أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 738)
[ هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ
তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী,
It is He Who shows you the lightning,]
www.motaher21.net
ہُوَ الَّذِیۡ یُرِیۡکُمُ الۡبَرۡقَ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنۡشِیٴُ السَّحَابَ الثِّقَالَ ﴿ۚ۱۲﴾
তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী, ভয় ও আশা-আকাংখারূপে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ ।
It is He who shows you lightening, [causing] fear and aspiration, and generates the heavy clouds.
وَ یُسَبِّحُ الرَّعۡدُ بِحَمۡدِہٖ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ مِنۡ خِیۡفَتِہٖ ۚ وَ یُرۡسِلُ الصَّوَاعِقَ فَیُصِیۡبُ بِہَا مَنۡ یَّشَآءُ وَ ہُمۡ یُجَادِلُوۡنَ فِی اللّٰہِ ۚ وَ ہُوَ شَدِیۡدُ الۡمِحَالِ ﴿ؕ۱۳﴾
বজ্রধ্বনি ও ফিরিশতাগণ সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি বজ্রসমূহ প্রেরণ করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। ওরা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে; আর তিনি মহাশক্তিশালী।
And the thunder exalts [ Allah ] with praise of Him – and the angels [as well] from fear of Him – and He sends thunderbolts and strikes therewith whom He wills while they dispute about Allah ; and He is severe in assault.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
১২-১৩ নং আয়াত:-
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ
তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী,
It is He Who shows you the lightning,
১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
মেঘ, বৃষ্টি ও রোদ আল্লাহ তা‘আলার অপার নেয়ামত। বৃষ্টির মাঝে মাঝে আল্লাহ তা‘আলা বিদ্যুৎ চমক সৃষ্টি করেন। এ বিদ্যুৎ চমক দেখানোর মাঝে দুটি হিকমত রয়েছে। ১. মানুষকে ভয় দেখানো, ২.আশ্বস্ত করা।
কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: ভয় হল মুসাফিরের জন্য, কারণ পথিমধ্যে বিদ্যুৎ চমক দেখলে মনের মধ্যে প্রাণনাশের আশংকা জাগে। আর আশা হল বাড়িতে বসে থাকা কৃষক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য। কারণ বিদ্যুৎ চমক মানে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বা পূর্ব সংকেত, তাই ফসল ফলানো যাবে এবং তাতে বরকত হবে মনের মধ্যে এই আশা জাগে।
হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন: ভয় হল যারা সমুদ্রে গমন করে, আর আশা হল যারা স্থলে বাস করে।
আর তিনি বিদ্যুৎ চমকের দ্বারা সৃষ্টি করেন ঘন মেঘ। যা পানির ভারে জমিনের নিকটবর্তী হয়ে যায়। অতঃপর তা থেকে বৃষ্টি হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এরূপ বজ্র দেখতেন বা আওয়াজ শুনতেন তখন নিম্নের এ দু‘আটি পাঠ করতেন:
اَللّٰهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ولا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
অর্থ: হে আল্লাহ তা‘আলা! আমাদেরকে আপনার গযব দ্বারা নিপাত করবেন না এবং আপনার আযাব দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। এর পূর্বেই আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন। (মুসতাদরাক হাকেম ৪/২৮৬)
আল্লাহ তা‘আলা এখানে বলছেন যে, বজ্র, ফেরেশতাসহ প্রত্যেক জিনিস একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই প্রশংসা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِنْ مِّنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِه۪)
“সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।” (সূরা ইসরা ১৭:৪৪)
আর যারা তাঁর প্রশংসা করে না। তাকে ভয় করে না এবং তাঁর সাথে কুফরী করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এই সমস্ত বজ্রধ্বনি দ্বারা আঘাত হানেন। এমনকি তাদের উপর এই বজ্র নিক্ষেপ করে তাদেরকে মৃত্যুও দেন। আর তারা আল্লাহ তা‘আলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে অথচ আল্লাহ তা‘আলার কৌশল তাদের থেকে যে অনেক শক্তিশালী তা তারা জানে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَّمَكَرْنَا مَكْرًا وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ لا أَنَّا دَمَّرْنٰهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ)
“তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি।” (সূরা নাহল ২৭: ৫০-৫১)
সুতরাং সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলারই প্রশংসা করতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোন প্রকার চক্রান্তমূলক কাজ করা যাবে না, করলে পূর্ববর্তীদের মতই অবস্থা হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মেঘমালার বজ্রের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা যেমন মানুষকে ভয় দেখান তেমনি তাদেরকে প্রশান্তিও দান করেন।
২. বজ্রধ্বনিও আল্লাহ তা‘আলার জন্য তাসবীহ পাঠ করে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ বজ্র বা এ জাতীয় কোন কিছু প্রেরণ করতে পারে না।
৪. আল্লাহ তা‘আলার কৌশলের তুলনায় মানুষের চক্রান্ত খুবই দুর্বল।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, বিদ্যুৎও তারই নির্দেশাধীন। একটি লোক হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) বিদ্যুৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে তাকে বলেনঃ “বিদ্যুৎ হচ্ছে পানি।” পথিক ওটা দেখে কষ্ট ও বিপদের ভয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। আর বাড়ীতে অবস্থানকারী ব্যক্তি বরকত ও উপকার লাভের আশায় জীবিকার আধিক্যের লোভ করে। ওটাই ঘন মেঘ সৃষ্টি করে থাকে যা পানির ভারে যমীনের নিকটবর্তী হয়ে যায়। ওটা পানিতে বোঝা স্বরূপ হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ বজ্রও তাঁর প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “প্রত্যেক জিনিসই আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকে।” বানু গিফার গোত্রের একজন শায়েখ নবীকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা মেঘ সৃষ্টি করেন যা উত্তমরূপে কথা বলে ও হাস্য করে। (এটা ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম বুখারী (রঃ) এটাকে কিতাবুল আদাবে রিওয়াইয়াত করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) স্বীয় মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
সম্ভবতঃ কথা বলা দ্বারা গর্জন করা এবং হাস্য করা দ্বারা বিদ্যুৎ চমকানো উদ্দেশ্য। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা মেঘ প্রেরণ করেন এবং ওটা অপেক্ষা উত্তম কথক ও উত্তম হাস্যকারী আর কিছুই নেই। ওর হাসি হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং কথা হচ্ছে বজ্র। মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম (রঃ) বলেন “আমরা খবর পেয়েছি যে, বিদ্যুৎ হচ্ছে একজন ফেরেশতা যার চারটি মুখ রয়েছে। একটি মানুষের মত, একটি বলদের মত, একটি গাধার মত এবং একটি সিংহের মত। সে যখন লেজ নাড়ে তখন বিদ্যুৎ চমকে ওঠে।”
সা’লিম (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন বজ্র ধ্বনি শুনতেন তখন তিনি নিম্নের দু’আটি পাঠ করতেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার গযব দ্বারা নিপাত করবেন না এবং আপনার আযাব দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। এবং এর পূর্বেই আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
অন্য রিওয়াইয়াতে নিম্নের দু’আটি রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি ঐ সত্ত্বার পবিত্রতা বর্ণনা করছি যাঁর প্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকে বজ্ৰ।” হযরত আলী (রাঃ) বজ্ৰ ধ্বণি শুনে পাঠ করতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি যার তুমি পবিত্রতা বর্ণনা করলে।”
ইবনু আবি যাকারিয়া (রাঃ) বলেন যে, বজ্র ধ্বনি শুনে যে ব্যক্তি (আরবি) পাঠ করে তার উপর বিদ্যুৎ পতিত হয় না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বজ্র ধ্বনি শুনে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং পাঠ করতেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি ঐ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি; বজ্রনির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ সভয়ে যাঁর প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে থাকে।” আর তিনি বলতেন যে, এই শব্দে দুনিয়াবাসীর জন্যে বড় সন্ত্রাসের ব্যাপার রয়েছে। (এটা ইমাম মা’লিক (রঃ) তার মুআত্তা এবং ইমাম বুখারী (রঃ) কিতাবুল আদাবে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের মহা মহিমান্বিত প্রতিপালক বলেনঃ ‘যদি আমার বান্দারা পূর্ণমাত্রায় আমার আনুগত্য করতো তবে আমি অবশ্যই তাদের উপর রাত্রিকালে বৃষ্টি বর্ষণ করতাম এবং দিনের বেলায় তাদের উপর সূর্য প্রকাশমান রাখতাম, আর বজ্রের ধ্বনি পর্যন্ত তাদেরকে শুনাতাম না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ বজ্র ধ্বনি শুনে তোমরা আল্লাহর যিকর করবে। কেননা, আল্লাহর কসম! আল্লাহর যিকরকারীর উপর বস্ত্র পতিত হয় না। