(Book# 740) [ وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ তিনিই অদ্বিতীয়, He is the One,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 740)
[ وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ
তিনিই অদ্বিতীয়,
He is the One,]
www.motaher21.net
قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ قُلِ اللّٰہُ ؕ قُلۡ اَفَاتَّخَذۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖۤ اَوۡلِیَآءَ لَا یَمۡلِکُوۡنَ لِاَنۡفُسِہِمۡ نَفۡعًا وَّ لَا ضَرًّا ؕ قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ۬ۙ اَمۡ ہَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُ ۬ۚ اَمۡ جَعَلُوۡا لِلّٰہِ شُرَکَآءَ خَلَقُوۡا کَخَلۡقِہٖ فَتَشَابَہَ الۡخَلۡقُ عَلَیۡہِمۡ ؕ قُلِ اللّٰہُ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ الۡقَہَّارُ ﴿۱۶﴾
বল, ‘কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক?’ বল, ‘তিনি আল্লাহ।’ বল, ‘তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে, যারা নিজেদের লাভ ও ক্ষতির মালিক নয়?’ বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষমান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক?’ অথবা তারা কি আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যার কারণে সৃষ্টি তাদের কাছে তালগোল খেয়ে গেছে? বল, ‘আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনিই অদ্বিতীয়, পরাক্রমশালী।’
Say, “Who is Lord of the heavens and earth?” Say, ” Allah .” Say, “Have you then taken besides Him allies not possessing [even] for themselves any benefit or any harm?” Say, “Is the blind equivalent to the seeing? Or is darkness equivalent to light? Or have they attributed to Allah partners who created like His creation so that the creation [of each] seemed similar to them?” Say, ” Allah is the Creator of all things, and He is the One, the Prevailing.”

সুরা: রাদ
সুরা:১৩
১৬ নং আয়াত:-
وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ
তিনিই অদ্বিতীয়,
He is the One,

১৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতের ১ম অংশে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জবান থেকে আকাশ-জমিনের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা এ স্বীকারোক্তি নিচ্ছেন। অন্যত্র বলা হয়েছে মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলার এ প্রকার তাওহীদ স্বীকার করত। কিন্তু তারা তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করলেও ইবাদত করত আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যান্য প্রতিমার। আল্লাহ তা‘আলাকে ছেড়ে এমন সৃষ্টিদেরকে অভিভাবক, বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক মনে করত যারা নিজেদের লাভ-ক্ষতিরও ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلْ أَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا)

“বল: তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত কর, যারা তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা রাখে না?” (সূরা মায়েদা ৫:৭৬)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে সব কিছুর মালিক মনে করা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করা এটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টান্ত পেশ করছেন, যেমনভাবে দৃষ্টিহীন ও দৃষ্টিমান এবং অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে না তেমনি তাওহীদপন্থী ও মুশরিক সমান হতে পারে না। কেননা তাওহীদপন্থীর হৃদয় তাওহীদের জ্যোতিতে আলোকিত থাকে, আর মুশরিক অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের উপাসনা করে তারা তা হতে বঞ্চিত। ফলে সে তাওহীদের আলো দেখতে পায় না। কেননা সে এ ব্যাপারে অন্ধ। অনুরূপভাবে আলো ও অন্ধকার যেমন সমান নয় তেমনি এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতকারী যার হৃদয় ঈমানী জ্যোতিতে পরিপূর্ণ এবং মুশরিক, যার হৃদয় অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দ্বারা পরিপূর্ণ তারা কক্ষনো এক হতে পারে না।

(أَمْ جَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَا۬ءَ خَلَقُوْا كَخَلْقِه)

