মূসা (عليه السلام) ও তার সৈন্যদল সমুদ্র পার হয়ে চলে গেল। আর ফির‘আউন সম্প্রদায় যখন সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছল এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা দু‘দিকের পানিকে একত্র করে দিলেন ফলে ফির‘আউন ও তার দলবল পানিতে ডুবে মরল।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَاَنْجَیْنَا مُوْسٰی وَمَنْ مَّعَھ۫ٓ اَجْمَعِیْنَﮐﺆ ثُمَّ اَغْرَقْنَا الْاٰخَرِیْنَﮑﺚ)

“এবং আমি মূসা ও তার সঙ্গী সকলকে রক্ষা করলাম। অতঃপর নিমজ্জিত করলাম অপর দলটিকে।” (সূরা শুআরা ২৬:৬৫-৬৬)

আর ঐ ডুবে মরার সময় ফির‘আউন আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান এনেছিল কিন্তু তার ঈমান কোন কাজে আসেনি। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা উত্তর দিচ্ছেন যে, এখন ঈমান এনেছ অথচ এর পূর্বে নাফরমানী করেছ। অতএব এখন ঈমান আনাতে আর কোন লাভ হবে না, কারণ ঈমান আনার সময় চলে গেছে। সে সময় তুমি অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্য ও ফাসাদ সৃষ্টিতে রত ছিলে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার শরীরকে নষ্ট করেননি বরং সযতেত্ন রেখে দিলেন যাতে করে পৃথিবীর সকল অবাধ্য ব্যক্তিরা তার এ শরীর দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং তারা যেন অবাধ্য না হয়। যদি অবাধ্য হয় তাহলে ফেরাউনের মতই অবস্থা হবে। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা বানী-ইসরাইলকে বসবাস করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা দিলেন এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করলেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُسْتَضْعَفُوْنَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِيْ بٰرَكْنَا فِيْهَا ط)

“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত (সিরিয়া) রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করেছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩৭) কিন্তু তারা তৎপরবর্তীতে শত্র“তা ও অহঙ্কারবশত বিবাদ করেছিল। যার ফলে তারা প্রাপ্ত নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ফির‘আউনের মত মানুষের ওপর অত্যাচার করা যাবে না।
২. মু’মিন ও মুসলিমদের উচিত আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করা ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা।
৩. সালাত পরিত্যাগ করা যাবে না।
৪. ভয়ের সময় বাড়িতে মাসজিদ হিসেবে সালাত পড়া জায়েয।
৫. প্রাণ কণ্ঠাগত হবার পূর্বেই ঈমান আনতে হবে অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮৪-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে বললেনযদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেই থাকো, তবে একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা কর। আল্লাহ তা’আলা ভরসাকারীদের যিম্মাদার হয়ে যান।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা’আলা ইবাদৃত ও তাওয়াক্কুলকে এক জায়গায় মিলিয়ে বলেছেন। যেমন বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তার উপর ভরসা কর।” (১১:১২৩) অন্যত্র বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তুমি বল-তিনি রহমান, আমরা তাঁর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর উপর ভরসা করেছি।” (৬৭:২৯) আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন প্রতিটি সালাতে কয়েকবার বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।” বানী ইসরাঈল মূসা (আঃ)-এর কথা মেনে নেয় এবং বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই যালিমদের লক্ষ্যস্থল বানাবেন না।” অর্থাৎ আমাদের উপর তাদেরকে সফলতা দান করবেন না। তা না হলে তারা ধারণা করবে যে, তারাই সঠিক পথে রয়েছে এবং বানী ইসরাঈল বাতিল পথে রয়েছে। ফলে তারা আমাদের উপর আরো বেশী যুলুম করবে। হে আমাদের প্রতিপালক! ফিরআউনের লোকদের হাতে আমাদের শাস্তি দিবেন না এবং নিজের শাস্তিতেও আমাদেরকে জড়িত করবেন না। নতুবা ফিরআউনের কওম বলবে যে, যদি লোকগুলো সত্যের উপরই থাকতো তবে কখনো আযাবে জড়িত হতো না এবং আমরা (ফিরাউনের কওম) তাদের উপর জয়যুক্ত হতাম না। হে আল্লাহ! আপনার রহমত ও ইহসানের মাধ্যমে আমাদেরকে এই কাফির কওম হতে মুক্তিদান করুন। এরা হলো কাফির, আর আমরা হলাম মুমিন। আমরা আপনারই উপর ভরসা রাখি।

* আল্লাহ তা’আলা বানী ইসরাঈলকে ফিরআউন হতে মুক্তি দেয়ার কারণ বর্ণনায় বলেন, মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-কে আমি হুকুম করলাম- তোমরা তোমাদের কওমকে মিসরে নিয়ে যাও এবং সেখানেই বসতি স্থাপন কর। (আরবী) এর ব্যাপারে মুফাসসিরদের মতানৈক্য রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে-তোমরা নিজেদের ঘরগুলোকেই মসজিদ বানিয়ে নাও। ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, বানী ইসরাঈল ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল। তাই তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন বাড়ীতেই সালাত আদায় করে। এই নির্দেশের ব্যাপারটি ঠিক এইরূপই যে, ফিরআউন এবং তার কওমের পক্ষ থেকে কষ্ট ও বিপদ যখন খুব বেশী আসতে লাগলো, তখন খুব বেশী বেশী করে সালাত পড়ার নির্দেশ দেয়া হলো। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা কর।” হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কোন ব্যাপারে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তেন, তখন তিনি সালাত শুরু করে দিতেন। এজন্যেই এই আয়াতে বলা হয়েছে- গৃহকেই মসজিদ মনে করে তোমরা সালাত আদায় করতে থাকো। আর মুমিনদেরকে সওয়াব ও সাহায্যদানের সুসংবাদ দিয়ে দাও।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ “আমরা ফিরআউনের লোকদের সামনে প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় করতে পারবো না।” তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বাড়ীতেই সালাতের অনুমতি দেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন, বানী ইসরাঈল এই ভয় করতো যে, যদি তারা মসজিদে সালাত আদায় করে তবে ফিরআউন তাদেরকে হত্যা করবে। এজন্যেই তাদেরকে গোপনে বাড়ীতে সালাত আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে- যেন একটি অপরটির সামনে থাকে।

* ৮৮-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, ফিরআউন ও তার দলবল যখন সত্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো এবং নিজেদের ভ্রান্তি ও কুফরীর উপরই কায়েম থাকলো এবং যুলুম ও ঔদ্ধত্যপনা অবলম্বন করলো, তখন মূসা (আঃ) আল্লাহকে বললেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি ফিরআউন ও তার লোকদেরকে দুনিয়ার শান-শওকত এবং প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছেন। এর ফলে তো তারা আরো পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেবে।” (আরবী) অর্থাৎ (আরবী) -কে যবর দিয়ে পড়লে অর্থ হবে- হে আল্লাহ! আপনি ফিরআউনকে এই নিয়ামতগুলো দিয়ে রেখেছেন অথচ আপনি জানেন যে, সে ঈমান আনবে না। সুতরাং সে নিজেই পথভ্রষ্ট হবে। আর (আরবী) অর্থাৎ (আরবী)-কে পেশ দিয়ে পড়লে অর্থ হবে- হে আল্লাহ! আপনার ফিরআউনকে দেয়া নিয়ামতগুলো দেখে লোকেরা ধারণা করবে যে, আপনি থাকে ভালবাসেন। আপনি যখন তাকে সুখে শান্তিতে রেখেছেন, তখন ফল যেন এটাই দাড়াবে যে, লোকেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। সুতরাং হে আল্লাহ! তাদের ধন-সম্পদকে ধ্বংস করে দিন।

যহ্হাক (রঃ), আবুল আলিয়া (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এরপরে আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের মালধনকে পাথরে পরিণত করেছিলেন। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “আমরা জানতে পেরেছি যে, তার ফসলও পাথরের আকার ধারণ করেছিল এবং চিনি ইত্যাদিও কুচি পাথরে পরিণত হয়েছিল।

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব (রঃ) উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ)-এর সামনে সূরায়ে ইউনুস পাঠ করেন। যখন তিনি এই আয়াতে পৌঁছেন (আরবী) তখন উমার (রঃ) বলেনঃ “হে আবু হামযা! (আরবী) কি জিনিস?” আবু হামযা উত্তরে বললেনঃ “তাদের মালধন ও আসবাবপত্র পাথরে পরিণত হয়েছিল।” তখন উমার ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) স্বীয় গোলামকে বললেনঃ “থলেটি নিয়ে এসো।” সে থলেটি নিয়ে আসলো যাতে ছোলা ও ডিম রাখা ছিল। দেখা গেল যে, সেগুলো পাথরে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) এটা মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর উক্তি নকল করেছেন। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেন, যেন তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি না দেখা পর্যন্ত ঈমান আনয়ন না করে।” মূসা (আঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে ফিরআউন ও তার কওমের বিরুদ্ধে এই দুআ করেছিলেন। এই ব্যাপারে মূসা (আঃ)-এর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, তাদের মধ্যে সংশোধনের কোন যোগ্যতাই নেই। কাজেই তাদের নিকট থেকে কল্যাণের কোন আশাই করা যায় না। যেমন নূহ (আঃ) বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক! কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না। যদি আপনি তাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে থাকতে দেন, তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে বিভ্রান্তই করবে এবং তাদের শুধু দুষ্কার্যকারী ও কাফির সন্তানই ভূমিষ্ট হবে।” (৭১:২৬) এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)-এর প্রার্থনা কবুল করে নেন এবং তার ভাই হারূন (আঃ) তাতে আমীন বলেন। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের দুজনের প্রার্থনা কবূল করা হলো এবং ফিরআউনীদের ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এ আয়াতটি এটাই প্রমাণ করছে যে, যদি মুকতাদী ইমামের সূরা ফাতিহার কিরআতের উপর আমীন বলে, তবে সেও স্বয়ং সূরায়ে ফাতিহা পাঠকারী বলে গণ্য হবে।

মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ হে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)! যেমন তোমাদের প্রার্থনা কবুল করা হলো, তেমনই তোমরাও আমার হুকুমের উপর সোজা ও দৃঢ় থাকো এবং তা কার্যকরী কর। (আরবী) বলে এটাকেই। কথিত আছে যে, এই প্রার্থনার চল্লিশ বছর পর ফিরআউনকে ধ্বংস করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এই প্রার্থনার চল্লিশ দিন পরেই সে ধ্বংস হয়েছিল।

* ৯০-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা ফিরআউন ও তার লোক লশকরের নদীতে নিমজ্জিত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। বানী ইসরাঈল যখন মূসা (আঃ)-এর সাথে মিসর হতে যাত্রা শুরু করে তখন তাদের সংখ্যা ছিল ছয় লাখ। ফিরআউনের লোকদের মধ্যে যে কয়েকজন ঈমান এনেছিল তারা এদের সাথে ছিল না। বানী ইসরাঈল ফিরআউনের কওম কিবতীদের নিকট থেকে বহু সংখ্যক অলংকার ঋণ স্বরূপ নিয়েছিল এবং সেগুলো নিয়েই তারা মিসর হতে বেরিয়ে পড়ে। ফলে ফিরআউনের ক্রোধ খুবই বেড়ে যায়। তাই সে তার কর্মচারীদেরকে তার দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এই নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করে যে, তারা যেন একটি বিরাট বাহিনী গঠন করে। সুতরাং তার আদেশ মোতাবেক এক বিরাট বাহিনী গঠিত হয় এবং তা নিয়ে সে বানী ইসরাঈলের পশ্চাদ্ধাবন করে। আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য ছিল এটাই। অতএব, ফিরআউনের রাজ্যে যতগুলো ধনাঢ্য ও সম্পদশালী লোক ছিল কেউই তার সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে বাদ পড়লো না। তারা সবাই ফিরআউনের সাথে বেরিয়ে পড়লো। সকালেই তারা বানী ইসরাঈলের নাগাল পেয়ে গেল। উভয় দলের মধ্যে যখন একে অপরকে দেখে নিলো, তখন মূসা (আঃ)-এর সঙ্গীরা তাকে ডাক দিয়ে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আমরা তো প্রায় ধরা পড়েই গেলাম।” এটা ছিল ঐ সময়ের ঘটনা যখন বানী ইসরাঈল নদীর তীরে পৌছে গিয়েছিল এবং ফিরআউন ও তার বাহিনী তাদের পিছনেই ছিল। উভয় দল এমন পর্যায়ে এসে পড়েছিল যে, তাদের মধ্যে প্রায় টক্কর লেগেই যাবে। মূসা (আঃ)-এর লোকেরা তাঁকে বারবার বলতে লাগলোঃ “এখন উপায় কি হবে? ফিরআউনের দলবল থেকে আমরা কিরূপে বাঁচতে পারি? সম্মুখে নদী এবং পিছনে শক্র!” মুসা (আঃ) বললেনঃ “আমাকে তো এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন নদীতে রাস্তা করে দেই। আমরা কখনো ধরা পড়বো না। আমার প্রতিপালকই আমার পরিচালক। যখন নৈরাশ্য শেষ সীমায় পৌছে গেল তখন মহান আল্লাহ নৈরাশ্যকে আশায় পরিবর্তিত করলেন। মূসা (আঃ)-কে তিনি হুকুম করলেনঃ “তোমার লাঠি দ্বারা নদীর পানিতে আঘাত কর।” মূসা (আঃ) তাই করলেন। তখন নদীর পানি পেটে গেল। পানির প্রতিটি খণ্ড এক একটি উঁচু পাহাড়ের রূপ ধারণ করলো। নদীতে বারোটি রাস্তা হয়ে গেল। প্রত্যেক দলের জন্যে হয়ে গেল একটি করে রাস্তা। নদীর মধ্যভাগের সিক্ত মাটিকে শুষ্ক হাওয়া তৎক্ষণাৎ শুকিয়ে দিল। ফলে রাস্তা চলাচলের যোগ্য হয়ে গেল। নদীর রাস্তা সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে গেল। এখন না থাকলো ধরা পড়ার ভয় এবং না থাকলো ডুবে যাওয়ার আশংকা। নদীর পানির প্রাচীরের মধ্যে জানালা হয়ে গিয়েছিল, যাতে প্রতিটি পথের লোক অন্য লোককে দেখতে পায় এবং নিশ্চিত হতে পারে যে, অন্যেরা ধ্বংস হয়ে যায়নি। এভাবে বানী ইসরাঈল নদী পার হয়ে গেল। তাদের শেষ দলটিও যখন নদী পার হয়ে গেল, তখন ফিরআউনের লোক লশকর নদীর এপারে পৌছে গেছে। ফিরআউনের এই সেনাবাহিনীতে শুধু এক লাখ কালো ঘোড়ার আরোহী ছিল। অন্যান্য রং এর অশ্বারোহী তো ছিলই। এর দ্বারা ফিরআউনের সৈন্য সংখ্যার আধিক্যের কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। ফিরআউন এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে ভীষণ আতংকিত হয়ে উঠলো এবং ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, তখন আর মুক্তি লাভের সুযোগ ছিল না। তার ভাগ্যে যা ঘটবার ছিল, তা ঘটে যাওয়ার সময় এসেই পড়েছিল। মূসা (আঃ)-এর দুআ কবুল হয়ে গিয়েছিল। জিবরাঈল (আঃ) একটি ঘোটকীর উপর সওয়ার ছিলেন। তিনি ফিরআউনের ঘোটকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করলেন। তাঁর ঘোটকীকে দেখে ফিরআউনের ঘোড়াটি চিহি চিহি শব্দ করে উঠলো। জিবরাঈল (আঃ) তাঁর ঘোটকীকে নদীতে নামিয়ে দিলেন এবং তা দেখে ঘোড়াটিও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ফিরআউন ওকে থামিয়ে রাখতে পারলো না। বাধ্য হয়ে তাকে নদীতে নামতেই হলো। সে তখন তার বীরত্ব প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তার সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করে বললোঃ “বানী ইসরাঈল আমাদের চেয়ে নদীর মধ্যে প্রবেশ করার বেশী হকদার নয়। সুতরাং তোমরা সবাই নদীতে প্রবেশ কর। রাস্তা তো বানানোই রয়েছে। তার এই উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ শুনে তার সেনাবাহিনী নদীতে নেমে পড়লো । মীকাঈল (আঃ) তাদের সবারই পিছনে ছিলেন এবং তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাদেরকে এভাবে সামনের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন। সবাই যখন নদীর মধ্যে প্রবেশ করলো এবং বানী ইসরাঈল সব পার হয়ে গেল, তখন আল্লাহ তা’আলা নদীকে পরস্পর মিলিয়ে দিলেন। এখন ফিরআউন এবং তার দলবলের কেউই বাঁচলো না। তরঙ্গ উঁচু নীচু হচ্ছিল এবং সেখানে মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফিরআউনের উপর মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। ঐ সময় সে বলে উঠলোঃ “আমি এখন ঈমান আনছি।” কিন্তু বড়ই আফসোস যে, সে এমন সময় ঈমান আনলো, যখন ঈমান আনয়নে কোনই উপকার ছিল না। আল্লাহ পাক বলেনঃ “সে যখন আমার আযাব আসতে দেখল, তখন বলে উঠলো- আমি এক আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং কুফর ও শিরক পরিহার করলাম। কিন্তু আমার শাস্তি দেখার পর ঈমান আনয়নে কোনই লাভ হয় না। আল্লাহ তা’আলার নীতি এটাই। কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।” তাই ফিরআউনের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “তুমি এখন ঈমান আনছো? অথচ পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তুমি নাফরমানীই করছিলে এবং ফাসাদীদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছিলে।” সে লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করছিল। সে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জনগণের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। সুতরাং এখন তাকে মোটেই সাহায্য করা হবে না।

আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের (আরবী) -এ কথাটি স্বীয় নবী (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। এটা ছিল ঐ গায়েবের কথাগুলোর অন্তর্ভুক্ত যার খবর তিনি একমাত্র তাকেই দিয়েছিলেন। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যখন ফিরআউন ঈমানের কালেমাটি মুখে উচ্চারণ করে তখনকার কথা জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেনঃ “ হে আল্লাহর নবী (সঃ)! আমি নদীর কাদা নিয়ে ফিরআউনের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম এই ভয়ে যে, হয়তোবা আল্লাহর রহমত তাঁর গযবের উপর জয়লাভ করবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে যে, জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে। বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনি যদি সেই সময় আমাকে দেখতেন, তবে দেখতে পেতেন যে, ঐ সময় আমি ফিরআউনের মুখের মধ্যে কাদা ভরে দিচ্ছিলাম এই ভয়ে যে, আল্লাহর রহমত তাকে পেয়ে বসে, সুতরাং তিনি হয়তো তাকে ক্ষমা করে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতএব, আজ আমি তোমার মৃতদেহকে উদ্ধার করবো, যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্যে উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাকো।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈলের কতকগুলো লোক ফিরআউনের মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছিল। তখন আল্লাহ তা’আলা দরিয়াকে আদেশ করলেন যে, সে যেন ফিরআউনের পোশাক পরিহিত আত্মাহীন দেহকে যমীনের কোন টিলার উপর নিক্ষেপ করে, যাতে জনগণের কাছে ফিরআউনের মৃত্যুর সত্যতা প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ তারা যেন বুঝতে পারে যে, ওটা হচ্ছে ফিরআউনের আত্মবিহীন দেহ।

মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রকৃতপক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ লোক আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাবলী থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে না। কথিত আছে যে, এই ধ্বংস কার্য সংঘটিত হয়েছিল আশুরার দিন (১০ই মুহাররাম)। নবী (সঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করেন তখন তিনি দেখলেন যে, ইয়াহূদীরা ঐ দিন রোযা রেখে থাকে। তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেঃ “এই দিনে মূসা (আঃ) ফিরআউনের উপর জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা ইয়াহূদীদের চাইতে এই রোযা রাখার বেশী হকদার। সুতরাং তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখবে।”
* আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নিয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাদেরকে বসবাসের জন্যে উত্তম জায়গা দান করেছি। অর্থাৎ মিসর ও সিরিয়া, যা বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটেই অবস্থিত । আল্লাহ তা’আলা যখন ফিরআউন ও তার দলবলকে ধ্বংস করে দেন। তখন তিনি মিসরের উপর মূসা (আঃ)-এর শাসন পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আর আমি সেই লোকদেরকে, যারা অতিশয় দুর্বল বিবেচিত হতো, সেই ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করে দিলাম যাতে আমি (যাহেরী ও বাতেনী) বরকত রেখেছি; আর তোমার প্রতিপালকের মঙ্গলকর অঙ্গীকার বানী ইসরাঈলের প্রতি পূর্ণ হলো তাদের ধৈর্যধারণের কারণে, আর আমি ধ্বংস করে দিলাম ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের তৈরী কারখানাসমূহ এবং যেসব সুউচ্চ প্রাসাদ তারা নির্মাণ করতে।” অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেনঃ “অবশেষে আমি তাদেরকে (ফিরআউন ও তার কওমকে) বাগানসমূহ ও ঝর্ণাসমূহ হতে বের করে দিলাম। আর ধন-ভাণ্ডারসমূহ এবং উত্তম প্রাসাদ হতেও। (আমি) এইরূপ করলাম; আর তাদের পরে বানী ইসরাঈলকে তৎসমুদয়ের মালিক করে দিলাম।” মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ “তারা ছেড়ে গিয়েছিল কতই না উদ্যান ও ঝর্ণাসমূহ!”

