(Book# 716) [ وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর , And rained on them stones of clay,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 716)
[ وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً
এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর ,
And rained on them stones of clay,]
www.motaher21.net
قَالَ لَوۡ اَنَّ لِیۡ بِکُمۡ قُوَّۃً اَوۡ اٰوِیۡۤ اِلٰی رُکۡنٍ شَدِیۡدٍ ﴿۸۰﴾
তিনি বললেন, ‘তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি আশ্রয় নিতে পারতাম কোন সুদৃঢ় স্তম্ভের।
He said, “If only I had against you some power or could take refuge in a strong support.”
قَالُوۡا یٰلُوۡطُ اِنَّا رُسُلُ رَبِّکَ لَنۡ یَّصِلُوۡۤا اِلَیۡکَ فَاَسۡرِ بِاَہۡلِکَ بِقِطۡعٍ مِّنَ الَّیۡلِ وَ لَا یَلۡتَفِتۡ مِنۡکُمۡ اَحَدٌ اِلَّا امۡرَاَتَکَ ؕ اِنَّہٗ مُصِیۡبُہَا مَاۤ اَصَابَہُمۡ ؕ اِنَّ مَوۡعِدَہُمُ الصُّبۡحُ ؕ اَلَـیۡسَ الصُّبۡحُ بِقَرِیۡبٍ ﴿۸۱﴾
তারা বলল, ‘হে লূত ! নিশ্চয় আমরা আপনার রব প্রেরিত ফিরিশ্‌তা। তারা কখনই আপনার কাছে পৌঁছাতে পারবে না । কাজেই আপনি রাতের কোন এক সময়ে আপনার পরিবার বর্গ সহ বের হয়ে পড়ুন এবং আপনাদের মধ্যে কেও পিছনের দিকে তাকাবে না, আপনার স্ত্রী ছাড়া।তাদের যা ঘটবে তাঁর ও তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি খুব কাছাকাছি নয় ?
The angels said, “O Lot, indeed we are messengers of your Lord; [therefore], they will never reach you. So set out with your family during a portion of the night and let not any among you look back – except your wife; indeed, she will be struck by that which strikes them. Indeed, their appointment is [for] the morning. Is not the morning near?”
فَلَمَّا جَآءَ اَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَالِیَہَا سَافِلَہَا وَ اَمۡطَرۡنَا عَلَیۡہَا حِجَارَۃً مِّنۡ سِجِّیۡلٍ ۬ۙ مَّنۡضُوۡدٍ ﴿ۙ۸۲﴾
অতঃপর যখন আমাদের আদেশ আসল তখন আমরা জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর ,
So when Our command came, We made the highest part [of the city] its lowest and rained upon them stones of layered hard clay, [which were]
مُّسَوَّمَۃً عِنۡدَ رَبِّکَ ؕ وَ مَا ہِیَ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ بِبَعِیۡدٍ ﴿٪۸۳﴾
যা বিশেষরূপে চিহ্নিত করা ছিল তোমার প্রতিপালকের নিকট; আর ঐ (জনপদ)গুলি এই যালেমদের নিকট হতে বেশী দূরে নয়।
Marked from your Lord. And Allah ‘s punishment is not from the wrongdoers [very] far.

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৮০-৮৩ নং আয়াত:-
وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً
এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর ,
And rained on them stones of clay,
৮০-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অতঃপর যখন ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর নিকট উপস্থিত হল তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তায় মগ্ন হলেন, আর তাঁর হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং বললেন যে, আজকের দিনটি বড়ই কঠিন। কারণ তাঁর সম্প্রদায় যখনই কোন সুন্দর-সুদর্শন যুবককে দেখত তখনই তারা তার সাথে অপকর্মে লিপ্ত হতে চাইত। আর এ ফেরেশতারা সুদর্শন যুবকের বেশ ধরে আগমন করেছেন। তিনিও জানতেন যে, আগত যুবকেরা মানুষ নয় বরং ফেরেশতা। যার ফলে তিনি তাদের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা (এসব সুদর্শন যুবকদের) ফেরেশতাদের আগমনের কথা জানতে পারল তখন তারা তাদের সাথে অপকর্ম করার জন্য আনন্দে আত্মহারা হয়ে দ্রুত ছুটে আসল। আর তাদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল। যাতে তাদের (ফেরেশতা) সাথে তাদের মন্দ কামনা চরিতার্থ করতে পারে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ رَاوَدُوْھُ عَنْ ضَیْفِھ۪ فَطَمَسْنَآ اَعْیُنَھُمْ فَذُوْقُوْا عَذَابِیْ وَنُذُرِ)

