(Book# 722) [ ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ সেটি এমন একদিন, যেদিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে ; That is a Day whereon mankind will be gathered together,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 722)
[ ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ
সেটি এমন একদিন, যেদিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে ;
That is a Day whereon mankind will be gathered together,]
www.motaher21.net
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ ذٰلِکَ یَوۡمٌ مَّجۡمُوۡعٌ ۙ لَّہُ النَّاسُ وَ ذٰلِکَ یَوۡمٌ مَّشۡہُوۡدٌ ﴿۱۰۳﴾
নিশ্চয় এতে সে ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে, যে ব্যক্তি পরকালের শাস্তিকে ভয় করে। ওটা এমন একটা দিন হবে, যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হবে সকলের উপস্থিতির দিন।
Indeed in that is a sign for those who fear the punishment of the Hereafter. That is a Day for which the people will be collected, and that is a Day [which will be] witnessed.
وَ مَا نُؤَخِّرُہٗۤ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعۡدُوۡدٍ ﴿۱۰۴﴾ؕ
আর আমরা তো কেবল নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যই সেটা বিলম্বিত করছি।
And We do not delay it except for a limited term.
یَوۡمَ یَاۡتِ لَا تَکَلَّمُ نَفۡسٌ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ۚ فَمِنۡہُمۡ شَقِیٌّ وَّ سَعِیۡدٌ ﴿۱۰۵﴾
যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া কেও কথা বলতে পারবে না ; অতঃপর তাদের মধ্যে কেও হবে হতভাগ্য আর কেও হবে সৌভাগ্যবান।
The Day it comes no soul will speak except by His permission. And among them will be the wretched and the prosperous.

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১০৩-১০৫ নং আয়াত:-
ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ
সেটি এমন একদিন, যেদিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে ;
That is a Day whereon mankind will be gathered together,

১০৩-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর :-

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# ইতিহাসের এ ঘটনাবলীর মধ্যে এমন একটি নিশানী রয়েছে যে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাবে যে আখেরাতের আযাব অবশ্যই আসবে এবং এ সম্পর্কিত নবীদের দেয়া খবর সত্য। তাছাড়া এ নিশানী থেকে সেই আখেরাতের আযাব কেমন কঠিন ও ভয়াবহ হবে সেকথাও জানতে পারবে। ফলে এ জ্ঞান তার মনে ভীতির সঞ্চার করে তাকে সঠিক পথে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ইতিহাসের সেই জিনিসটি কি, যাকে আখেরাত ও তার আযাবের আলামত বলা যেতে পারে? এর জবাবে বলা যায়, যে ব্যক্তি ইতিহাসকে শুধুমাত্র ঘটনার সমষ্টি মনে করে না বরং এ ঘটনার যুক্তি প্রমাণ নিয়েও মাথা ঘামায় এবং তা থেকে ফলাফল গ্রহণ করতেও অভ্যস্ত হয় সে সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে। মানবজাতির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যে ধারাবাহিকতা ও নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে জাতি, সম্প্রদায় ও দলের উত্থান ও পতন ঘটতে থেকেছে এবং এ উত্থান ও পতনে যেমন সুস্পষ্টভাবে কিছু নৈতিক কার্যকারণ সক্রিয় থেকেছে আর পতনশীল জাতিগুলো যে ধরনের মারাত্মক ও শিক্ষণীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে পতন ও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেছে এসব কিছুই এ অকাট্য সত্যের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবহ যে, মানুষ এ বিশ্ব-জাহানে এমন একটি রাষ্ট্র শক্তির অধীন যে নিছক অন্ধ প্রাকৃতিক আইনের ওপর রাজত্ব করছে না বরং তার নিজের এমন একটি ন্যায়সঙ্গত নৈতিক বিধান আছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সে নৈতিকতার একটি বিশেষ সীমানার ওপরে অবস্থানকারীদেরকে পুরস্কৃত করে, যারা এ সীমানার নীচে নেমে আসে তাদেরকে কিছুকালের জন্য ঢিল দিতে থাকে এবং যখন তারা এর অনেক নীচে নেমে যায় তখন তাদেরকে এমনভাবে ঠেলে ফেলে দেয় যে, তারা ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ইতিহাস হয়ে যায়। একটি ধারাবাহিক বিন্যাস সহকারে সবসময় এ ঘটনাবলীর প্রকাশ হতে থাকার ফলে এ ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহেরও অবকাশ থাকে না যে, পুরস্কার ও শাস্তি এবং প্রতিদান ও প্রতিবিধান এ বিশ্ব-জাহানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি স্থায়ী আইন।

