(Book# 735) [ وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ মঙ্গলের পূর্বে তারা তোমাকে অমঙ্গল ত্বরান্বিত করতে বলে; They impatiently urge you to bring about evil before good, ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 735)
[ وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ
মঙ্গলের পূর্বে তারা তোমাকে অমঙ্গল ত্বরান্বিত করতে বলে;
They impatiently urge you to bring about evil before good, ]
www.motaher21.net
وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ وَ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِمُ الۡمَثُلٰتُ ؕ وَ اِنَّ رَبَّکَ لَذُوۡ مَغۡفِرَۃٍ لِّلنَّاسِ عَلٰی ظُلۡمِہِمۡ ۚ وَ اِنَّ رَبَّکَ لَشَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۶﴾
মঙ্গলের পূর্বে তারা তোমাকে অমঙ্গল ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ তাদের পূর্বে এর বহু দৃষ্টান্ত গত হয়েছে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষের সীমালংঘন সত্ত্বেও তাদের প্রতি ক্ষমাশীল এবং নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানেও কঠোর।
They impatiently urge you to bring about evil before good, while there has already occurred before them similar punishments [to what they demand]. And indeed, your Lord is full of forgiveness for the people despite their wrongdoing, and indeed, your Lord is severe in penalty.
وَ یَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡہِ اٰیَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُنۡذِرٌ وَّ لِکُلِّ قَوۡمٍ ہَادٍ ٪﴿۷﴾
যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী। আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পথ প্রদর্শক রয়েছে।
And those who disbelieved say, “Why has a sign not been sent down to him from his Lord?” You are only a warner, and for every people is a guide.

সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৬-৭ নং আয়াত:-
وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ
মঙ্গলের পূর্বে তারা তোমাকে অমঙ্গল ত্বরান্বিত করতে বলে;
They impatiently urge you to bring about evil before good,
৬-৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত কাফিরদের কথা বর্ণনা করছেন যারা আল্লাহ তা‘আলা, নবী-রাসূল ও কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। তাদের বিশ্বাস আমরা বেঁচে আছি মরে যাব, কোন কিছু হবে না। যেমন সূরা মুমিনূনের ৩৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু তাদের কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস নেই তাই তারা দ্রুত আযাব কামনা করে বলে, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হও তাহলে শাস্তি আনয়ন করছ না কেন? بِالسَّيِّئَةِ দ্বারা উদ্দেশ্য হল শাস্তি।

তারা এ শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছে অথচ ইতিপূর্বে অনেক জাতির ওপর এরূপ শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তাদের এ তাড়াহুড়া করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَيَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ ط وَلَوْلَآ أَجَلٌ مُّسَمًّي لَّجَا۬ءَهُمُ الْعَذَابُ ط وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ)‏

“তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত তবে শাস্তি তাদের উপর অবশ্যই আসত। নিশ্চয়ই তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তারা টেরও পাবে না।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৩)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِهَا ج وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مُشْفِقُوْنَ مِنْهَا لا وَيَعْلَمُوْنَ أَنَّهَا الْحَقُّ)

“যারা এর প্রতি বিশ্বাস করে না তারাই এটার (কিয়ামত) জন্য তড়িঘড়ি করে। আর যারা বিশ্বাসী তারা একে ভয় করে এবং জানে যে, এটা সত্য।” (সূরা শুরা ৪২:১৮)

মানুষ অন্যায়-অত্যাচার ও আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতামূলক কাজ করা সত্ত্বেও শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অতিশয় দয়ালু তাই তিনি তাদের পাপ করার সাথে সাথেই শাস্তি দেন না বরং তিনি তাদেরকে কিছুকাল সময় দেন যাতে তারা ভাল হওয়ার সুযোগ পায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَإِنْ كَذَّبُوْكَ فَقُلْ رَّبُّكُمْ ذُوْ رَحْمَةٍ وَّاسِعَةٍ ج وَلَا يُرَدُّ بَأْسُه۫ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ)

“অতঃপর যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে বল: ‘তোমাদের প্রতিপালক সর্বব্যাপী দয়ার মালিক এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি রদ করা হবে না।’’ (সূরা আনয়াম ৬:১৪৭)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না বলে এমনটি মনে করা যাবে না যে, তিনি শাস্তি দিতে অক্ষম।

