(Book# 743) [ وَلَا يِنقُضُونَ الْمِيثَاقَ প্রতিজ্ঞা ভংগ করে না, Do not break the contract,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 743)
[ وَلَا يِنقُضُونَ الْمِيثَاقَ
প্রতিজ্ঞা ভংগ করে না,
Do not break the contract,]
www.motaher21.net
اَفَمَنۡ یَّعۡلَمُ اَنَّمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ الۡحَقُّ کَمَنۡ ہُوَ اَعۡمٰی ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿ۙ۱۹﴾
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে সে আর অন্ধ কি সমান? কেবলমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।
Then is he who knows that what has been revealed to you from your Lord is the truth like one who is blind? They will only be reminded who are people of understanding –
الَّذِیۡنَ یُوۡفُوۡنَ بِعَہۡدِ اللّٰہِ وَ لَا یَنۡقُضُوۡنَ الۡمِیۡثَاقَ ﴿ۙ۲۰﴾
যারা আল্লাহকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং চুক্তি ভঙ্গ করে না।
Those who fulfill the covenant of Allah and do not break the contract,
وَ الَّذِیۡنَ یَصِلُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰہُ بِہٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّہُمۡ وَ یَخَافُوۡنَ سُوۡٓءَ الۡحِسَابِ ﴿ؕ۲۱﴾
আর আল্লাহ্ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে, ভয় করে তাদের রবকে এবং ভয় করে হিসাবকে,
And those who join that which Allah has ordered to be joined and fear their Lord and are afraid of the evil of [their] account,
وَ الَّذِیۡنَ صَبَرُوا ابۡتِغَآءَ وَجۡہِ رَبِّہِمۡ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً وَّ یَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عُقۡبَی الدَّارِ ﴿ۙ۲۲﴾
আর যারা তাদের রবের সস্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।
And those who are patient, seeking the countenance of their Lord, and establish prayer and spend from what We have provided for them secretly and publicly and prevent evil with good – those will have the good consequence of [this] home –
جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَہَا وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَدۡخُلُوۡنَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ کُلِّ بَابٍ ﴿ۚ۲۳﴾
স্থায়ী জান্নাত , তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও । আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে,
Gardens of perpetual residence; they will enter them with whoever were righteous among their fathers, their spouses and their descendants. And the angels will enter upon them from every gate, [saying],
سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ بِمَا صَبَرۡتُمۡ فَنِعۡمَ عُقۡبَی الدَّارِ ﴿ؕ۲۴﴾
এবং বলবে, ‘তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম !’
“Peace be upon you for what you patiently endured. And excellent is the final home.”
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
১৯-২৪ নং আয়াত:-
وَلَا يِنقُضُونَ الْمِيثَاقَ
প্রতিজ্ঞা ভংগ করে না,
Do not break the contract,
১৯-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত জ্ঞানী ও সৎ লোকদের গুণাবলী বর্ণনা করছেন যারা আখিরাতে সৌভাগ্যবান হবে, তাদের পরিণাম হবে শুভ। তারা তাদের সৎ পিতা-মাতা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জান্নাতে থাকবে। তাদের গুণাবলী হল

(১) তারা কুরআনের সঠিকতা ও সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এরা তাদের মত নয় যারা অন্ধ অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান, সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না এবং সে অনুপাতে আমলও করে না।

(২) যারা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিপূর্ণ করে। অর্থাৎ আল্লাহ যেসকল বিধি-নিষেধ দিয়েছেন তারা তা মেনে চলে। অথবা সে অঙ্গীকার যা আদম (عليه السلام) এর পৃষ্টদেশ থেকে বের করে সকল আদম সন্তানের নিকট থেকে নিয়েছেন “আমি কি তোমাদের প্রতিপালনকারী নই?” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭২)

بِعَهْدِ اللّٰهِ অর্থাৎ সে সকল সন্ধি, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি যা মানুষ পরস্পর করে থাকে। অথবা তাদের মাঝে এবং আল্লাহ তা‘আলার মাঝে স্বেচ্ছায় যেসকল প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

(৩) আল্লাহ যাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। তথা নাবী-রাসূল, মু’মিন মু’মিনাত, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিসহ সকলেই এতে শামিল।

(৪) তারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে এবং ভয় করে কঠোর শাস্তিকে। তাই শাস্তির ভয়ে এবং প্রতিদানের আশায় তারা ভাল আমল করে।

(৫) তারা আল্লাহ তা‘আলাকে আখিরাতে দেখার জন্য বা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সকল আদেশ পালনে এবং নিষেধ বর্জনে ধৈর্য ধারণ করে। কাউকে দেখানোর জন্য কোন আমল করে না।

(৬) আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, সালাতের সময়-সীমা বহাল রাখে, বিনয়-নম্রতার সাথে এবং ধীর-স্থির চিত্তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিতে আদায় করে, নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে নয়।

(৭) প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে তাদেরকে যে রিযিক দেয়া হয়েছে তা হতে তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। এতে ওয়াজিব ও নফল সকল দান শামিল।

(৮) তাদের সাথে কেউ কোন মন্দ ব্যবহার করলে তারা উত্তমভাবে তার জবাব দেয় কিংবা ধৈর্য ধারণ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ط اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَه۫ عَدَاوَةٌ كَأَنَّه۫ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ)

“ভাল এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে, তোমার সাথে যার শত্র“তা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।” (হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩৪)

সুতরাং যারা এই সমস্ত গুণ অর্জন করতে পারবে তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। তারা এবং তাদের সৎ স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতাসহ জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়াতে যারা সৎকর্ম করে জান্নাতে তাদের সৎ কর্মশীল আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষাত করিয়ে দিবেন যাতে তাদের চক্ষু শীতল হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيْمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَآ أَلَتْنٰهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ ط كُلُّ امْرِئٍۭ بِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ)‏

“এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততিও ঈমানে তাদের অনুসারী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং আমি তাদের কর্মফলের ঘাটতি করব না, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর ৫২:২১)

সুতরাং যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা জান্নাতে গেলে একত্রে বসবাস করতে পারবে। আর ঈমান না থাকলে আত্মীয়-স্বজন যতই জান্নাতে যাক তাদের পক্ষে কোন দিন জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. জান্নাতী সৌভাগ্যশীল ব্যক্তিদের ৮টি গুণ পেলাম।
২. যার আমল কাউকে পিছে ফেলে রেখেছে তার বংশ-মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবে না।
৩. যারা দুনিয়াতে সৎআমল করেছে তারা আখিরাতে সৎ আত্মীয়দের সাথে জান্নাতে থাকবে।
৪. পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততির সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এ দু’ ব্যক্তির নীতি দুনিয়ায় এক রকম হতে পারে না এবং আখেরাতে তাদের পরিণামও একই ধরনের হতে পারে না।