তারপর বিভিন্ন জাতির ওপর যেসব আযাব এসেছে সেগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অনুমান করা যায় যে আইনের দৃষ্টিতে পুরস্কার ও শাস্তির নৈতিক বাদী এ আযাবগুলোর মাধ্যমে কিছুটা অবশ্যি পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এখনো এ দাবীর বিরাট অংশ অপূর্ণ রয়েছে গেছে। কারণ দুনিয়ায় যে আযাব এসেছে তা কেবলমাত্র সমকালে দুনিয়ার বুকে যে প্রজন্ম বর্তমান ছিল তাদেরকেই পাকড়াও করেছে। কিন্তু যে প্রজন্ম অসৎকাজের বীজ বপন করে জুলুম-নির্যাতন ও অসৎকাজের ফসল তৈরী করে তা কাটার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিল এবং যাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হলো পরবর্তী প্রজন্মকে, তারা যেন প্রতিদান ও প্রতিশোধের আইনের কার্যকারিতা থেকে পরিষ্কার গা বাঁচিয়ে চলে গেছে। এখন যদি আমরা ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে বিশ্ব-জাহানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মেজাজ সঠিকভাবে বুঝতে পেরে থাকি। তাহলে আমাদের এ অধ্যয়নই একথার সাক্ষ্য দেবার জন্য যথেষ্ট যে, ইনসাফ ও বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে প্রতিদান ও প্রতিশোধের আইনের যে নৈতিক চাহিদাগুলো এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলো পূর্ণ করার জন্য এ ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আবার একটি দ্বিতীয় বিশ্বের জন্ম দেবে এবং সেখানে দুনিয়ার সমস্ত জালেমকে তাদের কৃতকর্মের পুরোপুরি বদলা দেয়া হবে। সেই বদলা দুনিয়ার এ আযাবগুলো থেকে হবে অনেক বেশী কঠিন ও কঠোর। (দেখুন সূরা আ’রাফ ৩০ এবং সূরা ইউনূস ১০ টীকা।)

# এ নির্বোধরা নিজেদের মনে এ ধারণা নিয়ে বসে আছে যে, অমুক হুযুর আমাদের পক্ষে সুপারিশ করে আমাদের বাঁচিয়ে দেবেন, অমুক বুযর্গ জিদ ধরে বসে যাবেন এবং নিজের সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেক ব্যক্তির গুনাহ মাফ করিয়ে না নিয়ে নিজের জায়গা থেকে উঠবেন না। অমুক হুযুর, যিনি আল্লাহর প্রিয়পাত্র, জান্নাতের পথে গোঁ ধরে বসে পড়বেন এবং নিজের অনুসারীদের বখশিশের পরোয়ানা আদায় করিয়ে নিয়েই ছাড়বেন। অথচ জিদ করা ও গোঁ ধরাতো দূরের কথা সেদিনের সেই আড়ম্বরপূর্ণ মহিমান্বিত আদালতে অতি বড় কোন গৌরবান্বিত ব্যক্তি এবং মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাও টুঁ শব্দটি করতে পারবে না। আর যদি কেউ সেখানে কিছু বলতে পারে তাহলে একমাত্র বিশ্ব-জাহানের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মহান অধিকারীর নিজের প্রদত্ত অনুমতি সাপেক্ষেই বলতে পারবে। কাজেই যারা একথা বুঝেই গায়রুল্লাহর বেদীমূলে নযরানা ও ভেঁট চড়ায় যে, এরা আল্লাহর দরবারে বড়ই প্রভাবশালী এবং তাদের সুপারিশের ভরসায় নিজেদের আমলনামা কালো করে যেতে থাকে, তাদের সেখানে চরম হতাশার সম্মুখীন হতে হবে।

# তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১০৩-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ কাফিরদেরকে ধ্বংস করা এবং মুমিনমু’মিনদেরকে মুক্তি দেয়ার মধ্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে আমার ওয়াদার সত্যতার, যে ওয়াদা আমি কিয়ামতের দিন সম্পর্কে করেছি। তিনি বলেন নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনমু’মিনদেরকে সাহায্য করবো পার্থিব জীবনে এবং সকলের হাযির হওয়ার দিন; অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ তাদের কাছে তাদের প্রতিপালক ওয়াহী পাঠালেনঃ “আমি অবশ্যই যালিমদেরকে ধ্বংস করবো।”

মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা এমন একটা দিন হবে যেই দিন সমস্ত মানুষকে অর্থাৎ প্রথম ও শেষের সব মানুষকে একত্রিত করা হবে, একজনও ছুটে যাবে না। ওটা হবে বড়ই কঠিন দিন। ঐ দিন হবে সকলের উপস্থিতির দিন। সেই দিন ফেরেশতা ও রাসূলদেরকে হাযির করা হবে এবং সমুদয় সৃষ্ট জীবকে একত্রিত করা হবে। তারা হচ্ছে মানব, দানব, পাখী, বন্য জন্তু এবং ভূ-পৃষ্টে বিচরণকারী সমস্ত কিছু। প্রকৃত ন্যায় বিচারক উত্তম রূপে ন্যায় বিচার করবেন। তিনি তিল পরিমাণও অত্যাচার করবেন না। যদি কিছু পুণ্য থাকে তবে তিনি তা বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন।

কিয়ামত সংঘটিত হতে বিলম্ব হওয়ার কারণ এই যে, একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দুনিয়া বনী আদম দ্বারা আবাদ হতে থাকবে এটা মহান আল্লাহ পূর্ব হতেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। এতে মোটেই আগা পিছা হবে না। অতঃপর এই নির্দিষ্ট সময় শেষে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন আল্লাহ তাআ’লার অনুমতি ছাড়া কেউই মুখ খুলতে পারবে না। কিন্তু রহমান (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দেবেন সে-ই কথা বলবে এবং সে-ও সঠিক কথাই বলবে। রহমানের (আল্লাহর) সামনে সমস্ত শব্দ নীচু হয়ে যাবে। সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমের শাফা’আতের হাদীসে রয়েছে যে, সেই দিন রাসূলগণ ছাড়া কেউই কথা বলবে না এবং তাঁদের কথা হবেঃ “হে আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপত্তা দান করুন।” হাশরের ময়দানে বহু হতভাগ্য লোকও থাকবে এবং বহু ভাগ্যবান লোকও থাকবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ এক দল বেহেশ্‌তে থাকবে এবং একদল দুযখে থাকবে। (৪২: ৭)

হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) অবতীর্ণ হয় তখন হযরত উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) আমরা কিসের উপর আমল করবো? আমাদের আমল কি এর উপর হবে যা পূর্বে শেষ হয়ে গেছে (অর্থাৎ পূর্বেই লিখিত আছে), না এর উপর যা পূর্বে শেষ হয় নাই (বরং নতুনভাবে লিখিত হবে)?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে উমার (রাঃ)! তোমাদের আমল এর উপর ভিত্তি করেই হবে যা পূর্বেই লিখা হয়ে গেছে। (নতুনভাবে আর লিখা হবে না) তবে প্রত্যেকের জন্যে ওটাই সহজ হবে যার জন্যে (অর্থাৎ যে কাজের জন্যে) তার জন্ম হয়েছে।” (এ হাদীসটি হা’ফিয আবু ইয়ালা (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

পূর্বের আয়াতগুলোতে বিভিন্ন জাতির অবাধ্যতা ও তাদের ওপর আপতিত শাস্তির বর্ণনা তুলে ধরার পর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে তাদের জন্য শিক্ষা যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় করে, যেদিন মানুষকে একত্রিত করা হবে। لِأَجَلٍ مَّعْدُوْدٍ অর্থাৎ কিয়ামতকে বিলম্বে সংঘটিত করার কারণ হল আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি নির্ধারিত সময় রেখে দিয়েছেন। যখন সে সময় এসে যাবে তখন এক মুহূর্তের জন্য বিলম্ব করা হবে না।

لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ কথা বলবে না অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সামনে কথা বলার কারো হিম্মত ও সাহস হবে না। তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে সুযোগ পাবে।

একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সে দিন নাবীগণ ছাড়া কারো কোন কথা বলার হিম্মত থাকবে না। আর নাবীগণের মুখে সেদিন একমাত্র এ কথা হবে হে আল্লাহ তা‘আলা! আমাকে পরিত্রাণ দাও, আমাকে পরিত্রাণ দাও। (সহীহ বুখারী হা: ৮০৬)

কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে দু‘টো দল থাকবে। একটি হল দুর্ভাগ্যবান এবং অপরটি সৌভাগ্যবান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ, আল্লাহর ধর-পাকড়ে অথবা এই ঘটনাবলীতে, যা নসীহত ও শিক্ষার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে (তাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে)।