পরবর্তী আয়াতেও আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলছেন যে, তারা বলে, সে যদি সত্যবাদিই হবে তাহলে তাঁর উপর তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আসে না কেন? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা ইউনুসের ২০নং আয়াতে করা হয়েছে।

(وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ)

‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথ প্রদর্শক’ এখানে পথ-প্রদর্শক বলতে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নাবী-রাসূলদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে হেদায়েতের মালিক মনে করা যাবে না। হিদায়েতের মালিক কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَا۬ء)

“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।” (সূরা কাসাস ২৮:৫৬)

সুতরাং রাসূলগণ পথ-প্রদর্শক বটে কিন্তু হিদায়েতের মালিক নন। হিদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ হিদায়েতের মালিক নন।
(২) মানুষদেরকে ভাল-মন্দ পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য যুগে যুগে নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতকে অস্বীকারকারীরা তোমাকে বলছেঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আল্লাহর শান্তি আনয়ন করছে না কেন? যেমন আল্লাহ তাআ’লা তাদের সম্পর্কে খবর দিয়েছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তারা বলেঃ হে সেই ব্যক্তি, যে দাবী করছো যে, তোমার উপর আল্লাহর যিকর অবতীর্ণ করা হয়, নিশ্চয় তুমি তো পাগল। যদি তুমি সত্যবাদীও হও তবে তুমি আমাদের কাছে আযাবের ফেরেশতাকে আনছো না কেন? (এর উত্তরে তাদেরকে বলা হয়) ফেরেশতাদেরকে আমি সত্য ও ফায়সালার সাথেই অবতীর্ণ করে থাকি, যখন তারা এসেই পড়বে তখন তাদেরকে (তাওবা’ করার ও ঈমান আনয়নের) বিন্দুমাত্র অবকাশ দেয়া হবে না।” (১৫: ৬-৮) আল্লাহ তাআ’লা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) (২৯:৫৩) (দু’আয়াত পর্যন্ত)। আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এক ব্যক্তি চাইলো সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত।” (৭০ :১) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যারা ঈমান আনয়ন করে না তারা ওটাকে (শাস্তিকে) তাড়াতাড়ি চাচ্ছে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা এটাকে ভয় করছে এবং ওটাকে সত্য বলে জানছে।” (৪২ :১৮) আরো এক জায়গায় বলেছেনঃ “তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের শাস্তি ও হিসেবের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করুন।” আর এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তারা বলতো: হে আল্লাহ! যদি এটা আপনার পক্ষ থেকে সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষণ করুন অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নাযিল করুন।” (৮:৩২) ভাবার্থ এই যে, কুফরী ও অস্বীকারের কারণে আল্লাহর শান্তি নেমে আসা অসম্ভব মনে করে এতে তারা নির্ভয় হয়ে যায় যে, শাস্তি নেমে আসার তারা আকাঙ্খ করে বসে। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের পূর্ববর্তী এইরূপ লোকদের দৃষ্টান্ত তাদের সামনে রয়েছে। তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল বলে তাদেরকে তাঁর আযাবের দ্বারা পাকড়াও করা হয়। এটা আল্লাহ তাআ’লার দয়া ও সহিষ্ণুতা যে, তিনি পাপকার্য করতে দেখেন অথচ সাথে সাথে পাকড়াও করেন না। নতূবা ভূ-পৃষ্ঠে কাউকেও তিনি চলতে ফিরতে দিতেন না। দিনরাত তিনি পাপ করতে দেখছেন এবং ক্ষমা করে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর আযাবও বড় বিপজ্জনক, অত্যন্ত কঠিন এবং বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তুমি বলে দাও তোমাদের প্রতিপালক বড়ই করুণাময়, আর তার শাস্তি পাপাচারী কওম হতে ফিরানো হয় না।” (৬: ১৪৭) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক তাড়াতাড়ি হিসাব গ্রহণকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু”। (৬: ১৬৫) আরো বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমার বান্দাদেরকে খবর দিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, দয়ালু আর নিশ্চয় আমার শাস্তি হচ্ছে বড়ই যন্ত্রণাদায়ক।” (১৫: ৪৯-৫০)

এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে যাতে একই সাথে আশা প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে।

হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি আল্লাহ তাআ’লা বান্দাকে ক্ষমা না করতেন তবে কেউই জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করতে পারতো না এবং যদি তিনি ধমক ও শাস্তি প্রদান না করতেন তবে বান্দা অত্যাচার ও সীমালংঘনের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তো।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হা’তিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত হাসান ইবনু উসমান আবু হাসান রামাদী (মক্কী নুসখাতে যিয়াদী রয়েছে) স্বপ্নে মহামহিমান্বিত আল্লাহর দর্শন লাভ করেন। তিনি দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআ’লার সামনে দাঁড়িয়ে তার একজন উম্মতের জন্যে সুপারিশ করছেন। তখন আল্লাহ তাআ’লা তাকে বলেনঃ “তোমাদের জন্যে কি সুরায়ে রাদ এর (আরবি) এ আয়াতটি যথেষ্ট নয়?” হযরত আবু হাসান (রাঃ) বলেনঃ “এরপর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি।” (এটা হা-ফিজ ইবনু আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলছেনঃ তারা অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমী ভাব নিয়ে বলেঃ পূর্ববর্তী নবীগণ যেমনভাবে মু’জিযা নিয়ে এসেছিলেন তেমনিভাবে এই নবী অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোন মু’জিযা নিয়ে আগমন করেন নাই কেন? যেমন সাফা পাহাড়কে সোনা বানিয়ে দেয়া, আরবের পাহাড়কে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা, আরব ভূমি সবুজ শ্যামল করে তোলা, এখানে নদী প্রবাহিত করা ইত্যাদি। তাদের এ কথার উত্তরে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ মু’জিযা’ প্রেরণ করা হতে আমাকে এ জিনিসই বিরত রেখেছে যে, পুর্ববর্তীরা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।” মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি মুশরিকদের এসব কথায় মোটেই দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না। তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। তুমি হিদায়াতকারী নও। তারা না মানলে তোমাকে পাকড়াও করা হবে না। হিদায়াত করার হাত আল্লাহ তাআ’লার। এ কাজ তোমার ক্ষমতার বাইরে। প্রত্যেক কওমের জন্যেই পথ প্রদর্শক ও আহবানকারী রয়েছে।’ অথবা ভাবার্থ হবেঃ ‘হিদায়াতকারী আমি এবং ভয় প্রদর্শনকারী তুমি।’ অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে ভয় প্রদর্শনকারী অতিবাহিত হয়েছেন।” (৩৫:২৪) এখানে (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নবী। সুতরাং প্রত্যেক দলের মধ্যেই পথ প্রদর্শক থাকেন। তাঁর ইলম ও আমল দ্বারা অন্যান্যেরা পথ পেয়ে থাকে। এই উম্মতের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন হয়রত মুহাম্মদ (সঃ)।

একটি অত্যন্ত অস্বীকৃত রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় বক্ষে হাত রেখে বলেনঃ “ভয় প্রদর্শনকারী আমি এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একজন হাদী বা পথ প্রদর্শক রয়েছে।” ঐ সময় তিনি হযরত আলীর (রাঃ) স্কন্ধের দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! তুমি হাদী। আমার পরে তোমার দ্বারা মানুষ হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।” (এ হাদীসটি আবু জাফর ইবনু জারীর (রাঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এতে ভীষণ অস্বীকৃতি রয়েছে)

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ‘হাদী’ দ্বারা কুরায়েশের একজন লোককে বুঝানো হয়েছে। হযরত জুনাইদ (রাঃ) বলেন যে, লোকটি হচ্ছেন স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)। ইবনু জারীর (রঃ) হযরত আলীর (রাঃ) হাদী হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। (কিন্তু এতেও কঠিন নাকারাত বা অস্বীকৃতি রয়েছে)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মক্কার কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে বলতো, যদি তুমি সত্যিই নবী হয়ে থাকো এবং তুমি দেখছো আমরা তোমাকে অস্বীকার করছি, তাহলে তুমি আমাদের যে আযাবের ভয় দেখিয়ে আসছো তা এখন আমাদের ওপর আসছে না কেন? তার আসার ব্যাপারে অযথা বিলম্ব হচ্ছে কেন? কখনো তারা চ্যালেঞ্জের ভংগীতে বলতে থাকেঃ

رَبَّنَا عَجِّلْ لَنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ

“হে আমাদের রব! এখনই তুমি আমাদের হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দাও। কিয়ামতের জন্য তাকে ঠেকিয়ে রেখো না।”

