(Book# 697) [ مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا ‘আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি। We see you but a man like ourselves.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 697)
[ مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا
‘আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি।
We see you but a man like ourselves.]
www.motaher21.net

وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖۤ ۫ اِنِّیۡ لَکُمۡ نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۙ۲۵﴾
আর অবশ্যই আমরা নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘ নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী,’
And We had certainly sent Noah to his people, [saying], ” Indeed, I am to you a clear warner.
اَنۡ لَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّا اللّٰہَ ؕ اِنِّیۡۤ اَخَافُ عَلَیۡکُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ اَلِیۡمٍ ﴿۲۶﴾
তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করো না, আমি তোমাদের উপর এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি।
That you not worship except Allah . Indeed, I fear for you the punishment of a painful day.”
فَقَالَ الۡمَلَاُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِہٖ مَا نَرٰىکَ اِلَّا بَشَرًا مِّثۡلَنَا وَ مَا نَرٰىکَ اتَّبَعَکَ اِلَّا الَّذِیۡنَ ہُمۡ اَرَاذِلُنَا بَادِیَ الرَّاۡیِ ۚ وَ مَا نَرٰی لَکُمۡ عَلَیۡنَا مِنۡ فَضۡلٍۭ بَلۡ نَظُنُّکُمۡ کٰذِبِیۡنَ ﴿۲۷﴾
তার সম্প্রদায়ের মধ্যে যেসব নেতৃস্থানীয় লোক অবিশ্বাসী ছিল, তারা বলল, ‘আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি। আর আমরা দেখছি যে, শুধু ঐ লোকেরাই না বুঝে তোমার অনুসরণ করছে, যারা আমাদের মধ্যে নিতান্তই হীন। আর আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব আমরা দেখছি না; বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করছি।’
So the eminent among those who disbelieved from his people said, ” We do not see you but as a man like ourselves, and we do not see you followed except by those who are the lowest of us [and] at first suggestion. And we do not see in you over us any merit; rather, we think you are liars.”

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
২৫-২৭ নং আয়াত:-
مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا
‘আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি।
We see you but a man like ourselves.

২৫-২৭ নং আয়াতের তাপসীর।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা নূহ

(عليه السلام)

ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। শুরুতেই তাঁর কথা নিয়ে আসার কারণ হল তিনি উলূল আযম নাবীদের প্রথম, তিনিই ছিলেন পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। তাঁর পূর্বে আর কোন রাসূল প্রেরণ করা হয়নি, যাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁরা নাবী ছিলেন। তিনি স্বজাতিকে ৯৫০ বছর তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করেছেন। তাই তাঁর মাঝে নাবী ও আল্লাহ তা‘আলার পথে আহ্বানকারীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কিভাবে দাওয়াত দিতে হবে, দাওয়াতী কাজেকী পরিমাণ ধৈর্য ধরতে হবে এসবের পূর্ণ উপমা তাঁর জীবনীতে রয়েছে। তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছিল সতর্ককারীরূপে যেন তিনি মুশরিকদেরকে সতর্ক করেন যে, তারা যেন মূর্তিপূজা ছেড়ে দেয়। আর নূহ (عليه السلام) সর্ব প্রথম তাঁর সম্প্রদায়কে এই দাওয়াতই দিয়েছিলেন যে, তারা যেন এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে, তাঁকে ভয় করে চলে এবং তাঁর (নূহ-এর) আনুগত্য করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূহের শুরুর দিকে উল্লেখ করেছেন।

নূহ (عليه السلام)

বললেন, যদি তোমরা আমার প্রতি ঈমান আনয়ন না কর এবং মূর্তিপূজা ছেড়ে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত না কর তবে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।