“তারা মেহমানদের জন্য লূতকে ফুসলিয়েছিল, তখন আমি তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম (এবং বললামঃ) আস্বাদন কর আমার আযাব এবং সতর্কবাণীর পরিণাম!” (সূরা কমার ৫৪:৩৭) তখন লূত (عليه السلام) তাদের এ অবস্থা দেখে বললেন যে, যদি তোমাদের উদ্দেশ্য যৌন চাহিদা পূরণ করাই হয়ে থাকে তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে যাও এবং বিবাহের মাধ্যমে তাদের সাথে যৌন চাহিদা পূরণ কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর হবে।

কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেছেন: লূত (عليه السلام) আমার কন্যা বলতে সমগ্র মহিলাদেরকে বুঝিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর আর আমাকে আমার মেহমানের সম্মুখে অপমানিত কর না। লূত (عليه السلام)-এর কথার উত্তরে তারা বলল যে, আমাদের মহিলাদের কোনই প্রয়োজন নেই আর আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনি ভাল করেই জানেন। তাদের এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, বৈধ ও স্বাভাবিক নিয়মকে তারা অস্বীকার করে দিল এবং অস্বাভাবিক কর্ম ও নির্লজ্জতার ওপর অটল থাকল। তাদের এ পরিস্থিতি দেখে লূত (عليه السلام) আফসোস করে বললেন যে, যদি আমার তোমাদের ওপর কোন প্রভাব থাকত তাহলে আজ আমাকে মেহমানদের জন্য এই অস্থিরতার শিকার ও অপমানিত হতে হত না। বরং আমি তোমাদেরকে প্রতিহত করতাম।

ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা স্বচক্ষে দেখার পর বলল: হে লূত (عليه السلام)! আপনি নিশ্চিত থাকুন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত ফেরেশতা তারা আমাদের কাছে আসবে তো দূরের কথা আপনার কাছেও পৌঁছতে পারবে না। আপনি রাত্রের কিছু অংশ বাকি থাকতে আপনার স্ত্রী ব্যতীত পরিবারের সকলকে নিয়ে এই এলাকা থেকে চলে যান। তবে শর্ত হল পিছনের দিকে ফিরে তাকাবেন না। এরূপ নির্দেশ সূরা হিজরের ৬৫ নং আয়াতের উল্লেখ রয়েছে। পিছনের দিকে তাকাতে নিষেধের কারণ হল কেউ আযাব প্রত্যক্ষ করতে চাইলে তাকেও আযাব গ্রাস করে নিত। প্রত্যুষকালেই এই গ্রামকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক সেই জনপদকে ভোরবেলায় উল্টিয়ে দেয়া হয় এবং তাদের ওপর ক্রমাগতভাবে পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয় এবং তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এটাই ছিল লূত (عليه السلام)-এর সম্প্রদায়ের করুণ পরিণতি। লূত (عليه السلام)-এর জাতির বসতি ছিল জর্ডান ও ইসরাঈলের মধ্যবর্তী মৃতসাগরের নিকট, বাইবেলে যার নাম সুডুম। সুতরাং মক্কার এই সমস্ত কাফির-মুশরিকরাও তাদের থেকে দূরে নয়। তাদের অবস্থাও এরূপ হতে পারে। অতএব তারা যেন আগে থেকেই সাবধান হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পুরুষের সাথে পুরুষের যৌন চাহিদা নিবারণ করা হারাম।
২. ইবরাহীম (عليه السلام)-এর আতিথেয়তা সম্পর্কে জানতে পারলাম আর এও জানতে পারলাম যে, তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ওয়ালা ব্যক্তি।
৩. লূত (عليه السلام)-এর জাতির পাপাচার ও তাদের ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে জানতে পারলাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮০-৮১ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ হযরত লূত (আঃ) যখন দেখলো যে, তার উপদেশ তার কওমের উপর ক্রীয়াশীল হলো না, তখন তাদেরকে ধমকের সুরে বললো: যদি আমার শক্তি থাকতো বা আমার আত্মীয় স্বজন শক্তিশালী হতো তবে অবশ্যই আমি তোমাদের এই দুষ্কর্যের স্বাদ গ্রহণ করাতাম।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লূতের (আঃ) উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, অবশ্যই তিনি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এর দ্বারা তিনি মহা মহিমান্বিত আল্লাহর সত্ত্বাকেই বুঝিয়েছেন। তাঁর পরে যে নবীকেই প্রেরন করা হয়েছে, তিনি তাঁর প্রভাবশালী কওমের মধ্যেই প্রেরিত হয়েছেন।”