অর্থাৎ মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার স্থির করছে তারা আল্লাহর সৃষ্টির মত কোন কিছু সৃষ্টি করেছে কি? ফলে তাদের কাছে বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ লাগছে যে, কে সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টিকর্তা নয় তা আলাদা করা যাচ্ছে না, তাই তারা সবার ইবাদত করছে। বিষয়টি তো এমন নয়। বরং মুশরিকরাও স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র স্রষ্টা। তাহলে কেন তাদের ইবাদত কর এবং তাদের মাধ্যম ধরে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করতে চাও। তাদের কথা আল্লাহ তুলে ধরে বলেন:

(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَي اللّٰهِ زُلْفٰي)

“আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যে পৌঁছে দেয়।” (সূরা যুমার ৩৯:৩)

সুতরাং সব কিছুর মালিক, স্রষ্টা ও অধিপতি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এ কথা জানার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করে তাহলে তাদের জন্য অপমানকর শাস্তি রয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মক্কার মুশরিকরা স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত যে, সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা কিন্তু ইবাদত করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের পূজা করত।
২. ঈমানদার আর মুশরিক সমান হতে পারে না যেমনিভাবে আলো ও অন্ধকার সমান নয়।
৩. কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করলেই মুমিন হবে না যতক্ষণ না সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য করে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। এই মুশরিকরাও এর স্বীকারুক্তিকারী যে, যমীন ও আসমানের প্রতিপালক ও পরিচালক আল্লাহ তাআ’লাই বটে। এতদসত্ত্বেও তারা তাঁকে ছেড়ে অন্যান্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছে এবং তাদের উপাসনায় লেগে পড়েছে। অথচ তারা সবাই আল্লাহ তাআ’লার অক্ষম বান্দা। তারা এতো অক্ষম যে, নিজেদেরই লাভ ও ক্ষতির মালিক তারা নয়। সুতরাং এই মুশরিকরা এবং আল্লাহর উপাসক বান্দা এক সমান হতে পারে না। এরা তো অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে। আর আল্লাহর এই খাঁটি বান্দারা রয়েছে আলোর মধ্যে। যতটা পার্থক্য রয়েছে অন্ধ ও চক্ষুষ্মনের মধ্যে এবং অন্ধকার ও আলোর মধ্যে, ততটা পার্থক্য রয়েছে এই দু’দলের মধ্যে।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই মুশরিকদের নির্ধারিত শরীকরা কি তাদের কাছে কোন জিনিসের সৃষ্টিকর্তা? যার ফলে তাদের কাছে কঠিন হয়ে গেছে যে, কোনটার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, আর কোনটার সৃষ্টিকর্তা তাদের এই উপাস্যেরা? অথচ এইরূপতো মোটেই নয়। আল্লাহর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত, তার সমকক্ষ এবং তাঁর মত কেউই নেই। তিনি উযীর, শরীক, সন্তানাদি এবং স্ত্রী থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। এসব থেকে তাঁর সত্ত্বা বহু উর্ধ্বে। এটা তো মুশরিকদের চরম নির্বুদ্ধিতা যে, তারা তাদের ছোট উপাস্যদেরকে আল্লাহ তাআ’লার সৃষ্ট দাস মনে করা সত্ত্বেও তাদের উপাসনা করতে রয়েছে। (হজ্জের সময়) ‘লাব্বায়েক’ শব্দ উচ্চারণ করতে করতে বলেঃ “হে আল্লাহ! আমরা হাযির আছি। আপনার কোন অংশীদার নেই, কিন্তু শুধুমাত্র ঐ অংশীদার যারা স্বয়ং আপনারই অধিকারীত্বে রয়েছে। আর যে জিনিসের তারা মালিক সে জিনিসেরও প্রকৃত অধিকারী আপনিই।” কুরআন কারীমের অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমরা শুধু মাত্র এ জন্যেই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাবে।” (৩৯: ৩) তাদের এই বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে ইরশাদ হচ্ছেঃ “তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কেউই তার কাছে মুখ খুলতে পারবে না। আকাশের ফেরেশতা মন্ডলীও তাঁর অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে কোন সুপারিশ করতে পারবে না।”

