(Book# 705) [ اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِہٖ عِلۡمٌ আমি তোমার নিকট এমন বিষয়ে আবেদন করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, I seek refuge in You from asking that of which I have no knowledge.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 705)
[ اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِہٖ عِلۡمٌ
আমি তোমার নিকট এমন বিষয়ে আবেদন করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই,
I seek refuge in You from asking that of which I have no knowledge.]
www.motaher21.net
وَ نَادٰی نُوۡحٌ رَّبَّہٗ فَقَالَ رَبِّ اِنَّ ابۡنِیۡ مِنۡ اَہۡلِیۡ وَ اِنَّ وَعۡدَکَ الۡحَقُّ وَ اَنۡتَ اَحۡکَمُ الۡحٰکِمِیۡنَ ﴿۴۵﴾
আর নূহ নিজ প্রতিপালককে ডেকে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার এই পুত্রটি আমারই পরিবারভুক্ত। আর তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য এবং তুমি সমস্ত বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক।’
And Noah called to his Lord and said, “My Lord, indeed my son is of my family; and indeed, Your promise is true; and You are the most just of judges!”
قَالَ یٰنُوۡحُ اِنَّہٗ لَیۡسَ مِنۡ اَہۡلِکَ ۚ اِنَّہٗ عَمَلٌ غَیۡرُ صَالِحٍ ٭۫ۖ فَلَا تَسۡـَٔلۡنِ مَا لَـیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ اِنِّیۡۤ اَعِظُکَ اَنۡ تَکُوۡنَ مِنَ الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۴۶﴾
তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হে নূহ! এই ব্যক্তি তোমার পরিবারভুক্ত নয়, সে অসৎকর্মপরায়ণ। অতএব তুমি আমার কাছে সে বিষয়ে আবেদন করো না, যে বিষয়ে তোমার কোনই জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি অজ্ঞ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
He said, “O Noah, indeed he is not of your family; indeed, he is [one whose] work was other than righteous, so ask Me not for that about which you have no knowledge. Indeed, I advise you, lest you be among the ignorant.”
قَالَ رَبِّ اِنِّیۡۤ اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ وَ اِلَّا تَغۡفِرۡ لِیۡ وَ تَرۡحَمۡنِیۡۤ اَکُنۡ مِّنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۴۷﴾
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট এমন বিষয়ে আবেদন করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, আর তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর এবং আমার প্রতি দয়া না কর, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হয়ে যাব।’
[Noah] said, “My Lord, I seek refuge in You from asking that of which I have no knowledge. And unless You forgive me and have mercy upon me, I will be among the losers.”

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৪৫-৪৭ নং আয়াত:-
اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِہٖ عِلۡمٌ
আমি তোমার নিকট এমন বিষয়ে আবেদন করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই,
I seek refuge in You from asking that of which I have no knowledge.
৪৫-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এটা মনে রাখা দরকার যে, হযরত নূহের (আঃ) এই প্রার্থনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাঁর ডুবন্ত ছেলের সঠিক অবস্থা অবগত হওয়া। তিনি প্রার্থনায় বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এটা তো প্রকাশ্য ব্যাপার যে, আমার ছেলেটি আমার পরিবারভুক্ত ছিল। আর আমার পরিবারকে রক্ষা করার আপনি ওয়াদা করেছিলেন এবং এটাই অসম্ভব ব্যাপার যে, আপনার ওয়াদা মিথ্যা হবে। তাহলে আমার এই ছেলেটি কি করে এই কাফিরদের সাথে ডুবে গেল?” উত্তরে আল্লাহ তাআ’লা বললেনঃ “তোমার যে পরিবারকে রক্ষা করার আমার ওয়াদা ছিল তোমার এই ছেলেটি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমার এই ওয়াদা ছিল মুমিনমু’মিনদেরকে নাজাত দেয়া। আমি বলেছিলামঃ (আরবি)

অর্থাৎ তোমার পরিবারবর্গকেই নৌকায় উঠিয়ে নাও, কিন্তু তাকে নয় যার সম্বন্ধে পূর্বে নির্দেশ হয়ে গেছে। (১১: ৪০) তোমার এই ছেলে কুফরী করার কারণে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল যাদের সম্পর্কে পূর্বেই আমি জানতাম যে, তারা কুফরী করবে এবং পানিতে ডুবে যাবে।