ফেরেশ্‌তাগণ হযরত লূতের (আঃ) মনমরা অবস্থা লক্ষ্য করে নিজেদের স্বরূপ তার কাছে প্রকাশ করেন। তারা বলেনঃ হে লূত (আঃ)! আমরা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত হয়েছি। তারা কখনো আপনার নিকট পৌঁছতে পারবে না। (এবং আমাদের নিকটও না)। আপনি অদ্য রাত্রির শেষ ভাগে আপনার পরিবার পরিজনসহ এখান থেকে সরে পড়বেন। আপনি নিজে তাদের পেছনে থাকবেন এবং সরাসরি নিজেদের পথে চলতে থাকবেন। আপনাদের কেউই যেন কওমের হা-হুতাশ, কান্নাকাটি এবং চীৎকার শুনে তাদের দিকে ফিরেও না দেখে। এর থেকে তারা হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রীকে পৃথক করে দেন। তারা বলেন যে, তার স্ত্রী তাদের অনুসরণ করতে পারবে না, সে তার কওমের শাস্তির সময় তাদের হা-হুতাশ ও কান্না শুনে তাদের দিকে ফিরে তাকাবে। কেননা, তার কওমের সাথে সেও ধ্বংস হয়ে যাবে, এ ফায়সালা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হয়েই গেছে। এক কিরাআতে (আরবি) অর্থাৎ (আরবি) শব্দের উপর পেশ দিয়ে রয়েছে। যে সব গুরুজনের নিকট ‘পেশ’ ও ‘যবর’ দুটোই জায়েয তারা বর্ণনা করেন যে, হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রী ও তাদের সাথে বের হয়েছিল। কিন্তু শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার সময় কওমের চীৎকার শুনে সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে নাই। সে তাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছিল এবং ‘হায় আমার কওম!’ একথা মুখ দিয়ে বেরও হয়েছিল। তৎক্ষণাৎ আকাশ থেকে একটা পাথর তার প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়। সুতরাং সেও ধ্বংস হতে যায়।

হযরত লূতকে (আঃ) আরো সান্ত্বনা দানের জন্যে তাঁর কওমের শাস্তি নিকটবর্তী হয়ে যাওয়ার কথাও তাঁর কাছে বর্ণনা করে দেন যে, সকাল হওয়া মাত্রই তারা ধ্বংস হয়ে যাবে আর সকাল তো খুবই নিকটে।

হযরত লূতের (আঃ) কওম তাঁর দরজার উপর দাঁড়িয়েছিল এবং তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। তারা তাঁর দিকে তীর বেগে ধাবিত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং নিজের ডানা দ্বারা তাদের মুখের উপর আঘাত করেন। ফলে তাদের চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়।

