أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 750)
Sura: 13
Verses :- 35
[ مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে,
The description of the Paradise which those who have Taqwa have been promised,]
www.motaher21.net
مَثَلُ الۡجَنَّۃِ الَّتِیۡ وُعِدَ الۡمُتَّقُوۡنَ ؕ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ؕ اُکُلُہَا دَآئِمٌ وَّ ظِلُّہَا ؕ تِلۡکَ عُقۡبَی الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا ٭ۖ وَّ عُقۡبَی الۡکٰفِرِیۡنَ النَّارُ ﴿۳۵﴾
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার উপমা এরূপঃ তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত , তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী । যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এটা তাদের প্রতিফল আর কাফিরদের প্রতিফল আগুন।
The example of Paradise, which the righteous have been promised, is [that] beneath it rivers flow. Its fruit is lasting, and its shade. That is the consequence for the righteous, and the consequence for the disbelievers is the Fire.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৩৫ নং আয়াত:-
[ مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে,
The description of the Paradise which those who have Taqwa have been promised,]
৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতে কাফিরদের অশুভ পরিণামের পর অত্র আয়াতে মু’মিনদের শুভ পরিণামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে জান্নাত লাভের প্রতি আগ্রহ ও আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়। মু’মিনদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার উপমা হল তার তলদেশে নদী প্রবাহিত। জান্নাতের খাবার ও ছায়া চিরস্থায়ী যা কখনো শেষ হবে না। সেখানে থাকবে দুধের, মধুর এবং শরাবের নহর যা কখনো নষ্ট হবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “মুত্তাকীদের জন্য এমন জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে, যার মধ্যে বহমান থাকবে পরিস্কার পানির নহর, এমন দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয় এবং আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহর, আরো আছে এমন মধুর নহর যা খাঁটি ও স্বচ্ছ। তাদের জন্য আরো থাকবে সব রকমের ফল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত। (যে এমন জান্নাতের ভাগী হবে সে কি) তাদের মত হতে পারে, যারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এবং যাদেরকে এমন ফুটন্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি পর্যন্ত কেটে ফেলবে?” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭:১৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে ফলমূল ও সন্নিহিত বৃক্ষ ছায়া। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَّفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ لا لَّا مَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ)
“প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না।” (সূরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৩২-৩৩) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا تَذْلِيْلًا)
“জান্নাতের বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্বাধীন থাকবে।” (সূরা দাহর ৭৬:১৪)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে তাকে দুনিয়া ও দশটি দুনিয়া সমপরিমাণ জান্নাত দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫৭১)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন: জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে যার তলদেশ দিয়ে একজন আরোহী একশত বছর চলাচল করেও শেষ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৫২) এ ছাড়াও জান্নাতে নেয়ামত সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে যা যথাস্থানে আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং এ নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ঈমানের সাথে সৎ আমল করতে হবে। অন্যথায় আশা করে বসে থাকলে হবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জান্নাতে চার ধরনের নহর থাকবে। তা হল- দুধের, মধুর, পানির ও শরাবের।
২. মু’মিনদের জন্য জান্নাতে সকল প্রকার ফলমূল থাকবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
পূণ্যবান লোকদের পরিণামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছেঃ যাদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার একটি গুণ তো এই যে, তার চারদিকে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তারা যেখান থেকে ইচ্ছা পানি নিয়ে যাবে। সেই পানি নষ্ট হবে না। আবার সেখানে দুধের নহর রয়েছে। দুধও এমন যে, যার স্বাদ কখনো নষ্ট হবে না। সেখানে সূরার নহরও রয়েছে। এতে শুধু সুস্বাদই রয়েছে। এটা কখনো বিস্বাদ হবেনা এবং এতে কখনো নেশাও ধরবে না। তথায় স্বচ্ছ মধুর নহরও রয়েছে এবং সেখানে সর্বপ্রকারের ফলমূল রয়েছে। এবং এর সাথে সাথে রয়েছে প্রতিপালকের করুণা এবং তার ক্ষমা। তথাকার ফল চিরস্থায়ী সেখানকার খাদ্য ও পানীয় কখনো শেষ হবার নয়।