(Book# 726) [ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ নামায কায়েম কর। The Command to establish the Prayer .] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 726)
[ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ
নামায কায়েম কর।
The Command to establish the Prayer .]
www.motaher21.net
وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ طَرَفَیِ النَّہَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیۡلِ ؕ اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡہِبۡنَ السَّیِّاٰتِ ؕ ذٰلِکَ ذِکۡرٰی لِلذّٰکِرِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ۚ
নামায কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে; নিঃসন্দেহে পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মুছে ফেলে; এটা হচ্ছে উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য একটি উপদেশ।
And establish prayer at the two ends of the day and at the approach of the night. Indeed, good deeds do away with misdeeds. That is a reminder for those who remember.
وَ اصۡبِرۡ فَاِنَّ اللّٰہَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۱۵﴾
আর ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পুণ্যফলকে পন্ড করেন না।
And be patient, for indeed, Allah does not allow to be lost the reward of those who do good.

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১১৪-১১৫ নং আয়াত:-
وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ
নামায কায়েম কর।
The Command to establish the Prayer .

১১৪-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর :-

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আলী ইবনু আবি তালহা (রঃ), হযরত ইবনু আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (আরবি) দ্বারা ফজর ও মাগরিবের নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হাসান (রঃ) ও আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) এরূপই বলেছেন। হাসান (রঃ), কাতাদা’, যহহাক (রঃ) প্রভৃতির বর্ণনায় বলেন যে, ওটা হচ্ছে ফজর ও আসরের নামায। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ওটা হচ্ছে দিনের প্রথম ফজর এবং অন্যবার যুহর ও আসরের নামায। (আরবি) সম্পর্কে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত হাসান (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন বলেন যে, এর দ্বারা ই’শার নামায বুঝানো হয়েছে। ইবনুল মুবারকের (রঃ) বর্ণনায় হাসান (রঃ) বলেন যে, ওটা হচ্ছে মাগরিব ও ই’শার নামায।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, মাগরিব ও ই’শা এ দু’টি হচ্ছে রাত্রির কিছু অংশের নামায। অনুরূপভাবে মুজাহিদ (রঃ), মুহাম্মদ ইবনু কা’ব (রঃ), কাতাদা’ (রঃ) এবং যহ্‌হাক (রঃ) বলেন যে, ওটা হচ্ছে মাগরিব ও ই’শার নামায।

সম্ভবতঃ এ আয়াতটি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এটা অবতীর্ণ হয় মিরাজের রাত্রে। তখন শুধু দুই ওয়াক্ত নামায অবতীর্ণ হয়। এক ওয়াক্ত নামায সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং আর এক ওয়াক্ত নামায সূর্যাস্তের পূর্বে এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপর এবং তার উম্মতের উপর রাত্রিকালে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াজিব করা হয়। অতঃপর এটা উম্মতের উপর থেকে রহিত করে দেয়া হয় এবং তার উপর বহাল থেকে যায়। অতঃপর তার উপর থেকেও এটা রহিত হয়ে যায়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লা সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।

আল্লাহ পাক বলেনঃ “নিশ্চয় সৎ কার্যাবলী মন্দকার্যসমূহকে মুছে ফেলে।” সুনানে হযরত আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমান কোন পাপ করে, অতঃপর অযু করে দু’রাকাআত নামায পড়ে, আল্লাহ তাআ’লা তার পাপ ক্ষমা করে দেন।”

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আমিরুল মু’মিনীন হযরত উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (একদা) তিনি অযু করেন রাসূলুল্লাহর (সঃ) অযুর ন্যায়। তারপর বলেনঃ “রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আমি এভাবেই অযু করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এই অযুর ন্যায় অযু করবে, অতঃপর আন্তরিকতার সাথে বা বিশুদ্ধ অন্তরে দু’রাকাআত নামায পড়বে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”

হযরত উসমানের (রাঃ) আযাদকৃত গোলাম হা’রিস (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা হযরত উসমান (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে বসেছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে মুআয্‌যিন আসেন। তিনি তাঁর কাছে বরতনে পানি চান। (পানি দেয়া হলে) তিনি অযু করেন। অতঃপর বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আমার এই অযুর মত অযু করতে দেখেছি। (অযুর পরে) তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এই অযুর ন্যায় অযু করবে, তার জন্যে যুহর ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে সমস্ত (সাগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তারপর সে আসরের নামায পড়বে, (এর ফলে) তার জন্যে আসর ও যুহরের মধ্যবর্তী সময়ের (সাগীরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। এরপর সে মাগরিবের নামায পড়বে, এর ফলে তার মাগরিব ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তারপর সে শুয়ে পড়বে এবং সকালে উঠে ফজরের নামায পড়বে, এতে তার ফজর ও ই’শার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। এ গুলিই হচ্ছে সৎ কর্ম, যেগুলি মন্দ কাজগুলিকে মিটিয়ে দেয়।”

সহীহ্ হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আচ্ছা বলতো, যদি তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার ওপর প্রবাহিত নদী থাকে এবং সে প্রত্যহ তাতে পাঁচ বার করে গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? তারা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! না (তার দেহে কোন ময়লা থাকবে না)।” তিনি তখন বললেনঃ “এটাই দৃষ্টান্ত হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের। এগুলির কারণে আল্লাহ তাআ’লা ভুলত্রুটি ও পাপরাশি ক্ষমা করে থাকেন।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “পাঁচ ওয়াক্ত নামায এক জুমআ’ হতে আর এক জুমআ’ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আর এক রমাযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফফারা স্বরূপ (গুনাহ মাফের কারণ), যে পর্যন্ত কাবীরা গুণাহ্ থেকে বেঁচে থাকা যায়।”

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “প্রত্যেক নামায ওর পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু মা’লিক আশআ’রী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নামাযসমূহকে পূর্ববর্তী সময়ের জন্যে গুনাহ্ মাফের কারণ করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ “নিশ্চয় সৎ কার্যাবলী মন্দকার্য সমূহকে মুছে ফেলে।” (এ হাদীসটি আবু জাফর ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক কোন একটি স্ত্রীলোককে চুম্বন করে নবীর (সঃ) নিকট আগমন করে এবং তাঁকে এ খবর অবহিত করে (এবং অত্যন্ত লজ্জিত হয়)। তখন আল্লাহ তাআ’লা উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। তখন লোকটি বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি শুধু আমারই জন্যে নির্দিষ্ট?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “না বরং আমার সমস্ত উম্মতের জন্যে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ লোকটি বলেঃ “আমি এই বাগানে ঐ স্ত্রীলোকটির সাথে সঙ্গম ছাড়া সব কিছুই করেছি। সুতরাং হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী আমাকে শাস্তি প্রদান করুন।” তার এ কথায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছুই বললেন না। লোকটি চলে গেল। হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা তো তার দোষ গোপন রাখতেন। যদি সে নিজের দোষ গোপন রাখতো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বরাবর লোকটির দিকে তাকাতে থাকেন। তারপর তিনি (সাহাবীদেরকে) বলেনঃ “তাকে ফিরিয়ে ডাকো।” সুতরাং তারা তাকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনলেন। তখন তিনি তার সামনে (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করলেন। তখন হযরত মুআ’য (রাঃ) এবং এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি তার একার জন্যে, না সমস্ত লোকের জন্যে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “না বরং সমস্ত লোকের জন্যে।”

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের মধ্যে চরিত্রকে বন্টন করে দিয়েছেন, যেমন বন্টন করেছেন তোমাদের মধ্যে রিয্‌ককে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা যাকে ভালবাসেন তাকেই দুনিয়া দান করেন এবং যাকে ভালবাসেন না তাকেও দুনিয়া দান করে থাকেন। (অর্থাৎ দুনিয়ার সুখ দান করেন)। কিন্তু তিনি যাকে ভালবাসেন একমাত্র তাকেই দ্বীন দান করে থাকেন। সুতরাং আল্লাহ যাকে দ্বীন দান করেন তাকে তিনি ভালবাসেন। যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! কোন বান্দা মুসলমান হতে পারে না, যে পর্যন্ত না তার অন্তর ও জিহ্‌বা মুসলমান হয় এবং সে মু’মিন হতে পারে না, যে পর্যন্ত না তার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে। জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (সঃ)! তার অনিষ্ঠ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “তার প্রতারণা ও অত্যাচার।” এরপর তিনি বলেনঃ জেনে রেখোঁরেখো যে, যদি মানুষ হারাম মাল উপার্জন করে এবং তার থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তবে আল্লাহ তার সেই মালে বরকত দেন না এবং সে তার থেকে কিছু সাদ্‌কা করলে তিনি তা কবুল করেন না। আর সে ঐ মালের যা কিছু ছেড়ে মারা যায় তা তার জন্যে জাহান্নামের আগুনই হয়। জেনে রেখোঁরেখো যে, আল্লাহ তাআ’লা মন্দকে মন্দ দ্বারা মুছে ফেলেন না, বরং মন্দকে ভাল দ্বারা মুছে থাকেন।