কুরআন পাকের এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন এবং কিয়ামতের দিন ওদের সকলেই তাঁর নিকট একাকী অবস্থায় আসবে। (১৯: ৯৩-৯৫) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লার বান্দা ও গোলাম হওয়ার দিক দিয়ে সবাই যখন সমান, তখন একে অপরের ইবাদত করা চরম নির্বুদ্ধিতা ও স্পষ্ট অন্যায় হবে না তো কি হবে? আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়ার শুরু থেকেই রাসূলদের ক্রম পরম্পরা জারী রেখেছেন। সবাই মানুষকে প্রথম শিক্ষা এই দিয়েছেন যে, আল্লাহর এক এবং ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউই উপাসনার যোগ্য নয়। কিন্তু মানুষ তাদেরকে অবিশ্বাস করেছে এবং তাঁদের বিরোধিতায় লেগে পড়েছে। ফলে তাদের উপর শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা কিন্তু আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে যুলুম নয়। তিনি কারো প্রতি যুলুম করেন না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# উল্লেখ করা যেতে পারে, আল্লাহ‌ পৃথিবী ও আকাশের রব একথা তারা নিজেরা মানতো। এ প্রশ্নের জবাবে তারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে পারতো না। কারণ একথা অস্বীকার করলে তাদের নিজেদের আকীদাকেই অস্বীকার করা হতো। কিন্তু নবী (সা.) এর জিজ্ঞাসার পর তারা এর জবাব পাশ কাটিয়ে যেতে চাচ্ছিল। কারণ স্বীকৃতির পর তাওহীদকে মেনে নেয়া অপরিহার্য হয়ে উঠতো এবং এরপর শিরকের জন্য আর কোন যুক্তিসঙ্গত বুনিয়াদ থাকতো না। তাই নিজেদের অবস্থানের দুর্বলতা অনুভব করেই তারা এ প্রশ্নের জবাবে নীরব হয়ে যেতো। এ কারণেই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ‌ নবী (সা.) কে বলেন ওদেরকে জিজ্ঞেস করো পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা কে? বিশ্ব-জাহানের রব কে? কে তোমাদের রিযিক দিচ্ছেন? তারপর হুকুম দেন, তোমরা নিজেরাই বলো আল্লাহ‌ এবং এরপর এভাবে যুক্তি পেশ করেন যে, আল্লাহই যখন এ সমস্ত কাজ করছেন তখন আর কে আছে যার তোমরা বন্দেগী করে আসছো?

# অন্ধ বলে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যার সামনে বিশ্ব-জগতের চতুর্দিকে আল্লাহর একত্বের চিহ্ন ও প্রমাণ ছড়িয়ে আছে কিন্তু সে তার মধ্য থেকে কোন একটি জিনিসও দেখছে না। আর চক্ষুষ্মান হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি, যার দৃষ্টি বিশ্ব-জগতের প্রতিটি অনু-কণিকায় এবং প্রতিটি পত্র-পল্লবে একজন অসাধারণ কারিগরের অতুলনীয় কারিগরীর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর এ প্রশ্নের অর্থ হচ্ছেঃ ওহে বুদ্ধিভ্রষ্টেরা। যদি তোমরা কিছুই দেখতে না পেয়ে থাকো তাহলে যাদের দেখার মতো চোখ আছে তারা কেমন করে নিজেদের চোখ বন্ধ করে নেবে? যে ব্যক্তি সত্যকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে সে কেমন করে দৃষ্টিশক্তিহীন লোকদের মতো আচরণ করবে এবং পথে বিপথে ঘুরে বেড়াবে?