আবার কখনো বলতে থাকেঃ

اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ هَذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِنَ السَّمَاءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

“হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ﷺ যে কথাগুলো পেশ করছে এগুলো যদি সত্য হয় এবং তোমারই পক্ষ থেকে হয় তাহলে আমাদের ওপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল করো।”

এ আয়াতে কাফেরদের পূর্বোক্ত কথাগুলোর জবাব দিয়ে বলা হয়েছেঃ এ মূর্খের দল কল্যাণের আগে অকল্যাণ চেয়ে নিচ্ছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এদেরকে যে অবকাশ দেয়া হচ্ছে তার সুযোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে এরা এ অবকাশকে দ্রুত খতম করে দেয়ার এবং এদের বিদ্রোহাত্মক কর্মনীতির কারণে এদেরকে অনতিবিলম্বে পাকড়াও করার দাবী জানাচ্ছে।

# এখানে তারা এমন নিশানীর কথা বলতে চাচ্ছিল যা দেখে তারা মুহাম্মাদ ﷺ এর আল্লাহর রসূল হবার ওপর ঈমান আনতে পারে। তারা তাঁর কথাকে তাঁর সত্যতার যুক্তির সাহায্যে বুঝতে প্রস্তুত ছিল না। তারা তাঁর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনধারা ও চরিত্র থেকে শিক্ষা নিতে প্রস্তুত ছিল না। তাঁর শিক্ষার প্রভাবে তাঁর সাহাবীগণের জীবনে যে ব্যাপক ও শক্তিশালী নৈতিক বিপ্লব সাধিত হচ্ছিল তা থেকেও তারা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে প্রস্তুত ছিল না। তাদের মুশরিকী ধর্ম এবং জাহেলী কল্পনা ও ভাববাদিতার ভ্রান্তি সুস্পষ্ট করার জন্য কুরআন যেসব বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছিল তারা সেগুলোর প্রতি কর্ণপাত করতে প্রস্তুত ছিল না। এসব বাদ দিয়ে তারা চাচ্ছিল তাদেরকে এমন কোন তেলেসমাতি দেখানো হোক যার মাধ্যমে তারা মুহাম্মাদ ﷺ কে যাচাই করতে পারে।

# এটি হচ্ছে তাদের দাবীর সংক্ষিপ্ত জবাব। তাদেরকে সরাসরি এ জবাব দেবার পরিবর্তে আল্লাহ‌ তাঁর নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে সম্বোধন করে এ জবাব দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে, হে নবী! তাদেরকে নিশ্চিন্ত করার জন্য কোন ধরনের তেলেসমাতি দেখানো হবে এ ব্যাপারটি নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করো না। প্রত্যেককে নিশ্চিন্ত করা তোমার কাজ নয়। তোমার কাজ হচ্ছে কেবলমাত্র গাফলতির ঘুমে বিভোর লোকদেরকে জাগিয়ে দেয়া এবং ভুল পথে চলার পরিণাম সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন হেদায়াতকারী যুক্ত করে আমি এ দায়িত্ব সম্পাদন করেছি। এখন তোমাকেও এ দায়িত্ব সম্পাদনে নিয়োজিত করা হয়েছে। এরপর যার মন চায় চোখ খুলতে পারে এবং যার মন চায় গাফলতির মধ্যে ডুবে থাকতে পারে। এ সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে আল্লাহ‌ তাদের দাবীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং তাদেরকে এ বলে সতর্ক করে দেন যে, তোমরা এমন কোন রাজ্যে বাস করছো না যেখানে কোন শাসন, শৃংখলা ও কর্তৃত্ব নেই। তোমাদের সম্পর্ক এমন এক আল্লাহর সাথে যিনি তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে যখন সে তার মায়ের জঠরে আবদ্ধ ছিল তখন থেকেই জানেন এবং সারা জীবন তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের প্রতি নজর রাখেন। তার দরবারে তোমাদের ভাগ্য নির্ণীত হবে নির্ভেজাল আদল ও ইনসাফের ভিত্তিতে, তোমাদের প্রত্যেকের দোষ-গুণের প্রেক্ষিতে। পৃথিবী ও আকাশে তার ফায়সালাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা কারোর নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ আল্লাহর আযাবে বহু সম্প্রদায় ও জনপদ ধ্বংসের অনেক উদাহরণ পূর্বে এসেছে, তা সত্ত্বেও তারা আযাব শীঘ্র প্রার্থনা করে? এ কথা কাফেরদের জবাবে বলা হয়েছে, যারা বলেছিল যে, হে নবী! যদি তুমি সত্য হও, তাহলে আমাদের উপর সেই আযাব আনয়ন কর, যার ভয় তুমি আমাদেরকে দেখাচ্ছ।

