أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 692)
[ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ نَذِیۡرٌ ؕ
তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী।
But you are only a warner.]
www.motaher21.net
فَلَعَلَّکَ تَارِکٌۢ بَعۡضَ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡکَ وَ ضَآئِقٌۢ بِہٖ صَدۡرُکَ اَنۡ یَّقُوۡلُوۡا لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡہِ کَنۡزٌ اَوۡ جَآءَ مَعَہٗ مَلَکٌ ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ نَذِیۡرٌ ؕ وَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ وَّکِیۡلٌ ﴿ؕ۱۲﴾
তবে কি আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছ তার কিছু আপনি বর্জন করবেন এবং তাতে আপনার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলে, ‘তার কাছে ধন-ভাণ্ডার নামানো হয় না কেন অথবা তার সাথে ফিরিশ্তা আসে না কেন?’ আপনি তো কেবল সতর্ককারী এবং আল্লাহ্ সবকিছুর কর্মবিধায়ক।
Then would you possibly leave [out] some of what is revealed to you, or is your breast constrained by it because they say, “Why has there not been sent down to him a treasure or come with him an angel?” But you are only a warner. And Allah is Disposer of all things.
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِہٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۱۳﴾
নাকি তারা বলে, ‘সে এটা নিজে রটনা করেছে?’ বলুন, ‘তোমরা যদি (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও।
Or do they say, “He invented it”? Say, “Then bring ten surahs like it that have been invented and call upon [for assistance] whomever you can besides Allah, if you should be truthful.”
فَاِلَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اُنۡزِلَ بِعِلۡمِ اللّٰہِ وَ اَنۡ لَّاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿۱۴﴾
তবে কি তারা বলে যে, ওটা সে নিজে রচনা করেছে? বল, ‘তাহলে তোমরাও ওর অনুরূপ স্বরচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (সাহায্যার্থে) আল্লাহ ছাড়া যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’
And if they do not respond to you – then know that the Qur’an was revealed with the knowledge of Allah and that there is no deity except Him. Then, would you [not] be Muslims?
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১২-১৪ নং আয়াত:-
اِنَّمَاۤ اَنۡتَ نَذِیۡرٌ ؕ
তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী।
But you are only a warner.
১২-১৪ নং আয়াত :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
কাফির ও মুশরিকরা নানাভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদ্রƒপ ও উপহাস করত এবং নবুওয়াতকে অস্বীকার করার পাঁয়তারা খুঁজতো। তারা বলত মুহাম্মাদ যদি সত্য নাবী হতো তাহলে তার সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন? অথবা তাকে ধন-সম্পদের ভাণ্ডার দেয়া হল না কেন? যেমন তারা বলত, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَوْلَآ أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُوْنَ مَعَه۫ نَذِيْرًا لا أَوْ يُلْقٰٓ إِلَيْهِ كَنْزٌ أَوْ تَكُوْنُ لَه۫ جَنَّةٌ يَّأْكُلُ مِنْهَا)
“তার কাছে কোন ফেরেশ্তা কেন অবতীর্ণ করা হল না, যে তার সঙ্গে থাকত সতর্ককারীরূপে?’ অথবা তাকে ধনভাণ্ডার দেয়া হয়নি কেন, অথবা তার একটি বাগান নেই কেন, যা হতে সে আহার সংগ্রহ করতে পারে?” (সূরা ফুরকান ২৫:৭-৮)
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলছেন: কাফির-মুশরিকদের এসব কথার কারণে কি তোমার কাছে যা ওয়াহী করা হয়েছে তার কিয়দাংশ বর্জন করবে? অথবা নিজের মনকে সংকুচিত করে নেবে?
