أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 749)
Sura: 13
Verses :- 33-34
[ أَمْ تُنَبِّيُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الَارْضِ
তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ তাঁকে দিতে চাও, যা তিনি জানেন না?
Is it that you will inform Him of something He knows not in the earth!]
www.motaher21.net
اَفَمَنۡ ہُوَ قَآئِمٌ عَلٰی کُلِّ نَفۡسٍۭ بِمَا کَسَبَتۡ ۚ وَ جَعَلُوۡا لِلّٰہِ شُرَکَآءَ ؕ قُلۡ سَمُّوۡہُمۡ ؕ اَمۡ تُنَبِّـُٔوۡنَہٗ بِمَا لَا یَعۡلَمُ فِی الۡاَرۡضِ اَمۡ بِظَاہِرٍ مِّنَ الۡقَوۡلِ ؕ بَلۡ زُیِّنَ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مَکۡرُہُمۡ وَ صُدُّوۡا عَنِ السَّبِیۡلِ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ ہَادٍ ﴿۳۳﴾
তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক, তিনি (এদের অক্ষম উপাস্যগুলির মত)? তারা আল্লাহর বহু শরীক করেছে। তুমি বল, ‘তোমরা তাদের নাম উল্লেখ কর; তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ তাঁকে দিতে চাও, যা তিনি জানেন না? অথবা তা অসার উক্তি?’ বরং যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের চক্রান্তকে তাদের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে এবং তাদেরকে সঠিক পথ হতে বিরত রাখা হয়েছে। আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।
Then is He who is a maintainer of every soul, [knowing] what it has earned, [like any other]? But to Allah they have attributed partners. Say, “Name them. Or do you inform Him of that which He knows not upon the earth or of what is apparent of speech?” Rather, their [own] plan has been made attractive to those who disbelieve, and they have been averted from the way. And whomever Allah leaves astray – there will be for him no guide.
لَہُمۡ عَذَابٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ لَعَذَابُ الۡاٰخِرَۃِ اَشَقُّ ۚ وَ مَا لَہُمۡ مِّنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّاقٍ ﴿۳۴﴾
তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! আর আল্লাহ্র শাস্তি থেকে রক্ষা করার মত তাদের কেউ নেই।
For them will be punishment in the life of [this] world, and the punishment of the Hereafter is more severe. And they will not have from Allah any protector.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৩৩-৩৪ নং আয়াত:-
[ أَمْ تُنَبِّيُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الَارْضِ
তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ তাঁকে দিতে চাও, যা তিনি জানেন না?
Is it that you will inform Him of something He knows not in the earth!]
৩৩-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে মূলত কাফির মুশরিকরা যে সমস্ত দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করত সেসব প্রতিমার দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তু ও প্রাণী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। কোন জিনিসই তাঁর থেকে গোপন নয়, তাঁর অজান্তে কোন কাজই হয় না। প্রত্যেক অবস্থা তাঁর অবগত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(سَوَا۬ئٌ مِّنْکُمْ مَّنْ اَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَھَرَ بِھ۪ وَمَنْ ھُوَ مُسْتَخْفٍۭ بِالَّیْلِ وَسَارِبٌۭ بِالنَّھَارِ)
“তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে অথবা যে সেটা প্রকাশ করে, রাত্রিতে যে আত্মগোপন করে এবং দিবসে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহর জ্ঞানগোচরে।” (সূরা রাদ ১৩:১০)
এছাড়াও অনেক আয়াত রয়েছে। তোমাদের মিথ্যা উপাস্যগুলো কি আল্লাহ তা‘আলার মত এসব গুণের অধিকারী? তোমাদের উপাস্যগুলো তো কারো কোন অনিষ্ট করতে পারে না, আবার কারো কোন উপকারও করতে পারে না। কোন কিছু শুনে না, বুঝে না। আর বাস্তবে তাদের তো কোন অস্তিত্বই নেই, এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে বললেন। আমাকেও বল: যেন আমি তাদেরকে চিনতে পারি, এ জন্য পরবর্তীতে বলেছেন: তোমরা কি আল্লাহ তা‘আলাকে পৃথিবীতে সেসব কথার সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? অর্থাৎ তাদের অস্তিত্বই নেই, কেননা পৃথিবীতে যদি তাদের অস্তিত্ব্ থাকত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই জানতেন। যেহেতু তাঁর জ্ঞানে কোন কিছু গোপন নেই।
بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
এর অর্থ ধারণা, অর্থাৎ এগুলো কেবল তাদের ধারণাপ্রসূত কথা। অর্থাৎ, তোমরা মূর্তিপূজা এ ধারণা নিয়ে করছ যে, তারা ইষ্টানিষ্ট করার ক্ষমতা রাখে এবং তোমরা তাদের নামও উপাস্য রেখে দিয়েছ। অথচ এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখে দিয়েছো যার সমর্থনে আল্লাহ তা‘আলা কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। (সূরা নাজম ৫৩:২৩)
আর তাদের কুফরীতে মত্ত থেকে র্শ্কি করার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতেও শাস্তি দিবেন এবং আখিরাতে এর চেয়েও ভয়ানক শাস্তি প্রদান করবেন, যা থেকে তাদেরকে তাদের শরীকরা রক্ষা করতে পারবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুশরিকদের বাতিল মা‘বূদ কখনো আল্লাহ তা‘আলার সমতুল্য হতে পারে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু দেখেন, শুনেন কিন্তু তাদের বাতিল মা‘বূদেরা কিছুই পারে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ আল্লাহ তাআ’লা প্রত্যেক মানুষের আমলের রক্ষক। প্রত্যেকের আমল সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। প্রত্যেক নফসের উপর তিনি প্রহরী। প্রত্যেক অমলকারীর ভাল ও মন্দ আমল তিনি সম্যক অবগত। কোন জিনিসই তার থেকে গোপনীয় নয়। তাঁর অজান্তে কোন কাজই হয় না। প্রত্যেক অবস্থা তাঁর অবগতিতে রয়েছে। প্রত্যেক আমলের উপর তিনি বিদ্যমান রয়েছেন। প্রতিটি পাতা ঝরে পড়ারও খবর তিনি রাখেন। প্রত্যেক প্রাণীর আহারের দায়িত্ব আল্লাহ তাআ’লার উপর রয়েছে। প্রত্যেকের ঠিকানা তিনি জানেন। সমস্ত কিছু তাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সমস্ত বিষয়ই তিনি জানেন। তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেখানেই আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি তোমাদের আমলগুলি দেখতে আছেন। এই সব গুণের অধিকারী আল্লাহ কি তোমাদের এইসব মিথ্যা উপাস্যের মত? যারা শুনেও না, দেখেও না? না তারা কোন জিনিসের মালিক, না অন্য কারো লাভ ও ক্ষতির তাদের কোন ইখতিয়ার রয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবকে উহ্য রাখা হয়েছে। কেননা, কালামের ইঙ্গিত এখানে বিদ্যমান রয়েছে এবং তা হচ্ছে (আরবি) আল্লাহ তাআ’লার এই উক্তিটি। অর্থাৎ “তারা আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক বানিয়ে নিয়েছে এবং তাদের ইবাদত করতে শুরু করেছে। তোমরা তাদের নাম তো বল এবং তাদের অবস্থা তো বর্ণনা কর, যাতে দুনিয়া জেনে