তাঁর কথার জবাবে উঁচু শ্রেণি ও ক্ষমতাসীন নেতৃস্থানীয় (যেমন পরবর্তী নাবীদের ক্ষেত্রে উচ্চ শ্রেণি ও ক্ষমতাসীন নেতৃস্থানীয় কাফিররা বলেছিল) কাফির নেতারা বলল যে, তুমি এক আল্লাহ তা‘আলার দিকে আমাদেরকে আহ্বান করছ, নিজেকে নাবী দাবী করছ অথচ তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ, আর আমাদের মধ্যে যারা নিম্ন শ্রেণির লোক তারা ব্যতীত আর কেউ তোমার অনুসরণ করবে না। এটাই ছিল তাদের নিকট সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় যে, একজন সাধারণ লোক যার কোন ধন-সম্পদ নেই, যার কোন রাজত্ব নেই সে কী করে নাবী হতে পারে? নাবী হবেন কোন ফেরেশতা বা তিনি একজন উচ্চ বংশের অধিকারী হবেন বা তার অনেক সম্পদ থাকবে। (যেমন অত্র সূরার ১২ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে) আর এটাই ছিল তাদের ঈমান আনয়নের পথে প্রধান বাধা। তাই তারা বলল: সমাজের নিম্নশ্রেণি ও দরিদ্র লোক ছাড়া কেউ তোমার অনুসরণ করবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَكَذٰلِكَ مَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَآ لا إِنَّا وَجَدْنَآ اٰبَا۬ءَنَا عَلٰٓي أُمَّةٍ وَّإِنَّا عَلٰٓي اٰثٰرِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ)

“অনুরূপভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত: আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের ওপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:২৩)

কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু মুসলিমরা বিশ্বাস করতে চায় না যে, অন্যান্য নাবীদের মত আমাদের নাবীও মাটির তৈরি। অথচ মক্কার কাফিররাও বিশ্বাস করত আমাদের নাবী সাধারণ একজন মানুষ, আব্দুল্লাহর ঔরসে আমিনার গর্ভে জন্ম নিয়েছে। অথচ নাবীদের এটা একটা নিদর্শন বলা চলে যে, সাধারণ লোক নাবী হওয়া এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণির লোকেরা তাঁর অনুসরণ করবে এবং সমৃদ্ধশালী লোকেরা তাঁকে অস্বীকার করবে। তখন তারা ঈমান আনল না; এবং তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং বলল যে, আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। আর তারা বলে,

(قَالُوْآ أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُوْنَ)

“তারা বলল:‎ ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিম্ন শ্রেণির লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?’’ (সূরা শুয়ারা ২৬:১১১)

যুগে যুগে নাবীদের অনুসরণ করেছে সমাজের দরিদ্র ও নিম্ন শ্রেণির লোকেরা, সমাজের প্রভাবশালী ও নেতৃত্বস্থানীয়রা নাবীদের দাওয়াত বর্জন করেছে এবং তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেছে। রোমের বাদশাহ হিরাকল আবূ সুফিয়ানকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে জিজ্ঞেসকালে বলল: সমাজের সম্মানিত সবল লোকেরা তাঁর অনুসরণ করে না দুর্বল শ্রেণির লোকেরা? আবূ সুফিয়ান বলল: দুর্বল শ্রেণির লোকেরা। এ কথা শুনে হিরাকল বলল: রাসূলদের অনুসারী এরূপ লোকেরাই হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী হা: ৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭৭৩)

তাদের কথার জবাবে নূহ (عليه السلام) বললেন: যদি আমি আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি আমাকে নিজ রহমত (নবুওয়াত) দান করেন, আর তোমরা যদি তা বিশ্বাস না কর তাহলে তোমাদের অন্তরে তা গেঁথে দেয়া বা তোমাদেরকে দীনের অনুসারী বানানো সম্ভব নয়। আর আমি যতই তোমাদের উপকার করতে চাই না কেন যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ না কর এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথে না নিয়ে আসেন তাহলে কোনই কাজে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْٓ إِنْ أَرَدْتُّ أَنْ أَنْصَحَ لَكُمْ إِنْ كَانَ اللّٰهُ يُرِيْدُ أَنْ يُّغْوِيَكُمْ ط هُوَ رَبُّكُمْ)