[২] অর্থাৎ, হিসাব ও প্রতিদানের জন্য।

# কিয়ামত সংঘটিত হওয়াতে দেরী হওয়ার একমাত্র কারণ হল যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন। অতঃপর যখন সেই নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তের জন্যও বিলম্ব করা হবে না।
# ‘কথাও বলতে পারবে না’ কথাটির অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার সামনে কারোর কোন কথা বলার বা সুপারিশ করার হিম্মত ও সাহস হবে না। তবে যদি তিনি অনুমতি দেন, তাহলে সে কথা স্বতন্ত্র। সুপারিশ সম্পর্কিত লম্বা হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সেই দিন আম্বিয়াগণ ছাড়া কারোর কথা বলার হিম্মত ও সাহস হবে না। আর আম্বিয়াগণের মুখে সেদিন একমাত্র এই কথা হবে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে পরিত্রাণ দাও, আমাকে পরিত্রাণ দাও।” (বুখারী)

তাফসীরে‌ আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ ইতিহাসের এ ঘটনাবলীর মধ্যে এমন একটি নিশানী রয়েছে যে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাবে যে, আখেরাতের আযাব অবশ্যি আসবে এবং এ সম্পর্কিত নবীদের দেয়া খবর সত্য। তাছাড়া এ নিশানী থেকে সেই আখেরাতের আযাব কেমন কঠিন ও ভয়াবহ হবে সেকথাও জানতে পারবে। ফলে এ জ্ঞান তার মনে ভীতির সঞ্চার করে তাকে সঠিক পথে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে।

[২] অর্থাৎ সেদিন আগের পরের সবাইকে একত্রিত করা হবে। কেউই বাকি থাকবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন : “আর আমি তাদের সবাইকে জমায়েত করেছি, তাদের কাওকেই ছাড়িনি।” [ সূরা আল-কাহাফঃ ৪৭]

# [১] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ “সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্যরা কথা বলবে না এবং সে সঠিক বলবে।” [সূরা আন-নাবাঃ ৩৮] অর্থাৎ সেদিনের সেই আড়ম্বরপূর্ণ মহিমাম্বিত আদালতে অতি বড় কোন গৌরবান্বিত ব্যক্তি এবং মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাও টুঁ শব্দটি করতে পারবে না। আর যদি কেউ সেখানে কিছু বলতে পারে তাহলে একমাত্র বিশ্ব-জাহানের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মহান অধিকারীর নিজের প্রদত্ত অনুমতি সাপেক্ষেই বলতে পারবে।

[২] উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ যখন এ আয়াত “তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য আর কেউ হবে ভাগ্যবান” নাযিল হলো তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী! তা হলে কি জন্য আমল করব? যে ব্যাপারে চুড়ান্ত ফয়সালা হয়ে গেছে সেটার জন্য আমল করব নাকি চুড়ান্ত ফয়সালা হয়নি এমন বস্তুর জন্য আমল করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে উমর! বরং যে ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এবং কলম দিয়ে লিখা হয়ে গেছে এমন বিষয়ের জন্য আমল করবে। তবে যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সেটাকে সহজ করে দেয়া হবে।” [তিরমিযীঃ ৩১১১] অর্থাৎ তাকদীরের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যদি সে ঈমানদার হিসেবে লিখা হয়ে থাকে তবে তার জন্য সৎকাজ করা সহজ করে দেয়া হবে। আর যদি বদকার ও কাফের হিসেবে লেখা হয়ে থাকে তবে সে ভাল কাজ করতে চাইবে না, ভাল কাজ করা তার দ্বারা সহজ হবে না। তাই প্রত্যেকের উচিত ভাল কাজ করতে সচেষ্ট হওয়া। কারণ ভাল কাজের প্রতি প্রচেষ্টাই তার ভাগ্য ভাল কি মন্দ হয়েছে তার প্রতি প্রমাণবহ। তা না করে নিছক তাকদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে বুঝতে হবে যে, সে অবশ্যই হতভাগা, তার তাকদীরে ভালো লিখা হয়নি। যা অধিকাংশ দুর্ভাগা মানুষ সবসময় করে থাকে। তারা ভাগ্যকে অযথা টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে এবং ভাগ্য নিয়ে অযথা বাদানুবাদ করে। অপরপক্ষে, যাদের ভাগ্য ভাল, তারা তাকদীরের উপর ঈমান রাখে কিন্তু সেটাকে টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে ভাল কাজ করতে সদা সচেষ্ট থাকে। তারপর যদি ভাল কিছু পায় তবে বুঝতে হবে যে, প্রচেষ্টা করার কথাও তার তাকদীরে লিখা আছে। আর যারা সৎ কাজের চেষ্টা না করে অযথা তাকদীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের সম্পর্কে বুঝতে হবে যে, তারা সৎকাজের প্রচেষ্টা করবে না এটাই লিখা হয়েছিল সে জন্য তারা দুর্ভাগা। তাকদীর সম্পর্কে এটাই হচ্ছে মূল কথা [দেখুন, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন আলকাওলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ ২/৪১৩-৪১৪]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 103-105
ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ
That is a Day whereon mankind will be gathered together,
The Destruction of the Towns is a Proof of the Establishment of the Hour (Judgement)