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ)
“আমি অবশ্যই জানি, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়; (সূরা হিজর ১৫:৯৭)
না, তাদের কথায় ওয়াহীর কোন কিছু বর্জন করা যাবে না এবং মনও সংকুচিত করা যাবে না। বরং তোমাকে মনে রাখতে হবে তুমি একজন সতর্ককারী, যাদেরকে সতর্ক করছো তারা অনেক মন্তব্য করতে পারে। তাই বলে মন সংকুচিত করে দাওয়াতী কাজ বর্জন করা যাবে না। তোমার পূর্ববর্তী নাবীদেরকে অনুরূপ উপহাস করা হয়েছিল কিন্তু তারা তাদের কাজ থেকে থেমে থাকেনি। শেষ পর্যন্ত তাদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য এসেছিল। আল্লাহ তা‘আলা সব বিষয়ে দায়িত্বশীল, সুতরাং তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও, আল্লাহ তা‘আলা সব ব্যবস্থা করবেন।
অথবা তারা একথাও বলতে পারে, তুমি এ কুরআন নিজে আবিস্কার করে নিয়ে এসেছ। যদি তারা এরূপ কথা বলে তাহলে তাদেরকে বল: কুরআনের মত দশটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো। আর এ কাজে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমাদের যত সাহায্যকারী আছে তাদের সবাইকে আহ্বান কর। কিন্তু তারা এরূপ কক্ষনো করতে সক্ষম হবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰٓي أَنْ يَّأْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَأْتُوْنَ بِمِثْلِه۪ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا)
“বল: ‘যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদি তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।” (সূরা ইসরা ১৭:৮৮)
মূলত দশটি সূরা নয় একটি আয়াতের ন্যায় আয়াত তৈরি করে নিয়ে আসার জন্য মক্কার কাফিরদেরকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কিন্তু তারা পারেনি। অথচ তৎকালীন সময়ে তারা সাহিত্যের শীর্ষ চূড়ায় ছিল। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সকল কাফিরদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবে, যদি কেউ কুরআনের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলতে চায়। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারাতেও আলোচনা করা হয়েছে।
সুতরাং তারা যদি তোমার চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা না করতে পারে তাহলে জেনে রেখ, এ কুরআন আল্লাহ তা‘আলা সজ্ঞানে নাযিল করেছেন, কারো চাহিদানুপাতে নাযিল করেননি। তাই কুরআনে কোন দ্ব্যর্থতা নেই তোমরা যাদের পূজা কর তারা সবাই ভ্রান্ত। এরপরেও কি এক আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য স্বীকার করবে না?
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দাওয়াতী কাজে অনেক বিরূপ মন্তব্য শুনতে হবে, তাই বলে দাওয়াতী কার্যক্রম ছেড়ে দেয়া যাবে না।
২. রাসূল সাধারণ মানুষের মতই, কোন ফেরেশতা নন।
৩. কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ কিতাব, কারো রচিত কিতাব নয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এ বক্তব্যের অর্থ বুঝার জন্য যে অবস্থায় এটি পেশ করা হয় সেটি অবশ্যই সামনে রাখতে হবে। মক্কা এমন একটি গোত্রের কেন্দ্রভূমি যার ধর্মীয় কর্তৃত্ব এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট সমগ্র আরবের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ গোত্রটি যখন অগ্রগতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছে, ঠিক তখনই সেই জনপদের এক ব্যক্তি উঠে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, তোমরা যে ধর্মের পৌরোহিত্য করছো তা পরিপূর্ণ গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার নেতার আসনে বসে আছো তার শিকড়ের গভীর মূলদেশে পর্যন্ত পচন ধরেছে এবং তা একটি গলিত ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহর আযাব তোমাদের উপর প্রচণ্ড বেগে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের সামনে যে সত্য ধর্ম ও কল্যাণময় জীবন বিধান পেশ করছি তাকে গ্রহণ করা ছাড়া তোমাদের জন্য বাঁচার আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তার সাথে তার নিজের পূত-পবিত্র চরিত্র এবং যুক্তিসঙ্গত কথা ছাড়া আর এমন কোন অসাধারণ জিনিস নেই যা দেখে সাধারণ মানুষ তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত বলে মনে করতে পারে। আর চারপাশের পরিমণ্ডলেও ধর্ম, নৈতিকতা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গভীর মৌলিক ত্রুটি ছাড়া এমন কোন বাহ্যিক আলামত নেই, যা আযাব নাযিল হওয়াকে চিহ্নিত করতে পারে। বরং এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সমস্ত সুস্পষ্ট আলামত একথাই প্রকাশ করছে যে, তাদের ওপর আল্লাহর (এবং তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী) দেবতাদের বড়ই অনুগ্রহ রয়েছে এবং তারা যা কিছু করছে ঠিকই করছে। এহেন অবস্থায় একথা বলার ফলে জনপদের কতিপয় অত্যন্ত সুস্থ বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন এবং সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া বাদবাকি সমস্ত লোকই যে তার বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটাই স্বাভাবিক, এর পরিণতি এছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। কেউ জুলুম-নির্যাতনের সাহায্যে তাকে দাবিয়ে দিতে চায়। কেউ মিথ্যা দোষারোপ এবং আজে বাজে প্রশ্ন-আপত্তি ইত্যাদি উত্থাপন করে তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কেউ বিদ্বেষমূলক বিরূপ আচরণের মাধ্যমে তার সাহস ও হিম্মত গুঁড়িয়ে দিতে চায়। আবার কেউ ঠাট্টা-তামাশা, পরিহাস, ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ ও অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তার কথাকে গুরুত্বহীন করে দিতে চায়। এভাবে কয়েক বছর ধরে এ ব্যক্তির দাওয়াতকে মোকাবিলা করা হতে থাকে। এ মোকাবিলা যে কত হৃদয়বিদারক ও হতাশাব্যঞ্জক হতে পারে তা সুস্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই। এরূপ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাঁর নবীর হিম্মত অটুট রাখার জন্য তাঁকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, ভালো ও অনুকূল অবস্থায় আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠা এবং খারাপ ও প্রতিকূল অবস্থায় হতাশ পড়া মূলত নীচ ও হীনমন্য লোকদের কাজ। আমার দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি নিজে সৎ হয় এবং সততার পথে ধৈর্য, দৃঢ়তা ও অবিচলতার সাথে অগ্রসর হয় সে-ই আসলে মর্যাদার অধিকারী। কাজেই যে ধরনের বিদ্বেষ, বিরূপ ব্যবহার, ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ ও মূর্খজনোচিত আচরণ দ্বারা তোমার মোকাবিলা করা হচ্ছে, তার ফলে তোমার দৃঢ়তা ও অবিচলতায় যেন ফাটল না ধরে। অহীর মাধ্যমে তোমার সামনে যে মহাসত্যের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে তার প্রকাশ ও ঘোষণায় এবং তার প্রতি আহবান জানাতে যেন তুমি একটুও কুন্ঠিত ও ভীত না হও। অমুক বিষয়টি শোনার সাথে সাথেই যখন লোকেরা তা নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে তখন তা কেমন করে বলবো এবং অমুক সত্যটি যখন কেউ শুনতেই প্রস্তুত নয় তখন তা কিভাবে প্রকাশ করবো, এ ধরনের চিন্তা এবং দোদুল্যমানতা তোমার মনে যেন কখনো উদয়ই না হয়। কেউ মানুক বা না মানুক তুমি যা সত্য মনে করবে নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে এবং কোন প্রকার কমবেশী না করে তা বলে যেতে থাকবে, পরিণাম আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেবে।
