(Book# 727) [ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ যারা পৃথিবীতে অশান্তি ঘটাতে বাধা প্রদান করত। Prohibiting (others) from Fasad (corruption) in the earth, ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 727)
[ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ
যারা পৃথিবীতে অশান্তি ঘটাতে বাধা প্রদান করত।
Prohibiting (others) from Fasad (corruption) in the earth, ]
www.motaher21.net
فَلَوۡ لَا کَانَ مِنَ الۡقُرُوۡنِ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اُولُوۡا بَقِیَّۃٍ یَّنۡہَوۡنَ عَنِ الۡفَسَادِ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّمَّنۡ اَنۡجَیۡنَا مِنۡہُمۡ ۚ وَ اتَّبَعَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مَاۤ اُتۡرِفُوۡا فِیۡہِ وَ کَانُوۡا مُجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۱۶﴾
অতএব তোমাদের পূর্বের প্রজন্মসমুহের মধ্যে এমন প্রজ্ঞাবন কেন হয়নি, যারা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি থেকে নিষেধ করত? অল্প সংখ্যক ছাড়া, যাদেরকে আমরা তাদের মধ্যে নাজাত দিয়েছিলাম । আর যারা যুলুম করেছে তারা বিলাসিতার পেছনে পড়ে ছিল, আর তারা ছিল অপরাধী।
So why were there not among the generations before you those of enduring discrimination forbidding corruption on earth – except a few of those We saved from among them? But those who wronged pursued what luxury they were given therein, and they were criminals.
وَ مَا کَانَ رَبُّکَ لِیُہۡلِکَ الۡقُرٰی بِظُلۡمٍ وَّ اَہۡلُہَا مُصۡلِحُوۡنَ ﴿۱۱۷﴾
আর তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, জনপদসমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেন, অথচ ওর অধিবাসীরা সদাচারী থাকে।
And your Lord would not have destroyed the cities unjustly while their people were reformers.

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১১৬-১১৭ নং আয়াত:-
يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ
যারা পৃথিবীতে অশান্তি ঘটাতে বাধা প্রদান করত।
Prohibiting (others) from Fasad (corruption) in the earth,

১১৬-১১৭ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# আগের ছ’টি রুকূ’তে যেসব জাতির ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এ আয়াতগুলোতে অত্যন্ত শিক্ষণীয় পদ্ধতিতে তাদের ধ্বংসের মূল কারণের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এ ইতিহাসের ওপর মন্তব্য করে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র এ জাতিগুলোকেই নয় বরং মানবজাতির অতীত ইতিহাসে যতগুলো জাতিই ধ্বংস হয়েছে তাদের সবাইকে যে জিনিসটি অধঃপতিত করেছে তা হচ্ছে এই যে, যখন আল্লাহ নিজের নিয়ামতের দ্বারা তাদেরকে সমৃদ্ধ করেছেন তখন নিজেদের প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির নেশায় মত্ত হয়ে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিতে তৎপর হয়েছে এবং তাদের সামষ্টিক প্রকৃতি এমন পর্যায়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, তাদেরকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎ লোক তাদের মধ্যে ছিলই না অথবা যদি এমনি ধরনের কিছু লোক থেকেও থাকে তাহলে তাদের সংখ্যা এত কম ছিল এবং তাদের আওয়াজ এতই দুর্বল ছিল যে, অসৎকাজ থেকে তারা বিরত রাখার চেষ্টা করলেও বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত এ জাতিগুলো আল্লাহর গযবের শিকার হয়েছে। নয়তো নিজের বান্দাদের সাথে আল্লাহর কোন শত্রুতা নেই। তারা ভালো কাজ করে যেতে থাকলেও আল্লাহ অযথা তাদেরকে শাস্তি দেন না। আল্লাহর এ বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য এখানে তিনটি কথা মনের মধ্যে গেঁথে দেয়া