নেয় যে, তাদের কোন অস্তিত্বই নেই। তোমরা কি যমীনের ঐ জিনিসগুলোর খবর আল্লাহকে দিচ্ছ যা তিনি জানেন না? অর্থাৎ যাদের কোন অস্তিত্বই নেই? কেননা, যদি ওগুলির কোন অস্তিত্ব থাকতো তবে সেগুলি আল্লাহ তাআ’লার অবগতির বাইরে থাকতো না। কেননা, তাঁর কাছে কোন গোপন হতে গোপনতম জিনিষও প্রকৃত পক্ষে গোপন নেই। তোমরা শুধু একটা আজগুবী কথা বানিয়ে নিয়েছে এবং আবোল তাবোল বকছো। তোমরা নিজেরাই তাদের নামগুলি বানিয়ে নিয়েছে। তোমরাই তাদেরকে লাভ ও ক্ষতির মালিক বলে ঘোষণা করছে এবং তাদের উপাসনা শুরু করে দিয়েছে। এগুলি সবই তোমাদের মনগড়া। তোমাদের হাতে কোন খোদায়ী দলিলও নেই এবং অন্য কোন দলিলও নেই। এগুলি তোমরা শুধু ধারণা ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই করছে। আল্লাহর পক্ষ হতে হিদায়াত নাযিল হয়েছে। কাফিরদের চক্রান্ত ও ছলনা তাদের কাছে শোভনীয় প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা তাদের কুফরী ও শিরকের উপর গর্ববোধ করছে। দিনরাত তারা তাতেই মগ্ন রয়েছে। আর অন্যদেরকেও তারা ঐ দিকেই আহবান করছে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “শয়তানরা তাদের সামনে তাদের দুষ্কার্যকে শোভনীয় করে তুলেছে। তাদেরকে আল্লাহর পথ ও হিদায়াতের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এক কিরআতে (আরবি) ও রয়েছে। অর্থাৎ তারা ওটাকে ভাল মনে করে অন্যদেরকে ওর ফাঁদে ফেলতে শুরু করেছে এবং রাসূলদের (সঃ) পথ। হতে জনগণকে ফিরিয়ে রাখছে।
আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।” যেমন আল্লাহ তাআ’লা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ)! আল্লাহ যাকে ফিৎনায় ফেলার ইচ্ছা করেন, তুমি তার জন্যে আল্লাহর কাছে কখনো কোন কিছুরই অধিকার রাখবে না।” (৫: ৪১) অন্য স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যদিও তুমি তাদের হিদায়াত প্রাপ্তির জন্যে লালায়িত, কিন্তু নিশ্চয় আল্লাহ পথভ্রষ্টদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।” (১৬: ৩৭)।
#
আল্লাহ তাআ’লা কাফিরদের শাস্তি এবং সৎলোকদের পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি কাফিরদের কুফরী ও শিরকের বর্ণনা দেয়ার পর তাদের শাস্তির বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা মুমিনমু’মিনদের হাতে নিহত ও ধ্বংস হবে। এর সাথে সাথেই তারা আখেরাতের কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার হবে, যা তাদের দুনিয়ার শাস্তি অপেক্ষা বহুগুণে কঠিন। পরস্পর লা’নতকারী স্বামী স্ত্রীকে যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “নিশ্চয় দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় খুবই সহজ।” ওটা ঐরূপ যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এখানকার অর্থাৎ দুনিয়ার শাস্তি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু পরকালের শাস্তি চিরস্থায়ী এবং তথাকার আগুনের তেজ এখানকার আগুন অপেক্ষা সত্তর গুণ বেশী এবং তথাকার পাকড়াও ও বন্ধন এতো শক্ত যা কল্পনা করা যায় না। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “সেই দিন তাঁর শাস্তির শাস্তি কেউ দিতে পারবে না। এবং বন্ধনের মত বন্ধন কেউ করতে পারবে না।” (৮৯: ২৫-২৬) আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তাদের জন্যে আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। দূর হতে অগ্নি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে ওর ক্রুদ্ধ গর্জন ও চীৎকার। আর যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে। তাদেরকে বলা হবেঃ আজ তোমরা একবারের জন্যে ধ্বংস কামনা করো না, বহুবার ধ্বংস হবার কামনা করতে থাকো। তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ এটাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে? এটাই তো তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তন স্থল।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি লোকের অবস্থা জানেন। কোন সৎলোকের সৎকাজ এবং অসৎলোকের অসৎকাজ যার দৃষ্টির আড়ালে নেই।
