أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 739)
[ لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ
একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক।
For Him is the Word of Truth.]
www.motaher21.net
لَہٗ دَعۡوَۃُ الۡحَقِّ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِہٖ لَا یَسۡتَجِیۡبُوۡنَ لَہُمۡ بِشَیۡءٍ اِلَّا کَبَاسِطِ کَفَّیۡہِ اِلَی الۡمَآءِ لِیَبۡلُغَ فَاہُ وَ مَا ہُوَ بِبَالِغِہٖ ؕ وَ مَا دُعَآءُ الۡکٰفِرِیۡنَ اِلَّا فِیۡ ضَلٰلٍ ﴿۱۴﴾
একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক। আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না। তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়। ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়।
To Him [alone] is the supplication of truth. And those they call upon besides Him do not respond to them with a thing, except as one who stretches his hands toward water [from afar, calling it] to reach his mouth, but it will not reach it [thus]. And the supplication of the disbelievers is not but in error [i.e. futility].
وَ لِلّٰہِ یَسۡجُدُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ طَوۡعًا وَّ کَرۡہًا وَّ ظِلٰلُہُمۡ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ ﴿ٛ۱۵﴾
আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়। (সাজদাহ-২)
And to Allah prostrates whoever is within the heavens and the earth, willingly or by compulsion, and their shadows [as well] in the mornings and the afternoons.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
১৪-১৫ নং আয়াত:-
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ
একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক।
For Him is the Word of Truth.
১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(لَھ۫ دَعْوَةُ الْحَقِّ….)
পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহ তথা তিনি মানুষের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন যার ফলে মানুষ উপকৃত হয় এবং বিজলী দিয়ে মানুষের মাঝে ভয় ও আশা সঞ্চার করেন। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, ভয় ও আশা সর্বাবস্থায় তাঁকেই ডাকতে হবে। কেননা তিনিই প্রত্যেকের ডাক শুনেন এবং কবুল করেন। তিনি ব্যতীত আর কেউ মানুষের ডাকে সাড়া দেন না এবং তা কবুলও করেন না।
(لَھ۫ دَعْوَةُ الْحَقِّ)
‘সত্যের আহ্বান তাঁরই প্রাপ্ত’ এর দু’টি অর্থ হতে পারে; ১. পূর্বে যা উল্লেখ করা হল অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকা, তাঁকেই আহ্বান করা সত্য, অন্য বাতিল মা‘বূদদেরকে আহ্বান করা মিথ্যা। তারা মানুষের ডাকে সাড়া দিতে পারে না। ২. দা‘ওয়াতুল হক বা সত্যের আহ্বান বলতে সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই করতে হবে, তাঁরই জন্য ইবাদত করা সঠিক বা তিনিই সত্য মা‘বূদ, বান্দার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য তিনি ব্যতীত আর কেউ নয়। কেননা বিশ্বের মালিক, সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক তিনিই। সুতরাং ইবাদতও একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য, অন্য কারো নয়। ইবাদতের দু‘আ হোক আর কোন কিছু চাওয়ার জন্য দু‘আ হোক সব কিছু তাঁর কাছেই নিবেদন করতে হবে। অন্য কাউকে ডাকলে বা তার ইবাদত করলে তা বিশুদ্ধ হবে না। বরং তা র্শ্কি হবে। অতএব দু‘আসহ সকল ইবাদত তাঁরই উদ্দেশ্যে করতে হবে।
পরবর্তীতে যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত অন্যকে ডাকে বা অন্যের ইবাদত করে তাদের দৃষ্টান্ত পেশ করছেন যে, তারা হল ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে দূর থেকে পানির দিকে দুই হাত বাড়িয়ে পানিকে বলে, তুই আমার মুখ পর্যন্ত চলে আয়। এটা স্পষ্ট কথা যে, পানি এমনই বস্তু যে, সে বুঝতেই পারে না, হাত প্রসারণকারী ব্যক্তির প্রয়োজন কী? আর সে এটাও জানে না, ঐ ব্যক্তি তাকে মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধ করছে? এবং তার মধ্যে এই ক্ষমতাও নেই, সে নিজের স্থান থেকে চলে ঐ ব্যক্তির মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। অনুরূপ এই মুশরিকরা যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন কিছুর কাছে সাহায্য কামনা করে অথবা অকল্যাণ দূর করার জন্য আহ্বান করে তারা না এটা জানে যে, তাদেরকে কেউ আহ্বান করছে এবং তার কী প্রয়োজন রয়েছে, আর না তাদের মধ্যে প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা আছে।
বরং যারা ডাকে তারা নির্বোধ এবং যাদেরকে ডাকে তারাও নির্বোধ বা জ্ঞানহীন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বাণী:
(ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوْبُ)
“প্রার্থনাকারী আর যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়েই দুর্বল।” (সূরা হজ্ব ২২: ৭৩)
অতএব যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত অন্যকে আহ্বান করে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কোনই উপকার লাভ করতে পারবে না। সুতরাং তাদেরকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
(وَلِلہِ یَسْجُدُ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ…..)