একঃ প্রত্যেক সমাজ ব্যবস্থায় ভালো কাজের দিকে আহ্বানকারী ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎলোকের উপস্থিতি অপরিহার্য। কারণ সৎবৃত্তিই আল্লাহর কাছে কাংখিত। আর মানুষের অসৎকাজ যদি আল্লাহ বরদাশত করে থাকেন তাহলে তা শুধুমাত্র তাদের মধ্যকার এ সৎবৃত্তির কারণেই করে থাকেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত করে থাকেন যতক্ষণ তাদের মধ্যে সৎ প্রবণতার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোন মানব গোষ্ঠী যখন একেবারেই সৎলোক শূন্য হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে শুধু অসৎলোকই বর্তমান থাকে অথবা সৎলোক বর্তমান থাকলেও তাদের কথা কেউ শোনে না এবং সমগ্র জাতিই একসাথে নৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন আল্লাহর আযাব তাদের মাথার ওপর এমনভাবে ঘুরতে থাকে যেমন পূর্ণ গর্ভবতী নারী, যার গর্ভকাল একেবারে টায় টায় পূর্ণ হয়ে গেছে, কেউ বলতে পারে না কোন্ মুহূর্তে সে সন্তান প্রসব করে বসবে।

দুইঃ যে জাতি নিজের মধ্যে সবকিছু বরদাশত করতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র এমন গুটিকয় হাতে গোনা লোককে বরদাশত করতে পারে না যারা তাকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার ও সৎকাজ করার দাওয়াত দেয়, সে জাতির ব্যাপারে একথা জেনে নাও যে, তার দুর্দিন কাছে এসে গেছে। কারণ এখন সে নিজেই নিজের প্রাণের শত্রু হয়ে গেছে। যেসব জিনিস তার ধ্বংসের কারণ সেগুলো তার অতি প্রিয় এবং শুধুমাত্র একটি জিনিসই সে একদম বরদাশত করতে প্রস্তুত নয় যা তার জীবনের ধারক ও বাহক।

তিনঃ একটি জাতির মধ্যে সৎকাজ করার আহবানে সাড়া দেবার মতো লোক কি পরিমাণ আছে তার ওপর নির্ভর করে তার আযাবে লিপ্ত হওয়ার ও না হওয়ার ব্যাপারটির শেষ ফায়সালা। যদি তার মধ্যে বিপর্যয় খতম করে কল্যাণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লোকের সংখ্যা এমন পর্যায়ে থাকে যা এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তার ওপর সাধারণ আযাব পাঠানো হয় না। বরং ঐ সৎলোকদেরকেই অবস্থার সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু লাগাতার প্রচেষ্টা ও সাধনা করার পরও যদি তার মধ্যে সংস্কার সাধনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ লোক না পাওয়া যায় এবং এ জাতি তার অঙ্গন থেকে কয়েকটা হীরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলার পর নিজের কার্যধারা থেকে একথা প্রমাণ করে দেয় যে, এখন তার কাছে শুধু কয়লা ছাড়া আর কিছুই নেই, তাহলে এরপর আর বেশী সময় হাতে থাকে না। এরপর শুধুমাত্র কুণ্ডে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় যে, যা কয়লাগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
(অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন যারিয়াত ৩৪ টীকা)
# গোটা জাতি ও এলাকায় একটি মাত্র পরিবার ছিল যেখানে ইসলামের আলো বিদ্যমান ছিল। আর সেটা ছিল হযরত লূত আলাইহিস সালামের পরিবার। এছাড়া গোটা জাতি অশ্লীলতা ও পাপাচারে ডুবে ছিল এবং তাদের গোটা দেশ পঙ্কিলতায় ভরে উঠেছিলো। তাই আল্লাহ তা’আলা সেই একটি পরিবারের লোকজনকে রক্ষা করে বের করে নিলেন এবং তারপর সেই দেশে এমন প্রলয়ঙ্কারী আযাব নাযিল করলেন যে, এ দুশ্চরিত্র জাতির একটি লোকও রক্ষা পায়নি। এ আয়াতটিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণিত হয়েছেঃ