বর্ণিত আছে যে, ফুলান ইবনু মু’সাব আনসারদের একজন লোক ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট এসে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি একজন স্ত্রীলোকের নিকট প্রবেশ করেছিলাম এবং আমি তার থেকে ঐসব কিছু ভোগ করেছি যা কোন লোক তার স্ত্রী থেকে ভোগ করে থাকে। তবে আমি তার সাথে সঙ্গম করি নাই। তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে কি উত্তর দিবেন তা তিনি খুঁজে পেলেন না। তখন উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে ডেকে পাঠান এবং তার সামনে আয়াতটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, লোকটি হচ্ছে আমর ইবনু গাইয়া আল-আনসারী। আর মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, সে হচ্ছে আবু নুফাইল আমির ইবনু কায়েস আল-আনসারী। খতীবুল বাগদাদী (রঃ) বলেন যে, লোকটি হচ্ছে আবু ইয়াস্ত্র কা’ব ইবনু আমর (রাঃ)।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত উমারের (রাঃ) নিকট এসে বলেঃ “একটি স্ত্রী লোক সওদা কেনার জন্যে আমার নিকট এসেছিল। বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, আমি তাকে কক্ষে নিয়ে গিয়ে সহবাস ছাড়া তার সাথে সব কিছু করেছি। সুতরাং এখন শরীয়তের বিধান মতে আমার উপর হদ্দ জারী করুন।” তার একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “তুমি ধ্বংস হও, সম্ভবতঃ তার স্বামী আল্লাহর পথে গিয়েছে বলে অনুপস্থিত রয়েছে?” সে উত্তরে বলেঃ “হা।” তিনি তাকে বললেনঃ তুমি হযরত আবু বকরের (রাঃ) কাছে গিয়ে এটা জিজ্ঞেস কর। সে তখন তাঁর কাছে যায় এবং তাকে জিজ্ঞেস করে। তিনি বলেনঃ সম্ভবতার স্বামী আল্লাহর পথে রয়েছে বলে অনুপস্থিত আছে। অতঃপর তিনি হযরত উমারের (রাঃ) ন্যায় বললেন। (অর্থাৎ লোকটিকে নবীর (সঃ) কাছে যেতে বললেন)। তাঁকে সে ঐ কথাই বললো। নবী (সঃ) বললেনঃ “সম্ভবতঃতার স্বামী আল্লাহর পথে আছে বলে অনুপস্থিত রয়েছে।” ঐ সময় উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন লোকটি বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই সুসংবাদ কি শুধু আমার জন্যেই নির্দিষ্ট, না সমস্ত মানুষের – জন্যেই?” উমার (রাঃ) তখন হাত দ্বারা বক্ষে মারেন এবং বলেনঃ “না, এই নিয়ামত নির্দিষ্ট নয় বরং এটা সাধারণ লোকদের জন্যেও বটে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ উমার (রাঃ) সত্য বলেছে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, কা’ব ইবনুল আমর আনসারী (রাঃ) বলেনঃ “ঐ স্ত্রীলোকটি আমার কাছে এক দিরহামের খেজুর কিনতে এসেছিল। আমি তাকে বললামঃ ঘরে ভাল খেজুর আছে। সে আমার ঘরের মধ্যে গেল। আমিও ঘরের মধ্যে গিয়ে তাকে চুম্বন করলাম। অতঃপর আমি হযরত উমারের (রাঃ) কাছে গমন করলাম। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে বললেনঃ “আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজের নফসের উপর পর্দা ফেলে দাও আর কাউকেও এ কথা বলো না।” আমি কিন্তু ধৈর্য ধারণ করতে পারলাম না। সুতরাং হযরত আবু বকরের (রাঃ) কাছে গেলাম। তিনি বললেনঃ “আল্লাহকে ভয় কর, নিজের নফসের উপর পর্দা ফেলো এবং কাউকেও এ খবর দিয়ো না।” এবারও আমি সবর করতে পারলাম না। কাজেই আমি নবীর (সঃ) নিকট গমন করলাম। তাঁকে এ খবর দিলে তিনি আমাকে বললেনঃ “আফসোস যে, তুমি এমন এক ব্যক্তির অনুপস্থিতির সময় তার স্ত্রীর ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে গিয়েছে।” এ কথা শুনেতো আমি নিজেকে জাহান্নামী মনে করলাম এবং আমার অন্তরে এই খেয়াল জাগলো যে, হায়! আমার ইসলাম গ্রহণ যদি এ ঘটনার পর হতো (তবে কতই না ভাল হতো)! রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছুক্ষণ ধরে তাঁর ঘাড় নীচু করে থাকলেন। ঐ সময়েই হযরত জিবরাঈল (আঃ) উপরোক্ত আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হলেন। তখন একটি লোক বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি খাস করে তারই জন্যে, না সাধারণভাবে সমস্ত মানুষের জন্যে।”

হযরত মুআয্‌ ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা নবীর (সঃ) পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ লোকের সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে লোকটি এমন একটি স্ত্রীলোকের নিকট পৌঁছেছে যে তার জন্যে হালাল নয়, সে ঐ স্ত্রীলোকটিকে ভোগ করার ব্যাপারে কিছুই ছাড়ে নাই, যে ভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে ভোগ করে; শুধু এটুকুই বাকী যে, তার সাথে সে সঙ্গম করে নাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে তাকে বললেনঃ “তুমি উত্তমরূপে অযু কর, তারপর দাঁড়িয়ে যাও এবং নামায পড়ে নাও।” ঐ সময় মহা মহিমান্বিত আল্লাহ (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। তখন হযরত মুআয্‌ (রাঃ) বলেনঃ “এটা তার জন্যেই খাস, না সাধারণভাবে সমস্ত মুসলমানের জন্যে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “না বরং সাধারণভাবে সমস্ত মুসলমানের জন্যেই এই হুকুম।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল হাসান দারকুতনী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইয়াহইয়া ইবনু জা’দাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবীর (সঃ) সাহাবীদের একজন লোক একটি স্ত্রীলোকের উল্লেখ করে, ঐ সময় সে তাঁর কাছে বসেছিল। অতঃপর কোন প্রয়োজনে (স্ত্রীলোকটির নিকট যাওয়ার জন্যে) সে অনুমতি প্রার্থনা করে। আল্লাহর নবী (সঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করেন। সুতরাং সে স্ত্রীলোকটির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু তাকে সে পেলো না। অতঃপর নবীকে (সঃ) বৃষ্টির সুসংবাদ দেয়ার ইচ্ছায় তার দিকে অগ্রসর হয়। (পথিমধ্যে) সে স্ত্রী লোকটিকে একটি পুকুরের ধারে বসা অবস্থায় দেখতে পায়। এমতাবস্থায় তার বক্ষে সে হাত দেয় এবং তার দু’পায়ের মাঝে বসে পড়ে। এই অবস্থায় সে লজ্জিত হয়ে উঠে দাঁড়ায় এবং সরাসরি নবীর (সঃ) নিকট হাযির হয়ে যা সে করেছে তা তাঁকে জানিয়ে দেয়। তখন নবী (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং চার রাকাআত নামায পড়ে নাও। অতঃপর তিনি ………(আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করে তাকে শুনিয়ে দেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু উমামা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক নবীর (সঃ) নিকট এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার উপর আল্লাহর হদ্দ জারী করুন। এ কথা সে একবার বা দু’বার বলে। তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অতঃপর নামাযের জন্যে ইকামত দেয়া হয়। নামায শেষে নবী (সঃ) বলেনঃ “যে লোকটি বলেছিল আমার উপর আল্লাহর হদ্দ কায়েম করুন সে লোকটি কোথায়?” লোকটি উত্তরে বললো:“এই যে আমি।” তিনি বললেন : “তুমি কি পূর্ণরূপে অযু করে এই মাত্র আমাদের সাথে নামায পড়লে? উত্তরে সে বললো: “হা।” তিনি বললেনঃ তা হলে তোমার পাপ এমনভাবে মুছে গেল যে, তুমি ঐ দিনের মত হয়ে গেলে যেই দিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল। খবরদার আর যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এ হাসীদটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “(একদা) আমি হযরত সালমান ফারসীর (রাঃ) সাথে একটি গাছের নীচে বসেছিলাম। তিনি ঐ গাছের একটি শুষ্ক ডাল নিয়ে ঝাড়তে লাগলেন। ফলে ওর পাতাগুলি ঝরে পড়লো। তারপর তিনি বললেনঃ “হে আবু উসমান (রাঃ)! আমি কেন এরূপ করলাম তা যে তুমি জিজ্ঞেস করছো না?” আমি বললামঃ “কেন আপনি এরূপ করলেন?’ তিনি বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরূপ করেছিলেন।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “মুসলমান যখন উত্তমরূপে অযু করে, অতঃপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, তার পাপরাশি ঐ রূপেই ঝরে পড়ে যেমন এই ডালের পাতাগুলি ঝরে পড়লো।” তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহ্‌মদ (রঃ) স্বীয় ‘মুসনাদে’ বর্ণনা করেছেন)