# এখানে একই যুক্তির মাধ্যমে কুরআনের আল্লাহর কালাম হওয়ার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে তাওহীদের প্রমাণও। এ যুক্তির সার নির্যাস হচ্ছেঃ
একঃ তোমাদের মতে যদি এটা মানুষের বাণী হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যি এমন বাণী রচনার ক্ষমতা মানুষের থাকা উচিত। কাজেই তোমরা যখন দাবী করছো, এ কিতাবটি আমি (মুহাম্মাদ) নিজেই রচনা করেছি তখন তোমাদের এ দাবী কেবলমাত্র তখনই সঠিক হতে পারে যখন তোমরা এমনি ধরনের একটি কিতাব রচনা করে দেখিয়ে দেবে। কিন্তু বারবার চ্যালেঞ্জ দেবার পরও যদি তোমরা সবাই মিলে এর নজীর পেশ করতে না পারো তাহলে আমার এ দাবী সত্য যে, আমি এ কিতাবের রচয়িতা নই বরং আল্লাহর জ্ঞান থেকে এটি নাযিল হয়েছে।
দুইঃ তারপর এ কিতাবে যেহেতু তোমাদের মাবুদদের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা হয়েছে এবং পরিষ্কার বলা হয়েছে, তাদের ইবাদাত বন্দেগী করো না, কারণ আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় তাদের কোন অংশ নেই তাই অবশ্যি তোমাদের মাবুদদেরও (যদি সত্যি তাদের কোন শক্তি থাকে) আমার দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ এবং এ কিতাবের নজীর পেশ করার ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য করা উচিত। কিন্তু এ ফায়সালার সময়ও যদি তারা তোমাদের সাহায্য না করে এবং তোমাদের মধ্যে এ কিতাবের নজীর পেশ করার মতো শক্তি সঞ্চার করতে না পারে, তাহলে এ থেকে পরিষ্কার প্রমাণ হয়ে যায় যে, তোমরা তাদেরকে অযথা তোমাদের মাবুদ বানিয়ে রেখেছো। মূলত তাদের মধ্যে কোন শক্তি নেই এবং আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার কোন অংশও নেই, যার ভিত্তিতে তারা মাবুদ হবার অধিকার লাভ করতে পারে।
এ আয়াত থেকে আনুষঙ্গিকভাবে একথাও জানা যায় যে, এ সূরাটি সূরা ইউনূসের পূর্বে নাযিল হয়। এখানে দশটি সূরা রচনা করে আনার চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়। এ চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে তারা অক্ষম হলে এরপর সূরা ইউনূসে বলা হয়ঃ ঠিক আছে, তাহলে শুধুমাত্র এরই মতো একটি সূরাই রচনা করে নিয়ে এসো। আরো দেখুন :সূরা বাক্বারা ২৩ আয়াত , সূরা ইউনূস ৩৮ আয়াত , সূরা হুদ ১৩ আয়াত , সূরা বনী ইসরাঈল ৮৮ আয়াত এবং সূরা তূর ৩৩-৩৪ আয়াত )
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২-১৪ নং আয়াতের তাফসীর
কাফির ও মুশরিকরা যে নানাভাবে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বিদ্রুপ ও উপহাস করতো এবং এর ফলে তিনি মনে কষ্ট পেতেন, তাই এখানে আল্লাহ তাআ’লা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। যেমন তিনি তাদের উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আর তারা বলে- এই রাসূলের (সঃ) কি হলো যে, সে খাদ্য খায় এবং বাজারে চলাফেরা করে? এই ব্যক্তির নিকট কেন ফেরেশতা পাঠানো হয় নাই? তাহলে সে তার সাথে ভয় প্রদর্শনকারী হতো? অথবা তার নিকট কোন ধনভান্ডার এসে পড়তো, কিংবা তার জন্যে কোন বাগান থাকতো, যা হতে সে খেতো? আর এই অত্যাচারী এরূপও বলে থাকে- তোমরা একজন যাদুকৃত মানুষের অনুসরণ করছো।” (২৫: ৭-৮) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলছেনঃ “হে নবী (সঃ) তুমি হতোদ্যম হয়ো না এবং তাবলীগের কাজ থেকে বিরত থেকো না। তাদেরকে সত্যের প্রতি আহ্বান করতে মোটেই অবহেলা করো না। রাত দিন তাদেরকে সত্যের পথে আহ্বান করতে থাক। তাদের কষ্টদায়ক কথা যে তোমাকে দুঃখ দিচ্ছে তা আমি জানি। তাদের কথার প্রতি মোটেই ভ্রূক্ষেপ করো না। এরূপ যেন না হয় যে, তুমি কোন একটা কথা বলতে ছেড়ে দেবে বা তারা তোমার কথা মানে না বলে চুপচাপ বসে পড়বে। আমি জানি যে, তারা তোমাকে উপহাস করছে। তবে জেনে রেখো যে, তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরও উপহাস করা হয়েছিল, অবিশ্বাস করা হয়েছিল এবং ধমকানো হয়েছিল। কিন্তু তারা ধৈর্য ধারণ করে তাবলীগের কাজে অটল ও স্থির রয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য এসে গিয়েছিল।’
এরপর আল্লাহ তাআ’লা কুরআন কারীমের মু’জিযা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, এই কুরআনের মত কিতাব আনাতো দূরের কথা, এর মত দশটি সূরা এমনকি একটি সূরাও রচনা করার ক্ষমতা নেই, যদিও সারা দুনিয়ার লোক মিলিতভাবে তা রচনা করার চেষ্টা করে। কেননা, এটা হচ্ছে আল্লাহ পাকের কালাম। যেমন তাঁর সত্ত্বার কোন তুলনা নেই, অনুরূপভাবে তার গুণাবলীও অতুলনীয়। এটা কখনো সম্ভব নয় যে, তাঁর কালামের মত মাখলুকের কালাম হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআ’লার সত্ত্বা এর থেকে বহু ঊর্ধ্বে এবং এর থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। ইবাদত-বন্দেগীর যোগ্য একমাত্র তিনিই। হে মানুষ! যখন তোমাদের দ্বারা এটা হতে পারে না এবং আজ পর্যন্ত এটা সম্ভব হয় নাই, তখন বিশ্বাস রেখো যে, তোমরা এটা করতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম ও অপারগ। প্রকৃতপক্ষে এটা আল্লাহরই কালাম এবং তারই নিকট থেকে অবতারিত। তাঁর জ্ঞান তাঁরই হুকুম-আহকাম এবং তারই বাধা-নিষেধ এতে বিদ্যমান রয়েছে। সাথে সাথে এটা স্বীকার করে নাও যে, প্রকৃত মা’বুদ একমাত্র তিনিই। সুতরাং এসো, ইসলামের পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে যাও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
মুশরিকরা নবী (সাঃ) সম্পর্কে বলত যে, তাঁর উপর কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করা হয় না কেন? কিংবা তাঁর নিকট কোন ধনভান্ডার অবতীর্ণ করা হয় না কেন। (সূরা ফুরক্বান ২৫:৭-৮) অন্য এক স্থানে বলা হয়েছে “আমি জানি যে, তারা তোমার ব্যাপারে যে কথা বলে, তাতে তোমার হৃদয় সংকুচিত হয়।” (সূরা হিজর ১৫:৯৭) এই আয়াতে ঐ সকল উক্তি সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, সম্ভবতঃ তাতে তোমার হৃদয় সংকুচিত হয়, আর কিছু কথা যা তোমার নিকট অহী করা হয়, তা মুশরিকদের উপর কষ্টকর মনে হয়, হতে পারে যে, তুমি তা তাদেরকে শুনাতে পছন্দ করবে না। কিন্তু তোমার কাজ শুধু সতর্ক ও তবলীগ করা, তা তুমি সর্বাবস্থায় চালিয়ে যাও।
# ইমাম ইবনে কাসীর লিখেছেন যে, প্রথমে আল্লাহ তাআলা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন যে, যদি তোমরা তোমাদের এই দাবীতে সত্যবাদী হও যে, এই কুরআন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সবরচিত, তাহলে তোমরা তার মত কুরআন রচনা করে দেখাও; তাতে তোমরা যার ইচ্ছা সাহায্য নিতে পার। কিন্তু তোমরা এরূপ কক্ষনো করতে সক্ষম হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, (قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْأِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا) অর্থাৎ, বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জীন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না।” (সূরা বনী ইস্রাঈল ১৭:৮৮) তারপর