# দুঃসাহস হচ্ছে এই যে, তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হচ্ছে, তাঁর সত্ত্বা, গুণাবলী ও অধিকারে তাঁর সৃষ্টিকে শরীক করা হচ্ছে এবং তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে অবস্থান করে লোকেরা মনে করছে আমরা যা ইচ্ছা-করবো, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কেউ নেই।
# তোমরা যে তাঁর শরীক দাঁড় করাচ্ছো এ ব্যাপারে তিন ধরনের অবস্থা সম্ভবপরঃ
একঃ আল্লাহ কোন নির্দিষ্ট সত্তাকে তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা বা অধিকারে শরীক গণ্য করেছেন বলে তোমাদের কাছে কোন প্রামান্য ঘোষণা এসেছে কি? যদি এসে থাকে তাহলে মেহেরবানী করে বলো তারা কারা এবং তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সংবাদ তোমরা পেয়েছো কিসের মাধ্যমে?
দুইঃ আল্লাহ নিজেই জানেন না পৃথিবীতে কিছু সত্তা তাঁর অংশীদার হয়ে গেছে এবং এখন তোমরা তাঁকে এ খবর দিতে যাচ্ছো যদি এ ব্যাপারেই হয়ে থাকে তাহলে স্পষ্টভাবে নিজেদের এ ভূমিকার কথা স্বীকার করো। তারপর দুনিয়ার কতজন নির্বোধ তোমাদের এ উদ্ভট মতবাদের অনুসারী থাকে তা আমিও দেখে নেবো।
তিনঃ কিন্তু যদি এ দু’টি অবস্থার কোনটি সম্ভবপর না হয়ে থাকে তাহলে তৃতীয় যে অবস্থাটি থাকে সেটি হচ্ছে এই যে, কোন প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই তোমরা যাকে ইচ্ছা তাকেই আল্লাহর আত্মীয় মনে করে নাও, যাকে ইচ্ছা তাকেই পরম দাতা ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী গণ্য করো এবং যার সম্পর্কে ইচ্ছা দাবী করে দাও যে, অমুক এলাকার রাজা অমুক সাহেব এবং অমুক কাজটি অমুক সাহেবের সাহায্য-সহায়তায় সম্পন্ন হয়।
# এ শিরককে প্রতারণা বলার একটি কারণ হচ্ছে এই যে, আসলে যেসব নক্ষত্র, ফেরেশতা, আত্মা বা মহামানবকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী গণ্য করা হয়েছে এবং যাদেরকে আল্লাহর বিশেষ অধিকারে শরীক করা হয়েছে, তাদের কেউই কখনো এসব গুণ, অধিকার ও ক্ষমতার দাবী করেনি এবং কখনো লোকদেরকে এ শিক্ষা দেয়নি যে, তোমরা আমাদের সামনে পূজা অর্চনার অনুষ্ঠানাদি পালন করো, আমরা তোমাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দেবো। কিছু ধূর্ত লোক সাধারণ মানুষের ওপর নিজেদের প্রভুত্বের দাপট চালাবার এবং তাদের উপার্জনে অংশ নেবার উদ্দেশ্যে কিছু বানোয়াট ইলাহ তৈরী করে নিয়েছে। লোকদেরকে তাদের ভক্তশ্রেণীতে পরিণত করেছে এবং নিজেদেরকে কোন না কোনভাবে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আপন আপন স্বার্থোদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
শিরককে প্রতারণা বলার দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে এই যে, আসলে এটি একটি আত্মপ্রতারণা এবং এমন একটি গোপন দরজা যেখান দিয়ে মানুষ বৈষয়িক স্বার্থ-পূজা, নৈতিক বিধিনিষেধ থেকে বাঁচা এবং দায়িত্বহীন জীবন যাপন করার জন্য পলায়নের পথ বের করে।
তৃতীয় যে কারণটির ভিত্তিতে মুশরিকদের কর্মপদ্ধতিকে প্রতারণা বলা হয়েছে তা পরে আসছে।