# আল্লাহর পাঠানো এ শিক্ষা এবং আল্লাহর রসূলের এ দাওয়াত যারা গ্রহণ করে তারা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয় না বরং তারা হয় বিবেকবান, সতর্ক ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। এছাড়া দুনিয়ায় তাদের জীবন ও চরিত্র যে রূপ ধারণ করে এবং আখেরাতে তারা যে পরিণাম ফল ভোগ করে পরবর্তী আয়াতগুলোতে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

# অনন্তকালীন অঙ্গীকার যা সৃষ্টির শুরুতেই আল্লাহ‌ সমস্ত মানুষের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। তিনি অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, মানুষ একমাত্র তাঁর বন্দেগী করবে (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ ১৩৪ ও ১৩৫ টীকা)। প্রত্যেকটি মানুষের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল। প্রত্যেকের প্রকৃতির মধ্যে এটি নিহিত রয়েছে। যখনই আল্লাহর সৃজনী কর্মের মাধ্যমে মানুষ অস্তিত্ব লাভ করে এবং তার প্রতিপালন কার্মকাণ্ডের আওতাধীনে সে প্রতিপালিত হতে থাকে তখনই এটি পাকাপোক্ত হয়ে যায়। আল্লাহর রিযিকের সাহায্যে জীবন যাপন করা, তাঁর সৃষ্ট প্রত্যেকটি বস্তুকে কাজে লাগানো এবং তাঁর দেয়া শক্তিগুলো ব্যবহার করা-এগুলো মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি বন্দেগীর অঙ্গীকারে বেঁধে ফেলে। কোন সচেতন ও বিশ্বস্ত মানুষ এ অঙ্গীকার ভেঙ্গে ফেলার সাহস করতে পারে না। তবে হাঁ, অজান্তে কখনো সে কোন ভুল করে ফেলতে পারে, সেটা অবশ্যি ভিন্ন কথা।

# এমন সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, যেগুলো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেই মানুষের সামগ্রিক জীবনের কল্যাণ ও সাফল্য নিশ্চিত হয়।

# নিজেদের প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের আবেগ, অনুভূতি ও ঝোঁক প্রবণতাকে নিয়ম ও সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখে, আল্লাহর নাফরমানিতে বিভিন্ন স্বার্থলাভ ও ভোগ-লালসার চরিতার্থ হওয়ার সুযোগ দেখে পা পিছলে যায় না এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথে যেসব ক্ষতি ও কষ্টেরআশঙ্কা দেখা দেয় সেসব বরদাশত করে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে মু’মিন আসলে পুরোপুরি একটি সবরের জীবন যাপন করে। কারণ সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এবং আখেরাতের স্থায়ী পরিণাম ফলের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ দুনিয়ায় আত্মসংযম করতে থাকে এবং সবরের সাথে মনের প্রতিটি পাপ প্রবণতার মোকাবিলা করে।

# তারা মন্দের মোকাবিলায় মন্দ করে না বরং ভালো করে। তারা অন্যায়ের মোকবিলা অন্যায়কে সাহায্য না করে ন্যায়কে সাহায্য করে। কেউ তাদের প্রতি যতই জুলুম করুক না কেন তার জবাবে তারা পাল্টা জুলুম করে না বরং ইনসাফ করে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে যতই মিথ্যাচার করুক না কেন জবাবে তারা সত্যই বলে। কেউ তাদের সাথে যতই বিশ্বাস ভঙ্গ করুক না কেন জবাবে তারা বিশ্বস্ত আচরণই করে থাকে। রসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নোক্ত হাদীসটি এ অর্থই প্রকাশ করেঃ

لاَ تَكُونُوا إِمَّعَةً تَقُولُونَ إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَحْسَنَّا وَإِنْ ظَلَمُوا

“তোমরা নিজেদের কার্যধারাকে অন্যের কর্মধারার অনুসারী করো না। একথা বলা ঠিক নয় যে লোকেরা ভালো করলে আমরা ভালো করবো এবং লোকেরা জুলুম করলে আমরাও জুলুম করবো। তোমরা নিজেদেরকে একটি নিয়মের অধীন করো। যদি লোকেরা সদাচার করে তাহলে তোমরাও সদাচার করো। আর যদি লোকেরা তোমাদের সাথে অসৎ আচরণ করে তাহলে তোমরা জুলুম করো না।”

রসূলুল্লাহর ﷺ এ হাসীসটিও এ একই অর্থ প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছেঃ রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আল্লাহ‌ আমাকে নয়টি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি এ চারটি কথা বলেছেনঃ কারোর প্রতি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট যাই থাকি না কেন সর্বাবস্থায় আমি যেন ইনসাফের কথা বলি। যে আমার অধিকার হরণ করে আমি যেন তার অধিকার আদায় করি। যে আমাকে বঞ্চিত করবে আমি যেন তাকে দান করি। আর যে আমার প্রতি জলুম করবে আমি যেন তাকে মাফ করে দেই। আর এ হাদীসটিও এ একই অর্থ প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছেঃ

ظلَمْنَا وَلَكِنْ وَطِّنُوا أَنْفُسَكُمْ إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَنْ تُحْسِنُوا وَإِنْ أَسَاءُوا فَلاَ تَظْلِمُوا لاتخن من خانك

অর্থাৎ যে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তুমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।” হযরত উমরের (রা.) নিম্নোক্ত উক্তিটিও এ অর্থ প্রকাশ করেঃ “যে ব্যক্তি তোমার প্রতি আচরণ করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে না তুমি আল্লাহকে ভয় করে তার প্রতি আচরণ করো।”

# এর মানে কেবল এ নয় যে, ফেরেশতারা চারদিকে থেকে এসে তাদেরকে সালাম করতে থাকবে বরং তারা তাদেরকে এ সুখবরও দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছো যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখন তোমরা এখানে সবরকমের আপদ-বিপদ, কষ্ট, কাঠিন্য, কঠোর প্ররিশ্রম, শংকা ও আতংকমুক্ত। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা হিজর ২৯ টীকা)

