أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 713)
[ قَالُواْ سَلَمًا قَالَ سَلَمٌ
তারা বলল, ‘সালাম।’ তিনিও বললেন, ‘সালাম’।
They said:”Salaman.”
He answered, “Salamun.”]
www.motaher21.net
وَ لَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَاۤ اِبۡرٰہِیۡمَ بِالۡبُشۡرٰی قَالُوۡا سَلٰمًا ؕ قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنۡ جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِیۡذٍ ﴿۶۹﴾
আর অবশ্যই আমাদের ফিরিশ্তাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এসেছিল । তারা বলল, ‘সালাম।’ তিনিও বললেন, ‘সালাম ।’ অতঃপর বিলম্ব না করে তিনি এক কাবাবকৃত বাছূর নিয়ে আসলেন।
And certainly did Our messengers come to Abraham with good tidings; they said, “Peace.” He said, “Peace,” and did not delay in bringing [them] a roasted calf.
فَلَمَّا رَاٰۤ اَیۡدِیَہُمۡ لَا تَصِلُ اِلَیۡہِ نَکِرَہُمۡ وَ اَوۡجَسَ مِنۡہُمۡ خِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡا لَا تَخَفۡ اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمِ لُوۡطٍ ﴿ؕ۷۰﴾
অতঃপর তিনি যখন দেখলেন তাদের হাত সেটার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করলেন এবং তাদের সম্বন্ধে তাঁর মধ্যে ভীতি সঞ্ছার হল । তাঁরা বলল , ‘ ভয় করবেন না , আমরা তো লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’
But when he saw their hands not reaching for it, he distrusted them and felt from them apprehension. They said, “Fear not. We have been sent to the people of Lot.”
وَ امۡرَاَتُہٗ قَآئِمَۃٌ فَضَحِکَتۡ فَبَشَّرۡنٰہَا بِاِسۡحٰقَ ۙ وَ مِنۡ وَّرَآءِ اِسۡحٰقَ یَعۡقُوۡبَ ﴿۷۱﴾
আর তাঁর স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলেন , অতঃপর তিনি হেসে ফেললেন । অতঃপর আমরা তাকে ইস্হাকের ও ইস্হাকের পরবর্তী ইয়া’কূবের সুসংবাদ দিলাম।
And his Wife was standing, and she smiled. Then We gave her good tidings of Isaac and after Isaac, Jacob.
قَالَتۡ یٰوَیۡلَتٰۤیءَ اَلِدُ وَ اَنَا عَجُوۡزٌ وَّ ہٰذَا بَعۡلِیۡ شَیۡخًا ؕ اِنَّ ہٰذَا لَشَیۡءٌ عَجِیۡبٌ ﴿۷۲﴾
তিনি বললেন , ‘হায়, কি আশ্চর্য! সন্তানের জননী হব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এ আমার স্বামী বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত বাপার।
She said, “Woe to me! Shall I give birth while I am an old woman and this, my husband, is an old man? Indeed, this is an amazing thing!”
قَالُوۡۤا اَتَعۡجَبِیۡنَ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰہِ رَحۡمَتُ اللّٰہِ وَ بَرَکٰتُہٗ عَلَیۡکُمۡ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ ؕ اِنَّہٗ حَمِیۡدٌ مَّجِیۡدٌ ﴿۷۳﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র কাজে আপনি বিস্ময় বোধ করছেন ? হে নবী পরিবার ! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি তো প্রশংসার যোগ্য ও অত্যন্ত সম্মানিত।
They said, “Are you amazed at the decree of Allah ? May the mercy of Allah and His blessings be upon you, people of the house. Indeed, He is Praiseworthy and Honorable.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৬৯-৭৩ নং আয়াত:-
قَالُواْ سَلَمًا قَالَ سَلَمٌ
তারা বলল, ‘সালাম।’ তিনিও বললেন, ‘সালাম’।
They said:”Salaman.”
He answered, “Salamun.”