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
“তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন।” এ জন্যেই শেষ যুগে খুব বেশি বিজলী পতিত হবে। যেমন হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় খুব বেশি বিজলী পড়বে। এমনকি কোন লোক তাদের কওমের কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেঃ “সকালে কার উপর বিজলী পড়েছে?” তারা উত্তরে বলবেঃ “অমুকের উপর অমুকের উপর, এবং অমুকের উপর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এই আয়াতের শানে নুযূলে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে একবার আরবের এক অহংকারী সরদারকে ডেকে আনার জন্যে প্রেরণ করেন। লোকটি তখন তার নিকট গমন করে এবং তাকে বলেঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। সে একথা শুনে লোকটিকে বলেঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে? এবং আল্লাহ কে? তিনি কি সোনার, না রূপার, না তামার (তৈরী)?” দূতটি তখন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে ফিরে আসলো এবং বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো আপনাকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, সে একজন অহংকারী লোক! সে আমাকে এরূপ, এরূপ বলেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তুমি তার কাছে দ্বিতীয়বার যাও।” সে গেল এবং সে তাকে ঐ কথাই বললো। সুতরাং সে এবারও রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট ফিরে আসলো এবং বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো আপনাকে খবর দিয়েছিলাম যে, সে এর থেকে বেপরোয়া”। রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তুমি তার কাছে আবার ফিরে যাও এবং ডেকে আন।” সুতরাং সে তৃতীয়বার তার কাছে ফিরে গেল। এবারও লোকটি পয়গাম শুনে ঐ উত্তরই দিতে শুরু করলো। এমন সময় এক খন্ড মেঘ তার মাথার উপর এসে গেল। বজ্ৰ ধ্বনি হলো এবং তার উপর বিজলী পড়ে গেল। ফলে তার মাথার খুলী (মাথার উপরিভাগ উড়ে) গেল। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা আল মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একজন ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বলেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ) ! আমাকে আপনার প্রতিপালক সম্পর্কে খবর দিন! তিনি কিসের তৈরী? তিনি কি তামার তৈরী, না মুক্তার তৈরী, না ইয়াকূতের তৈরী?” তার প্রশ্ন তখনও পূর্ণ হয়নি অকস্মাৎ আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পতিত হলো এবং সে ধ্বংস হয়ে গেল। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো।
কাতাদা’ (রঃ) বলেনঃ বর্ণিত আছে যে, একটি লোক কুরআন কারীমকে। মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) নুবওয়াতকে অস্বীকার করে। ঐ সময়ই আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পতিত হয় এবং সে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
এই আয়াতের শানে নুযূলে আ’মির ইবনু তুফাইল ও আরবাদ ইবনু রাবী’আ’র কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে। এ লোক দু’টি আরবের নেতৃস্থানীয় লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তারা মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট হাযির হয় এবং বলেঃ “আমরা এই শর্তে আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নিতে পারি যে, আপনি আমাদেরকে আপনার কাজের (নুবওয়াতের) অর্ধেক শরীক করবেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং তারা নিরাশ হয়ে যায়। তখন অভিশপ্ত আমির বলেঃ “আল্লাহর কসম! আমি সারা আরবকে সৈন্য দ্বারা ভর্তি করে দেবো।” তার