# নিম্ন লিখিত হাদীস থেকে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেনঃ

يُقَالُ لأَهْلِ الْجَنَّةِ إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا ولا تمرضوا أَبَدًا, وان لكم ان تعيشوا فلا تموتوا ابدا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلاَ تَهْرَمُوا أَبَدًا,, وان لكم ان تقيموا فلا تطعنوا ابدا-

অর্থাৎ “জান্নাতবাসীদেরকে বলে দেয়া হবে, এখন তোমরা সবসময় সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। এখন তোমরা চিরকাল জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না। এখন তোমরা চির যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না। এখন তোমরা হবে চির অবস্থানকারী, কখনো স্থান ত্যাগ করতে হবে না।”

এর আরো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এমন সব আয়াত ও হাদীস থেকে যেগুলোতে বলা হয়েছে জান্নাতে নিজের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য মানুষকে কোন শ্রম করতে হবে না। বিনা প্রচেষ্টায় ও পরিশ্রম ছাড়াই সে সবকিছু পেয়ে যাবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৯-২৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সরাসরি সত্য বলে জানে বা বিশ্বাস করে, তাতে তার কোন সংশয় ও সন্দেহ থাকে না, সে একটিকে আর একটির সত্যতা প্রতিপাদনকারী ও আনুকূল্যকারী মনে করে, সব খবরকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে, তোমার সত্যবাদিতার কথা অকপটে স্বীকার করে, আর দ্বিতীয় আর একটি ব্যক্তি, অন্তর্চক্ষু অন্ধ, মঙ্গল বুঝেই না এবং বুঝলেও মানে না ও বিশ্বাস করে না, এ দু’জন কি কখনও সমান হতে পারে? কখনো না। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।” এই ঘোষনা এখানেও দেয়া হয়েছে যে, এ দু’জন সমান নয়। কথা এই যে, বুদ্ধিমান ও বিবেকশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।

#‌ আল্লাহ তাআ’লা ঐ মহান ব্যক্তিদের প্রশংসনীয় গুণাবলীর বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁদের ভাল পরিণামের খবর দিচ্ছেন যারা আখেরাতে বেহেশতের মালিক হবেন এবং দুনিয়াতেও যাদের পরিণাম হবে অতি উত্তম। তাঁরা মুনাফিকদের মত নন যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করে। এটা মুনাফিকদেরই স্বভাব যে, তারা কোন ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করবে, ঝগড়ায় কটু বাক্য প্রয়োগ করবে, কথা মিথ্যা বলবে এবং আমানতে খিয়ানত করবে। আর ঐ উত্তম গুণের অধিকারী মুমিনমু’মিনদের স্বভাব এই যে, তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখেন, তাদের সাথে সদাচরণ করেন, অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র লোকদেরকে দান করেন এবং সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ ক্রমেই এগুলো করে থাকেন।

আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ ‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে’ অর্থাৎ তারা সৎ কাজ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করে এবং অসৎ কার্য পরিত্যাগ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করেই। তাঁরা আখেরাতের কঠোর হিসাবকে ভয় করেন। এ জন্যেই তারা মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকেন, সৎ কার্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন, মধ্যম পথকে তারা কোন সময়ই পরিত্যাগ করেন না। সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তাআ’লার প্রতি লক্ষ্য রাখেন। হারাম কাজ এবং আল্লাহর নাফরমানীর দিকে প্রবৃত্তি তাদেরকে আকর্ষণ করলেও তারা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আখেরাতের সওয়াবের কথা স্মরণ করে এবং আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত থাকেন। তারা নামাযের পূর্ণরূপে হিফাযত করেন। রুকু ও সিজদার সময় শরীয়ত অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে থাকেন। আল্লাহ যাদেরকে দান করতে বলেছেন তাদেরকে তারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে দান করে থাকেন। দরিদ্র, অভাবী ও মিসকীন নিজেদের মধ্যকার হোক বা দূর সম্পৰ্কীয় হোক, তাদের বরকত থেকে তারা বঞ্চিত হন না। গোপনে ও প্রকাশ্যে, সময়ে-অসময়ে তারা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকেন। তারা মন্দকে ভাল দ্বারা এবং শক্রতাকে বন্ধুত্ব দ্বারা দূরীভূত করে থাকেন। কেউ তাঁদের সাথে অসদাচরণ করলে তারা তার সাথে সদাচরণ করেন। তাঁদের সামনে কেউ মস্তক উত্তোলন করলে তারা মস্তক অবনত করেন। তাঁরা অন্যদের যুলুম সহ্য করে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করেন। কুরআন কারীমের শিক্ষা হচ্ছেঃ “মন্দকে ভাল দ্বারা দূরীভূত কর, তাহলে তোমার মধ্যে ও তার মধ্যে যে শত্রুতা ছিল তা দূর হয়ে গিয়ে এমন হবে যে, সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ধৈর্যশীল ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিই এই মর্যাদা লাভ করে থাকে।” এই রূপ লোকদের জন্যেই উত্তম পরিণাম রয়েছে।

সেই উত্তম পরিণাম এবং উত্তম ঘর হচ্ছে জান্নাত, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জান্নাতের একটি প্রাসাদের নাম ‘আদন’। তাতে মিনার ও কক্ষ রয়েছে। তাতে রয়েছে পাঁচ হাজার দরজা। প্রত্যেক দরজার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা রয়েছেন। ঐ প্রাসাদটি নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের জন্যে নির্দিষ্ট। যহাক (রঃ) বলেন যে, এটা জান্নাতের শহর। এতে থাকবেন নবীগণ, শহীদগণ এবং হিদায়াতের ইমামগণ। তাদের আশে পাশে অন্যান্য লোকেরা থাকবেন। ওর চতুর্দিকে অন্যান্য বেহেশত রয়েছে। ওখানে তারা তাঁদের প্রিয়জনকেও তাদের সাথে দেখতে পাবেন। তাদের সাথে থাকবেন তাঁদের মুমিনমু’মিন পিতা, পিতামহ, পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ইত্যাদি আত্মীয় স্বজন। তারা সুখে শান্তিতে অবস্থান করবেন এবং তাঁদের চক্ষুগুলি ঠাণ্ডা হবে। এমন কি তাদের মধ্যে কারো কারো আমল যদি তাকে ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌছাবার যোগ্যতা নাও রাখে, তবুও আল্লাহ তাআ’লা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে” এবং তাদের সন্তানরা ঈমানের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তানদেরকে মিলিত করবো।” (৫২: ২১)।