# আলো মানে সত্যজ্ঞানের আলো। নবী (সা.) ও তাঁর অনুসারীরা এ সত্য জ্ঞানের আলো লাভ করেছিলেন। আর আঁধার মানে মূর্খতার আঁধার। নবীর অস্বীকারকারীরা এ আঁধারে পথ হারিয়ে ফেলেছিল। প্রশ্নের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আলো পেয়ে গেছে সে কেন নিজের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে আঁধারের বুকে হোঁচট খেয়ে ফিরতে থাকবে? তোমাদের কাছে আলোর মর্যাদা না থাকলে না থাকতে পারে কিন্তু যে তার সন্ধান পেয়েছে, যে আলো ও আঁধারের পার্থক্য জেনে ফেলেছে এবং যে দিনের আলোয় সোজা পথ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে সে কেমন করে আলো ত্যাগ করে আঁধারের মধ্যে পথ হাতড়ে বেড়াতে পারে?

# এ প্রশ্নের অর্থ হচ্ছে, যদি দুনিয়ার কিছু জিনিস আল্লাহ‌ সৃষ্টি করে থাকতেন এবং কিছু জিনিস অন্যেরা সৃষ্টি করতো আর কোনটা আল্লাহর সৃষ্টি এবং কোনটা অন্যদের এ পার্থক্য করা সম্ভব না হতো তাহলে তো সত্যিই শিরকের জন্য কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি হতে পারতো। কিন্তু যখন এ মুশরিকরা নিজেরাই তাদের মাবুদদের একজনও একটি তৃণ এবং একটি চুলও সৃষ্টি করেনি বলে স্বীকার করে এবং যখন তারা একথাও স্বীকার করে যে, সৃষ্টিকর্মে এ বানোয়াট ইলাহদের সামান্যতমও অংশ নেই। তখন এ বানোয়াট মাবুদদেরকে স্রষ্টার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও অধিকারে শামিল করা হলো কিসের ভিত্তিতে?

# মূল আয়াতে ‘কাহ্‌হার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এমন সত্তা যিনি নিজ শক্তিতে সবার ওপর হুকুম চালান এবং সবাইকে অধীনস্ত করে রাখেন। “আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা” একথাটি এমন একটি সত্য যাকে মুশরিকরাও স্বীকার করে নিয়েছিল এবং তারা কখনো এটা অস্বীকার করেনি। “তিনি একক ও মহাপরাক্রমশালী” একথাটি হচ্ছে মুশরিকদের ঐ স্বীকৃত সত্যের অনিবার্য ফল। প্রথম সত্যটি মেনে নেবার পর কোন জ্ঞান-বৃদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে একে অস্বীকার করা সম্ভবপর নয়। কারণ যিনি প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা নিঃসন্দেহে তিনি একক, অতুলনীয় ও সাদৃশ্যবিহীন। কারণ অন্য যা কিছু আছে সবই তার সৃষ্টি। এ অবস্থায় কোন সৃষ্টি কেমন করে তার স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা বা অধিকারে তাঁর সাথে শরীক হতে পারে? এভাবে তিনি নিঃসন্দেহে মহাপরাক্রমশালীও। কারণ সৃষ্টি তার স্রষ্টার অধীন হয়ে থাকবে, এটি সৃষ্টি-ধারণার অংগীভুত। সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার যদি পূর্ণ কর্তৃত্ব ও দখল না থাকে তাহলে তিনি সৃষ্টিকর্মই বা করবেন কেমন করে? কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্রষ্টা বলে মানে তার পক্ষে এ দু’টি বুদ্ধিবৃত্তিক ও ন্যায়ানুগ ফলশ্রুতি অস্বীকার করা সম্ভবপর হয় না। কাজেই এরপরে কোন ব্যক্তি স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির বন্দেগী করবে এবং মহাপরাক্রমশালীকে বাদ দিয়ে দুর্বল ও অধীনকে সংকট উত্তরণ করাবার জন্য আহবান জানাবে, একথা একেবারেই অযৌক্তিক প্রমাণিত হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে নবী (সাঃ)-এর জবানে স্বীকারোক্তি রয়েছে, কিন্তু কুরআনের অন্যান্য স্থানে স্পষ্ট রয়েছে যে, মুশরিকদের জবাবও এটাই ছিল।

