أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 753)
Sura: 13
Verses :- 40-41
[ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَغُ
আপনার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা,
Your duty is only to convey,]
www.motaher21.net
وَ اِنۡ مَّا نُرِیَنَّکَ بَعۡضَ الَّذِیۡ نَعِدُہُمۡ اَوۡ نَتَوَفَّیَنَّکَ فَاِنَّمَا عَلَیۡکَ الۡبَلٰغُ وَ عَلَیۡنَا الۡحِسَابُ ﴿۴۰﴾
আমি তাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিই, তার কিছু যদি তোমাকে দেখিয়ে দিই অথবা যদি এর পূর্বে তোমার মৃত্যু ঘটিয়েই দিই, তাহলে তোমার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা, আর আমার কাজ হিসাব গ্রহণ করা।
And whether We show you part of what We promise them or take you in death, upon you is only the [duty of] notification, and upon Us is the account.
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا نَاۡتِی الۡاَرۡضَ نَنۡقُصُہَا مِنۡ اَطۡرَافِہَا ؕ وَ اللّٰہُ یَحۡکُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُکۡمِہٖ ؕ وَ ہُوَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ ﴿۴۱﴾
তারা কি দেখে না যে, আমি (তাদের দেশ) পৃথিবীকে চারদিক হতে সংকুচিত করে আনছি? আল্লাহ আদেশ করেন। তাঁর আদেশের সমালোচনা (পুনর্বিবেচনা) করার কেউ নেই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।
Have they not seen that We set upon the land, reducing it from its borders? And Allah decides; there is no adjuster of His decision. And He is swift in account.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৪০-৪১ নং আয়াত:-
[ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَغُ
আপনার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা,
Your duty is only to convey,]
৪০-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
কাফেরদেরকে শাস্তি দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিয়েছেন উক্ত আয়াতে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে সে ব্যাপারে তুমি তাড়াহুড়া করো না। তারা যদি তাদের অবাধ্যতার মাঝে অটল থাকে তাহলে তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই পাকড়াও করবে। হয়তো তুমি দুনিয়াতে তা প্রত্যক্ষ করে চক্ষু শীতল করতে পারবে অথবা তাদের শাস্তি আসার পূর্বে তোমার মৃত্যু হতে পারে। এটা নিয়ে তোমার ব্যস্ত থাকার কোন বিষয় নয়। তোমার দায়িত্ব তাবলীগের কাজ করা, তা করে যাও। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَآ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ ط وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَه۫ )
“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর; যদি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত প্রচার করলে না।” (সূরা মায়েদা ৫:৬৭)
সুতরাং রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া, কাউকে হেদায়েত করা নয়। হেদায়েত করা, শাস্তি দেয়া, রহমত করা, মানুষের হিসাব নিকাশ করা এ সমস্ত দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অন্য কারো নয়। কারণ সকলকে একদিন আল্লাহ তা‘আলার কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেদিন তিনি তাদের হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তদানুযায়ী প্রতিদান দিবেন। তারা কি দেখে না যে, জমিনকে সংকুচিত করা হচ্ছে অর্থাৎ কাফিরদের থেকে জমিন মুসলিমদের দখলে চলে যাচ্ছে।
কাফিররা দিন-দিন পরাজিত হচ্ছে। বরকত উঠে যাচ্ছে আর মন্দ ও অকল্যাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ ও গাছপালা মারা যাচ্ছে। যার ফলে জমিন শ্মশানে পরিণত হচ্ছে ইত্যাদি। এখানে সংকীর্ণ বলতে জমিন নয় বরং জমিনের সবকিছু ধ্বংস হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
আবার কেউ কেউ এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন জমিন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বিলীন হয়ে যাবে।
তবে এর দ্বারা সঠিক উদ্দেশ্য হল ইসলাম শিরকের উপর জয়যুক্ত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰي)