হযরত হুযাইফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, স্বয়ং হযরত ইবরাহীমও (আঃ) হযরত লূতের (আঃ) কওমের নিকট আগমন করেন এবং তাদেরকে বুঝিয়ে বলেনঃ “দেখো, তোমরা আল্লাহর শাস্তিকে ক্রয় করে নিয়ো না।” কিন্তু তারা আল্লাহর দোস্তের উপদেশও মান্য করে নাই। অবশেষে শাস্তির নির্ধারিত সময় এসে পড়লো। হযরত লূত (আঃ) তার জমিতে কাজ করছিলেন, এমন সময় ফেরেশতাগণ তার নিকট আগমন করেন। তাঁরা তাঁকে বলেনঃ আজ রাত্রিতে আমরা আপনার বাড়ীতে মেহমান হলাম।” হযরত জিবরাঈলের (আঃ) প্রতি আল্লাহ পাকের এই নির্দেশ ছিল যে, যে পর্যন্ত হযরত লূত (আঃ) তিনবার তাঁর কওমের বদ অভ্যাসের সাক্ষ্য প্রদান না করবেন সেই পর্যন্ত যেন তাদেরকে শাস্তি দেয়া না হয়। হযরত লূত (আঃ) যখন তাদেরকে নিয়ে চললেন তখন পথিমধ্যেই তাদেরকে বললেনঃ “এখানকার লোকেরা বড়ই দুশ্চরিত্র, এই এই দোষ তাদের মধ্যে রয়েছে। কিছু দূর গিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি তাদেরকে বলেনঃ “এই গ্রামের লোকদের দুষ্কার্য কি আপনারা অবগত নন? আমার জানা মতে এদের চেয়ে দুষ্ট লোক-ভূপৃষ্ঠে আর নেই। হায়! আমি আপনাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবো! আমার কওম তো সমস্ত মাখলুক হতে বদতর। ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার সঙ্গীয় ফেরেশতাদেরকে বলেনঃ “দেখো, দু’বার তিনি একথা বললেন।” অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে নিয়ে বাড়ীর দরজায় পৌঁছলেন তখন মনের দুঃখে তিনি কেঁদে ফেললেন এবং বলতে লাগলেনঃ “আমার কওম সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বদ ও দূষ্ট প্রকৃতির। এরা কোন দুষ্কার্যে জড়িয়ে পড়েছে তা কি আপনাদের জানা নেই? ভূ-পৃষ্ঠে কোন বস্তি এই বস্তি অপেক্ষা খারাপ নেই।” ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) পুনঃরায় ফেরেশতাগণকে বললেনঃ “দেখো, তিনি তিন বার স্বীয় কওমের বদ অভ্যাসের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মনে রেখোঁরেখো যে, এখন তাদের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে।” অতঃপর তারা বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করেন। ঐ সময় তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী উঁচু জায়গায় চড়ে কাপড় নাড়াতে শুরু করে। সাথে সাথে গ্রামের দুবৃত্তেরা দৌড়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ব্যাপার কি?” সে উত্তরে বলেঃ “লূতের (আঃ) বাড়ীতে মেহমান এসেছে। আমি এদের চেয়ে সুদর্শন ও সুগন্ধময় লোক আর কখনো দেখি নাই।” এ কথা শোনা মাত্রই আনন্দে আত্মহারা হয়ে তারা হযরত লূতের (আঃ) বাড়ীতে দৌড়ে আসে। চারদিক থেকে তারা তার বাড়ীকে ঘিরে ফেলে। তিনি তাদেরকে কসম দেন এবং উপদেশ দিতে গিয়ে বলেনঃ “দেখো, স্ত্রীলোক বহু রয়েছে।” কিন্তু তারা কিছুতেই ঐ দুষ্কার্য হতে বিরত থাকলো না। ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাদের শাস্তির জন্যে আল্লাহ তাআ’লার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। আল্লাহ পাক অনুমতি দান করেন। তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর প্রকৃত রূপের ডানা খুলে দেন। তাঁর দু’টি ডানা রয়েছে; যে গুলির উপর মণিমুক্তা বসানো আছে। তাঁর দাঁত গুলি তক্‌তকে, ঝকঝকে। তাঁর কপাল উঁচু এবং বড়। তাঁর মস্তক মুক্তার মতো, যেন বরফ। তাঁর পদদ্বয় সবুজ বর্ণের। হযরত লূতকে (আঃ) তিনি বলেনঃ “আমরা আপনার প্রতিপালক কর্তৃক প্রেরিত হয়েছি। তারা (আপনার কওম) আপনার নিকট পৌঁছতে পারবে না। আপনি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান।” একথা বলে তিনি তার ডানা দ্বারা তাদের মুখের উপর মেরে দেন। ফলে তারা অন্ধ হয়ে যায়। তারা পথও চিনতে পারছিল না। হযরত লূত (আঃ) স্বীয় পরিবার বর্গ নিয়ে ঐ রাত্রেই বেরিয়ে পড়ে, আল্লাহ তাআ’লার নির্দেশও এটাই ছিল। মুহাম্মদ ইবনু কা’ব (রঃ), কাতাদা’ (রঃ), সুদ্দী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনের বর্ণনা এটাই।
৮২-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “যখন আমার হুকুম (শাস্তি) এসে পৌঁছলো, ওটা ছিল সুর্য উদিত হওয়ার সময়। সুদূম নামক গ্রামকে আল্লাহপাক তল উপর করে দেন। তাদের উপর আকাশ থেকে পাকা মাটির পাথর বর্ষিত হতে লাগলো, যা ছিল খুবই শক্ত, ওজনসইও বড়। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, (আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে শক্ত, বড়। (আরবি) ও (আরবি) এর (আরবি) ও (আরবি) দু’বোন অর্থাৎ দু’টোর অর্থ একই। তামীম ইবনু মুকবিল তাঁর কবিতার এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি)

এখানেও (আরবি) শব্দটিকে (আরবি) অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। (আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে একের পর এক বা ক্রমাগত। ঐ পাথর গুলির উপর ঐ লোকগুলির নাম লিখা ছিল। যে পাথরে যে ব্যক্তির নাম লিখা ছিল ঐ পাথর ঐ ব্যক্তির উপরই বর্ষিত হচ্ছিল। কাতাদা’ (রঃ) এবং ইকরামা (রঃ) বলেন যে, (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ ‘তওক’ বা শৃঙ্খল করা ছিল, যা লাল রঙ্গে ডুবিয়ে নেয়া হয়েছিল। এই পাথরগুলি ঐ শহরবাসীদের উপরও বর্ষিত হয় এবং এখানকার যারা অন্য গ্রামে গিয়েছিল সেখানেও (তাদের উপর) বর্ষিত হয়। তাদের যে যেখানে ছিল সেখানেই পাথর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। কেউ হয়তো কোন জায়গায় কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল সেখানেই আকাশ হতে তার উপর পাথর নিক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয়। মোট কথা, তাদের একজনও রক্ষা পায় নাই।