৬৯-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام)-কে সন্তানের সুসংবাদ দান এবং লূত (عليه السلام) ও তাঁর সম্প্রদায়ের অপকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা প্রেরণ করলেন লূত (عليه السلام)-এর অবাধ্য সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য। ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করার যাত্রা পথে ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নিকট উঠে গেলেন তাঁকে সু-সংবাদ দেয়ার জন্য। এ সুসংবাদটা ছিল পুত্র ইসহাক ও ইয়াকুবের সুসংবাদ। যেমন অত্র সূরার ৭১ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। ইবরাহীম (عليه السلام) জানতেন না এরা ফেরেশতা। তারা (ফেরেশতারা) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নিকট গিয়ে সালাম দিলেন এবং ইবরাহীম (عليه السلام)ও তাদের সালামের উত্তর দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইবরাহীম (عليه السلام) তাদের জন্য একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসলেন। এতে বুঝা যায় ইবরাহীম (عليه السلام) বড়ই মেহমানপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি তাদেরকে মানুষ মনে করে এ আয়োজন করেছিলেন। যদি জানতেন এরা আল্লাহ তা‘আলার ফেরেশতা তাহলে তিনি এ ব্যবস্থা করতেন না। এখান থেকেও বুঝা যাচ্ছে নাবীরা গায়েব জানেন না। আরো বুঝা যায় মেহমানের যথাসম্ভব সম্মান করা উচিত। মেহমানের কদর করাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। যখন ইবরাহীম (عليه السلام) খাবারের আয়োজন করার পর দেখলেন যে, তারা (ফেরেশতারা) সে দিকে হাত দিচ্ছে না অর্থাৎ সেখান থেকে তারা (ফেরেশতারা) খাচ্ছে না, তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে ভয় পাচ্ছিলেন। বলা হয় তাদের নিকট এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, কারো বাড়িতে আগত মেহমান যদি মেহমানি গ্রহণ না করে তাহলে বুঝা যাবে যে, আগত মেহমান কোন ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি। সূরা যারিয়ার ২৬-২৭ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে তাদের নিকট খাবার দেয়ার পর যখন দেখছেন তারা খাচ্ছে না, তখন তিনি বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন? সূরা হিজরের ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে আমরা আপনাদের আগমনে শংকিত। এমতাবস্থায় ফেরেশতারা ইবরাহীম (عليه السلام) কে অভয় দিয়ে বললেন: আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আল্লাহ তা‘আলার ফেরেশতা, আমরা অভিশপ্ত সম্প্রদায় লূত (عليه السلام)-এর জাতিকে শাস্তি দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি। তখন সারা (আলাইহাস সালাম) তথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি এই অভিশপ্ত জাতির ধ্বংসের কথা শুনে হাসলেন। কেউ কেউ বলেন, তাকে যে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে এজন্য তিনি হাসলেন।
ফেরেশতারা ইবরাহীম (عليه السلام)-এর স্ত্রী সারাকে পুত্র ইসহাক (عليه السلام)-এর সুসংবাদ দিলেন, এবং ইসহাকের ঘরে ইয়াকুব হবে এ সুসংবাদও দিলেন। তখন সারা (عليه السلام) বললেন যে, আমি এবং আমার স্বামী আমরা তো উভয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন সন্তান প্রসব করা তো একটা আশ্চর্যজনক বিষয়। আর এটাতো অসম্ভব বিষয়; যা পৃথিবীর বুকে বিরল। সূরা যারিয়াতের ২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে সারা বলল: আমি বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা। তাদের কথার জবাবে ফেরেশতারা বলল, আপনারা কি আল্লাহ তা‘আলার কাজের ব্যাপারে বিস্ময়বোধ করছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট এটা কোনই কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি শুধু বলেন, হও তাই হয়ে যায়। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّمَآ أَمْرُه۫ٓ إِذَآ أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَّقُوْلَ لَه۫ كُنْ فَيَكُوْنُ)
“বস্তুতঃ তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেনঃ “হও”, অমনি তা হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসীন৩৬:৮২) সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার কাজে আশ্চর্য হওয়ার কোনই কারণ নেই।