“তোমাদের আশপাশের এলাকার অনেক জনবসতি আমি ধ্বংস করে দিয়েছি।” (সূরা আহকাফ ৪৬:২৭)
সুতরাং অচিরেই তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যেতে হবে। আর তখন তিনি তাদের হিসাব গ্রহণ করবেন। অতএব হে রাসূল! আপনার তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন নেই। তাদের ব্যাপারে আমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া।
২. ইসলাম একদিন জয়লাভ করবেই।
৩. পৃথিবীর সব কিছু শেষ হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে যাবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪০-৪১ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রাসূলকে (সঃ) বলছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তোমার শত্রুদের উপর আমার শাস্তি যে আসবে তা আমি তোমার জীবদ্দশাতেই আনি বা তোমার মৃত্যুর পরই আনয়ন করি তাতে তোমার কি হয়েছে? তোমার কাজ তো শুধু আমার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। আর তা তো তুমি করেছে। তাদের হিসাব গ্রহণ এবং তাদেরকে বিনিময় প্রদানের দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকো। তুমি তাদের উপর দারোগা বা রক্ষক নও। যে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং কুফরী করবে, তাদেরকে আল্লাহ স্বয়ং শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করবেন। তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে এবং তাদের হিসাব নিকাশ গ্রহণের দায়িত্বও আমার। তারা কি দেখে নাই যে, আমি যমীনকে তোমার দখলে আনয়ন করেছি। তারা দেখে না যে, জনবহুল স্থান ও সুউচ্চ অট্টালিকা ধ্বংসাবশেষ ও বিজনে পরিণত হচ্ছে? তারা কি লক্ষ্য করে না যে, মুসলমানরা কাফিরদের উপর আধিপত্য লাভ করছে। তারা অবলোকন করছে না যে, দিন দিন বরকত উঠে যাচ্ছে এবং মন্দ ও অকল্যাণ আসতে রয়েছে। মানুষ মরতে আছে এবং যমীন শ্মশানে পরিণত হচ্ছে? যদি স্বয়ং যমীনকে সংকীর্ণ করে দেয়া হতো তবে এর উপর মানুষের কুঁড়ে ঘর নির্মাণ করাও অসম্ভব হয়ে পড়তো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দিন দিন মানুষ এবং মানুষও গাছপালা কমতে থাকা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য যমীনের সংকীর্ণতা নয়, বরং মানুষ মরে যাওয়া। বিদ্বান মণ্ডলী, ধর্মশাস্ত্রবিধ এবং ভাল লোকদের মৃত্যুও হচ্ছে যমীনের ধ্বংস হওয়া। এ ব্যাপারে একজন আরব কৰি নিম্নরূপ কবিতা বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যে ভূমিতে কোন (দ্বীনের) আলেম জীবন যাপন করেন সেই ভূমি জীবন্তরূপ লাভ করে, আর যখন আলেম মৃত্যু মুখে পতিত হন তখন সেই ভূমিও মরে যায় অর্থাৎ বিজনে পরিণত হয়। যেমন, যখন ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হয় তখন তা সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে, কিন্তু যদি তাতে বৃষ্টিপাত না হয় তবে তা শুকিয়ে যায় এবং অনুর্বর হয়ে পড়ে।” সুতরাং এই আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে ইসলাম শিরকের উপর জয়যুক্ত হওয়া যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “অবশ্যই আমি তোমাদের চতুষ্পর্শ্বের গ্রামগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছি।” (৪৬: ২৭) এটা ইমাম ইবনু জারীরেরও (রঃ) পছন্দনীয় উক্তি।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# যারা তোমার এ সত্যের দাওয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয় এবং কবে তা প্রকাশ হয় তা চিন্তা করার প্রয়োজন তোমার নেই। তোমার ওপর যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে তা পালন করে যেতে থাকো এবং ফায়সালা আমার হাতে ছেড়ে দাও। এখানে বাহ্যত নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হলেও মূলত তাঁর বিরোধীদেরকে শুনানোই উদ্দেশ্য। তারা চ্যালেঞ্জের ভংগিতে বার বার তাঁকে বলতো, তুমি আমাদের যে বিপর্যয় ও ধ্বংসের হুমকি দিয়ে আসছো তা আসছে না কেন?
# তোমার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখণ্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চর্তুরদিকে থেকে তার বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে? এটা এদের বিপর্যয়ের আলামত নয় তো আবার কি?
