أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 694)
[ أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত,
Can they who rely on a clear proof from their Lord,]
www.motaher21.net
اَفَمَنۡ کَانَ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّہٖ وَ یَتۡلُوۡہُ شَاہِدٌ مِّنۡہُ وَ مِنۡ قَبۡلِہٖ کِتٰبُ مُوۡسٰۤی اِمَامًا وَّ رَحۡمَۃً ؕ اُولٰٓئِکَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِہٖ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِہٖ مِنَ الۡاَحۡزَابِ فَالنَّارُ مَوۡعِدُہٗ ۚ فَلَا تَکُ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡہُ ٭ اِنَّہُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکَ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۷﴾
So is one who [stands] upon a clear evidence from his Lord [like the aforementioned]? And a witness from Him follows it, and before it was the Scripture of Moses to lead and as mercy. Those [believers in the former revelations] believe in the Qur’an. But whoever disbelieves in it from the [various] factions – the Fire is his promised destination. So be not in doubt about it. Indeed, it is the truth from your Lord, but most of the people do not believe.
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১৭ নং আয়াত:-
أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত,
Can they who rely on a clear proof from their Lord,
১৭ নং আয়াত :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা এখানে ঐ সকল মু’মিনদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন যারা তাঁর সেই প্রকৃতির ওপর রয়েছে যার ওপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যারা মনে প্রাণে স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًا ط فِطْرَتَ اللّٰهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ط لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللّٰهِ ط ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ)
“অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ; এটাই আল্লাহর ফিতরাত (প্রকৃতি) যার ওপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল-সঠিক দীন।” (সূরা রূম ৩০:৩০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সকল শিশু প্রকৃতির ওপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী , খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৩৫৯)
(وَيَتْلُوْهُ شَاهِدٌ مِّنْهُ) বলতে কুরআন অথবা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝানো হয়েছে। যা সঠিক পথের দিকে আহ্বান করে। অনুরূপ মূসা (عليه السلام)-এর কিতাবও সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করত ও রহমতের কারণ বটে। এগুলো একজন মু’মিন ব্যক্তির ঈমানের ওপর সাক্ষী।
সুতরাং সে একজন বিশ্বাসী বা ঈমানদার। আর সে সমস্ত দল তা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান, মাজূসী যাই হোক না কেন যারা এতে ঈমান আনবে না তারা নিঃসন্দেহে কাফির আর তারা জাহান্নামী। তাই একজন কাফির ও একজন মু’মিন সমান হতে পারে না। (فَلَا تَكُ فِيْ مِرْيَةٍ) আর আল্লাহ তা‘আলা এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই এবং এই ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ال۬مّ۬ تَنْزِیْلُ الْکِتٰبِ لَا رَیْبَ فِیْھِ مِنْ رَّبِّ الْعٰلَمِیْنَ)
“আলিফ- লাম- মীম-; এ কিতাব বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা সিজদাহ ৩২:১-২)
(أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُوْنَ)
অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ রয়েছে তাদেরকে যতই উপদেশ নসীহত করা হোক না কেন তারা উপদেশও গ্রহণ করবে না এবং ঈমানও আনবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِيْنَ)
“তুমি যতই আকাক্সক্ষা কর না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাসী নয়।” (সূরা ইউসূফ ১২:১০৩)
সুতরাং তারা ঈমান আনবে না আর তাদেরই আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষ প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ওপরই জন্ম গ্রহণ করে।
২. কুরআন আল্লাহ তা‘আলার কিতাব তাতে সন্দেহ পোষণ করা যাবে না।
৩. এক ধরনের লোক রয়েছে যারা উপদেশ শোনে বটে, কিন্তু ঈমান আনে না তাদের মত হওয়া যাবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তাআ’লা ঐ মু’মিনদের অবস্থার সংবাদ দিচ্ছেন যারা তাঁর সেই প্রকৃতির উপর রয়েছে যার উপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যারা তাঁর একত্ববাদকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে অর্থাৎ যারা স্বীকার করে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই উপাস্য নেই। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “তুমি তোমার মুখমন্ডলকে একনিষ্ট ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত কর, এটা হচ্ছে আল্লাহর প্রকৃতি যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন।”
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেকটি সন্তান (ইসলামী) প্রকৃতির উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃস্টান ও মাজূস বানিয়ে দেয়। যেমন পশুর বাচ্চা নিখুঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট হয়েই ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে। তোমরা কি ওকে কান কাটা অবস্থায় দেখতে পাও (অর্থাৎ জন্মের সময় ওর কান কাটা থাকে না, বরং পরে মানুষই তার কান কেটে থাকে)?”