[২] অর্থাৎ মানুষের অন্যায়-অত্যাচার ও অবাধ্যতার পরও তিনি আযাবে শীঘ্র গ্রেপ্তার না করে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কখনো কখনো আযাবের ব্যাপারটা কিয়ামত অবধি বিলম্বিত করেন। এটা তাঁর দয়া, কৃপা, করুণা ও ক্ষমাশীলতার পরিণাম। নচেৎ তিনি যদি তাদেরকে আযাবে শীঘ্রই গ্রেপ্তার করতেন, তাহলে পৃথিবীতে কোন মানুষ অবশিষ্ট থাকতো না। তিনি এরশাদ করেন, ﴿وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِن دَابَّةٍ﴾ অর্থাৎ, যদি আল্লাহ মানুষদেরকে তাদের কার্যকলাপের কারণে পাকড়াও করতেন, তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে একটি জীবকেও রেহাই দিতেন না। (সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৫)

[৩] এখানে মহান আল্লাহর দ্বিতীয় গুণের কথা উল্লেখ হয়েছে, যেন মানুষ শুধু একটিই দিকের প্রতি দৃষ্টি না রাখে, বরং অন্য দিকের প্রতিও লক্ষ্য রাখে। কেননা একটিই দিকের প্রতি ধারাবাহিক দৃষ্টি রাখলে অনেক কিছু অদৃশ্য থেকে যায়। সঙ্গত কারণেই কুরআন মাজীদে যেখানে আল্লাহর করুণা ও ক্ষমাবিশিষ্ট গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তার সঙ্গে তাঁর ক্রোধ ও প্রবলতাবিশিষ্ট গুণেরও উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন এখানেও রয়েছে। যেন বান্দার মনে আশা ও ভয় দুটো দিকই সক্রিয় থাকে। কেননা আশা আর আশাই যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারে ভয়শূন্য ও দুঃসাহসিক হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যদি সব সময় মস্তিষ্কে ভয় আর ভয়ই ঢুকে থাকে, তাহলে সে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যায়। উক্ত দুটো দিকই ভুল এবং মানুষের জন্য সর্বনাশী। এই জন্য বলা হয়, الْإِيْمَانُ بَيْنَ الْخَوْفِ وَالرَّجَاءِ ঈমান ভয় ও আশার মধ্যে। অর্থাৎ, উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার নাম ঈমান। যেন মানুষ তাঁর আযাব থেকে না নির্ভয় হয় আর না তাঁর রহমত থেকে নিরাশ।

(উক্ত বিষয়ের জন্য দেখুনঃ সূরা আনআম ৬:৪৭ নং আয়াত, সূরা আ’রাফ ৭:১৬৭ নং আয়াত, সূরা হিজর ১৫:৪৯-৫০ নং আয়াত।)

#[১] প্রত্যেক নবীকে মহান আল্লাহ অবস্থা, প্রয়োজন এবং স্বীয় ইচ্ছা ও হিকমত মোতাবেক কিছু নিদর্শন ও মু’জিযা দান করেছেন। কিন্তু কাফেররা নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মু’জিযা তলব করতে থাকে। যেমন মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-কে বলত যে, সাফা পর্বতকে সোনার বানিয়ে দেওয়া হোক অথবা পর্বতের স্থানে নদী ও ঝর্ণা প্রবাহিত করে দেওয়া হোক ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের মন মত মু’জিযা না দেখানো হলে তারা বলতে আরম্ভ করত যে, এর উপর কোন মু’জিযা কেন অবতীর্ণ করা হলো না? মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী! তোমার কাজ শুধু সতর্ক করা এবং পৌঁছে দেওয়া। এটা তুমি করতে থাক। কেউ মানুক বা না মানুক, সেটা তোমার দেখার নয়। কেননা হিদায়াত দান করা আমার কাজ। তোমার কাজ পথ দেখানো। তাকে উক্ত পথে চালানো তোমার কাজ নয়, সে কাজ আমার।