‘‘আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক।” (সূরা হূদ ১১:৩৪)

আর আমি আমার রবের দিকে দাওয়াতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না। হয়তো তোমরা বলতে পারো যে, নবুওয়াতের দাবী করার উদ্দেশ্য হল অর্থ উপার্জন করা। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার কাফিরদেরকেও একথা বলেছিলেন। (সূরা সাবা ৩৪:৪৭) আর যারা আমার প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে আমি তোমাদের কথা অনুপাতে তাড়িয়ে দিতে পারি না। যদি আমি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে শাস্তি দেবেন তা থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে নিষেধ করেছেন। মক্কার কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুরূপ দাবী করেছিল ফলে আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেছিলেন

(وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه۫)

“যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে তুমি বিতাড়িত কর না।” (সূরা আনয়াম ৬:৫২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه۫ وَلَا تَعْدُ عَيْنٰكَ عَنْهُمْ )

“তুমি নিজকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদেরই সাথে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা সৌন্দর্য কামনা করে তাদের হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:২৮) সুতরাং তাদেরকে পৃথক করে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলিনি যে, আমার নিকট আল্লাহ তা‘আলার ধন-ভাণ্ডার রয়েছে এবং এ কথাও বলি না, আমি গায়েব জানি আর আমি কোন ফেরেশতাও নই। সুতরাং তোমাদের কোন কিছু করার ক্ষমতাই আমার নেই। যাবতীয় ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার হাতে। আমি শুধু তোমাদেরকে তাঁর দিকে আহ্বান করছি। তবে যারা ঈমান আনবে তারা এই ঈমান আনয়নের কারণে আখিরাতে জান্নাতের চির সুখ লাভ করবে। আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদেরকে দুনিয়াতেও মর্যাদাবান করতে পারেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. নূহ (عليه السلام) পৃথিবীতে প্রথম প্রেরিত রাসূল, তাঁর জাতিরাই সর্বপ্রথম সৎব্যক্তিদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে শির্কে লিপ্ত হয়।
২. নাবীদের অনুসরণ সাধারণত দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাই করে এবং ধনীরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে।
৩. অহংকার পতনের মূল, যেমন অহংকার করে সত্য না গ্রহণ করার কারণে নূহ (عليه السلام)-এর পুত্র কেন‘আনের পতন হয়েছে।
৪. ঈমানদার ব্যক্তি যদি গরীবও হয় তবু সে ধনী কাফিরের চেয়ে সম্মানিত। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ধন-সম্পদ ও রূপ-সৌন্দর্যের লক্ষ্য করেন না বরং লক্ষ্য করেন বান্দার অন্তর ও আমল।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