একথার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে এ সময় দিবেন না।” অতঃপর তারা দু’জন মদীনায় অবস্থান করতে থাকলো, উদ্দেশ্য এই যে, সুযোগ পেলেই রাসূলুল্লাহকে (সঃ) হত্যা করে ফেলবে। ঘটনাক্রমে একদিন তারা সুযোগ পেয়ে গেল। একজন সামনে থেকে তার সাথে কথাবার্তা বলতে লাগলো। অন্য জন তরবারী নিয়ে পেছনে এসে গেল। কিন্তু সেই প্রকৃত রক্ষক তাঁকে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন। তখন তারা এখান থেকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে চলে গেল। তারা হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলো। আরববাসীকে তারা তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে শুরু করলো। ঐ অবস্থাতেই আরবদের উপর আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পড়ে তাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দিলো। আর আমির প্লেগরোগে আক্রান্ত হলো এবং তাতেই সে মারা গেল। এই ধরনের লোকদের ব্যাপারেই আল্লাহ তাআ’লা (আরবি) (অর্থাৎ তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহর সম্বন্ধে বিতন্ডা করে) এই আয়াত অবতীর্ণ করেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরবাদের ভাই লাবীদ ইবনু রাবী’আ’ নিম্নের পংক্তিতে শোকগাথা গেয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আরবাদের ব্যাপারে আমি মৃত্যুকে ভয় করছি, তবে আমি তার ব্যাপারে সিমাক ও আসাদ তারকা দ্বয়ের কুলক্ষণকে ভয় করি না। যুদ্ধের দিনের বাহাদুর ঘোড় সওয়ারের ব্যাপারে বজ্র ও বিদ্যুই আমাকে ব্যথিত করেছে।”
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, আ’মির বলেছিলঃ “যদি আমি মুসলমান হই তবে কি পাবো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি মুসলমান হলে অন্যান্য মুসলমানদের যে অবস্থা হয়েছে তোমারও সেই অবস্থাই হবে।” সে তখন বলেঃ “তা হলে আমি মুসলমান হবে না। যদি আমি আপনার পরে এই আমরের (নুবওয়াতের) অধিকারী হই তবেই আমি এই দ্বীন (ইসলাম) কবুল করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “এটা তোমার জন্যেও হতে পারে না এবং তোমার কওমের জন্যেও হতে পারে না। হ্যাঁ, তবে তুমি ইসলাম কবুল করলে আমার অশ্বারোহী বাহিনী তোমাকে সাহায্য করবে।” একথা শুনে সে বলেঃ “আমার এর প্রয়োজন নেই। এখনও নজদের অশ্বারোহী বাহিনী আমার আশ্রয় স্থল হিসেবে রয়েছে। আমাকে আপনি যদি কাঁচা পাকার মালিক করে দেন তবে আমি ইসলাম কবুল করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “না (তা হবে না)।” সুতরাং তারা দু’জন তাঁর নিকট হতে চলে গেল। আ’মির বলতে লাগলো: “আল্লাহর কসম! আমি মদীনার চতুর্দিক সেনাবাহিনী দ্বারা অবরোধ করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা তোমার এ
ইচ্ছা পূর্ণ হতে দেবেন না।” এখন তারা দুজনে পরামর্শ করলো যে, তাদের একজন রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথাবার্তা বলতে থাকবে এবং অপরজন এই সুযোগে তাঁকে তরবারী দ্বারা হত্যা করে ফেলবে। তারপর তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর কে খুব বেশী হলে এটাই হবে যে, তাদেরকে রক্তপণ দিতে হবে। এই পরামর্শের পর আবার তারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে। আমি তাঁকে বলেঃ আপনি এখানে একটু আসুন। আপনার সাথে আমি কিছু আলাপ করতে চাই।” তার একথা শুনে তিনি তার কাছে উঠে আসলেন এবং তার সাথে চললেন। এক প্রাচীরের পাদদেশে সে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথা বলতে শুরু করে। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কথা শুনতে থাকেন। সুযোগ পেয়ে আরবাদ তরবারীর উপর হাত রাখে। ওটাকে কোষ হতে বের করার ইচ্ছা করে। কিন্তু আল্লাহ তাআ’লা তার হাত অবশ করে দেন। কোন ক্রমেই সে কোষ হতে তরবারী বের করতে পারলো না। যখন বেশ দেরী হয়ে গেল এবং পিছন দিকে ফিরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ অবস্থা দেখতে পেলেন তখন তিনি সেখান থেকে সরে আসলেন। অতঃপর তারা দু’জন মদীনা হতে প্রস্থান করে এবং ‘হাররা রা’কিম’ স্থানে পৌঁছে থেমে যায়। কিন্তু হযরত সা’দ ইবনু মুআ’য (রাঃ) এবং হযরত উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) সেখানে পৌঁছেন এবং তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেন। তারা সেখান হতে বের হয়ে ‘রকম’ নামক স্থানে পৌছা মাত্রই আরবাদের