أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 691)
[ اِنَّہٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ
তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
Indeed, he is despairing and ungrateful.]
www.motaher21.net
وَ لَئِنۡ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً ثُمَّ نَزَعۡنٰہَا مِنۡہُ ۚ اِنَّہٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ ﴿۹﴾
আর যদি আমি মানুষকে স্বীয় অনুগ্রহ আস্বাদন করিয়ে তার নিকট হতে তা ছিনিয়ে নিই, তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
And if We give man a taste of mercy from Us and then We withdraw it from him, indeed, he is despairing and ungrateful.
وَ لَئِنۡ اَذَقۡنٰہُ نَعۡمَآءَ بَعۡدَ ضَرَّآءَ مَسَّتۡہُ لَیَقُوۡلَنَّ ذَہَبَ السَّیِّاٰتُ عَنِّیۡ ؕ اِنَّہٗ لَفَرِحٌ فَخُوۡرٌ ﴿ۙ۱۰﴾
আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমরা তাকে সুখ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদ-আপদ কেটে গেছে ,’ আর সে হয় উৎফুল্ল ও অহংকারী।
But if We give him a taste of favor after hardship has touched him, he will surely say, “Bad times have left me.” Indeed, he is exultant and boastful –
اِلَّا الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ کَبِیۡرٌ ﴿۱۱﴾
কিন্তু যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
Except for those who are patient and do righteous deeds; those will have forgiveness and great reward.
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
০৯-১১ নং আয়াত:-
اِنَّہٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ
তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
Indeed, he is despairing and ungrateful.
৯-১১ নং আয়াত
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে মানুষের মধ্যে সাধারণত যে মন্দ গুণ পাওয়া যায়, এখানে তারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। সুখ-দুঃখ এ দু’টি মিলিয়ে মানুষের জীবন, কেউ আজীবন সুখে থাকবে না, আবার কেউ আজীবন দুঃখে থাকবে না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষকে যখন সুখের পর দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে তখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে যায়। সে ভুলেই যায় যে, কিছুদিন পূর্বেও সে সুখী ছিল। এই সুখ যে তার আবার ফিরে আসতে পারে তা কল্পনাই করে না। মনে হয় যেন সে ইতোপূর্বে কোন আরাম-আয়েশ ভোগ করেনি। তাই সে নিরাশ হয়ে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَآ أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوْا بِهَا ط وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۭ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيْهِمْ إِذَا هُمْ يَقْنَطُوْنَ)
“আর যখন মানুষকে রহমতের স্বাদ ভোগ করাই, তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়, আর যদি তাদের কাজ-কর্মের দরুন তাদের ওপর কোন বিপদ আসে, তবে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা রূম ৩০:৩৬)
পক্ষান্তরে তাকে যখন দুঃখের পর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করি তখন সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, সে অহংকারে ফেটে পড়ে, অতীতের দুঃখের কথা ভুলে যায়। মনে হয় যেন সেই দুঃখ তাকে আর কোন দিন স্পর্শ করতে পারবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِذْ قَالَ لَه۫ قَوْمُه۫ لَا تَفْرَحْ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ)
“স্মরণ কর! যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, ‘অহঙ্কার কর না, নিশ্চয় আল্লাহ অহঙ্কারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা কাসাস ২৮:৭৬)