বানী ইসরাঈল কিন্তু মূসা (আঃ)-এর কাছে বায়তুল মুকাদ্দাস শহরের জন্যে আবেদন জানায়, যা ইবরাহীম খলীল (আঃ)-এর বাসভূমি ছিল। ঐ সময় বায়তুল মুকাদ্দাস ‘আমালেকা সম্প্রদায়ের অধিকারভুক্ত ছিল। বানী ইসরাঈলকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হলে তারা অস্বীকার করে বসে। আল্লাহ পাক তখন তাদেরকে তীহ ময়দানে হারিয়ে দেন। চল্লিশ বছর ধরে তারা সেখানে উড্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যে হারূন (আঃ) ইন্তেকাল করেন এবং পরে মূসাও (আঃ) মৃত্যুমুখে পতিত হন। অতঃপর বানী ইসরাঈল ইউশা ইবেন নূন (আঃ)-এর সাথে তীহের ময়দান হতে বেরিয়ে পড়েন এবং তাঁর হাতে আল্লাহ তা’আলা বায়তুল মুকাদ্দাস বিজিত করেন। কিছুকাল এটা তার অধিকারে থাকে। তারপর ‘বাখতে নাসার’ তা দখল করে নেয়। এরপর ইউনানী রাজাদের ওর উপর আধিপত্য লাভ হয়। বহুদিন পর্যন্ত ওর উপর এদের শাসন চলতে থাকে । এই সময়ের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে সেখানে পাঠিয়ে দেন। ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ)-এর সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করে এবং রটনা করে যে, তিনি জনগণের মধ্যে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করছেন। ইউনানী বাদশাহ তাকে ধরে শূলে দেয়ার ইচ্ছা করে। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় একজন হাওয়ারীকে ঈসা (আঃ) মনে করে তারা তাকে ধরে শূলে চড়িয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ তাকে তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়।” অতঃপর ঈসা (আঃ)-এর প্রায় তিনশ’ বছর পর কুসতুনতীন’ নামক একজন ইউনানী বাদশাহ খ্রীষ্টান ধর্ম ককূল করে। কিন্তু সে ছিল একজন দার্শনিক। কেউ বলে যে, ভয়ে সে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল, আবার একথাও বলা হয়েছে যে, ঈসা (আঃ)-এর ধর্মে ফিৎনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বাহানা করে সে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল। খ্রীষ্টান পাদ্রীরা তার নির্দেশক্রমে শরীয়তের নতুন নতুন আইন তৈরী করে নেয়, বিদআত ছড়িয়ে দেয়, ছোট বড় গীজা ও ইবাদতখানা নির্মাণ করে এবং প্রতিমা ও মূর্তি বানিয়ে নেয়। ঐ সময় খ্রীষ্টান ধর্ম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে থাকে। সন্যাসীত্ব ও বৈরাগ্য সৃষ্টি হয়ে গেল এবং ঈসা (আঃ)-এর সত্য ধর্মের বিরোধিতা শুরু হয়ে গেল। প্রকৃত ধর্ম শুধুমাত্র কয়েকজন ধার্মিক লোকের মধ্যেই অবশিষ্ট থাকলো। এখন এরাও বৈরাগীদের আকারে জঙ্গলে ও প্রান্তরে গীর্জা তৈরী করে থাকতে লাগলো। সিরিয়া, জাযীরা এবং রোম দেশের উপর খ্রীষ্টানদের প্রতিপ্রত্তি জমে গেল। ঐ সম্রাটই (কুতুনতীন) কুসতুনতুনিয়া (কনৃস্টান্টিনোপল) ও কামামা শহর স্থাপন করলো। বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যে বায়তুল লাহাম’ ও গীজা নির্মাণ করলো এবং হাওরানের শহর স্থাপন করলো, যেমন বুসরা ইত্যাদি। সে বড় বড় ও মজবুত অট্টালিকাসমূহ নির্মাণ করলো । এখান থেকেই ক্রুশ-পূজার সূচনা হয়, যা সুদূর প্রাচ্য পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ওখানেও গীর্জা নির্মাণ করা হয়। তারা শূকরের মাংস হালাল করে নেয়। দ্বীনের মূল ও শাখার মধ্যে অদ্ভুত অদ্ভুত বিদআত সৃষ্টি হয়। বাদশাহর নির্দেশক্রমে শরীয়তের নতুন নতুন বিধান বানিয়ে নেয়া হয়। এর ব্যাখ্যা খুবই দীর্ঘ। মোটকথা, ঐ শহরগুলোর উপর তাদের কর্তৃত্ব সাহাবীদের যুগ পর্যন্ত চলতে থাকে। অবশেষে বায়তুল মুকাদ্দাস উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর হাতে বিজিত হয়। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য।

আল্লাহ পাক বলেন, আমি তাদেরকে আহার করবার জন্যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করেছি। কিন্তু মাযহাব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তারা ঐ ব্যাপারে মতভেদ করতে থাকে। অথচ মাযহাব সম্পর্কে মতভেদ সৃষ্টি করার কোনই কারণ ছিল না। আল্লাহ তাআলা তো সমস্ত কথাই অতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছিলেন।

হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াহুদীরা একাত্তরটি দল বানিয়ে নিয়েছিল, আর খ্রীষ্টানরা বানিয়ে নিয়েছিল বাহাত্তরটি দল । আমার উম্মত তেহাত্তরটি দল বানিয়ে নেবে। ওগুলোর মধ্যে শুধু একটি দল মুক্তিপ্রাপ্ত হবে এবং বাকী সবগুলোই হবে জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ একটি দল কোনটি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “যার উপর আমি ও আমার সাহাবীবর্গ রয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম হাকিম (রঃ) তাঁর ‘মুসতাদরিক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ তা’আলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি কিয়ামতের দিন ঐ সব বিষয়ের উপর মীমাংসা করবো, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছিল।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এ ধরনের কথা কখনো কোন কাফের জাতিকে সম্বোধন করে বলা যেতে পারে না। হযরত মূসার এ বক্তব্য পরিষ্কার ঘোষণা করছে যে, সমগ্র বনী ইসরাঈল জাতিই তখন মুসলমান ছিল এবং হযরত মূসা তাদেরকে এ উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, তোমরা যদি সত্যিই মুসলমান হয়ে থাকো যেমন তোমরা দাবী করে থাকো তাহলে ফেরাউনের শক্তি দেখে ভয় করো না বরং আল্লাহর শক্তির ওপর আস্থা রাখো।

* যেসব নওজোয়ান মূসা (আ) এর সাথে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন এটা ছিল তাদের জবাব। এখানে قَالُوا (তারা বললো) শব্দের মধ্যে তারা সর্বনামটি জাতির বা কওমের সাথে যুক্ত না হয়ে ذُرِّيَّةٌ বা সন্তান সন্ততি তথা নওজোয়ানদের সাথে যুক্ত হয়েছে যেমন পরবর্তী বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে।