# মানুষ যখন একটি জিনিসের মোকাবিলায় অন্য একটি জিনিস গ্রহণ করে তখন মানসিকভাবে নিজেকে নিশ্চিন্ত করার এবং নিজের নির্ভুলতা ও সঠিক পথ অবলম্বনের ব্যাপারে লোকদের কে নিশ্চয়তা দান করার জন্য নিজের গৃহীত জিনিসকে সকল প্রকার যু্ক্তি-প্রমাণ পেশ করে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং নিজের প্রত্যাখ্যাত জিনিসটির বিরুদ্ধে সব রকম যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে থাকে। এটাই মানুষের প্রকৃতি। এ কারণে বলা হয়েছেঃ যখন তারা সত্যের আহবান মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তখন প্রকৃতির আইন অনুযায়ী তাদের জন্য তাদের পথভ্রষ্টতাকে এবং এ পথভ্রষ্টতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের প্রতারণাকে সুদৃশ্য ও সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং এ প্রাকৃতিক রীতি অনুযায়ী তাদের সত্য সঠিক পথে আসা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে এর জবাব ঊহ্য রয়েছে, অর্থাৎ মহান আল্লাহ এবং ঐ মিথ্যা দেবতারা কি সমান হতে পারে, এরা যাদের পূজা-অর্চনা করছে? যারা না কারো ইষ্টানিষ্ট করতে সক্ষম, না তারা দেখতে পায় আর না তারা বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী।
[২] অর্থাৎ, আমাকেও বল, যেন আমি তাদেরকে চিনতে পারি, এই জন্য যে তাদের কোন বাস্তবতাই নেই। এ জন্য পরবর্তীতে বলেছেন, তোমরা কি আল্লাহকে সেসব কথার সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি পৃথিবীতে জানেন না? অর্থাৎ তাদের অস্তিত্বই নেই, কেননা পৃথিবীতে যদি তাদের অস্তিত্ব থাকত, তাহলে মহান আল্লাহ অবশ্যই জানতেন। যেহেতু তাঁর জ্ঞানে কোন কিছু গোপন নেই।
[৩] এখানে ظَاهِر من القول এর অর্থ ধারণা। অর্থাৎ এগুলি কেবল তাদের ধারণাপ্রসূত কথা। অর্থ এই যে, তোমরা মূর্তিপূজা এই ধারণা নিয়ে করছ যে, তারা ইষ্টানিষ্ট করার ক্ষমতা রাখে এবং তোমরা তাদের নামও উপাস্য রেখে নিয়েছ। অথচ “এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখে দিয়েছ, যার সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে।” (সূরা নাজ্ম ৫৩:২৩)
[৪] مَكْر (চক্রান্ত)এর অর্থ তাদের ঐসব ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস ও আমল, যাতে শয়তান তাদেরকে ফাঁসিয়ে রেখেছে, শয়তান ভ্রষ্টতার উপরও আকর্ষণীয় আবরণ চড়িয়ে রাখে।
[৫] যেমন অন্যত্র বলেছেন, ﴿وَمَن يُرِدِ اللهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللهِ شَيْئًا﴾ অর্থাৎ, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন তার জন্যে আল্লাহর সাথে তোমার কোন জোর চলতে পারে না।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৪১) তিনি আরো বলেন, ﴿إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾ অর্থাৎ, তুমি তাদের পথপ্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা নাহল ১৬:৩৭)
# [১] এর অর্থ হত্যা ও বন্দিদশা, যা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এই কাফেরদের ভাগে আসে।
[২] যেমন নবী (সাঃ) লিআনকারী ও লিআনকারিণীকে বলেছিলেন, “দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় হাল্কা ও সহজ।” (মুসলিম, কিতাবুল লিআন, লিআনের সংজ্ঞা জানতে সূরা নূর ২৪:৭নং আয়াতের টীকা দ্রঃ) এ ছাড়া দুনিয়ার শাস্তি (যেমনই হোক এবং যতই হোক তা কাফেরদের জন্য) সাময়িক ও অস্থায়ী এবং আখেরাতের শাস্তি চিরস্থায়ী, যা শেষ হবে না। তাছাড়া জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের তুলনায় ঊনসত্তর গুণ বেশি তীব্র। অনুরূপ অন্য কিছুও রয়েছে। সুতরাং শাস্তির কঠিন হওয়ার ব্যাপারে কি সন্দেহ থাকতে পারে?