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাদের সকলকে একত্রিত করে তাদের ঘর-বাড়ী ও গবাদি পশুগুলিসহ উপরে উঠিয়ে নেন। এমন কি তাদের শব্দ এবং তাদের কুকুরগুলির ঘেউ ঘেউ শব্দ আকাশের ফেরেশতাগণ শুনতে পান। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর ডান দিকের ডানার কিনারার উপর তাদের গোটা বস্তিকে উঠিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি ওটাকে যমীনে উলটিয়ে দেন। ফলে তারা পরস্পর ভীষণভাবে ধাক্কা খায় এবং একই সাথে সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। এইভাবে ক্ষণেকের মধ্যে তাদেরকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। বর্ণিত আছে যে, তাদের মোট চারটি গ্রাম ছিল এবং প্রতিটি গ্রামে এক লক্ষ করে লোক বসবাস করতো। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তাদের তিনটি গ্রাম। সবচেয়ে বড় গ্রামটির নাম ছিল সুদূম। এখানে মাঝে মাঝে হযরত ইবরাহীম (আঃ) আসতেন এবং তাদেরকে (লূতের আঃ কওমকে) উপদেশ দিতেন।

আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ ঐ জনপদগুলি এই অত্যাচারীদের (বাসভূমি) হতে বেশী দূর নয়। সুনানের মধ্যে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফূ’ রূপে হাদীস বর্ণিত আছেঃ “যদি তোমরা কাউকে হযরত লূতের (আঃ) কওমের আমলের মত আমল করতে দেখতে পাও তবে যে এই কাজ করছে এবং যার উপর করছে উভয়কেই হত্যা করে দাও।” এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম শাফিয়ী (রঃ) এবং আলেমদের একটি জামাআত বলেন যে, লাওয়াতকারীকে হত্যা করে দেয়া হবে, সে বিবাহিতই হোক বা অবিবাহিতই হোক। আর ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন যে, তাকে উপর থেকে নীচে নিক্ষেপ করতে হবে এবং এক এক করে তার উপর পাথর বষর্ণ করতে হবে, যেমন আল্লাহ তাআ’লা হযরত লূতের (আঃ) কওমের প্রতি করেছিলেন। সঠিক কোনটি তা আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখন তোমরা কিভাবে তাড়াতাড়ি এ এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে পারো সে চিন্তা করা উচিত। পেছনে শোরগোল ও বিষ্ফোরণের আওয়াজ শুনে তোমরা যেন পথে থেমে না যাও এবং আযাবের জন্য যে এলাকা নির্ধারিত হয়েছে আযাবের সময় এসে যাবার পরও তোমাদের কেউ যেন সেখানে অবস্থান না করে।

# এটি তৃতীয় মর্মন্তুদ শিক্ষণীয় ঘটনা। এ সূরায় লোকদেরকে একথা শিক্ষা দেবার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন বুযর্গের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং কোন বুযর্গের সুপারিশ তোমাদের নিজেদের গোনাহের পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে না।

# সম্ভবত একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের আকারে এ আযাব এসেছিল। ভূমিকম্প জনবসতিটিকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল এবং অগ্নুৎপাতের ফলে তার ওপর হয়েছিল ব্যাপক হারে পাথর বৃষ্টি। “পাকা মাটির পাথর” বলতে সম্ভবত এমন মাটি বুঝানো হয়েছে যা আগ্নেয়গিরির আওতাধীন এলাকার ভূগর্ভস্থ উত্তাপ ও লাভার প্রভাবে পাথরে পরিণত হয়। আজ পর্যন্ত লূত সাগরের (dead Sea) দক্ষিণ ও পূর্ব এলাকায় এ পাথর বর্ষণের চিহ্ন সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়।

# আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি পাথরকে কি ধ্বংসাত্মক কাজ করতে হবে এবং কোন্ পাথরটি কোন্ অপরাধীর ওপর পড়বে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিল।