[২] অর্থাৎ যখন তোমরা স্বীকার করছ যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি অন্যের অংশীদারিত ছাড়া সকল ক্ষমতা ও এখতিয়ারের মালিক, তাহলে এর পরও কেন তোমরা তাঁকে ছেড়ে এমন সৃষ্টিদেরকে অভিভাবক, বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক মনে করছ, যারা নিজেদের লাভ-ক্ষতিরও এখতিয়ার রাখে না।

 

[৩] অর্থাৎ, যেমন দৃষ্টিহীন ও দৃষ্টিমান সমান হতে পারে না, তেমনি তওহীদবাদী ও মুশরিক (অংশীবাদী) সমান হতে পারে না। কেননা তওহীদবাদীর হৃদয় তওহীদের জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় থাকে, পক্ষান্তরে মুশরিক তা হতে বঞ্চিত থাকে। একত্ববাদীর দৃষ্টিশক্তি রয়েছে, সে তওহীদের জ্যোতি দেখতে পায়। পক্ষান্তরে অংশীবাদী তওহীদের জ্যোতি দেখতে পায় না, কেননা সে অন্ধ। অনুরূপ যেমন অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে না, তেমনি এক আল্লাহর ইবাদতকারী; যার হৃদয় ঈমানী জ্যোতিতে পরিপূর্ণ এবং মুশরিক; যার হৃদয় অজ্ঞতা ও কুসংস্কার তথা অলীক বিশ্বএর অন্ধকারে বিচরণ করে, উভয়ে সমান হতে পারে না।

 

[৪] অর্থাৎ এমন কথা নয় যে, তারা তালগোল বা সন্দেহের শিকার হয়েছে, বরং তারা মানে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র মহান আল্লাহই।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] উল্লেখ করা যেতে পারে, আল্লাহ্ পৃথিবী ও আকাশের রব একথা তারা নিজেরা মানতো। এ প্রশ্নের জবাবে তারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে পারতো না। কারণ একথা অস্বীকার করলে তাদের নিজেদের আকীদাকেই অস্বীকার করা হতো। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিজ্ঞাসার পর তারা এর জবাব পাশ কাটিয়ে যেতে চাচ্ছিল। কারণ স্বীকৃতির পর ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাওহীদকে মেনে নেওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠতো এবং এরপর শির্কের জন্য আর কোন যুক্তিসংগত বুনিয়াদ থাকতো না। তাই নিজেদের অবস্থানের দুর্বলতা অনুভব করেই তারা এ প্রশ্নের জবাবে কিছু বলত না। এ কারণেই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা কে? বিশ্ব-জাহানের রব কে? কে তোমাদের রিফিক দিচ্ছেন? তারপর হুকুম দেন, আপনি নিজে নিজেই বলুন আল্লাহ্ এবং এরপর এভাবে যুক্তি পেশ করেন যে, আল্লাহ্ই যখন এ সমস্ত কাজ করছেন তখন আর কে আছে যার তোমরা বন্দেগী করে আসছো? এখানেও আল্লাহ্ তাদের সেই স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে তাদেরকে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই এ কথার স্বীকৃতি আদায় করছেন। কেননা, তারা স্বীকার করে যে, আসমান ও যমীনের রব হচ্ছেন আল্লাহ্, তিনিই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন, এতদসত্বেও তারা আল্লাহ্ ছাড়া বহু অভিভাবক ইলাহ গ্রহণ করে সেগুলোর ইবাদাত করছে, অথচ ইলাহগুলো না নিজেদের কোন লাভ-ক্ষতির মালিক, না তাদের ইবাদাতকারীদের। সেগুলো তাদের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আর তাদের কোন ক্ষতিও দূর করতে পারে না। তারা উভয়ে কি সমান হতে পারে, যে আল্লাহ্‌র সাথে এ সমস্ত ইলাহের ইবাদাত করে, আর যে একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করে, তার সাথে কাউকে শরীক করে না, আর সে তার রব প্রদত্ত স্পষ্ট আলোতে রয়েছে? [ইবন কাসীর]