২৫-২৭ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে আল্লাহ তাআ’লা হযরত নূহের (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন। সর্বপ্রথম ভূ-পৃষ্ঠে মুশরিকদেরকে মূর্তি পূজা হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে যাঁকে তাদের কাছে রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছিল তিনিই ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)। তিনি তাঁর কওমের কাছে এসে বলেনঃ “তোমরা যদি গায়রুল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ না কর তবে আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর পতিত হবে। দেখো, তোমরা শুধু আল্লাহ তাআ’লার ইবাদত করতে থাকো। যদি তোমরা এর বিরুদ্ধাচরণ কর তবে আমি তোমাদের উপর কিয়ামতের দিনের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি।” তাঁর এ কথার উত্তরে তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় কাফিররা তাকে বললো: “হে নূহ (আঃ)! তুমি কোন ফেরেশতা তো নও। তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং এটা কিরূপে সম্ভব যে, আমাদের সবকে বাদ দিয়ে তোমার মতো শুধু একজন লোকের কাছে আল্লাহর ওয়াহী আসবে? আর আমরা তো স্বচক্ষে দেখছি যে, ইতর শ্রেণীর লোকেরাই শুধু তোমার দলে যোগ দিচ্ছে। কোন ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত লোক তোমার দলভুক্ত নয়। যারা তোমার দলে যোগ দিচ্ছে তারা কিছু না বুঝেসুঝে তোমার মজলিসে উঠাবসা করছে। এবং তোমার কথায় ‘হাঁ’ বলে দিচ্ছে। তা ছাড়া আমরা লক্ষ্য করছি যে, এই নতুন ধর্ম তোমাদের কোন উপকারেই আসছে না। না এর ফলে তোমাদের আর্থিক কোন উন্নতি হচ্ছে, না চরিত্র ও সৃষ্টির দিক দিয়ে তোমরা আমাদের ওপর কোন মর্যাদা লাভ করছ। বরং আমাদের ধারণায় তোমরা সব মিথ্যাবাদী, তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছ যে, ভাল কাজ করলে এবং আল্লাহর উপাসনায় লেগে থাকলে পরকালে উত্তম বিনিময় লাভ করা যাবে, আমাদের ধারণায় এ সব কিছুই মিথ্যা। হযরত নূহের (আঃ) উপর কাফিরদের এটাই ছিল আপত্তি। কিন্তু এটা তাদের অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক। যদি নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই হক ও সত্যকে কবুল করে নেয় তবে কি সত্যের মর্যাদা কমে যাবে? সত্য সত্যই থাকবে, তা গ্রহণকারী বড় লোকই হোক বা ছোট লোকই হোক। বরং সত্য কথা তো এটাই যে, সত্যের অনুসরণকারীরাই হচ্ছে ভদ্র লোক। হোক না তারা দরিদ্র ও মিসকীন। পক্ষান্তরে সত্য থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তারাই হচ্ছে ইতর ও অভদ্র। হোক না তারা সম্পদশালী ও শাসকগোষ্ঠী। হা, সত্য ঘটনা এটাই যে, প্রথমে দরিদ্র ও মিসকীন লোকেরাই সত্যের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে। আর সম্পদশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা এর বিরোধিতা করে। আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় পাক কালামে বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! এইরূপই তোমার পূর্বে যে কোন বস্তী বা এলাকাতেই আমি রাসূল পাঠিয়েছি, সেই বস্তীর বড় ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা বলেছে আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে আমরা এই দ্বীনের উপরই পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণকারী।”

রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস যখন আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞাস করেনঃ “নুবওয়াতের দাবিদার লোকটির অনুসরণ করছে সম্ভ্রান্ত লোকেরা, না দরিদ্র ও দুর্বল লোকেরা?” উত্তরে তিনি বলেন যে, দুর্বল ও দরিদ্র লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে। এর উপর হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করেন যে, রাসূলদের অনুসারী এরূপ লোকেরাই হয়ে থাকে।

সত্যকে তাড়াতাড়ি কবুল করলে কোন দোষ নেই। সত্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হওয়ার পর তা গ্রহণ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজনই বা কি? বরং প্রত্যেক বুদ্ধিমানের কাজ তো এটাই হওয়া উচিত যে, সে সর্বাগ্রে ও তাড়াতাড়ি হককে কবুল করে নেবে। এ ব্যাপারে বিলম্ব করা মুখতা ও নির্বুদ্ধিতাই বটে। আল্লাহ তাআ’লার প্রত্যেক নবীই খুবই স্পষ্ট ও খোলাখুলী দলিল প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করেছিলেন। হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যাকেই আমি ইসলামের দিকে আহবান করেছি সে-ই ঐ ব্যাপারে কিছু না কিছু সঙ্কোচ বোধ করেছে। শুধু আবু বকর (রাঃ) ছিলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি এই ব্যাপারে মোটেই কোন সঙ্কোচ বোধ করেননি।” অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কোনই সন্দেহ পোষণ করেননি। বরং ইসলামের দাওয়াত পাওয়া মাত্রই তিনি তা কবুল করে নিয়েছিলেন। কারণ, তিনি সুস্পষ্ট বিষয় অবলোকন করেছিলেন। তাই তিনি তাড়াতাড়ি তা গ্রহণ করেছিলেন।