* “আমাদেরকে জালেম লোকদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না”-উক্তি সাচ্চা ঈমানদার নওজোয়ানদের এ দোয়া বড়ই ব্যাপক অর্থ ও তাৎপর্যবোধক। গোমরাহীর সর্বব্যাপী প্রাধান্য ও আধিপত্যের মধ্যে যখন কিছু লোক সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য কোমর বেঁধে লাগে তখন তারা বিভিন্ন ধরনের জালেমদের মুখোমুখি হয়। একদিকে থাকে বাতিলের আসল ধারক ও বাহক। তারা পূর্ণ শক্তিতে এ সত্যের আহবায়কদের বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করতে চায়। দ্বিতীয় দিকে থাকে তথাকথিত সত্যপন্থীদের একটি বেশ বড়সড় দল। তারা সত্যকে মেনে চলার দাবী করে কিন্তু মিথ্যার পরাক্রান্ত শাসন ও দোর্দণ্ড প্রতাপের মোকাবিলায় সত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে অনাবশ্যক বা নির্বুদ্ধিতা মনে করে। সত্যের সাথে তারা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাকে কোন না কোন প্রকারে সঠিক ও বৈধ প্রমাণ করার জন্য তারা চরম প্রচেষ্টা চালায়। এ সঙ্গে উল্টা তাদেরকে মিথ্যার ধারক গণ্য করে নিজেদের বিবেকের মর্মমূলে জমে উঠা ক্লেশ ও জ্বালা মেটায়। সত্যপন্থীদের সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাওয়াতের ফলে তাদের মনের গভীরে, সুস্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে এ ক্লেশ জমে উঠে। তৃতীয় দিকে থাকে সাধারণ জন মানুষ। তারা নিরপেক্ষভাবে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকতে। যার পাল্লা ভারী হয় – সে সত্য হোক বা মিথ্যা – তাদের ভোট শেষ পর্যন্ত তারই পাল্লায় পড়ে। এমতাবস্থায় এ সত্যের আহবায়কের প্রতিটি ব্যর্থতা বিপদ-আপদ, ভুল-ভ্রান্তি, দুর্বলতা ও দোষ ত্রুটি বাতিল পন্থী বা নিরপেক্ষ বিভিন্ন দলের জন্য বিভিন্নভাবে উৎপীড়ন ও উত্যক্ত করণের সুযোগ ও উপলক্ষ হয়ে দেখা দেয়। তাদেরকে বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করে দেয়া হলে অথবা তারা যদি পরাজিত হয়ে যায় তাহলে প্রথম দলটি বলে, আমরাই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাম। যে নির্বোধরা পরাজিত হয়ে গেছে তারা সত্যপন্থী ছিল না। দ্বিতীয় দলটি বলে, দেখলে তো! আমরা না বলেছিলাম, এসব বড় বড় শক্তির সাথে বিবাদ ও সংঘর্ষের ফল নিছক কয়েকটি মূল্যবান প্রাণের বিনাশ ছাড়া আর কিছুই হবে না। শরীয়াত কবেই বা নিজেদেরকে এ ধ্বংসের গর্তে নিক্ষেপ করার দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়েছিল? সমকালীন ফেরাউনরা তথা স্বৈরাচারী শাসকেরা যেসব ধ্যাণ ধারণা পোষণ ও কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল তার মাধ্যমেই তো দ্বীনের সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয় দাবীগুলো পূরণ হচ্ছিল। তৃতীয় দলটি তার সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেয়, যে বিজয়ী হয়েছে সে-ই সত্য। এভাবে যদি সে তার দাওয়াতের কাজে কোন প্রকার ভুল করে বসে অথবা বিপদ ও সংকটকালে কোন সাহায্য সহায়তা না পাওয়ার কারণে দুর্বলতা দেখায় কিংবা তার বা তার কোন সদস্যের কোন নৈতিক ত্রুটির প্রকাশ ঘটে তাহলে বহু লোকের জন্য মিথ্যার পক্ষাবলম্বনের হাজারো বাহানা সৃষ্টি হয়ে যায়। আর তারপর এ দাওয়াতের ব্যর্থতার পর সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত সত্যের দাওয়াতের উত্থানের আর কোন সম্ভবনাই থাকে না। কাজেই মুসা (আ) এর সাথীরা যে দোয়া করেছিলেন তা ছিল বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া। তারা দোয়া করেছিলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি এমন অনুগ্রহ বর্ষণ করো যাতে আমরা জালেমদের জন্য ফিৎনায় তথা উৎপীড়নের অসহায় শিকারে পরিণত না হই।” অর্থাৎ আমাদের ভুল-ভ্রান্তি, দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে রক্ষা করো এবং আমাদের প্রচেষ্টাকে দুনিয়ায় ফলদায়ক করো, যাতে আমাদের অস্তিত্ব তোমার সৃষ্টির জন্য কল্যাণপ্রদ হয়, জালেমদের দুরাচারের কারণে না হয়।

* এ আয়াতটির অর্থের ব্যাপারে মুফাস্সিরদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছিল। এর শব্দাবলী এবং যে পরিবেশে এ শব্দাবলী উচ্চারিত হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে আমি একথা বুঝেছি যে, সম্ভবত মিসরে সরকারের কঠোর নীতি ও নির্যাতন এবং বনী ইসরাঈলের নিজের দুর্বল ঈমানের কারণে ইসরাঈলী ও মিসরীয় মুসলমানদের মধ্যে জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা খতম হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে তাদের ঐক্যগ্রন্থী ছিন্নভিন্ন এবং তাদের দ্বীনি প্রাণসত্তার মৃত্যু ঘটেছিল। এ জন্য এ অবস্থাটিকে নতুন কর কায়েম করার জন্য হযরত মূসাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, জামায়াতবদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য মিসরে কয়েকটি গৃহ নির্মাণ করো অথবা গৃহের ব্যবস্থা করে নাও। কারণ একটি বিকৃত ও বিক্ষিপ্ত মুসলিম জাতির দ্বীনি প্রাণসত্তার পুনরুজ্জীবন এবং তার ইতস্তত ছড়ানো শক্তিকে নতুন করে একত্র করার উদ্দেশ্যে ইসলামী পদ্ধতিতে যে কোন প্রচেষ্টাই চালানো হবে তার প্রথম পদক্ষেপেই অনিবার্যভাবে জামায়াতের সাথে নামায কায়েম করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ গৃহগুলোকে কিবলাহ গণ্য করার যে অর্থ আমি বুঝেছি তা হচ্ছে এই যে, এ গৃহগুলোকে সমগ্র জাতির জন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্বের অধিকারী এবং তাদের কেন্দ্রীয় সম্মিলন স্থলে পরিণত করতে হবে। আর এরপরই “নামায কায়েম করো” কথাগুলো বলার মানে হচ্ছে এই যে, পৃথক পৃথকভাবে যার যার জায়গায় নামায পড়ে নেয়ার পরিবর্তে লোকদের এ নির্ধারিত স্থানগুলোয় জামায়েত হয়ে নামায পড়তে হবে। কারণ কুরআন পরিভাষায় যাকে “ইকামাতে সালাত” বলা হয় জামায়াতের সাথে নামায পড়া অনিবার্যভাবে তার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

* বর্তমান ঈমানদারদের ওপর যে হতাশা, ভীতি-বিহ্বলতা ও নিস্তেজ-নিস্পৃহা ভাব ছেয়ে আছে তা দূর করে দাও। তাদেরকে আশান্বিত করো। তাদেরকে উৎসাহিত ও উদ্যমশীল করো। “সুখবর দাও” বাক্যটির মধ্যে এসব অর্থ রয়েছে।

* ওপরের আয়াতগুলো হযরত মূসার দাওয়াতের প্রথম যুগের সাথে সম্পর্ক রাখে। এ দোয়াটি হচ্ছে মিসরে অবস্থানকালের একেবারে শেষ সময়ের। মাঝখানে কয়েক বছরের দীর্ঘ ব্যবধান। এ সময়কার বিস্তারিত বিবরণ এখানে নেই। তবে কুরান মজীদের অন্যান্য স্থানে এ মাঝখানের যুগেরও বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।

* আড়ম্বর শান-শওকত ও সাংস্কৃতিক জীবনের এমন চিত্তাকর্ষক চাকচিক্য, যার কারণে দুনিয়ার মানুষ তাদের ও তাদের রীতি-নীতির মোহে মত্ত হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের পর্যায়ে পৌঁছার আকাঙ্খা করতে থাকে।

* উপায়-উপকরণ, যেগুলোর প্রাচুর্যের কারণে নিজেদের কলা-কৌশলসমূহ কার্যকর করা তাদের জন্য সহজসাধ্য ছিল এবং যেগুলোর অভাবে সত্যপন্থীরা নিজেদের যাবতীয় কর্মসূচী কার্যকর করতে অক্ষম ছিল।

* যেমন একটু আগেই আমি বলেছি, এ দোয়াটি হযরত মূসা (আ) করেছিলেন তার মিসরে অবস্থানের একবারে শেষ সময়ে। এটি তিনি এমন সময় করেছিলেন যখন একের পর এক সকল নিদর্শন দেখে নেবার এবং দ্বীনের সাক্ষ্য প্রমাণ পূর্ণ হয়ে যাবার পরও ফেরাউন ও তার রাজসভাসদরা সত্যের বিরোধিতায় চরম হঠকারিতার সাথে অবিচল ছিল এহেন পরিস্থিতিতে পয়গম্বর যে বদদোয়া করেন তা কুফরীর ওপর অবিচল থাকার ব্যাপারে হঠকারিতার ভূমিকা অবলম্বনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহর নিজের ফায়সালারই অনুরূপ হয়ে থাকে। অর্থাৎ তাদেরকে আর ঈমান আনার সুযোগ দেয়া হয় না।

*যারা প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত নয় এবং আল্লাহর মহৎ উদ্দেশ্যে ও মানব কল্যাণ নীতি বুঝে না, তারা মিথ্যার মোকাবিলায় সত্যের দুর্বলতা, সত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টাকারীদের অনবরত ব্যর্থতা এবং বাতিল মতাদর্শের নেতৃবৃন্দের বাহ্যিক আড়ম্বর ঐশ্বর্য ও তাদের পার্থিব সাফল্য দেখে ধারণা করতে থাকে, হয়তো মহান আল্লাহ‌ তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণকারীদেরকে এ দুনিয়ার ওপর কর্তৃত্বশীল দেখতে চান। তারা মনে করে হয়তো আল্লাহ‌ স্বয়ং মিথ্যার মোকাবিলায় সত্যকে সমর্থন করতে চান না, তারপর এ মূর্খের দল শেষ পর্যন্ত নিজেদের বিভ্রান্তিকর অনুমানের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম আসলে অর্থহীন এবং এ অবস্থায় কুফরী ও ফাসেকী শাসনের আওতায় দ্বীনের পথে চলার যে সামান্যতম অনুমতিটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এ আয়াতে মহান আল্লাহ‌ হযরত মূসা ও তার অনুসারীদেরকে এ ভ্রান্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করার তাগিদ করেছেন। এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবরের সাথে নিজেদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাজ করে যাও। সাধারণত মূর্খ ও অজ্ঞরা ও ধরনের অবস্থায় যে বিভ্রান্তির শিকার হয় তোমরাও যেন তেমনি বিভ্রান্ত না হও।

* বাইবেলে এ ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। তবে তালমূদে বলা হয়েছে, ডুবে যাওয়ার সময় ফেরাউন বলেছিলঃ “আমি তোমার ওপর ঈমান আনছি। হে প্রভু! তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।”

* সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগর তীরে সেখানে ফেরাউনের লাশ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল আজো সে জায়গায়টি অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমান সময়ে এ জায়গাটির নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউন পর্বত। এরই কাছাকাছি আছে একটি গরম পানির ঝর্ণা। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে হাম্মামে ফেরাউন। এর অবস্থান স্থল হচ্ছে আবু যানীমর কয়েক মাইল ওপরে উত্তরের দিকে। স্থানীয় লোকেরা এ জায়গাটি চিহ্নিত করে বলে, ফেরাউনের লাশ এখানে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