তাঁদেরকে মুবারকবাদ ও সালাম জ্ঞাপনের জন্যে সদাসর্বদা প্রত্যেকটি দরজা দিয়ে ফেরেশতাগণ যাতায়াত করবেন। এটাও আল্লাহ তাআ’লার একটি নিয়ামত। এর ফলে তাঁরা সব সময় খুশী থাকবেন এবং সুসংবাদ শুনবেন। এটা ফেরেশতাদের সৌভাগ্যের কারণ যে, তাঁরা শান্তির ঘরে নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সংস্পর্শে থাকতে পাবেন। এতে তারা নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।

হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম কে জান্নাতে যাবে তা তোমরা জান কি?” সাহাবীগণ উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) ভাল জানেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আল্লাহও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে যাবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যারা দুনিয়ার ভোগ বিলাস হতে দূরে ছিল, কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতো। যাদের মনের বাসনা মনেই রয়ে গিয়েছিল এমতাবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেছিল। রহমতের ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ “যাও, তাদেরকে মুবারকবাদ দাও।” ফেরেশতাগণ বলবেনঃ “হে আল্লাহ! আমরা আপনার আকাশের অধিবাসী উত্তম মাখলুক। আপনি কি আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমরা গিয়ে তাদেরকে সালাম করবো এবং মুবারকবাদ জানাবো?” উত্তরে আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ “এরা হচ্ছে আমার সেই বান্দা যারা শুধু আমারই ইবাদত করতো, আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করে নাই, পার্থিব সুখ-সম্ভোগ হতে বঞ্চিত ছিল এবং কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করেছিল। তাদের কোন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় নাই। এতত্সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছে ও কৃতজ্ঞ থেকেছে।” তখন ফেরেশতারা তাড়াতাড়ি অতি আগ্রহের সাথে তাদের দিকে দৌড় দিবেন। এদিক ওদিকের প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং সালাম করে তাদেরকে মুবারকবাদ জানাবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বপ্রথম যে সব লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে তারা হচ্ছে দরিদ্র মুহাজিররা। তারা কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে পতিত ছিল। যখনই তাদেরকে যে হুকুম করা হয়েছে তখনই তারা তা পালন করেছে। বাদশাহদের কাছে তাদের প্রয়োজন হতো। কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাদের প্রয়োজন পুরা হয় নাই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা জান্নাতকে সামনে আসতে বলবেন। জান্নাত তখন সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআ’লার সামনে হাজির হবে। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা ঘোষণা করবেনঃ “আমার যে সব বান্দা আমার পথে জিহাদ করতো, আমার পথে যাদেরকে কষ্ট দেয়া হতো তারা আজ কোথায়? তোমরা এসো, বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাও।” ঐ সময় ফেরেশতারা আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন এবং আরয করবেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরা কারা যাদেরকে আপনি আমাদের উপরও ফযীলত দান করলেন?” মহামহিমান্বিত আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ “এরা আমার ঐ বান্দা যারা আমার পথে জিহাদ করেছে এবং আমার পথে কষ্ট সহ্য করেছে।” ফেরেশতারা তখন তড়িৎ গতিতে এদিকে ওদিকের দরজা দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যাবেন, তাদেরকে সালাম করবেন এবং মুবারকবাদ জানিয়ে বলবেনঃ “আপনারা আপনাদের ধৈর্য ধারনের কতই না উত্তম বিনিময় লাভ করেছেন।”

আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ “মু’মিন বেহেশতের মধ্যে নিজের আসনের উপর আরামে অত্যন্ত শান শওকতের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। সেবক দল সারি সারি ভাবে এদিকে ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকবে। যে দরজার খাদেমের কাছে ফেরেশতা অনুমতি চাইবেন, তিনি তাঁর পার্শ্ববর্তী খাদেমকে বলবেন। তিনি আবার অন্যকে বলবেন এবং তিনি আবার অপরকে বলবেন। শেষ পর্যন্ত মুমিনমু’মিনকে জিজ্ঞেস করা হবে। মুমিনমু’মিন আসার অনুমতি দেবে। এইভাবে একে অপরের কাছে পয়গাম পৌছাবে এবং সর্বশেষ খাদেম ফেরেশতাকে অনুমতি দেবে ও দরজা খুলে দেবে। ফেরেশতা তখন প্রবেশ করে সালাম করতঃ চলে যাবেন।

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক বছরের মাথায় শহীদদের কবরের কাছে আসতেন এবং বলতেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছে বলে তোমাদের প্রতি শান্তি, কতই উত্তম এই পরিণাম।” এইরূপই হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উসমান (রাঃ) করতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

# [১] অর্থাৎ, কুরআনের সঠিকতা ও সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তি এবং অন্ধ অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? এটা অস্বীকৃতিসূচক প্রশ্ন, অর্থাৎ উক্ত দুই ব্যক্তি তেমনই সমান হতে পারে না, যেমন ফেনা এবং পানি অথবা সোনা, তামা এবং ওর খাদ সমান হতে পারে না।

[২] অর্থাৎ, যার কাছে নীরোগ হৃদয় ও সুস্থ বিবেক না থাকে এবং যে নিজ হৃদয়কে পাপের মরিচায় মলিন করে রাখে এবং বিবেক-বুদ্ধি বিলুপ্ত করে ফেলে, সে এই কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণই করতে পারে না।

# [১] এখানে জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হচ্ছে। ‘আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি’ এর অর্থ, তাঁর বিধি-নিষেধ যা তারা পালন করে থাকে। অথবা সেই অঙ্গীকার যা ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই’ অঙ্গীকার নামে পরিচিত, যার কথা সূরা আ’রাফে (৭:১৭২ নং আয়াতে) বিবৃত হয়েছে।

[২] এর অর্থ সেই সন্ধি, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি যা মানুষ পরস্পর করে থাকে। অথবা যা তাদের এবং তাদের রবের মধ্যে হয়েছে।

# আত্মীয়তার সম্পর্ক ও বন্ধন নষ্ট করে না; বরং সম্পর্ক গড়ে এবং আত্মীয়তা বন্ধন রক্ষা করে।
# [১] আল্লাহর অবাধ্যতা এবং পাপ থেকে বেঁচে থাকে। এটা এক প্রকার ধৈর্য। দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে। এটা ধৈর্যের দ্বিতীয় প্রকার। জ্ঞানীরা উভয় প্রকার ধৈর্য অবলম্বন করে।

[২] তার সময়-সীমা বহাল রেখে, বিনয়-নম্রতার সাথে এবং ধীর-স্থির চিত্তে, বিশুদ্ধ-চিত্তে, রসূল (সাঃ)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী; নিজের মন মত পদ্ধতিতে নয়।