#.আজ যারা জুলুমের পথে চলছে তারাও যেন এ আযাবকে নিজেদের থেকে দূরে না মনে করে। লূতের সম্প্রদায়ের ওপর যদি আযাব আসতে পেরে থাকে তাহলে তাদের ওপরও আসতে পারে। লূতের সম্প্রদায় আল্লাহর আযাব ঠেকাতে পারেনি, এরাও পারবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# শক্তি থেকে উদ্দেশ্য হল নিজ দৈহিক বল ও উপকরণ-শক্তি অথবা সন্তান-সন্ততিদের ক্ষমতা। ‘দৃঢ় স্তম্ভ’ থেকে উদ্দেশ্য হল বংশ, গোত্র বা অনুরূপ কোন সুদৃঢ় আশ্রয়। অর্থাৎ, নিরুপায় হয়ে তিনি আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন যে, ‘হায়! যদি আমার নিজের শক্তি থাকত বা কোন আত্মীয়-স্বজন ও আমার গোত্রের আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা হত, তাহলে আজ আমাকে মেহমানদের জন্য এই অস্থিরতার শিকার ও অপমানিত হতে হত না। আমি ঐ দুর্বৃত্তদেরকে সামলে নিতাম এবং মেহমানদের হিফাযত করতে পারতাম।’ লূত (আঃ)-এর উক্ত আশা আল্লাহর উপর ভরসার পরিপন্থী নয়। যেহেতু বাহ্যিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা বৈধ। আর ‘আল্লাহর উপর ভরসা’র সহীহ অর্থও এই যে, প্রথমে সকল বাহ্যিক উপায়-উপকরণ প্রয়োগ করতে হবে, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। হাত-পা বেঁধে বসে থাকা এবং মুখে ‘আল্লাহর উপর ভরসা আছে’ বলা একেবারে ভুল ব্যাখ্যা। সুতরাং বাহ্যিক উপকরণের দিকে লক্ষ্য রেখে লূত (আঃ) যা বলেছেন, বিলকুল ঠিকই বলেছেন। যাতে এই কথা প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর পয়গম্বরগণ যেমন ‘আ-লিমুল গায়ব’ হন না, অনুরূপ তাঁরা ইচ্ছাময়ও হন না (যেমন বর্তমানে মানুষ অনেকের ব্যাপারে এরূপ বিশ্বাস রাখে)। যদি দুনিয়াতে নবীদের কোন এখতিয়ার থাকত, তবে অবশ্যই লূত (আঃ) নিজ অক্ষমতা ও সেই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতেন না, যা তিনি উল্লিখিত শব্দে ব্যক্ত করেছেন।

# ফিরিশতাগণ যখন লূত (আঃ)-এর অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা স্বচক্ষে দেখে নিলেন, তখন বললেন, ‘হে লূত (আঃ) আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমাদের নিকট তো দূরের কথা, এখন ওরা আপনার নিকটেও পৌঁঁছতে পারবে না। আপনি কিছুটা রাত থাকতে আপনার স্ত্রী ছাড়া বাকি লোকজনসহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যান! প্রত্যুষকালেই এই গ্রামকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’

# এই আয়াতে هي (ঐ) এর লক্ষ্যবস্তু কোন কোন মুফাসসির সেই চিহ্নিত ঝামা পাথর বলেছেন যা তাদের উপর বর্ষণ করা হয়েছিল। পক্ষান্তরে অনেকের নিকট তার লক্ষ্যবস্তু হল, সেই সমস্ত জনপদ যা ধ্বংস করা হয়েছিল; যা শাম ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ছিল। আর ‘যালেম’ দ্বারা মক্কার মুশরিক ও অন্যান্য মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হল, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা যে, তোমাদের উপরেও সেরূপ আযাব আসতে পারে।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা লুত আলাইহিসসালামের উপর রহমত করুন। তিনি নিরুপায় হয়ে সুদৃঢ় জামাতের আশ্রয় কামনা করেছিলেন।” [বুখারীঃ ৩৩৮৭, মুসলিমঃ ১৫১] আর তাই লুত আলাইহিসসালামের পরবর্তী প্রত্যেক নবী সম্ভ্রান্ত শক্তিশালী বংশে জন্মগ্রহন করেছিলেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে কোরাইশ কাফেরগণ হাজার রকম অপচেষ্টা করেছিল কিন্তু তার হাশেমী গোত্রের লোকেরা সম্মিলিতভাবে তাকে আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছে, যদিও ধর্মমতের দিক দিয়ে তাদের অনেকেই ভিন্নমত পোষন করত। এ জন্যই সম্পূর্ন বনি হাশেম গোত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শামিল ছিল। যখন কোরাইশ কাফেররা তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের দানা পানি বন্ধ করে দিয়েছিল।
# [১] লূত আলাইহিসসালাম এক সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন হায়! আমি যদি তোমাদের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী হতাম, অথবা আমার আত্মীয় স্বজন যদি এখানে থাকত যারা এই যালেমদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতো তাহলে কত ভালো হতো। ফেরেশতাগণ লূত আলাইহিসসালামের অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে প্রকৃত রহস্য ব্যক্ত করলেন এবং বললেনঃ আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার দলই সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। আমরা মানুষ নই বরং আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশ্তা। তারা আমাদেরকে কাবু করতে পারবে না বরং আযাব নাযিল করে দুরাত্মা দুরাচারদের নিপাত সাধনের জন্যই আমরা আগমন করেছি। তারপরও লূত আলাইহিসসালাম তাদের বাঁধা দিতে থাকলেন। কিন্তু তারা কোন বাঁধাই মানল না। তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বের হয়ে তাদের মুখের উপর তার ডানা দিয়ে এক ঝাপটা মারলেন। আর তাতেই তারা অন্ধ হয়ে গেল। তারা যখন ফিরছিল তারা পথ দেখতে পাচ্ছিল না। [ইবন কাসীর] এ কথাই আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর অবশ্যই তারা লূতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে অসদুদ্দেশ্যে দাবি করল, তখন আমরা তাদের দৃষ্টি শক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং ভীতির পরিণাম।” [সূরা আল-কামারঃ ৩৭]