তবে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তারা এই দু‘ প্রকার বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত। তারা দুঃখের সময় নিরাশও হয় না এবং সুখের সময় আনন্দে আত্মহারাও হয় না তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে এবং আল্লাহ তা‘আলার ওপর ধৈর্য ধারণ করে। তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনের জন্য যে ফায়সালাই করেন তাদের জন্য ভালই করেন। যদি সে সুখ লাভ করে তাহলে তার ওপর সে আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যা তার জন্য মঙ্গলময়। আর যদি কোন দুঃখ কষ্ট পায় তাহলে ধৈর্য ধারণ করে, এটাও তার জন্য মঙ্গলময়। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৯৯)
অন্য এক হাদীসে এসেছে: একজন মু’মিন যখন কোন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয় এবং কষ্ট পায় এমনকি তার পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হয় তখন আল্লাহ তার কারণে সে মু’মিনের গুনাহ ক্ষমা করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬৪১)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কষ্টের সময় নিরাশ হওয়া যাবে না এবং সুখের সময় আনন্দে আত্মহারাও হওয়া যাবে না।
২. সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে এবং তাঁর প্রশংসা করতে হবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবিরা গুনাহ।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৯-১১ নং আয়াতের তাফসীর
পূর্ণ ঈমানদারগণ ছাড়া সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে যে সব খারাপ গুণ ও বদ অভ্যাস রয়েছে, আল্লাহ তাআ’লা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন যে, মানুষ সুখের পর দুঃখ-কষ্টে পতিত হলে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে এবং মহান আল্লাহর প্রতি বদ ধারণা পোষণ করতে শুরু করে দেয়, ইতিপূর্বে যেন সে কোন আরাম ও সুখ ভোগ করেই নাই। অথবা এই দুঃখ-কষ্টের পর পুনরায় যে তাদের উপর শান্তি নেমে আসতে পারে এ আশাও তারা করে না। পক্ষান্তরে, দুঃখ-কষ্টে পতিত হওয়ার পর যদি সুখ শান্তি তাদেরকে স্পর্শ করে তখন তারা বলতে শুরু করে যে, দুঃসময় তাদের উপর থেকে সরে গেছে। এ কথা বলে তারা খুশীতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং অন্যদের উপর গর্ব করতে থাকে। এর পর আবার যে তাদের উপর দুঃখ বিপদ নেমে আসতে পারে সে সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণরূপে বেখেয়াল ও নিশ্চিন্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা মু’মিন তারা এই বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত। তারা দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করে এবং সুখ ও আরামের সময় মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ও তার অনুগত হয়ে থাকে। এসব লোক এর বিনিময়ে ক্ষমা ও বড় পুরস্কার লাভ করে। যেমন হাদীসে এসেছে (রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন): “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! মু’মিনের উপর এমন কোন কষ্ট, বিপদ, দুঃখ ও চিন্তা পতিত হয় না যার কারণে আল্লাহ তাআ’লা তার গুণাহ মাফ না করেন, এমন কি একটা কাঁটা ফুটলেও।”
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে। (যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন): “যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে তাঁর শপথ! “মু’মিনের জন্যে আল্লাহর প্রত্যেকটা ফায়সালা কল্যাণকর হয়ে থাকে। সে সুখ শান্তির সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, ফলে তা তার জন্যে কল্যাণকর হয় এবং দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তখনই সে কল্যাণ লাভ করে থাকে।” এ জন্যেই আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “আসরের সময়ের শপথ! নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু যারা ঈমান আনে, ভাল কাজ করে, একে অপরকে সত্যের প্রতি উপদেশ দিতে থাকে এবং একে অন্যকে (আমলের) পাবন্দ থাকার উপদেশ দিতে থাকে। (তারাই ক্ষতি হতে রক্ষা পাবে)” মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় মানুষকে দুর্বল মনা করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন তাকে দুঃখ স্পর্শ করে তখন সে হায়-হুতাশ করতে থাকে। আর যখন সে স্বচ্ছল হয় তখন কার্পণ্য করতে শুরু করে। (৭০:১৯)