[৩] যখন যেখানে ব্যয় করার প্রয়োজন হয়, আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মাঝে প্রকাশ্যে ও গোপনে ব্যয় করে থাকে।

[৪] অর্থাৎ তাদের সাথে কেউ অসঙ্গত ব্যবহার করলে তারা তার জবাব উত্তম পদ্ধতিতে দিয়ে থাকে, অথবা ক্ষমা করে দিয়ে ধৈর্য ধারণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন: ﴿ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾ অর্থাৎ, মন্দের জবাব উত্তম পদ্ধতিতে দাও, (যদি তোমরা এমনটি কর) তাহলে যে ব্যক্তি তোমার শত্রু, সে এমন হয়ে যাবে যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৪)

[৫] অর্থাৎ যে এই উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবে এবং উল্লিখিত গুণাবলীতে গুণান্বিত হবে, তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণামের গৃহ (বেহেশত)।

# [১] ‘আদন’ এর অর্থ হলো স্থায়ী অর্থাৎ চিরস্থায়ী বাগান।

[২] অর্থাৎ এমনিভাবে সৎশীল (জান্নাতী) আত্মীয়দেরকে পরস্পর একত্র করে দেবেন, যাতে একে অপরকে দেখে তাদের চক্ষু শীতল হয়। এমনকি নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীদের উচ্চ শ্রেণীর মর্যাদা দান করবেন, যাতে তারা সব সব আত্মীয়ের সাথে একত্রিত হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ ﴾ অর্থাৎ, যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করব না। (সূরা ত্বূ-র ৫২:২১) এখান থেকে যেমন এটা জানা গেল যে, মহান আল্লাহ আত্মীয়দেরকে জান্নাতে একত্র করে দেবেন, তেমন এটাও জানা গেল যে, যদি কারো কাছে ঈমান ও সৎ আমলের সম্বল না থাকে তাহলে সে জান্নাতে যাবে না, যদিও তার অন্যান্য অত্যন্ত নিকটাত্মীয় জান্নাতে চলে যায়। কেননা জান্নাতে প্রবেশ জাত-কূলের ভিত্তিতে হয় না, বরং ঈমান ও সৎ আমলের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যাকে তার আমল পিছে ছেড়ে দেয়, তার বংশ তাকে সামনে বাড়াবে না।” (মুসলিম)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ যারা তাদের প্রভুর কাছ থেকে যা এসেছে তা হক্ক বলে ঈমান এনেছে, তারা এটাও বিশ্বাস করেছে যে, এতে কোন সন্দেহ অসামঞ্জস্যতা নেই। এর একাংশ অন্য অংশের সত্যয়ন করে। কোন প্রকার স্ববিরোধিতা এতে পাওয়া যাবে না। এর যাবতীয় সংবাদ বাস্তব, যাবতীয় আদেশ-নিষেধ ইনসাফে পূর্ণ। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রবের বাণী পরিপূর্ণ।” [সূরা আল-আন’আমঃ ১১৫] অর্থাৎ সংবাদ প্রদানে বস্তুনিষ্ঠ এবং আদেশ-নিষেধে ইনসাফপূর্ণ। যারা কুরআনকে এ ধরনের বিশ্বাস করে তারা কি ঐ লোকের মত হতে পারে যে, অন্ধই রয়ে গেছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা নাযিল হয়েছে তাতে বিশ্বাসী হয়নি এমনকি বোঝার চেষ্টাও করেনি? এ দু’ব্যক্তির নীতি দুনিয়ায় এক রকম হতে পারে না এবং আখেরাতে তাদের পরিণামও একই ধরনের হতে পারে না। তাই তো আল্লাহ্ অন্যত্র বলেনঃ “জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।” [সূরা আল-হাশরঃ ২০] [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ আল্লাহর পাঠানো এ শিক্ষা এবং আল্লাহর রাসূলের এ দাওয়াত যারা গ্রহণ করে তারা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয় না বরং তারা হয় বিবেকবান, সতর্ক ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। এ ছাড়া দুনিয়ায় তাদের জীবন ও চরিত্র যে রূপ ধারণ করে এবং আখেরাতে তারা যে পরিণাম ফল ভোগ করে পরবর্তী আয়াতগুলোতে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

# এ আয়াতে সত্যিকার বুদ্ধিমান লোকদের পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে যাদের জন্য সুউত্তম পরিণাম রয়েছে, এ শ্রেণীর লোকদের বিশেষ বিশেষ কাজকর্ম ও লক্ষণ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রথম গুণ হচ্ছে, ‘তারা আল্লাহ্‌র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে।’ অর্থাৎ তারা মুনাফিকদের মত নয় যারা কোন অঙ্গীকার করলে সেটা ভঙ্গ করে, ঝগড়া করলে গালি-গালাজ করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, কেউ আমানত রাখলে খিয়ানত করে। [ইবন কাসীর] তারা আল্লাহ্‌র সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করে, বান্দার সাথে কৃত অঙ্গীকারও পূর্ণ করে। [ফাতহুল কাদীর]

দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে ‘তারা কোন অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।’ ঐ অঙ্গীকারও এর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো উম্মতের লোকেরা আপন নবীর সাথে সম্পাদন করে এবং ঐ সব অঙ্গীকারও বুঝানো হয়েছে, যেগুলো মানবজাতি একে অপরের সাথে করে। সেগুলো তারা ভঙ্গ করে না। অনুরূপভাবে অঙ্গীকারের মধ্যে তাও পড়ে যা করার জন্য আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেমন, ফরয ও ওয়াজিব কাজসমূহ। অনুরূপভাবে তাও এর অন্তর্ভুক্ত যা নিজেরা নিজেদের উপর বাধ্য করে নিয়েছে যেমন, মানত। [ফিাতহুল কাদীর] কাতাদা বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা অঙ্গীকার ঠিক রাখা এবং ভঙ্গ না করার কথা কুরআনে বিশোর্ধ স্থানে উল্লেখ করেছেন। [তাবারী] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। আর তা হচ্ছে সৃষ্টির প্রারম্ভে যা আদমের পিঠে নেয়া হয়েছিল। [কুরতুবী]