সহীহ মুসলিমে হযরত আইয়ায ইবনু হাম্মাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “আমি আমার বান্দাদেরকে একত্ববাদীরূপেই সৃষ্টি করেছি। কিন্তু শয়তান তাদেরকে তাদের দ্বীন হতে বিভ্রান্ত করেছে এবং তাদের উপর আমি যা হালাল করিছে তা হারাম করেছে। আর তাদেরকে আদেশ করেছে যে, তারা যেন আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করে, আমি যার কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করি নাই।”
মুসনাদ ও সুনানে রয়েছেঃ “প্রতিটি সন্তান এই মিল্লাতের উপরই জন্মগ্রহণ করে। অবশেষে তার বাকশক্তি খুলে দেয়া হয়।” সুতরাং মু’মিন এই ফিতরাতের উপরই বাকি থেকে যায়। অতএব, একদিকে তো তার ফিতরাত বা প্রকৃতি সঠিক ও নিখুঁত হয়, অপর দিকে তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাক্ষী এসে থাকে। তা হচ্ছে মহান শরীয়ত, যা তিনি নবীদেরকে দিয়েছেন এবং এসব শরীয়ত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর শরীয়তের উপর শেষ হয়ে গেছে। এ জন্যেই হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত আবু আলিয়া (রঃ), হযরত যহ্হাক (রঃ), হযরত ইবরাহীম নাখয়ী (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন (আরবি) সম্পর্কে বলেন যে, এই সাক্ষী হচ্ছেন হযরত জিব্রাইল (আঃ)। আর হযরত আলী (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) এবং হযরত কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এই সাক্ষী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। অর্থের দিক দিয়ে এ দুটো প্রায় সমান। কেননা হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) উভয়েই আল্লাহ তাআ’লার রিসালত প্রচার করেছেন। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) পৌঁছিয়ে দিয়েছেন হযরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছে এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পৌঁছিয়ে দিয়েছেন তাঁর উম্মতের কাছে। আবার বলা হয়েছে যে, এই সাক্ষী হচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ) কিন্তু এটা দুর্বল উক্তি। এর কোন উক্তিকারী সাব্যস্ত হয় নাই। প্রথম ও দ্বিতীয় উক্তিই সত্য।
সুতরাং মু’মিনের ফিতরাত বা প্রকৃতি আল্লাহর ওয়াহীর সাথে মিলে যায়। সংক্ষিপ্তভাবে ওর বিশ্বাস প্রথম থেকেই থাকে। অতঃপর ওটা শরীয়তের বিস্তারিত ব্যাখ্যাকে মেনে নেয়। তার ফিতরাত বা প্রকৃতি এক একটি মাস্আলার সত্যতা স্বীকার করতে থাকে। অতঃপর সঠিক ও নিখুঁত ফিতরাতের সাথে মিলিত হয় পবিত্র কুরআনের শিক্ষা, যা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহর নবীর (সঃ) কাছে পৌঁছিয়ে দেন এবং নবী (সঃ) পৌঁছিয়ে দেন তার উম্মতের কাছে।
আল্লাহ পাকের উক্তি (আরবি) অর্থাৎ কুরআনের পূর্বে মূসার (আঃ) কিতাব বিদ্যমান ছিল এবং তা হচ্ছে তাওরাত। এই কিতাবকে আল্লাহ তাআ’লা ঐ যুগের উম্মতের জন্যে পরিচালকরূপে পাঠিয়েছিলেন এবং ওটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে করুণা স্বরূপ। এই কিতাবের উপর যার পূর্ণ ঈমান রয়েছে সে অবশ্যই এই নবী (সঃ) এবং এই কিতাব অর্থাৎ কুরআনে কারীমের উপরও ঈমান আনবে। কেননা, ঐ কিতাব এই কিতাবের উপর ঈমান আনয়নের ব্যাপারে পথ প্রদর্শক স্বরূপ।
এরপর আল্লাহ তাআ’লা পূর্ণ কুরআন বা কুরআনের কিছু অংশ অমান্যকারীদের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দুনিয়ার যে কোন জামাআত বা দলের কাছে কুরআনের অমীয় বাণী পৌঁছলো, অথচ তারা ওর উপর ঈমান আনলো না তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। যেমন আল্লাহ রাব্বল আলামীন স্বীয় পাক কালামের মধ্যে স্বীয় নবীর (সঃ) উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেন আমি তোমাদেরকে এর মাধ্যমে ভয় প্রদর্শন করি এবং তাদেরকেও ভয় প্রদর্শন করি যাদের কাছে এটা পৌঁছে গেছে।” (৬: ১৯) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে জনমন্ডলী! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবারই নিকট আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি।” (৭: ১৫৮) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “দলসমূহের যে কেউ এটাকে অমান্য করবে তাদের প্রতিশ্রুত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।”
হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এই উম্মতের মধ্য হতে যে ইয়াহুদী বা খৃস্টান আমার কথা শুনলো অথচ ওর উপর ঈমান আনলো না সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি যে বিশুদ্ধ হাদীসই শুনতাম, ওর সত্যতার সমর্থন আল্লাহর কিতাবে অবশ্যই পেতাম। উপরোল্লিখিত হাদীসটি শুনে কুরআন কারীমের কোন্ আয়াতে এর সত্যতার সমর্থন মিলে তা আমি অনুসন্ধান করতে লাগলাম। তখন আমি এই আয়াতটি পেলাম। সুতরাং এর দ্বারা সমস্ত দ্বীনের লোকই উদ্দেশ্য।
মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) এই পবিত্র কুরআন সরাসরি তোমার প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে আসার ব্যাপারে তোমার মোটেই সন্দেহ পোষণ করা উচিত নয়। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আলিফ, লাম, মীম। এ কিতাবটি (আল কুরআন) বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতারিত হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই।” (৩২: ১-২) আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আলিফ, লাম, মীম। এই কিতাবে (কুরআনে) কোনই সংশয় ও সন্দেহ নেই।” (২: ১-২)।
আল্লাহ পাকের (আরবি) (কিন্তু অধিকাংশ লোকই ঈমান আনয়ন করে না) এই উক্তিটি তাঁর নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি আকাক্ষা করলেও অধিকাংশ লোকই ঈমানদার নয়।” (১২: ১০৩) এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) তুমি যদি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। (৬: ১১৬) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “ইবলীস (শয়তান) তাদের উপর নিজের ধারণাকে সত্য রূপে দেখিয়েছে, সুতরাং মু’মিনদের একটি দল ছাড়া সবাই তার অনুসরণ করেছে। (৩৪:২০)
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
যে ব্যক্তি নিজেই নিজের অস্তিত্ব, পৃথিবী ও আকাশের নির্মাণ এবং বিশ্ব-জাহানের শাসন-শৃংখলা বিধানের ক্ষেত্রে এ বিষয়ের সুস্পষ্ট সাক্ষ্য লাভ করছিল যে, একমাত্র আল্লাহই এ দুনিয়ার স্রষ্টা, মালিক ও প্রতিপালক এবং এ সাক্ষ্য দেখে যার মনে আগে থেকেই বিশ্বাস জন্মাচ্ছিল যে, এ জীবনের পরে আরো কোন জীবন অবশ্যি হওয়া উচিত যেখানে মানুষ আল্লাহর কাছে তার কাজের হিসাব দেবে এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য পুরস্কার ও শাস্তি লাভ করবে।
# কুরআন এসে এ প্রকৃতিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলো এবং তাকে জানালো তুমি বিশ্ব প্রকৃতিতে ও জীবন ক্ষেত্রে যার নিদর্শন ও পূর্বাভাস পেয়েছো প্রকৃতপক্ষে তাই সত্য।
# বক্তব্যের যে প্রাসঙ্গিক ধারাবাহিকতা চলে এসেছে তার প্রেক্ষিতে এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যারা দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকগুলো এবং তার আপাত চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে গেছে তাদের জন্য কুরআনের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা সহজ। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অস্তিত্ব ও বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনায় আগে থেকেই তাওহীদ ও আখেরাতের স্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়ে আসছিল তারপর কুরআন এসে ঠিক সেই একই কথা বললো, যার সাক্ষ্য সে ইতিপূর্বে নিজের মধ্যে এবং বাইরেও পাচ্ছিল আর কুরআনের পূর্বে আগত আসমানী কিতাব থেকেও এর পক্ষে বক্তব্যের যে প্রাসঙ্গিক ধারাবাহিকতা চলে এসেছে তার প্রেক্ষিতে এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যারা দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকগুলো এবং তার আপাত চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে গেছে তাদের জন্য কুরআনের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা সহজ। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অস্তিত্ব ও বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনায় আগে থেকেই তাওহীদ ও আখেরাতের স্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়ে আসছিল তারপর কুরআন এসে ঠিক সেই একই কথা বললো, যার সাক্ষ্য সে ইতিপূর্বে নিজের মধ্যে এবং বাইরেও পাচ্ছিল আর কুরআনের পূর্বে আগত আসমানী কিতাব থেকেও এর পক্ষে আরো সমর্থন পাওয়া গেলো, সে কেমন করে এসব শক্তিশালী সাক্ষ্য-প্রমাণের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে এ অস্বীকারকারীদের সুরে সুর মিলাতে পারে? এ উক্তি থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, নবী ﷺ কুরআন নাযিলের পূর্বেই ঈমান বিল গাইব-এর মনজিল অতিক্রম করেছিলেন। সূরা আন’আম যেমন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি নবী হবার আগেই বিশ্ব-জগতের নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে তাওহীদের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছিলেন, ঠিক তেমনি এ আয়াত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে এ সত্যে উপনীত হয়েছিলেন। আর এরপর কুরআন এসে কেবল এর সত্যতা প্রমাণ এবং একে সুদৃঢ়ই করেনি বরং তাঁকে সরাসরি সত্যের প্রত্যক্ষ জ্ঞানও দান করেছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ পূর্ব ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বর্ণিত কাফেরগণ কি এ আয়াতে আগত লোকদের সমতুল্য [মুয়াসসার] অথবা যারা তাদের রবের প্রেরিত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত তারা কি তাদের মত যারা তাদের রব প্রেরিত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়? [জালালাইন]
[২] বলা হয়েছে, যে তার রবের পক্ষ থেকে আগত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা ঈমানদারগণ সবাই। [জালালাইন] আর স্পষ্ট প্রমাণ’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে।
এক. এখানে ‘বাইয়েনাহ’ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে ফিতরাত তথা স্বভাবগত বিশ্বাসকে বুঝানো হয়েছে। মূলতঃ প্রত্যেক মানুষই ফিতরাত তথা স্বভাবগতভাবে দ্বীন-ইসলামের উপর জন্ম গ্রহণ করে থাকে। [ইবন কাসীর] পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সঙ্গদোষ, শয়তান, গাফিলতি ইত্যাদি তাদেরকে সে স্বভাবজাত দ্বীন-ইসলামে প্রতিষ্ঠিত থাকতে দেয় না। সে হিসেবে আয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সত্যিকারের মুমিনদের অবস্থা ঐসব লোকদের মোকাবেলায় তুলে ধরা হয়েছে- যাদের চরম ও পরম লক্ষ্য হচ্ছে শুধু দুনিয়া হাসিল করা। যেন দুনিয়ার মানুষ বুঝতে পারে যে, এই দুটি শ্রেণী কখনো সমকক্ষ হতে পারে না।
দুই. অথবা আয়াতে ‘বাইয়েনাহ’ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে কুরআনকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [জালালাইন] তখন আয়াতের অর্থ হবে, যিনি বা যারা অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা মুমিনগণ স্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার অনুসরণ করে একজন সাক্ষী তিনি হচ্ছেন জিবরীল। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যের উপর সাক্ষী। তাছাড়া দ্বিতীয় আরেকটি সাক্ষ্যও রয়েছে আর তা হচ্ছে এ কুরআনের পূর্বে আগত কিতাব তাওরাত যা মূসা আলাইহিসসালামের উপর নাযিল হয়েছে। সে কিতাবও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য। [জালালাইন]