(أَهْلَ الْبَيْتِ) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর স্ত্রীকে এখানে ফেরেশতারা আহলে বাইত বলে সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্য বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে ১. স্ত্রী সর্বপ্রথম আহলে বাইতের অন্তর্ভ্ক্তু। ২. আহলে বাইতের জন্য বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করা ঠিক। যেমন সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পবিত্র স্ত্রীগণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবীরা গায়েব জানেন না। যদি জানতেন তাহলে ইবরাহীম (عليه السلام) ফেরেশতাদের জন্য ভূনা গোশত নিয়ে আসতেন না এবং লূত (عليه السلام)ও মেহমানদের জন্য চিন্তিত হতেন না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “যখন আমার দূতেরা ইবরাহীমের (আঃ) নিকট সুসংবাদ নিয়ে আসলো।” তাঁরা ছিলেন ফেরেশতা। একটি উক্তি এই রয়েছে যে, তাঁরা তাঁকে হযরত ইসহাকের (আঃ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় উক্তি এই আছে যে, তাঁরা তাঁকে হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছিলেন। প্রথম উক্তিটির সাক্ষী হচ্ছে আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তিঃ (আরবী)
অর্থাৎ “যখন ইবরাহীম (আঃ) হতে ভয় দূরীভূত হলো এবং তার কাছে সুসংবাদ আসলো, তখন সে লূতের (আঃ) কওমের ব্যাপারে আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলো। (১১ :৭৪) ফেরেশতারা এসে তাঁকে সালাম দিলেন। তিনিও তাদের সালামের জবাবে (আরবি) বললেন। ইলমে বায়ানের আলেমগণ বলেন যে, ফেরেশতাদের সালামের উত্তরে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সালামটাই উত্তম। কেননা, (আরবি) শব্দটি বা (আরবি) পেশ দিয়ে পড়ায় এতে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব এসেছে। সালাম বিনিময়ের পরেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের সামনে আতিথ্যরূপে গো-বৎসের ভাজা মাংস পেশ করেন। যখন তিনি দেখেন যে, নবাগত মেহমানদের হাত খাবারের দিকে বাড়ছে না তখন তিনি তাদেরকে অদ্ভুত ভাবতে লাগলেন এবং শঙ্কিত হলেন। হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংস সাধনের জন্যে যে ফেরেশতাদের পাঠান হয়েছিল তাঁরা যুবক মানুষের আকারে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করেছিলেন। তাঁরা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বাড়িতে আগমন করেন। তিনি তাদেরকে দেখে খুবই সম্মান করেন এবং তাড়াতাড়ি গো-বৎসের গোশত গরম পাথরে সেঁকে নিয়ে তাদের সামনে পেশ করেন। নিজেও তিনি তাঁদের সাথে দস্তরখানায় বসে পড়েন। তাঁর স্ত্রী হয়রত সারা’ তাদের পানাহার করাবার কাজে লেগে যান। এটা সর্বজন বিদিত যে, ফেরেশতারা পানাহার করেন না। সুতরাং তারা খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন এবং বলেনঃ “আমরা কোন খাদ্যের মূল্য না দেয়া পর্যন্ত তা খাই না।” হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “তা হলে মূল্য প্রদান করুন!” তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ এর মূল্য কত? তিনি উত্তরে বললেনঃ “বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা এবং খাওয়ার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা, এটাই হচ্ছে এর মূল্য।” তারা এ কথা শুনে হযরত জিবরাইল (আঃ) হযরত মীকাঈলের (আঃ) দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তারা পরস্পরে বলাবলি করেন যে, বাস্তবিকই তার মধ্যে এই যোগ্যতা রয়েছে যে, আল্লাহ তাআ’লা তাঁকে নিজের খলিল (দোস্ত) বানিয়ে নেবেন। তখনও তাঁরা যখন খাদ্য খেলেন না তখন বিভিন্ন প্রকারের ধারণা তাঁর অন্তরে জাগ্রত হলো। হযরত সারা’ (রঃ) যখন দেখলেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বয়ং তাঁদেরকে আহার করানোর কাজে লেগে রয়েছেন, তথাপি তাঁরা খাচ্ছেন না তখন তিনি হেসে উঠলেন। আর এদিকে হযরত ইবরাহীম (আঃ) ভীত হয়ে পড়লেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে ফেরেশতাগণ তাঁকে বললেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। এখন তাঁর ভয় দূর করার জন্যে তারা প্রকৃত ব্যাপার তাঁর সামনে তুলে ধরলেন। তাঁরা বললেনঃ “আমরা মানুষ নই, বরং ফেরেশতা। হযরত লূতের (আঃ) কওমকে ধ্বংস করার জন্যে আমরা প্রেরিত হয়েছি।”
হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংসের কথা শুনে হযরত সারা’ (রঃ) খুশী হলেন। ঐ সময় তিনি আরো একটি সুসংবাদ শুনালেন। তা এই যে, ঐ নৈরাশ্যের বয়সেও তিনি সন্তান প্রসব করবেন। এটা ছিল তাঁর কাছে খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। তিনি এতেও বিস্ময় বোধ করলেন যে, যে কওমের উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে তারা তো সম্পূর্ণরূপে গাফেল রয়েছে। মোট কথা, ফেরেশতাগণ তাকে ইসহাক (আঃ) নামক সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেন এবং এ কথাও বলেন, হযরত ইসহাকের (আঃ) ঔরসে ইয়াকুব (আঃ) নামক সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন।
এই আয়াত দ্বারা এই দলিল গ্রহণ করা যায় যে, ‘যাবীহুল্লাহ’ (আল্লাহর পথে যবাইকৃত) হযরত ইসমাইল (আঃ) ছিলেন। কেননা, হযরত ইসহাকেরই (আঃ) তো সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং সাথে সাথে এ সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল যে, তাঁর ঔরসে হযরত ইয়াকুব (আঃ) জন্মগ্রহণ করবেন।