এ ডুবন্ত ব্যক্তি যদি মিনফাতাহ ফেরাউন হয়ে থাকে, যাকে আধুনিক গবেষণার মূসার আমলের ফেরাউন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাহলে এর লাশ এখনো কায়রোর যাদু ঘরে রয়েছে। ১৯০৭ সালে স্যার গ্রাফটিন এলিট স্মিথ তার মমির ওপর থেকে যখন পট্রি খুলেছিলেন তখন লাশের ওপর লবনের একটি স্তর জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এটি লবণাক্ত পানিতে তার ডুবে যাওয়ার একটি সুস্পষ্ট আলামত ছিল।

* আমি তো শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক নিদর্শনসমূহ দেখিয়েই যেতে থাকবো, যদিও বেশীর ভাগ লোকদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, বড় বড় শিক্ষণীয় নিদর্শন দেখেও তাদের চোখ খোলে না।
* মিসর থেকে বের হবার পর ফিলিস্তিন।

* এর অর্থ হচ্ছে, পরবর্তী পর্যায়ে তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে যে দলাদলী শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধর্মীয় চিন্তা গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং না জানার কারণে তার বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আসলে এসব কিছুই ছিল তাদের দুর্বৃত্তসুলভ চরিত্রের ফসল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছিলঃ এ হচ্ছে সত্য দ্বীন, এ হচ্ছে তার মূলনীতি, এগুলো-এর দাবী ও চাহিদা, এগুলো হচ্ছে কুফর ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, একে বলে আনুগত্য। আর এর নাম হচ্ছে গোনাহ, এসব জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং এসব নিয়মনীতির ভিত্তিতে দুনিয়ায় তোমার জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কিন্তু এ সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দ্বীনকে অসংখ্য দ্বীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধর্মীয় ফেরকার প্রাসাদ নির্মাণ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

* বনী ইস্রাঈলগণ ফিরআউনের পক্ষ থেকে যে অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার ছিল, মূসা (আঃ) আসার পরেও তা কম হয়নি, ফলে তিনি বড় চিন্তান্বিত ছিলেন। বরং মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায় তাঁকে এমন কথাও বলে ফেলেছিল যে, হে মূসা! যেমন আমরা আপনার আগমনের পূর্বে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের নিপীড়নে নিপীড়িত ছিলাম, অনুরূপ আপনার আগমনের পরেও আমাদের একই অবস্থা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মূসা (আঃ) তাদেরকে বলেছিলেন, আশা করি যে আমার প্রভু অবিলম্বে তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন। তবে এর জন্য জরুরী যে, তোমরা একমাত্র এক আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অধৈর্য হয়ো না। (সূরা আ’রাফের ৭:১২৮-১২৯ নং আয়াত দ্রষ্টব্য) এখানেও মূসা (আঃ) তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আনুগত্যশীল হও, তাহলে একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা কর।

* তারা আল্লাহর উপর ভরসা করার সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে দু’আও করেছিল। দু’আ অবশ্যই মু’মিনদের জন্য একটি বড় হাতিয়ার এবং বড় সহায়-সম্বল।
* এর অর্থ এই যে, নিজ নিজ বাসস্থানকে মসজিদ বানিয়ে নাও এবং কিবলার (বাইতুল মাকদিসের) দিকে তার মুখ করে নাও। যাতে ইবাদত করার জন্য তোমাদেরকে বাইরে গির্জা ইত্যাদিতে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়, যেখানে ফিরআউন ও তার দল-বলের অত্যাচারের ভয় থাকে।

* [১] যখন মূসা (আঃ) দেখলেন যে, ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের উপর আমার ওয়াজ-নসীহতের কোন প্রভাব পড়ছে না এবং এরূপ মু’জিযা দেখেও তার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তার জন্য বদ্দুআ করলেন। এখানে আল্লাহ তাআলা সেই বদ্দুআর কথা বর্ণনা করেছেন।

[২] অর্থাৎ সে যদিও ঈমান আনে, তবে শাস্তি দেখার পর যেন আনে, যে ঈমান তার জন্য কোন লাভদায়ক হবে না। এখানে কারো মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া উচিত নয় যে, পয়গম্বরগণ শুধু হিদায়াতের দু’আ করেন, ধ্বংসের জন্য বদ্দুআ করেন না। কারণ দাওয়াত-তবলীগ এবং সর্বতোভাবে পরিপূর্ণ দলীল পেশ করার পর যখন এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আর ঈমান আনার কোন আশা নেই, তখন শেষ উপায় এটাই থাকে যে, সেই জাতির ব্যাপার আল্লাহর দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া। এটা ঠিক যেন আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে, যা কোন ইচ্ছা ছাড়াই পয়গম্বরদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। যেমন নূহ (আঃ) সাড়ে নয়শ বছর তবলীগ করার পর শেষে নিজ সম্প্রদায়ের উপর বদ্দুআ করে বলেছিলেন, (رَبِّ لا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارا) “হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিও না।” (সূরা নূহ ৭১:২৬ আয়াত)

* [১] এর একটি অর্থ এই যে, তোমরা নিজ বদ্দুআর উপর অবিচল থাকো; যদিও তার বাস্তব রূপ প্রকাশ পেতে দেরী হয়। কারণ তোমাদের দু’আ অবশ্যই কবুল করা হয়েছে। কিন্তু তা কখন বাস্তবায়ন করব, তা একমাত্র আমার ইচ্ছা ও হিকমতের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং কোন কোন তফসীরবিদ বর্ণনা করেছেন যে, সেই বদ্দুআর চল্লিশ বছর পর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই বদ্দুআ অনুযায়ী ফিরআউন যখন পানিতে ডুবতে আরম্ভ করল, তখন সে বলল, ‘আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছি।’ কিন্তু এই ঈমানে তার কোন লাভ হয়নি। এর দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তুমি আপন দাওয়াত-তবলীগ, বনী ইস্রাঈলদেরকে পথ প্রদর্শন এবং তাদেরকে ফিরআউনের দাসত্ব থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য চেষ্টা-চরিত্র অব্যাহত রাখ।

[২] অর্থাৎ যারা আল্লাহর নিয়ম-নীতি, তাঁর আইন-কানুন এবং তাঁর কর্মগত কৌশল ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, অবশ্যই তোমরা তাদের মত হয়ে যেয়ো না; বরং এখন অপেক্ষা ও ধৈর্য ধারণ কর, আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ হিকমত ও কৌশল অনুযায়ী অবিলম্বে অথবা বিলম্বে তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূর্ণ করবেন। কারণ তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না ।

* [১] অর্থাৎ, সমুদ্র চিরে, তাতে শুষ্ক পথ তৈরী করে দিলাম (যেমন সূরা বাক্বারার ২:৫০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এবং আরো বিস্তারিত আলোচনা সূরা শুআ’রা ২৬:৬৩-৬৫ আয়াতে আসবে) এবং তোমাদেরকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিলাম।

[২] অর্থাৎ, আল্লাহর আদেশে অলৌকিকভাবে তৈরী শুষ্ক পথে, যে পথ দিয়ে মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায় সমুদ্র পার হয়েছিলেন, ফিরআউন ও তার সৈন্য-সামন্তও সমুদ্র পার হওয়ার ইচ্ছায় ঐ পথে চলতে আরম্ভ করে। উদ্দেশ্য ছিল যে, মূসা বনী ইস্রাঈলদেরকে আমার দাসত্ব থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য রাতারাতি তাদেরকে নিয়ে পালিয়েছে, পুনরায় তাদেরকে দাসত্বেরবেড়ীতে আবদ্ধ করতে হবে। যখন ফিরআউন ও তার সৈন্য-সামন্ত সেই সামুদ্রিক পথে প্রবেশ করে গেল, তখন আল্লাহ তাআলা সাগরকে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী চলাচলের আদেশ দিলেন। ফলে ফিরআউন সহ তার সৈন্যদল সকলে সাগরে ডুবে মরল।

* আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, এখন ঈমান আনায় আর কোন মঙ্গল নেই। কারণ ঈমান আনার যে সময় ছিল, সে সময় তুমি অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্য ও ফাসাদ রচনায় রত ছিলে।
*যখন ফিরআউন ডুবে মারা গেল, তখন তার মৃত্যুর কথা অনেক মানুষের বিশ্বাস হচ্ছিল না। আল্লাহ তাআলা সাগরকে আদেশ দিলেন, ফলে সাগর তার মৃত লাশকে উপকূলে ফেলে দিল এবং সকলে তাকে (মৃত) দেখল। প্রসিদ্ধি আছে যে, আজও তার মৃতদেহ মিসরের যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। (কিন্তু সে লাশ কি তারই?) আল্লাহই অধিক জানেন।

প্রথমতঃ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা না করে নিজেদের মাঝে মতভেদ শুরু করে দেয়, আর এই মতভেদ মূর্খতা ও অজ্ঞতার কারণে ছিল না; বরং জ্ঞানলাভ করার পর করেছিল। যাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এই মতভেদ শুধুমাত্র শত্রুতা ও অহংকারবশতঃ ছিল।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

*মূসা আলাইহিসসালাম তার জাতিকে ঈমানের সাথে সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করার আহবান জানান। কারণ যারাই আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করবে আল্লাহ্ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান [সূরা আয-যুমারঃ ৩৬, সূরা আত-তালাকঃ ৩] আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ঈমান ও ইবাদতের সাথে তাওয়াকুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা করার জন্য জোর নির্দেশ দিয়েছেন। [যেমন, সূরা হুদঃ ১২৩, সূরা আল-মুলকঃ ২৯, সূরা আল-মুয্যাম্মিলঃ ৯]।
* “আমাদেরকে জালেম লোকদের ফিতনার শিকারে পরিণত করবেন না”। অর্থাৎ তাদেরকে আমাদের উপর বিজয় দিবেন না। কারণ এটা আমাদের দ্বীন সম্পর্কে আমাদেরকে বিভ্রান্তিতে নিপতিত করবে। [কুরতুবী] অথবা তাদের হাতে আমাদের শাস্তি দিয়ে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ আমাদের শক্ৰদের হাতে আমাদেরকে ধবংস করবেন না। আর আমাদেরকে এমন কোন শাস্তিও দিবেন না যা দেখে আমাদের শক্ররা বলে যে, যদি এরা সৎপন্থী হতো তবে আমরা তাদের উপর করায়ত্ব করতে পারতাম না। এতে তারাও বিভ্রান্ত হবে, আমরাও। আবু মিজলায বলেন, এর অর্থ, তাদেরকে আমাদের উপর বিজয় দিবেন না, ফলে তারা মনে করবে যে, তারা আমাদের চেয়ে উত্তম, তারপর তারা আমাদের উপর সীমালঙ্ঘনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
* [১] এখানে