একঃ আল্লাহর প্রতিফল বিধান কোন জাতিকে ততদিন পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস করার ফায়সালা করে না যতদিন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন ভালো গুণ বিদ্যমান থাকে। খারাপ লোকদের সংখ্যাধিক্যের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক কিছু লোকও যদি অকল্যাণকে প্রতিরোধ করার এবং কল্যাণের পথের দিকে ডাকার জন্য তৎপর থাকে এবং তাদের কল্যাণকারিতা এখনো নিঃশেষ হয়ে না থাকে তাহলে তাদেরকে আরো কিছুকাল কাজ করার সুযোগ দেন এবং তাদের অবকাশকাল বাড়িয়ে দিতে থাকেন। কিন্তু অবস্থা যদিও এই দাঁড়ায় যে, কোন জাতির মধ্যে যৎসামান্য সদগুণও অবশিষ্ট না থাকে সেক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান হচ্ছে, উক্ত জনপদে যে দু’চারজন লোক অকল্যাণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়েছে, তিনি তার মহা ক্ষমতাধীনে কোন না কোনভাবে রক্ষা করে নিরাপদে বের করেন এবং অবশিষ্ট লোকদের সাথে ঠিক তেমনি আচরণ করেন, যে আচরণ একজন সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন লোক পঁচা ফলের সাথে করে থাকে।

দুইঃ ‘মুসলমান’ কেবল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের নাম নয়। তাঁর পূর্বের সমস্ত নবী-রসূল ও তাঁদের উম্মতও মুসলমান ছিলেন। তাঁদের দ্বীনও ভিন্ন ভিন্ন ছিল না যে, কোনটা ইবরাহীমের দ্বীন, কোনটা মূসার দ্বীন আবার কোনটা ঈসার দ্বীন বলে আখ্যায়িত হতে পারে। তারা সবাই ছিলেন মুসলমান এবং তাদের দ্বীনও ছিল এ ইসলাম। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ সত্যটি এমন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। উদাহরণস্বরূপ নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো দেখুনঃ আল বাকারা, ১২৮ , ১৩১, ১৩২ ও ১৩৩ ; আলে ইমরান, ৬৭ ; আল মায়েদা, ৪৪ ও ১১১ ; ইউনুস, ৭২ ও ৮৪ ; ইউসূফ, ১০১ ; আল আ’রাফ, ১২৬ ও আল নাহল, ৩১ , ৪২ ও ৪৪ ।