ফেরেশতাদের এই শুভ সংবাদ শুনে নারীদের সাধারণ অভ্যাস অনুযায়ী হযরত সারা’ (রঃ) বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁর বিস্ময়ের কারণ ছিল এই যে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। সুতরাং সেই বয়সে সন্তান লাভ কিরূপে সম্ভব? এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। এ দেখে ফেরেশতাগণ বললেনঃ “আল্লাহ তাআ’লার কাজে বিস্মিত হওয়ার কি আছে? আল্লাহ তাআ’লা আপনাদেরকে এই বয়সেই সন্তান দান করবেন। যদিও আজ পর্যন্ত আপনার কোন সন্তান হয় নাই এবং আপনার স্বামী বুড়ো হয়ে গেছেন, তথাপি জেনে রাখুন যে, আল্লাহর ক্ষমতার কোন শেষ নেই। তিনি যা চান তা-ই হয়ে থাকে। হে নবী পরিবারের লোক! আপনাদের উপর আল্লাহ তাআ’লার রহমত ও বরকত রয়েছে। সুতরাং আপনাদের জন্যে এটা শোভনীয় নয় যে, তাঁর কাজে বিস্ময় প্রকাশ করবেন। তিনি হচ্ছেন প্রশংসার যোগ্য ও মহা মহিমান্বিত।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা হযরত ইবরাহীমের কাছে এসেছিলেন মানুষের আকৃতি ধরে। শুরুতে তারা নিজেদের পরিচয় দেননি। তাই হযরত ইবরাহীম (আ) তাদেরকে অপরিচিত মেহমান মনে করে আসার সাথে সাথেই তাদের খানাপিনার ব্যবস্থা করেছিলেন।
# কোন কোন মুফাস্সিরের মতে এ ভয়ের কারণ ছিল এই যে, অপরিচিত নবাগতরা খেতে ইতস্তত করলে তাদের নিয়তের ব্যাপারে হযরত ইবরাহীমের মনে সন্দেহ জাগে এবং তারা কোন প্রকার শত্রুতার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কিনা— এ চিন্তা তাঁর মনকে আতংকিত করে তোলে। কারণ আরব দেশে কোন ব্যক্তি কারোর মেহমানদারীর জন্য আনা খাবার গ্রহণ না করলে মনে করা হতো সে মেহমান হিসেবে নয় বরং হত্যা ও লুটতরাজের উদ্দেশ্যে এসেছে। কিন্তু পরবর্তী আয়াতগুলো এ ব্যাখ্যা সমর্থন করে না।
# কথা বলার এ ধরণ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, খাবারের দিকে তাদের হাত এগিয়ে যেতে না দেখে হযরত ইবরাহীম (আ) বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা ফেরেশতা আর যেহেতু ফেরেশতাদের প্রকাশ্যে মানুষের বেশে আসা অস্বাভাবিক অবস্থাতেই হয়ে থাকে, তাই হযরত ইবরাহীম মূলত যে বিষয়ে ভীত হয়েছিলেন তা ছিল এই যে, তাঁর পরিবারের সদস্যরা বা তাঁর জনপদের লোকেরা অথবা তিনি নিজেই এমন কোন দোষ করে বসেননি তো যে ব্যাপারে পাকড়াও করার জন্য ফেরেশতাদের এই আকৃতিতে পাঠানো হয়েছে। কোন কোন মুফাস্সির যে কথা বুঝেছেন প্রকৃত ব্যাপার যদি তাই হতো তাহলে ফেরেশতারা এভাবে বলতোঃ “ভয় পেয়ো না, আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা।” কিন্তু যখন তারা তাঁর ভয় দূর করার জন্য বললোঃ “আমাদের তো লূতের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে,” তখন জানা গেলো যে, তাদের ফেরেশতা হওয়ার ব্যাপারটা হযরত ইবরাহীম জেনে গিয়েছিলেন, তবে এ ভেবে তিনি শংকিত হয়ে পড়েছিলেন যে, ফেরেশতারা যখন এ ফিতনা ও পরীক্ষার আবরণে হাযির হয়েছেন তখন কে সেই দুর্ভাগা যার সর্বনাশ সূচিত হতে যাচ্ছে?
# এ থেকে বুঝা যায়, ফেরেশতার মানুষের আকৃতিতে আসার খবর শুনেই পরিবারের সবাই পেরেশান হয়ে পড়েছিল। এ খবর শুনে হযরত ইবরাহীমের স্ত্রীও ভীত হয়ে বাইরে বের হয়ে এসেছিলেন। তারপর যখন তিনি শুনলেন, তাদের গৃহের বা পরিবারের ওপর কোন বিপদ আসছে না। তখনই তার ধড়ে প্রাণ এলো এবং তিনি আনন্দিত হলেন।
# ফেরেশতাদের হযরত ইবরাহীমের পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী হযরত সারাহকে এ খবর শুনাবার কারণ এই ছিল যে, ইতিপূর্বে হযরত ইবরাহীম একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী হযরত হাজেরার গর্ভে সাইয়্যিদিনা ইসমাইল আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত হযরত সারাহ ছিলেন সন্তানহীনা। তাই তাঁর মনটিই ছিল বেশী বিষন্ন। তাঁর মনের এ বিষন্নতা দূর করার জন্য তাঁকে শুধু ইসহাকের মতো মহান গৌরবান্বিত পুত্রের জন্মের সুসংবাদ দিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং এ সঙ্গে এ সুসংবাদও দেন যে, এ পুত্রের পরে আসছে ইয়াকূবের মতো নাতি, যিনি হবেন বিপুল মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বর।
# এর মানে এ নয় যে, হযরত সারাহ এ খবর শুনে যথার্থই খুশী হবার পরিবর্তে উল্টো একে দুর্ভাগ্য মনে করেছিলেন। বরং আসলে এগুলো এমন ধরনের শব্দ ও বাক্য, যা মেয়েরা সাধারণত কোন ব্যাপারে অবাক হয়ে গেলে বলে থাকে। এক্ষেত্রে এর শাব্দিক অর্থ এখানে লক্ষ্য হয় না বরং নিছক বিস্ময় প্রকাশই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
# বাইবেল থেকে জানা যায়, হযরত ইবরাহীমের বয়স এ সময় ছিল ১০০ বছর এবং হযরত সারাহর বয়স ছিল ৯০ বছর।