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এ হচ্ছে মানুষের নীচতা, স্থুলদৃষ্টি ও অপরিণামদর্শিতার বাস্তব চিত্র। জীবনের কর্মচঞ্চল অঙ্গনে পদে পদে এর সাক্ষাত পাওয়া যায়। সাধারণভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মন-মানসিকতা পর্যালোচনা করে নিজের মধ্যেও এর অবস্থান অনুভব করতে পারে। কখনো সে সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে এবং শক্তি-সামর্থ্য লাভ করে অহংকার করে বেড়ায়। শরতের প্রকৃতি যেমন সবদিক সবুজ-শ্যামল দেখা যায় তেমনি কখনো দেখতে পায় চারদিক সবুজ-শ্যামলে পরিপূর্ণ। মনের কোণে তখন একথা একবার উঁকিও দেয় না যে, এ সবুজের সমারোহ একদিন তিরোহিত হয়ে পাতা ঝরার মওসুমও আসতে পারে। কোন বিপদের ফেরে পড়লে আবেগে উত্তেজনায় সে কেঁদে ফেলে, বেদনা ও হতাশায় ডুবে যায় তার সারা মন-মস্তিষ্ক এবং এত বেসামাল হয়ে পড়ে যে, আল্লাহকে পর্যন্ত গালমন্দ করে বসে এবং তাঁর সার্বভৌম শাসন কর্তৃত্বকে অভিসম্পাত করে নিজের দুঃখ-বেদনা লাঘব করতে চেষ্টা করে। তারপর যখন দুঃসময় পার হয়ে গিয়ে সুসময় এসে যায় তখন আবার সেই আগের মতোই দম্ভ ও অহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং সুখ-ঐশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়।
এখানে মানুষের এ নীচপ্রকৃতির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে কেন? অত্যন্ত সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে লোকদেরকে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য। এখানে বলা হচ্ছে যে, আজ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত পরিবেশে যখন আমার নবী আল্লাহর নাফরমানীর পরিণামে তোমাদের ওপর আযাব নাযিল হবে বলে তোমাদের সাবধান করে দেন তখন তোমরা তাঁর একথা শুনে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে এবং বলতে থাকো, “আরে পাগল! দেখছো না আমরা সুখ-ঐশ্বর্যের সাগরে ভাসছি, চারদিকে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের ঝাণ্ডা উড়ছে, এ সময় দিন-দুপুরে তুমি কেমন করে দেখলে আমাদের ওপর আযাব নাযিল হওয়ার বিভীষিকাময় স্বপ্ন।” এ অবস্থায় আসলে নবীর উপদেশের জবাবে তোমাদের এ ঠাট্টা-বিদ্রূপ তোমাদের নীচ সহজাত প্রবৃত্তির একটি নিকৃষ্টতর প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তো তোমাদের ভ্রষ্টতা ও অসৎ কার্যাবলী সত্ত্বেও নিছক তাঁর অনুগ্রহ ও করুণার কারণে তোমাদের শাস্তি বিলম্বিত করছেন। তোমাদের সংশোধিত হবার সুযোগ দেয়াই তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু তোমরা এ অবকাশকালে ভাবছো, আমাদের সচ্ছলতা ও প্রাচুর্য কেমন স্থায়ী বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আমাদের এ বাগানে কেমন চিরবসন্তের আমেজ লেগেছে, যেন এখানে শীতের পাতা ঝরার মওসুমের আগমনের কোন আশঙ্কাই নেই।
# এখানে সবরের আর একটি অর্থ সামনে আসছে। ওপরে যে নীচতার বর্ণনা এসেছে সবর তার বিপরীত গুণ প্রকাশ করে। সবরকারী ব্যক্তি কালের পরিবর্তনশীল অবস্থায় নিজের মানসিক ভারসাম্য অটুট রাখে। সময়ের প্রত্যেকটি পরিবর্তনের প্রভাব গ্রহণ করে সে নিজের রং বদলাতে থাকে না। বরং সব অবস্থায় একটা যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলে। যদি কখনো অবস্থা অনুকূলে এসে যায় এবং সে ধনাঢ্যতা, কর্তৃত্ব ও খ্যাতির উচ্চাসনে চড়তে থাকে তাহলে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকারের নেশায় মত্ত হয়ে বিপথে পরিচালিত হয় না। আর যদি কখনো বিপদ-আপদ ও সমস্যা-সংকটের করাল আঘাত তাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে তাহলে এহেন অবস্থায়ও সে নিজের মানবিক চরিত্র বিনষ্ট করে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুখৈশ্বর্য বা বিপদ-মুসীবত যে কোন আকারেই তাকে পরীক্ষায় ফেলা হোক না কেন উভয় অবস্থায়ই তার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অপরিবর্তিত ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তার হৃদয়পাত্র কখনো কোন ছোট বা বড় জিনিসের আধিক্যে উপচে পড়ে না।
# আল্লাহ এমন ধরনের লোকদের দোষ-ত্রুটি মাফও করে দেন এবং তাদের সৎকাজের পুরস্কারও দেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# সাধারণতঃ মানুষের মধ্যে যে খারাপ গুণ পাওয়া যায়, এই আয়াতে ও পরের আয়াতে তারই বর্ণনা রয়েছে। হতাশা ভবিষ্যতের সাথে সম্পৃক্ত আর অকৃতজ্ঞতা অতীত ও বর্তমানের সাথে সম্পৃক্ত।
# ভাবে যে আমার কষ্টের সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমার আর কোন কষ্ট আসবে না।