[২] এখানে তিনি ঈমানদার ও কাফেরের জন্য একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন, যেভাবে অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান হতে পারে না তেমনি কাফের ও ঈমানদার সমান হতে পারে না। [বাগভী] মুমিন হক প্রত্যক্ষ করে, পক্ষান্তরে মুশরিক হক দেখে না। [কুরতুবী] অথবা এখানে অন্ধ বলে তারা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে ইবাদাত করতো তাদের বুঝানো হয়েছে আর চক্ষুষ্মান বলে স্বয়ং আল্লাহকেই বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী]

[৩] আলো মানে সত্যজ্ঞানের আলো। এখানে উদ্দেশ্য ঈমান। [কুরতুবী] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর অনুসারীরা এ সত্য জ্ঞানের আলো ঈমান লাভ করেছিলেন। আর আঁধার মানে কুফরী। [কুরতুবী] কুফরীতে রয়েছে মূর্খতার আঁধার। নবীর অস্বীকারকারীরা এ আঁধারে পথ হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং আলো ও আঁধার কখনও সমান হতে পারে না। যে ব্যক্তি আলো পেয়ে গেছে সে কেন নিজের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে আঁধারের বুকে হোঁচট খেয়ে ফিরতে থাকবে?

[৪] এ প্রশ্নের অর্থ হচ্ছে, যদি দুনিয়ার কিছু জিনিস আল্লাহ্ সৃষ্টি করে থাকতেন এবং কিছু জিনিস অন্য মাখলুকরা সৃষ্টি করতো আর কোনটা আল্লাহ্‌র সৃষ্টি এবং কোনটা অন্যদের এ পার্থক্য করা সম্ভব না হতো তাহলে তো সত্যিই শির্কের জন্য কোন যুক্তিসংগত ভিত্তি হতে পারতো। কিন্তু ব্যাপারটি এ রকম নয়। [দেখুন, ইবন কাসীর] কারণ, তাঁর হুবহু যেমন কিছু নেই তেমনি তার মতও কিছু নেই। তাঁর কোন সমকক্ষ নেই, তাঁর অনুরূপ কেউ নেই, তার কোন মন্ত্রী-সাহায্যকারী নেই, তাঁর কোন সন্তান নেই, আর না আছে তাঁর কোন সঙ্গিনী। আল্লাহ্‌র মর্যাদা এ সমস্ত বিষয়াদি থেকে বহু উর্ধ্বে। এ মুশরিকরা নিজেরাই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, এ সমস্ত মাবুদ যাদের ইবাদাত তারা করছে সেগুলো আল্লাহ্‌রই বান্দা, তাঁরই সৃষ্ট, যেমন তারা তাদের শির্কী তালবিয়াতে বলতঃ ‘হাজির, তাঁর কোন শরীক নেই, তবে সে শরীক, যার কর্তৃত্ব আল্লাহ্‌র হাতে, আল্লাহ্‌র কর্তৃত্ব সে শরীকের কাছে নেই।’ যেমন আল্লাহ্ অন্যত্র বলেছেন, “আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যে এনে দেবে” [সূরা আয-যুমার: ৩] তারা যেহেতু এ ধরণের বিশ্বাস করে থাকে তাই আল্লাহ্ সেটা অস্বীকার করে বলেছেন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ নেই যে, সুপারিশ করবে। “আর যাকে অনুমতি দেয়া হয় সে ছাড়া আল্লাহ্‌র কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না” [সূরা সাবাঃ ২৩] আরও বলেন, “আসমানসমূহ ও যমীনে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গুণে রেখেছেন এবং কিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে আসবে একাকী অবস্থায়।” [সূরা মারইয়াম: ৯৩-৯৫] সুতরাং এসবই যখন বান্দা ও দাস, তখন বিনা দলীল-প্রমাণে শুধু মতের উপর নির্ভরশীল হয়ে একে অপরের ইবাদত কেন করবে? তারপর আল্লাহ্ তাঁর রাসূলদের সবাইকে প্রথমজন থেকে শেষজন পর্যন্ত সবাইকে এথেকে সাবধান করে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করতে নিষেধ করার জন্যই পাঠিয়েছেন। ফলে তারা তার রাসূলদের উপর মিথ্যারোপ করল এবং তাদের বিরোধিতায় লিপ্ত হলো, তাই তাদের উপর শাস্তির বাণী যথাযথ ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেল। “আর আপনার রব কারও উপর যুলুম করেন না” [সূরা আল-কাহাফ: ৪৯] [ইবন কাসীর]