(আরবি) আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছিনা। অর্থাৎ হযরত নূহের (আঃ) কওমের তাঁর উপর তৃতীয় আপত্তি এই ছিল যে, তারা তাদের মতে তাঁর মধ্যে কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পাচ্ছে না। এটাও তাদের অন্ধত্বের কারণেই ছিল। তারা সত্যের অবলোকন হতে ছিল সম্পূর্ণ অন্ধ। সুতরাং তারা সত্যকে দেখতেও পাচ্ছিল না এবং শুনতেও পাচ্ছিল না। বরং তারা অজ্ঞতার অন্ধকারের মধ্যে উদ্ভান্ত হয়ে ফিরছিল। তারা হচ্ছে অপবাদদানকারী, মিথ্যাবাদী এবং ইতর লোক। পরকালে তারাই হবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ প্রসঙ্গে সূরা আ’রাফের ৮ রুকূ’র টীকাগুলো সামনে রাখলে ভালো হয়।

# এ সূরার শুরুতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখেও এ এক কথাই উচ্চারিত হয়েছে।
# মক্কার লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যে মূর্খ জনোচিত আপত্তি উত্থাপন করতো এখানেও সেই একই আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমাদেরই মতো একজন মামুলি পর্যায়ের লোক, খায় দায়, চলাফেরা করে, ঘুমায় আবার জেগে থাকে, ছেলেমেয়ের বাপ হয়, তাকে আমরা কেমন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী নিযুক্ত হয়ে এসেছেন বলে মেনে নিতে পারি? (দেখুন সূরা ইয়াসীন ১১ টীকা )

# মক্কার বড় বড় ও উঁচু শ্রেণীর লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে কথা বলতো এখানেও তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তারা বলতো, এর সাথে কারা আছে? ক’জন মাথা গরম ছোকরা, যাদের দুনিয়ার কোন অভিজ্ঞতাই নেই। অথবা কয়েকজন গোলাম এবং নিম্ন শ্রেণীর কিছু সাধারণ মানুষ, যাদের বুদ্ধিশুদ্ধি নেই এবং বিশ্বাসের দিক দিয়েও কম জোর। (দেখুন সূরা আন’আম ৩৪-৩৭ টীকা এবং সূরা ইউনূস ৭৮ টীকা )।

# তোমরা বলে থাকো, আমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত এবং যারা আমাদের পথ অবলম্বন করেনি তারা আল্লাহর গযবের সম্মুখীন হয়েছে। তোমাদের এসব কথার কোন আলামত আমাদের নজরে পড়ে না। অনুগ্রহ যদি হয়ে থাকে তাহলে তা আমাদের প্রতি হয়েছে। কারণ আমরা ধন-দৌলত ও শান-শওকতের অধিকারী এবং একটি বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। অন্যদিকে তোমরা কপর্দক শূন্য দেউলিয়ার দল, কোন্ বিষয়ে তোমরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছো? তোমাদের আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে করা হবে কেন?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এটা সেই তাওহীদের দাওয়াত, যা প্রত্যেক নবী নিজ নিজ সম্প্রদায়কে দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, (وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُون) অর্থাৎ, আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রসূল, তাঁর প্রতি এই অহী ব্যতীত প্রেরণ করিনি যে, আমি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মা’বুদ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।” (সূরা আম্বিয়া ২১:২৫)