[২] প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট মহান আল্লাহ তাদের নির্দেশনার জন্য পথপ্রদর্শক অবশ্যই পাঠিয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, সম্প্রদায়ের মানুষেরা হিদায়াতের পথ অবলম্বন করল বা করল না। কিন্তু সঠিক পথ দেখাবার জন্য পয়গম্বর অবশ্যই এসেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: ﴿وَإنْ مِنْ أُمَّةٍ إلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী অবশ্যই এসেছে। (সূরা ফাতির ৩৫:২৪)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] কাফেরদের দ্বিতীয় সন্দেহ ছিল, যদি বাস্তবিকই আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল হয়ে থাকেন, তবে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের কারণে আপনি যেসব শাস্তির কথা শুনান, সেগুলো আসে না কেন? কখনো তারা চ্যালেঞ্জের ভঙ্গীতে বলতে থাকেঃ “হে আমাদের রব! এখনই তুমি আমাদের হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দাও। কিয়ামতের জন্য তাকে ঠেকিয়ে রেখো না।” [সূরা সোয়াদঃ ১৬] আবার কখনো বলতে থাকেঃ “হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কথাগুলো পেশ করছে এগুলো যদি সত্যি হয় এবং তোমারই পক্ষ থেকে হয় তাহলে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল করো।” [সূরা আল-আনফালঃ ৩২] আবার কখনো তারা রাসূলকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে বলতে থাকেঃ “তারা বলে, ’ওহে যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ। তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের কাছে ফিরিশতাদেরকে উপস্থিত করছ না কেন?’ আমরা ফিরিশতাদেরকে যথার্থ কারণ ছাড়া নাযিল করি না; ফিরিশতারা উপস্থিত হলে তারা অবকাশ পাবে না।” [সূরা আল-হিজরঃ ৬-৮] এ আয়াতে কাফেরদের পূর্বোক্ত কথাগুলোর জবাব দিয়ে বলা হয়েছেঃ এ মূর্খের দল কল্যাণের আগে অকল্যাণ চেয়ে নিচ্ছে। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে এদেরকে যে অবকাশ দেয়া হচ্ছে তার সুযোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে এরা এ অবকাশকে দ্রুত খতম করে দেয়ার এবং এদের বিদ্রোহাত্মক কর্মনীতির কারণে এদেরকে অনতিবিলম্বে পাকড়াও করার দাবী জানাচ্ছে। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত তবে শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর আসত। নিশ্চয়ই তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তাদের অজ্ঞাতসারে। তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।” [সূরা আল-আনকাবূতঃ ৫৩-৫৪] আরো এসেছে, “যারা এটা বিশ্বাস করে না তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায়। [সূরা আশ-শূরাঃ ১৮] মোটকথাঃ তারা বিপদমুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই আপনার কাছে বিপদ নাযিল হওয়ার তাগাদা করে যে, আপনি নবী হয়ে থাকলে তাৎক্ষণিক আযাব এনে দিন। এতে বুঝা যায় যে, তারা আযাব আসাকে খুবই অবাস্তব অথবা অসম্ভব মনে করে। এটা ছিল তাদের অবিশ্বাস, কুফরি, অবাধ্যতা, বিরোধিতা ও অস্বীকৃতির চরম পর্যায়। তাই আল্লাহ্ তা’আলা বলছেন, অথচ তাদের পূর্বে অন্য কাফেরদের উপর অনেক আযাব এসেছে। সবাই তা প্রত্যক্ষ করেছে। তাদেরকে এর মাধ্যমে আল্লাহ্ পরবর্তীদের জন্য উদাহরণ, উপদেশ হিসেবে রেখে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] এমতাবস্থায় তাদের উপর আযাব অবাস্তব হল কিরূপে? এখানে (مَثُلٰتُ) শব্দটি (مثلة) -এর বহুবচন। এর অর্থ অপমানকর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। [ফাতহুল কাদীর]