# এর মানে হচ্ছে, যদিও প্রকৃতিগত নিয়ম অনুযায়ী এ বয়সে মানুষের সন্তান হয় না তবুও আল্লাহর কুদরতে এমনটি হওয়া কোন অসম্ভব ব্যাপারও নয়। আর এ সুসংবাদ যখন তোমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তখন তোমার মতো একজন মু’মিনা মহিলার পক্ষে এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করার কোন কারণ নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] এটা আসলে লূত (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়ের ঘটনার এক অংশ । লূত (আঃ) ইবরাহীম (আঃ)-এর চাচাতো ভাই ছিলেন। তাঁর গ্রাম মৃত সাগরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল। আর ইবরাহীম (আঃ) ফিলিস্তীনে বসবাস করতেন। যখন লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেওয়ার ফায়সালা করে নেওয়া হল, তখন তাদের নিকট ফিরিশতা পাঠানো হল। উক্ত ফিরিশতাগণ লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের নিকট যাওয়ার পথে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গিয়েছিলেন এবং তাঁকে পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
[২] অর্থাৎ, سلمنا عليك سلامًا (আমরা আপনাকে সালাম দিচ্ছি।)
[৩] যেরূপ প্রথম সালাম এক ঊহ্য ক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, অনুরূপ এ سلامٌ ‘মুবতাদা’ অথবা ‘খবর’ হওয়ার কারণে পেশ অবস্থায় আছে। পূর্ণ বাক্য হবে, أمرُكٌمْ سَلاَمٌ يا عَلَيْكُمْ سَلامٌ
[৪] ইবরাহীম (আঃ) বড় মেহমান-নেওয়ায ছিলেন। তিনি জানতে পারেননি যে, এঁরা ফিরিশতা মানুষের রূপধারণ করে এসেছেন এবং এঁদের পানাহারের কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে (মানুষ) মেহমান মনে করেন এবং অবিলম্বে মেহমানদের খাতির করার জন্য বাছুরের ভুনা গোশত তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত করলেন। এতে বুঝা যায় যে, মেহমানকে জিজ্ঞাসা করা জরুরী নয়; বরং ঘরে যা কিছু আছে তাই মেহমানের সামনে পেশ করা উচিত।
# [১] ইবরাহীম (আঃ) যখন দেখলেন যে, তাঁরা খাবার খাচ্ছেন না, তখন তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। বলা হয় যে, তাঁদের নিকট এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, কারো বাড়িতে আগত মেহমান যদি মেহমানি গ্রহণ না করে, তাহলে ভাবা হত যে, আগত মেহমান কোন ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি। এই ঘটনাতে এও বুঝা গেল যে, আল্লাহর পয়গম্বরগণ গায়বের খবর জানতেন না। ইবরাহীম (আঃ) যদি গায়বের খবর জানতেন, তাহলে তিনি বাছুরের ভুনা গোশত আনতেন না এবং তাঁদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করতেন না।
[২] তাঁর এই ভীতি ফিরিশতাগণ অনুভব করতে পেরেছিলেন, অথবা সেই চিহ্ন দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন যা এমতাবস্থায় মানুষের মুখমন্ডলে প্রকাশ পায়, অথবা ইবরাহীম (আঃ)-এর কথাবার্তার মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছিল, যেমন অন্য স্থানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, {إِنَّا مِنكُمْ وَجِلُونَ} “আমরা তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।” (সূরা হিজর ১৫:৫২) সুতরাং ফিরিশতাগণ বললেন, আতঙ্কিত হবেন না, আপনি যা ভাবছেন আমরা তা নই। বরং আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি এবং আমরা লূত সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছি।
# ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী কেন হেসেছিলেন? অনেকে বলেন, লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ফিতনা-ফাসাদ সম্পর্কে তিনিও অবগত ছিলেন, তাই তাদের ধ্বংসের সংবাদ শুনে তিনি আনন্দ অনুভব করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এই জন্য হেসেছিলেন যে, দেখো! আকাশে তাদের ধ্বংসের ফায়সালা হয়ে গেছে, আর এই সম্প্রদায় এখনো বেখবর হয়ে বসে আছে। অনেকে বলেন, বাক্যটি অগ্র-পশ্চাৎ হয়ে আছে এবং হাসির সম্পর্ক সেই সুসংবাদের সাথে আছে, যে সুসংবাদ ফিরিশতাগণ উভয় বৃদ্ধকে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহই অধিক জানেন।
# উক্ত স্ত্রী সারাহ ছিলেন। তিনি নিজে বৃদ্ধা ও তাঁর স্বামী ইবরাহীম (আঃ)ও বৃদ্ধ ছিলেন। এই জন্য বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক ছিল, আর তারই বহিঃপ্রকাশ তাঁর দ্বারা হয়েছিল।
# [১] এটা অস্বীকৃতিসূচক প্রশ্ন। অর্থাৎ তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা ও ভাগ্যের উপর বিস্ময়বোধ করছ? অথচ তাঁর জন্য কোন বস্তুই দুষ্কর নয়। আর না তিনি প্রয়োজনীয় উপকরণের মুখাপেক্ষী, তিনি যা চান, তা كن (হও) শব্দ দ্বারা তৈরী করতে পারেন।
[২] ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রীকে এখানে ফিরিশতাগণ ‘আহলে বায়ত’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্য বহুবচন (আপনাদের) শব্দ ব্যবহার করেছেন। যাতে প্রথমতঃ এই কথা প্রমাণ হয় যে, স্ত্রী সর্বপ্রথম আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়তঃ এ প্রমাণ হয় যে, ‘আহলে বায়তের’ জন্য বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করাও ঠিক। যেমন সূরা আহযাবের ৩৩:৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-এর পবিত্রা স্ত্রীগণকেও ‘আহলে বায়ত’ বলেছেন এবং তাঁদেরকেও বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] এখানে ইবরাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালামের একটি ঘটনা বর্ণিত হচ্ছে। আল্লাহ তা’আলা তাকে সন্তান লাভের সুসংবাদ দেয়ার জন্য তার কাছে কতিপয় ফেরেশ্তাকে প্রেরণ করেছিলেন। কেননা ইবরাহীম আলাইহিসসালামের স্ত্রী সারা নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি সন্তানের জন্য একান্ত উদগ্রীব ছিলেন কিন্তু উভয়ে বার্ধক্যের চরম সীমায় উপনীত হওয়ার কারণে দৃশ্যতঃ সন্তান লাভের কোন সম্ভাবনা ছিল না। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা ফেরেশ্তার মাধ্যমে সুসংবাদ দান করলেন যে, তারা অচিরেই একটি পুত্র সন্তান লাভ করবেন। তার নামকরণ করা হল ইসহাক। আরো অবহিত করা হল যে, ইসহাক আলাইহিসসালাম দীর্ঘজীবি হবেন, সন্তান লাভ করবেন তার সন্তানের নাম হবে ‘ইয়াকুব’ আলাইহিসসালাম। উভয়ে নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন।
ফেরেশতাগণ মানবাকৃতিতে আগমন করায় ইবরাহীম আলাইহিসসালাম তাদেরকে সাধারণ আগন্তুক মনে করে মেহমানদারীর আয়োজন করেন। ভূনা গোসত সামনে রাখলেন। কিন্তু তারা ছিলেন ফেরেশ্তা, পানাহারের উর্ধ্বে। কাজেই সম্মুখে আহার্য দেখেও তারা সেদিকে হাত বাড়ালেন না। এটা লক্ষ্য করে ইবরাহীম আলাইহিসসালাম আতঙ্কিত হলেন যে, হয়ত এদের মনে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে। ফেরেশতাগণ ইবরাহীম আলাইহিসসালামের অমূলক আশঙ্কা আন্দাজ করে তা দূর করার জন্য স্পষ্টভাবে জানালেন যে “আপনি শঙ্কিত হবেন না।” আমরা আল্লাহর ফেরেশতা। আপনাকে একটি সুসংবাদ দান করে ও অন্য একটি বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য আমরা প্রেরিত হয়েছি। তা হচ্ছে লুত আলাইহিসসালামের কাওমের উপর আযাব নাযিল করা। ইবরাহীম আলাইহিসসালামের স্ত্রী ‘সারা’ পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনছিলেন। বৃদ্ধকালে সন্তান লাভের সুখবর শুনে হেসে ফেললেন এবং বললেন এহেন বৃদ্ধ বয়সে আমার গর্ভে সন্তান জন্ম হবে। আর আমার এ স্বামীও তো অতি বৃদ্ধ। ফেরেশতাগণ উত্তর দিলেন তুমি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করছ? তার অসাধ্য কিছুই নেই। তোমাদের পরিবারের উপর আল্লাহ তা’আলার প্রভূত রহমত এবং অফুরন্ত বরকত রয়েছে।
[২] আলোচ্য আয়াত থেকে ইসলামী আচার-ব্যবহার সম্পর্কে কতিপয় গুরত্বপূর্ণ হেদায়াত পাওয়া যায়ঃ
“তারা সালাম বললেন, তিনি বললেনঃ সালাম।” এ দ্বারা বুঝা যায় যে, মুসলিমদের পারস্পারিক সাক্ষাৎ মোলাকাতের সময় পরস্পরকে সালাম করা কর্তব্য। আরো জানা গেল যে, আগন্তুক ব্যক্তি কথা বলার আগেই প্রথমে সালাম করবে। [সা’দী]
পারস্পরিক দেখা সাক্ষাতের বিশেষ কোন বাক্য উচ্চারণ করে একে অপরের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার রীতি পৃথিবীর সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারেও ইসলামের শিক্ষা অনন্য ও সর্বোত্তম। কেননা, সালামের সুন্নাত সম্মত বাক্য (السلام عليكم)। এখানে সর্বপ্রথম ‘আসসালাম’ আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হওয়ার কারণে আল্লাহর যিকির করা হল, সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য সালামতি ও নিরাপত্তার দোআ করা হল, নিজের পক্ষ হতে জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হল। এর দ্বারা আরও প্রমাণিত হলো যে, সালাম দেয়ার এ নীতি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময়েও ছিল। [সা’দী]
এখানে পবিত্র কুরআনে ফেরেশ্তাদের পক্ষ হতে সালাম এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের তরফ হতে শুধু সালাম’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এখানে উভয়ক্ষেত্রে সুন্নত মোতাবেক সালামের জবাবের পূর্ণ বাক্যই বোঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজের আচরণের মাধ্যমে সালামের পূর্ণ বাক্য শিক্ষা দান করেছেন অর্থাৎ প্রথম পক্ষ আসসালামুআলাইকুম’ বলবে তদুত্তরে দ্বিতীয় পক্ষ ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে। এ আয়াতেও প্রথম সালাম প্রদানের বাক্যটি ক্রিয়ামূলক বাক্য আর তার উত্তরে প্রদত্ত বাক্যটি বিশেষ্যমূলক বাক্য। বিশেষ্যমূলক বাক্য বেশী অর্থবহ। সেজন্য সালামের জওয়াব সালাম থেকেও বেশী থাকতে হয়। [সা’দী]
# তাদেরকে ভয় পাবার কারণ সম্পর্কে কয়েকটি মত আছেঃ
একঃ কোন কোন মুফাসসিরের মতে এ ভয়ের কারণ ছিল এই যে, অপরিচিত নবাগতরা খেতে ইতস্তত করলে তাদের নিয়তের ব্যাপারে ইবরাহীমের মনে সন্দেহ জাগে এবং তারা কোন প্রকার শক্রতার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কিনা-এ চিন্তা তাঁর মনকে আতংকিত করে তোলে। কারণ আরব দেশে কোন ব্যক্তি কারোর মেহমানদারীর জন্য আনা খাবার গ্রহণ না করলে মনে করা হতো সে মেহমান হিসেবে নয় বরং হত্যা ও লুটতরাজের উদ্দেশ্যে এসেছে। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