[৫] কেননা, কোন বস্তু নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেছে সেটা অসম্ভব ব্যাপার। আবার সৃষ্ট কোন কিছু স্রষ্টা ছাড়া এসেছে সেটাও অসম্ভব। তাতে বুঝা গেল যে, একজন স্রষ্টা অবশ্যই আছেন। সৃষ্টিতে যার কোন শরীক থাকতে পারে না। কেননা, তিনি এক ও দাপুটে। আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারও জন্য একক ও মহাদাপুটে গুণ সাব্যস্ত করা যায় না। সৃষ্টিকুল এবং প্রতিটি সৃষ্টির উপরই কোন না কোন নিয়ন্ত্রণকারী দাপট দেখানোর মত সৃষ্টি রয়েছে। তারপর তারও উপর রয়েছে আরেক নিয়ন্ত্রণকারী। কিন্তু তার উপর রয়েছেন সেই মহা দাপুটে সর্বনিয়ন্ত্রণকারী একক সত্তা। সুতরাং দাপট ও তাওহীদ একটি অপরটিকে বাধ্য করে। যা একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই নির্দিষ্ট। এভাবে বিবেকের শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, তারা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে আহ্বান করে তাদের কেউই সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না। আর এভাবেই তাদের ইবাদাত বাতিল প্রমাণিত হলো। [সা’দী]

[৬] মূল আয়াতে ‘কাহহার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এমন সত্তা যিনি নিজ শক্তিতে সবার উপর হুকুম চালান এবং সবাইকে অধীনস্ত করে রাখেন। যার ইচ্ছার কাছে সমস্ত ইচ্ছাকারী হার মানে। [কুরতুবী] “আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা” একথাটি এমন সত্য যাকে মুশরিকরাও স্বীকার করে নিয়েছিল এবং তারা কখনো এটা অস্বীকার করেনি। “তিনি এক ও মহাপরাক্রমশালী বা মহা দাপুটে” এটি হচ্ছে মুশরিকদের ঐ স্বীকৃত সত্যের অনিবাৰ্য ফল। কারণ যিনি প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা নিঃসন্দেহে তিনি এক, অতুলনীয় ও সাদৃশ্যবিহীন। কারণ অন্য যা কিছু আছে সবই তাঁর সৃষ্টি। এ অবস্থায় কোন সৃষ্টি কেমন করে তার স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা বা অধিকার তথা ইবাদতে তাঁর সাথে শরীক হতে পারে? এভাবে তিনি নিঃসন্দেহে মহাপরাক্রমশালীও। কারণ সৃষ্টি তার স্রষ্টার অধীন হয়ে থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্রষ্টা বলে মানে তার পক্ষে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির বন্দেগী করা এবং মহাপরাক্রমশালী সর্বনিয়ন্ত্রক আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুর্বল ও অধীনকে সংকট উত্তরণ করাবার জন্য আহবান করা একেবারেই অযৌক্তিক প্রমাণিত হলো। [দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, আস-সাওয়া’য়িকুল মুরসালাহ ২/৪৬৪-৪৬৫; মাদারিজুস সালেকীন ১/৪১৪]

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 16
وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ
He is the One,
Affirming Tawhid

Allah says:

قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ

قُلِ اللّهُ

قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاء لَا يَمْلِكُونَ لاَِنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا

Say:”Who is the Lord of the heavens and the earth!”