# তার নিকট যা কিছু থাকে, তা নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় এবং অন্যদের উপর অহংকার করে। অবশ্য এই মন্দ গুণ থেকে মু’মিন ও সৎকর্মশীলগণ স্বতন্ত্র, যেমন পরের আয়াতে এই কথা পরিষ্কার বুঝা যায়।
# মু’মিনগণ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুক বা দুঃখ-কষ্টে থাকুক উভয় অবস্থাতেই তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাঃ) শপথ করে বলেছেন, “সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের জন্য যে ফায়সালাই করেন, তাদের ভালোর জন্যই করেন। যদি সে সুখ লাভ করে, তাহলে তার উপর সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলময় (অর্থাৎ, নেকীর কারণ হয়)। আর যদি কোন দুঃখ-কষ্ট পায়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করে, আর এটাও তাঁর জন্য মঙ্গলময় (অর্থাৎ, নেকীর কারণ) হয়। এই বৈশিষ্ট্য একজন মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো নয়।” (মুসলিম) অন্য আরো একটি হাদীসে বলেন যে, “একজন মু’মিন যখন কোন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় এবং কষ্ট পায়, এমনকি তার পায়ে কাঁটা প্রবিষ্ট হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তার কারণে তাঁর গুনাহ মাফ করে দেন।”
(আহমাদ ৩/৪) সূরা মাআরিজের ৭০:১৯-২২ নং আয়াতেও এই বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে।)
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা’আলা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমরা তাকে আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহের আস্বাদন দেই তখন সে অবশ্যই বলে থাকে, “এ আমার প্রাপ্য এবং আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমি যদি আমার রবের কাছে ফিরে যাইও তার কাছে নিশ্চয় আমার জন্য কল্যাণই থাকবে।’ অতএব, আমরা কাফিরদেরকে তাদের আমল সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করব এবং তাদেরকে অবশ্যই আস্বাদন করাব কঠোর শাস্তি ” [সূরা ফুসসিলাত: ৫০] আরও বলেন, “আর আমরা যখন মানুষকে আমাদের পক্ষ থেকে কোন রহমত আস্বাদন করাই তখন সে এতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন তো মানুষ হয়ে পড়ে খুবই অকৃতজ্ঞ ” [সূরা আশ-শূরা ৪৮]
# এ আয়াতে সত্যিকার মানুষকে সাধারণ মানবীয় দুর্বলতা হতে পৃথক করে বলা হয়েছে যে, সে সব ব্যক্তি সাধারণ মানবীয় দুর্বলতার উর্ধের্ব যাদের মধ্যে দুটি বিশেষ গুণ রয়েছে। একটি হচ্ছে ধৈর্য ও সহনশীলতা, দ্বিতীয়টি সৎকর্মশীলতা। সবর শব্দটি আরবী ভাষায় অনেক ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। সবরের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাধা দেয়া, বন্ধন করা। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় অন্যায় কার্য হতে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করাকে সবর বলে। সুতরাং শরীআতের পরিপন্থী যাবতীয় পাপকার্য হতে প্রবৃত্তিকে দমন করা যেমন সবরের অন্তর্ভুক্ত তদ্রুপ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব ইত্যাদি নেক কাজের জন্য প্রবৃত্তিকে বাধ্য করাও সবরের শামিল। এর বাইরে বিপদাপদে নিজেকে সংযত রাখতে পারাও সবরের অন্তর্ভুক্ত। [ইবনুল কাইয়্যেম: মাদারেজুস সালেকীন] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যার হাতে আমার আত্মা তার শপথ করে বলছি, একজন মুমিনের উপর আপতিত যে কোন ধরনের চিন্তা, পেরেশানী, কষ্ট, ব্যথা, দুর্ভাবনা এমনকি একটি কাঁটা ফুটলেও এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুণাহের কাফ্ফারা করে দেন”। [বুখারীঃ ৫৬৪১, ৫৬৪২, মুসলিমঃ ২৫৭৩] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আল্লাহ মুমিনের জন্য যে ফয়সালাই করেছেন এটা তার জন্য ভাল হয়ে দেখা দেয়, যদি কোন ভাল কিছু তার জুটে যায় তখন সে শুকরিয়া আদায় করে সুতরাং তা তার জন্য কল্যাণ। আর যদি খারাপ কিছু তার ভাগ্যে জুটে যায় তখন সে ধৈর্য ধারণ করে তখন তার জন্য তা কল্যাণ হিসেবে পরিগণিত হয়। একমাত্র মুমিন ছাড়া কারো এ ধরনের সৌভাগ্য হয় না। [মুসলিমঃ ২৯৯৯]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 09-11
اِنَّہٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ
Indeed, he is despairing and ungrateful.