হযরত মআ’য (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে মআ’য (রাঃ)! খারাপ কাজের পরপরই কোন ভাল কাজ করে ফেল, তাহলে এই ভাল কাজটি খারাপ কাজটিকে মুছে ফেলবে। আর লোকদের সাথে উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে মেলামেশা কর।” (এ হাদীসটি আহ্মদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহকে ভয় কর এবং যেখানেই থাক না কেন কোন খারাপ কাজের পিছনে কোন ভাল কাজ অবশ্যই করে ফেল, তা হলে এ ভালো কাজটি ঐ খারাপ কাজটিকে মুছে ফেলবে। আর উত্তম চরিত্রের সাথে জনগণের সাথে মেলামেশা কর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহ্মদ (রঃ) স্বীয় ‘মুসনাদে’ বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দিন।” তিনি বললেনঃ “যখন তুমি কোন মন্দ কাজ করে বসবে তখন ওর পরেই কিছু ভাল কাজ করে ফেলবে। তাহলে এই ভাল কাজটি ঐ মন্দ কাজটিকে মুছে ফেলবে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু’কি একটি উত্তম কাজ নয়? তিনি উত্তরে বললেনঃ “এটা তো বড়ই উত্তম কাজ।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রাত্রি ও দিবসের যে কোন সময় কোন বান্দা ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু’ বলে, তার আমল নামা হতে গুণাগুলি মিটিয়ে দেয়া হয় এবং ঐ স্থানে ঐ পরিমান পূণ্য লেখে দেয়া হয়।” (হাদীসটি ইমাম হাফিয আবু ইয়ালা আল-মৃসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার এমন কোন আকাঙ্খা বা বাসনা নাই যা আমি পূর্ণ না করে ছেড়েছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আল্লাহ ছাড়া কেউ মাবুদমা’বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তুমি কি এই সাক্ষ্য দিচ্ছ? সে উত্তরে বললো: “হা।” তিনি বললেনঃ “তাহলে এটাই ঐ সবগুলোর উপর বিজয়ী থাকবে।” (হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল-বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# দিনের দু’প্রান্ত বলতে ফজর ও মাগরিব এবং কিছু রাত অতিবাহিত হবার পর বলতে এশার সময় বুঝানো হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, এ বক্তব্য এমন এক সময়ের যখন পাঁচ ওয়াক্তের নামায নির্ধারিত হয়নি। মি’রাজের ঘটনা এরপর সংঘটিত হয় এবং তাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বিধান দেয়া হয়।

# অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন বনী ইসরাঈল ৯৫ :-

ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার মানে হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয়। হাদীসে সুস্পষ্ট একথা বর্ণনা করা হয়েছে যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক নামায ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী তবুও যখন ফজরের নামাযের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি একটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ কারণেই নবী ﷺ ফজরের নামাযে দীর্ঘ আয়াত ও সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন। সাহাবায়ে কেরামও তাঁর এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং পরবর্তী ইমামগণ একে মুস্তাহাব গণ্য করেন।

এ আয়াতে সংক্ষেপে মি’রাজের সময় যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল তার সময়গুলো কিভাবে সংগঠিত ও বিন্যস্ত করা হবে তা বলা হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে, একটি নামায পড়ে নিতে হবে সূর্যোদয়ের আগে। আর বাকি চারটি নামায সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে। তারপর এ হুকুমটি ব্যাখ্যা করার জন্য জিব্রীল আলাইহিস সালামকে পাঠানো হয়েছে। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযগুলোর সঠিক সময়ের শিক্ষা দান করেছেন। আবু দাউদ ও তিরমিযীতে ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ

“জিব্রীল দু’বার আমাকে বায়তুল্লাহর কাছাকাছি জায়গায় নামায পড়ান। প্রথম দিন যোহরের নামায ঠিক এমন সময় পড়ান যখন সূর্য সবেমাত্র হেলে পড়েছিল এবং ছায়া জুতার একটি ফিতার চাইতে বেশী লম্বা হয়নি। তারপর আসরের নামায পড়ান এমন এক সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমপরিমাণ ছিল। এরপর মাগরিবের নামায এমন সময় পড়ান যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে। অতঃপর পশ্চিমাকাশের লালিমা খতম হবার পরপরই এশার নামায পড়ান আর ফজরের নামায পড়ান ঠিক যখন রোযাদারের ওপর খাওয়া দাওয়া হারাম হয়ে যায় তেমনি সময়। দ্বিতীয় দিন তিনি আমাকে যোহরের নামায এমন সময় পড়ান যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমান ছিল। আসরের নামায পড়ান এমন সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের দ্বিগুণ ছিল। মাগরিবের নামায পড়ান এমন সময় যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে। এশার নামায পড়ান এমন সময় যখন রাতের তিনভাগের একভাগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং ফজরের নামায পড়ান আলো চারদিকে ভালভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর। তারপর জিব্রীল আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে মুহাম্মাদ! এই হচ্ছে নবীদের নামায পড়ার সময় এবং এ দু’টি সময়ের মাঝখানেই হচ্ছে নামাযের সঠিক সময়।” (অর্থাৎ প্রথম দিন প্রত্যেক নামাযের প্রথম সময় এবং দ্বিতীয় দিন শেষ সময় বর্ণনা করা হয়। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায এ দু’টি সময়ের মাঝখানে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।) কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায়ও পাঁচটি নামাযের এ ওয়াক্তসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

যেমন সূরা হূদে বলা হয়েছেঃ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ طَرَفَیِ النَّہَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیۡلِ ؕ اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡہِبۡنَ السَّیِّاٰتِ ؕ ذٰلِکَ ذِکۡرٰی لِلذّٰکِرِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ۚ |

“নামায কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিব) এবং কিছু রাত পার হয়ে গেলে (অর্থাৎ এশা)।” (১১৪ আয়াত)

সূরা ‘তা-হা’য়ে বলা হয়েছেঃ فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِہَا ۚ وَ مِنۡ اٰنَآیِٔ الَّیۡلِ فَسَبِّحۡ وَ اَطۡرَافَ النَّہَارِ لَعَلَّکَ تَرۡضٰی ﴿۱۳۰﴾ “হে মুহাম্মাদ! এরা যেসব কথা বলে তাতে সবর করো এবং আর নিজের রবের হামদ (প্রশংসা) সহকারে তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা) করতে থাকো সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসর) এবং রাতের সময় আবার তাসবীহ করো (এশা) আর দিনের প্রান্তসমূহে (অর্থাৎ সকাল, যোহর ও মাগরিব)” (১৩০ আয়াত)

তারপর সূরা রূমে বলা হয়েছেঃ

فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ حِیۡنَ تُمۡسُوۡنَ وَ حِیۡنَ تُصۡبِحُوۡنَ ﴿۱۷﴾

وَ لَہُ الۡحَمۡدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ عَشِیًّا وَّ حِیۡنَ تُظۡہِرُوۡنَ ﴿۱۸﴾ “কাজেই আল্লাহর তাসবীহ করো যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় (মাগরিব) এবং যখন সকাল হয় (ফজর)। তাঁরই জন্য প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং তাঁর তাসবীহ করো দিনের শেষ অংশে (আসর) এবং যখন তোমাদের দুপুর (যোহর) হয়।” [১৭-১৮ আয়াত]

নামাযের সময় নির্ধারণ করার সময় যেসব প্রয়োজনীয় দিকে নজর রাখা হয়েছে তার মধ্যে সূর্য পূজারীদের ইবাদাতের সময় থেকে দূরে থাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সকল যুগেই সূর্য মুশরিকদের সবচেয়ে বড় বা অনেক বড় মাবুদের স্থান দখল করেছে। সূর্য উদয় ও অস্তের সময়টায়ই তারা বিশেষ করে তার পূজা করে থাকে। তাই এসব সময় নামায পড়াকে হারাম করা হয়েছে। তাছাড়া সাধারণত সূর্য উদয়ের পর থেকে নিয়ে মধ্য গগণে পৌঁছার সময়ে তার পূজা করা হয়ে থাকে। কাজেই ইসলামে হুকুম দেয়া হয়েছে, দিনের বেলার নামাযগুলো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে পড়া শুরু করতে হবে এবং সকালের নামায সূর্য হবার আগেই পড়ে ফেলতে হবে। এ প্রয়োজনীয় বিষয়টি নবী ﷺ বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা করেছেন। একটি হাদীসে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ (রা.) বর্ণনা করছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযের সময় জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ

“ফজরের নামায পড়ো এবং সূর্য উদিত হতে থাকলে বিরত হও, সূর্য ওপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত। কারণ সূর্য যখন উদিত হয় তখন শয়তানের শিং দু’টির মাঝখান দিয়ে বের হতে থাকে এবং এ সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে।”

তারপর তিনি আসরের নামাযের উল্লেখ করার পর বললেনঃ

“তারপর নামায থেকে বিরত হও সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত। কেননা, সূর্য শয়তানের শিং দু’টির মাঝখানে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফেররা তার পূজা করে।” (মুসলিম)

এ হাদীসে সূর্যের শয়তানের শিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়াকে একটা রূপক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় শয়তান লোকদের জন্য একটি বিরাট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেয়। লোকেরা যখন সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় তার সামনে সিজদা করে তখন যেন মনে হয় শয়তান তাকে নিজের মাথায় করে এনেছে এবং মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। রসূল ﷺ তাঁর নিজের নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে এ রূপকের রহস্য ভেদ করেছেন “এ সময় কাফেররা তার পূজা করে।”

# ত্বা-হা ১১১ :-
যেহেতু মহান আল্লাহ‌ এখনই তাদেরকে ধ্বংস করতে চান না এবং তাদের জন্য একটি অবকাশ সময় নির্ধারিত করে ফেলেছেন, তাই তাঁর প্রদত্ত এ অবকাশ সময়ে তারা তোমার সাথে যে ধরনের আচরণই করুক না কেন তোমাকে অবশ্যি তা বরদাশত করতে হবে এবং সবরের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্তও কড়া কথা শুনেও নিজের সত্যবাণী প্রচার ও স্মরণ করিয়ে দেবার দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। তুমি নামায থেকে এ সবর, সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করবে। এ নির্ধারিত সময়গুলোতে তোমার প্রতিদিন নিয়মিত এ নামায পড়া উচিত। “রবের প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা” করা মানে হচ্ছে নামায। যেমন সামনের দিকে আল্লাহ‌ নিজেই বলেছেনঃ وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا “নিজের পরিবার পরিজনকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও এবং নিজেও নিয়মিত তা পালন করতে থাকো।”

নামাযের সময়গুলোর প্রতি এখানেও পরিষ্কার ইশারা করা হয়েছে। সূর্য উদয়ের পূর্বে ফজরের নামায। সূর্য অস্তে যাবার আগে আসরের সময় আর রাতের বেলা এশা ও তাহাজ্জুদের নামায। দিনের প্রান্তগুলো অবশ্যি তিনটিই হতে পারে। একটি প্রান্ত হচ্ছে প্রভাত, দ্বিতীয় প্রান্তটি সূর্য ঢলে পড়ার পর এবং তৃতীয় প্রান্তটি হচ্ছে সন্ধ্যা। কাজেই দিনের প্রান্তগুলো বলতে ফজর, যোহর ও মাগরিবের নামায হতে পারে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা হূদ ১১৩ , বনী ইসরাঈল ৯১ থেকে ৯৭ , আর রূম ২৪ ও আল মু’মিন ৭৪ টীকাগুলো দেখুন।

# যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের এ দাওয়াতের প্রতি শত্রুতার ব্যাপারে তোমাদের সাথে যেসব অসৎকাজ করা হচ্ছে এসবগুলো দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, তোমরা অনেক বেশী সৎ হয়ে যাও এবং নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে এ অসৎকাজকে পরাস্ত করো। আর তোমাদের সৎ বানাবার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে এ নামায। নামায আল্লাহর স্মরণকে তরতাজা করতে থাকবে এবং তার শক্তির জোরে তোমরা অসৎকাজের এ সংঘবদ্ধ তুফানী শক্তির কেবল মোকাবিলাই করতে পারবে তাই নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে।

# সুরা: আল-আনকাবুত
আয়াত নং :-45

اُتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ١ؕ اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ١ؕ وَ لَذِكْرُ اللّٰهِ اَكْبَرُ١ؕ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ

(হে নবী!) তোমার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা তেলাওয়াত করো এবং নামায কায়েম করো, নিশ্চিতভাবেই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণ এর চাইতেও বড় জিনিস। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কিছু করো।

তাফসীর :-
# আপাত দৃষ্টিতে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু আসলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্যে করেই বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের ওপর সে সময় যেসব জুলুম-নিপীড়ন চালানো হচ্ছিল এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল সে সবের মোকাবিলা করার জন্য পিছনের চার রুকুতে অনবরত সবর, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার উপদেশ দেবার পর এখন তাদেরকে বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তেলাওয়াত ও নামায কায়েম করার কথা বলা হচ্ছে। কারণ এ দু ’টি জিনিসই মু’মিনকে এমন সুগঠিত চরিত্র ও উন্নতর যোগ্যতার অধিকারী করে যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যা এবং দুষ্কৃতির ভয়াবহ ঝনঝার মোকাবিলায় শুধু মাত্র টিকে থাকতে নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কুরআন তেলাওয়াত ও নামাযের মাধ্যমে এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে যখন সে কুরআনের তেলাওয়াত শুধুমাত্র শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে সেগুলোকে সঞ্চারিত করে যেতে থাকে এবং তার নামায কেবলমাত্র শারীরিক কসরতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তার অন্তরের প্রতিধ্বনি এবং চরিত্র ও কর্মেও সক্রিয় শক্তিতে পরিণত হয়। সামনের দিকের বক্তব্যে কুরআন মাজীদ নিজেই নামাযের কাঙ্ক্ষিত গুণ বর্ণনা করছে। আর কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা দরকার যে, মানুষের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে তার হৃদয়তন্ত্রীতে যে তেলাওয়াত আঘাত হানতে পারে না তা তাকে কুফরীর বন্যা প্রবাহের মোকাবেলায় শক্তি তো দূরের কথা ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার শক্তিও দান করতে পারে না। যেমন হাদীসে একটি দল সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ ، ولاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ

“তারা কুরআন পড়বে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীল নীচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।” (বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা) আসলে যে তেলাওয়াতের পরে মানুষের মন-মানস, চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র কর্মনীতিতেও কোন পরিবর্তন আসে না বরং কুরআন পড়ার পরও কুরআন যা নিষেধ করে মানুষ তা সব করে যেতে থাকে তা একজন মু’মিনের কুরআন তেলাওয়াত হতেই পারে না। এ সম্পর্কে তো নবী (সা.) পরিষ্কার বলেনঃ مَا آمَنَ بِالْقُرْآنِ مَنِ اسْتَحَلَّ مَحَارِمَهُ “কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি।” (তিরমিযী) এ ধরনের তেলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করার পরিবর্তে তাকে আল্লাহর মোকাবিলায় আরো বেশি বিদ্রোহী এবং নিজের বিবেকের মোকাবেলায় আরো বেশি নির্লজ্জ করে তোলে। এ অবস্থায় তার মধ্যে চরিত্র বলে কোন জিনিসেরই আর অস্তিত্ব থাকে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে মেনে নেয়, তা পাঠ করে তার মধ্যে আল্লাহ‌ তাকে কি নির্দেশ দিয়েছেন তা জানতেও থাকে এবং তারপর তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে যেতে থাকে, তার ব্যাপারটা তো দাঁড়ায় এমন একজন অপরাধীর মতো যে আইন না জানার কারণে নয় বরং আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পর অপরাধমূলক কাজ করে। এ অবস্থাটিকে মহানবী (সা.) একটি ছোট্ট বাক্যেও মধ্য দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুস্পষ্ট করে তোলে ধরেছেনঃ الْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ “কুরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।” (মুসলিম) অর্থাৎ যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয় তাহলে তা তোমার জন্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ হবে। দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত যেখানেই তোমাকে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে সেখানেই তুমি নিজের সাফাই হিসেবে কুরআনকে পেশ করতে পারবে। অর্থাৎ তুমি বলতে পারবে, আমি যা কিছু করেছি এ কিতাব অনুযায়ী করেছি। যদি তোমার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে তাহলে দুনিয়ায় ইসলামের কোন বিচারক তোমাকে শাস্তি দিতে পারবেন না এবং আখেরাতে হাশরের ময়দানেও তোমাকে পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু যদি এ কিতাব তোমার কাছে পৌঁছে গিয়ে থাকে এবং তা পড়ে তুমি জেনে নিয়ে থাকো তোমার রব তোমাকে কি বলতে চান, তোমাকে কোনো কাজের হুকুম দেন, কোনো কাজ করতে নিষেধ করেন এবং আবার তুমি তার বিরোধী কর্মনীতি অবলম্বন করো, তাহলে এ কিতাব তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তোমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলাকে আরো বেশি জোরদার করে দেবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া অথবা হালকা শাস্তি লাভ করা তোমার জন্য সম্ভব হবে না।