তৃতীয় গুণ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যেসব সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তারা সেগুলো বজায় রাখে। আয়াতের প্রকাশ্য ভাষ্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এটা একটি সাধারণ নির্দেশ। সে অনুসারে এটার অর্থ এমন সব সম্পর্ক, যেগুলো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষের সামগ্রিক জীবনের কল্যাণ ও সাফল্য নিশ্চিত হয়। যেগুলোকে আল্লাহ্ ঠিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কর্তন করতে নিষেধ করেছেন। তবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা নিঃসন্দেহে এর অন্তর্ভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ এর অর্থ এই যে, তারা ঈমানের সাথে সৎকর্মকে অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশ্বাসের সাথে পূর্ববর্তী নবীগণের প্রতি এবং তাদের গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাসকে যুক্ত করে। [কুরতুবী]

চতুর্থ গুণ হচ্ছে, তারা তাদের রবকে ভয় করে। যে ভয় তাদেরকে কর্তব্য কর্ম করতে এবং যা নিষেধ করেছে তা পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে। [ফাতহুল কাদীর] অথবা আল্লাহ্ যে সম্পর্ক ঠিক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে তাদের রবকে ভয় করে। [কুরতুবী]

পঞ্চম গুণ হচ্ছে, তারা মন্দ হিসাবকে ভয় করে। ‘মন্দ হিসাব’ বলে কঠোর ও পুংখানুপুংখ হিসাব বুঝানো হয়েছে।

ষষ্ঠ গুণ হচ্ছে, যারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভ করার আশায় অকৃত্রিমভাবে ধৈর্যধারণ করে। প্রচলিত কথায় কোন বিপদ ও কষ্টে ধৈর্যধারণ করাকেই সবরের অর্থ মনে করা হয়। কিন্তু আরবী ভাষায় এর অর্থ আরও অনেক ব্যাপক। কারণ, আসল অর্থ হচ্ছে স্বভাব-বিরুদ্ধ বিষয়াদির কারণে অস্থির না হওয়া; বরং দৃঢ়তা সহকারে নিজের কাজে ব্যাপৃত থাকা। এ কারণেই এর তিনটি প্রকার বর্ণনা করা হয়। (এক)

(صَبْرٌ عَلٰى الطَّاعَةِ)

-অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলার বিধি-বিধান পালনে দৃঢ় থাকা এবং (দুই) অর্থাৎ

(صَبْرٌ عَنِ الْمَعْصِيَةِ)

-গোনাহ্ থেকে আত্মরক্ষার ব্যাপারে দৃঢ় থাকা। (তিন)

(صَبْرٌ عَلٰى الاَقْداٰر)

বিপদাপদে নিজের ঈমানের উপর অটল থাকা। [ইবনুল কাইয়্যেম, মাদারিজুস সালেকীনঃ ২/১৫৫] আয়াতে সবরের সাথে

(ابْتِغَاۗءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ)

কথাটি যুক্ত হয়ে ব্যক্ত করেছে যে, সবর সর্বাবস্থায় শ্রেষ্ঠত্বের বিষয় নয়। শুধুমাত্র যারা একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই সবর করবে তাদেরই এ সওয়াব। [ফাতহুল কাদীর] সত্যিকার অর্থে যারা প্রথম ধাক্কায় সবর ধরতে পেরেছে তারাই প্রকৃতভাবে সবরকারী। কেননা, যারা সবর করেনি তারাও কোন না কোন সময় সবর করতে বাধ্য হয়। আর এ ধরনের যেহেতু অপারগ অবস্থায় সেহেতু তা গ্রহণযোগ্য নয়। যে সবর ইচ্ছাধীন নয়, তার বিশেষ কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। এরূপ অনিচ্ছাধীন কাজের আদেশ আল্লাহ্ তা’আলা দেন না। সুতরাং এখানে যে সবরের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তা হচ্ছে, তারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও আকাংখা নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের আবেগ, অনুভূতি ও ঝোঁক প্রবণতাকে নিয়ম ও সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখে, আল্লাহ্‌র নাফরমানিতে বিভিন্ন স্বার্থলাভ ও ভোগ-লালসা চরিতার্থ হওয়ার সুযোগ দেখে পা পিছলে যায় না এবং আল্লাহ্‌র হুকুম মেনে চলার পথে যেসব ক্ষতি ও কষ্টের আশংকা দেখা দেয় সেসব বরদাশত করে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে মুমিন আসলে পুরোপুরি একটি সবরের জীবন যাপন করে। কারণ সে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশায় এবং আখেরাতের স্থায়ী পরিণাম ফলের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ দুনিয়ায় আত্মসংযম করতে থাকে এবং সবরের সাথে মনের প্রতিটি পাপ প্রবণতার মোকাবিলা করে। [দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, মাদারিজুস সালেকীন, মানযিলাতুস সাবর]

সপ্তম গুণ হচ্ছে, ‘সালাত কায়েম করা’। এর অর্থ পূর্ণ আদব ও শর্ত এবং বিনয় ও নম্রতা সহকারে যেভাবে আল্লাহ্ তা ফরয করেছেন সেভাবে সময়মত আদায় করা। এখানে ফরয সালাতই উদ্দেশ্য। আবার ব্যাপক সালাতও উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]

অষ্টম গুণ হচ্ছে, যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত রিযক থেকে কিছু আল্লাহ্‌র নামেও ব্যয় করে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের কাছে চান না; বরং নিজেরই দেয়া রিযকের কিছু অংশ তোমাদের কাছে চান। এটা দেয়ার ব্যাপারে স্বভাবতঃ তোমাদের ইতস্ততঃ করা উচিত নয়। এখানে অর্থ-সম্পদ আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করার সাথে (سِرًّا وَّعَلَانِيَةً) শব্দ দু’টি যুক্ত হওয়ায় বুঝা যায় যে, দান-সদকা সর্বত্র গোপনে করাই সুন্নত নয়; বরং মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে করাও দুরস্ত ও শুদ্ধ। এ জন্যই আলেমগণ বলেন যে, যাকাত ও ওয়াজিব সদকা প্রকাশ্যে দেয়াই উত্তম এবং গোপনে দেয়া সমীচীন নয়- যাতে অন্যরাও শিক্ষা ও উৎসাহ পায়। তবে নফল দান-সদকা গোপনে দেয়াই উত্তম। যেসব হাদীসে গোপনে দেয়ার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে নফল সদকা সম্পর্কেই বলা হয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