তিন. অথবা আয়াতে বর্ণিত বাইয়্যেনাহ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। এ কুরআনই নিজেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতার উপর প্রথম সাক্ষী। তার দ্বিতীয় সাক্ষী হচ্ছে জিবরীল অথবা স্বয়ং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তৃতীয় সাক্ষী হচ্ছে পূর্বে মূসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিলকৃত কিতাব তাওরাত। যিনি এ তিন সাক্ষী-প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত তিনি কি দুনিয়া পুজারীদের মত? [মুয়াসসার]
[৩] এ আয়াতে (شاهد) শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারক ইমামগণের কয়েকটি অভিমত রয়েছেঃ
১) কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে শাহেদ অর্থ পবিত্র কুরআনের (إعجاز) এ’জায বা মানুষের সাধ্যাতীত হওয়া যা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের সাথে বর্তমান রয়েছে। সুতরাং আয়াতের মর্ম হচ্ছে, কুরআন অমান্যকারী কি এমন ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে যে কুরআনের উপর কায়েম রয়েছে? আর কুরআনের সত্যতার একটি সাক্ষী তো কুরআনের সাথেই বর্তমান রয়েছে। অর্থাৎ এর বিস্ময়করতা এবং মানুষের সাধ্যাতীত হওয়া এবং দ্বিতীয় সাক্ষী ইতোপূর্বে তাওরাতরূপে এসেছে, যা মুসা আলাইহিসসালাম আল্লাহ তা’আলার রহমতস্বরূপ দুনিয়াবাসীর অনুসরণের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। কেননা, কুরআন যে আল্লাহ তা’আলার সত্য কিতাব এ সাক্ষ্য তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত ছিল।
২) কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে (شاهد) বলতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই বুঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার]।
৩) কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে (شاهد) বলতে (فطرة) বা বুদ্ধিবৃত্তিক সাক্ষ্যকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন এসে এ প্রকৃতিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলো এবং তাকে জানালো তুমি বিশ্বপ্রকৃতিতে ও জীবন ক্ষেত্রে যার নিদর্শন ও পূর্বাভাস পেয়েছো প্রকৃতপক্ষে তাই সত্য। [ইবন কাসীর]
৪) ইমাম ইবনে জারীর তাবার রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে (شاهد) বলতে জিবরাইল আলাইহিসসালামকে বুঝানো হয়েছে; কেননা এর পরে বলা হয়েছে, “যার আগে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ” আর এটা নিঃসন্দেহ যে, মুহাম্মাদ এর আগে কখনো মূসা আলাইহিসসালামের গ্রন্থ তেলাওয়াত করেননি। তাই এখানে সাক্ষ্য বলে জিবরাইল আলাইহিসসালাম হওয়াই যুক্তিযুক্ত; কেননা তিনি মূসা আলাইহিসসালামের গ্রন্থও নিয়ে এসেছিলেন। [তাবারী]
[৪] অর্থাৎ এ কুরআনে ঈমান রাখে এবং এর নির্দেশ অনুসারে চলে। [মুয়াসসার]।
[৫] অর্থাৎ অন্যান্য যাবতীয় লোকেরা যারা কুরআনের উপর ঈমান রাখে না এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও রাসূল হিসেবে মানে না তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।
[৬] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “এ জাতি এবং ইয়াহুদী বা নাসারা যে জাতিই হোক না কেন তাদের কেউ যদি আমার কথা শোনার পরও আমার উপর ঈমান না আনবে তারা অবশ্যই জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে”। [মুসলিম: ১৫৩] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আমি এ কথার সত্যায়নে আল্লাহ্র কিতাব থেকে প্রমাণাদি খুজছিলাম, শেষ পর্যন্ত এ আয়াত পেলাম “অন্যান্য দলের যারা এটাকে অস্বীকার করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান”। তারপর ইবনে আব্বাস বললেনঃ এখানে (الأحزاب) বলে যাবতীয় দল ও গোষ্ঠীকে বুঝানো হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৪২]