[২] অর্থাৎ যদি আমার প্রতি ঈমান না আনো এবং এই তাওহীদের দাওয়াত গ্রহণ না কর, তাহলে আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।

# [১] এটা সেই সন্দেহ, যা এর পূর্বে কয়েক স্থানে উল্লিখিত হয়েছে, তা হল কাফেরদের নিকট কোন মানুষের নবী ও রসূল হওয়াটা বড় আশ্চর্যের বিষয় ছিল। যেমন বর্তমানে বিদআতীদেরকেও আশ্চর্য লাগে এবং তারা রসূল (সাঃ)-এর মানুষ হওয়ার কথা অস্বীকার করে।

[২] সর্বযুগে সত্যের ইতিহাসে এ কথা বিদ্যমান যে, শুরুতে দ্বীনের উপর ঈমান আনয়নকারী সর্বদা তারাই হয়ে থাকে, যাদেরকে সমাজে অসহায় ও হীন মনে করা হয় এবং সম্মানী ও সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিরা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। এমনকি এটা পয়গম্বরগণের অনুসারীদের পরিচয় বলে গণ্য হয়েছে। সুতরাং যখন রোমের বাদশাহ হিরাকল আবু সুফিয়ানকে নবী (সাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার সময় এ কথাটিও জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, “সমাজের সম্মানিত সবল লোকেরা তাঁর আনুগত্য করছে, না দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা?” তখন আবু সুফিয়ান উত্তরে বলেছিলেন, “দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা।” এ কথা শুনে হিরাকল বলেছিলেন, “রসূলদের অনুসারী এরূপ লোকেরাই হয়ে থাকে।” (বুখারী) কুরআন কারীমেও বর্ণনা করা হয়েছে যে, সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিরাই সর্বপ্রথম পয়গম্বরদেরকে মিথ্যাজ্ঞান করতে থেকেছে। (যুখরুফঃ ২৩) আর মু’মিনদের পার্থিব অবস্থা এই ছিল বলে কাফেররা তাঁদেরকে তুচ্ছ ও হেয় প্রতিপন্ন করত। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে সত্যের অনুসারীগণই সম্মানী ও মর্যাদাসম্পন্ন, তাতে তাঁরা ধন-সম্পদের দিক থেকে যতই দুর্বল হন। আর সত্য অস্বীকারকারীরাই হীন ও অসম্মানী; যদিও তারা পার্থিব বিষয়ে সমৃদ্ধিশালী হয়।

[৩] হকপন্থী মু’মিনগণ যেহেতু আল্লাহ ও রসূলের বিধানের বিপরীত নিজের জ্ঞান ও রায় ব্যবহার করে না, সেহেতু বাতিলপন্থীরা ভাবে যে, এরা বুঝার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে না; বরং আল্লাহর রসূল তাদেরকে যে দিকে ঘুরায় সে দিকেই ঘুরে যায়, যে বস্তু থেকে বিরত থাকতে বলে, তা থেকে বিরত থাকে। অথচ এটাও মু’মিনদের একটি বড় গুণ; বরং ঈমানের অপরিহার্য চাহিদা। কিন্তু কাফের ও বাতিলপন্থীদের নিকট উক্ত গুণও একটি ত্রুটি।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] নূহ আলাইহিস সালাম যখন তার জাতিকে ঈমানের দাওয়াত দিলেন, তখন জাতি তার নবুওয়াত ও রেসালাতের উপর কয়েকটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল। নুহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে তাদের প্রতিটি উক্তির উপযুক্ত জবাব দান করেন। আলোচ্য আয়াতসমুহে এ ধরনের একটি কথোপকথন বর্ণিত হয়েছে।