নবম গুণ হচ্ছে, তারা মন্দকে ভাল দ্বারা, শক্রতাকে বন্ধুত্ব দ্বারা এবং অন্যায় ও জুলুমকে ক্ষমা ও মার্জনা দ্বারা প্রতিহত করে। মন্দের জবাবে মন্দ ব্যবহার করে না। অর্থাৎ তারা মন্দের মোকাবিলায় মন্দ করে না বরং ভালো করে। তারা অন্যায়ের মোকাবিলা অন্যায়কে সাহায্য না করে ন্যায়কে সাহায্য করে। কেউ তাদের প্রতি যতই জুলুম করুক না কেন তার জবাবে তারা পাল্টা জুলুম করে না বরং ইনসাফ করে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে যতই বিশ্বাস ভঙ্গ করুক না কেন জবাবে তারা বিশ্বস্ত আচরণই করে থাকে। এর সমার্থে পবিত্র কুরআনে আরো অনেক আয়াত এসেছে। [যেমন, সূরা আল-মু’মিনূনঃ ৯৬, সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৪] কোন সময় কোন গোনাহ্ হয়ে গেলে তারা অধিকতর যত্ন সহকারে অধিক পরিমাণে ইবাদাত করে। ফলে গোনাহ্ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেনঃ ‘পাপের পর পূণ্য করে নাও, তাহলে তা পাপকে মিটিয়ে দেবে।’ [মুস্তাদরাকে হাকেম ১/১২১ নং ১৭৮]

# [১] পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা আনুগত্যশীলদের নয়টি গুণ বর্ণনা করার পর তাদের প্রতিদান বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের সাফল্য। আয়াতে বর্ণিত (دار) শব্দের অর্থ এখানে আখেরাত। [ফাতহুল কাদীর] আর এ আয়াতের প্রথমেই আখেরাতের সাফল্য বর্ণিত হয়েছে যে, জান্নাতে আদনে তারা থাকবে। (عدن) শব্দের অর্থ স্থায়ী আবাস। উদ্দেশ্য এই যে, এসব জান্নাত থেকে তাদেরকে বহিস্কার করা হবে না; বরং এগুলোতে তাদের অবস্থান চিরস্থায়ী হবে। [ইবন কাসীর] কেউ কেউ বলেনঃ জান্নাতের মধ্যস্থলের নাম আদন। জান্নাতের স্থানসমূহের মধ্যে এটা উচ্চস্তরের। [ফাতহুল কাদীর] দাহহাক বলেনঃ (عدن) হলো জান্নাতনগরীর নাম। যাতে রাসূল, নবী, শহীদ এবং হেদায়াতের ইমামগণ থাকবে। মানুষজন থাকবে তাদের চার পাশে। আর অন্যান্য জান্নাতসমূহ এর চারপাশে থাকবে। [ইবন কাসীর]

[২] এরপর তাদের জন্য আরো একটি পুরস্কার উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার এ নেয়ামত শুধু তাদের ব্যক্তিসত্তা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তানরাও এর অংশ পাবে। শর্ত এই যে, তাদেরকে এর উপযুক্ত হতে হবে। এর ন্যূনতম স্তর হচ্ছে মুসলিম হওয়া। [ফাতহুল কাদীর] উদ্দেশ্য এই যে, তাদের বাপ-দাদা ও স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততিদের আমল যদিও এ স্তরে পৌঁছার যোগ্য নয়; কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দাদের খাতিরে তাদেরকেও এ উচ্চস্তরে পৌঁছে দেয়া হবে। [কুরতুবী] অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন “এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি একটুও কমাবো না”। [সূরা আত-তূরঃ ২১]

# এরপর তাদের আরও একটি আখেরাতের সাফল্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফিরিশতারা তাদেরকে সালাম করতে করতে প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং বলবেঃ সবরের কারণে তোমরা যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ। [ফাতহুল কাদীর] এটা আখেরাতের কতই না উত্তম পরিণাম। অর্থাৎ তারা তাদেরকে এ সুখবর দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছো যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখন তোমরা এখানে সব রকমের আপদ-বিপদ, কষ্ট, কাঠিন্য, কঠোর পরিশ্রম, শংকা ও আতংকমুক্ত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মধ্যে প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তারা হলেন দরিদ্র মুহাজিরগণ। যাদের দ্বারা সীমান্ত পাহারা দেয়া হয়। খারাপ অবস্থায় তাদের সাহায্য নেয়া হয়। তাদের অনেকেই এমনভাবে মারা যায় যে, তাদের মনে অনেক অপূর্ণ বাসনা রয়েই গেছে। আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেনঃ তোমরা যাও এবং তাদেরকে সালাম-সম্ভাষণ জানাও। ফেরেশতাগণ বলবেনঃ আমরা আপনার আসমানের বাসিন্দা, আপনার শ্রেষ্ট সৃষ্টির অন্যতম তারপরও কি আপনি আমাদেরকে তাদেরকে সম্মান জানানোর জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। আল্লাহ্ বলবেনঃ তারা আমার এমন বান্দা ছিল যারা কেবলমাত্র আমার ইবাদত করত। আমার সাথে সামান্যও শির্ক করেনি। তাদের দ্বারা সীমান্ত পাহারা দেয়া হতো এবং বিপজ্জনক সময়ে তাদের সাহায্য নেয়া হত। তারা এমনভাবে মারা গেছে যে, তাদের মনের বাসনা মনেই রয়ে গেছে তা তারা পূরণ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেশতাগণ তাদের কাছে বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদেরকে সাদর-সম্ভাষণ জানাবে। ‘তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত ভাল এ পরিণাম’ [মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৬৮]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 19-24
وَلَا يِنقُضُونَ الْمِيثَاقَ
Do not break the contract,
The Believer and the Disbeliever are never Equal

Allah says,

أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا

Shall he then who knows that what,

Allah says, `They could never be equal; those among people who know that what,

أُنزِلَ إِلَيْكَ

has been revealed unto you, (O Muhammad),

مِن رَبِّكَ الْحَقُّ

from your Lord is the truth,

about which there is no doubt and in which there is no confusion, vagueness or contradiction.

Rather, they believe that all of it is the truth, each part of it testifying to another. They believe that none of its parts contradicts the others, that all its information is true and that all its commandments and prohibitions are just,

وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقاً وَعَدْلاً

And the Word of your Lord has been fulfilled in truth and in justice. (6:15)

كَمَنْ هُوَ أَعْمَى

be like him who is blind!

It is accurate in its information and stories and just in what it orders. Therefore, the Ayah says, those who believe in the truth that you brought, O Muhammad, are not at all similar to those who are blind and cannot find guidance to what benefits them, which they cannot even comprehend. And even if they comprehend the guidance, they will not follow it, believe in it or abide by it.’