[৭] অর্থাৎ এ কুরআনের সত্যতার উপর আপনি সন্দেহে থাকবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও সন্দেহে নেই। এখানে উম্মতকে সাধারণভাবে পথ নির্দেশ দেয়াই উদ্দেশ্য। [মুয়াসসার] শানকীতী বলেন, কুরআনের অন্যত্রও এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানেও এ কুরআনকে সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, সূরা আল-বাকারাহ: ২; সূরা সাজদাহ ২। [আদওয়াউল বায়ান]
[৮] মূলত: ঈমান আনার জন্য সোজা মন ও আল্লাহর তাওফীক থাকতে হয়। সুতরাং নবী ইচ্ছা করলেই বা কুরআনের সত্যতা স্পষ্ট হলেই অধিকাংশ মানুষ ঈমান নিয়ে আসবে ব্যাপারটি এরকম নয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষের মতামতই যে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে এমন কথাও ঠিক নয়। [এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ সূরা আলআনআমঃ ১১৬, ইউসুফঃ ১০৩, আর-রাদঃ ১, আল-ইসরাঃ ৮৯, আল-ফুরকানঃ ৫০, আস-সাফফাতঃ ৭১, গাফিরঃ ৫৯. আল-বাকারাহঃ ১০০. আশ-শু’আরাঃ ৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯০]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] কাফের ও অস্বীকারকারীদের বিপরীত মু’মিন ও দ্বীনদারদের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। “প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ”এর অর্থ হল, সেই ‘প্রকৃতি’ যার উপর আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল এক আল্লাহকে স্বীকার ও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার প্রকৃতি। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, সকল শিশু প্রকৃতির উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে দেয়।” (বুখারী) يَتْلُوْهُ এর অর্থ হল, ওর পিছনে বা ওর সঙ্গে। অর্থাৎ, তার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাক্ষীও বিদ্যমান। সে সাক্ষী হল কুরআন অথবা মুহাম্মাদ (সাঃ), যিনি সেই সুস্থ মানব-প্রকৃতির দিকে আহবান করেন। আর এর পূর্বে মূসা (আঃ)-এর কিতাব তাওরাতও সাক্ষী; যা পথনির্দেশক ও রহমতের কারণও বটে। অর্থাৎ, মূসা (আঃ)-এর কিতাবও কুরআনের উপর ঈমান আনার জন্য পথ দেখায়। উদ্দেশ্য এই যে, একজন সেই ব্যক্তি, যে অস্বীকারকারী ও কাফের এবং তার বিপরীত অন্য আর এক ব্যক্তি, যে আল্লাহর সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, তার এক সাক্ষী হল কুরআন বা নবী (সাঃ), অনুরূপ পূর্বে অবতীর্ণ কিতাব তাওরাতেও তার পথনির্দেশনার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং সে বিশ্বাসী। এরা উভয়ে কি সমান হতে পারে? অর্থাৎ, উভয়ে সমান হতে পারে না। কারণ একজন মু’মিন আর দ্বিতীয়জন কাফের। একজন সর্বপ্রকার দলীল দ্বারা সমৃদ্ধ। আর অন্যজন একেবারে দলীলশূন্য।
[২] অর্থাৎ, যাদের মাঝে উক্ত গুণ পাওয়া যায়, তারা কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ) এর প্রতি ঈমান রাখে।
[৩] ‘সমস্ত দল’ থেকে উদ্দেশ্য হল, সারা পৃথিবীতে যে সকল ধর্ম বা মতবাদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, পারসীক, বৌদ্ধ, অগ্নিপূজক, পৌত্তলিক ও অবিশ্বাসী ইত্যাদি থেকে যে কেউ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনবে, তার স্থান হবে জাহান্নাম। উক্ত বিষয়টি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জান আছে! এই উম্মতের যে ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টান আমার নবুঅত সম্পর্কে শ্রবণ করবে অথচ আমার প্রতি ঈমান আনবে না, সে জাহান্নামে যাবে।” (মুসলিম) এ বিষয়টি এর পূর্বে সূরা বাক্বারার ২:৬২ নং ও সূরা নিসার ৪:১৫০-১৫২ নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।