আল্লাহ তাআলা এই চ্যালেঞ্জ দিলেন যে, পূর্ণ কুরআন রচনা করে পেশ করতে না পারলে, দশটি সূরাই রচনা করে পেশ কর। যেমন এই আয়াতে বলা হয়েছে। পুনরায় তৃতীয় চ্যালেঞ্জ দিলেন যে, একটি সূরাই রচনা করে পেশ কর। যেমন সূরা ইউনুসের ১০:৩৮ নং আয়াতে এবং সূরা বাক্বারার শুরুতে এ কথা বলেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর) এর পরিপ্রেক্ষিতে শেষ চ্যালেঞ্জ এ হতে পারে যে, অনুরূপ একটি কথাই তৈরী করে পেশ কর। যেমন আল্লাহ বলেন, (فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِين) অর্থাৎ, তারা যদি সত্যবাদী হয়, তাহলে এর সদৃশ কোন কথা উপস্থিত করুক না। (সূরা ত্বুর ৫২:৩৪) কিন্তু অবতীর্ণ হওয়ার পর্যায়ক্রম অনুসারে পর্যায়ক্রম এই চ্যালেঞ্জের সমর্থন পাওয়া যায় না। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
# এই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে অক্ষম হওয়ার পরেও কি ‘কুরআন আল্লাহরই অবতীর্ণকৃত কিতাব’ এই কথা স্বীকার করার জন্য এবং মুসলমান হওয়ার জন্য প্রস্ত্তত হবে না?
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কাফেরদের কিছু অন্যায় আব্দারের কারণে তার মনের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তার জবাব দিয়ে সাত্ত্বনা দেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] মূলতঃ তাদের আবদার ছিল নিরেট মুর্খতা ও চরম অজ্ঞতাপ্রসূত। যেমন এক আয়াতে এসেছে, “আরও তারা বলে , এ কেমন রাসূল যে খাওয়া-দাওয়া করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তার কাছে কোন ফিরিশতা কেন নাযিল করা হল না, যে তার সংগে থাকত সতর্ককারীরূপে? অথবা তার কাছে কোন ধনভাণ্ডার এসে পড়ল না কেন অথবা তার একটি বাগান নেই কেন, যা থেকে সে খেতো ? যালিমরা আরো বলে, “তোমরা তো এক জাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ।” [সূরা আল-ফুরকান ৭-৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মু’জিযাস্বরূপ সাথে সাথে যদি কোন ফেরেশতা থাকতেন, তবে যখনই কেউ তাকে অমান্য করত তৎক্ষনাৎ গযবে পতিত হয়ে ধ্বংস হত।
# আলোচ্য আয়াতে মুশরিকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের বড় মু’জিযা কুরআন তোমাদের সম্মুখে রয়েছে, যার অলৌকিকত্ব তোমরা অস্বীকার করতে পার না। তোমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সত্যতার প্রমাণস্বরূপ মু’জিযার দাবী করে থাক তাহলে কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের দাবী পুরণ করা হয়েছে। সুতরাং নতুন কোন মু’জিযা দাবী করার কোন অধিকার তোমাদের নেই। আর যদি তারা বলতে চায় যে, কুরআন মজিদ আল্লাহর কালাম নয়; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তা রচনা করেছেন? যদি তোমরা তাই মনে করে থাক তা হলে, তোমরা অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে দেখাও। আর একই ব্যক্তি দশটি সূরা তৈরি করতে হবে, এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। বরং সারা দুনিয়ার পণ্ডিত, সাহিত্যিক মানুষ, জিন, তথা দেব দেবী সবাই মিলেই তা রচনা কর। কিন্তু তারা যখন দশটি সূরাও তৈরী করতে পারছে না, তাই আপনি বলুন যে, এই কুরআন যদি কোন মানুষের রচিত কালাম হতো তাহলে অন্য মানুষেরাও অনুরূপ কালাম রচনা করতে সক্ষম হতো। সকলের অপারগ হওয়াই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, এই কুরআন আল্লাহ পাকের কালাম, এটি ইলম ও কুদরতে নাযিল হয়েছে। এটা রচনা করা মানুষের সাধ্যাতীত।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 12-14
اِنَّمَاۤ اَنۡتَ نَذِیۡرٌ ؕ
But you are only a warner.