Allah, the Exalted, is saying that in the destruction of the disbelievers and the salvation of the believers by us is,

إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً

Indeed in that (there) is a sure lesson.

This means an admonition and lesson concerning the truthfulness of that which We are promised in the Hereafter.

لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الاخِرَةِ

for those who fear the torment of the Hereafter.

إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ فِى الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الاٌّشْهَـدُ

Verily, We will indeed make victorious Our Messengers and those who believe in this world’s life and on the Day when the witnesses will stand forth. (40:51)

Allah, the Exalted, also says,

فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّـلِمِينَ

So their Lord revealed to them:”Truly, We shall destroy the wrongdoers. (14:13)

Concerning Allah’s statement,

ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ

That is a Day whereon mankind will be gathered together,

This means the first of them and the last of them.

This is similar to Allah’s statement,

وَحَشَرْنَـهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً

And We shall gather them all together so as to leave not one of them behind. (18:47)

وَذَلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ

and that is a Day when all will be present.

This means a day that is great. The angels will be present, the Messengers will gather and all of the creation will be gathered with their families. The humans, Jinns, birds, wild beasts and domesticated riding animals will all be gathered. Then the Most Just, Who does not wrong anyone even an atom’s weight, will judge between them and He will increase their good deeds in reward.

Concerning the statement,

وَمَا نُوَخِّرُهُ إِلاَّ لاَِجَلٍ مَّعْدُودٍ

And We delay it only for a term (already) fixed.

This means for a fixed period of time than cannot be increased or decreased.

Then He says.
يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ

On the Day when it comes, no person shall speak except by His (Allah’s) leave.

This means that on the Day of Judgement no one will speak except with the permission of Allah.

This is similar to another verse, which says,

لااَّ يَتَكَلَّمُونَ إِلااَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـنُ وَقَالَ صَوَاباً

they will not speak except him whom the Most Gracious (Allah) allows, and he will speak what is right. (78:38)

Allah also says,

وَخَشَعَتِ الَاصْوَاتُ لِلرَّحْمَـنِ

And all the voices will be humbled for the Most Gracious (Allah). (20:108)

In the Hadith about the intercession, which is recorded in the Two Sahihs, the Messenger of Allah said,

وَلَا يَتَكَلَّمُ يَوْمَيِذٍ إِلاَّ الرُّسُلُ وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَيِذٍ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّم

No one will speak on that day except the Messengers, and the call of the Messengers will be, “O Allah, save us, save us.”

Concerning Allah’s statement,

فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ

Some among them will be wretched and (others) blessed.

This means that from the people of the gathering (on Judgement Day), some will be miserable and some will be happy.

This is as Allah said,

فَرِيقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِى السَّعِيرِ

When a party will be in Paradise and a party in the blazing Fire. (42:7)

Al-Hafiz Abu Ya`la recorded in his Musnad on the authority of Ibn Umar that Umar said,

“When this verse was revealed,
فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ
(Some among them will be wretched and (others) blessed), I asked the Prophet, `O Messenger of Allah, will there be a sign for us to know (which party we are from)? Will it be because of something that a person did, or something that he did not do?’

He said,

عَلَى شَيْءٍ قَدْ فُرِغَ مِنْهُ يَا عُمَرُ وَجَرَتْ بِهِ الاَْقْلَمُ وَلَكِنْ كُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَه

O Umar, it will be due to something that he did and the pens wrote it down. But every easy deed was created for its purpose (to be carried out).

Leave a Reply