এটাও স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, কতকগুলি লোকের মতে সে প্রকৃত পক্ষে হযরত নূহের (আঃ) পুত্র ছিলই না। কেননা, তাঁর বীর্যে তার জন্ম হয় নাই, বরং ব্যভিচারের মাধ্যমে সে জন্মগ্রহণ করেছিল। আবার কারো কারো উক্তি এই যে, সে ছিল হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত পুত্র। কিন্তু এই দু’টি উক্তিই ভুল। বহু গুরুজন স্পষ্ট ভাষায় এটাকে ভুল বলেছেন। এমনকি হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এবং বহু পূর্ববর্তী গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, কোন নবীর স্ত্রী কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয় নাই। আল্লাহ তাআ’লার (আরবি) (নিশ্চয় সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়) এই উক্তির তাৎপর্য এটাই যে, তিনি হযরত নূহের (আঃ) যে পরিবারকে রক্ষা করার ওয়াদা করেছিলেন তাঁর ঐ ছেলেটি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এটাই সঠিক ও আসল কথা। এ ছাড়া অন্য দিকে যাওয়া ভুল ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ এমনই মর্যাদাবান যে, তার মর্যাদা কোন নবীর ঘরে ব্যভিচারিনী স্ত্রী রাখা কখনো কবুল করতে পারে না। এটা চিন্তা করার বিষয় যে, হযরত আয়েশার (রাঃ) ব্যাপারে যারা অপবাদ দিয়েছিল তাদের উপর আল্লাহ পাক কতই না রাগান্বিত হয়েছিলেন। হযরত নূহের (আঃ) ঐ ছেলেটি তার পরিবারভুক্ত না হওয়ার কারণ স্বয়ং কুরআন পাকই বর্ণনা করেছে যে, তার আমল ভাল ছিল না।

ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এক কিরআতে (আরবি) রয়েছে। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) (আরবি) পড়তে শুনেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছিঃ (আরবি)

অর্থাৎ (আল্লাহ পাকের উক্তি) “হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের নফসের উপর বাড়াবাড়ি করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ে যেয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুণাহ ক্ষমা করে দেবেন। (৩৯: ৫৩) আর এতে তিনি কোনই পরওয়া করেন না। (আরবি) অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এটাকে (আরবি) পড়েছেন (ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে এই হাদীসটিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন) উম্মে সালমা (রাঃ) হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন। আর বাহ্যতঃ দেখা যায় যে, তিনিই হচ্ছেন আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ)। কারণ উম্মে সালমা ছিল তাঁর কুনইয়াত বা পিতৃপদবী যুক্ত নাম। তবে এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) কা’বার পার্শ্বে অবস্থান করছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁকে “(আরবি)” আল্লাহ পাকের এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন যে, এর দ্বারা ব্যভিচার উদ্দেশ্য নয়। বরং হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রীর খিয়ানত তো ছিল এই যে, সে লোকদেরকে বলতো: “এই লোকটি (হযরত নূহ আঃ) পাগল। আর হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রীর খিয়ানত ছিল এই যে, তাঁর কাছে মেহমানরা আসলে সে জনগণকে খবর দিয়ে দিত। অতঃপর তিনি (আরবি) পাঠ করেন। (এটা আবদুর রায্‌যাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইরকে (রাঃ) হযরত নূহের (আঃ) পুত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা সত্যবাদী। তিনি তাকে নূহের (আঃ) পুত্রই বলেছেন। সুতরাং নিঃসন্দেহে সে হযরত নূহের (আঃ) ঔরসজাত পুত্রই ছিল। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ নূহ (আঃ) স্বীয় পুত্রকে ডাকতে লাগল।” (১১: ৪২) আর এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে, ‘কোন নবীরই স্ত্রী ব্যভিচার করে নাই’ এই উক্তি কোন কোন আলেমের রয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে এরূপই বর্ণিত আছে। ইবনু জারীরেরও (রঃ) এটাই পছন্দনীয় মত। আর প্রকৃতপক্ষে সঠিক ও বিশুদ্ধ উক্তি এটাই বটে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে আমার পরিজনদেরকে এ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে। এখন ছেলে তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তাকেও রক্ষা করো।

# তোমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এরপর আর কোন আবেদন নিবেদন খাটবে না। আর তুমি নির্ভেজাল জ্ঞান ও পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকো।
# ব্যাপারটা ঠিক এ রকম, যেমন এক ব্যক্তির শরীরের কোন একটা অংশ পচে গেছে। ডাক্তার অঙ্গটি কেটে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন রোগী ডাক্তারকে বলছে, এটাতো আমার শরীরের একটা অংশ, আপনি কেটে ফেলে দেবেন? ডাক্তার জবাবে বলেন, এটা তোমার শরীরের অংশ নয়। কারণ এটা পচে গেছে। এ জবাবের অর্থ কখনো এ নয় যে, প্রকৃতপক্ষে এ অঙ্গটির শরীরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এর অর্থ হবে, তোমার শরীরের জন্য সুস্থ ও কার্যকর অঙ্গের প্রয়োজন, পচা অঙ্গের নয়। কারণ পচা অঙ্গ একদিকে যেমন শরীরের কোন কাজে আসে না তেমনি অন্যদিকে বাদবাকি সমস্ত শরীরটাকেও নষ্ট করে দেয়। কাজেই যে অঙ্গটি পচে গেছে সেটি আর এ অর্থে তোমার শরীরের কোন অংশ নয় যে অর্থে শরীরের সাথে অঙ্গের সম্পর্কের প্রয়োজন হয়। ঠিক এমনিভাবেই একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ পিতাকে যখন একথা বলা হয় যে, এ ছেলেটি তোমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত নয়, কারণ চরিত্র ও কর্মের দিক দিয়ে সে ধ্বংস হয়ে গেছে তখন এর অর্থ এ হয় না যে, এর মাধ্যমে তার ছেলে হবার বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে এর অর্থ শুধু এতটুকুই হয় যে, বিকৃত ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোক তোমার সৎ পরিবারের সদস্য হতে পারে না। সে তোমার রক্ত সম্পর্কীয় পরিবারের একজন সদস্য হতে পারে কিন্তু তোমার নৈতিক পরিবারের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। আর আজ যে বিষয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সেটি বংশগত বা জাতি-গোষ্ঠীগত কোন বিরোধের ব্যাপার নয়। এক বংশের লোকদের রক্ষা করা হবে এবং অন্য বংশের লোকদের ধ্বংস করে দেয়া হবে, ব্যাপারটি এমন নয়। বরং এটি হচ্ছে কুফরী ও ঈমানের বিরোধের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার। এখানে শুধুমাত্র যারা সৎ তাদেরকে রক্ষা করা হবে এবং যারা অসৎ ও নষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে খতম করে দেয়া হবে।

ছেলেকে অসৎকর্ম পরায়ণ বলে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। স্থুল দৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা সন্তানকে ভালোবাসে ও লালন করে শুধু এজন্য যে, তারা তাদের পেটে বা ঔরসে জন্ম নিয়েছে এবং তাদের সাথে তাদের রক্ত সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সৎ বা অসৎ হওয়ার ব্যাপারটি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু মু’মিনের দৃষ্টি হতে হবে সত্যের প্রতি নিবদ্ধ। তাকে তো ছেলেমেয়েদেরকে এ দৃষ্টিতে দেখতে হবে যে, এরা আল্লাহর সৃষ্টি কতিপয় মানুষ। প্রাকৃতিক নিয়মে আল্লাহ এদেরকে তার হাতে সোর্পদ করেছেন। এদেরকে লালন-পালান করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তৈরী করতে হবে। এখন তার যাবতীয় পরিশ্রম ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও তার ঘরে জন্ম নেয়া কোন ব্যক্তি যদি সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তৈরী হতে না পারে এবং যিনি তাকে মু’মিন বাপের হাতে সোর্পদ করেছিলেন নিজের সেই রবেরই বিশ্বস্ত খাদেম হতে না পারে, তাহলে সেই বাপকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তার সমস্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এরপর এ ধরনের ছেলে-মেয়েদের সাথে তার মানসিক যোগ থাকার কোন কারণই থাকতে পারে না।