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কসূফের (সূর্যগ্রহণের) নামায পড়ছিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনাকে দেখলাম যে, আপনি যেন কোন জিনিষ পাবার ইচ্ছা করেছিলেন। তারপর আমরা দেখলাম যে, আপনি পশ্চাদপদে পিছনে সরতে লাগলেন, এর কারণ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমি জান্নাত দেখেছিলাম এবং একটা (ফলের) গুচ্ছ ভেঙ্গে নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। যদি আমি তা নিতাম তবে যতদিন এ দুনিয়া থাকতো ততদিন তা থাকতো এবং তোমরা তা খেতে থাকতে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমরা যুহরের নামাযে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন আমরাও এগিয়ে গেলাম। অতঃপর আমরা দেখলাম যে, তিনি যেন কোন জিনিষ নেয়ার ইচ্ছা করলেন। আবার তিনি পিছনে সরে আসলেন। নামায শেষে হযরত উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ আমরা আপনাকে এমন একটা কাজ করতে দেখলাম যা ইতিপূর্বে কখনো দেখি নাই (এর কারণ কি?)।” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমার সামনে জান্নাতকে পেশ করা হয়েছিল, যা ছিল তরুতাজা ও সুগন্ধময়। আমি ওর মধ্য থেকে একগুচ্ছ আঙ্গুর ভেঙ্গে নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আমার ও ওর মধ্যে আড় করে দেয়া হয়। যদি আমি ওটা ভেঙ্গে আনতাম তবে দুনিয়া থাকা পর্যন্ত সারা দুনিয়াবাসী ওটা খেতো, অথচ ওটা কিছুই কমতো না।” (এ হাদীসটি হা’ফিয আবু ইয়া’লা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত উৎবা’ ইবনু আবদিস সালামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন নবীকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “জান্নাতে আঙ্গুর থাকবে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ।” সে পুনরায় জিজ্ঞেস করেঃ “ওর গুচ্ছ কত বড় হবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “এতো বড় যে, যদি কোন কালো কাক এক মাস ধরে ওর উপর দিয়ে উড়তে থাকে তবুও ওটা অতিক্রম করতে পারবে না।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসী যখন কোন ফল ভাঙ্গবে তখন আর একটি ফল ঐ স্থানে এসে লেগে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জা’বির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসী খুব খাবে এবং পান করবে, কিন্তু তাদের থুথু আসবে না, নাকে শ্লেষ্ম আসবে না এবং প্রস্রাব ও পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের শরীর দিয়ে মিশক আম্বরের মত সুগন্ধময় ঘর্ম বের হবে এবং তাতেই খাদ্য হজম হয়ে যাবে। আর যেমন ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চলে, তেমনি ভাবে নফসের উপর তসবীহ পাঠ ও আল্লাহ তাআ’লার পবিত্রতা বর্ণনার ইলহাম করা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
হযরত যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আহলে কিতাবের একজন লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বলেঃ “হে আবুল কা’সিম (সঃ)! আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, জান্নাতবাসী খাবে ও পান করবে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, যার হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এখানকার একশ’ জন লোকের পানাহার ও সহবাসের শক্তি সেখানকার একজন লোককে দেয়া হবে।” সে তখন বলেঃ “নিশ্চয় যে খাবে ও পান করবে তার তো পায়খানা ও প্রস্রাবের প্রয়োজন অবশ্যই হবে, অথচ জান্নাতে তো আবর্জনা ও মালিন্য থাকতে পারে না?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, বরং ঘর্মের মাধ্যমে সমস্ত হজম হয়ে যাবে এবং ঐ ঘর্মের সুগন্ধ মিশক আম্বরের মত।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে যে পাখীর দিকে তুমি (ওর গোশত খাবার ইচ্ছার) দৃষ্টিপাত করবে তৎক্ষণাৎ ওটা ভাজা হয়ে তোমার সামনে চলে আসবে।” কোন কোন রিওয়াইয়াতে আছে যে, আবার ঐ পাখী আল্লাহর হুকুমে অনুরূপভাবে জীবিত হয়ে উঠে যাবে।’
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “ (জান্নাতে রয়েছে) প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না ও নিষিদ্ধও হবে না।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “সন্নিহিত বৃক্ষ ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে।” অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যারা ঈমান আনয়ন করে ও ভাল কাজ করে তাদেরকে দাখিল করবো এমন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্যে পবিত্র সঙ্গী থাকবে এবং তাদেরকে আমি চির স্নিগ্ধ ছায়ায় দাখিল করবো।”
ইতিপূর্বে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, জান্নাতের একটি গাছের ছায়াতলে দ্রুতগামী সওয়ারীর আরোহী এক শ’ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে তথাপি ওর ছায়া শেষ হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) (এবং সম্প্রসারিত ছায়া) (৫৬: ৩০) কুরআন কারীমের এই অংশটুকু পাঠ করেন।
কুরাআন কারীমে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা এক সাথে এসেছে যাতে মানুষের মধ্যে জান্নাতের আগ্রহ ও জাহান্নামের ভয় জন্মে। এখানেও আল্লাহ তাআ’লা জান্নাত ও তথাকার কতকগুলি নিয়মতের বর্ণনা দেয়ার পর বলেছেন যে, এটা পরিণাম হচ্ছে খোদাভীরু লোকদের। পক্ষান্তরে কাফিরদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়, জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।”