“আমি এ ভূখণ্ডে এগিয়ে চলছি”-আল্লাহর একথা বলার একটি সূক্ষ্ম তাৎপর্য রয়েছে। যেহেতু হকের দাওয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং এ দাওয়াত যারা পেশ করে আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন, তাই কোন দেশে এ দাওয়াত ছড়িয়ে পড়াকে আল্লাহ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নিজেই ঐ দেশে এগিয়ে চলছেন।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# আপনার শত্রুদেরকে যে অপমান ও লাঞ্চনাজনক শাস্তির ধমক দেয়া হচ্ছে তা যদি দুনিয়াতেই এসে যায় তবে তা হবে দুনিয়াবী শাস্তি। আর যদি আপনাকে তাদের শাস্তি দেখানোর পূর্বেই আমরা মৃত্যু দিয়ে দেই, তবে আপনার দায়িত্ব তো শুধু দাওয়াত প্রচার করে যাওয়া, তারপর আমার কাছেই তাদের হিসাব ও প্রতিফল। [মুয়াসসার]
# [১] অর্থাৎ আপনার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখন্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চতুর্দিক থেকে তার বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে? এখানে যমীন সংকুচিত করার আরেক অর্থ এও করা হয় যে, যমীনের ফল-ফলাদি কমিয়ে দেয়া। আবার কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন, ভাল লোকদের, আলেম ও ফকীহদের প্রস্থান করা। কারও কারও মতে, এর অর্থ কুফরীকারীদের জন্য যমীন সংকুচিত হয়ে ঈমান ও তাওহীদবাদীদের জন্য যমীনকে প্রশস্ত করা হচ্ছে। বাস্তবিকই ধীরে ধীরে ইসলামের আলো আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কুফরী ও শির্কী শক্তির পতন হয়ে গেছে। অনুরূপ আয়াত আরও দেখুন, সূরা আল-আহকাফঃ ২৭ [দেখুন, ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ নির্দেশ আল্লাহ্র হাতেই। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যা ইচ্ছা তা নির্দেশ দেন। তিনিই ফয়সালা করেন। যেভাবে ইচ্ছা ফয়সালা করেন। কাউকে মর্যাদায় উপরে উঠান আবার কাউকে নীচু করেন। কাউকে জীবিত করেন, কাউকে মারেন। কাউকে ধনী করেন, কাউকে ফকীর করেন। তিনি ফয়সালা দিচ্ছেন যে, ইসলাম সম্মানিত হবে এবং সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে। [ফাতহুল কাদীর] তাঁর নির্দেশ খন্ডনকারী কেউ নেই। তাঁর নির্দেশের পিছু নিয়ে কেউ সেটাকে রদ করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। সেটা অনুসারে কাফেরদেরকে তিনি দ্রুত শাস্তি দিবেন আর মুমিনদেরকে দ্রুত সওয়াব দিবেন। [কুরতুবী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 40-41
فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَغُ
Your duty is only to convey,
Punishment is by Allah, and the Messenger’s Job is only to convey the Message
Allah said to His Messenger,
وَإِن مَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ
Whether We show you part of what We have promised them,
O Muhammad, part of the disgrace and humiliation We have promised your enemies in this life,
أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ
or cause you to die, (before that),
فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَغُ
your duty is only to convey,
We have only sent you to convey to them Allah’s Message, and by doing so, you will have fulfilled the mission that was ordained on you,
وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
and on Us is the reckoning,
their reckoning and recompense is on Us.’
Allah said in similar Ayat,
فَذَكِّرْ إِنَّمَأ أَنتَ مُذَكِّرٌ
لَّسْتَ عَلَيْهِم بِمُسَيْطِرٍ
إِلاَّ مَن تَوَلَّى وَكَفَرَ
فَيْعَذِّبُهُ اللَّهُ الْعَذَابَ الاٌّكْبَرَ
إِنَّ إِلَيْنَأ إِيَابَهُمْ
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
So remind them – you are only one who reminds. You are not a dictator over them – Save the one who turns away and disbelieves. Then Allah will punish him with the greatest punishment. Verily, to Us will be their return, Then verily, for Us will be their reckoning. (88:21-26)
Allah said next.
أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّا نَأْتِي الَارْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا
See they not that We gradually reduce the land from its outlying borders.
Ibn Abbas commented,
“See they not that We are granting land after land to Muhammad!”
Al-Hasan and Ad-Dahhak commented that;
this Ayah refers to Muslims gaining the upper hand over idolators, just as Allah said in another Ayah,
وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرَى
And indeed We have destroyed towns round about you. (46:27)
وَاللّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ
وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
And Allah judges, there is none to put back His judgement, and He is swift at reckoning.