[২] তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে লূত আলাইহিসসালামকে বললেন- আপনি কিছুটা রাত থাকতে আপনার লোকজনসহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যান এবং সবাইকে সতর্ক করে দিন যে, তাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়, তবে আপনার স্ত্রী ব্যতীত। কারণ, অন্যদের উপর যে আযাব আপতিত হবে, তাকেও সে আযাব ভোগ করতে হবে।

[৩] এর এক অর্থ হতে পারে যে, আপনার স্ত্রীকে সাথে নেবেন না। এ হিসেবে তিনি তাকে সাথে নিয়ে বের হননি। [কুরতুবী] দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে যে, তাকে পিছনে ফিরে চাইতে নিষেধ করবেন না। [কুরতুবী] আরেক অর্থ হতে পারে যে, সে আপনার হুশিয়ারী মেনে চলবে না। সুতরাং সে তাদের সাথে বের হবার পর যখন একটি পাথর পতনের শব্দ শুনে লুতের হুশিয়ারী না মেনে পিছনের দিকে তাকায় এবং বলে উঠে, হায় আমার জাতি! সে তাদের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছিল। আর তখনি একটি পাথর এসে তাকে আঘাত করে এবং সে মারা যায়। [বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর]। এটি এক মর্মম্ভদ শিক্ষণীয় ঘটনা। এ সূরায় লোকদেরকে একথা শিক্ষা দেবার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন বুযর্গের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং কোন বুযর্গের সুপারিশ তোমাদের নিজেদের গোনাহের পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে না।
# [১] উক্ত আযাবের ধরন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- যখন আযাবের হুকুম কার্যকরী করার সময় হল, তখন আমি তাদের বসতির উপরিভাগকে নীচে করে দিলাম এবং তাদের উপর অবিশ্রান্তভাবে এমন পাথর বর্ষণ করালাম, যার প্রত্যেকটি পাথর চিহ্নিত ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি পাথরকে কি ধ্বংসাত্মক কাজ করতে হবে এবং কোন পাথরটি কোন অপরাধীর উপর পড়বে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিল। [তাবারী; বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ লূত আলাইহিস সালাম এর নাফরমান জাতির পরিণতি বর্ণনা করার পর দুনিয়ার অপরাপর জাতিকে সতর্ক করার জন্য ইরশাদ হয়েছে, পাথর বর্ষণের আযাব বর্তমান কালের যালেমদের থেকেও দূরে নয়। বরং কুরাইশ কাফেরদের জন্য ঘটনাস্থল ও ঘটনাকাল খুবই কাছে এবং অন্যান্য পাপিষ্ঠরাও যেন নিজেদেরকে এহেন আযাব হতে দূরে মনে না করে। আজ যারা যুলুমের পথে চলছে তারাও যেন এ আযাবকে নিজেদের থেকে দূরে না মনে করে। [ইবন কাসীর] লুতের সম্পপ্রদায়ের উপর যদি আযাব আসতে পেরে থাকে তাহলে তাদের উপরও আসতে পারে। লুতের সম্প্রদায় আল্লাহর আযাব ঠেকাতে পারেনি, এরাও পারবে না। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা লুতের সম্পপ্রদায়ের মত কাজ করতে পাবে, তাদের মধ্যে যারা তা করবে এবং যাদের সাথে তা করা হবে তাদের উভয়কে হত্যা করবে’। [আবু দাউদ: ৪৪৬২]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 80-83
وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً
And rained on them stones of clay,
Lut’s Inability, His Desire for Strength and the Angels’ Informing Him of the Reality

Allah, the Exalted says that Lut was threatening them with his statement,

قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ اوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ

He said:”Would that I had strength to overpower you, or that I could betake myself to some powerful support.”

meaning, `I would surely have made an example of you and done (harm) to you from myself and my family.’

In this regard, there is a Hadith which is reported from Abu Hurayrah that the Messenger of Allah said,

رَحْمَةُ اللهِ عَلَى لُوطٍ لَقَدْ كَانَ يَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيد

فَمَا بَعَثَ اللهُ بَعْدَهُ مِنْ نَبِيَ إِلاَّ فِي ثَرْوَةٍ مِنْ قَوْمِه

May Allah’s mercy be upon Lut, for verily, he betook himself to a powerful support –(meaning Allah, the Mighty and Sublime.)