[২] অর্থাৎ কওমের জাহেল লোকেরা সমাজের দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীকে ইতর ও ছোটলোক সাব্যস্ত করেছিল- যাদের কাছে পার্থিব ধন-সম্পদ ও বিষয় বৈভব ছিল না। মূলত তা ছিল তাদের জাহেলী চিন্তাধারার ফল। প্রকৃতপক্ষে ইজ্জত কিংবা অসম্মান ধন দৌলত বিদ্যা বুদ্ধির অধীন নয়। ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সম্পদ এবং সম্মানের মোহ একটি নেশার মত, যা অনেক সময় সত্য ন্যায়কে গ্রহন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, সত্য ও ন্যায় হতে বিচ্যুত করে। দরিদ্র ও দুর্বলদের সম্মুখে যেহেতু এরূপ কোন অন্তরায় থাকে না কাজেই তারাই সর্বাগ্রে সত্য ন্যায়কে বরণ করতে এগিয়ে আসে। প্রাচীনকাল হতে যুগে যুগে দরিদ্র দুর্বলরাই সমসাময়িক নবীগণের উপর সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিল। [কুরতুবী]

অনুরূপভাবে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস যখন ঈমানের আহবান সম্বলিত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চিঠি লাভ করল, তখন গুরুত্ব সহকারে নিজেই সেটার তদন্ত তাহকীক করতে মনস্থ করে। কেননা, সে তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাব পাঠ করে সত্য নবীগণের আলামত ও লক্ষণাদি সম্পর্কে পুঙ্খানুপঙ্খরূপে পারদর্শী ছিল। কাজেই তৎকালে আরব দেশের যেসব ব্যবসায়ী সিরিয়ায় উপস্থিত ছিল, তাদের একত্রিত করে উক্ত আলামত ও লক্ষণাদি সম্পর্কে কতিপয় প্রশ্ন করে। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল যে, তার অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সমাজের দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণী ঈমান এনেছে নাকি ধনী শ্রেণী? তারা উত্তরে বলেছিল, বরং দরিদ্র ও দূর্বল শ্রেণী। তখন হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করল, এটা তো সত্য রাসূল হওয়ার লক্ষণ। কেননা, যুগে যুগে দরিদ্র দুর্বল শ্রেণীই প্রথমে নবীগণের আনুগত্য স্বীকার করেছে। [দেখুন, বুখারীঃ ৭, ৫১, মুসলিমঃ ১৭৭৩]

মোদ্দাকথা: দরিদ্র ও দুর্বল লোকদেরকে ইতর এবং হেয় মনে করা চরম মূর্খতা ও অন্যায়। প্রকৃতপক্ষে ইতর ও ঘৃণিত তারাই যারা স্বীয় সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা মালিককে চিনে না, তার নির্দেশ মেনে চলে না। সুফিয়ান সওরী রাহেমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ইতর ও হীন কে? তিনি উত্তর দিলেন- যারা বাদশাহ ও রাজকর্মচারীদের খোশামোদ- তোষামোদে লিপ্ত হয়, তারাই হীন ও ইতর। আল্লামা ইবনুল আরাবী রাহেমাহুল্লাহ বলেন, যারা দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাসিল করে তারাই হীন। পুনরায় প্রশ্ন করা হল- সবচেয়ে হীন কে? তিনি জবাব দিলেন যে ব্যক্তি অন্যের পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজের দ্বীন ও ঈমানকে বরবাদ করে। ইমাম মালেক রাহেমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের নিন্দা-সমালোচনা করে, সে-ই ইতর ও অর্বাচীন। [কুরতুবী] কারণ, সাহাবায়ে কিরামই সমগ্র উম্মতের সর্বাপেক্ষা হিত সাধনকারী। তাদের মাধ্যমেই ঈমানের অমূল্য দৌলত ও শরীআতের আহকাম সকলের কাছে পৌছেছে।

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 25-27
مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا

We see you but a man like ourselves,
The Story of Nuh and His Conversation with His People

Allah, the Exalted tells;

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ

And indeed We sent Nuh to his people (and he said):

Allah, the Exalted, informs about Prophet Nuh. He was the first Messenger whom Allah sent to the people of the earth who were polytheists involved in worshipping idols. Allah mentions that he (Nuh) said to his people,

إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ

I have come to you as a plain warner.

meaning, to openly warn you against facing Allah’s punishment if you continue worshipping other than Allah.