# নামাযের বহু গুণের মধ্যে এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গুণ। পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটিকে সুস্পষ্ট করে এখানে পেশ করা হয়েছে। মক্কার বিরুদ্ধ পরিবেশে মুসলমানরা যে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার মোকাবিলা করার জন্য তাদের বস্তুগত শক্তির চাইতে বেশি প্রয়োজন ছিল নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির উদ্ভব ও তার বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমে দু’টি ব্যবস্থা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয় নামায কায়েম করা। এরপর এখানে বলা হচ্ছে, নামায কায়েম করা হচ্ছে এমন পদ্ধতি যার মাধ্যমে তোমরা এমনসব দুষ্কৃতি থেকে মুক্ত হতে পারো ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে যেগুলোতে তোমরা নিজেরাই লিপ্ত ছিলে এবং যেগুলোতে বর্তমানের লিপ্ত আছে তোমাদের চারপাশের আরবীয় ও অনারবীয় জাহেলী সমাজ।

এ পর্যায়ে নামাযের এই বিশেষ উপকারিতার কথা বলা হয়েছে কেন, একটু চিন্তা করলে একথা অতি সহজে অনুধাবন করা যেতে পারে। একথা সুস্পষ্ট যে, নৈতিক দুষ্কৃতিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী লোকেরা এর মাধ্যমে কেবলমাত্র দুনিয়ায় ও আখেরাতেই লাভবান হয় না বরং এর ফলে তারা অনিবার্যভাবে এমন সব লোকদের ওপর ব্যাপক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে যারা নানান নৈতিক দুষ্কৃতির শিকার হয়ে গেছে এবং এসব দুষ্কৃতির লালনকারী জাহেলিয়াতের পুতিগন্ধময় অপবিত্র ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অশ্লীল ও অসৎকাজ বলতে যেসব দুষ্কৃতি বুঝায় মানুষের প্রকৃতি সেগুলোকে খারাপ বলে জানে এবং সবসময় সকল জাতি ও সকল সমাজের লোকেরা, কার্যত তারা যতই বিপথগামী হোক না কেন, নীতিগত ভাবে সেগুলোকে খারাপই মনে করে এসেছে। কুরআন নাযিল হওয়ার সময় আরবের সমাজ মানসও এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল না। সে সমাজের লোকেরাও নৈতিকতার পরিচিত দোষ-গুণ সম্পর্কে সচেতন ছিল। তারা অসৎকাজের মোকাবিলায় সৎকাজের মূল্য জানতো। কদাচিত হয়তো এমন কোন লোকও তাদের মধ্যে থেকে থাকবে যে অসৎকাজকে ভালো মনে করে থাকবে এবং ভালো কাজকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে থাকবে। এ অবস্থায় এ বিকৃত সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয় যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট সমাজের ব্যক্তিবর্গ নিজেরাই নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং নিজেদের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে নিজেদের সমকালীন লোকদের থেকে সুস্পষ্ট উন্নতি লাভ করে, তাহলে অবশ্যই সে তার প্রভাব বিস্তার না করে থাকতে পারে না। এটা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিল না যে, আরবের সাধারণ লোকেরা অসৎকাজ নির্মূলকারী এবং সৎ ও পবিত্র-পরিচ্ছন্ন মানুষ গঠনকারী এ আন্দোলনের নৈতিক প্রভাব মোটেই অনুভব করবে না এবং এর মোকাবিলায় নিছক জাহেলিয়াত প্রীতির অন্তঃসারশূন্য শ্লোগানের ভিত্তিতে এমনসব লোকদের সাথে সহযোগিতা করে যেতে থাকবে যারা নিজেরাই নৈতিক দুষ্কৃতিতে লিপ্ত ছিল এবং জাহেলিয়াতের যে ব্যবস্থা শত শত বছর থেকে সে দুষ্কৃতিগুলো লালন করে চলছিল তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণেই কুরআন এ অবস্থায় মুসলমানদের বস্তুগত উপকরণাদি ও শক্তিমত্তা সংগ্রহ করার পরামর্শ দেবার পরিবর্তে নামায কায়েম করার নির্দেশ দিচ্ছে। এর ফলে মুষ্টিমেয় মানুষের এ দলটি এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে যার ফলে তারা মানুষের মন জয় করে ফেলবে এবং তীর ও তরবারির সাহায্য ছাড়াই শত্রুকে পরাজিত করবে।

এ আয়াতে নামাযের যে গুণ বর্ণনা করা হয়েছে তার দু’টি দিক রয়েছে। একটি তার অনিবার্য গুণ। অর্থাৎ সে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। আর দ্বিতীয় তার কাঙ্ক্ষিত গুণ। অর্থাৎ নামায আদায়কারী কার্যক্ষেত্রে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুক। বিরত রাখার ব্যাপারে বলা যায়, নামায অবশ্যই এ কাজ করে। যে ব্যক্তিই নামাযের ধরনের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যত ধরনের ব্রেক লাগানো সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ব্রেক নামাযই হতে পারে। এর চেয়ে বড় প্রভাবশালী নিরোধক আর কী হতে পারে যে, মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য আহ্বান করা হবে এবং তার মনে একথা জাগিয়ে দেয়া হবে যে, তুমি এ দুনিয়ায় স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী নও বরং এক আল্লাহর বান্দা এবং তোমার আল্লাহ‌ হচ্ছেন তিনি যিনি তোমার প্রকাশ্য ও গোপন সকল কাজ এমনকি তোমার মনের ইচ্ছা ও সংকল্পও জানেন এবং এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে যখন তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজের যাবতীয় কাজের জবাবদিহি করতে হবে। তারপর কেবলমাত্র একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত থাকলে চলবে না বরং কার্যত প্রত্যেক নামাযের সময় যাতে লুকিয়ে লুকিয়েও সে আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য না করে তার অনুশীলনও করতে হবে। নামাযের জন্য ওঠার পর থেকে শুরু করে নামায খতম হওয়া পর্যন্ত মানুষকে অনবরত এমনসব কাজ করতে হয় যেগুলো করার সময় সে আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে অথবা তার বিরুদ্ধাচরণ করছে এ কথা সে এবং তার আল্লাহ‌ ছাড়া তৃতীয় কোন সত্ত্বা জানতে পারে না। যেমন, যদি কারো ওযু ভেঙ্গে গিয়ে থাকে এবং সে নামায পড়তে দাঁড়ায়, তাহলে তার যে অযু নেই একথা সে এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কে-ই বা জানতে পারবে। মানুষ যদি নামাযের নিয়তই না করে এবং বাহ্যত রুকু, সিজদা ও উঠা-বসা করে নামাজের সূরা-কেরাত, দোয়া-দরুদ ইত্যাদি পড়ার পরিবর্তে নিরবে গজল পড়তে থাকে তাহলে সে যে আসলে নামায পড়েনি সে এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কে এ রহস্য উদঘাটন করতে পারবে? এ সত্ত্বেও যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন থেকে শুরু করে নামাযের আরকান ও সূরা-কেরাত-দোয়া-দরূদ পর্যন্ত সবকিছু সম্পন্ন করে আল্লাহ‌ নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী প্রতিদিন পাঁচবার নামায পড়ে তখন তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এ নামাযের মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েকবার তার বিবেকে প্রাণ সঞ্চার করা হচ্ছে, তার মধ্যে দায়িত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাকে দায়িত্বশীল মানুষে পরিণত করা হচ্ছে এবং যে আইনের প্রতি সে ঈমান এনেছে তা মেনে চলার জন্য বাইরে কোন শক্তি থাক বা না থাক এবং বিশ্ববাসী তার কাজের অবস্থা জানুক বা না জানুক নিজের আনুগত্য প্রবণতার প্রভাবাধীনে গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় সে সেই আইন মেনে চলবে-কার্যত তাকে এরই অনুশীলন করানো হচ্ছে।