[২] বলা হয়েছেঃ “মানুষের সীমালংঘন সত্বেও আপনার রব তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল”। মানুষের শত অন্যায়কেও তিনি ক্ষমা করেন। যদি তিনি ক্ষমাশীল না হতেন তবে কারোই রেহাই ছিল না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে গেলে আল্লাহ্ তো আছেন তাঁর বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা ফাতিরঃ ৪৫] আয়াতের শেষে আল্লাহ্ তা’আলা বলছেন যে, তিনি যে শুধু ক্ষমাশীল তা-ই নয় বরং তিনি কঠোর শাস্তিদাতাও। এভাবে আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাঁর বান্দাকে আশা ও ভীতির মধ্যে রাখেন। [যেমন, সূরা আল-আন’আমঃ ১৪৭, সূরা আল-আ’রাফঃ ১৬৭, সূরা আল-হিজরঃ ৪৯-৫০] যাতে করে মানুষের জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে। শুধু আশার বাণী শুনতে শুনতে মানুষ সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করবে না। আবার শুধু ভয়-ভীতির কথা শুনতে শুনতে মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠবে না। এটাই আল্লাহ্ তা’আলা চান। সে জন্য তিনি যখনই কোন আশার কথা শুনিয়েছেন সাথে সাথেই ভয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মূলতঃ আশা ও ভীতির মাঝেই হলো ঈমানের অবস্থান। [ইবন কাসীর]
# [১] কাফেরদের তৃতীয় সন্দেহ ছিল এই যে, আমরা রাসূলের কাছে বিশেষ ধরনের যেসব মু’জিযা দেখতে চাই, সেগুলো তিনি প্রকাশ করেন না কেন? এখানে তারা এমন নিশানীর কথা বলতে চাচ্ছিল যা দেখে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহ্‌র রাসূল হবার উপর ঈমান আনতে পারে। এটা ছিল মূলতঃ তাদের গোঁড়ামী। যেমন এর পূর্বেও তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করার অযথা আব্দার করেছিল। তারা আরও বলেছিল যে, আপনি মক্কার পাহাড়গুলোকে সরিয়ে দিন। সে পাহাড়ের জায়গায় নদী-নালার ব্যবস্থা করে দিন। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “আর আমাদেরকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে শুধু এটাই বিরত রেখেছে যে, তাদের পূর্ববর্তীগণ তাতে মিথ্যারোপ করেছিল।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৯] [ইবন কাসীর] মু’জিযা প্রকাশ করা সরাসরি আল্লাহ্‌র কাজ। তিনি যখন যে ধরনের মু’জিযা প্রকাশ করতে চান, তাই করেন। তিনি কারো দাবী ও ইচ্ছা পূরণ করতে বাধ্য নন। এ জন্যই বলা হয়েছেঃ (اِنَّمَآ اَنْتَ مُنْذِرٌ) অর্থাৎ আপনার কাজ শুধু আল্লাহ্‌র আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করা।

[২] আয়াতের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে। এক. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী আর প্রতিটি কাওমের জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী নবী, যিনি তাদেরকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান করবেন। [বাগভী; ইবন কাসীর] দুই. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী এবং প্রতিটি কাওমের জন্যও আপনি হিদায়াতকারী অর্থাৎ আহ্বানকারী। [বাগভী; ইবন কাসীর] তিন. সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, এর অর্থ আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী। আর সত্যিকার হিদায়াতকারী তো আল্লাহ্ তা’আলাই। [বাগভী; ইবন কাসীর] প্রথম মতটিকে ইমাম শানকীতী প্রাধান্য দিয়ে বলেন, এর সমার্থে অন্যত্র এসেছে, “আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আছে একজন রাসূল” [সূরা ইউনুস: ৪৭] আরও এসেছে, “আর এমন কোন উম্মত নেই যার কাছে গত হয়নি সতর্ককারী” [সূরা ফাতির : ২৪] আরও এসেছে, “আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম” [সূরা আন-নাহল: ৩৬] [আদওয়াউল বায়ান]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 6-7
وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ
They impatiently urge you to bring about evil before good,
The Disbelievers ask for the Punishment to be delivered now!

Allah said,

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ

They ask you to hasten,

in reference to the disbelievers,

بِالسَّيِّيَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ

the evil before the good,

meaning, the punishment.

Allah said in other Ayat that they said,

وَقَالُواْ يأَيُّهَا الَّذِى نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ

لَّوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَـيِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّـدِقِينَ

مَا نُنَزِّلُ الْمَلَـيِكَةَ إِلاَّ بِالحَقِّ وَمَا كَانُواْ إِذًا مُّنظَرِينَ

And they say:”O you to whom the Dhikr (the Qur’an) has been sent down! Verily, you are a mad man! Why do you not bring angels to us if you are of the truthful!”