The Messenger grieving by the Statements of the Polytheists, and His Gratification
Allah says;
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ بَعْضَ مَا يُوحَى إِلَيْكَ وَضَأيِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَن يَقُولُواْ لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ كَنزٌ أَوْ جَاء مَعَهُ مَلَكٌ
.
So perchance you may give up a part of what is revealed unto you, and that your breast feels straitened for it because they say, “Why has not a treasure been sent down unto him, or an angel come with him!”
This statement of Allah, the Exalted, to His Messenger comforted the worries that the polytheists were causing him due to their statements directed towards him.
This is just as Allah says about them,
وَقَالُواْ مَا لِهَـذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِى فِى الاٌّسْوَاقِ لَوْلا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيراً
أَوْ يُلْقَى إِلَيْهِ كَنْزٌ أَوْ تَكُونُ لَهُ جَنَّةٌ يَأْكُلُ مِنْهَا وَقَالَ الظَّـلِمُونَ إِن تَتَّبِعُونَ إِلاَّ رَجُلً مَّسْحُوراً
And they say:”Why does this Messenger eat food, and walk about in the markets. Why is not an angel sent down to him to be a warner with him!” Or; “(why) has not a treasure been granted to him, or why has he not a garden whereof he may eat!” And the wrongdoers say:”You follow none but a man bewitched.” (25:7-8)
Thus, Allah commanded His Messenger and guided him to not let these statements of theirs grieve his heart. Allah directed him to not let these statements prevent him, or deter him from calling them to Allah, both day and night.
This is as Allah said,
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
Indeed, We know that your breast is straitened at what they say. (15:97)
Allah says in this verse,
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ بَعْضَ مَا يُوحَى إِلَيْكَ وَضَأيِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَن يَقُولُواْ
So perchance you may give up a part of what is revealed unto you, and that your breast feels straitened for it because they say…
The meaning here is that he (the Prophet) may be compelled to give up the Message due to what they (the polytheists) say about him.
However, Allah goes on to explain:
إِنَّمَا أَنتَ نَذِيرٌ
But you are only a warner.
“You (Muhammad) are only a warner and you have an example in your brothers of the Messengers who came before you. For verily, the previous Messengers were rejected and harmed, yet they were patient until the help of Allah came to them.”
وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
And Allah is a Guardian over all things.
An Explanation concerning the Miracle of the Qur’an
Then Allah says;
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ
وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Or they say, “He forged it.” Say:”Bring you then ten forged Surahs like unto it, and call whomsoever you can, other than Allah, if you speak the truth!”
Allah, the Exalted, explains the miracle of the Qur’an, and that no one is able to produce its like, or even bring ten chapters, or one chapter like it. The reason for this is that the Speech of the Lord of all that exists is not like the speech of the created beings, just as His attributes are not like the attributes of the creation. Nothing resembles His existence. Exalted is He, the Most Holy, and the Sublime. There is no deity worthy of worship except He and there is no true Lord other than He.
Then Allah goes on to say.
فَإِلَّمْ يَسْتَجِيبُواْ لَكُمْ
If then they answer you not,
Meaning, that if they do not come with a reply to that which you have challenged them with (to the reproduction of ten chapters like the Qur’an), then know that it is due to their inability to do so.
فَاعْلَمُواْ أَنَّمَا أُنزِلِ بِعِلْمِ اللّهِ
know then that it is sent down with the knowledge of Allah,
Know (that this is a proof) that this is the speech revealed from Allah. It contains His knowledge, His commands and His prohibitions.
Then Allah continues by saying,
وَأَن لاَّ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
and that there is no God besides Him! Will you then be Muslims.