[৪] এ বিষয়টিকে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, যেমন (وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৩ আয়াত) (وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তাদের সম্বন্ধে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণ করল, ফলে তাদের মধ্যে একটি মু’মিন দল ব্যতীত সবাই তার অনুসরণ করল। (সূরা সাবা’ ৩৪:২০ আয়াত)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 17
أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ
Can they who rely on a clear proof from their Lord,
The One Who believes in the Qur’an is upon Clear Proof from His Lord
Allah, the Exalted says,
أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ
Can they who rely on a clear proof from their Lord,
Allah, the Exalted, informs of the condition of the believers who are upon the natural religion of Allah, which He made inherent in His creatures. This is based upon their confession to Him that there is none worthy of worship except He.
This is similar to Allah’s statement,
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفاً فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِى فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا
So set you your face towards the religion, Hanifan. Allah’s Fitrah with which He has created mankind. (30:30),
In the Two Sahihs it is recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُولَدُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ
Every child is born upon the Fitrah, but his parents make him a Jew, Christian, or Magian. This is just as the calf that is born whole. Have you noticed any calves that are born mutilated?
In Sahih Muslim it is recorded that Iyad bin Himar said that the Messenger of Allah said,
يَقُولُ اللهُ تَعَالَى
إِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ فَجَاءَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا
Allah, the Exalted, says,
`Verily, I created my servants Hunafa’, but the devils came to them and distracted them from their religion. They made unlawful for them what I had made lawful for them and they commanded them to associate partners with Me, concerning which no authority has been revealed.
Therefore, the believer is one who remains upon this Fitrah.
Concerning Allah’s statement,
وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِّنْهُ
and whom a witness from Him recites (follows) it;
This means that a witness comes to him from Allah. That witness is the pure, perfect and magnificent legislation that Allah revealed to the Prophets. These legislations were finalized with the legislation (Shariah) of Muhammad. The believer has the natural disposition that bears witness to (the truth of) the general legislation, and accepts that specific laws are taken from the general legislation. The Fitrah accepts the Shariah and believes in it.
For this reason Allah, the Exalted, says,
أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِّنْهُ
(Can they who rely on a clear proof from their Lord, and whom a witness from Him recites (follows) it);
This clear proof which is recited is the Qur’an, which Jibril conveyed to the Prophet and the Prophet Muhammad conveyed it to his Ummah.