দুইঃ কথা বলার এ ধরণ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, খাবারের দিকে তাদের হাত এগিয়ে যেতে না দেখে ইবরাহীম আলাইহিস্সালাম বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা ফেরেশতা। আর যেহেতু ফেরেশতাদের প্রকাশ্যে মানুষের বেশে আসা অস্বাভাবিক অবস্থাতেই হয়ে থাকে, তাই ইবরাহীম মূলত যে বিষয়ে ভীত হয়েছিলেন তা ছিল এই যে, তাঁর পরিবারের সদস্যরা বা তাঁর জনপদের লোকেরা এমন কোন দোষ করে বসেনি তো যে ব্যাপারে পাকড়াও করার জন্য ফেরেশতাদের এই আকৃতিতে পাঠানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
# (یٰوَیۡلَتٰۤی) শব্দটি সাধারণত কোন দুর্ভোগে পড়লে মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এর মানে এ নয় যে,সারা এ খবর শুনে যথার্থই খুশী হবার পরিবর্তে উল্টো একে দুর্ভাগ্য মনে করেছিলেন। বরং আসলে এগুলো এমন ধরনের শব্দ ও বাক্য, যা মেয়েরা সাধারণত কোন ব্যাপারে অবাক হয়ে গেলে বলে থাকে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এ ক্ষেত্রে নিছক বিস্ময় প্রকাশই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
# [১] এর মানে হচ্ছে, যদিও প্রকৃতিগত নিয়ম অনুযায়ী এ বয়সে মানুষের সন্তান হয় না তবুও আল্লাহর কুদরতে এমনটি হওয়া কোন অসম্ভব ব্যাপারও নয়। আর এ সুসংবাদ যখন তোমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তখন তোমার মতো একজন মুমিনা মহিলার পক্ষে এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করার কোন কারণ নেই। [তাবারী; কুরতুবী] মুজাহিদ বলেন, তখন সারার বয়স ছিল ৯৯ বছর। আর ইবরাহীমের বয়স ছিল ১০০ বছর, সে হিসেবে ইবরাহীমের বয়স তার স্ত্রী অপেক্ষা ১ বছর বেশি। [বাগভী; কুরতুবী] ইবন ইসহাক বলেন, তার বয়স ১২০ বছর এবং তার স্ত্রীর ৯০ বছর। এতে আরও মতামত রয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী]
[২] বরকত শব্দের অর্থ, বৃদ্ধি ও প্রাচুর্যতা। এখানে যে বরকতের কথা বলা হচ্ছে পরবর্তী সমস্ত নবী-রাসুল ইবরাহীমের বংশধরদের থেকেই হয়েছে। [কুরতুবি] এ আয়াতে বর্ণিত রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু থেকে ইবন আব্বাস মত নিয়েছেন যে, সালামের সর্বশেষ শব্দ হবে, ‘বারাকাতুহু’ [মুয়াত্তা মালিক: ২/৯৫৯; কুরতুবী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 69-73
قَالُواْ سَلَمًا قَالَ سَلَمٌ
They said:”Salaman.”
He answered, “Salamun.”
The Coming of the Angels to Ibrahim and Their Glad Tidings to Him of Ishaq and Yaqub
Allah, the Exalted, says,
وَلَقَدْ جَاءتْ رُسُلُنَا
And verily, there came Our messengers,
The word “messengers” here means angels.
إِبْرَاهِيمَ بِالْبُـشْرَى
to Ibrahim with the glad tidings.
It has been said that the word “the glad tidings” means, “Receive the glad tidings of Ishaq.”
Others have said that it means,
“The destruction of the people of Prophet Lut.”
The proof of the correctness of the first view is in Allah’s statement,
فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَهِيمَ الرَّوْعُ وَجَأءَتْهُ الْبُشْرَى يُجَـدِلُنَا فِى قَوْمِ لُوطٍ
Then when the fear had gone away from (the mind of) Ibrahim, and the glad tidings had reached him, he began to plead with Us for the people of Lut. (11:74)
قَالُواْ سَلَمًا قَالَ سَلَمٌ
They said:”Salaman.”
He answered, “Salamun.”
This means, “Upon you.”
The scholars of explanation have said,
“Ibrahim’s reply of `Salamun’ was better than that with which they had greeted him with, because the subjective case (Salamun instead of Salaman) alludes to affirmation and eternity. ”
فَمَا لَبِثَ أَن جَاء بِعِجْلٍ حَنِيذٍ
and he hastened to entertain them with a roasted calf.
This means that he (Ibrahim) left with haste in order to bring them food, as a host. The food that he brought was a calf.
The word Hanidh means roasted upon heated stones. This meaning has been reported from Ibn Abbas, Qatadah and others.
This is as Allah has said in other verses,
فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَأءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ
فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ
Then he turned to his household, and brought out a roasted calf. And placed it before them (saying):”Will you not eat!” (51:26-27)
This verse contains many aspects of the etiquettes of hosting guests.
فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ
But when he saw their hands went not towards it (the meal), he mistrusted them,
This means that he felt estranged from them.
وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً
and conceived a fear of them.
This is because angels are not concerned with food. They do not desire it, nor do they eat it. Therefore, when Ibrahim saw them reject the food that he had brought them, without tasting any of it at all, he felt a mistrust of them.
وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً
(and conceived a fear of them).
As-Suddi said,
“When Allah sent the angels to the people of Lut, they set out walking in the form of young men, until they came to Ibrahim and they were hosted by him. When Ibrahim saw them, he rushed to host them.
فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَأءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ
Then he turned to his household, and brought out a roasted calf. (51:26)
He slaughtered it (the calf), roasted it on hot stones and brought it to them. Then, he sat down with them. when he placed it before them. (saying):`Will you not eat?’
They said, `O Ibrahim! Verily, we do not eat food without a price.’
Ibrahim then said, `Verily, this food has a price.’
They said, `What is its price?’
He said, `You must mention the Name of Allah over it before eating it and praise Allah upon finishing it.’
Jibril then looked at Mikhail and said, `This man has the right that his Lord should take him as an intimate friend.’
فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ
But when he saw their hands went not towards it (the meal), he mistrusted them,
When Ibrahim saw that they were not eating, he became scared and frightened by them. Then, when Sarah looked and saw that he was honoring them, she began to serve them and she was laughing. She said, `What amazing guests we have. We serve them ourselves, showing them respect and they do not eat our food.”‘
Then, concerning Allah’s statement about the angels,
قَالُواْ لَا تَخَفْ
They said:”Fear not,”
They were saying, “Do not be afraid of us. Verily, we are angels sent to the people of Lut in order to destroy them.”
إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمِ لُوطٍ
we have been sent against the people of Lut.”
وَامْرَأَتُهُ قَأيِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَقَ
And his wife was standing (there), and she laughed. But We gave her glad tidings of Ishaq,
Then, Sarah laughed in delight of the good news of their destruction. This is because they had caused much corruption and their disbelief was severe. For this reason, she was rewarded with the glad tidings of a son, even after her despair.
Concerning Allah’s statement,
وَمِن وَرَاء إِسْحَقَ يَعْقُوبَ
and after Ishaq, of Yaqub.
This means that the son that she was going to have would have a son (her grandson) who would succeed him and beget many children. For verily, Yaqub was the son of Ishaq, just as Allah says in Surah Al-Baqarah,
أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِى قَالُواْ نَعْبُدُ إِلَـهَكَ وَإِلَـهَ ابَأيِكَ إِبْرَهِيمَ وَإِسْمَـعِيلَ وَإِسْحَـقَ إِلَـهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
Or were you witnesses when death approached Yaqub! When he said unto his sons, “What will you worship after me!”
They said, “We shall worship your God, the God of your fathers, Ibrahim, Ismail, Ishaq, One God, and to him we submit.” (2:133)
From this point in this verse there is an evidence for those who say that Ismail was the son of Ibrahim who was to be sacrificed. It could not have been Ishaq, because the glad tidings were given that he would have a son born to him named Yaqub. So how could Ibrahim be commanded to sacrifice him when he was a small child and there had not been born to him a child yet, named Yaqub, who was promised!
The promise of Allah is true and there is no breaking of Allah’s promise. Therefore, it is not possible that Ibrahim was to sacrifice this child (Ishaq) with the condition being as it was. This makes it clear that Ismail was the son that was to be sacrificed and this is the best, most correct and clearest evidence of that.
And all praise is due to Allah.
قَالَتْ يَا وَيْلَتَى أَأَلِدُ وَأَنَاْ عَجُوزٌ وَهَـذَا بَعْلِي شَيْخًا
She said (in astonishment):”Woe unto me! Shall I bear a child while I am an old woman, and here is my husband an old man!”
Allah speaks of her statement in this verse, just as He spoke of her action in another verse.
فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِى صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ
Then his wife came forward with a loud voice:she smote her face, and said:”A barren old woman!” (51:29)
This was the custom of the women in their speech and actions when they were expressing amazement.
إِنَّ هَـذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ
Verily, this is a strange thing!”
The angels said;
قَالُواْ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللّهِ
Then said:”Do you wonder at the decree of Allah!”
This means that the angels were saying to her, “Do not be amazed at the command of Allah, for verily, whenever He wants something, He merely says `Be’ and it is. So do not be amazed at this, even though you are old and barren and your husband is a very old man. Verily, Allah is able to do whatever He wills.”
رَحْمَتُ اللّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ
The mercy of Allah and His blessing be on you, O the family (of Ibrahim).
إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ
Surely, He (Allah) is All-Praiseworthy, All-Glorious.
This means that He is the Most Praiseworthy in all of His actions and statements. He is praised and glorified in His Attributes and His Self.
For this reason, it is confirmed in the two Sahihs that they (the Prophet’s Companions) said,
“Verily, we already know how to greet you with Salam (peace), but how do we send Salah (prayer) upon you, O Messenger of Allah?”
He said,
قُولُوا
Say,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى الِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَالِ إبْرَاهِيمَ
وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى الِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى الِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
O Allah, send prayers upon Muhammad and the family of Muhammad, just as You have sent prayers upon Ibrahim and the family of Ibrahim.
And bless Muhammad and the family of Muhammad, just as You have blessed the family of Ibrahim. Truly, You are the All-Praiseworthy, All-Glorious.