দামেস্কের খুৎবা পাঠক হযরত বিলাল ইবনু সা’দ (রঃ) জনগণকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কোন আমল কবুল হওয়া এবং কোন পাপ মোচন হয়ে যাওয়ার কোন সনদ তোমাদের কারো কাছে এসেছে কি? তোমরা কি ধারণা করেছে যে, তোমাদেরকে অযথা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তোমরা আল্লাহ তাআ’লার আয়ত্তের মধ্যে আসবে না ? আল্লাহর শপথ! তাঁর আনুগত্যের প্রতিদান যদি দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হতো তবে তোমরা সবাই পুণ্য কাজের উপর একত্রিত হয়ে পড়তে। তোমরা কি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে গেলে? তোমরা কি ওরই পিছনে পড়ে থাকবে? তোমাদের কি জান্নাত লাভের আগ্রহ হয় না, যার ফল এবং ছায়া চিরস্থায়ী?” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] মুত্তাকীদের জন্য কি পুরস্কার রেখেছেন এখানে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এ নহর সমূহের বিস্তারিত বর্ণনায় এসেছে যে, মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ তাতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। মুত্তাকীরা কি তাদের ন্যায় যারা জাহান্নামের স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫]
অন্যত্র বলা হয়েছে যে, “এমন একটি প্রস্রবণ যা হতে আল্লাহ্র বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথা ইচ্ছে প্রবাহিত করবে।” [সূরা আল-ইনসানঃ ৬]
[২] জান্নাতের নে’আমতসমূহ সর্বদা থাকবে, তাতে কোন অভাব বা কমতি পরিলক্ষিত হবে না। একথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, “যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না।” [সূরা আল-ওয়াকি’আহঃ ৩৩]
এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সালাত আদায়ের সময় এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলেন তারপর আবার ফিরে আসলেন। পরে সাহাবায়ে কিরাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি জান্নাত দেখেছি, তার থেকে আঙ্গুরের একটি থোকা নিতে চাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে যতদিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা তা খেতে পারতে।” [বুখারীঃ ১০৫২, মুসলিমঃ ৯০৭]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তাতে কোন কমতি হতো না”। [মুসলিমঃ ৯০৪]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতবাসীগণ খাবে, পান করবে অথচ তাদের কোন কাশি, থুথু আসবে না, পায়খানা ও পেশাব করবে না। তাদের খাবারের ঢেকুর আসবে যার সুগন্ধ হবে মিসকের সুগন্ধির মতো, দুনিয়াতে যেভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয় তেমনি তাদেরকে সেখানে তাসবীহ ও পবিত্রতা ঘোষণার জন্য ইলহাম করা হবে।” [মুসলিমঃ ২৮৩৫] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক ইয়াহূদী এসে বলল, হে আবুল কাশেম! আপনি মনে করেন যে, জান্নাতবাসীগণ খানাপিনা করবে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “অবশ্যই হ্যাঁ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! সেখানে জান্নাতবাসীদের প্রত্যেককে খানাপিনা ও কামবাসনার ক্ষেত্রে একশত জনের সমান ক্ষমতা দেয়া হবে।” লোকটি বললঃ যার খানাপিনা আছে তার তো আবার শৌচক্রিয়ারও প্রয়োজন পড়বে। অথচ জান্নাতে কোন ময়লা-আবর্জনা বা কষ্টের কিছু নেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তাদের সে প্রয়োজনটুকু শুধুমাত্র একটু ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। যে ঘামের সুগন্ধ হবে মিসকের গন্ধের মত। আর এতেই তাদের পেট কৃশকায় হয়ে যাবে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৩৬৭]
আর জান্নাতের ছায়ার ব্যাপারে আয়াতে বলা হয়েছে যে, তার ছায়াও চিরস্থায়ী। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।” [সূরা ইয়াসীনঃ ৫৬]
আল্লাহ্ আরো বলেছেনঃ “মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে” [সূরা আল-মুরসালাতঃ ৪১]
আরো বলেনঃ “সন্নিহিত গাছের ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে।” [সূরা আল-ইনসানঃ ১৪]
আরো বলেছেনঃ “যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকবে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করাব।” [সূরা আন-নিসাঃ ৫৭]
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে এমন গাছও আছে, যার ছায়ায় অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্বারোহী উন্নত ঘোড়া নিয়ে শত বছর সফর করলেও শেষ করতে পারবে না” [বুখারীঃ ৩২৫১, ৩২৫২, ৬৫৫৩, মুসলিমঃ ২৮২৬, ২৮২৮]
[৩] পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিফলের তুলনামূলক উল্লেখ থাকে। যাতে করে অনুসন্ধিৎসু মন কোনটা ভাল এবং কোনটা মন্দ তা সহজেই বুঝতে পারে। [যেমন, সূরা আল-হাশরঃ ২০, সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 35
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ
The description of the Paradise which those who have Taqwa have been promised,
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ
The description of the Paradise which those who have Taqwa have been promised,
meaning its description and qualities;
تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ
Underneath it rivers flow,
these rivers flow in the various parts and grades of Paradise and wherever its people wish they flow and gush forth for them.