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 33-34
أَمْ تُنَبِّيُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الَارْضِ
Is it that you will inform Him of something He knows not in the earth!
There is no Similarity between Allah and False Deities in any Respect
Allah said,
أَفَمَنْ هُوَ قَأيِمٌ عَلَى كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ
Is then He (Allah) Who takes charge of every person and knows all that he has earned,
Allah is the guard and watcher over every living soul and knows what everyone does, whether good or evil, and nothing ever escapes His perfect observation.
Allah said in other Ayat,
وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُواْ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ
Neither you do any deed nor recite any portion of the Qur’an, nor you do any deed, but we are witness thereof, when you are doing it. (10:61)
and Allah said,
وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا
Not a leaf falls, but He knows it. (6:59)
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الاٌّرْضِ إِلاَّ عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِى كِتَابٍ مُّبِينٍ
And no moving creature is there on earth but its provision is due from Allah. And He knows its dwelling place and its deposits. All is in a Clear Book. (11:6)
سَوَاءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِالَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ
It is the same (to Him) whether any of you conceals his speech or declares it openly, whether he be hid by night or goes forth freely by day. (13:10)
يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفَى
He knows the secret and that which is yet more hidden. (20:7)
and,
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
And He is with you wherever you may be. And Allah is the All-Seer of what you do. (57:4)
Is He Who is like this similar to the idols, that the polytheists worship, which can neither hear nor see nor do they have a mind nor able to bring good to themselves or to their worshippers nor prevent harm from themselves or their worshippers The answer to the question in the Ayah was omitted, because it is implied, for Allah said next,
وَجَعَلُواْ لِلّهِ شُرَكَاء
Yet, they ascribe partners to Allah.
which they worshipped besides Him, such as idols, rivals and false deities,
قُلْ سَمُّوهُمْ
Say:”Name them!”
make them known to us and uncover them so that they are known, for surely, they do not exist at all!
So Allah said,
أَمْ تُنَبِّيُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الَارْضِ
Is it that you will inform Him of something He knows not in the earth!
for had that thing existed in or on the earth, Allah would have known about it because nothing ever escapes His knowledge,
أَم بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
or is it (just) a show of words,
or doubts expressed in words, according to Mujahid, while Ad-Dahhak and Qatadah said, false words.
Allah says, you (polytheists) worshipped the idols because you thought that they had power to bring benefit or harm, and this is why you called them gods,
إِنْ هِىَ إِلاَّ أَسْمَأءٌ سَمَّيْتُمُوهَأ أَنتُمْ وَءَابَأوُكُم مَّأ أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَـنٍ إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الاٌّنفُسُ وَلَقَدْ جَأءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَى
They are but names which you have named – you and your fathers – for which Allah has sent down no authority. They follow but a guess and that which they themselves desire, whereas there has surely come to them the guidance from their Lord! (53:23)
Allah said next,
بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ مَكْرُهُمْ
Nay! To those who disbelieved, their plotting is made fair seeming, (or their words, according to Mujahid).
