أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 711)
[ قَالُوۡا یٰصٰلِحُ
তারা বলল, ‘হে সালেহ!’
They said, “O Salih,”]
www.motaher21.net
قَالُوۡا یٰصٰلِحُ قَدۡ کُنۡتَ فِیۡنَا مَرۡجُوًّا قَبۡلَ ہٰذَاۤ اَتَنۡہٰنَاۤ اَنۡ نَّعۡبُدَ مَا یَعۡبُدُ اٰبَآؤُنَا وَ اِنَّنَا لَفِیۡ شَکٍّ مِّمَّا تَدۡعُوۡنَاۤ اِلَیۡہِ مُرِیۡبٍ ﴿۶۲﴾
তারা বলল, ‘হে সালেহ! তুমি তো ইতিপূর্বে আমাদের মধ্যে আশার পাত্র ছিলে, তুমি কি আমাদেরকে ঐ বস্তুর উপাসনা করতে নিষেধ করছ; যার উপাসনা আমাদের পিতৃপুরুষেরা করে এসেছে? আর যে ধর্মের দিকে তুমি আমাদেরকে আহবান করছ, বস্তুতঃ আমরা তো সে সম্বন্ধে গভীর সন্দেহ ও দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে রয়েছি।
They said, “O Salih, you were among us a man of promise before this. Do you forbid us to worship what our fathers worshipped? And indeed we are, about that to which you invite us, in disquieting doubt.”
قَالَ یٰقَوۡمِ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ کُنۡتُ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّیۡ وَ اٰتٰىنِیۡ مِنۡہُ رَحۡمَۃً فَمَنۡ یَّنۡصُرُنِیۡ مِنَ اللّٰہِ اِنۡ عَصَیۡتُہٗ ۟ فَمَا تَزِیۡدُوۡنَنِیۡ غَیۡرَ تَخۡسِیۡرٍ ﴿۶۳﴾
তিনি বললেন, ‘ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে জানাও, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, তবে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে, আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই? কাজেই তোমরা তো শুধু আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছ ।
He said, “O my people, have you considered: if I should be upon clear evidence from my Lord and He has given me mercy from Himself, who would protect me from Allah if I disobeyed Him? So you would not increase me except in loss.
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৬২-৬৩ নং আয়াত:-
قَالُوۡا یٰصٰلِحُ
তারা বলল, ‘হে সালেহ!’
They said, “O Salih,”
৬২-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তোমার বুদ্ধিমত্তা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা, গাম্ভীর্য, দৃঢ়তা ও মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা আশা করেছিলাম তুমি ভবিষ্যতে একজন বিরাট নামী-দামী ব্যক্তি হবে। একদিকে যেমন তুমি বিপুল বৈষয়িক ঐশ্বর্যের অধিকারী হবে তেমনি অন্যদিকে আমরাও অন্য জাতি ও গোত্রের মোকাবিলায় তোমার প্রতিভা ও যোগ্যতা থেকে লাভবান হবার সুযোগ পাবো। কিন্তু তুমি এ তাওহীদ ও আখেরাতের নতুন ধূয়া তুলে আমাদের সমস্ত আশা-আকাংখা বরবাদ করে দিয়েছো। উল্লেখ্য, মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কেও এ ধরনের কিছু চিন্তা তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যেও পাওয়া যেতো। তারাও নবুওয়াত লাভের পূর্বে তাঁর উন্নত যোগ্যতা ও গুণাবলীর স্বীকৃতি দিতো। তারা মনে করতো এ ব্যক্তি ভবিষ্যতে একজন বিরাট ব্যবসায়ী হবে এবং তার বিচক্ষণতা ও বিপুল বুদ্ধিমত্তা আমাদেরও অনেক কাজে লাগবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি তাওহীদ ও আখেরাত এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর দাওয়াত দিতে থাকলেন তখন তারা তাঁর ব্যাপারে কেবল নিরাশই হলো না বরং তাঁর প্রতি হয়ে উঠলো অসন্তুষ্ট। তারা বলতে লাগলো, বেশ ভালো কাজের লোকটি ছিল কিন্তু কি জানি তাকে কি পাগলামিতে পেয়ে বসলো, নিজের জীবনটাও বরবাদ করলো এবং আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাও ধূলায় মিশিয়ে দিল।