We send not the angels down except with the truth (i.e. for torment), and in that case, they (the disbelieves) would have no respite! (15:6-8)

and two Ayat;

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ

And they ask you to hasten on the torment! (29:53-54)

Allah also said,

سَأَلَ سَأيِلٌ بِعَذَابٍ وَاقِعٍ

A questioner asked concerning a torment about to befall. (70:1)

and,

يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِهَا وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ مُشْفِقُونَ مِنْهَا وَيَعْلَمُونَ أَنَّهَا الْحَقُّ

Those who believe not therein seek to hasten it, while those who believe are fearful of it, and know that it is the very truth. (42:18)

and,

وَقَالُواْ رَبَّنَا عَجِّل لَّنَا قِطَّنَا

They say:”Our Lord! Hasten to us Qittana. (38:16),

meaning, our due torment and reckoning.

Allah said that they also supplicated,

وَإِذْ قَالُواْ اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَـذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ

And (remember) when they said:”O Allah! If this (the Qur’an) is indeed the truth from You. (8:32)

They were such rebellious, stubborn disbelievers that they asked the Messenger to bring them Allah’s torment.

Allah replied,

وَقَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِمُ الْمَثُلَتُ

while exemplary punishments have indeed occurred before them.

Meaning, `We have exerted Our punishment on the previous disbelieving nations, and made them a lesson and example for those who might take heed from their destruction.’

If it was not for His forbearance and forgiveness, Allah would have indeed punished them sooner.

Allah said in another Ayah,

وَلَوْ يُوَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُواْ مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِن دَابَّةٍ

And if Allah were to punish men for that which they earned, He would not leave a moving creature on the surface of the earth. (35:45)

Allah said in this honorable Ayah,

وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ

But verily, your Lord is full of forgiveness for mankind in spite of their wrongdoing.

He is full of forgiveness, pardoning and covering the mistakes of people, in spite of their wrongdoing and the errors committed night and day.

Allah next reminds that His punishment is severe, so that fear and hope are both addressed and mentioned.

وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ

And verily, your Lord is (also) severe in punishment.

Allah said in other Ayat,

فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمْ ذُو رَحْمَةٍ وَسِعَةٍ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ

If they belie you, say:”Your Lord is the Owner of vast mercy, and never will His wrath be turned back from the people who are criminals.” (6:147)

إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

Verily, your Lord is quick in retribution and certainly He is Oft-Forgiving, Most Merciful. (7:167)

and,

نَبِّىءْ عِبَادِى أَنِّى أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ وَأَنَّ عَذَابِى هُوَ الْعَذَابُ الاٌّلِيمُ

Declare unto My servants that truly I am the Oft-Forgiving, the Most Merciful. And that My torment is indeed the most painful torment. (15:49-50)

There are many other Ayat that mention both fear and hope.
The Idolators ask for a Miracle

Allah says:

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْلا أُنزِلَ عَلَيْهِ ايَةٌ مِّن رَّبِّهِ

And the disbelievers say:”Why is not a sign sent down to him from his Lord!”

Allah states that out of their disbelief and stubbornness, the idolators asked why is not a miracle sent down to the Messenger from his Lord, just like the earlier Messengers. For instance, the disbelievers were being stubborn when they asked the Prophet to turn As-Safa into gold, to remove the mountains from around them, and to replace them with green fields and rivers.

Allah said,

وَمَا مَنَعَنَأ أَن نُّرْسِلَ بِالاٌّيَـتِ إِلاَّ أَن كَذَّبَ بِهَا الاٌّوَّلُونَ

And nothing stops Us from sending the Ayat but that the people of old denied them. (17:59)

Allah said here,

إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ

You are only a warner,

and your duty is only to convey Allah’s Message which He has ordered you,

لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـكِنَّ اللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَأءُ

Not upon you is their guidance, but Allah guides whom He wills. (2:272)

Allah said;

وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ

And to every people there is a guide.

meaning that for every people there has been a caller,

according to Ibn Abbas and as narrated from him by Ali bin Abi Talhah.

Allah said in a similar Ayah,

وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلاَّ خَلَ فِيهَا نَذِيرٌ

And there never was a nation but a warner had passed among them. (35:24)

Similar has reported from Qatadah and Abdur-Rahman bin Zayd.

Leave a Reply