(وَّ اجۡعَلُوۡا بُیُوۡتَکُمۡ قِبۡلَةً)

-এর দ্বারা কি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে তা নির্ধারনে কয়েকটি মত রয়েছে-

(এক) কোন কোন মুফাসসিরের মতে এর অর্থ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কেবলামুখী করে তৈরী করে নাও। যাতে করে সেগুলোতে সালাত আদায় করলে ফিরআউনের লোকেরা বুঝতে না পারে। [ইবন কাসীর]

(দুই) কোন কোন মুফাস্‌সির-এর মতে এর অর্থ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করে নাও। যাতে সেগুলোতে সালাত আদায় করার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে। কারণ পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর সালাত আদায় করার জন্য মসজিদ হওয়া শর্ত ছিল। যেখানে সেখানে সালাত আদায়ের অনুমতি ছিল না। [ইবন কাসীর]

(তিন) কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ্‌ বলেনঃ এর অর্থ তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে মসজিদ বানিয়ে নেবে যাতে তার দিক হয় কেবলার দিকে এবং সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করবে। [কুরতুবী] এ আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, সালাত আদায়ের জন্য কেবলামুখী হওয়ার শর্তটি পূর্ববতী নবীগণের সময়ও বিদ্যমান ছিল। [কুরতুবী]

[২] অর্থাৎ কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তখন অর্থ হবে, বর্তমানে ঈমানদারদের ওপর যে হতাশা, ভীতি-বিহবলতা ও নিস্তেজ-নিস্পৃহ ভাব ছেয়ে আছে তা দূর করে তাদেরকে আশান্বিত করুন। তাদেরকে উৎসাহিত ও উদ্যমশীল করুন। অপর মুফাসসিরগণের মতে এখানে মূসা আলাইহিস সালামকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। আর এটা বেশী সুস্পষ্ট। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে সুসংবাদ দিন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে তাদের শক্ৰদের উপর বিজয় দান করবেন। [কুরতুবী]
* [১] অর্থাৎ আড়ম্বর, শান-শওকত ও সাংস্কৃতিক জীবনের এমন চিত্তাকর্ষক চাকচিক্য, যার কারণে দুনিয়ার মানুষ তাদের ও তাদের রীতি-নীতির মোহে মত্ত হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের পর্যায়ে পৌছার আকাঙ্খা করতে থাকে।

[২] অর্থাৎ উপায়-উপকরণ, যেগুলোর প্রাচুর্যের কারণে নিজেদের কলা-কৌশলসমূহ কার্যকর করা তাদের জন্য সহজসাধ্য ছিল। হে আমাদের রব, আপনিই তাদেরকে এগুলো দিয়েছেন, অথচ আপনি জানতেন যে, আপনি যা নিয়ে তাদের কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন তারা তার উপর ঈমান আনবে না। এটা তো আপনি করেছেন তাদেরকে পরীক্ষামূলক ছাড় দেয়ার জন্য। [ইবন কাসীর]

[৩] এ দো’আটি মূসা আলাইহিস সালাম এমন সময় করেছিলেন যখন একের পর এক সকল নিদর্শন দেখে নেবার এবং দ্বীনের সাক্ষ্য প্রমাণ পূর্ণ হয়ে যাবার পরও ফিরআউন ও তার রাজসভাসদরা সত্যের বিরোধিতার চরম হঠকারিতার সাথে অবিচল ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে পয়গম্বর যে বদদোয়া করেন তা কুফরীর ওপর অবিচল থাকার অনুরূপ হয়ে থাকে। অর্থাৎ তাদেরকে আর ঈমান আনার সুযোগ দেয়া হয় না। মূসা আলাইহিসসালামের এ দোআটি নূহ আলাইহিসসালামের দোআর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেখানে বলা হয়েছেঃ “হে আমার প্রভু! যমীনের বুকে কাফেরদের কোন আস্তানা অবশিষ্ট রাখবেন না; কারণ তাদেরকে যদি আপনি পাকড়াও না করে এমনি ছেড়ে দেন তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং প্রচণ্ড অপরাধী এবং অতিশয় কাফের ছাড়া আর কিছুর জন্মও তারা দেবে না”। [সূরা নূহঃ ২৭]।
* দো’আর উপর দৃঢ় থাকার অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাড়াতাড়ি না করা। আর তাড়াতাড়ি তখনই করবে না যখন মনে প্রশান্তি আসবে। আর প্রশাস্তি তখনই আসবে যখন গায়েবী ব্যাপারে যা প্রকাশ পাবে তাতে উত্তমভাবে সন্তুষ্টি লাভ হবে। [কুরতুবী]
* ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি দেখলেন ইয়াহুদীরা আশুরার সাওম পালন করছে। তিনি এ ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললঃ এ দিন আল্লাহ তা’আলা মূসাকে ফিরআউনের উপর বিজয় দিয়েছিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা মূসার সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের থেকেও বেশী হকদার। সুতরাং তোমরা এদিনে সওম পালন কর। [বুখারীঃ ৪৬৮০]
* এ আয়াতে মূসা আলাইহিস সালাম-এর বিখ্যাত মু’জিযা সাগর পাড়ি দেয়া এবং ফিরআনের ডুবে মরার বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে-

(حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَکَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ)

অর্থাৎ যখন তাকে জলডুবিতে পেয়ে বসল তখন বলে উঠল, আমি ঈমান এনেছি যে, আল্লাহর উপর বনী-ইসরাঈলরা ঈমান এনেছে তাঁকে ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আর আমি তাঁরই আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত। স্বয়ং আল্লাহ্‌ জাল্লা শানুহুর পক্ষ থেকে তার উত্তর দেয়া হয়েছে

(آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ کُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ)

অর্থাৎ কি এতক্ষণে ঈমান এনেছ? অথচ ঈমান আনার এবং ইসলাম গ্রহণের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, ঠিক মৃত্যুকালে ঈমান আনা শরীআত অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টির আরো বিস্তারিত বিশ্লেষণ সে হাদীসের দ্বারাও হয়, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্তই কবুল করে থাকেন, যতক্ষণ না মৃত্যুর উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়। [তিরমিযীঃ ৩৫৩৭]

মৃত্যুকালীন উর্ধ্বশ্বাস বলতে সে সময়কে বুঝানো হয়েছে, যখন জান কবজ করার সময় ফিরিশতা সামনে এসে উপস্থিত হন। তখন কর্মজগত পৃথিবীর জীবন সমাপ্ত হয়ে আখেরাতের হুকুম-আহকাম আরম্ভ হয়ে যায়। কাজেই সে সময়কার কোন আমল গ্রহণযোগ্য নয়। এমন সময়ে যে লোক ঈমান গ্রহণ করে, তাকেও মুমিন বলা যাবে না এবং কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, ফিরআউনের এ ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমগ্র বিশ্ব মুসলিমের নির্দেশেও এটাই সুস্পষ্ট। এ ব্যাপারে অন্য কিছু বলা বা বিশ্বাস করা কুরআন হাদীসের পরিপন্থী।
* [১] এখানে ফির’আউনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, জলমগ্নতার পর আমি তোমার লাশ পানি থেকে বের করে দেব যাতে তোমার এই মৃতদেহটি তোমার পরবর্তী জনগোষ্ঠীর জন্য আল্লাহ তা’আলার মহাশক্তির নিদর্শন ও শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। কাতাদা বলেন, সাগর পাড়ি দেবার পর মূসা আলাইহিস সালাম যখন বনী-ইসরাঈলদেরকে ফিরআউনের নিহত হবার সংবাদ দেন, তখন তারা ফির’আউনের ব্যাপারে এতই ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল যে, তা অস্বীকার করতে লাগল এবং বলতে লাগল যে, ফিরআউন ধ্বংস হয়নি। আল্লাহ তা’আলা তাদের সঠিক ব্যাপার প্রদর্শন এবং অন্যান্যদের শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে একটি ঢেউয়ের মাধ্যমে ফিরআউনের মৃতদেহটি তীরে এনে ফেলে রাখলেন, যা সবাই প্রত্যক্ষ করল। [তাবারী] তাতে তার ধ্বংসের ব্যাপারে তাদের নিশ্চিত বিশ্বাস এল এবং তার লাশ সবার জন্য নিদর্শন হয়ে গেল। লাশের কি পরিণতি হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না।

[২] অর্থাৎ আমি তো শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক নিদর্শনসমূহ দেখিয়েই যেতে থাকবো, যদিও বেশীর ভাগ লোকদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, বড় বড় শিক্ষণীয় নির্দশন দেখেও তাদের চোখ খোলে না। আর জানা কথা যে, ফিরআউন ও তার দলবলের ধবংস ও বনী ইসরাঈলের নাজাত ছিল আশুরার দিনে। [ইবন কাসীর]
*[১] এ আয়াতে ফিরআউনের করুণ পরিণতির মোকাবেলায় সে জাতির ভবিষ্যৎ দেখানো হয়েছে, যাদেরকে ফির’আউন হীন ও পদদলিত করে রেখেছিল। বলা হয়েছে, আমি বনী-ইসরাঈলকে উত্তম আবাস দান করেছি। আর এ উত্তম আবাসকে কুরআনুল কারীমে (مُبَوَّاَ صِدۡقٍ) শব্দে ব্যক্ত করেছে। এখানে (صِدْقٍ) অর্থ উপযোগী। [মুয়াসসার] অর্থাৎ এমন আবাসভূমি তাদেরকে দান করা হয়েছে যা তাদের জন্য সর্বদিক দিয়েই কল্যাণকর ও উপযোগী ছিল। অধিকাংশ মুফাসসির ‘উত্তম আবাসভূমি’ বলে সূরা আল-ইসরায় বর্ণিত (اَلَّذِيْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ) বলে যা বুঝানো হয়েছে তা সবই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। [ইবন কাসীর; আদওয়াউল বায়ান] তখন এ স্থানটি অত্যন্ত ব্যাপক এলাকাকে শামিল করবে। অর্থাৎ বায়তুল মাকদিস সংলগ্ন এলাকা, যা বর্তমান ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের বেশ কিছু এলাকাকে শামিল করে। এ ছাড়া সাধারণভাবে মিশরও তাদের পদানত হওয়ার কথা। কারণ, ফিরআউন ধ্বংস হওয়ার পর মিশর রাজত্ব যতটুকু ছিল ততটুকু সবটাই মূসা আলাইহিস সালামের আয়ত্বে চলে আসে। [ইবন কাসীর] কিন্তু ইতিহাসে এটা প্রমাণিত হয়নি যে, তারা আবার মিশরে ফিরে গিয়েছিল।