Allah also said,
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِى وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَأ أَنْهَارٌ مِّن مَّأءٍ غَيْرِ ءَاسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَـرٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّـرِبِينَ وَأَنْهَـرٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَتِ وَمَغْفِرَةٌ
The description of Paradise which those who have Taqwa have been promised (is that) in it are rivers of water the taste and smell of which are not changed, rivers of wine delicious to those who drink, and rivers of clarified honey, therein for them is every kind of fruit, and forgiveness. (47:15)
Allah said next,
أُكُلُهَا دَايِمٌ وِظِلُّهَا
its provision is eternal and so is its shade,
for Paradise has foods, fruits and drinks that never end or finish.
It is recorded in the Two Sahihs that Ibn Abbas narrated in the Hadith about the Eclipse prayer that the Companions said,
“O Allah’s Messenger! While you were standing (in prayer), we saw you reach for something with your hand and then you brought it back.”
The Messenger said,
إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ أَوْ أُرِيتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ مِنْهَا عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لَاَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا
I saw Paradise – or was shown Paradise – and reached for a cluster (of grapes or other fruit), and had I kept it, you would have eaten from it as long as this life remains.
Imam Muslim recorded that Jabir bin Abdullah said that the Messenger of Allah said,
يَأْكُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَيَشْرَبُونَ وَلَاأ يَتَمَخَّطُونَ وَلَاأ يَتَغَوَّطُونَ وَلَاأ يَبُولُونَ طَعَامُهُمْ جُشَاءٌ كَرِيحِ الْمِسْكِ وَيُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّقْدِيسَ كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَس
The people of Paradise eat and drink, and they do not need to blow their noses, or answer the call of nature, or urinate, for they pass the food excrements in belches, which smell like musk. They will be inspired to praise and glorify (Allah) as spontaneously as they breathe.
Imams Ahmad and An-Nasa’i recorded that Thumamah bin Uqbah said that he heard Zayd bin Arqam say,
“A man from the People of the Scriptures came and said (to the Prophet), `O Abul-Qasim! You claim that the people of Paradise eat and drink’
The Prophet said,
نَعَمْ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ الرَّجُلَ مِنْهُمْ لَيُعطَى قُوَّةَ مِايَةِ رَجُلٍ فِي الاَْكْلِ وَالشُّرْبِ وَالْجِمَاعِ وَالشَّهْوَة
Yes. By He in Whose Hand is Muhammad’s life, a man among them will be given the strength of a hundred men in eating, drinking, sexual intercourse and appetite.
That man asked, `He who eats and drinks needs to relieve the call of nature, but Paradise is pure (from feces and urine).’
The Prophet said,
تَكُونُ حَاجَةُ أَحَدِهِمْ رَشْحًا يَفِيضُ مِنْ جُلُودِهِمْ كَرِيحِ الْمِسْكِ فَيَضْمُرُ بَطْنُه
One of them (residents of Paradise) relieves the call of nature through a sweat that emanates from the skin, with the scent of musk, and the stomach becomes empty again.
Imam Ahmad and An-Nasa’i collected this Hadith.
Allah said in other Ayat,
وَفَـكِهَةٍ كَثِيرَةٍ
لااَّ مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ
And fruit in plenty, whose supply is not cut off nor are they out of reach. (56:32-33)
and,
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَـلُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلً
And the shade thereof is close upon them, and the bunches of fruit thereof will hang low within their reach. (76:14)
The shade of Paradise is everlasting and never shrinks, just as Allah said,
وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَـتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّـتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الاٌّنْهَـرُ خَـلِدِينَ فِيهَأ أَبَداً لَّهُمْ فِيهَأ أَزْوَجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَنُدْخِلُهُمْ ظِـلًّ ظَلِيلً
But those who believe and do deeds of righteousness, We shall admit them to Gardens under which rivers flow, abiding therein forever. Therein they shall have pure mates, and We shall admit them to shades wide and ever deepening. (4:57)
Allah often mentions the description of Paradise and the description of the Fire together, to make Paradise appealing and warn against the Fire. This is why, after Allah mentioned the description of Paradise here,
He next said,
تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَواْ
وَّعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ
this is the end (final destination) of those who have Taqwa, and the end (final destination) of the disbelievers is Fire.
Allah said in another Ayah,
لَا يَسْتَوِى أَصْحَـبُ النَّارِ وَأَصْحَـبُ الْجَنَّةِ أَصْحَـبُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَأيِزُونَ
Not equal are the dwellers of the Fire and the dwellers of the Paradise. It is the dwellers of Paradise that will be successful. (59:20).