তিনঃ ‘মু’মিন’ ও ‘মুসলিম’ শব্দ দু’টি এ আয়াতে সম্পূর্ণ সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ আয়াতটি যদি সূরা হুজুরাতের ১৪ আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়া যায় তাহলে সেসব লোকদের ধারণার ভ্রান্তি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যারা মু’মিন ও ‘মুসলিম’ শব্দকে কুরআন মজীদের এমন দু’টি স্বতন্ত্র পরিভাষা বলে মনে করে যা সবখানে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এও মনে করে যে, ঈমান ছাড়াই যে ব্যক্তি বাহ্যত ইসলামের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করেছে সে-ই নিশ্চিত মুসলিম।
(অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হুজুরাতের ব্যাখ্যা, টীকা ৩১ )।
# মূল আয়াতে قُوْلُوْا اَسْلَمْنَا কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর আরেকটি অনুবাদ হতে পারে, “বলো, আমরা মুসলমান হয়ে গিয়েছি” এ আয়াতাংশ থেকে কোন কোন লোক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, কুরআন মজীদের ভাষায় ‘মু’মিন’ ও ‘মুসলিম’ দু’টি বিপরীত অর্থ জ্ঞাপক পরিভাষা। মু’মিন সে ব্যক্তি যে সরল মনে ঈমান আনয়ন করেছে এবং মুসলিম সে ব্যক্তি যে ঈমান ছাড়াই বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। এখানে অবশ্য ঈমান শব্দটি আন্তরিক বিশ্বাস এবং ইসলাম কেবল বাহ্যিক আনুগত্য বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এমনটি বুঝে নেয়া ঠিক নয় যে, এ দু’টি শব্দ কুরআন মজীদের দু’টি স্থায়ী ও বিপরীত অর্থজ্ঞাপক পরিভাষা। কুরআনের যেসব আয়াতে ইসলাম ও মুসলিম শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির জন্য যে জীবন বিধান নাযিল করেছেন কুরআনের পরিভাষায় তার নাম ইসলাম। ঈমান ও আনুগত্য উভয়টি এর অন্তর্ভুক্ত। আর মুসলিম সে ব্যক্তি যে সরল মনে মেনে নেয় এবং কার্যত আনুগত্য করে। প্রমাণ স্বরূপ নিম্ন বর্ণিত আয়াতগুলো দেখুনঃإِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ (ال عمران : 19)“নিশ্চতভাবেই আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ‘ইসলাম’।” ( আলে ইমরান, ১৯ )وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ (ال عمران : 85)“যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা চায় তার সেই জীবন ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না।” ( আলে ইমরান , ৮৫)وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (المائدة : 3)“আমি তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি।” ( আল মায়েদা, ৩ )فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ ( الانعام : 125)“আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করতে চান তার হৃদয় মনকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।” ( আল আনআম, ১২৫ )قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ (الانعام : 14)“হে নবী! বলে দাও, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে আমি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হই।” (আল আনআম, ১৪ )فَإِنْ أَسْلَمُوا فَقَدِ اهْتَدَوْا (ال عمران : 20)“এরপর তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে হিদায়াত প্রাপ্ত হলো।” ( আলে ইমরান, ২০ )يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا (المائدة :44)“সমস্ত নবী—যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাওরাত অনুসারে ফায়সালা করতেন।” ( আল মায়েদা, ৪৪ )এসব আয়াতে এবং এ ধরনের আরো বহু আয়াতে ইসলাম গ্রহণের অর্থ কি ঈমানবিহীন আনুগত্য করা? একইভাবে ‘মুসলিম’ শব্দটি যে অর্থে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে তার জন্য নমুনা হিসেবে নিম্ন বর্ণিত আয়াতসমূহ দেখুনঃيَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (ال عمران :102)“হে ঈমান গ্রহণকারীগণ! আল্লাহকে ভয় করার মত ভয় করো। আর মুসলিম হওয়ার আগেই যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে।” ( আলে ইমরান, ১০২ )“তিনি এর পূর্বেও তোমাদের নামকরণ করেছিলেন মুসলিম তাছাড়া এ কিতাবেও।” ( আল হাজ্ব, ৭৮)مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا (ال عمران : 67)“ইবরাহীম ইহুদী বা খৃস্টান কোনটাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম।” ( আলে ইমরান, ৬৭ )رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ (البقرة : 128)“(কা’বা ঘর নির্মাণের সময় হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের দোয়া) হে আমাদের রব, আমাদের দু’জনকেই তোমার অনুগত বানাও এবং আমাদের বংশ থেকে এমন একটি উম্মত সৃষ্টি করো যারা তোমার অনুগত হবে।” ( আল বাকারা, ১২৮ )يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (البقرة : 132)[নিজের সন্তানদেরকে হযরত ইয়াকূবের (আ) অসীয়ত] “হে আমার সন্তানেরা, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এ জীবন বিধানকেই মনোনীত করেছেন। অতএব, মুসলিম হওয়ার আগে যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে।” ( আল বাকারা, ১৩২ )এসব আয়াত পাঠ করে এমন ধারণা কে করতে পারে যে, এতে উল্লেখিত মুসলিম শব্দের দ্বারা এমন লোককে বুঝানো হয়েছে যে বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করলেও আন্তরিকভাবে তা মানে না? সুতরাং কুরআনের পরিভাষা অনুসারে ইসলাম অর্থ ঈমানহীন আনুগত্য এবং কুরআনের ভাষায় কেবল বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণকারীকেই মুসলিম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এরূপ দাবী করাও চরম ভুল। অনুরূপ এ দাবী করাও ভুল যে, কুরআন মজীদে উল্লেখিত ঈমান ও মু’মিন শব্দ দু’টি অবশ্যই সরল মনে মেনে নেয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব শব্দ নিঃসন্দেহে এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এমন অনেক স্থানও আছে যেখানে এ শব্দ ঈমানের বাহ্যিক স্বীকৃতি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যারা মৌখিক স্বীকারোক্তির মাধ্যমে মুসলমানের দলে শামিল হয়েছে। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا বলে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সত্যিকার মু’মিন, না দুর্বল ঈমানের অধিকারী না মুনাফিক তা বিচার করা হয়নি। এর বহুসংখ্যক উদাহরণের মধ্য থেকে মাত্র কয়েকটির জন্য দেখুন, আলে ইমরান, আয়াত, ১৫৬ ; আন নিসা, ১৩৬ ; আল মায়েদা, ৫৪ ; আল আনফাল, ২০ থেকে ২৭ ; আত তাওবা , ৩৮ ; আল হাদীদ, ২৮ ; আস-সফ , ২ ।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতগুলোতে রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারী জাতির ধবংসের বিবরণ তুলে ধরার পর অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন; দুনিয়াতে যত জাতি অতীত হয়ে গেছে তাদের মধ্যে ভাল লোকের সংখ্যা খুবই কম ছিল এবং মন্দ লোকের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে ছিল। তাদের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা খুব কমই ছিল যারা মানুষদেরকে অন্যায় অশ্লীল ও বেহায়াপনা কাজ থেকে বাধা দিত। তারা সেসব লোকদের অনুসরণ করতো যারা ছিল জালিম। সুতরাং যুগ যুগ ধরে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নাবীদেরকে অস্বীকার করে এসেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْر)

“আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ।” (সূরা সাবা ৩৪:১৩)

আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত দ্বারা এ নির্দেশও দিচ্ছেন যে, দুনিয়াতে মানুষেরা যেন তাবলীগ ও দা‘ওয়াতী কার্যকলাপ বেশি বেশি করে এবং মানুষদেরকে সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করে। প্রয়োজনে এমন একটি দল গঠন করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَي الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ط وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ)

“তোমাদের মধ্যে এমন এক দল থাকা জরুরি যারা কল্যাণের দিকে মানুষকে ডাকবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১০৪)

আর আল্লাহ তা‘আলা এমন নন যে, কোন জনপদকে তাদের কুফরী ও জুলুমের কারণে ধ্বংস করে দেবেন অথচ তারা সংশোধন হচ্ছে। কোন জাতি যদি সংশোধন হতে চায় ও নিজেদের কুফরী ও অন্যায় কাজ থেকে বাঁচিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ করে দেন এবং ধ্বংস করেন না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি জুলুম করেন না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا ظَلَمْنٰهُمْ وَلٰكِنْ ظَلَمُوْآ أَنْفُسَهُمْ)

“আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল” (সূরা হূদ ১১:১০১)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ)

“তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোন জুলুম করেন না।” (সূরা হা-মীম-সিজদাহ ৪১:৪৬)

সুতরাং নিজে সৎআমল ও মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা আবশ্যক অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) সংখ্যায় বেশি হলেই যে তারা সঠিক এমনটি মনে করা যাবে না; বরং কম সংখ্যক লোক হলেও হক পন্থী হতে পারে। অতএব অন্ধ বিশ্বাস করা যাবে না।
(২) আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি জুলুমকারী নন; বরং মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে।
(৩) সঠিক পন্থায় মানুষের মাঝে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে হবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৬-১১৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ অতি অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া আমি অতীত যুগের লোকদের মধ্যে এমন লোকদেরকে কেন পাই নাই যারা দুষ্ট ও অবাধ্য লোকদেরকে অন্যায় ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতো? এই অল্প সংখ্যক লোক ওরাই যাদেরকে আমি নিজের শাস্তি থেকে রক্ষা করে থাকি। এ জন্যেই আল্লাহ তাআ’লা এই উম্মতের মধ্যে এরূপ দলের বিদ্যমানতা অপরিহার্য করে নির্দেশ দিয়েছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকা উচিত যারা মানুষকে মঙ্গল ও কল্যাণের দিকে আহ্‌বান করবে এবং মন্দ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হচ্ছে সফলকাম।” (৩: ১০৪) যালিমদের নীতি এটাই যে, তারা তাদের বদ অভ্যাস থেকে ফিরে আসে না। সৎ আলেমদের ফরমানের প্রতি তারা মোটেই ভ্রুক্ষেপ করে না। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতি তাদের অজান্তে আল্লাহর আযাব এসে পড়ে। ভাল বস্তিগুলির উপর আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে অত্যাচারমূলক ভাবে কখনো শাস্তি আসে না। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করে নিজেদেরকে শাস্তির যোগ্য করে তোলে। আল্লাহ পাক যুলুম থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি তাদের উপর যুলুম করি নাই বরং তারা নিজেরাই নিজেদের নফ্‌সের উপর যুলুম করেছে; (১১: ১০১) অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক বান্দাদের উপর অত্যাচারকারী নন।” (৪১: ৪৬)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ, পূর্ববর্তী জাতির মধ্য থেকে এমন নেক লোক কেউ ছিল না, যারা নোংরা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে নোংরা, অশ্লীলতা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হতে বিরত রাখত? তারপর বলেন, এরূপ মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছিল, তাদেরকে আমি সেই সময় আযাব থেকে রক্ষা করেছি। আর অবশিষ্ট লোকদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