Say:”(It is) Allah.”

Say:”Have you then taken (for worship) Awliya’ (protectors) other than Him, such as have no power either for benefit or for harm to themselves!”

Allah affirms here that there is no deity worthy of worship except Him, since they admit that He alone created the heavens and the earth and that He is their Lord and the Disposer of all affairs. Yet, they take as lords others besides Allah and worship them, even though these false gods do not have the power to benefit or harm themselves, or those who worship them.

Therefore, the polytheists will not benefit or have harm removed from them by these false deities.

Are those who worship the false deities instead of Allah equal to those who worship Him alone, without partners, and thus have a light from their Lord.

This is why Allah said here,

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَاعْمَى وَالْبَصِيرُ

أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ

أَمْ جَعَلُواْ لِلّهِ شُرَكَاء خَلَقُواْ كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ

Say:

“Is the blind equal to the one who sees!

Or darkness equal to light!

Or do they assign to Allah partners who created the like of His creation, so that the creations seemed alike to them!”

Allah asks, `Do these polytheists worship gods besides Him that rival Him in what He created!

Have their false deities created similar creations to those Allah created and, thus, they are confused between the two types of creations, not knowing which was created by others besides Allah!’

Rather, the Ayah proves that the truth is nothing like this. There is none similar to Allah, nor does He have an equal, a rival, anyone like Him, a minister, a son, or a wife. Allah is glorified in that He is far away from all that is ascribed to Him.

These idolators worship gods that they themselves admit were created by Allah and are subservient to Him. They used to say during their Talbiyah:”Here we rush to Your obedience. There is no partner for You, except Your partner, You own him and he owns not.”

Allah also mentioned their polytheistic statements in other Ayat,

مَا نَعْبُدُهُمْ إِلاَّ لِيُقَرِّبُونَأ إِلَى اللَّهِ زُلْفَى

We worship them only that they may bring us near to Allah. (39:3)

Allah admonished them for this false creed, stating that only those whom He chooses are allowed to intercede with Him,

وَلَا تَنفَعُ الشَّفَـعَةُ عِندَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ

Intercession with Him profits not except for him whom He permits. (34:23)

وَكَمْ مِّن مَّلَكٍ فِى السَّمَـوَتِ

And there are many angels in the heavens…..(53:26)

and,

إِن كُلُّ مَن فِى السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ إِلاَّ اتِى الرَّحْمَـنِ عَبْداً

لَّقَدْ أَحْصَـهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدّاً

وَكُلُّهُمْ ءَاتِيهِ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ فَرْداً

There is none in the heavens and the earth but comes unto the Most Gracious (Allah) as a servant. Verily, He knows each one of them, and has counted them a full counting. And everyone of them will come to Him alone on the Day of Resurrection. (19:93-95)

If all are Allah’s servants, then why do any of them worships each other without proof or evidence that allows them to do so Rather, they rely on sheer opinion and innovation in the religion, even though Allah has sent all of His Prophets and Messengers, from beginning to end, prohibiting this practice (polytheism) and ordering them to refrain from worshipping others besides Allah. They defied their Messengers and rebelled against them, and this is why the word of punishment struck them as a worthy recompense,

وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

And your Lord treats no one with injustice. (18:49)

Allah’s statement,

قُلِ اللّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

Say:”Allah is the Creator of all things; and He is the One, the Irresistible.

Leave a Reply