তারপর সংসারের সবচেয়ে প্রিয় ছেলেমেয়েদের ব্যাপারটি যখন এই তখন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে মু’মিনের দৃষ্টিভঙ্গি যা কিছু হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ঈমান একটি চিন্তাগত ও নৈতিক গুণ। এ গুণের প্রেক্ষিতেই মু’মিনকে মু’মিন বলা হয়। মু’মিন হওয়ার দিক দিয়ে অন্য মানুষের সাথে তার নৈতিক ও ঈমানী সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্কই নেই। রক্ত-মাংসের সম্পর্কযুক্ত কেউ যদি তার সাথে এ গুণের ক্ষেত্রে সম্পর্কিত হয় তাহলে নিঃসন্দেহে সে তার আত্মীয়। কিন্তু যদি সে এ গুণ শূন্য হয় তাহলে মু’মিন শুধুমাত্র রক্ত-মাংসের দিক দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক রাখবে। তার হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক তার সাথে হতে পারে না। আর ঈমান ও কুফরীর বিরোধের ক্ষেত্রে যদি সে তার মুখোমুখি দাঁড়ায় তাহলে এ অবস্থায় সে এবং একজন অপরিচিত কাফের তার চোখে সমান হয়ে দেখা দেবে।

# এ উক্তি দেখে কারো এ ধারণা করা ঠিক হবে না যে, হযরত নূহের (আ) মধ্যে ঈমানী চেতনার অভাব ছিল অথবা তাঁর ঈমানে জাহেলিয়াতের কোন গন্ধ ছিল। আসল কথা হচ্ছে, নবীগণও মানুষ। আর মু’মিনের পূর্ণতার জন্য যে সর্বোচ্চ মানদণ্ড কায়েম করা হয়েছে সর্বক্ষণ তার উচ্চতম শিখরে আরোহণ করে থাকা কোন মানুষের সাধ্যায়াত্ত নয়। কোন কোন সময় কোন নাজুক মনস্তাত্বিক অবস্থায় নবীর মতো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকও মুহূর্তকালের জন্য হলেও নিজের মানবিক দুর্বলতার কাছে পরাস্ত হন। কিন্তু যখনই তিনি অনুভব করেন অথবা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর মধ্যে এ অনুভূতি জাগানো হয় যে, তিনি কাংখিত মানের নিচে নেমে যাচ্ছেন তখনই তিনি তাওবা করেন এবং নিজের ভুলের সংশোধন করে নেবার ব্যাপারে এক মুহূর্তও ইতস্তত করেন না। হযরত নূহের নৈতিক উচ্চমানের এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে যে, জওয়ান ছেলেকে চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখছেন! এ দৃশ্য দেখে তাঁর কলিজা ফেটে যাবার উপক্রম হচ্ছে। কিন্তু যখনই আল্লাহ সবধান করে জানিয়ে দেন, যে ছেলে হককে ত্যাগ করে বাতিলের সহযোগী হয়েছে তাকে নিছক তোমার ঔরসজাত বলেই নিজের ছেলে মনে করা একটি জাহেলী ভাবাবেগ ছাড়া আর কিছুই নয়। তখনই তিনি নিজের মানসিক আঘাতের ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে ইসলামের কাংখিত চিন্তা ও ভাবধারার দিকে ফিরে আসেন।