এ দৃষ্টিতে বিচার করলে একথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না যে, নামায কেবলমাত্র মানুষকে অশ্লীল ও অসৎকাজ থেকেই বিরত রাখে না বরং আসলে দুনিয়ার দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে এত বেশি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, মানুষ নিয়মিত নামায পড়ার পর কার্যতও দুষ্কৃতি থেকে দূরে থাকে নি। জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে যে ব্যক্তি আত্মিক সংশোধন ও পরিশুদ্ধির অনুশীলন করছে তার ওপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হবার সংকল্প করে এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে নামাযের সংশোধনমূলক প্রভাব তার ওপর পড়বে। অন্যথায় দুনিয়ার কোন সংশোধন ব্যবস্থা এমন ব্যক্তির ওপর কার্যকর হতে পারে না যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুতই নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকে। এর দৃষ্টান্ত যেমন দেহের পরিপুষ্টি ও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে খাদ্যের অনিবার্য বিশেষত্ব। কিন্তু এ ফল তখনই লাভ করা সম্ভবপর হতে পারে যখন মানুষ তাকে শরীরের অংশে পরিণত হবার সুযোগ দেবে। যদি কোন ব্যক্তি প্রত্যেক বারে খাবার পরে বমি করে সমস্ত খাবার বের করে দিতে থাকে তাহলে এ ধরনের আহার তার জন্য মোটেই উপকারী হতে পারে না। এ ধরনেরকোন ব্যক্তিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে যেমন একথা বলা চলে না যে, খাদ্য দ্বারা দেহের পরিপুষ্টি হয় না। কারণ, দেখা যাচ্ছে অমুক ব্যক্তি আহার করার পরও শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এমন একজন নামাযী যে অসৎকাজ করে যেতেই থাকে, তার দৃষ্টান্ত পেশ করেও একথা বলা যেতে পারে না যে, নামায অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে না। কারণ, অমুক ব্যক্তি নামায পড়ার পরও খারাপ কাজ করে। এ ধরনের নামাযী সম্পর্কে তো একথা বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে যে, সে আসলে নামায পড়ে না যেমন যে ব্যক্তি আহার করে বমি করে তার সম্পর্কে একথা বলা বেশি যুক্তিযুক্ত যে, সে আসলে আহার করে না।

ঠিক একথাই বিভিন্ন হাদীসে নবী ﷺ এবং অনেক নেতৃস্থানীয় সাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেন, নবী ﷺ বলেছেনঃمن لم تنهه صلاته عن الفحشاء والمنكر فلا صلاة له-

“যার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেনি তার নামাযই হয়নি।”(ইবনে আবী হাতেম) ইবনে আব্বাস (রা.) নবী (সা.) এর এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে,

من لم تنهه صلوته عن الفحشاء والمنكر لم يزدد بها من الله الابعدا-

“যার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেনি তাকে তার নামায আল্লাহ‌ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে।” হাসান বসরী (র) একই বস্তু সম্বলিত হাদীস নবী (সা.) থেকে মুরসাল রেওয়ায়াতের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। (ইবনে জারীর ও বাইহাকী) ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে নবী করীমের ﷺ এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছেঃ

لاصلوة لمن لم يطع الصلوة وطاعة الصلوة ان تنهى عن الفحشاء والمنكر-

“যে ব্যক্তি নামাযের আনুগত্য করেনি তার নামাযই হয়নি আর নামাযের আনুগত্য হচ্ছে, মানুষ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে।” (ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম)

একই বক্তব্য সম্বলিত একাধিক উক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হাসান বাসরী, কাতাদাহ, আ’মাশ ও আরো অনেকের থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম জাফর সাদেক বলেন, যে ব্যক্তি তার নামায কবুল হয়েছে কিনা জানতে চায় তার দেখা উচিত তার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে কি পরিণাম বিরত রেখেছে। যদি নামাযের বাধা দেবার পর সে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত হয়ে থাকে, তাহলে তার নামায কবুল হয়ে গেছে। (রুহুল মা’আনী)

# এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। একঃ আল্লাহর যিকির (অর্থাৎ নামায) এর চেয়ে বড়। এর প্রভাব কেবল নেতিবাচকই নয়। শুধুমাত্র অসৎকাজ থেকে বিরত রেখেই সে ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী হবার জন্য মানুষকে উদ্যোগী করে। দ্বিতীয় অর্থঃ আল্লাহর স্মরণ নিজেই অনেক বড় জিনিস, সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। মানুষের কোনো কাজ এর চেয়ে বেশি ভালো নয়। এর তৃতীয় অর্থঃ তোমার আল্লাহকে স্মরণ করার চাইতে আল্লাহর তোমাকে স্মরণ করা অনেক বেশি বড় জিনিস। কুরআনে মহান আল্লাহ‌ বলেনঃفَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ “তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমি তোমাদের স্মরণ করবো।” (আল বাকারাহ ১৫২) কাজেই বান্দা যখন নামাযে আল্লাহকে স্মরণ করার তুলনায় আল্লাহর বান্দাকে স্মরণ করা অনেক বেশি উচ্চমানের। এ তিনটি অর্থ ছাড়া আরো একটি সূক্ষ্ম অর্থও এখানে হয়। হযরত আবু দারদা (রা.) এর সম্মানিতা স্ত্রী এ অর্থটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর স্মরণ নামায পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং তার সীমানা এর চাইতেও বহুদূর বিস্তৃত। যখন মানুষ রোযা রাখে, যাকাত দেয় বা অন্য কোন সৎকাজ করে তখন অবশ্যই সে আল্লাহকে স্মরণই করে, তবেই তো তার দ্বারা ঐ কাজটি সম্পাদিত হয়। অনুরূপভাবে যখন কোন ব্যক্তি কোন অসৎকাজ করার সুযোগ পাওয়ার পর তা থেকে দূরে থাকে তখন এটাও হয় আল্লাহর স্মরণেরই ফল। এঊ জন্য আল্লাহর স্মরণ একজন মু’মিনের সমগ্র জীবনে পরিব্যাপ্ত হয়।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১১৪-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর:-

অত্র আয়াতে সালাতের ওয়াক্ত ও ফযীলত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

(طَرَفَيِ النَّهَارِ) ‘দিবসের দু’ প্রান্ত‎ভাগে’ এখানে তিন ওয়াক্ত সালাতের কথা রয়েছে; দ্বিপ্রহরের পূর্বের সালাত, দ্বিপ্রহরের পরের সালাত। দ্বিপ্রহরের পূর্বের সালাত হল ফজর। ফজর হল দিনের সালাতের অন্তর্ভুক্ত। এর অর্থ এই নয় যে, সূর্য উঠার পর পড়ব। বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

وَقْتُ صَلَاةِ الْفَجْرِ مَا لَمْ يَطْلُعْ قَرْنُ الشَّمْسِ الْأَوَّلُ

ফজরের সালাতের সময় হল সূর্যের প্রথম শিং উদয় হওয়ার পূর্বে। (সহীহ মুসলিম হা: ৬১২) আর দ্বিপ্রহরের পরের সালাত হল যোহরের সালাত ও আছরের সালাত।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন।:

وَوَقْتُ صَلَاةِ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ عَنْ بَطْنِ السَّمَاءِ، مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ، وَيَسْقُطْ قَرْنُهَا الْأَوَّلُ

যোহরের সালাতের সময় হল যখন সূর্য আকাশের মধ্যভাগ থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে যাবে (আর শেষ সময়) আসরের সালাতের সময় উপস্থিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আছরের সালাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পূর্ব পর্যন্ত এবং সূর্যের প্রথম শিং অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হা: ৬১২)। (وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْل) ‘রজনীর কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর’ এখানে মাগরিব, এশা দুই ওয়াক্ত সালাতের সময়সহ কিয়ামুল লাইল উদ্দেশ্য। (তাফসীর সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)

হাদীসে এসেছে:

وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ إِذَا غَابَتِ الشَّمْسُ، مَا لَمْ يَسْقُطِ الشَّفَقُ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَي نِصْفِ اللَّيْلِ

মাগরীবের সালাতের সময় হল সূর্য অস্ত যাওয়ার পর, শেষ সময় হল শাফাক (লাল আভা) দূরীভূত হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আর ইশা সালাতের শেষ সময় হল অর্ধ-রাত পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হা: ৬১২)

(إِنَّ الْحَسَنٰتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّاٰتِ)

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন দিয়ে ফেলে, পরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বিষয়টি জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। তখন সে ব্যক্তি বলল: এটা কি শুধু আমার জন্য? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, আমার উম্মাতের সকলের জন্য এ সুযোগ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৮৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৭৬৩)

অর্থাৎ ভাল আমল খারাপ কাজের পাপ দূরীভূত করে দেয়। যেমন সালাত একটি ভাল কাজ, কোন গুনাহ হয়ে থাকলে সালাত আদায় করলে তা মোচন হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যদি তোমাদের কারোর বাড়ির দরজার সামনে প্রবাহিত নদী থাকে এবং সে প্রত্যহ তাতে পাঁচবার করে গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি?” সাহাবীগণ উত্তরে বললেন: না, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই দৃষ্টান্ত হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এগুলোর কারণে আল্লাহ তা‘আলা ভুল-ত্র“টি ও পাপরাশি ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫২৮)

অন্য হাদীসে এসেছে:

الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَي الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَي رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমুআহ থেকে অপর জুমুআহ এবং এক রমযান থেকে অন্য রযমান পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন গুনাহ হলে আল্লাহ তা‘আলা সে সালাত আদায়কারী, জুমুআহ আদায়কারী ও সিয়াম পালনকারীকে ক্ষমা করে দেন। তবে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৩৩)

এছাড়াও সৎ আমলের ফযীলত অনেক রয়েছে।

যদি কেউ খারাপ কাজ করার পর কোন ভাল কাজ করে তাহলে তার ভাল কাজের কারণে তার খারাপ কাজের অপরাধ মাফ হয়ে যায়। আর সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথা সময়ে আদায় করতে হবে।
২. যথাসম্ভব ভাল কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি কোন মন্দ কাজ হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তা মোচনের জন্য একটি ভাল কাজ করতে হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] দু’প্রান্ত থেকে কেউ কেউ ফজর ও মাগরেবের নামায, কেউ কেউ শুধু এশা এবং কেউ কেউ মাগরেব ও এশা উভয় নামাযের সময় উদ্দেশ্য নিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, সম্ভবতঃ এই আয়াতটি মি’রাজের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে। কারণ তার পূর্বে শুধু দুই নামায ওয়াজিব ছিল, প্রথম সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে এবং দ্বিতীয় সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে। আর রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদের নামায ছিল। পরে তাহাজ্জুদ নামাযের অপরিহার্যতা উম্মতের জন্য মাফ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকের মতে তাহাজ্জুদ নামাযের অপরিহার্যতা নবী (সাঃ)-এর জন্যও মাফ করে দেওয়া হয়েছিল। (ইবনে কাসীর) আর আল্লাহই ভালো জানেন।

[২] যেমন হাদীসসমূহে তা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। “পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমআহ থেকে অপর জুমআহ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত, তার মধ্যবর্তী পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কাবীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকা হয় তবে।” (মুসলিম) অন্য আর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বল দেখি, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নদী প্রবাহিত হয় এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি?” সাহাবায়ে-কিরামগণ বললেন, না। তিনি বললেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এটিই। এই নামাযগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গুনাহসমূহ মুছে ফেলেন।” (বুখারী ও মুসলিম) সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর সাথে একটি গাছের নিচে ছিলাম। তিনি আমার সামনে গাছের একটি শুষ্ক ডাল ধরে হিলিয়ে দিলেন। এতে তার সমস্ত পাতা খসে পড়ল। অতঃপর বললেন, “হে সালমান! তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না কি যে, কেন আমি এরূপ করলাম?” আমি বললাম, ‘কেন করলেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, “মুসলিম যখন সুন্দরভাবে ওযু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, তখন তার পাপরাশি ঠিক ঐভাবেই ঝরে যায়, যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরে গেল।” আর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন। (আহমাদ, নাসাঈ, তাবারানী, সহীহ তারগীব ৩৫৬নং) এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন দিয়ে ফেলে। পরে সে নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বিষয়টি জানায়। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন; “দিনের দুপ্রান্ত সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম ভাগে নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়।” (সূরা হূদ ১১:১১৪) লোকটি জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! একি শুধু আমার জন্য?’ তিনি বললেন, “না, এ সুযোগ আমার সকল উম্মতের জন্য।” (বুখারী ও মুসলিম)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] আয়াতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে তাকে ও তার সমস্ত উম্মতকে নামায কায়েম রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য ফরয সালাত। [কুরতুবী] আর ইকামতে সালাত অর্থ, পূর্ণ পাবন্দীর সাথে নিয়মিতভাবে সালাত সম্পন্ন করা। কোন কোন আলেমের মতে সালাত কায়েম করার অর্থ, সমুদয় সুন্নত ও মুস্তাহাবসহ আদায় করা। কারো মতে এর অর্থ, মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামায পড়া। আবার কারো কারো মতে, জামাতের সাথে আদায় করা। মূলতঃ এটা কোন মতানৈক্য নয়। আলোচ্য সবগুলোই একামতে সালাতের সঠিক মর্মার্থ। সূরা আল-বাকারার ৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তার বিস্তারিত আলোচনা চলে গেছে।

[২] নামায কায়েম করার নির্দেশ দানের পর সংক্ষিপ্তভাবে নামাযের ওয়াক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “দিনের দু’প্রান্তে অর্থাৎ শুরুতে ও শেষভাগে এবং রাতেরও কিছু অংশে নামায কায়েম করবেন।” দিনের দু’প্রান্তের নামাযের মধ্যে প্রথমভাগের নামায সম্পর্কে সবাই একমত যে, সেটি ফজরের নামায। [তাবারী; বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] কিন্তু শেষ প্রান্তের নামায সম্পর্কে ইবন আব্বাস বলেন তা মাগরিবের নামায। [তাবারী; কুরতুবি ; ইবন কাসির] হাসান বসরি, কাতাদাহ ও দাহহাক আসরের নামাযকেই দিনের শেষ নামায সাব্যস্ত করেছেন। [কুরতুবী ইবন কাসীর] অবশ্য এখানে একটি মত এটাও রয়েছে যে, দিনের দু’প্রান্ত বলে, যোহর ও আসরের সালাত বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] রাতের কিছু অংশের নামায সম্পর্কে ইবন আব্বাস ও মুজাহিদ বলেন, এটি হচ্ছে, এশার নামায। হাসান বসরী, মুজাহিদ, মুহাম্মদ ইবনে কা’ব, কাতাদাহ, যাহ্‌হাক প্রমুখ তফসীরকারকদের অভিমত হচ্ছে যে, সেটি মাগরিব ও এশার নামায। [ইবন কাসীর] অতএব এ আয়াতে চার ওয়াক্ত নামাযের বর্ণনা পাওয়া গেল। অবশিষ্ট রইল যোহরের নামায। এ ব্যাপারে ইবন কাসীর বলেন, এটি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার আগের নির্দেশ। আর তখন দু’ ওয়াক্ত নামাযই ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের আগের নামায এবং সূর্যাস্তের আগের নামায। আর রাতের বেলা রাসূল ও উম্মতের উপর কিয়ামুল লাইল করা ফরয ছিল। [ইবন কাসীর] অথবা যোহরের সালাতের ব্যাপারে কুরআনের অন্যত্র যা এসেছে তা থেকে প্রমাণ নেয়া যায়, তা হচ্ছে, “নামায কায়েম কর, যখন সূর্য ঢলে পড়ে।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৩৮]

[৩] এখানে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দানের সাথে সাথে তার উপকারিতাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে “পুণ্যকাজ অবশ্যই পাপকে মিটিয়ে দেয়”। এখানে পুণ্যকাজ বলতে অধিকাংশ আলেমদের নিকট সালাত বোঝানো হয়েছে। [দেখুন, তাবারী] যদিও সালাত, রোযা, হজ, যাকাত, সদকাহ, সদ্ব্যবহার প্রভৃতি যাবতীয় সৎকাজই উদ্দেশ্য হতে পারে। [কুরতুবী] তবে নিঃসন্দেহে এর মধ্যে সালাত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাগ্রে-গণ্য। অনুরূপভাবে পাপকার্যের মধ্যে সগীরা ও কবীরা যাবতীয় গোনাহ শামিল রয়েছে। কিন্তু কুরআন এবং রাসূলের বিভিন্ন হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে পাপকার্য দ্বারা সগীরা গোনাহ বুঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের মর্ম হচ্ছে, যাবতীয় নেক কাজ, বিশেষ করে নামায সগীরা গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়। এ হিসেবে ইমাম কুরতুবী বলেন, আয়াতটি পুণ্যকাজের ব্যাপারে ব্যাপক হলেও গোনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে বিশেষিত। অর্থাৎ সগীরা গোনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট। [কুরতুবী] এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সৎকাজের দ্বারা পাপ ক্ষমা হয় এ কথা কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য স্থানেও বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তোমরা যদি বড় (কবীরা) গোনাহসমূহ হতে বিরত থাক তাহলে তোমাদের ছোট ছোট (সগীরা) গুনাহগুলি মিটিয়ে দেব”। [সূরা আন-নিসাঃ ৩১] অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুম’আ পরবতী জুম’আ পর্যন্ত এবং এক রমযান দ্বারা পরবর্তী রমযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী যাবতীয় সগীরা গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হয়, যদি সে ব্যক্তি কবীরা গোনাহ হতে বিরত থাকে।’ [মুসলিমঃ ২৩৩] অর্থাৎ কবীরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না, কিন্তু সগীরা গোনাহ নামায, রোজা, দান-সাদকাহ ইত্যাদি পুণ্যকর্ম করার ফলে আপনা-আপনিও মাফ হয়ে যায়। মোটকথা, আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, নেক কাজ করার ফলেও অনেক গোনাহ মাফ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, “তোমাদের থেকে কোন মন্দ কাজ হলে পরে সাথে সাথে নেক কাজ কর, তাহলে উহার ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।” [তিরমিয়ীঃ ১৯৮৭, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ১৭৮] অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “কোন এক ব্যক্তি জনৈক মহিলাকে চুমু দিয়ে ফেলল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে এ কথা উল্লেখ করলো। তখন তার এ ঘটনা উপলক্ষে উক্ত আয়াত নাযিল করা হলো। অর্থাৎ আপনি সালাত কায়েম করুন দিনের দু প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। সৎকাজ অবশ্যই অসৎকাজ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ”। তখন লোকটি জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল! এ হুকুম কি কেবল আমার জন্য, না সকলের জন্য? তিনি বললেনঃ আমার উম্মতের যে কেউ নেক আমল করবে, এ হুকুম তারই জন্য”। [বুখারীঃ ৪৬৮৭] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি কোন নদী থাকে আর দৈনিক পাঁচবার তাতে গোসল করা হয় তাহলে তার কি কোন ময়লা বাকী থাকবে?” সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ “তার কোন ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না”। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। আল্লাহ এর মাধ্যমে গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [বুখারীঃ ৫২৮, মুসলিমঃ ২৭৬৩] তবে মনে রাখতে হবে যে, সৎকাজ দ্বারা শুধুমাত্র সগীরা বা ছোট গুণাহ মাফ হয়। কবীরা গুণাহের জন্য তাওবা জরুরী। কারণ হাদীসে বলা হয়েছে, যদি সে ব্যক্তি কবীরা গোনাহ হতে বিরত থাকে। [মুসলিম: ২৩৩]