উপর আকাশ থেকে বিজলী পড়ে যায় এবং সেখানেই তার জীবন লীলা শেষ হয়ে যায়। আ’মির সেখান থেকে পলায়ণ করে। ‘খুৱায়েম’ নামক স্থানে পৌছা মাত্রই সে প্লেগের ফেঁড়ায় আক্রান্ত হয়। বানু সালুল গোত্রের এক মহিলার ঘরে সে রাত্রি যাপন করে। কখনো কখনো সে তার ঘাড়ের ফোঁড়া স্পর্শ করতো এবং সবিস্ময়ে বলতো: “এটা তো সেই ফোড়া যা উটের হয়ে থাকে! হায় আফসোস! আমি সালুল গোত্রের এক মহিলার ঘরে মারা যাবো! যদি আমি নিজ বাড়ীতে থাকতাম তবে কতই না ভাল হতো।” শেষ পর্যন্ত সে সেখানে থাকতে পারলো না। তার ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সে সেখান থেকে বিদায় নিলো। কিন্তু পথেই সে ধ্বংস হয়ে গেলো। তাদের ব্যাপারেই আল্লাহ তাআ’লা
(আরবি) (১৩: ৮-১১) পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন। এতে হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) হিফাযত করার বর্ণনাও রয়েছে এবং আরবাদের উপর বিজলী পতিত হওয়ার বর্ণনাও রয়েছে।
এরপর আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ তারা আল্লাহর ব্যাপারে বাক বিতন্ডা করে। তারা তার মর্যাদা ও একত্ববাদকে স্বীকার করে না। অথচ আল্লাহ তাআ’লা তার বিরোধী ও অস্বীকারকারীদের কঠিন ও অসহনীয় শাস্তি প্রদানকারী। সুতরাং এই আয়াতটি নিম্নের আয়াতটির মতই।
(আরবি) অর্থাৎ “তারা চরমভাবে চক্রান্ত করলো এবং আমিও উত্তম কৌশল করলাম, অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারলো না। সুতরাং তুমি লক্ষ্য কর, তাদের চক্রান্তের ফল কি দাঁড়ালো! আমি তাদেরকে এবং তাদের সমস্ত কওমকে ধ্বংস করে দিলাম।” (২৭: ৫০) (আরবি) এর ভাবার্থ হযরত আলীর (রাঃ) মতেঃ “তিনি কঠিনভাবে পাকড়াওকারী।” আর হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “তিনি ভীষণ শক্তিশালী।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মেঘের গর্জন একথা প্রকাশ করে যে, যে আল্লাহ এ বায়ু পরিচালিত করেছেন, বাষ্প উঠিয়েছেন, ঘন মেঘরাশিকে একত্র করেছেন, এ বিদ্যুৎকে বৃষ্টির মাধ্যম বা উপলক্ষ্য বানিয়েছেন এবং এভাবে পৃথিবীর জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন তিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটি-অভাব মুক্ত, তিনি জ্ঞান ও শক্তির দিক দিয়ে পূর্ণতার অধিকারী। তাঁর গুণাবলী সকল প্রকার আবিলতা থেকে মুক্ত এবং নিজের প্রভুত্বের ক্ষেত্রে তাঁর কোন অংশীদার নেই। পশুর মতো নির্বোধ শ্রবণ শক্তির অধিকারীরা তো এ মেঘের মধ্যে শুধু গর্জনই শুনতে পায় কিন্তু বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন সজাগ শ্রবণ শক্তির অধিকারীরা মেঘের গর্জনে তাওহীদের গুরুগম্ভীর বাণী শুনে থাকে।
# আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের মাহিমান্বিত প্রকাশে ফেরেশতাদের প্রকম্পিত হওয়া এবং তাঁর তাসবীহ ও প্রশংসা গীতি গাইতে থাকার কথা বিশেষভাবে এখানে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, মুশরিকরা প্রত্যেক যুগে ফেরেশতাদেরকে দেবতা ও উপাস্য গণ্য করে এসেছে এবং আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে তাদেরকে শরীক মনে করে এসেছে। এ ভ্রান্ত ধারণার প্রতিবাদ করে বলা হয়েছে, সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সাথে শরীক নয় বরং তারা তার অনুগত সেবক মাত্র এবং প্রভুর কর্তৃত্ব মহিমায় প্রকম্পিত হয়ে তারা তার প্রশংসা গীতি গাইছে।
# তার কাছে অসংখ্য কৌশল রয়েছে। যে কোন সময় যে কারো বিরুদ্ধে যে কোন কৌশল তিনি এমন পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন যে, আঘাত আসার এক মুহূর্তে আগে ও সে জানতে পারে না কখন কোন দিক্ থেকে তার ওপর আঘাত আসছে। এ ধরনের একচ্ছত্র শক্তিশালী সত্তা সম্পর্কে যারা না ভেবেচিন্তে এমনি হালকাভাবে আজে-বাজে কথা বলে, কে তাদের বুদ্ধিমান বলতে পারে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] ফলে পথচারী মুসাফির ভয় পায় এবং বাড়িতে অবস্থানকারী কৃষক-চাষী এর বরকত ও লাভের আশাবাদী হয়।
[২] ঘন মেঘ অর্থাৎ, বর্ষণশীল মেঘ।
# [১] যেমন অন্যত্র বলেছেন, ﴿وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেক বস্তু তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে। (সূরা ইসরা ১৭:৪৪)
[২] অর্থাৎ, এর মাধ্যমে যাকে চান ধংস করে দেন।