This Ayah refers to the misguidance of the polytheists and their propagation night and day.
Allah said in another Ayah,
وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَأءَ فَزَيَّنُواْ لَهُم
And We have assigned for them (devils) intimate companions, who have made fair-seeming to them. (41:25)
Allah said next,
وَصُدُّواْ عَنِ السَّبِيلِ
and they have been hindered from the right path;
Some read with Fatha over the Sad (i.e. wa Saddu), which would
mean, `and they hindered from the right path, feeling fond of the misguidance they are in, thinking that it is correct, they called to it and thus hindered the people from following the path of the Messengers.’
Others read it with Damma over the Sad (i.e. wa Suddu), which would mean,
`and they have been hindered from the right path,’ explained it this way:because they thought that their way looked fair or correct, they were hindered by it from the right path,
so Allah said,
وَمَن يُضْلِلِ اللّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
and whom Allah sends astray, for him there is no guide.
Allah said in similar instances,
وَمَن يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللَّهِ شَيْياً
And whomsoever Allah wants to suffer a trial, you can do nothing for him against Allah. (5:41)
and,
إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِى مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُمْ مِّن نَّـصِرِينَ
If you covet for their guidance, then verily, Allah guides not those whom He makes to go astray. And they will have no helpers. (16:37).
Punishment of the Disbelievers and Reward of the Pious Believers
Here, Allah mentions the punishment of the disbelievers and the reward of the righteous believers, after describing the Kufr and Shirk that the disbelievers indulge in,
لَّهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
For them is a torment in the life of this world,
by the hands of the believers, killing and capturing them,
وَلَعَذَابُ الاخِرَةِ
and certainly, the torment of the Hereafter,
which will come after they suffer humiliation in this life,
أَشَقُّ
is harder,
many times harder.
The Messenger of Allah said to those who agreed to Mula`anah,
إِنَّ عَذَابَ الدُّنْيَا أَهْوَنُ مِنْ عَذَابِ الاْخِرَة
Surely, the torment of this life, is easier than the torment of the Hereafter.
Indeed, and just as the Messenger of Allah stated, the torment of this life ends but the torment of the Hereafter is everlasting in a Fire that is seventy times hot than our fire, where there are chains whose thickness and hardness are unimaginable.
وَمَا لَهُم مِّنَ اللّهِ مِن وَاقٍ
And they have no defender (or protector) against Allah.
Allah said in other Ayat,
فَيَوْمَيِذٍ لاَّ يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ
وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
So on that Day none will punish as He will punish. And none will bind as He will bind. (89:25-26)
and,
بَلْ كَذَّبُواْ بِالسَّاعَةِ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيراً
إِذَا رَأَتْهُمْ مِّن مَّكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُواْ لَهَا تَغَيُّظاً وَزَفِيراً
وَإَذَا أُلْقُواْ مِنْهَا مَكَاناً ضَيِّقاً مُّقَرَّنِينَ دَعَوْاْ هُنَالِكَ ثُبُوراً
لااَّ تَدْعُواْ الْيَوْمَ ثُبُوراً وَحِداً وَادْعُواْ ثُبُوراً كَثِيراً
قُلْ أَذَلِكَ خَيْرٌ أَمْ جَنَّةُ الْخُلْدِ الَّتِى وَعِدَ الْمُتَّقُونَ كَانَتْ لَهُمْ جَزَاءً وَمَصِيراً
And for those who deny the Hour, We have prepared a flaming Fire. When it (Hell) sees them from a far place, they will hear its raging and its roaring. And when they shall be thrown into a narrow place thereof, chained together, they will exclaim therein for destruction.
Exclaim not today for one destruction, but exclaim for many destructions.
Say:”Is that (torment) better, or the Paradise of Eternity promised for those who have Taqwa!” It will be theirs as a reward and as a final destination. (25:11-15).