এতে আল্লাহ তা‘আলার মহিমা ও ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্তুর উপর তাঁর আধিপত্য রয়েছে এবং প্রত্যেক বস্তু তাঁরই অধীন ও তাঁরই সামনে সিজদারত। চাই তা মু’মিনদের ন্যায় ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা কাফিরদের ন্যায় অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক। তাদের ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদা করে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(أَوَلَمْ يَرَوْا إِلٰي مَا خَلَقَ اللّٰهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّأُ ظِلَالُه۫ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِّـلّٰهِ وَهُمْ دٰخِرُوْنَ)
“তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সাজদাবনত অবস্থায়?” (সূরা নাহল ১৬:৪৮)
ছায়া ও কাফেররা কিভাবে আল্লাহ তা‘আলাকে সিজদা করে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে: কেউ বলেছেন: আকাশ-জমিনে যা কিছু রয়েছে সব কিছু আল্লাহ তা‘আলার সিজদা করা (আম ও খাস) ব্যাপক ও সীমাবদ্ধ। মুমিন ও ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার সিজদা করে প্রকৃত সিজদা, তাহল মাটিতে কপাল রেখে সিজদা করা এবং তারা এ সিজদা করে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য স্বীকারপূর্বক। আর কাফেররা সিজদা করে বাধ্য হয়ে অনিচ্ছায়। কাফের দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুনাফিক। মুনাফিকরা প্রকৃতপক্ষে কাফের, বাহ্যিকভাবে যদিও ঈমানের কথা বলে। সুতরাং ব্যাপক ও সীমাবদ্ধ উভয়ভাবে আকাশ-জমিনে সবাই আল্লাহ তা‘আলাকে সিজদা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللّٰهَ يَسْجُدُ لَه۫ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ ط وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ)
“তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সাজদাহ্ করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সাজ্দাহ্ করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি।” (সূরা হাজ্জ ২২:১৮) সব কিছুর ছায়াও সকাল সন্ধ্যা স্ব-স্ব পদ্ধতিতে আল্লাহ তা‘আলার সিজদা করে থাকে।
এ আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব, সিজদার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের শেষ আয়াতের টিকায় আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয় তারা সকলেই নির্বোধ এবং যারা ডাকে তারাও। এমনকি তারা কোন প্রয়োজন মেটাতেও সক্ষম নয়।
২. দু‘আসহ সকল ইবাদতের হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৩. সাজদাহ করা একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই করতে হবে, অন্যকে নয়, করলে তা শিরক হবে।
৪. আকাশ-জমিনের সব কিছু আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিজদা করে তা সেচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# হযরত আলী ইবনু আবি তা’লিব (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর জন্যে সত্য আহবান। এর দ্বারা একত্ববাদকে বুঝানো হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা (আরবি) উদ্দেশ্য। এরপর মুশরিক ও কাফিরদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যেমন কোন লোক পানির দিকে হস্ত প্রসারিত করে থাকে এই উদ্দেশ্যে যে, পানি নিজে নিজেই তার মুখে পেঁছৈ যাবে। কিন্তু এরূপ কখনো হতে পারে না। অনুরূপভাবে এই মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আহ্বান করছে এবং তাদের কাছে আশা রাখছে, তাদের আশা তারা পূর্ণ করতে পারবে না। আবার ভাবার্থ এও হতে পারে যে, যেমন কেউ যদি তার হস্তের মুষ্ঠিতে পানি আটকে রাখে তবে ঐ পানি তার মুষ্ঠির মধ্যে আটকে থাকবে না। সুতরাং (আরবি) এর অর্থ (আরবি) হবে। যেমন কোন কবি বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “নিশ্চয় আমি ও তোমরা এবং তোমাদের প্রতি ভালবাসা স্থাপন হস্ত মুষ্ঠিতে পানি