[৩] مِحَال এর অর্থ শক্তি, পাকড়াও এবং পরিচালনা ইত্যাদি করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি বড্ড শক্তিমান, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব-নিকাশকারী এবং সুপরিচালক।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# আল্লাহ্ তা’আলাই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ প্রদর্শন করান। এটা মানুষের জন্য ভয়েরও কারণ হতে পারে। কারণ, এটা যে জায়গায় পতিত হয় সবকিছু জ্বালিয়ে ছাইভষ্ম করে দেয়। আবার এটা আশার সঞ্চার করে যে, বিদ্যুৎ চমকানোর পর বৃষ্টি হবে, যা মানুষ ও জীব-জন্তুর জীবনের অবলম্বন। [বাগভী] আল্লাহ্ তা’আলাই বড় বড় ভারী মেঘমালা উত্থিত করেন এরপর স্বীয় ফয়সালা ও তকদীর অনুযায়ী যথা ইচ্ছা, তা বর্ষণ করেন। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এখানে মুসাফিরের জন্য কষ্টের ভয় এবং মুকীম বা স্থায়ীভাবে বসবাসকারীর জন্য আশার বৃষ্টি ও রহমতের কারণ বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]
# [১] রা’দ আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার তাসবীহ্ পাঠ করে এবং ফিরিশতারা তাঁর ভয়ে তাসবীহ্ পাঠ করে। মুজাহিদ বলেন, রা’দ বলে যদি মেঘের গর্জন বুঝা হয়, তবে এ তাসবীহ্ পাঠ করার অর্থ হবে আল্লাহ্ তাতে জীবন সৃষ্টি করেন। [কুরতুবী] অথবা এটা ঐ তাসবীহ্ যা কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতে উল্লেখিত রয়েছে যে, “সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না” [সূরা আল-ইসরাঃ ৪৪] [ইবন কাসীর] কোন কোন হাদীসে আছে যে, বৃষ্টি বর্ষণের কাজে নিযুক্ত ফিরিশতার নাম রা’দ। [দেখুন, তিরমিয়ীঃ ৩১১৭] এই অর্থে তাসবীহ্ পাঠ করার মানে সুস্পষ্ট।
[২] হাদীসে এসেছে, এক প্রতাপশালী লোকের কাছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে পাঠালে সে লোক বললঃ কে আল্লাহ্র রাসূল? আল্লাহ্ কি? সোনার না রূপার? নাকি পিতলের? এভাবে তিনবার সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো লোককে বলে পাঠাল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তার উপর আকাশ থেকে বজ্রপাত করালেন। ফলে তার মাথা গুঁড়িয়ে যায়। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবনে আবি আসেমঃ আস্সুন্নাহঃ ৬৯২]
[৩] এখানে (مِحَالِ) শব্দটি মীমের নীচে (كسرة) বা যের যোগে। যার অর্থঃ কৌশল, শক্তি-সামর্থ্য ইত্যাদি [বাগভী] শব্দটির বিভিন্ন অর্থ অনুসারে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, তারা আল্লাহ্ তা’আলার তাওহীদের ব্যাপারে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে, অথচ আল্লাহ্ তা’আলা শক্তিশালী কৌশলকারী। [মুয়াসসার] তাঁর সামনে সবার চাতুরী অচল। যে কোন সময় যে কারো বিরুদ্ধে যে কোন কৌশল তিনি এমন পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন যে, আঘাত আসার এক মুহুর্ত আগেও সে জানতে পারে না কখন কোন দিক থেকে তার উপর আঘাত আসছে। এ ধরনের একচ্ছত্র শক্তিশালী সত্তা সম্পর্কে যারা না ভেবেচিন্তে এমনি হালকাভাবে আজেবাজে কথা বলে, কে তাদের বুদ্ধিমান বলতে পারে? তাঁর ক্ষমতা ও কৌশল সম্পর্কে কারও কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তিনি যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাঁর পাকড়াও থেকে কেউই পালিয়ে যেতে পারবে না। [সা’দী] সুতরাং যদি তিনিই কেবল বান্দাদের জন্য বৃষ্টি নিয়ে আসেন, তাদের জন্য রিযিকের মৌলিক ব্যবস্থাপনা করেন, তিনিই যদি তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন, সমস্ত বড় বড় সৃষ্টি যেগুলো বান্দাদের মনে ভীতির উদ্রেক করে এবং বিরক্তির সঞ্চার করে তারাও যদি তাঁকেই ভয় পায়, তবে তো তিনিই সবচেয়ে বেশী শক্তিমান। একমাত্র তিনি ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত। আর তাই পরবর্তী আয়াতে তাকে ডাকার কথা বলা হয়েছে। [সা’দী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 12-13
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ
It is He Who shows you the lightning,
Clouds, Thunder and Lightning are Signs of Allah’s Power
Allah says:
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ
It is He Who shows you the lightning,
Allah states that He has full power over Al-Barq (lightning), which is the bright light that originates from within clouds.