# নূহের ছেলের এ ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে তাঁর ইনসাফ যে কি পরিমাণ পক্ষপাতহীন এবং তাঁর ফায়সালা যে কত চূড়ান্ত হয়ে থাকে তা বলেছেন। মক্কার মুশরিকরা মনে করতো, আমরা যাই করি না কেন আমাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে পারে না। কারণ আমরা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আওলাদ এবং বড় বড় দেব-দেবীর ভক্ত। ইহুদী ও খৃস্টানরাও এমনি ধরনের কিছু ধারণা পোষণ করতো এবং এখনো পোষণ করে থাকে। অনেক ভ্রষ্টাচারী মুসলমানও এ ধরনের কিছু মিথ্যা ধারণার ওপর নির্ভর করে বসে আছে। তারা মনে করে, আমরা অমুক বুজুর্গের আওলাদ এবং অমুক বুজুর্গের ভক্ত। কাজেই তাদের সুপারিশই আমাদের আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে বাঁচাবে। কিন্তু এখানে এর বিপরীতে যে দৃশ্য দেখানো হচ্ছে তা হচ্ছে এই যে, একজন মহান মর্যাদাশালী নবী নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে ডুবে যেতে দেখছেন এবং অস্থির হয়ে সন্তানের গোনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহর দরবার থেকে জবাবে তাঁকে ধমক দেয়া হচ্ছে। বাপের পয়গম্বরীর মর্যাদাও ছেলেকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারছে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# নূহ (আঃ) পিতৃ-বাৎসল্যের আবেগে পড়ে আল্লাহর দরবারে উক্ত দু’আ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি ভেবে ছিলেন যে, সম্ভবতঃ সে মুসলমান হয়ে যাবে, যার জন্য তার সম্পর্কে উক্ত আবেদন করেছিলেন।
# [১] নূহ (আঃ) বংশীয় সম্পর্ক অনুযায়ী তাকে আপন পুত্র বলেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঈমানের কারণে দ্বীনী সম্পর্কের দিক থেকে তাঁর সেই কথা নাকচ করে বলেছিলেন যে, সে তোমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ একজন নবীর প্রকৃত পরিবারভুক্ত তারা, যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাতে সে যেই হোক না কেন। আর যদি কোন ব্যক্তি তাঁর প্রতি ঈমান না আনে, যদিও সে নবীর পিতা, পুত্র বা স্ত্রীও হয়, তবুও সে নবীর পরিবারভুক্ত নয়।

[২] এই কথা দ্বারা পরিবারভুক্ত না হওয়ার কারণ বর্ণনা করে দিয়েছেন। এতে জানা গেল যে, যার ঈমান ও নেক আমল নেই, তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে আল্লাহর নবীগণও বাঁচাতে পারবেন না। বর্তমানে মানুষ পীর-ফকীর ও বুযুর্গদের সাথে সম্পর্ককেই পরিত্রাণের জন্য যথেষ্ট মনে করে এবং (সহীহ আকীদাহ ও) নেক আমলের কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করে না। অথচ (সহীহ আকীদাহ ও) নেক আমল ছাড়া নবীর সাথে বংশীয় আত্মীয়তাও কোন কাজে আসবে না। তাহলে অনবীদের সাথে এরূপ সম্পর্ক আর কি কাজে আসবে?

[৩] এর দ্বারা বুঝা যায় যে, নবী ‘আ-লিমুল গায়ব’ হন না। তাঁরা ততটুকু জানেন যতটুকু অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ইলম দান করেন। নূহ (আঃ) যদি পূর্ব থেকে জানতেন যে, তাঁর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না, তাহলে অবশ্যই তিনি তা থেকে বিরত থাকতেন।

[৪] এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নূহ (আঃ)-কে কৃত নসীহত। যার উদ্দেশ্য হল, তাঁকে সেই উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করা, যা আমলকারী বিজ্ঞ লোকদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে।

# যখন নূহ (আঃ) অবগত হলেন যে, তাঁর প্রার্থনা ঠিক হয়নি, তখন অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নিলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর দয়া ও ক্ষমার প্রার্থী হলেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমার পরিজনদেরকে এ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবেন। এখন ছেলে তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তাকেও রক্ষা করুন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এরপর আর কোন আবেদন নিবেদন খাটবে না। আর আপনি নির্ভেজাল জ্ঞান ও পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। সে অনুসারে আপনি কারও জন্য নাজাতের নির্দেশ দিয়েছেন আর কারও জন্য দিয়েছেন ডুবে যাওয়ার নির্দেশ। [কুরতুবী] অথবা আয়াতের অর্থ, সুতরাং আপনি আমার জন্য পূর্বে যে ওয়াদা করেছেন সেটা পূর্ণ করুন আর আমার ছেলেকে নাজাত দিন। [তাবারী]