Allah said in another Ayah,

لَا يَسْتَوِى أَصْحَـبُ النَّارِ وَأَصْحَـبُ الْجَنَّةِ أَصْحَـبُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَأيِزُونَ

Not equal are the dwellers of the Fire and the dwellers of the Paradise. It is the dwellers of Paradise that will be successful. (59:20)

Allah said in this honorable Ayah,

أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا

أُنزِلَ إِلَيْكَ

مِن رَبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَى

Shall he then who knows that what has been revealed unto you from your Lord is the truth, be like him who is blind!

They are not equal.

Allah said next,

إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ الَالْبَابِ

But it is only the men of understanding that pay heed.

meaning, it is those who have sound minds who draw lessons, gain wisdom and understand.

We ask Allah to make us among them.
Qualities of the Blessed Ones, which will lead to Paradise

Allah states that those who have these good qualities, will earn the good, final home:victory and triumph in this life and the Hereafter,

الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللّهِ وَلَا يِنقُضُونَ الْمِيثَاقَ

Those who fulfill the covenant of Allah and break not the trust.

They are nothing like the hypocrites who;

when one of them makes a covenant, he breaks it;

if he disputes, he is most quarrelsome;

if he speaks, he lies; and

if he is entrusted, he betrays his trust.

Allah said next.
And those who join that which Allah has ordered to be joined and fear their Lord and are afraid of the evil of [their] account,
And those who join that which Allah has ordered to be joined and fear their Lord and are afraid of the evil of [their] account,
وَالَّذِينَ صَبَرُواْ ابْتِغَاء وَجْهِ رَبِّهِمْ

And those who remain patient, seeking their Lord’s Face,

They observe patience while staying away from sins and evil deeds, doing so while dedicating themselves to the service of their Lord the Exalted and Most Honored and seeking His pleasure and generous reward,

وَأَقَامُواْ الصَّلَةَ

and perform the Salah,

preserving its limits, times, bowing, prostration and humbleness, according to the established limits and rulings of the religion,

وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ

and spend out of that which We have bestowed on them,

They spend on those whom they are obliged to spend on them, such as their spouses, relatives and the poor and needy in general,

سِرًّا وَعَلَنِيَةً

secretly and openly,

They spend during all conditions and times, whether during the night or the day, secretly and openly,

وَيَدْرَوُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّيَةَ

and repel evil with good,

they resist evil with good conduct. When the people harm them they face their harm with good patience, forbearing, forgiveness and pardon.

Allah said in another Ayah,

وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّيَةُ ادْفَعْ بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِىٌّ حَمِيمٌ

وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّاهَأ إِلاَّ ذُو حَظِّ عَظِيمٍ

Repel (the evil) with one which is better, then verily he, between whom and you there was enmity, (will become) as though he was a close friend. But none is granted it except those who are patient – and none is granted it except the owner of the great portion in this world. (41:34-35)

This is why Allah states here that those who have these good qualities, the blessed ones, will earn the final home,

أُوْلَيِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ

for such there is a good end.

which He explained next.
جَنَّاتُ عَدْنٍ
`Adn Gardens,

where, `Adn, indicates continuous residence;

they will reside in the gardens of everlasting life.

يَدْخُلُونَهَا
which they shall enter,

Allah said next,

وَمَنْ صَلَحَ مِنْ ابَايِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ

and (also) those who acted righteously from among their fathers, and their wives, and their offspring.

Allah will gather them with their loved ones, from among their fathers, family members and offspring, those who are righteous and deserve to enter Paradise, so that their eyes are comforted by seeing them. He will also elevate the grade of those who are lower, to the grades of those who are higher, a favor from Him out of His kindness, without decreasing the grade of those who are higher up (in Paradise).

Allah said in another Ayah,

وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَـنٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ

And those who believe and whose offspring follow them in faith:to them shall We join their offspring. (52:21)

Allah said next,

وَالمَلَيِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ

And angels shall enter unto them from every gate (saying):”Salamun `Alaykum (peace be upon you) for you persevered in patience! Excellent indeed is the final home!”

The angels will enter on them from every direction congratulating them for entering Paradise. The angels will welcome them with the Islamic greeting and commend them for earning Allah’s closeness and rewards, as well as, being admitted into the Dwelling of Peace, neighbors to the honorable Messengers, the Prophets and the truthful believers.

Imam Ahmad recorded that Abdullah bin Amr bin Al-`As, may Allah be pleased with them both, narrated that the Messenger of Allah said,

هَلْ تَدْرُونَ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللهِ

Do you know who among Allah’s creation will enter Paradise first?

They said, “Allah and His Messenger have more knowledge.”

He said,

أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللهِ الْفُقَرَاءُ الْمُهَاجِرُونَ الَّذِينَ تُسَدُّ بِهِمُ الثُّغُورُ وَتُتَّقَى بِهِمُ الْمَكَارِهُ

The first among Allah’s creation to enter Paradise are the poor emigrants (in Allah’s cause) with whom the outposts (of the land) are secured and the various afflictions are warded off.

وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً فَيَقُولُ اللهُ تَعَالَى لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ مَلَيِكَتِهِ ايْتُوهُمْ فَحَيُّوهُمْ

One of them would die while his need is still in his chest, because he was unable to satisfy it himself. Allah will say to whom He will among His angels, “Go to them and welcome them with the Salam.”

فَتَقُولُ الْمَلَيِكَةُ نَحْنُ سُكَّانُ سَمَايِكَ وَخِيرَتُكَ مِنْ خَلْقِكَ أَفَتَأْمُرُنَا أَنْ نَأْتِي هوُلَاءِ وَنُسَلِّمَ عَلَيْهِمْ

The angels will say, “We are the residence of Your heaven and the best of Your creation, do You command us to go to them and welcome them with the Salam!”

فَيَقُولُ إِنَّهُمْ كَانُوا عِبَادًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْيًا وَتُسَدُّ بِهِمُ الثُّغُورُ وَتُتَّقَى بِهِمُ الْمَكَارِهُ وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً

Allah will say, “They are My servants who worshipped Me and did not associate anyone or anything with Me in worship. With them, the outposts were secured and the afflictions were warded off. One of them would die while his need is in his chest, unable to satisfy it.”

قَالَ فَتَأْتِيهِمُ الْمَلَايِكَةُ عِنْدَ ذَلِكَ فَيَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَاب

So the angels will go to them from every gate (of Paradise), saying,

سَلَمٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
Salamun `Alaykum (peace be upon you) for you persevered in patience! Excellent indeed is the final home!

Leave a Reply