[২] অর্থাৎ এ যালেমরা, নিজেদের যুলমের উপর অটল ছিল এবং আপন মত্ততায় উন্মত্ত ছিল। পরিশেষে আযাবে তাদেরকে ঘিরে ফেলেছিল।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# এখানে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উপর আযাব নাযিল হওয়ার কারণ বর্ণনা করে তা থেকে আত্মরক্ষার পথ নির্দেশ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছেঃ আফসোস, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের মধ্যে দায়িত্বশীল বিবেকবান কিছু লোক কেন ছিল না, যারা জাতিকে ফাসাদ সৃষ্টি করা হতে বিরত রাখত? তাহলে তো তারা সমূলে ধ্বংস হত না। তবে মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছিল, যারা নবীদের যথার্থ অনুসরণ করেছে এবং তারাই আযাব হতে নিরাপদ ছিল | অবশিষ্ট লোকেরা পার্থিব ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে অপকর্মে মেতে উঠেছিল। [দেখুন, মুয়াসসার]
# তারা যদি যালেম না হবে তবে তাদেরকে তিনি কেন ধ্বংস করবেন? যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “আর আমরা তাদের প্রতি যুলুম করিনি কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল ” [সূরা হুদ’ ১০১] [ইবন কাসীর]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 116-117
يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ
Prohibiting (others) from Fasad (corruption) in the earth,

There must be a Group of People Who forbid Lewdness

Allah says,

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُوْلُواْ بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ إِلاَّ قَلِيلً مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ

If only there had been among the generations before you persons having wisdom, prohibiting (others) from Fasad (corruption) in the earth, except a few of those whom We saved from among them!

Allah, the Exalted, says that there should have been a group of wise people present among the past generations who called to good and forbade the evil and corruption that took place among them in the land.

His statement,
إِلاَّ قَلِيلً
(except a few),

This means that there were only a small number of people present among them who were of this caliber. They were those whom Allah saved at the sudden striking of His vengeance, when His anger was let lose. For this reason Allah commanded this noble Ummah (followers of Muhammad) to always have among them those who command the good and forbid the evil.

This is as Allah says,

وَلْتَكُن مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

Let there arise out of you a group of people inviting to all that is good, enjoining righteousness and forbidding evil. And it is they who are the successful. (3:104)

It is related in a Hadith that the Prophet said,

إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُغَيِّرُوهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَاب

Verily, whenever a group of people see an evil and they do not change it, it is likely that Allah will cover them with (His) punishment.

Thus, Allah says,

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُوْلُواْ بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الَارْضِ إِلاَّ قَلِيلً مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ

If only there had been among the generations before you persons having wisdom, prohibiting (others) from the Fasad in the earth, – except a few of those whom We saved from among them!

Concerning the statement,

وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مَا أُتْرِفُواْ فِيهِ

Those who did wrong pursued the enjoyment of good things of (this worldly) life,

This means that they continued in their ways of disobedience and evils and they did not heed the protesting of those righteous people, until the torment suddenly seized them.

وَكَانُواْ مُجْرِمِينَ

and were criminals.

Then, Allah

وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ
And your Lord would never destroy the towns wrongfully, while their people were doers of good.

Allah informs that he does not destroy any town, except that it has wronged itself. No correctional punishment or torment comes to any town, except that its people were wrongdoers. This is as Allah says,

وَمَا ظَلَمْنَـهُمْ وَلَـكِن ظَلَمُواْ أَنفُسَهُمْ

We wronged them not, but they wronged themselves. (11:101)

Allah also says,

وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّـمٍ لِّلْعَبِيدِ

And your Lord is not at all unjust to (His) servants. (41:46)

Leave a Reply