# এ মাবুদগুলো ইবাদাত লাভের হকদার কেন এবং কেন এদের পূজা করা উচিত— এর যুক্তি হিসেবে একথা বলা হয়েছে। এখানে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের যুক্তি উপস্থাপন পদ্ধতির পার্থক্য একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হযরত সালেহ (আ) বলেছিলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে বসবাস করিয়েছেন। এর জবাবে এ মুশরিকরা বলছে, আমাদের এ মাবুদরাও ইবাদাত লাভের হকদার এবং এদের ইবাদাতও পরিত্যাগ করা যেতে পারে না। কারণ বাপ-দাদাদের আমল থেকে এদের ইবাদাত চলে আসছে। অর্থাৎ গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলা উচিত। কারণ শুরুতে একটি নির্বোধ এ পথে চলেছিল। তাই এখন এ পথে চলার জন্য আর এর চেয়ে বেশী কোন যুক্তির প্রয়োজন নেই যে, দীর্ঘকাল ধরে বহু বেকুফ এ পথেই চলছে।
# এ সন্দেহ ও সংশয় কোন্ বিষয়ে ছিল? এখানে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এর কারণ, সবাই সন্দেহের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেকের সন্দেহের ধরন ছিল আলাদা। সত্যের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ দাওয়াত দেবার পর লোকদের মানসিক প্রশান্তি খতম হয়ে যায় এবং একটি ব্যাপক অস্থিরতা জন্ম নেয়। যদিও প্রত্যেকের অনুভূতি অন্যের থেকে ভিন্নতর হয় কিন্তু এ অস্থিরতার অংশ প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পেয়ে যায়। ইতিপূর্বে লোকেরা যেমন নিশ্চিন্ত মনে গোমরাহীতে লিপ্ত থাকতো এবং নিজেরা কি করে যাচ্ছে একথা একবার চিন্তা করার প্রয়োজন অনুভব করতো না, ঠিক এ ধরনের নিশ্চিন্ততা এ সত্যের দাওয়াত দানের পর আর অব্যাহত থাকতো না এবং থাকতে পারে না। জাহেলী ব্যবস্থার দুর্বলতার ওপর সত্যের আহবায়কের নির্দয় সমালোচনা, সত্যকে প্রমাণ করার জন্য তাঁর শক্তিশালী ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি, তারপর তাঁর উন্নত চরিত্র, দৃঢ় সংকল্প, ধৈর্য-স্থৈর্য ও ব্যক্তিগত চরিত্র মাধুর্য, তাঁর অত্যন্ত স্পষ্ট সরল ও সত্যনিষ্ঠ ভূমিকা এবং তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা, যার প্রভাব তাঁর চরম হঠকারী ও কট্টর বিরুদ্ধবাদীরও মনের গভীরে শিকড় গেড়ে বসে, সর্বোপরি সমকালীন সমাজের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গের তাঁর কথায় প্রভাবিত হতে থাকা এবং তাদের জীবনে সত্যের দাওয়াতের প্রভাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সূচিত হওয়া— এসব জিনিস মিলেমিশে একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর ফলে যারা সত্যের আগমনের পরও পুরাতন জাহেলিয়াতের ঝাণ্ডা উঁচু করে রাখতে চায় তাদের মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে যায়।
# যদি আমি নিজের অন্তরদৃষ্টির বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দান করেছেন সেই জ্ঞানের বিরুদ্ধে নিছক তোমাদের খুশী করার জন্য গোমরাহীর পথ অবলম্বন করি তাহলে শুধু আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারবে না তাই নয় বরং তোমাদের কারণে আমার অপরাধ আরো বেশী বেড়ে যাবে। উপরন্তু আমি তোমাদের সোজা পথ বাতলে দেবার পরিবর্তে উল্টো আরো জেনে বুঝে তোমাদের গোমরাহ করেছি এ অপরাধে আল্লাহ আমাকে আরো অতিরিক্ত শাস্তি দেবেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
তখন তারা সালেহ (عليه السلام)-কে বলল: তুমি আমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি যে, আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। অর্থাৎ যেহেতু নাবীরা সচ্চরিত্রবান, আমানতদার ও উত্তম আখলাকের হয়ে থাকে যেমন আমাদের নাবী ছিলেন; তাই তারা সালেহ (عليه السلام)-এর কাছে ভাল কিছু আশা করেছিল। ভাল আশা বলতে তাদের মুআফেক হবে, তাদের মা‘বূদদেরকে গালিগালাজ করবে না ইত্যাদি। আর তুমি কিনা আমাদেরকে আমাদের উপাস্যের ইবাদত করতে নিষেধ করছ। অথচ ইতোপূর্বে এদের ইবাদত করেছে আমাদের পূর্বপুরুষেরা। সুতরাং তারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি সন্দেহ পোষণ করল এবং সত্য দীনের আনুগত্য করতে অমান্য করল।
তখন সালেহ (عليه السلام) তাদের এ কথার জবাবে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে সত্য প্রমাণ নিয়ে আসি এবং আমি যদি হকের ওপর থাকি তাহলেও কি তোমরা আমার কথা মানবে না? তবুও কি তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে না? عَلٰي بَيِّنَةٍ বলতে ঈমান ও ইয়াকিন যা আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে দান করেন আর রহমত বলতে নবুওয়াতকে বুঝানো হয়েছে। আর যদি এই সমস্ত প্রমাণ আমার নিকট থাকাবস্থায় আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে দাওয়াত না দিই এবং তোমাদের দাবী অনুপাতে দাওয়াতী কাজ ছেড়ে দিই, তাহলে এ কারণে তখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? যদি আমি এমনটিই করি তাহলে তোমরা আমার কোনই উপকার করতে পারবে না; বরং তোমাদের দ্বারা আমার ক্ষতিই বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে আহ্বান করেই যাব।