# [১] এ আয়াতাংশের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ এখানে সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়’ বলে বুঝানো হয়েছে যে, যাদেরকে নাজাত দেয়ার ওয়াদা আমি করেছিলাম সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [ইবন কাসীর] এর কারণ হলো, সে কাফের ছিল। আর মুক্তি বা নাজাতের ব্যাপারে কাফেরের সাথে ঈমানদারের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাছাড়া পূর্ব আয়াতে এসেছে যে, “আপনার পরিবারকেও (তাতে উঠান) কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের ছাড়া”। সে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে কুফরি ও তার পিতার অবাধ্যতার কারণে ডুবে মরন।‘ [ইবন কাসীর]

[২] এটি হচ্ছে কুফরী ও ঈমানের বিরোধের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার। এখানে শুধুমাত্র যারা সৎ তাদেরকে রক্ষা করা হবে এবং যারা অসৎ ও নষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে খতম করে দেয়া হবে। তার আমল যেহেতু খারাপ সুতরাং রক্ষা করা যাবে না। সে নিয়্যত ও আমলে আপনার বিপরীত কাজ করেছে। [তাবারী] তাছাড়া এ আয়াতের আরেকটি অর্থও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তা হলো, এখানে (إنه) বলে নূহ আলাইহিসসালামের দোআকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ হে নূহ আপনি যে আপনার কাফের সন্তানের জন্য আমার শরনাপন্ন হয়েছেন এ কাজটা সৎ কাজ নয়। আপনার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কিছু চাওয়া ভাল কাজ নয়। [তাবারী; সা’দী]

[৩] অর্থাৎ যে জিনিসের পরিণাম আপনার জানা নেই যে এটা ভাল-কি মন্দ বয়ে নিয়ে আসবে এমন কাজে আপনি এগিয়ে যাবেন না। এমন কিছু আমার কাছে চাইবেন না। আমি আপনাকে নসীহত করছি এমন এক নসীহত যা দ্বারা আপনি পূর্ণতা লাভ করবেন এবং জাহেলদের কর্মকাণ্ড থেকে নাজাত পাবেন। তখন নূহ আলাইহিস সালাম যা করেছেন সে জন্য ভীষণ লজ্জিত হলেন এবং বললেন, ‘হে আমার রব! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি, এ জন্য আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। সুতরাং ক্ষমা ও রহমতের দ্বারাই কেউ নাজাত পেতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারে [সা’দী] আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, নূহ আলাইহিস সালাম তার সন্তানের নাজাতের জন্য যে ডাক দিয়েছিলেন সেটা যে হারাম ছিল তা তার জানা ছিল না। তিনি মনে করেননি যে, পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত “যারা যুলুম করেছে তাদের সম্পর্কে আপনি আমাকে কোন আবেদন করবেন না; তারা তো নিমজ্জিত হবে” সেটা দ্বারা তাকে তার সন্তানের ব্যাপারে দোআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে তার কাছে দুটি নির্দেশের মধ্যে বিরোধ লেগে গিয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন, তার সন্তানের জন্য নাজাতের আহবান পূর্বোক্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে “আর আপনার পরিবারকে” নৌকাতে উঠিয়ে নিন, সে ঘোষণায় তার সন্তান অন্তর্ভুক্ত হবে। সে হিসেবে তিনি নাজাতের আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, সে যালেমদের অন্তর্ভুক্ত, তার জন্য কোন প্রকার দোআ করা যাবে না। তখন তিনি সে অনুসারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং তার দয়া তলব করেন। [ফাতহুল কাদীর; সা’দী] এতে স্পষ্ট হলো যে, একজন মহান মর্যাদাশালী নবী নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে ডুবে যেতে দেখছেন এবং অস্থির হয়ে সন্তানের গোনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহর দরবার থেকে জবাবে তাকে ধমক দেয়া হচ্ছে। কারণ একটিই, সে ছেলের মধ্যে রয়েছে শির্ক ও কুফর। সুতরাং যার কাছে থাকবে শির্ক ও কুফর তার জন্য কেউ কোন সুপারিশ করতেও সক্ষম হবে না। [দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা: মাজমু ফাতাওয়া ১/১৩১]

# উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একটি মাসআলা জানা গেল যে, দো’আকারীর কর্তব্য হচ্ছে যার জন্য ও যে কাজের জন্য দো’আ করা হবে তা জায়েয হালাল ও ন্যায়সঙ্গত কি না তা জেনে নেয়া। সন্দেহজনক কোন বিষয়ের জন্য দোআ করা নিষিদ্ধ। এ আয়াত থেকে আরো জানা গেল যে, মুমিন ও কাফেরের মধ্যে যতই নিকটাত্মীয়ের সম্পর্ক থাক না কেন ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে উক্ত আত্মীয়তার প্রতি লক্ষ্য করা যাবে না। কোন ব্যক্তি যতই সম্ভান্ত বংশীয় হোক না কেন যতই বড় বুযুর্গের সন্তান হোক না কেন, যদি সে ঈমানদার না হয় তবে দ্বীনী দৃষ্টিকোণ হতে তার আভিজাত্য ও নবীর নিকটাত্মীয় হওয়ার কোন মূল্য নেই। ঈমান, তাকওয়া ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হবে। যার মধ্যে এসব গুণের সমাবেশ হয়েছে সে পর হলেও আপনজন। অন্যথায় আপন আত্মীয় হলেও সে পর। দ্বীনী ক্ষেত্রেও যদি আত্মীয়তার লক্ষ্য রাখা হতো তাহলে ভাইয়ের উপর ভাই কখনো তলোয়ার চালাতো না। বদর ওহুদ ও আহযাবের লড়াই তো একই বংশের লোকদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। যাতে করে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইসলাম ভ্রাতৃত্ব ও জাতীয়তা বংশ, বর্ণ, ভাষা বা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে না, বরং ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্মশীলতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে। তারা যে কোন বংশের, যে কোন গোত্রের, যে কোন বর্ণের, যে কোন দেশের, যে কোন ভাষাভাষী হোক না কেন সবাই মিলে এক জাতি একই ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ। তাই আল্লাহর বাণী “সকল মুসলিম ভাই ভাই” [সূরা হুজুরাতঃ ১০] আয়াতের এটাই মর্মকথা। অপরদিকে যারা ঈমান ও সৎকর্মশীলতা হতে বঞ্চিত, তারা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের সদস্য নয়।

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 45-47
اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِہٖ عِلۡمٌ
I seek refuge in You from asking that of which I have no knowledge.

A Return to the Story of the Son of Nuh and mentioning what transpired between Nuh and Allah concerning Him

Allah tells:

وَنَادَى نُوحٌ رَّبَّهُ

And Nuh called upon his Lord,

This was a request for information and an inquiry from Nuh concerning the circumstances of his son’s drowning.

فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابُنِي مِنْ أَهْلِي

and said, “O my Lord! Verily, my son is of my family!”

This means, “Verily, You promised to save my family and Your promise is the truth that does not fail. Therefore, how can he (my son) be drowned and You are the Most Just of the judges!”

وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ

And certainly, Your promise is true, and You are the Most Just of the judges.”
قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ

He (Allah) said:”O Nuh! Surely, he is not of your family…”

This means, “He (your son) is not of those whom I promised to save. I only promised you that I would save those of your family who believe.”

For this reason Allah said,

وَأَهْلَكَ إِلاَّ مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ

and your family except him against whom the Word has already gone forth. (11:40)

إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ

verily, his work is unrighteous,

فَلَ تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ

so ask not of Me that of which you have no knowledge! I admonish you, lest you should be one of the ignorant.”

Thus, for his son, it had already been decreed that he would be drowned due to his disbelief and his opposition to his father, the Prophet of Allah, Nuh peace be upon him.

Concerning Allah’s statement,
إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ
(Surely, he is not of your family),

meaning that he (Nuh’s son) was not among those whom Allah promised to save.

Abdur-Razzaq recorded that Ibn Abbas said,

“He was the son of Nuh, but he opposed him in deeds and intention.”

Ikrimah said in some of the modes of recitation it said here,

إِنَّهُ عَمَلَ عَمَلً

غَيْرَ صَالِحٍ

“Verily, he (Nuh’s son) worked deeds that were not righteous.”

قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ

وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ
Nuh said:”O my Lord! I seek refuge with You from asking You that of which I have no knowledge. And unless You forgive me and have mercy on me, I would indeed be one of the losers.

Leave a Reply