[২] অর্থাৎ তারা এরপর যে সমস্ত বিষয়ে মতভেদ করেছিল তা অজ্ঞতার কারণে নয়। তাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। যার অর্থ হচ্ছে বিভেদ ও মতপার্থক্য না করা। কারণ, জ্ঞান দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের থেকে সন্দেহ, সংশয় দূর করেছিলেন। কিন্তু তারা মতভেদই করেছিল।[ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন এ আয়াতাংশের অর্থ হচ্ছে, পরবতী পর্যায়ে তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে যে দলাদলি শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধমীয় চিন্তাগোষ্ঠির উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং এ না জানার কারণে তারা বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে সত্য দ্বীন, তার মূলনীতি, তার দাবী ও চাহিদা, কুফর ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, আনুগত্য ইত্যাদির জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে গোনাহ, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা সম্পর্কেও জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দ্বীনকে অসংখ্য দ্বীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধমীয় ফেরকার প্রাসাদ নির্মাণ করে। তাদের এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন এলাকায় অবস্থান কালে বারবার বিভিন্ন বিপর্যয়ে পতিত হয়। মূসা ও হারূন আলাইহিমাসসালামের মৃত্যুর পর ইউসা’ বনি নূন তাদেরকে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকা জয় করেন। তারপর বুখতনসর তাদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করে। কন্তিু তারা আবার আল্লাহর দিকে ফিরে আসলে আবার তাদের হাতে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরে আসে। এরপর তারা আবার পথভ্রষ্ট হয়ে পড়লে তারা গ্রীকদের অধীন হয়। ইত্যবসরে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের মাঝে ঈসা আলাইহিসসালামকে পাঠালেন। কিন্তু তারা গ্রীক রাজাদেরকে ঈসা আলাইহিসসালামের উপর এই বলে ক্ষেপিয়ে তুলল যে, তিনি প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির পঁয়তারা চালাচ্ছেন। গ্রীকগণ তখন ঈসা আলাইহিসসালামকে ধরার জন্য লোক পাঠাল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের একজনকে আল্লাহ্ তা’আলা ঈসা আলাইহিসসালামের আকৃতি দিয়ে ঈসা আলাইহিসসালামকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন। এর ৩০০ বছর পরে গ্রীক সম্রাট কস্টান্টিন নাসারা ধর্মে প্রবেশ করে। সে তখন বিভিন্ন ভিন্নমতাবলম্বী এবং নিজের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে নতুন অনেকগুলো আকীদা-বিশ্বাস ও শরীআত প্রবর্তন করল এবং রাষ্ট্রিয় ক্ষমতাবলে সেগুলোকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করল। যারা ঈসা আলাইহিসসালাম আনীত দ্বীনের উপর ছিল তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করল। তারা বিভিন্নস্থানে পালিয়ে গেল। সে সবস্থানে তার মনমত লোক সেট করল। এবং দেশে দেশে তার মতের লোকদের দ্বারা উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করল। তাদের সে সমস্ত নতুন আকীদার মধ্যে ছিল, ঈসা আলাইহিসসালাম নবী নন। তিনি তিন ইলাহর একজন। তার মধ্যে ঐশ্বরিক এবং মানবিক দু’ধরণের গুণের সমাহার ছিল। তখন থেকে তারা ক্রুশকে পবিত্র চিহ্ন বলে বিবেচনা করল। শুকরের গোস্ত হালাল করল। বিভিন্ন গীর্জায় ঈসা ও মারইয়াম আলাইহিমাসসালামের কল্পিত ছবি স্থাপন করল। এভাবে তারা তাদের দ্বীনকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে ফেলল। পরিণতিতে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে এ পবিত্র ভূমির উত্তরাধিকার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে সুস্থ সঠিক আকীদার উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিমদের প্রতিষ্ঠা করেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে সাহাবাগণ বায়তুল মুকাদ্দাসের অধিকারী হন। [ইবন কাসীর, সংক্ষেপিত]

[৩] তাদের বিভেদ সৃষ্টি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, ইয়াহুদীগণ একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর নাসারাগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর এ উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৬২৪৭, ৬৭৩১]

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 84-93
امَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
If you have believed in Allah, then put your trust in Him.

Musa encouraged His People to put Their Trust in Allah

Allah tells:
وَقَالَ مُوسَى يَا قَوْمِ إِن كُنتُمْ امَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ

And Musa said:”O my people! If you have believed in Allah, then put your trust in Him if you are Muslims.

Allah is sufficient for those who put their trust in Him.

أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ

Is not Allah sufficient for His servant! (39:36)

وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

And whosoever puts his trust in Allah, then He will suffice him. (65:3)

Allah combines worship and reliance in many places. He said:

فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ

So worship Him and put your trust in Him. (11:123)

قُلْ هُوَ الرَّحْمَـنُ ءَامَنَّا بِهِ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا

Say:”He is the Most Gracious (Allah), in Him we believe, and in Him we put our trust…(67:29)

and,

رَّبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلً

(He alone is) the Lord of the east and the west; none has the right to be worshipped but He. So take Him (alone) as a protector. (73:9)

And Allah commanded the believers to say many times in their Salah:

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

You (Alone) we worship, and You (Alone) we ask for help (for each and everything). (1:5)

The Children of Israel complied with this command and:

فَقَالُواْ عَلَى اللّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

They said:”In Allah we put our trust. Our Lord! Make us not a trial for the folk who are wrongdoers.

This means don’t give them victory over us so that they rule us. So they might not think that they have authority over us because they were following the truth and we were falsehood. This might be a deceiving trial for them.

This meaning was reported from Abu Mijliz and Abu Ad-Duha.

Abdur-Razzaq, in a narration from Mujahid, said,
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
(Our Lord! Make us not a trial for the folk who are wrongdoers),

meaning, “Do not give them authority over us so they might make us fall into Fitnah.”

Allah’s statement.

وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ

And save us by Your mercy,

means save us through Your mercy and beneficence

مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

from the disbelieving folk.

meaning, from those who denied the truth and covered it. We truly have believed in You and put our trust in You.
They were commanded to pray inside Their Homes

Allah tells;
وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّءَا لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُواْ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُواْ الصَّلَةَ وَبَشِّرِ الْمُوْمِنِينَ

And We revealed to Musa and his brother (saying):”Provide dwellings for your people in Egypt, and make your dwellings as places for your worship, and perform the Salah, and give glad tidings to the believers.”

Allah tells us why He saved the Children of Israel from Fir`awn and his people. He tells us how he saved them. Allah commanded Musa and his brother Harun to take houses for their people in Egypt,
وَاجْعَلُواْ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً
(and make your dwellings as places for your worship).

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said, while interpreting this Ayah:

“The Children of Israel said to Musa, `We cannot offer our prayers in public in front of Fir`awn’s people.’ So Allah permitted them to pray in their houses. They were commanded to build their houses in the direction of the Qiblah.”

Mujahid commented,
وَاجْعَلُواْ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً
(and make your dwellings as places for your worship),

“When Banu Israel feared that Fir`awn might kill them in their gatherings at their temples, they were commanded to take their houses as places of worship. The houses should be facing the Qiblah and the prayer could be in secret.”

This was stated by Qatadah and Ad-Dahhak as well.

Musa supplicated against Fir`awn and His Chiefs

Allah mentioned what Musa said when he prayed against Fir`awn and his chiefs after they refused to accept the truth. They continued to go astray and be haughty and arrogant.

وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ اتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلهُ زِينَةً

And Musa said:”Our Lord! You have indeed bestowed on Fir`awn and his chiefs splendor (and pleasure of this worldly life).

وَأَمْوَالاً

and wealth, (plentiful and abundant).

Allah’s statement,

فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَ

in the life of this world, Our Lord! That they may lead men astray from Your path.

was read with the word “Liyadillu” and “Liyudillu.”

The first is with a Fathah over the Ya, meaning that;

“You have given them that while You know they would not believe in what You have sent me with to them. You did that so they would gradually be drawn away from the truth.”

As Allah said:

لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ

that We may test them thereby. (20:131) and (72:17)

Others read the word with a Dammah over the Ya. (i.e. Liyudillu) This makes the Ayah mean:

“You have given them that so whoever You willed from among Your creatures will be tried. Those whom You wish to misguide would think that You have given them that because You loved them and You cared about them.”

رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ

“Our Lord! Destroy their wealth,”

Ibn Abbas and Mujahid said:

“They asked Allah to destroy their wealth.”

Ad-Dahhak, Abu Al-Aliyah and Ar-Rabi`a bin Anas said:

“Allah made their wealth into engraved stones as it was before.”

About Allah’s statement,

وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ

and harden their hearts.

Ibn Abbas said,

“Harden their hearts means put a seal on them.”

فَلَ يُوْمِنُواْ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الَالِيمَ

so that they will not believe until they see the painful torment.

This prayer was from Musa because he was angry for the sake of Allah and His religion. He prayed against Fir`awn and his chiefs when he was certain that there was no good in them.

Similarly, Nuh prayed and said:

وَقَالَ نُوحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الاٌّرْضِ مِنَ الْكَـفِرِينَ دَيَّاراً

إِنَّكَ إِن تَذَرْهُمْ يُضِلُّواْ عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُواْ إِلاَّ فَاجِراً كَفَّاراً

My Lord! Leave not one of the disbelievers on the earth! If You leave them, they will mislead Your servants, and they will beget none but wicked disbelievers. (71:26-27)

Harun said “Amin” to his brother’s prayer.

And Allah answered Musa’s prayer.

قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا

فَاسْتَقِيمَا

Allah said:”Verily, the invocation of you both is accepted.

`in destroying Fir`awn’s people.

قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا

فَاسْتَقِيمَا

Allah said:”Verily, the invocation of you both is accepted. So you both keep to the straight way,

As I have answered your prayer, you should remain steadfast on My command.’

Ibn Jurayj narrated that Ibn Abbas said about this Ayah:

“Be steadfast and follow My command.”

فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَأنِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

and follow not the path of those who know not..

The Children of Israel were saved and Fir`awn’s People drowned

Allah tells;

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَايِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ

And We took the Children of Israel across the sea, and Fir`awn with his hosts followed them in oppression and enmity, till when drowning overtook him, he (Fir`awn) said:”I believe that none has the right to be worshipped but He in Whom the Children of Israel believe, and I am one of the Muslims.”

Allah tells how He caused Fir`awn and his soldiers to drown. The Children of Israel left Egypt in the company of Musa.

It was said that there were six hundred thousand soldiers, plus offspring. They borrowed a lot of ornaments from the Coptics and took that with them. Fir`awn became very angry with them. So he sent heralds to all the cities to send their soldiers. He embarked, following behind them, filled with great pride and with massive armies. Allah wanted this to happen for He had a plan for them. No one that had any authority or power remained behind in Fir`awn’s kingdom. They were all together and caught the Children of Israel at sunrise.

فَلَمَّا تَرَاءَا الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَـبُ مُوسَى إِنَّا لَمُدْرَكُونَ

And when the two hosts met each other, the companions of Musa said:”We are sure to be overtaken.” (26:61)

They said that because when they got to the seashore Fir`awn was behind them. The two groups met face to face. The people with Musa kept asking, “How can we be saved today!”

Musa replied, “I have been commanded to come this way.”

Musa said:

كَلَّ إِنَّ مَعِىَ رَبِّى سَيَهْدِينِ

Nay, verily, with me is my Lord. He will guide me. (26:62)

It had been so difficult, but it suddenly became easy. Allah commanded him to strike the ocean with his staff. He did and the sea was cleft asunder, each part stood like a mighty mountain. The sea was split into twelve paths, each route for each Israelite tribe.

Allah then commanded the wind and the path was dry for them.

فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقاً فِى الْبَحْرِ يَبَساً لاَّ تَخَافُ دَرَكاً وَلَا تَخْشَى

And strike a dry path for them in the sea, fearing neither to be overtaken (by Fir`awn) nor being afraid (of drowning in the sea). (20:77)
The water in between the paths appeared as windows and every tribe was able to see the other so they would not think that others were destroyed. The Children of Israel crossed the sea.

When the last one crossed, Fir`awn and his soldiers had arrived at the edge of the other shore. They were one hundred thousand black horses in addition to horsemen of other colors. When Fir`awn saw the sea he was frightened. He wanted to turn back, but it was too late. Allah’s decree prevailed and the prayer of Musa was answered.

Jibril came on a war stallion. He passed by Fir`awn’s horse. Jibril’s horse whinnied at Fir`awn’s and then Jibril rushed into the sea, and Fir`awn did the same behind him. Fir`awn no longer had any control over matters. He wanted to sound strong before his chiefs, so he said:”The Children of Israel do not have more right in the sea.” So they rushed into the sea.
Mika’il was behind their army pushing them all to join. When they all were in the sea and the first of them was about to emerge on the other side, Allah, the All-Powerful, commanded the sea to strand them. The sea closed over them and none was saved. The waves took them up and down. The waves accumulated above Fir`awn and he was overwhelmed by the stupors of death. While in this state, he said:

قَالَ امَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِي امَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَايِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

I believe that none has the right to be worshipped but He (Allah) in Whom the Children of Israel believe, and I am one of the Muslims.

He believed at a time when he couldn’t benefit from his faith.

فَلَمَّا رَأَوْاْ بَأْسَنَا قَالُواْ ءَامَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَـفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ

فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَـنُهُمْ لَمَّا رَأَوْاْ بَأْسَنَا سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِى قَدْ خَلَتْ فِى عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَـفِرُونَ

So when they saw Our punishment, they said:”We believe in Allah Alone and reject (all) that we used to associate with Him as (His) partners.”

Then their faith could not avail them when they saw Our punishment. (Like) this has been the way of Allah in dealing with His servants. And there the disbelievers lost utterly (when Our torment covered them). (40:84-85)

Therefore Allah said, as a response to Fir`awn.

الانَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ

Now (you believe) while you refused to believe before,

do you say that just now when you have disobeyed Allah before that.

وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ

And you were one of the mischief-makers.

You were among the makers of mischief on the earth who misled the people.

وَجَعَلْنَـهُمْ أَيِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَيَوْمَ الْقِيـمَةِ لَا يُنصَرُونَ

and We made them leaders inviting to the Fire:and on the Day of Resurrection, they will not be helped. (28:41)

These facts about Fir`awn and his status at that time were among the secrets of the Unseen that Allah revealed to His Messenger, Muhammad.

Similarly Abu Dawud At-Tayalisi recorded that Ibn Abbas said that Allah’s Messenger said;

قَالَ لِي جِبْرِيلُ لَوْ رَأَيْتَنِي وَأَنَا اخِذٌ مِنْ حَالِ الْبَحْرِ فَأَدُسُّهُ فِي فَمِ فِرْعَونَ مَخَافَةَ أَنْ تُدْرِكَهُ الرَّحْمَة

Jibril said to me, “If you could have seen me while I was taking black mud from the sea and placing into the mouth of Fir`awn out of fear that the mercy would reach him.”

Abu Isa At-Tirmidhi and Ibn Jarir also recorded it.

At-Tirmidhi said, “Hasan Gharib Sahih.”

About Allah’s statement,

فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ايَةً

So this day We shall deliver your (dead) body (out from the sea) that you may be a sign to those who come after you!

Ibn Abbas and others from among the Salaf have said:

“Some of the Children of Israel doubted the death of Fir`awn so Allah commanded the sea to throw his body — whole, without a soul — with his known armor plate. The body was thrown to a high place on the land so that the Children of Israel could confirm his death and destruction.”

That is why Allah said,
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيك
(“So this day We shall deliver your..”) meaning that We will put your body on a high place on the earth.

Mujahid said,
بِبَدَنِكَ
(your (dead) body),

means, `your physical body.”

لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ايَةً
(that you may be a sign to those who come after you!),

meaning, so that might be a proof of your death and destruction for the Children of Israel.

That also stood as a proof that Allah is All-Powerful, in Whose control are all the creatures. Nothing can bear His anger.

وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ ايَاتِنَا لَغَافِلُونَ

And verily, many among mankind are heedless of Our Ayat.

Fir`awn and his people were destroyed on the day of Ashura, as recorded by Al-Bukhari, Ibn Abbas said,

“When the Prophet arrived at Al-Madinah, the Jews fasted the day of Ashura. So he asked,

مَا هَذَا الْيَومُ الَّذِي تَصُومُونَهُ

What is this day that you are fasting?

They responded `This is the day in which Musa was victorious over Fir`awn.’

So the Prophet said,

أَنْتُمْ أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْهُمْ فَصُومُوه

You have more right to Musa than they, so fast it.

The Establishment of the Children of Israel in the Land and Their Provision from the Good Things

Allah tells;

وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَايِيلَ

And indeed We settled the Children of Israel in an honorable dwelling place,

In these Ayat, Allah tells us about all the worldly and religious gifts which He bestowed upon the Children of Israel.

Allah’s statement,

مُبَوَّأَ صِدْقٍ

honorable dwelling place,

means in Egypt and Syria, around Jerusalem, as it was said by some.

When Allah destroyed Fir`awn and his soldiers, the Mosaic State took control of all of Egypt as Allah said:

وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُواْ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَـرِقَ الاٌّرْضِ وَمَغَـرِبَهَا الَّتِى بَارَكْنَا فِيهَا وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِى إِسْرءِيلَ بِمَا صَبَرُواْ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُواْ يَعْرِشُونَ

And We made the people who were considered weak to inherit the eastern parts of the land and the western  parts thereof which We have blessed. And the fair Word of your Lord was fulfilled for the Children of Israel, because of their endurance.

And We destroyed completely all the great works and buildings which Fir`awn and his people erected. (7:137)

He said in other Ayat:

فَأَخْرَجْنَـهُمْ مِّن جَنَّـتٍ وَعُيُونٍ

وَكُنُوزٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ

كَذَلِكَ وَأَوْرَثْنَـهَا بَنِى إِسْرَءِيلَ

So, We expelled them from gardens and springs. Treasures, and every kind of honorable place. Thus, and We caused the Children of Israel to inherit them. (26:57 -59)

He also said:

كَمْ تَرَكُواْ مِن جَنَّـتٍ وَعُيُونٍ

How many of gardens and springs that they left behind. .. (44:25-27)

They then continued with Musa, to seek Jerusalem — the land of Ibrahim, the friend of Allah. There were giant people in Jerusalem. The Children of Israel refrained from fighting them. So Allah expelled them into the wilderness for forty years. During this time in the wilderness, first Harun died and then Musa. Yusha` bin Nun led after them. Allah supported them to conquer Jerusalem and rule it for a period of time.

His statement,

وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ

and provided them with good things,

means from the lawful, pure and useful provision that is good in nature and in Law.

Then Allah said:

فَمَا اخْتَلَفُواْ حَتَّى جَاءهُمُ الْعِلْمُ

and they differed not until the knowledge came to them.

There should be no reason for them to have any disputes among them since Allah has sent them knowledge and explained different matters and issues to them.

It has been mentioned in a Hadith,

إِنَّ الْيَهُودَ اخْتَلَفُوا عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَإِنَّ النَّصَارَى اخْتَلَفُوا عَلَى اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَسَتَفْتَرِقُ هَذِهِ الاُْمَّةُ عَلَى ثَلَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً مِنْهَا وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَاثْنَتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّار

The Jews separated into seventy-one sects, and the Christians separated into seventy-two sects, and this Ummah will separate into seventy-three sects, one of which is in Paradise, seventy-two in the Fire.

They asked, “Who are they O Messenger of Allah!”

He replied;

مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي

Those upon what I and my Companions are upon.

It was recorded by Al-Hakim in his Mustadrak with this wording.

So here Allah said,

إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ

Verily your Lord will judge between them,

Here the meaning is, to distinguish between them.

يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

the Day of Resurrection in that which they used to differ.

Leave a Reply