Then Allah says,
وَمِن قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَى
and before it, came the Book of Musa,
This means that before the Qur’an, there was the Book of Musa, the Tawrah.
إَمَامًا وَرَحْمَةً
a guidance and a mercy,
This means that Allah, the Exalted, revealed it to that Ummah as a leader for them and a guide for them to follow, as a mercy from Allah upon them. Therefore, whoever believed in it with true faith, then it would lead him to believe in the Qur’an as well.
For this reason Allah said,
أُوْلَـيِكَ يُوْمِنُونَ بِهِ
they believe therein.
Then Allah, the Exalted, threatens those who reject the Qur’an, or any part of it, by saying,
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الَاحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
but those of the sects that reject it, the Fire will be their promised meeting place.
This is directed towards everyone on the face of the earth who disbelieves in the Qur’an, whether they are idolators, disbelievers, People of the Scripture, or other sects from the descendants of Adam. This applies to all whom the Qur’an reaches, regardless of their differences in color, appearance, or nationality.
As Allah says,
لااٌّنذِرَكُمْ بِهِ وَمَن بَلَغَ
that I may therewith warn you and whomsoever it may reach. (6:19)
Allah, the Exalted, said,
قُلْ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
Say:”O mankind! Verily, I am sent to you all as the Messenger of Allah.”
Allah says,
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الَاحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
(but those of the sects that reject it, the Fire will be their promised meeting place).
In Sahih Muslim it is recorded that Abu Musa Al-Ash`ari, may Allah be pleased with him, said that the Messenger of Allah said,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَاا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الاْاُمَّةِ يَهُودِيٌّ أَوْ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ لَاا يُوْمِنُ بِي إِلاَّ دَخَلَ النَّار
By He in Whose Hand is my soul! there is no one of this Ummah, whether he be a Jew or Christian, who hears of me and does not believe in me, except that he will enter the Hell- fire.
Every Hadith is confirmed by the Qur’an
Ayub As-Sakhtiyani reported from Sa`id bin Jubayr that he said,
“I did not hear any Hadith of the Prophet, substantiated as he stated it, except that I found its confirmation in the Qur’an.
The narrator said, “Or he said, `I found its verification in the Qur’an.”‘
Thus, it reached me that the Prophet said,
لَاا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الاْاُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَاا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ لَاا يُوْمِنُ بِي إِلاَّ دَخَلَ النَّار
There is no one of this Ummah, whether he be a Jew or Christian, who hears of me and does not believe in me, except that he will enter the Hellfire.
Therefore, I said, `Where is its verification in the Book of Allah? Most of what I have heard reported from the Messenger of Allah, I have found its verification in the Qur’an.’
Then I found this verse,
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الَاحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
(but those of the sects that reject it (the Qur’an), the Fire will be their promised meeting place). And this means from all religions.”
Then Allah says,
فَلَ تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِّنْهُ إِنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ
So be not in doubt about it. Verily, it is the truth from your Lord,
This means that the Qur’an is the truth from Allah and there is no doubt or suspicion concerning it.
This is as Allah says,
الم
تَنزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
Alif Lam Mim. The revelations of the Book in which there is no doubt, is from the Lord of all that exists! (32:1-2)
Allah, the Exalted, says,
ا
لم
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ
Alif Lam Mim. This is the Book in which there is no doubt. (2:1-2)
The Ayah;
وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُوْمِنُونَ
but most of mankind believe not.
is similar to Allah’s statement,
وَمَأ أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُوْمِنِينَ
And most of mankind will not believe even if you desire it eagerly. (12:103)
Likewise, Allah says,
وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِى الاٌّرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ
And if you obey most of those on the earth, they will mislead you far away from Allah’s path.
Allah also says,
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلاَّ فَرِيقاً مِّنَ الْمُوْمِنِينَ
And indeed Iblis did prove true his thought about them:and they followed him, all except a group of true believers. (34:20).