Thus, Nuh said.
أَن لاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ اللّهَ

That you worship none but Allah;

This can also be seen in his statement,

إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ

surely, I fear for you the torment of a painful Day.

This means, “If you all continue doing this, then Allah will punish you with a severe punishment in the Hereafter.”

Then Allah says.

فَقَالَ الْمَلُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قِوْمِهِ

The chiefs who disbelieved among his people said;

The word `chiefs’ (Al-Mala’u) here means the leaders and the heads of the disbelievers.

They said,

مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا

We see you but a man like ourselves,

This means, “You are not an angel. You are only a human being, so how can revelation come to you over us. We do not see anyone following you except the lowliest people among us, like the merchants, weavers and similar people. No people of nobility, or rulers among us follow you. These people who follow you are not known for their intelligence, wit, or sharp thinking. Rather, you merely invited them (to this Islam) and they responded to your call and followed you (ignorantly).”

This is the meaning of their statement,

وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلاَّ الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ

nor do we see any follow you but the meanest among us and they (too) followed you without thinking.

The statement, “without thinking,”

means that they merely followed the first thing that came to their minds.

Concerning the statement,

وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ

And we do not see in you any merit above us,

In this they are saying, “We do not see that you (and your followers) have any virtuous status above us in your physical appearance, your character, your provisions, or your condition, since you accepted this (new) religion of yours.”

بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ

in fact we think you are liars.

This means, “We think you are lying about that which you are claiming for yourselves of righteousness, piety, worship and happiness in the abode of the Hereafter when you arrive there.”

This was the response of the disbelievers to Nuh and his followers. This is a proof of their ignorance and their deficiency in knowledge and intelligence. For verily, the truth is not to be rejected because of the lowly status of those who follow it. Verily, the truth is correct in itself, regardless of whether its followers are of low status, or nobility.

Actually, the reality concerning which there is no doubt, is that the followers of the truth are the noble ones, even though they may be poor. On the other hand, those who reject the truth are the lowly wretches, even though they may be wealthy. Thus, we see that usually the weakest of people are the ones who follow the truth, while the nobility and high-class people usually are opposed to the truth.

This is as Allah says,

وَكَذَلِكَ مَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَأ إِنَّا وَجَدْنَأ ءَابَأءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى ءَاثَـرِهِم مُّقْتَدُونَ

And similarly, We sent not a warner before you to any town (people) but the luxurious ones among them said:”We found our fathers following a certain way and religion, and we will indeed follow their footsteps.” (43:23)

When Heraclius, the emperor of Rome, asked Abu Sufyan Sakhr bin Harb about the qualities of the Prophet, he said to him, “Are his followers the noble people, or the weak?”

Abu Sufyan said, “They are the weakest of them.”

Then Heraclius said, “They (weak ones) are the followers of the Messengers.”

Concerning their statement,
بَادِيَ الرَّأْيِ
(without thinking),

In reality this is not objectionable, or something derogatory, because the truth when it is made clear, does not leave room for second-guessing, or excessive thinking. Rather, it is mandatory that it should be followed and this is the condition of every pious, intelligent person. No one continues doubtfully pondering the truth (after it is made clear) except one who is ignorant and excessively critical. The Messengers – Allah’s peace and blessings be upon them all – only delivered what was obvious and clear.

Concerning Allah’s statement,
وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ
(And we do not see in you any merit above us),

They did not see this (the virtue of accepting Islam) because they were blind from the truth. They could not see, nor could they hear. Rather, they were wavering in their skepticism. They were wandering blindly in the darkness of their ignorance. They, in reality, were the slanderers and liars, lowly and despicable. Therefore, in the Hereafter they will be the greatest losers.

Leave a Reply