Ibn Jarir recorded that;
Ibn Abbas once wrote to Abu Al-Jald asking about the meaning of Al-Barq, and he said that it is water.
خَوْفًا وَطَمَعًا
as a fear and as a hope.
Qatadah commented on Allah’s statement,
“Fear for travelers, for they feel afraid of its harm and hardship, and hope for residents, awaiting its blessing and benefit and anticipating Allah’s provisions.”
Allah said next,
وَيُنْشِىءُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
And it is He Who brings up the clouds, heavy.
meaning, He originates the clouds that are heavy and close to the ground because of being laden with rain.
Mujahid said that;
this part of the Ayah is about clouds that are heavy with rain.
Allah’s statement.
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ
And Ar-Ra’d (thunder) glorifies and praises Him,
is similar to His other statement,
وَإِن مِّن شَىْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ
And there is not a thing but glorifies His praise. (17:44)
Imam Ahmad recorded that Ibrahim bin Sa`d said,
“My father told me that he was sitting next to Hamid bin Abdur Rahman in the Masjid. A man from the tribe of Ghifar passed and Hamid sent someone to him to please come to them. When he came, Hamid said to me, `My nephew! Make space for him between me and you, for he had accompanied Allah’s Messenger.’
When that man came, he sat between me and Hamid and Hamid said to him, `What was the Hadith that you narrated to me from the Messenger of Allah?’
He said, `A man from Ghifar said that he heard the Prophet say,
إِنَّ اللهَ يُنْشِىءُ السَّحَابَ فَيَنْطِقُ أَحْسَنَ النُّطْقِ وَيَضْحَكُ أَحْسَنَ الضَّحِك
Verily, Allah originates the clouds, and they speak in the most beautiful voice and laugh in the most beautiful manner.
It appears, and Allah has the best knowledge, that the cloud’s voice is in reference to thunder and its laughter is the lightning.
Musa bin Ubaydah narrated that Sa`d bin Ibrahim said,
“Allah sends the rain and indeed, none has a better smile than it, nor more comforting voice. Its smile is lightning and its voice is thunder.”
وَالْمَلَيِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
and so do the angels because of His awe.
Supplicating to Allah upon hearing Ar-Ra`d (Thunder)
Imam Ahmad recorded that Salim bin Abdullah narrated that his father said that the Messenger of Allah used to say upon hearing the thunder and thunderbolts,
اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْل ذَلِك
O Allah! Do not kill us with Your anger, nor destroy us with Your torment, and save us before that.”
This Hadith was recorded by At-Tirmidhi, Al-Bukhari in his book Al-Adab Al-Mufrad, An-Nasa’i in `Amal Al-Yawm wal-Laylah, and Al-Hakim in Al-Mustadrak.
When Abdullah bin Az-Zubayr used to hear thunder, he would stop talking and would supplicate,
“All praise is to He Whom Ar-Ra`d (thunder) glorifies and praises, and so do the angels because of His awe.”
He would then say, “This is a stern warning to the people of earth.”
Malik collected this Hadith in Al-Muwatta’, and Al-Bukhari in Al-Adab Al-Mufrad.
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
قَالَ رَبُّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ لَوْ أَنَّ عَبِيدِي أَطَاعُونِي لَااَسْقَيْتُهُمُ الْمَطَرَ بِاللَّيْلِ وَأَطْلَعْتُ عَلَيْهِمُ الشَّمْسَ بِالنَّهَارِ وَلَمَا أَسْمَعْتُهُمْ صَوْتَ الرَّعْد
Your Lord, the Exalted and Most High, said, `Had My servants obeyed Me, I would have given them rain by night and the sun by day, and would not have made them hear the sound of the Ra`d (thunder).’