Allah did not send any Prophet after him, except amidst (an influential family) among his people.

With this, the angels informed him that they were the messengers of Allah sent to them. They also told him that his people would not be able to reach him (with any harm).
قَالُواْ يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُواْ إِلَيْكَ

They (messengers said):”O Lut! Verily, we are the messengers from your Lord! They shall not reach you!

فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ
..

So travel with your family in a part of the night,

They commanded him to travel with his family during the last part of night and that he should follow them from behind. In this way it would be as though he were driving his family (as a cattle herder).

وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ

and let not any of you look back;

This means, “If you hear the sound of what (torment) befalls them (the people of the village), do not rush towards that disturbing noise. Rather, continue leaving.”

إِلاَّ امْرَأَتَكَ

but your wife,

Most of the scholars said that;

this means that she would not travel at night and she did not go with Lut. Rather, she stayed in her house and was destroyed.

Others said that;

it means that she looked back (during the travel).

This later group says that;

she left with them and when she heard the inevitable destruction, she turned and looked back. When she looked she said, “O my people!” Thus, a stone came down from the sky and killed her.

Then they (the angels) brought close to him the destruction of his people as good news for him, because he said to them, “Destroy them in this very hour.”

إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ

verily, the punishment which will afflict them, will afflict her.

They replied,

إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ

أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ

Indeed, morning is their appointed time. Is not the morning near!

They were saying this while Luts people were standing at his door. They tried to rush his door from all sides and Lut was standing at the door repelling them, deterring them and trying to prevent them from what they were doing. Yet, they would not listen to him. Instead, they threatened him and sought to intimidate him. At this point, Jibril came out to them and struck them in their faces with his wing. This blow blinded their eyes and they retreated, unable to see their way.

This is as Allah said,

وَلَقَدْ رَاوَدُوهُ عَن ضَيْفِهِ فَطَمَسْنَأ أَعْيُنَهُمْ فَذُوقُواْ عَذَابِى وَنُذُرِ

And they indeed sought to shame his guest (asking to commit sodomy with them). So We blinded their eyes (saying), “Then taste you My torment and My warnings.” (54:37).
The Town of Lut’s People is overturned and Their Destruction

Allah, the Exalted, says,

فَلَمَّا جَاء أَمْرُنَا

So when Our commandment came,

This happened at sunrise.

جَعَلْنَا عَالِيَهَا

We (turned it)…),

The city of Sadum (Sodom)

سَافِلَهَا

upside down,

This is similar to Allah’s statement,

فَغَشَّـهَا مَا غَشَّى

So there covered them that which did cover (torment with stones). (53:54)

وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ

and rained on them stones of clay, in an array.

This means, “We rained upon it with stones made of Sijjil.”
Sijjil is a Persian word meaning stones made of clay.

This definition has been mentioned by Ibn Abbas and others.

Some of the scholars said that it (Sijjil) derived from the word Sang, which means a stone.

Some others said it means Wakil, which is clay.

In another verse Allah says,

حِجَارَةً مِّن طِينٍ

the stones of clay, (51:32)

This means clay made into strong, hard stone.

Some of the scholars said it means baked clay.

Al-Bukhari said,

“Sijjil means that which is big and strong.”

Concerning Allah’s statement,

مَّنضُودٍ
(in an array).

Some of the scholars said that Mandud means the stones were arranged in the heavens and prepared for that (destruction).

Others said,

This word means that some of them (the stones) followed others in their descent upon the people of Lut.

Concerning the statement,

مُّسَوَّمَةً

Marked,

meaning the stones were marked and sealed, all of them having the names of their victims written on them.

Qatadah and Ikrimah both said,

“Musawwamah means each stone was encompassed by a sprinkling of red coloring.”

The commentators have mentioned that;

it (the shower of stones) descended upon the people of the town and upon the various villages around it. One of them would be speaking with some people when a stone would strike him from the sky and kill him while he was among the people. Thus, the stones followed them, striking the people in the entire land until they destroyed them all. Not a single one of them remained.

عِندَ رَبِّكَ
from your Lord;

Concerning Allah’s statement,

وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِينَ بِبَعِيدٍ
and they are not ever far from the wrongdoers.

This means that this vengeance (of Allah) is not far from similar wrongdoers.

Verily, it has been reported in a Hadith of the Sunan collections, from Ibn Abbas, which he attributed to the Prophet,

مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِه

Whoever you find doing the deed of Lut’s people (homosexuality), then kill the doer and the one who allows it to be done to him (both partners).

Leave a Reply