[৪] “এটা শব্দ দ্বারা কুরআন মজীদের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে [কুরতুবী] অথবা ইতিপূর্বে বর্ণিত বিধি-নিষেধের প্রতিও ইশারা হতে পারে। [বাগভী| সে মতে আয়াতের মর্ম হচ্ছে-এই কুরআন অথবা এতে বর্ণিত হুকুম-আহকামসমূহ ঐসব লোকের জন্য স্মরণীয় হেদায়েত ও নসীহত, যারা উপদেশ শুনতে ও মানতে প্রস্তুত। তবে এ কুরআন থেকে হেদায়াত নিতে হলে নফসকে বশ করা এবং সবর করার প্রয়োজন পড়ে। তাই পরবর্তী আয়াতে সবরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [সা’দী]

# বরং তারা যা আমল করে তন্মধ্যে যা উত্তম হয় তা তিনি কবুল করেন এবং সেটার প্রতিদান তিনি তাদেরকে তাদের আমলের চেয়েও উত্তমভাবে প্রদান করেন। তাই যখনই কারও মনে শিথিলতা আসে, তখনই এ সওয়াবের প্রতি দৃষ্টি দানের মাধ্যমে নিয়মিত সবর করার প্রতি উৎসাহ আসবে। [সা’দী]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 114-115

وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ
The Command to establish the Prayer .

Allah says;

وَأَقِمِ الصَّلَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّيَاتِ

ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ

And perform the Salah, at the two ends of the day and in some hours of the night. Verily, the good deeds remove the evil deeds. That is a reminder for the mindful.

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,
وَأَقِمِ الصَّلَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ
(And perform the Salah, at the two ends of the day),

“This is referring to the morning prayer (Subh) and the evening prayer (Maghrib).”

The same was said by Al-Hasan and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam.

In one narration reported by Qatadah, Ad-Dahhak and others, Al-Hasan said,

“It means the morning prayer (Subh) and the late afternoon prayer (Asr).”

Mujahid said,

“It is the morning prayer at the beginning of the day and the noon prayer (Zuhr) and late afternoon prayer (Asr) at the end of the day.”

This was also said by Muhammad bin Ka`b Al-Qurazi and Ad-Dahhak in one narration from him.

وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
(and in some hours of the night).

Ibn Abbas, Mujahid, Al-Hasan and others said,

“This means the night prayer (Isha’).”

Ibn Al-Mubarak reported from Mubarak bin Fadalah that Al-Hasan said,

“This means the evening (Maghrib) and late night (Isha’) prayers.

The Messenger of Allah said,

هُمَا زُلَفَا اللَّيْلِ الْمَغْرِبُ وَالْعِشَاء

They are the approach of the night:Maghrib and Isha’.

The same was said by Mujahid, Muhammad bin Ka`b, Qatadah and Ad-Dahhak (that this means the Maghrib and Isha’ prayers).

It should be noted that this verse was revealed before the five daily prayers were made obligatory during the night of Isra’ (the Prophet’s night journey to Jerusalem). At that time there were only two obligatory prayers:a prayer before sunrise and a prayer before sunset.

During the late night another prayer (Tahajjud) was also made obligatory upon the Prophet and his nation. Later, this obligation was abrogated for his nation and remained obligatory upon him. Finally, this obligation was abrogated for the Prophet as well, according to one opinion. Allah knows best.
The Good Deeds wipe away the Evil Deeds

Concerning Allah’s statement,

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّيَاتِ

Verily, the good deeds remove the evil deeds.
This is saying that the performance of good deeds is an expiation of previous sins.

This has been mentioned in a Hadith recorded by Imam Ahmad and the Sunan Compilers, that the Commander of the faithful, Ali bin Abi Talib, said,

“Whenever I used to hear a narration from the Messenger of Allah, Allah would cause me to benefit by it however He willed. If anyone informed me of any statement that he said, I would make him swear (by Allah) that the Prophet said it. If he swore by Allah, then I would believe him. Abu Bakr once told me — and Abu Bakr was truthful — that he heard the Messenger of Allah say,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ إِلاَّ غُفِرَ لَه

There is not any Muslim who commits a sin, then he makes Wudu and prays two units of prayer, except that he will be forgiven (that sin).

In the Two Sahihs it is recorded that the Commander of the faithful, Uthman bin Affan made Wudu for the people (to see), just like the Wudu of the Messenger of Allah. Then he said,

“I saw the Messenger of Allah make Wudu’ like this, and he said,

مَنْ تَوَضَّأَ وُضُويِي هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِه

Whoever makes Wudu like this Wudu of mine, then he prays two units of prayer in which he does not speak to himself, he will be forgiven for his previous sins.

In the Sahih it is recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ بِبَابِ أَحَدِكُمْ نَهْرًا غَمْرًا يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ شَيْيًا

Do you think that if there was a flowing river at the door of anyone of you and he bathed in it five times every day, would there be any dirt left on him?

They said, “No, O Messenger of Allah!”

He said;

كَذَلِكَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الذُّنُوبَ وَالْخَطَايَا

This is like the five daily prayers, for Allah uses them to wipe away the sins and wrongdoings.

Muslim recorded in his Sahih that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah used to say,

الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَايِر

The five daily prayers, Jumu`ah (Friday prayer) to Jumu`ah and (the fast of) Ramadan to Ramadan are expiations for whatever sins were committed between them, as long as you stay away from the major sins.

Al-Bukhari recorded Ibn Mas`ud saying that;

a man kissed a woman (who was not his relative or wife). He then came to the Prophet and informed him about the incident. Thus, Allah revealed,

وَأَقِمِ الصَّلَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّيَاتِ

And perform Salah, at the two ends of the day and in some hours of the night. Verily, the good deeds remove the evil deeds. (11:114)

The man then said, “O Messenger of Allah, is this only for me?”

The Prophet replied,

لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِم

This is for all of my (Ummah) followers.

Al-Bukhari recorded this narration in the Book of Prayer as well and the Book of Tafsir.

Imam Ahmad recorded that Ibn Abbas said that;

a man came to Umar and said that a woman came to do business with him. During the course of their business, he took her into his place and did everything with her except the actual act of sexual intercourse.

Umar said, “Woe unto you! She probably was a woman whose husband is away (fighting) in the path of Allah.”

The man said, “Of course she was.”

Umar then said, “Go to Abu Bakr and ask him about this.”

The man went to Abu Bakr and asked him about the matter.

Abu Bakr said, “She probably was a woman whose husband is away (fighting) in the path of Allah,” just as Umar had said.

Then he went to the Prophet and told him the same story. The Prophet said,

فَلَعَلَّهَا مُغِيبَةٌ فِي سَبِيلِ الله

She probably was a woman whose husband is away (fighting) in the path of Allah.

Then a verse of Qur’an was revealed,

وَأَقِمِ الصَّلَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّيَاتِ

And perform the Salah, at the two ends of the day and in some hours of the night. Verily, the good deeds remove the evil deeds.

The man then said, “O Messenger of Allah! Is this verse only for me, or does it apply to all of the people in general?”

Umar then struck the man on his chest with his hand and said, “No, rather it is for all of the people in general.”

Then the Messenger of Allah said,

صَدَقَ عُمَر
(Umar has spoken the truth).

Leave a Reply