Allah’s statement,
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء
He sends the thunderbolts, and therewith He strikes whom He wills,
indicates that He sends thunderbolts as punishment upon whom He wills, and this is why thunderbolts increase as time comes to an end.
Al-Hafiz Abu Al-Qasim At-Tabarani narrated that Ibn Abbas said that;
Arbad bin Qays bin Juzu’ bin Julayd bin Jafar bin Kulab, and Amir bin At-Tufayl bin Malik came to Al-Madinah to the Messenger of Allah and sat where he was sitting.
Amir bin At-Tufayl said, “O Muhammad! What will you give me if I embrace Islam!”
The Messenger of Allah said,
لَكَ مَا لِلْمُسْلِمِينَ وَعَلَيْكَ مَا عَلَيْهِم
You will have the rights and duties of all Muslims.
Amir bin At-Tufayl said, “Will you make me your successor if I embrace Islam?”
The Messenger of Allah said,
لَيْسَ ذَلِكَ لَكَ وَلَا لِقَوْمِكَ وَلَكِنْ لَكَ أَعِنَّةَ الْخَيْل
That is not your right, nor your people’s right. However, I could appoint you a commander of the horsemen (i.e., war).
Amir said, “I am already the commander of the horsemen of Najd (in the north of Arabia). Give me control over the desert and you keep the cities.”
The Messenger of Allah refused.
When these two men were leaving the Messenger of Allah, Amir said, “By Allah! I will fill it (Al-Madinah) with horses and men (hostile to Muslims).”
The Messenger of Allah replied,
يَمْنَعُكَ الله
Rather, Allah will prevent you.
When Amir and Arbad left, Amir said, “O Arbad! I will keep Muhammad busy while talking to him, so you can strike him with the sword. Verily, if you kill Muhammad, the people (Muslims) will agree to take blood money and will hate to wage war over his murder. Then we will give them the blood money.”
Arbad said, “I will do that,” and they went back to the Messenger.
Amir said, “O Muhammad! Stand next to me so that I can talk to you.”
The Messenger stood up, and they both stood next to a wall talking to each other. Arbad wanted to grab his sword, but his hand froze when it touched the sword’s handle and he could not take the sword out of its sheath.
Arbad did not strike the Messenger as Amir suggested, and the Messenger of Allah looked at Arbad and realized what he was doing, so he departed.
When Arbad and Amir left the Messenger of Allah and arrived at Al-Harrah of Waqim area, they dismounted from their horses. However, Sa`d bin Mu`adh and Usayd bin Hudayr came out saying, “Come, O enemies of Allah! May Allah curse you.”
Amir asked, “Who is this with you, O Sa`d?”
Sa`d said, “This is Usayd bin Hudayr.”
They fled until they reached the Riqm area, where Allah struck Arbad with a bolt of lightning and he met his demise.
As for Amir, he went on until he reached the Kharim area, where Allah sent an open ulcer that struck him. During that night, Amir took refuge in a woman’s house, from Banu Salul. Amir kept touching his open ulcer and saying, “An ulcer as big as a camel’s hump, while I am at the house of a woman from Bani Salul, seeking to bring my death in her house!”
He rode his horse, but he died while riding it headed to his area.
Allah sent down these Ayat (13:8-11) in their case,
اللّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَى
(Allah knows what every female bears) until,
وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ
(…and they will find besides Him no protector).
Ibn Abbas commented,
“The angels in succession, guard Muhammad, peace be upon him, by the command of Allah.”
He next mentioned the demise of Arbad by Allah’s command, reciting this Ayah,
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ
(He sends the thunderbolts,)”
Allah said next,
وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ
yet they (disbelievers) dispute about Allah.
they doubt Allah’s greatness and that there is no deity worthy of worship except Him,
وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
And He is Mighty in strength and Severe in punishment.
Allah’s torment is severe against those who rebel against Him, defy Him and persist in disbelief, according to the Tafsir of Ibn Jarir At-Tabari.
There is a similar Ayah in the Qur’an,
وَمَكَرُواْ مَكْراً وَمَكَرْنَا مَكْراً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَـهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِينَ
So they plotted a plot, and We planned a plan, while they perceived not. Then see how was the end of their plot! Verily, We destroyed them and their nation all together. (27:50-51)
Ali bin Abi Talib said that,
وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
(And He is Mighty in strength and Severe in punishment (Al-Mihal)),
means, His punishment is severe.