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬২-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত সালেহ্ (আঃ) ও তাঁর কওমের মধ্যে যে কথাবার্তা চলছিল আল্লাহ তাআ’লা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা হযরত সালেহকে (আঃ) বললো: এসব কথা তুমি মুখে এনো না। এর পূর্বে তো আমরা তোমার কাছে অনেক কিছু আশা করছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সবই গুড়ে বালি। তুমি আমাদেরকে আমাদের পিতৃ পুরুষদের রীতিনীতি ও পূজাপার্বন থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তুমি আমাদেরকে যে নতুন পথ দেখাচ্ছ; তাতে আমাদের বড় রকমের সন্দেহ রয়েছে। তাদের এ কথা শুনে হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ জেনে রেখোঁরেখো যে, আমি বড় দলিলের উপর রয়েছি। আমার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত নিদর্শন রয়েছে। আমার সত্যবাদিতার উপর আমার মানসিক প্রশান্তি ও স্থিরতা রয়েছে। আমার কাছে রয়েছে মহান আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাত রূপ রহমত। এখন যদি আমি তোমাদেরকে এর দাওয়াত না দেই এবং আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করি, আর তোমাদেরকে তাঁর ইবাদতের দিকে আহবান না করি, তবে কে এমন আছে যে, আমাকে সাহায্য করতে পারে এবং তাঁর শাস্তি থেকে আমাকে রক্ষা করতে পারে? তোমরা আমার কোনই উপকারে লাগছে না, তোমরা শুধু আমার ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# যেহেতু নবীগণ আপন সম্প্রদায়ে স্বভাব-চরিত্র, আমানত ও দ্বীনের ব্যাপারে সর্বোত্তম হন, সেহেতু তাঁর নিকট থেকে সম্প্রদায়ের লোকেরা অনেক কল্যাণের আশাবাদী হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সালেহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় তাঁকে এই কথা বলেছিল। কিন্তু তওহীদের দাওয়াত দেওয়া মাত্র তাদের উক্ত আশাস্থল, তাদের চোখের কাঁটা হয়ে গেল এবং সালেহ (আঃ) তাদেরকে যে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, সেই দ্বীনের (তওহীদের) প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করল।
# [১] بينةٍ (প্রমাণ) এর অর্থ হল সেই ঈমান ও ইয়াকীন, যা আল্লাহ তাআলা পয়গম্বরগণকে দান করেন এবং রহমত (করুণা) এর অর্থ নবুঅত। যেমন এর পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
[২] এখানে অবাধ্য হওয়ার অর্থ এই যে, যদি আমি তোমাদেরকে সত্যের দাওয়াত ও এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেওয়া ছেড়ে দিই, যেমন তোমরা চাচ্ছ।
[৩] অর্থাৎ, যদি আমি এরূপ করি, তাহলে তোমরা আমার কোন উপকার করতে পারবে না, বরং তোমরা আমার আরো অমঙ্গল ও ক্ষতিই বৃদ্ধি করবে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ “তাওহীদের দাওয়াত ও প্রতিমা পুজা থেকে আমাদের বারণ করার আগ পর্যন্ত আপনার সম্পর্কে আমাদের উচ্চাশা ছিল যে, আপনি আগামীতে আমাদের নেতৃত্ব দান করবেন।” [কুরতুবী] তারা এটাই বলতে চাচ্ছিল যে, আপনার বুদ্ধিমত্তা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা, গাম্ভীর্য ও মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা আশা করেছিলাম আপনি ভবিষ্যতে একজন বিরাট নামীদামী ব্যক্তি হবেন। একদিকে যেমন বিপুল বৈষয়িক ঐশ্বর্যের অধিকারী হবেন তেমনি অন্যদিকে আমরাও অন্য জাতি ও গোত্রের মোকাবিলায় আপনার প্রতিভা ও যোগ্যতা থেকে লাভবান হবার সুযোগ পাবো। কিন্তু আপনি এ তাওহীদ ও আখেরাতের নতুন ধূয়া তুলে আমাদের সমস্ত আশা-আকাংখা বরবাদ করে দিয়েছেন। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা বাল্যকাল হতেই নবীগণকে যোগ্যতা ও উন্নত স্বভাব চরিত্রের অধিকারী করে থাকেন। যার ফলে সবাই তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হতো। কিন্তু নবুওয়াতের দাবী ও মুর্তি পুজা থেকে বারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই সেসব লোক তার বিরোধিতা ও শক্ৰতা শুরু করেছিল। তাদের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি তাওহীদ ও আখেরাত এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর দাওয়াত দিতে থাকলেন তখন তারা তাঁর ব্যাপারে কেবল নিরাশই হলো না বরং তাঁর প্রতি হয়ে উঠলো অসন্তুষ্ট। তারা বলতে লাগলো, বেশ ভালো কাজের লোকটি ছিল কিন্তু কি জানি তাকে কি পাগলামিতে পেয়ে বসলো, নিজের জীবনটাও বরবাদ করলো এবং আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাও ধূলায় মিশিয়ে দিল। [দেখুন, তাবারী; সা’দী] আররের মুশরিকরাও অনুরূপ করেছিল। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের কথা ঘোষণা করার পূর্বে সমগ্র আরববাসী তাকে সত্যবাদী ও বিশ্বাসী মনে করত এবং ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কিন্তু যখনই তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানালেন তখনই তারা বিরোধিতা করতে লাগল।