আটককারীর মতো, তার অঙ্গুলিগুলি তাকে পানি পান করায় না।” অন্য একজন বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমার মধ্যে ও তার মধ্যে যে প্রেম-প্রীতি ছিল তা হয়ে গেল হাতে পানি আটককারীর মত।” সুতরাং যেমন মুষ্ঠিতে পানি বন্ধকারী এবং যেমন পানির দিকে হস্ত প্রসারিতকারী পানি থেকে বঞ্চিত থাকে, তেমনই এই মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আহবান করছে বটে, কিন্তু তারা বঞ্চিতই থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কোনই উপকার লাভ করতে পারবে না। সুতরাং তাদেরকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
# আল্লাহ তাআ’লা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের সংবাদ দিচ্ছেন যে, সমস্ত কিছু তাঁর সামনে বিনয়াবনত। তাঁর সামনে সবাই বিনয় ও নীচতা প্রকাশ করে। মু’মিনরা খুশী মনে এবং কাফিররা বাধ্য হয়ে তাঁর সামনে সিজদায় পতিত হয়। তাদের ছায়াগুলি সকাল সন্ধ্যায় তার সামনে ঝুঁকে পড়ে।
(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে দিনের শেষ ভাগ। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা কি দেখে নাই যে, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর ছায়া ডানে, বামে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে সিজদা করে এবং নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করে?” (১৬: ৪৮)।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# ডাকা মানে নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর মানে হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ এবং সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তার হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তার কাছেই প্রার্থনা করা সঠিক ও যথার্থ সত্য বলে বিবেচিত।
# সিজ্দা মানে আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং পুরোপুরি মেনে নিয়ে মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত এবং তাঁর ইচ্ছার চুল পরিমাণও বিরোধিতা করতে পারে না-এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মু’মিন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাঁর সামনে নত হয় কিন্তু কাফেরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই।
# ছায়ার নত হওয়ার ও সিজদা করার মানে হচ্ছে, বস্তুর ছায়ার সকাল-সাঁঝে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ঢলে পড়া এমন একটি আলামত যা থেকে বুঝা যায় যে, এসব জিনিস কারো হুকুমের অনুগত এবং কারো আইনের অধীন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] ভয় এবং আশার সময় শুধু এক আল্লাহকেই ডাকা উচিত। কেননা তিনিই প্রত্যেকের ডাক শোনেন এবং কবুল করেন। অথবা দা’ওয়াত শব্দের অর্থ ইবাদত অর্থাৎ তাঁরই ইবাদত সত্য এবং শুদ্ধ, তিনি ব্যতীত কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। কেননা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও পরিচালক তিনিই। সুতরাং ইবাদতও একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য।
[২] যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তাদের উদাহরণ এমন যেমন কোন মানুষ দূর থেকে পানির দিকে দুই হাত বাড়িয়ে পানিকে বলে যে, তুই আমার মুখ পর্যন্ত চলে আয়। স্পষ্ট কথা যে, পানি অচল (নির্জীব) বস্তু, তাকে খবরই নেই যে, হাত প্রসারণকারীর প্রয়োজন কী? আর না সে এটা জানে যে, সে মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধ করছে? আর না তার মধ্যে এই ক্ষমতাই আছে যে, সে নিজের স্থান থেকে চলে তার মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। অনুরূপ এই মুশরিকরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান করে, তারা না এটা জানে যে, তাদেরকে কেউ আহবান করছে এবং তার অমুক প্রয়োজন রয়েছে, আর না তাদের মধ্যে প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতাই আছে।
[৩] এবং বেকারও বটে, কেননা এতে তাদের কোন লাভ হবে না।