The changing of Man’s Attitude in Happiness and Hardship
Allah says;
وَلَيِنْ أَذَقْنَا الاِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَيُوسٌ كَفُورٌ
وَلَيِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاء بَعْدَ ضَرَّاء مَسَّتْهُ
And if We give man a taste of mercy from Us, and then withdraw it from him, verily, he is despairing, ungrateful.
But if We let him taste good (favor) after evil (poverty and harm) has touched him,
Allah, the Exalted, informs about mankind and the blameworthy characteristics that he possesses, except for those believing servants upon whom Allah has bestowed His mercy.
Allah explains that when any hardship befalls man, after he has experienced blessings, he is disheartened and he despairs of any good in the future. He denies and rejects (the bounties of) his previous condition. Thus, he behaves as if he has never seen any good and he loses all hope for relief (from his situation).
Likewise, if any blessing befalls him after displeasure,
لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّيَاتُ عَنِّي
he is sure to say, “Ills have departed from me.”
This means that he will claim that no harm or calamity will afflict him after this (blessing).
إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
Surely, he is exultant and boastful (ungrateful to Allah).
This means that he is pleased with what he has in his hand and ungrateful (to Allah). At the same time he is boastful towards others.
Allah, the Exalted, then says.
إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ
Except those who show patience,
meaning, those who show patience during times of hardship and adversity.
In reference to Allah’s statement,
وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ
and do righteous good deeds,
This means that they perform the good deeds in times of ease and good health.
Concerning the statement,
أُوْلَـيِكَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ
those, theirs will be forgiveness,
meaning, that they will be forgiven due to the calamities that afflicted them.
Concerning Allah’s statement,
وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
and a great reward.
This great reward is due to them because of what they sent forth (of good deeds) in their times of ease.
This is similar to what is mentioned in the Hadith,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَاا يُصِيبُ الْمُوْمِنَ هَمٌّ وَلَاا غَمٌّ وَلَاا نَصَبٌ وَلَاا وَصَبٌ وَلَاا حَزَنٌ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ عَنْهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاه
By He in Whose Hand is my soul! No worry, calamity, distress, illness, or grief strikes a believer, even the prick of a thorn, except that Allah will expiate his sins for him because of it.
In the Sahih it is recorded that the Prophet said,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَاا يَقْضِي اللهُ لِلْمُوْمِنِ قَضَاءً إِلاَّ كَانَ خَيْرًا لَهُ
إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ فَشَكَرَ كَانَ خَيْرًا لَهُ
وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ فَصَبَرَ كَانَ خَيْرًا لَهُ وَلَيْسَ ذَلِكَ لاِإَحَدٍ غَيْرِ الْمُوْمِن
By He in Whose Hand is my soul! Allah does not decree any matter for the believer except that it is good for him.
If any blessing befalls him, he is thankful (to Allah) and that is good for him.
If any harm comes to him, he is patient and that is also good for him. This is (a bounty) exclusively for the believer.
For this reason, Allah, the Exalted, says,
وَالْعَصْرِ
إِنَّ الاِنسَـنَ لَفِى خُسْرٍ
إِلاَّ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَـتِ وَتَوَاصَوْاْ بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْاْ بِالصَّبْرِ
By Al-`Asr (the time). Verily, man is in loss. Except those who believe and do righteous good deeds. And recommend one another to the truth and recommend one another to patience. (103:1-3)
Allah also says,
إِنَّ الاِنسَـنَ خُلِقَ هَلُوعاً
Verily, man was created very impatient. (70:19)