[২] সালেহ্ আলাইহিসসালাম বলেছিলেন, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে বসবাস করিয়েছেন। এর জবাবে এ মুশরিকরা বলছে, এদের ইবাদতাও পরিত্যাগ করা যেতে পারে না। কারণ বাপ-দাদাদের আমল থেকে এদের ইবাদাত হতে চলে আসছে। তাছাড়া আপনি আমাদেরকে যে দিকে আহবান করছেন সেটা নিয়ে আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে আছি। তারা যেন এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে, যদি আমরা আপনার কথার সত্যতা জানতে পারতাম তবে অবশ্যই আপনার অনুসরণ করতাম। এটা অবশ্যই তাদের মিথ্যা কথা। কারণ, পরবর্তী আয়াতে সালেহ আলাইহিস সালাম তাদের কাছে বিষয়টি আরও খোলাসা করে বর্ণনা করেছেন। আসলে তারা এ সমস্ত মিথ্যাচার করেই যাচ্ছিল। [সা’দী ]
# [১] অর্থাৎ আমি আমার দাবীর ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত বিশ্বাসের উপর আছি। আর আমাকে আমার রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে নবুওয়াত ও রিসালাত। [সা’দী]
[২] অর্থাৎ যদি আমি আমার কাছে আসা স্পষ্ট প্রমাণের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দান করেছেন সেই জ্ঞানের বিরুদ্ধে নিছক তোমাদের খুশী করার জন্য গোমরাহীর পথ অবলম্বন করি তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারবে না। আমি যদি তোমাদেরকে হক ও একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত না দেই, তবে তোমরা এর দ্বারা আমার কোন উপকার করতে পারবে না। [ইবন কাসীর] বরং এভাবে তোমরা তো আমাকে কল্যাণের পথ থেকে বহু দূরে সরিয়ে দিবে এবং অনিষ্টতাই বৃদ্ধি করবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 62-63
قَالُوۡا یٰصٰلِحُ
They said, “O Salih,”
The Conversation between Salih and the People of Thamud
Allah says;
قَالُواْ يَا صَالِحُ
They said:”O Salih!
Allah, the Exalted, mentions what transpired in the discussion between Salih and his people. Allah informs of their ignorance and obstinacy in their statement,
قَدْ كُنتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَـذَا
You have been among us as a figure of good hope till this!
They were saying in this, “We had hope in your strong intellect before you began saying what you have said.”
أَتَنْهَانَا أَن نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ ابَاوُنَا
Do you (now) forbid us the worship of what our fathers have worshipped,
“what those who were before us were upon.”
وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ
But we are really in grave doubt as to that which you invite us.
This alludes to the great amount of doubt that they had.
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَى بَيِّنَةً مِّن رَّبِّي
He said:”O my people! Tell me, if I have a clear proof from my Lord…”
`In reference to what He (Allah) has sent me with to you, I am upon conviction and sure evidence.’
وَاتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَن يَنصُرُنِي مِنَ اللّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ
and there has come to me a mercy from Him, who then can help me against Allah, if I were to disobey Him!
`and abandon calling you to the truth and the worship of Allah alone. If I did so, you would not be able to bring me any benefit, nor increase me!
فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ
Then you increase me not but in loss.”
غَيْرَ تَخْسِيرٍ
(but in loss.)’
This means loss and ruin.