# এতে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার কথা উল্লেখ হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্তুর উপর তাঁর আধিপত্য রয়েছে এবং প্রত্যেক বস্তু তাঁর অধীন ও তাঁর সামনে সিজদাবনত। চাহে মুমিনদের ন্যায় স্বেচ্ছায় করুক বা মুশরিকদের ন্যায় অনিচ্ছায়। তাদের ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদা করে। যেমন তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿أَوَ لَمْ يَرَوْاْ إِلَى مَا خَلَقَ اللهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلاَلُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالْشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِله وَهُمْ دَاخِرُونَ﴾ অর্থাৎ, তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি যার ছায়া বিনীতভাবে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ডানে ও বামে ঢলে পড়ে? (সূরা নাহল ১৬:৪৮) উক্ত সিজদার স্বরূপ কি? এটা মহান আল্লাহই ভাল জানেন। অথবা দ্বিতীয় অর্থ এর এই যে, কাফের সমেত সকল সৃষ্টি আল্লাহর আদেশাধীন, কারো তা লঙ্ঘন করার শক্তি নেই। আল্লাহ কাউকে সুস্থ করুন অথবা অসুস্থ, ধনী করুন অথবা কাঙ্গাল, জীবন দান করুন অথবা মৃত্যু। উক্ত সৃষ্টিমূলক নিয়মকে অমান্য করার শক্তি কোন কাফেরেরও নেই। —
(এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] ডাকা মানে নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর মানে হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ এবং সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তাঁর কাছেই প্রার্থনা করা সঠিক ও যথার্থ সত্য বলে বিবেচিত। তাঁর আহ্বানই হক্ক আহ্বান। সে আহ্বানের মূল হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। তিনি আল্লাহ্ ব্যতীত হক্ক কোন মা’বুদ নেই। (دَعْوَةُ الْحَقِّ) শব্দের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে এটাই বর্ণিত আছে। [দেখুন, তাবারী]
[২] মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ এর তাফসীরে বলেন, সে লোক মুখে পানির জন্য আহ্বান করছে আর পানির দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এভাবে তো আর পানি কখনো মুখে পৌঁছে না। পানি পৌঁছার জন্য পানিকে আহ্বান না করে তা নিয়ে মুখে দিয়ে দিতে হয়। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, এটা হলো মুশরিকের উদাহরণ। যে আল্লাহ্র সাথে শরীক করে তার উদাহরণ ঐ পিপাসার্ত ব্যক্তির মত যে তার মনে মনে পানির কথা ভেবে দূর থেকে পানি পাওয়ার আশা করে বসে আছে। সে পানি পাওয়ার শত আশা করলেও পানি পেতে পারে না। [তাবারী] তদ্রুপ মুশরিক ব্যক্তিও আল্লাহ্ ছাড়া অপর যাদেরকে ডাকে তাদের কাছে তার মনের যাবতীয় আশা-আকাংখা পূরণের আশা করে বসে আছে। কিন্তু তার আশা তো এভাবে কখনো পূরণ হবার নয়। তাকে তা পূরণ করতে হলে একমাত্র আল্লাহ্র কাছেই যেতে হবে।
# [১] সিজদা মানে আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং পুরোপুরি মেনে নিয়ে মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহ্র আইনের অনুগত এবং তাঁর ইচ্ছার চুল পরিমাণও বিরোধিতা করতে পারে না -এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাঁর সামনে নত হয় কিন্তু কাফেরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহ্র প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। আর তারা নিজেরা স্রষ্টার মুখাপেক্ষী এটা প্রমাণ করছে। [কুরতুবী]
[২] ‘তাদের ছায়াগুলো নত হওয়া ও সিজদা করা’র মানে হচ্ছে, ছায়ার সকাল-সাঁঝে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে সিজদা করা। এ এমন একটি আলামত যা থেকে বুঝা যায় যে, এসব জিনিস কারো হুকুমের অনুগত এবং কারোর নিয়ন্ত্রণাধীন। [কুরতুবী] মুফাসসিরগণ বলেন, সিজদাকারীদের কেউ ইচ্ছাকৃত আল্লাহ্র সিজদা করে আবার কেউ করে অনিচ্ছাকৃত কিন্তু তাদের ছায়াগুলো ঠিকই ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদা করছে। [বাগভী] মুজাহিদ বলেন, ঈমানদারের ছায়া ইচ্ছাকৃত সিজদা করে, আর সেও তা মেনে নিয়েছে। পক্ষান্তরে কাফেরের ছায়া ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদা করে অথচ সে অপছন্দ করছে। [তাবারী] এ আয়াতের সমার্থে আরো এসেছে, “তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ্র সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহ্র প্রতি সিজদাবনত হয়?” [সূরা আন-নাহলঃ ৪৮]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 14-15
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ
For Him is the Word of Truth.
A Parable for the Weakness of the False Gods of the Polytheists
Ali bin Abi Talib said that Allah’s statement,
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ
For Him is the Word of Truth.
is in reference to Tawhid, according to Ibn Jarir At-Tabari.
Ibn Abbas, Qatadah, and Malik who narrated it from Muhammad bin Al-Munkadir, said that,
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ
(For Him is the Word of Truth),
means, “La ilaha illallah.”
Allah said next,
وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ
And those whom they invoke besides Him…,
meaning, the example of those who worship others besides Allah,
لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ
إِلاَّ كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاء لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ
answer them no more than one who stretches forth his hand for water to reach his mouth, but it reaches him not;
كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاء لِيَبْلُغَ فَاهُ
(like one who stretches forth his hand for water to reach his mouth), Ali bin Abi Talib commented,
“Like he who stretches his hand on the edge of a deep well to reach the water, even though his hands do not reach it; so how can the water reach his mouth!”
Mujahid said about,
كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ
(like one who stretches forth his hand),
“Calling the water with his words and pointing at it, but it will never come to him this way.”
The meaning of this Ayah is that he who stretches his hand to water from far away, to either collect some or draw some from far away, will not benefit from the water which will not reach his mouth, where water should be consumed.
Likewise, those idolators who call another deity besides Allah, will never benefit from these deities in this life or the Hereafter, hence Allah’s statement,
وَمَا دُعَاء الْكَافِرِينَ إِلاَّ فِي ضَلَلٍ
and the invocation of the disbelievers is nothing but misguidance.
Everything prostrates unto Allah
Allah tells:
وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا
And unto Allah falls in prostration whoever is in the heavens and the earth, willingly or unwillingly,
Allah affirms His might and power, for He has full control over everything, and everything is subservient to Him. Therefore, everything, including the believers, prostrate to Allah willingly, while the disbelievers do so unwillingly,
وَظِللُهُم بِالْغُدُوِّ
and so do their shadows in the mornings,
in the beginning of the days,
وَالاصَالِ
and in the afternoons.
towards the end of the days.
Allah said in another Ayah,
أَوَ لَمْيَرَوْاْ إِلَىخَلَقَ اللَّهُ مِن شَىْءٍ يَتَفَيَّأُ
Have they not observed things that Allah has created:(how) their shadows incline. (16:48)